পথ চলার গান কবি সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায় স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘সত্তরের শহীদ লেখক শিল্পী’, ১৯৯৮ থেকে নেওয়া
সত্তর সালের বসন্ত এলো যখন শীতের কুয়াশার বিষণ্ণতা যক্ষা রুগীর মত আলো চাইছে, বাতাসে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতে চাইছে চিমনির মুখ দিয়ে অনবরত কালো ধোঁয়া . যেন, রক্ত আর ঘামের ধূপ . জ্বালিয়েছে ! সত্তর সালের ফাগুনে কোকিল-কন্ঠে প্রেমিকের সুর . আমায় ভালবাসো, . প্রিয়তমা, ভালবাসো আমায় . আর আমাদের ভাবনার সুরকে !
সুর যে বড় কঠোর | গান যে বড় নির্মম | ভালবাসার অধিকার পৃথিবীর দেশে-দেশে . প্রিয়তমা, তোমার ভালবাসা এমনিই !
তোমার সোনা বৌদির কথা মনে আছে ! অহল্যার কথা শোননি প্রিয়তমা, সেদিনের কথাও তো তোমার মনে আছে যেদিন বসন্তের নির্ঘোষ উত্তরের মেঘে-মেঘে, . আর তরায়ের কন্যার উলুধ্বনি ? ওটা তোমার সন্ধ্যা প্রদীপ নয়, ওটা হলো মশালের আলো ; তোমার শুনতে ভুল হয়েছে --- ওটা নয় উলুধ্বনি, ওটা . নির্মলার হাতে . রাইফেলের গর্জন !
২. আমি তো সেই তোমার প্রেমিক, যে এক দীর্ঘ রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে, . চলেছে সূর্যস্নানে ; তুমি তার সূর্যস্নাত প্রিয়া হবে না ?
সবুজ মাঠ আর জঙ্গল, সাঁওতাল পরগণা, অন্ধ্র আরও অনেক ঘুরে একটা শব্দ ভয়ংকর বিস্ফোরণের প্রতিধ্বনি তুলে চলেছে, চলেছে সত্তরের বসন্তকে নিয়ে তোমার-আমার ভালবাসাকে নিয়ে !
থাক, প্রিয়তম, আমার ভালবাসা ঐ ছোট্ট নীড়ে নয় ; একটা স্বপ্ন ----- বাঁচার সুন্দর ছন্দকে আনতে আমি চলেছি পথ হেঁটে আমি খুঁজে---- পাবই | বসন্তের প্রেমিক এখন রক্তের আলপনা আঁকছে গ্রাম-জনপদ ঘিরে . দূর হতে দূর . দূর হতে নিকটে . গোল হয়ে, তারপর . ছোট্ট হতে হতে . অন্ধকারের বাদুড়ের . রাত শেষে . এক ছোট্ট নীড়ে ! প্রিয়তমা, যদি সেদিন না থাকি, আর যদি, সেদিন বসন্ত আসে, আমার রাইফেলের ভাষাকে তুমি সুর দিও ; মনে রেখো, আমি পথ-চলার গান . ভালবাসতাম !