সবার জন্যে চাই শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কথা ও সুর – অনুপ মুখোপাধ্যায় সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসংগীত সংগ্রহ” থেকে নেওয়া [ কলকাতার স্টুডেন্টস হেলথ হোম আয়োজিত পদযাত্রা ৮৬’র প্রাক্কালে রচিত ]
সবার জন্যে চাই শিক্ষা ও স্বাস্থ্য আর কিছু ভাববার . আজ আর . নেই অবকাশ তো সবার জন্যে চাই শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ||
ঠিক শিক্ষার অভাবে লাখো প্রাণ ঝরে যায় কিভাবে . যদি জানতে অহমিকা---- বেড়াজাল ভাঙতে অন্ধজনে দিতে আলো মৃত্যুর বিষদাঁত যতই হোক না কেন ধারালো . কিছুটা তো পিছু হটতো তাই কিছু ভাববার . আজ আর . নেই অবকাশ তো সবার জন্যে চাই শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ||
তাই বলি সাথী আজ আলো জ্বাল্ সে আলোয় যাক পুড়ে দেহের বা চেতনার স্তরে স্তরে . জমা যত বীজাণুর জঞ্জাল |
শুধু, সুস্থ দেহই পারে নিতে ঠিক শিক্ষায় দীক্ষা | দেশে দেশে এই দীক্ষিত জনতাই --- অবশেষে এনেছে অপুষ্টি নামে . দানবের শেষ নিঃশ্বাস তো আর কিছু ভাববার আজ আর . নেই অবকাশ তো সবার জন্যে চাই শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ||
স্বপ্নলোক হতে রূঢ় বাস্তবের পথে এসো মিলি জীবনের মিছিলের সাথে বিশ্বমানবতার পতাকা উড়ছে দ্যাখো ঐ . লাখো জনতার হাতে ||
লক্ষ প্রাণবন্ধকারার অন্তরালে আজো ধুঁকে মরে ডাণ্ডাবেড়ী . ----বিনা বিচারের আঁধারে মুক্ত কন্ঠে তোলো এ আওয়াজ--- একটি রাতও কাটাবো না বিনা বিচারে . কোনো থানা লক-আপে ||
পৃথিবীর অন্ন বস্ত্র শিক্ষা আশ্রয় হবে দিতে হবে লক্ষকোটি ---- . ----মাটি মাতারই সন্তানে মুক্ত কন্ঠে তোলো এ আওয়াজ— এ দাবির কন্ঠরোধী কালা-আইনে জ্বালাবোই দু-হাতে ||
ও মোর দেশভাই কথা ও সুর – অনুপ মুখোপাধ্যায় সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসংগীত সংগ্রহ” থেকে নেওয়া
ও মোর দেশভাই সকল ভারতমাতার সুসন্তানে . ডাক দিয়ে যাই . শোনরে সবাই— ওরে মানুষ কেবল মানুষ শুধু জাতের কোনো বালাই নাই মোদের ধমনীতে যে খুন বহে লাল ছাড়া কোনো রঙই নাই ও মোর দেশভাই— বঙ্গদেশে জন্ম হলেও অসমীয়া মোর ভাই শোনরে সবাই ওরে মানুষ কেবল মানুষ শুধুই জাতের কোনো বালাই নাই মোদের ধমনীতে যে খুন বহে লাল ছাড়া কোনো রঙই নাই---
পাহাড় মোরে হাতছানি দেয় যখন মাদলের তালে তালে বিহুসুরের নেশায় দোলে এ মন ভেদাভেদ সব ঘুচে যায় জাতের বালাই কোথায় পালায় ! প্রেমহীন জাতের বিচার শোষণেরই হাতিয়ার . বোঝে মন ঠিক তখন ওরে মানুষ কেবল মানুষ শুধুই জাতের কোনো বালাই নাই মোদের ধমনীতে যে খুন বহে লাল ছাড়া কোন রঙই নাই ও মোর দেশভাই এক প্রদেশে জন্ম হলেও ভিন-রাজ্যবাসীও মোর ভাই শোনরে সবাই---- এ দেশের মাটি নদী পাহাড় কারখানা ক্ষেত খামার গ্রাম শহর সবই তোমার আমার বিভেদের শক্তি যে আজ উদ্যত ভাঙতে স্বরাজ ধ্বংস করতে তারে একতার অঙ্গীকারে মিলবেই কোটী প্রাণ মন ওরে সবার উপর মানুষ সত্যি জাতের কোনো বালাই নাই মোদের ধমনীতে যে খুন বহে লাল ছাড়া কোনো রঙই নাই ও মোর দেশভাই – উত্তরেতে জন্ম হলেও দক্ষিণীরাও মোর ভাই শোনরে সবাই---
ও মন্ত্রীমশাই গো কথা ও সুর – অনুপ মুখোপাধ্যায় সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসংগীত সংগ্রহ” থেকে নেওয়া [ কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন পাবলিক সেক্টর-এ কম্পিউটার অধিগ্রহণ ও কর্মসংস্থান সংকোচন নীতির বিরূদ্ধে রচিত এ গান ]
ও মন্ত্রীমশাই গো জলই জীবন মানো ঠিকই গো হায়রে হায় ! ( সেই ) জল তোমার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নাই ! বৃষ্টি পড়ে নদীও যে বয় হায়রে হায় জল তোমার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নাই তাই আজও মোরা জল খেতে পাই | জল ছাড়া বাঁচে না মানুষ ( আর ) খাদ্য ছাড়াও বাঁচে না মানুষ . জানো ঠিকই গো কিন্তু বেকার হয়ে থাকলে পড়ে খাবার বলো আসবে কি করে ? খাদ্য ছাড়া বাঁচে না মানুষ |
দেশের যত চাকরি তোমার নিয়ন্ত্রণে গো ( তবু ) বেকার করে রাখলে কেন গো ? যন্ত্রদানব আসলো বলে গো বেকার ছিলাম বেকার রবো গো ? ( হায় ) দেশের যত চাকরি তোমার নিয়ন্ত্রণে গো তাই বেকার করে রাখলে বুঝি গো ? মা বোনেদের বস্ত্র নাই কচি খোকার দুধ নাই ঘরে মোদের ইজ্জত নাই গো !
ও মন্ত্রীমশাই গো জনগণের ভোট বাগিয়ে গো বেকার করে রাখলে মোদের গো এর প্রতিদান পাবে ঠিকই গো---
স্বাধীনতা কবি অনুপ মুখোপাধ্যায় ''কোমল রেখাব'' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। কবির ফেসবুক পাতা থেকে নেওয়া। রচনা ১৩.৮.১৯৯২।
স্বাধীনতা মানে -- দেশের মাটি দু-ভাগ স্বাধীনতা মানে -- দেশের মানুষ -- ''যা ভাগ''... এই কি তবে স্বাধীনতা ? আস্ত একটা জাতির বিবেক অবনতা ! স্বাধীনতা !! # সাতচল্লিশের স্বাধীনতা -- রাতের আঁধারে ক্ষমতার হস্তান্তর ধান্দাবাজের দলপতি হল নেতা সবেতে আকাল, শুধুই আতান্তর... নেইকো কোথাও পরিত্রাতা স্বাধীনতা !! # কালোবাজারির দল ঝোলেনি কোথাও ল্যাম্পপোস্টে* পার্লামেন্টে হচ্ছে গোল এম. পি.-রা সব দিচ্ছে গোল, ফাঁকা গোলপোস্টে... পাঠিয়ে তাদের সংসদে বড়বাজারের মসনদে মুনাফাবাজেরা গাইছে লুটের কথকতা স্বাধীনতা !! # পুলিশ কিম্বা কোট প্যান্ট পরা জজসাহেব বিচারের বেলা কোথায় যে সব হয় গায়েব ! বখরার বেলা দেখি যে তাদের যথাতথা ! স্বাধীনতা !! # স্বাধীন বিবেক, রয়েছ কোথায় ? জঙ্গলে, না কি পাহাড়ে ? চারটে দশক কেটে গেল, তবু রয়েছো এখনো অনাহারে ! আসার আশায় টেনে যাই শ্বাস এখনো বন্ধ হয়নি তা স্বাধীনতা !!
কোমল রেখাব কবি অনুপ মুখোপাধ্যায় রচনাকাল-২২.৫.১৯৯২। ''কোমল রেখাব'' কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা। ভৈরব একটি ভোরের রাগ, এবং পুরবী একটি সান্ধ্যকালীন রাগ, যাতে sadness মিশে থাকে বলে কবির মনে হয়েছে।
এমন কোনো রাত নেই যা খুলে দেয় না সুর্যের সিংহ-দুয়ার ! # এমন কোনো দিন নেই যা আছড়ে পড়ে না কালো রাত্রির পায়ে ! # সরলরেখা ভেবে ভেবে বৃত্তের পায়ে পায়ে, হাঁটতে হাঁটতে ... ফের শুরুতে ফিরে এসে এসে ... এসব কথা সে বুঝেছে । # আর তাই তার কবিতায় আর থাকে না অনন্ত ভরসা বা নিদারুণ বর্ষা । # এখন তার প্রতিটি কবিতাতেই লেগে যায় কোমল রেখাবের কাঁপন ... # যা একইসাথে বয়ে আনে ভৈরবের আবাহন আর পুরবীর কান্না !
শ্মশানে কবি অনুপ মুখোপাধ্যায় কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে নিবেদিত। কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণ দিবস ১১.৭. ১৯৮৫ তারিখে লেখা। তাঁর শেষযাত্রায় কবিও ছিলেন। শ্মশান থেকে ফিরে তাঁর যা অনুভূতি হয়েছিল, তা লিখেছিলেন উপরের কবিতায় ১৬.৭.১৯৮৫ তারিখে । কবিতাটির আগে বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়েরই লেখা একটি কবিতার অংশ এপিগ্রাফ হিসেবে ব্যবহার করেছেন, এই কবিতায় প্রাণ প্রতিষ্ঠার জন্য। কবিতাটি প্রথমে "লেখক সমাবেশ" পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, পরে কবির কাব্যগ্রন্থ ''কোমল রেখাব''-এর অন্তর্ভুক্ত হয়।
[ '' এই নরকেও / 'মানুষ' নাম / তার গভীর মন্ত্রের উচ্চারণ /আমাদের নিঃশ্বাসের বাতাসকে / মধুময় করে '' - বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ]
আত্মায় অবিশ্বাসীরা তোমায় গান শোনাচ্ছিল! # এই যেমন সীসের অক্ষরে নাম ছাপাতে প্রণাম জানাচ্ছি ..... # শুধু এই ভরসা ---- অভিনেতারাও মুলত 'মানুষ', # আর, চুম্বকের পাশে এসে লোহাও চুম্বক হয় ।