কবি তুষার চন্দ্র - জন্মগ্রহণ করেন মুর্শিদাবাদ জেলার পাঁচথুপি গ্রামে। পিতা রামপদ চন্দ্র ছিলেন গ্রামের
স্কুলের প্রধান শিক্ষক। কবির ডাক নাম নান্টু। চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন মেজ।

১৯৬২ সালে তিনি ইন্টারমিডিয়েট করে বাংলায় অনার্স নিয়ে পড়তেন কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজে। তিনি
বঙ্গবাসী কলেজের ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বে ছিলেন, বি.পি.এস.এফ.-এর নেতা হিসেবে।  তখন তাঁর ১৯ বছর
বয়স ধকে নিলে তাঁর জন্ম ১৯৪৩-৪৪ সালের আশেপাশে ধরে নিচ্ছি।

সেই সময়ে তাঁকে কলকাতার ট্রাম শ্রমিকদের কমিউনিস্ট নেতা নিতিশ শেঠ, কবিকে কুল্টি-
বার্ণপুর শিল্পাঞ্চলে নিয়ে যান পার্টির কাজের জন্য। পার্টির সর্ক্ষণের কর্মী হিসেবেও পার্টি থেকে কোনো ভাতা
পেতেন না। ছাত্র-ছাত্রী পড়িয়ে কাজ চলতো। কুলটি অঞ্চলে তাঁর নাম হয়েছিল “মাস্টারদা”! ভাল আবৃত্তি
করতেন এবং চমত্কার গান গাইতে পারতেন। সেই সময়ে নিতিশবাবুর নেতৃত্বে শিল্পাঞ্চলে বিভিন্ন কল-
কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে উঠছিল। কবি তুষার চন্দ্র দায়িত্ব পেয়েছিলেন বিড়লা গোষ্ঠির কেশোরাম-
রিফ্র্যাকট্রী, বরাকর ইলেক্ট্রিক সাল্পাই আর পুনুরি গ্রামের কৃষক সমিতির কাজের।

কমিউনিস্ট পার্টি ভাগ হবার পরে তিনি ঝোঁকেন সি.পি.আই.এম. -এর দিকে। খাদ্য আন্দোলনের সময়ে
আসানসোল শহরের মিছিলে তাঁকে দেখেছেন কেউ কেউ। যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠনের পর নকশালবাড়ী কৃষক
আন্দোলন গড়ে ওঠে। সে সময়ে তুষারবাবু “নকশালবাড়ী সহায়ক কমিটি”-র সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি
নকশালবাড়ী আন্দোলনে বর্ধমান জেলার দায়িত্ব পান। সম্ভবত জেলা সম্পাদক হয়েছিলেন। সেই সময়ে জেলা
কেন্দ্রীয় স্তরের মিটিংএ সরোজ দত্ত তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন।   

বেশিদিন আত্মগোপন করে থাকতে পারেন নি। ধরা পড়ে বর্ধমান জেলে বন্দী হন। পার্টির সিদ্ধান্ত অনুসারে
বর্ধমান জেল থেকে বন্দীদের পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৭ মে ১৯৭১
তারিখে ২৭ জন বন্দী জেল থেকে পালিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। কিন্তু কবি তুষার চন্দ্র ধরা পড়ে যান
চৌধুরী বাজার থেকে, কারণ পালাবার সময়ে তাঁর ধুতিতে কাদা লেগে গিয়েছিল। সেই দেখে পুলিশ তাঁকে
চিনে ফেলে।  

তাঁকে বুধবার, ২৭শে মে ১৯৭১ সালে বর্ধমান জেলের ভেতরে ওজন করার ভারি বাটখারা দিয়ে মেরে হত্যা
করা হয়। কুলটি শহরে তাঁর পাচ ভাই বোন থাকতেন। টেলিগ্রামে খবর পাবার পরেও মৃতদেহ কেউ নিতে
আসেন নি। তাঁর পরিবারে তাঁর জন্য কেউ গৌরব অনুভব করতেন না বলে জানা যায়।

আমরা  
মিলনসাগরে  কবি তুষার চন্দ্রর কবিতা  তুলে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পারলেই এই
প্রয়াসের সার্থকতা।

আমরা
কবি রাজেশ দত্তর কাছে ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ, কবি তুষার চন্দ্রর এই পাতাটি তৈরী করার সবরকম
তথ্য, আমাদের দেবার জন্য তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে।  আমরা আরও কৃতজ্ঞ শ্রী চিররঞ্জন পালের  
(চলভাষ +৯১৯৪৩৪৫১৬৮৯৮)  কাছে   তাঁর  নানাভাবে  এই পাতাটি তৈরী করতে  সাহায্য করার জন্য।
স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত  “এবং জলার্ক” থেকে ২৫.০৫.১৯৯৮ তারিখে প্রকাশিত “সত্তরের শহীদ লেখক
শিল্পী”, গ্রন্থ থেকে নেওয়া তথ্যাদি নেওয়া হয়েছে। আমরা তাঁদের কাছেও কৃতজ্ঞ।



উত্স - অচিন্ত্য বিশ্বাস, “নবারুণের স্বপ্ন : তুষারদার অনুষঙ্গে”, স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত সত্তরের শহীদ
.          লেখক শিল্পী, ১৯৯৮।



কবি তুষার চন্দ্রর মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন


আমাদের ই-মেল -
srimilansengupta@yahoo.co.in     

এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ৩.৬.২০১৫
...