কবি সুধীরকুমার চৌধুরীর কবিতা
|
অসি দাও
কবি সুধীরকুমার চৌধুরী
কবি বিষ্ণু দে সম্পাদিত এ কলের কবিতা, ১৯৬৩ থেকে নেওয়া।
. আজি ভয়-বিহ্বল রাতে,
একখানি অসি দাও, হাতে ওর অসি দাও,
. এক খানি অসি দাও হাতে!
. হৃতবল পেশী তার, জানি,
একটি নিমেষ
কবি সুধীরকুমার চৌধুরী
এই কবিতাটি কবি বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত আধুনিক বাংলা কবিতা, ১৯৪০, সংকলন থেকে
নেওয়া। ওই কবিতার সংকলনে কবির নাম দেওয়া রয়েছে সুধীরকুমার রায়চৌধুরী। এই
দুই ব্যক্তি একই লোক কি না আমরা সঠিক বলতে পারছি না। কিন্তু দুজনেরই জন্মের
সাল ১৮৯৭ খৃঃ দেওয়া পেয়েছি। এতটা সাদৃশ্য দেখে আমাদের মনে হচ্ছে তাঁরা একই
ব্যক্তি। যদি তা না হয়, তা হলে আমাদের এই ইমেলে (srimilansengupta@yahoo.co.in)
যোগাযোগ করে জানালে আমরা শুধরে দেবো।
আজি এ-নিমেষখানি উতরিলো এসে চুপে-চুপে,
. কী নিবিড় পূর্ণতা রূপে
. নিভৃত এ-হৃদিতটে এসে।
. বুকে নিয়ে এলো ভালোবেসে
অসীমের যত পণ্য। অনাদির যত আয়োজন,
একটি নিমেষ-বৃন্তে ফুটি উঠি ফুলের মতন
. রহিয়াছে স্থির,
প্রথম দেখা
কবি সুধীর কুমার চৌধুরী
প্রমথনাথ বিশী ও ডঃ তারাপদ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত কাব্য বিতান কবিতা সংকলন
থেকে নেওয়া।
সবই জানো, সব শুনেছ, জানি না কি ?
একটি কথা শুনতে কেবল আছে বাকি |
. বলব চোখের জলে ভাসি’,
. তোমায় আমি ভালোবাসি ,
দেব্ তারে মোর ডাকতে গিয়ে তোমায় ডাকি |
কালকেও যা শুনেছ তা সত্য বটে,
কালকে আঁকা পড়ল যে রূপ চিত্তপটে,
. আজকে ত তার রঙের লেখা
. একটুও আর যায় না দেখা |
নূতন রঙে প্রাণের পাতে যারে আঁকি ,
. বাসছি ভালো তারেও যে,
. বলব না, তা মন কি বোঝে |
কেমন ক’রে কোন্ প্রাণে তায় দেব ফাঁকি ?
প্রথম দেখা কৈশোরেরই প্রান্তদেশে,
হরেছিলে পরান-মন এক নিমেষে |
. আজকে হেরি ভোরে উঠে,
. পরান-মন নিলে লুটে
নূতন ক’রে নূতনতর এ কোন্ বেশে !
কত রসে, কত যে ঐশ্বর্যভারে
দেহের ডালি উঠল ভরে বারে বারে |
. প্রতি ঊষার আলোর কোলে
. একটি ক’রে পাপড়ি খোলে,
তার পরিচয় শেষ ক’রে নিই দিনের শেষে |
. হে চির-রহস্যময়ী,
. আমার প্রাণের অর্ঘ্য বহি
তোমায় খুঁজি যৌবনের এ প্রান্তে এসে !
তোমার সবই যেমন ছিল তেমনি আছে ?
আমি ত আর নেই সে আমি আমার কাছে !
. প্রতিটি দিন নূতন প্রাতে
. হয় যে দেখা নিজের সাথে,
নূতন আলোর রঙ ঝরে কোন্ রঙিন কাচে |
নিজের মাঝে তাকিয়ে আজ পেলাম যারে,
ধরায় এল এই সে প্রথম এক্কেবারে |.
. আজ ভোরে তার শুভক্ষণে
. প্রথম দেখা তোমার সনে,
তাই বুকে তার প্রখর তালে রক্ত নাচে |
. কাল শুনেছ ভালোবাসে
. কার কাছে তা জানে না সে,
তার কথাটি শুনলে তবেই সেও বাঁচে ||
. ***************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
নৈপুণ্য
কবি সুধীরকুমার চৌধুরী
সুকুমার সেন সম্পাদিত “বাংলা কবিতা সমুচ্চয়”, প্রথম খন্ড থেকে নেওয়া।
. একদা নিপুণ হাতে,
মানুষ গড়িল তার অসিফলকের তীক্ষ্ণঘাতে
. প্রস্তরের সুন্দর মূরতি ;
. জ্বলি দীপারতি
কহিল সে, “এ মোর দেবতা, এর নাম
. ‘জাতি’ রাখিলাম |”
তারপর আপনার নৈপুণ্যের বহু বাখানিল |
সারা নিশি দিশে দিশে সঘনে হানিল
জয় জয় রব | ফুলমালা-দীপালি চন্দনে,
নৃত্যগীত-মহোত্সবে, শঙ্খঘন্টা বাঁশীর বন্ধনে
ধীরে রাত সারা হর | ---- পূর্বাকাশ তীরে
হোমাগ্নি শিখায় ঢালে নিশা তার শেষ আহুতিরে
. তমিস্রার পাত্র শূন্য করি |
সহসা সে নিশাকাশ ঘন ঘন উঠিল শিহরি
ঝঙ্ঝার ঝঙ্ঝনে | দিশে দিশে
চক্রের ঘর্ঘর সনে হুঙ্কার-উল্লাস যায় মিশে |
গুরু গুরু জয়ভেরী, ডঙ্কানাদ, কোদণ্ড টঙ্কারে
আরতি শঙ্খের ধ্বনি মগ্ন করি জাগে অহঙ্কারে
. মহা কলরোল | ওঠে রব,
“বাহির অঙ্গনে আজি সমবেত দেবতারা সব,
. নরের পূজায় অংশভাগী,
. আজিকার যজ্ঞভাগ লাগি |”
. তিনজন তাঁরা,
যুযুধান-বেশী যুদ্ধ, ক্রূর ঈর্ষ্যা, ভয় ভয়ঙ্করা |
. এ তিনের মাঝে
. যুদ্ধের হুঙ্কার নিয়ে ত্রিভুবন বাজে,
নিমেষে থামিল শঙ্খঘন্টা ধ্বনি, খর করতাল,
মৃদঙ্গ-রণন, নৃত্যগীতোত্সব | কূটবুদ্ধি-জাল
বহু ছলে বিস্তারিয়া, বহুতর প্রিয়ভাষে তুষি
ঈর্ষ্যা ও ভয়েরে তারা জয় করি নিল | পরে রুষি,
. যুদ্ধেরে করিল রুদ্ধকন্ঠ বুদ্ধিহারা |
তারপর উত্সবের দ্বারে দ্বারে উঠিল পাহারা,
শস্ত্রাগার শূণ্য করি ভরি দিল পূজা উপচার,
পুনরায় শঙ্খঘন্টা কোলাহল চৌদিকে প্রচারে
নূতন হর্ষের বার্তা | শান্তিমন্ত্র গীতে
তিন দেবতারে তারা বসাইল একটি বেদীতে |
. --- জাতি, ঈর্ষ্যা ভয়,----
এর নাম “আন্তর্জাতিকতা” তারা কয় |
দিকে দিকে জয় জয় সবে মেলি সঘনে হানিল,
আপনার নৈপুণ্যেরে পুনরায় বহু বাখানিল ||
. ***************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর