কবি আজিজুল হক - নকশালবাড়ী আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা হিসেবেই পরিচিত। ভারতের
নকশাল আন্দোলনের প্রধান সংগঠক চারু মজুমদারের মৃত্যুর পরে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় কমিটির
প্রধান। তাঁর গ্রন্থ “কারাগারে ১৮ বছর” নকশাল বিদ্রোহ তথা ৭০ দশকের প্রামাণ্য দলিল।
তাঁর সি.পি.আই.(এম.এল) এর বহু বিতর্কিত ব্যক্তি হত্যা সহ বিভিন্ন অভিযোগে তিনি কারারুদ্ধ হন। ১৯৭৭
সালে জেল থেকে ছাড়া পাবার পর ১৯৮২ সালে তাঁকে আবার কারারুদ্ধ করা হয়। ১৯৮৬ সালে জেলের
ভেতরে তাঁর উপর নির্যাতন এবং পশ্চিমবঙ্গের জেলের সার্বিক দুরবস্থার কথা সংবাদপত্রে প্রকাশ পায়।
আজিজুল হকের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে বামফ্রন্টের আর.এস.পি. দলের দুই মন্ত্রী, দেবব্রত
বন্দ্যোপাধ্যায় এবং যতীন চক্রবর্তী জেলে গিয়ে আজিজুল হকের সঙ্গে দেখা করে বলেন, যে তাঁর প্যারোল
পাওয়া উচিত। খবরে প্রকাশ পায় যে কংগ্রেস নেতা সুব্রত মুখার্জী নাকি তাঁর শরীরে অত্যাচারের দাগও
দেখেছিলেন।
তিনি বর্তমানে সরাসরি রাজনীতিতে নেই। কলকাতায় গঠন করেছেন ভাষা শহীদ স্মারক সমিতি। লিখছেন
“সংবাদ প্রতিদিন” ও “আজকাল” সংবাদ পত্রে।
“কারাগারে ১৮ বছর” গ্রন্থটি তিনি জেলখানায় বসেই লিখেছিলেন। পুলিশের মহাফেজখানায় যাবার অপেক্ষায়
থাকা এই পাণ্ডুলিপিটি, আজকাল পত্রিকার সম্পাদক অশোক দাশগুপ্ত ও তাঁদের করিৎকর্মা সাংবাদিকের
তত্পরতায় জেলখানার বাইরে বেরিয়ে এনে খবরের কাগজে ছাপা হতে থাকে। এই গ্রন্থে রয়েছে, একদিকে
অকথ্য দৈহিক নির্যাতন অন্যদিকে তারই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানসিক নির্যাতনের কথা। একই দিনে সকালে
লাঠির বাড়িতে ঘুম ভাঙ্গা, দুপুরে পঁচা গলা খাবার, রাতে বিশেষ বিভাগের কর্তাদের মানসিক নির্যাতন। এর
সঙ্গেই নিজের কমরেডদের খুন হয়ে যেতে দেখা। সেই দুঃসহ অবস্থার মধ্যে দিয়েই লিখেছিলেন এই গ্রন্থটি।
এই বইটিতে তিনি চেষ্টা করেছিলেন জেলখানায় রাজনৈতিক বন্দীদের ওপর নির্যাতনের এক প্রমাণ তুলে
ধরতে।
জেল থেকে বার হওয়ার পরে তাঁর প্রতি তদানিন্তন বামফ্রন্ট সরকার সদয় হন এবং তাঁর ও তাঁর
পরিবারের থাকার ব্যবস্থা করে দেন।
তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে “লালটুকটুকে দিন”, “হায়না মানুষ”, “ছুটন্ত সময় ফুটন্ত মানুষ”, “হাতির
খোঁজে রাজা”, “মনু মহম্মদ হিটলার”, “কারাগারে ১৮ বছর” প্রভৃতি।
আমরা মিলনসাগরে কবি আজিজুল হকের কবিতা বা গণসঙ্গীত তুলে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে
পারলে এই প্রচেষ্টার সার্থকতা।
উত্স - মুক্ত-মনা.কম ওয়েবসাইটে, একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিবেদক অঞ্জন রায়ের নেওয়া
. সাক্ষাত্কার। অঞ্জন রায়ের ইমেল - anjan_etv@yahoo.com
কবি আজিজুল হকের মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন।
আমাদের ই-মেল - srimilansengupta@yahoo.co.in
এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ৯.৯.২০১৬
...