কবি সুধীর চৌধুরীর মাও সে তুং এর অনুবাদ কবিতা
*
CHANGSHA
রচনা – মাও সে-তুং
অনুবাদ—কবি সুধীর চৌধুরী

হিমার্ত শরতে অরেঞ্জ দ্বীপের তীরে দাঁড়িয়ে আমি একলা
চোখ মেলে দিয়েছি
উত্তরে প্রবাহিত নদীর দিকে
দেখেছি :
অসংখ্য আলতো লাল পাহাড়
সারি সারি গাঢ় লাল বনভূমি |
পাহাড়ী নদীর প্রশস্ত বুকে শুধু নীল
আর নীল
শত শত ভাসমান প্রমোদতরী ধাক্কা মারছে
ঈগলেরা পাখা ঝাপ্টাচ্ছে দূর আকাশে
মাছেরা খেলা করছে শেওলার মধ্যে
আর হাজার হাজার প্রাণী কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশের নিচে
লড়াই করছে
লড়াই করছে স্বাধীনতার জন্য |
আমি এই অসীমে গভীর ধ্যানে নিমগ্ন
বিশাল পৃথিবী এবং সীমাহীন আকাশকে প্রশ্ন করি :
সারা প্রকৃতির প্রভু কে কে ?

অতীতে এখানে আমি জনাকীর্ণ অনেক মাস ও বছর
সঙ্গীদের ভীড়ে কাটিয়েছি |
সুঠাম দেহী আমরা ছাত্র
আমরা যুবক
সঠিক সহজ
ভয়শূন্য স্পষ্ট ঋত্বিক চেতনায়
দেশকে ভালবেসে মুক্তি যোদ্ধাদের প্রশংসায়
এবং শোষকের প্রতি ঘৃণায়
হাতিয়ার ধরেছি – কলম
আর ধুলোর মতো তুচ্ছ জ্ঞান করেছি
উঁচু তলার মানুষদের |
কিন্তু তোমার মনে পড়ে কি
মধ্য নদীতে কেমন করে আমরা আঘাত হানতাম জলধারায়
ঢেউগুলি কেমন করে ধাক্কা মারত
চলমান নৌকাগুলিকে ?

কবিতা পরিচিতি – হুনান মাও সে—তুং এর জন্মস্থান | কৈশোরে নর্মাল
স্কুল পড়াশুনার দিনগুলোতে – তিনি বহুদিন চাংশায় কাটিয়ে ছিলেন |
অনেক বছর পরে কবি চাংশায় এসে সেই প্রিয় পরিচিত দৃশ্যাবলী  ও
অতীতের স্মৃতিগুলিকে মনে পড়ে এবং চাংশা কবিতা রচনা করেন |

.                   *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
YELLOW  CRANE  TOWER
রচনা – মাও সে-তুং
অনুবাদ—কবি সুধীর চৌধুরী

দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে
ইংসীর ন’টি বিস্তৃত উপনদী বয়ে বয়ে
বয়ে চলছে
আর উত্তর থেকে দক্ষিণে আরও গভীরে
টানা রেলপথ রেখা |
অস্পষ্ট নীল নীল কুয়াশা আর বৃষ্টি ঝরছে
জলের উপর স্নেক এবং টর্টাস পাহাড় আবছা |

হলদে সারসটা উধাও, কে জানে-কোথায় ?
পড়ে আছে শুধু পান্থশালা |
আমি আকন্ঠ শপথের সুরা পান করে চলেছি
আমার হৃদয় ফুলে ফুলে উঠছে
ফুলে ফুলে উঠছে মাতাল ঢেউয়ের মতন |

কবিতা পরিচিতি – উচাং এর দক্ষিণে হুপে প্রদেশের পর্বত চূড়ায় একটি স্তম্ভ |
YELLOW CRANE TOWER  চীনদেশের বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্তম্ভ বিশেষ | পিকিং
অপেরা ও বহু কবির প্রেরণার বস্তু
 |

.                   *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
CHINGKANG MOUNTAIN
রচনা – মাও সে-তুং
অনুবাদ—কবি সুধীর চৌধুরী

পাহাড়তলিতে আমাদের পতাকা আর নিশান
উপরে ধ্বনিত হচ্ছে রণশিঙ্গা এবং দামামা |
এখন শত্রুরা হাজারো শক্তিতে আমাদের ঘিরে ধরেছে
কিন্তু আমরা দুর্বার এবং অবিচলিত |

প্রাচীরের মত দুর্ভেদ্য আমাদের প্রতিরোধ
আমাদের সংকল্প দুর্গের মত দৃঢ় |
হ্যাংকো থেকে নিক্ষিপ্ত বজ্রের মত গুলির মুখোমুখি দাঁড়াতে না পেরে
শত্রুরা পালিয়ে গেছে----
পালিয়ে গেছে সেই রাত্রেই |

কবিতা পরিচিতি --- চিং কাং পর্বত লি পরিধি বিশিষ্ট  | পশ্চিম কিয়াংসি ও
পূর্ব হুনানের মধ্যবর্তী অবস্থিত | ১৯২৭ সালে সেপ্টেম্বর মাসে মাও সে তুং
এখানে লালফৌজের নেতৃত্ব করেছিলেন এবং এখানে প্রথম বিপ্লবী ঘাঁটি স্থাপন
করেন |

.                   *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
NEW YEAR’S DAY
রচনা – মাও সে-তুং
অনুবাদ—কবি সুধীর চৌধুরী

নিনঘুয়ার সরু পথ
.   চিংল্যুর গভীর বন
.          কৈহুয়ার পিচ্ছল শেওলা মাড়িয়ে মাড়িয়ে
আজ আমরা কোথায় চলেছি ?
.           --- সোজা উই পর্বতের পাদদেশে |

পর্বতে
পর্বতের পাদদেশে
বাতাসে মেলে যাবে
লাল পতাকা |

কবিতা পরিচিতি--- ১৯২৯ সালে মাও সে-তুং ও কমান্ডার চুতে পূর্ব
দিকে চিংকাং পর্বত থেকে পশ্চিম ফুচিন ও দক্ষিণ কিয়াংসীর নতুন
বিপ্লবী ঘাঁটী পরিচালনা করেছিলেন | কবিতাটি ফুকিন অভিযান কালে
রচিত |


.                   *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
HUICHANG
রচনা – মাও সে-তুং
অনুবাদ—কবি সুধীর চৌধুরী

এখুনি পূর্বে প্রভাতী আলো ফুটবে
একথা বলিনা আমাদের অভিযান আগেই শুরু করছি ;
যদিও আমরা সারাটা সবুজ পাহাড় পেরিয়ে এখানে এসেছি
তবু ক্লান্ত নই
আহা, তুলনাহীন এই দৃশ্যরাজি !

সোজা হুইচাং প্রাচীর থেকে উঁচু চূড়াগুলো
পূর্ব সাগর পর্যন্ত সারি সারি
সারি সারি ছড়িয়ে আছে
আমাদের যোদ্ধারা অপলক দৃষ্টি রাখে
দক্ষিণে কেয়োংটাংএ
আহা কত সবুজ
কত প্রাণোচ্ছল ঐ দূর কেয়োংটাং |

কবিতা পরিচিতি --- ১৯২৯ সালে জানুয়ারী হুইচাং এ লালফৌজ পরিচালনা
করেছিলেন মাও সে--তুং | এখানেই লালফৌজ দক্ষিণ কিয়াংসীর বিপ্লবী
ঘাঁটি সংগঠিত করেছিল |


.                   *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
TAPOTI
রচনা – মাও সে-তুং
অনুবাদ—কবি সুধীর চৌধুরী

রামধনু রং
আকাশে চীনাংশুক দুলিয়ে দুলিয়ে কে নাচছে ?
বৃষ্টি শেষে সূর্য নেমেছে পাটে
.                 দিগ থেকে দিগন্তে
.                     পাহাড় থেকে পাহাড়
.                         আর পাহাড়ী পথগুলো
.                               নীলে নীলে ছেয়ে আছে |
চীনাংশুক দুলিয়ে দুলিয়ে কে নাচছে ?
প্রচন্ড লড়াইয়ে একদিন
গ্রামের দেওয়ালগুলো বুলেটে বিক্ষত হয়েছিল ;
কমরেড, সেদিকে তাকিয়ে দেখ
বিপ্লব বিভায়
আজও তার উজ্জ্বল স্বাক্ষর
মনে হয় অসহ্য সুন্দর |

কবিতা পরিচিতি ----- এই অঞ্চলটি উইচীন ( TUICHIN )  এর কাছে অবস্থিত |
১৯৩০ সালের শেষ থেকে ১৯৩৩ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে শত্রুর  ব্যাপক
আক্রমণকে বিপর্যস্ত করার পর কবিতাটি লেখা হয় |


.                   *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
LOUSHAN PASS
রচনা – মাও সে-তুং
অনুবাদ—কবি সুধীর চৌধুরী

পশ্চিমা বাতাস কী ঠান্ডা !
দূরে আকাশ পথে
বুনো রাজহংসীরা ডানায় ডানায় স্বাগত জানায়
জ্যোত্স্না—স্নিগ্ধ প্রভাতী আলোক |
আর সেই মুহূর্তেই অশ্বক্ষুড়ে তীক্ষ্ণ আওয়াজ
রণশিঙ্গার হুংকার স্তব্ধ |

বোলোনা, লৌহ বেড়ীর দুর্গম  উপত্যকাটা  এবার দুর্লংঘ
দেখোনা, আজই একলাফে পেরিয়ে যাবো তার চূড়া
যাবো আমাদের লক্ষ্যে |
তারপর
পাহাড়ের পর পাহাড়  নীল সমুদ্রের মত তরঙ্গিত
আর বিদায়ী সূর্যকে দেখবো
মরণজয়ী শহীদের রক্তে লাল |

কবিতা পরিচয়--- কিউচাও-এ উত্তর সানসি প্রদেশে যুদ্ধ  পরিচালনার
পক্ষেও সুবিধাজনক স্থান |  ১৯৩৫ সালে জানুয়ারি মাসে লঙ মার্চের
অভিযানের দিনগুলিতে লালফৌজ সানসি অধিকার করে এবং তারপর
লউশন গিরিপথ অতিক্রম করেন |


.                   *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
NEW YEAR’S DAY     
রচনা – মাও সে-তুং
অনুবাদ—কবি সুধীর চৌধুরী

পর্বত !  পর্বত !
ঘোড়া ছুটছে !
আমার চাবুক ঘন ঘন ওর পিঠে
জিন আঁকড়ে বসে আছি |
ঘোড়া ছুটছে !
যাত্রা শুরু করে
পেছনে মাথা ফেরাতেই
দেখি, আকাশ আমার তিন ফুট উপরে |

পর্বত !  পর্বত !
ফুঁসে ওঠা সমুদ্রের তরঙ্গ যেন
.                         অবিরাম তোলপাড় করছে
একটা ধাবন্ত ঘোড়ার মতো
পেছনের দু’পায় দাঁড়িয়ে
দ্রুত দৌড়ে গেল লড়াইয়ের ময়দানে |

পর্বত ! পর্বত !
স্বর্গের নীলে নীলে তোমার চূড়ো তীক্ষ্ণ হয়ে উঠছে
বুঝি আকাশটা ভেঙে পড়ল মাথার উপর
কিন্তু তোমার একার শক্তি ঠিক ঠেকিয়ে রেখেছে |

নীচের লোকগীতিটির প্রেরণায় মাও সে-তুং উপরের কবিতাটি লিখেছেন |
.             মাথার উপরে “স্কাল” পর্বত
.             নীচে ট্রেসার –এর সারি
.             ঠিক তিন ফুট উপরে আকাশ থেমে
.             পায়ে হাঁট যদি মাথা নোয়াতেই হবে
.             ঘোড়ায় চাপলে তাড়াতাড়ি পড় নেমে |


.                   *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
THE LONG MARCH
রচনা – মাও সে-তুং
অনুবাদ—কবি সুধীর চৌধুরী

দূর অভিযান দুঃখ--কষ্টে লাল ফৌজ নির্ভয়
হাজার পর্বত, অয়ুত নদী তাদের কাছে এমন কিই বা !
পাঁচ সারি সারি পর্বত মালা যেন ছোটো এক ঢেউ
উমেং চূড়া মাটির ঢেলা |
মেঘে মেঘে মোড়া পাহাড়ের চূড়া সোনা বালু নদী ধুয়ে দেয়
টাটু নদীটার লোহার শিকল হিম হিম ঠাণ্ডা |
মিনশানের তুষারে ওরা দুর্বার দুর্জয় |
যখন পেরুল লাল ফৌজ এই পথ
প্রত্যেক মুখে ঝলকে উঠলো হাসি |

কবিতা পরিচয়—১৯৩৪ সালে অক্টোবর মাসে কিয়াংসি ঘাঁটি থেকে
লালফৌজ যাত্রা শুরু করে | প্রায় ৮,০০০ মাইল রক্তাক্ত অভিযানের
পথ পেরিয়ে ১৯৩৫ সালে অক্টোবর এই ফৌজ উত্তর সেনসির জাপ-
বিরোধী ঘাঁটিতে মিলিত হয় |


.                   *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর   
*
MOUNT LIUPAN
রচনা – মাও সে-তুং
অনুবাদ—কবি সুধীর চৌধুরী

অসীম আকাশ আর বিবর্ণ মেঘের ঢেউ ভেঙে ভেঙে
যতক্ষণ পর্যন্ত না অসংখ্য বন্য রাজহংসীরা
দক্ষিণের দিগন্তে মিলিয়ে যাচ্ছে
ততক্ষণ সতর্ক দৃষ্টি মেলে আছি ;
আমরা অনেক – অনেক পথ অতিক্রম করে
অযুত ক্রোশ পেরিয়ে এসেছি
এখন যদি মহান প্রাচীরে পৌঁছুতে না পারি
তবে সাচ্চা মানুষ আমরা নই |

লিউপান পর্বতের শিখরে আমাদের নিশান
পশ্চিমী বাতাসে মৃদু মৃদু কাঁপছে
আজ আমাদের অতন্দ্র প্রতীক্ষা :
কখন আমরা পীত ড্রাগনদের শৃংখলিত করবো ?

কবিতা পরিচয়---লিউপান পর্বত দক্ষিণ কানসুর কিউয়ান প্রদেশের
দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে | ১৯৩৫ সালের সেপ্টেম্বরে – লং মার্চের
অভিযানের শেষ দিকে লালফৌজ লিউপান পর্বতে শত্রুর ঘাঁটি
ডিঙিয়ে অক্টোবরে  উত্তর সেনসিতে পৌঁছায় |

.                   *************************            
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর