আকাশ ছুঁই ছুঁই মহান কুনলুন পৃথিবীর মানুষের সুন্দরতম প্রতীক | তোমার লক্ষ লক্ষ সাদা ড্রাগনের পাখার ঝাপটে হিমক্লান্ত থরো থরো আকাশ দাঁতে দাঁতে রাখে ; আর আগুন ঢালা হু হু গরমে বরফ গলা স্রোত তীর ছাপিয়ে গোঙাতে গোঙাতে মানুষ মাছ আর কচ্ছপগুলোকে একাকার করে দেয় ! কে রায় দিতে পারে সমস্ত ভাল মন্দকে মনে রেখে তোমার এই হাজারো শরৎ গড়া ?
কিন্তু আজ, তোমায় বলি কুনলুন এত বিশালতা এত তুষার তোমার প্রয়োজন নেই | আমি যদি আকাশে হেলান দিয়ে দাঁড়াতে পারতুম তবে তলোয়ারের আঘাতে আঘাতে তোমাকে তিন টুকরো করে এক টুকরো পাঠাতুম ইউরোপ এক টুকরো রেখে দিতুম এখানে --- এই মহাচীনে | তবেই তোমার সমস্ত উত্তাপ সমস্ত শীতলতা ভাগ করে নিয়ে মহা শান্তির নীড় হতো এই পৃথিবীটা |
কবিতা পরিচয় ---কারাকোরাম পর্বতমালার মধ্যে পামীর মালভূমি থেকে বরাবর সিংকিয়াং ও তিব্বত পর্যন্ত বিস্তৃত অংশের চীনা নামকরণ কুনলুন |
শত শত মাইল বরফে ঢাকা হাজার হাজার মাইল জুড়ে তুষারের ঘুর্ণী ঝড় মহা প্রাচীরের দু’দিকে তাকালে বিশালতা চোখে পড়ে ; বড় বড় নদী বয়ে চলেছে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে বয়ে বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে বরফের সমুদ্রে | পর্বতগুলো রূপোলি সাপের মতো নেচে নেচে চলেছে আর সেনসি ও সানসি অধিত্যকা মোমের হাতির মতো আকাশ-ছোঁয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেতেছে ; এবং এক রোদ ঢাকা দিনে তুমি দেখবে ধবধবে সাদা আস্তরণের উপর বিছিয়ে দিয়েছে লালচে আঁচল আহা কী আশ্চর্য সুন্দর এই দেশ |
আমাদের সমস্ত দেশটাই এরকম অসীম সৌন্দর্যে ভরপুর শুধু এই কারণেই বীর যোদ্ধা বশ্যতায় মাথা নত করেছে এখানে কিন্তু হায়, গোঁয়ার বীর চীন শি হুয়াং, হান উ টি আটপৌড়ে সাহিত্যরসিক সম্রাট তাঙ্ তাই সুঙ্, সুঙ তাই সু এবং চেঙ্গিস খান স্বর্গের একদিনের প্রিয় সন্তান ওরা জানতো শুধু কি করে শর নিক্ষেপ করতে হয় সোনার ঈগলের বুকে এখন তাঁরা সবাই ইতিহাস কিন্তু প্রকৃত মহান আর সহৃদয় মানুষকে খুঁজতে আমরা নিশ্চয় বর্তমানের মধ্যেই চোখ রাখবো |
কবিতা পরিচয় – সেনাসি ও সানসি উচ্চভূমি | ১৯৪৫ সালের আগস্ট মাসে কবি চুংকিং—এ গিয়েছিলেন কুয়োমিনটাং এর সঙ্গে শান্তির আলোচনা করতে | সেখানে লিউ আ-সের সঙ্গে দেখা হয় | তিনি একটা কবিতা চান | এই কবিতাটি তাঁর অনুরোধে লেখা |
TO MR. LIU YA-TSE রচনা – মাও সে-তুং অনুবাদ—কবি সুধীর চৌধুরী
দীর্ঘ রাত্রির ঘন কালো আঁচল সরিয়ে সরিয়ে গাঢ় লাল সকাল উঁকি দিচ্ছে আমার স্বদেশে | বিগত হাজার বছর ধরে দৈত্য দানবের গোদা গোদা পায়ের ঘুর্ণী নৃত্যে পাঁচ লক্ষ মানুষ বেসামাল ছটকে পড়েছে-ঐক্যহীন |
কিন্তু এখন সূর্য মৌলী মোরগের ডাকে পৃথিবীর ঘুম ভাঙে হাজারো হাজারো গানে মুখরিত ; আর খোটানী গাথার সুরে সুরে অভূতপূর্ব প্রেরণায় ভরপুর কবির হৃদয় |
কবিতা পরিচয়—লিউ আ-সে উচিয়াং, কিয়াংসুর অধিবাসী | তিনি চিং বংশের তনের সময় বিপ্লবে যোগদান করেন | তিনি অনেক দেশাত্মবোধক কবিতা রচনা করেছিলেন | ১৯৪৯ সালের ১৮ই মার্চ লিউ এবং আরও করেকজন গণতান্ত্রিক ব্যক্তির সঙ্গে হংকং থেকে পিকিং-এ @ আসেন | সেই মাসের ২৫শে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি পিকিং-এ স্থানান্তরিত হয় এবং গণতান্ত্রিক দলগুলিকে People’s Political Conference –এ যোগদানের নিমন্ত্রণ জানান | লিউ চেয়ারম্যান মাওকে তাঁর ঘরে ফেরার ইচ্ছা জানিয়ে একটা কবিতা লেখেন | উত্তরে মাও এই কবিতা লেখেন |
REPLY TO MR. LIU YA-TSE রচনা – মাও সে-তুং অনুবাদ—কবি সুধীর চৌধুরী
ক্যান্টনে আমাদের চা পান এবং চুংকিং -- এর গাছে গাছে রাশি রাশি হলুদ পাতা ঝরার বেলায় তোমাতে আমাতে কবিতা বিনিময় আমি ভুলতে পারি না |
একুত্রিশ বছর পর পুরানো রাজধানীতে ফিরে ফুল ঝরার ঋতুতে আমি তোমার কবিতা পড়ছি | বন্ধু, বুক ভাঙা দুঃখেও হৃদয়কে ভারাক্রান্ত করোনা . সতর্ক থেকো | আমরা পথ চলবো--- পৃথিবীতে দূর দেখা দৃষ্টি নিয়ে একথা ব’লোনা, কুনমিং হ্রদের জল বড় অগভীর কেননা, ফুচুন নদীর চেয়ে এখানে লক্ষ্য করা যায় অনেক সুস্বাদু মাছ |
কবিতা পরিচয়--- Reply To Mr. Liu Ya-Tse কবির কথা-যখন আমরা ১৯৫০ সালের জাতীয় উত্সবে দর্শক ছিলাম মিঃ লিউ আ—সে একটি Wan His Sha গীতিকে অবলম্বন করে একটি কবিতা রচনা করেন | আমি (Mao) উত্তরে একই ছন্দ-বন্ধনে এই কবিতাটি লিখে তাঁকে পাঠাই |
PEITAIHO রচনা – মাও সে-তুং অনুবাদ—কবি সুধীর চৌধুরী
উত্তর দেশে ঝোড়ো বৃষ্টি সাদা সাদা বৃষ্টির ফেনা আকাশে ফুঁসে উঠছে | চিংওয়াংটাও-র মেছো নৌকা একটাও দেখা যাচ্ছে না সমুদ্র বক্ষ শূন্য ওগুলো কোথায় গেছে ?
অতীতে হাজার বছর ধরে উই সাম্রাজ্যের সম্রাট উ চাবুক চালিয়েছেন আজ সেই সাম্রাজ্য নেই সম্রাট নেই নেই তাঁর চাবুক | কিন্তু তাঁর কবিতা ‘চাইশির উত্তর দিকে’ আজও আছে আজো ‘শরতের বাতাস দীর্ঘশ্বাস ফেলছে’ – যদিও বদলে গেছে পৃথিবীটা |
কবিতা পরিচয় - Peitaiho চিংওয়াংটাও এর পশ্চিমে হুপেইর প্রদেশের সমুদ্র পাড়ের প্রসিদ্ধ স্বাস্থ্য—নিবাস |
SWIMMING রচনা – মাও সে-তুং অনুবাদ—কবি সুধীর চৌধুরী
আমি এই মুহূর্তে প্রিয় চামশার জল পান করেছি আর খেয়েছি উচাং – এর মিষ্টি মাছ ; এখন চু-প্রদেশের মুক্ত আকাশ দেখতে দেখতে হাজার মাইল দীর্ঘ নদীটা পেরিয়ে যাচ্ছি | উদ্দাম বাতাস উত্তাল তরঙ্গ আমি পরোয়া করিনা ; কেননা, অলস পায়ে উঠোনে ঘুর ঘুর করার চাইতে এ অনেক ভাল | কোন এক নদীর তীরে দাঁড়িয়ে প্রভু বলেছিলেন : ‘এই ভাবে প্রবাহিত সমস্ত প্রকৃতি |’
ঢেউ ভেঙে ভেঙে অবিরাম মাস্তুল এগিয়ে চলেছে টর্টাস এবং স্নেক পাহাড় নিশ্চল | বিশাল পরিকল্পনা প্রস্তুত হচ্ছে ; উত্তর ও দক্ষিণকে যুক্ত করবে একটা সেতু গভীর গহ্বর হবে প্রশস্ত পথে দুর্ভেদ্য দেওয়াল দাঁড়িয়ে থাকবে পশ্চিমের স্রোতের প্রতিকূলে প্রতিহত করবে মেঘ, বৃষ্টি ; আর সংকীর্ণ গিরিখাতে দেখা দেবে সমতল হ্রদ | পর্বতের দেবী যদি তখনও সেখানে থাকেন – তবে অবাক হয়ে দেখবেন তাঁর পুরানো পৃথিবীটা আশ্চর্য বদলে গেছে |
কবিতা পরিচয় – SWIMMING ১৯৫৬ সালের মে মাসে কবি ইয়াংসী নদীতে সাঁতার দেন | কবিতাটিতে এই সাঁতারের কথা বলা হচ্ছে |
THE IMMORTALS রচনা – মাও সে-তুং অনুবাদ—কবি সুধীর চৌধুরী
হারালুম আমি আমার ইয়াং ---- বুক ভরে ছিল গর্বে তোমার লিউকে হায়ায়েছ তুমি হায় বাতাসের নীলে সচকিত মৃদু পায় . পাড়ি দিল ওরা স্বর্গের সেরা স্বর্গে | উকাং বলল কি দেবার আছে --- মাত্র . ভরে দাও তুমি অমৃত সুধাপাত্র |
নির্জনে বসে চাঁদের দেবীটি ঢিলে আস্তিন গুটিয়ে ঘোরে ফেরে দুটি আত্মাকে ঘিরে . অসীম আকাশে লুটিয়ে হঠাৎ শব্দে কান ফেরালেন . পরাজিত শুনে পৃথিবীতে শার্দুল বৃষ্টির মতো ভাসল চোখের কান্নার উপকূল | . কবিতা পরিচয়—এই কবিতাটি ১৯৫৭ সালের ১১মে চাংশার Tenth middle স্কুলের শিক্ষিকা লী শু-ই কে লেখা | শিক্ষিকার স্বামী লিউ চি সুন সম্পর্কে বলা হয়েছে – যিনি মাওর একজন পুরানো বন্ধু ছিলেন | তিনি ১৯৩৩ সালে সেপ্টেম্বর মাসে হুপের হুংঘুর যুদ্ধে নিহত হন | মাওর স্ত্রী, ইয়াং কাই হুই লী শু-ই এর অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন |