কবি অনুপ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা ও গণসঙ্গীত
*
নামকরণ
কবি অনুপ মুখোপাধ্যায়
রচনাকাল-১২.৬.২০১৬। কলকাতার
BAMBOO VILLA-তে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন-এর প্রস্তুতি
নেবার কালে কবিতাটি মাথায় এসেছিলো ।


''নামেই মুক্তি''
দর্শনশাস্ত্র বলে ।
আবার সাহিত্যে আছে,
'' নামে কী আসে যায় ! ''
#
কানা ছেলের নাম যদি 'পদ্মলোচন'
হাসাহাসি হলেও, বুঝতে হবে--
ও-নামে মিশে আছে
বাবা-মায়ের ভালবাসা ...
#
আবার, রমা যদি সুচিত্রা
আর, অরুণ যদি উত্তম নাম নেন
তো, লোকে সর্বান্তকরণে মেনে নেয় ।
#
''ভুলে ভরা এই সংসারে ''
শ্যামবাজারে শ্যাম না থাকলেও
সব ভুল নয় ;
কালীঘাটে তো মাকালী আছেন...
#
গোলপার্কের কোলা ভিলায় কি আগে
কোকা কোলার কারখানা ছিল?
জানিনা ।
তবে, গোলপার্ক আর ত্রিকোণ পার্ক
সার্থকনামা ।
#
‘পোলিশ’ এমব্যাসিতে
কেউ কেউ যায় ডায়েরী করতে
ভাবে ওটা ‘পুলিশ’ থানা !
নাম-বিভ্রাট ...
#
রজনীগন্ধা কি শুধু
রজনীতেই গন্ধ ছড়ায় ?
বোধ হয় না ।
#
'সাহারা' নামটার মধ্যেই
একটা ধু ধু মরুর গন্ধ পাই
কেন? - জানিনা ।
#
হিমালয়
সত্যি সত্যি হিমের আলয় হলেও
মাতলা-নদী শুনেছি
বেশ শান্ত ।
#
যাক, আর কথা বাড়াচ্ছি না
ইয়াব্বড়ো কবিতা ফাঁদা
আমার কম্মো না ।
শুধু শেষ কথাটা বলি –
নানান নামকরণের
নানান ঠিক-ভুল আছে ঠিক-ই
চট্টগ্রাম যখন চিটাগং
আর, ঢাকা যখন ডেক্কা হয়
বুকে ধাক্কা লাগে ।
আমার প্রথম বস-এর পদবী
“ধক’’ শুনে
বুকটা ধক করে উঠেছিল !
এমনকি
ভুবনডাঙ্গা যখন শান্তিনিকেতন হয়ে যায়
খুব একটা শান্তি পাইনা ।
কিন্তু, ত্রিভুবনে একটা নামকরণ
বিশ্ব-ব্রহ্মান্ডের সব নামকরণকে
পেছনে ফেলে
সর্বজয়ের পতাকা উড়িয়ে হাসছে..
#
সর্বকালের সক্কলে নিশ্চই মানবেন
কলকাতার একটা অফিস-বাড়ির
যিনি নামকরণ করেছিলেন
তাঁর ধারেকাছে কেউ নেই…
#
মুনি- ঋষি, সাহিত্যিক, রাজনৈতিক নেতা
সব্বাই একশো মাইল পেছনে...
#
যাঁরা জানেন না
তাঁদের জন্য বলছি,
এ পি সি রোডে
কলকাতার ইনকাম ট্যাক্স অফিস বাড়ির নাম—
“বাম্বু ভিলা’’*
#
এর চেয়ে উপযুক্ত নাম
আর হতে পারে না......

.             ************************                 
.                                                                          
সূচীতে . . .    




মিলনসাগর
*
চে
কবি অনুপ মুখোপাধ্যায়
চে গুয়েভারার জন্মদিনে লেখা।


চারপাশে পড়ে শকুনের শব
ঈগলেরা যতো , উড়ে গেছে সব
শুরু হয়ে গেছে জোর উৎসব
নাচছে , গাইছে কেউ বা
একটু আগেই মুক্তি পেয়েছে কিউবা .....
#
ঘরে রেখে দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র
আকাশের নীচে ফিদেল কাস্ত্রো
খুঁজছে তার বন্ধুকে,
জানেনা তো সে যে
সৈনিক সেজে
নতুন করে পালিশ করছে বন্দুকে .....
#
আর্জেন্টিনা, কিউবার পরে
অলিভ পোষাকে যাবে সে এবার বলিভিয়া
দুচোখে অশ্রু , রুমাল নাড়ে কাস্ত্রো ভায়া ....
#
চে
বলিভিয়া থেকে ফিরতে পারেনি বেঁচে
সারা পৃথিবীর শোষিত মানুষ
তারই নামে আজও বাঁচে ....
#
যেখানেই নিপীড়ন
সেখানে পাল্টা রণ
সেখানে পাল্টা লড়া,
লড়াইয়ের আঁচে বাতাস যোগায়
আরনেস্টো চে গুয়েভারা .....

.             ************************                 
.                                                                          
সূচীতে . . .    




মিলনসাগর
*
যুগ-পরিবর্তন
কবি অনুপ মুখোপাধ্যায়
রচনাকাল ৪.১১.১৯৮৭ । ''কোমল রেখাব'' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।


কবির বাণী অবিনশ্বর, শাশ্বত ।
কিন্তু যুগের সাথে
হয় পরিবর্তন
অন্তত যতি চিহ্নে .....
#
কবি বলেছিলেন----
'' মানুষ আমরা, নহি তো মেষ । ''
কালের করাল প্রভাবে, এখন---
'' মানুষ আমরা নহি । -- তো ? ---মেষ ।। ''
#
কবির শব্দ-চয়ন
মিথ্যে নয় কখনো ।
কালের প্রভাবে
যদিও বা ঘটে
যতি চিহ্নে অদলবদল !

.             ************************                 
.                                                                          
সূচীতে . . .    




মিলনসাগর
*
সভ্যতার স্তম্ভ
কবি অনুপ মুখোপাধ্যায়
হো চি মিন-এর জন্মদিনে লেখা। তাঁকে স্মরণ করেই কবিতাটি রচনা করেছিলেন।
ফিদেল কাস্ত্রো-কেও তাঁর প্রাপ্য সম্মান জানানোর চেষ্টা করেছেন, একই পথের পথিক
হিসেবে। "ক্যানিমার" কিউবার একটি নদীর নাম।



ছোট্ট দুটি দেশ
ঘিরে আছে পাম , পাইন
খাটেনি সেখানে নাপাম বোমার আইন
#
হার মেনে যায়, যতো পারমাণবিক অস্ত্র
হাল ধরে যদি হো চি মিন ,
হাল ধরে যদি কাস্ত্রো ...
#
লুঠেরার দল ,
তোর হাতে নেই এই পৃথিবীর ভার
আজও বয়ে চলে মেকং ,
আজও বয়ে চলে ক্যানিমার .....

.             ************************                 
.                                                                          
সূচীতে . . .    




মিলনসাগর
*
বড় সাধ হয়
কবি অনুপ মুখোপাধ্যায়
৮০র দশকের রচনা। ''এখন অন্ধকার '' কাব্যগ্রন্থের কবিতা।


বেঁচে থাকতে বড় সাধ হয়
যাতে দেখতে পারি
সব্বাই ভাত খাচ্ছে
#
বেঁচে থাকতে বড় সাধ হয়
যাতে দেখতে পারি
আগাছা সব নির্মূল
#
বেঁচে থাকতে বড় সাধ হয়
যাতে শুনতে পারি
সব্বাই গাইছে ---
'' গাও ইন্টারন্যাশনাল ,
......মিলাবে মানব জাত....''

.       ************************                 
.                                                                          
সূচীতে . . .    




মিলনসাগর
*
অভাগা
কবি অনুপ মুখোপাধ্যায়
রচনা ২১.২.১৯৯২। ''কোমল রেখাব'' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
১৯৫০ সালের ২৭এপ্রিল একটি মিছিলে প্রতিভা, লতিকা, অমিয়া ও গীতা গুলীবিদ্ধ হয়ে
মারা যান তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের আমলে। সিপিএমের মতে ভারতে কম্যুনিস্ট
পার্টি তৈরি হয় ১৯২০। সিপিআইয়ের মতে ১৯২৫। তখন ছিল অবিভক্ত পার্টি। ১৯৬৪-তে
পার্টি ভাগ হয়ে সিপিআই ও সিপিএম গঠিত হয়। ১৯৬৯ সালে পার্টি আবার ভেঙ্গে
সিপিআই এম এল তৈরি হয়।



জমির হক পেতে
তেভাগা আন্দোলনে
যারা বুকের রক্ত ঝরিয়েছে ....
জমির বদলে
দশক পেরোতে না পেরোতেই
নিজেদেরই তেভাগ করেছে !
#
আমি অভাগা
তেভাগার
অহল্যা মা-র সন্তান ।
(তোমরা জাননা )
গুলি খেয়েও, আজো মরিনি
এবং, হ্যাঁ, আজও অ-ভাগা !

#
কোনও ঘরের
দিশা না পেয়ে
পথে পথে ঘুরি
প্রতিভা , লতিকা , অমিয়া
আর গীতা মাসীর স্মৃতি বয়ে ....
#
বুক পকেটে
সযত্নে রাখা লাল পতাকার
তারিখ--১৯২০কি ১৯২৫, ১৯৬৪
বা ১৯৬৯-সত্তর দশকের নয়
খোদিত আছে--
১.৫.১৮৮৬,শিকাগো ।

.       ************************                 
.                                                                          
সূচীতে . . .    




মিলনসাগর
*
নববর্ষের ভাবনা
কবি অনুপ মুখোপাধ্যায়
রচনাকাল - পয়লা বৈশাখ, ১৪২৩


কাল সারারাত
শুয়েছিলাম জড়িয়ে
চৈত্রের শেষ দিনটিকে .....
#
সূর্যোদয়ের কয়েক মুহূর্ত আগে
সে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললো --
যাই ...
এবার থেকে আমি থাকবো
ইতিহাসের পাতায়
টা টা ....
#
আমি বললাম ---না
আমার আত্মার পাললিক স্তরে ,
রিসাইকেল বীণ-ও বোলতে পারো,
তুমি থাকবে
জন্ম থেকে আর সব চৈত্রসংক্রান্তির সাথে ।
তোমাদের ঋণ
আমি আজো শুধতে পারিনি
আমার বড্ড দেরী হয়ে যাচ্ছে ....
#
অনেক রক্ত ঢেলেছ
রক্তের দেনা, সুদে সুদে পাহাড় !
#
শস্য-শ্যামল বসুন্ধরায়
ড্রাকুলারা শুধু জাগে
হায়নারা শুধু হাসে ....
এদের নিকেশ করার উপায়
আজো অজানা !
#
তবু আশায় জেগে উঠি
মুখে বলি --
'শুভ নববর্ষ' ! 'ওম শান্তি' !
বুকের হাপড়ের ওঠাপড়ায়
চলে শুধু হিসেব-নিকেশ
শয়তানেরা হবে নিকেশ ....
#
তারপর
জঞ্জালমুক্ত ধরণীতে
তোমাদের হাত ধরে
পাড়ি দেবো
ইতিহাসের মহাফেজখানায় ....

.       ************************                 
.                                                                          
সূচীতে . . .    




মিলনসাগর
*
বস্তিবধুর পাঁচালী
কবি অনুপ মুখোপাধ্যায়
কবিতাটি ৮০-র দশকে রচিত।


হেই ভগবান ,
ভুট য্যান্‌ আসে পির্তি-মাসে
তাইলে পরে, জাট- টাট পরে
নালীটার আশেপাশে
গাঁজায় মত্ত আকাম সোমত্ত সোয়ামির
পকিটেও কিসু আসে...

একবেলা রই উপোসে
হেইগো ঠাকুর
ভুট য্যান আসে
পির্তি-মাসে....

.       ************************                 
.                                                                          
সূচীতে . . .    




মিলনসাগর
*
কবির ক্ষমতা - এ দেশে
কবি অনুপ মুখোপাধ্যায়
রচনা ২৮.১০.১৯৮২। কবিতা আর কবির ক্ষমতা সমার্থক, এই ধারণায় লেখা কবিতাটি
''ফুটবল'' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।


অত্যাশ্চর্য এই কলমের ডগা !
#
এটা দিয়েই তো আমি কতো
পূঁজিপতিকে ঝেড়েছি লাথি
আর , মন্ত্রীকে ঠাঁটিয়ে থাপ্পড় !
#
এরই মসৃণ সঞ্চারণে , পেলাম
থরোথরো প্রথম পরশ প্রিয়ার ...
#
দেবরাজের অমরাবতীর ঐশ্বর্য
লুঠ করে এনে বিলিয়ে দিয়েছি
পৃথিবীর প্রতিটি ঘরে,
যেখানে, অমৃতপুত্রদের চোখের মণি গ'লে
আজো ঝরে পড়ে
তরল মুক্তো ....
এই তিনটাকার কলমের খোঁচায় ।
#
তারপর কলমের গুঁতোয়
ভারতের লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী জনতা ও
তরতাজা বিপ্লবী তরুণের মিছিলকে
আকাশ বাতাস কাঁপানো স্লোগানে
দিল্লীর পথে এগিয়ে দিয়ে
মা'র কাছে চাইলাম এক টাকা আশী পয়সা
--- এক দিস্তে কাগজের দাম ।।

.       ************************                 
.                                                                          
সূচীতে . . .    




মিলনসাগর
*
পুরাতনী
কবি অনুপ মুখোপাধ্যায়
রচনা ২৮.১.১৯৯৩। বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার পরে। কবিতাটি প্রথমে ''লেখক সমাবেশ''
পত্রিকায় ও পরে “কোমল রেখাব” কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়।


সম্প্রতি
চিড় খেয়ে গেছে নাকি সম্প্রীতি !
#
জেনো এটা নয় শুধু সম্প্রতির
হৃদয় ঢুঁড়তে হবে জনপ্রতির !
#
যদি মেশো মানুষের ভীড়ে
দেখবে রয়েছে বিষ অনেক গভীরে ....
#
দেশটাকে দু-টুকরো করে কেটে
লালমুখো বজ্জাত গেল কেটে ....
#
এ-পাপের সাগরেদ ব্রিটিশ দালাল
গান্ধী জিন্না আর জবাহরলাল
#
দেশের মাটিতে ঐ সেঁকো বিষ
পোঁতা হলো উনিশশো সাতচল্লিশ !
#
সেই থেকে ছড়িয়েছে ডালপালা
বাবরি-ভাঙন যার নয়া পালা ।।

.       ************************                 
.                                                                          
সূচীতে . . .    




মিলনসাগর