আমরা সেইদিন চাইবো না যুদ্ধ কথা - কবি অপরূপ রায় সুর - জলি বাগচী জলি বাগচী ও দিপালী সেনগুপ্ত সম্পাদিত “গণবিষানের গানের স্বরলিপি” ( ২০১২ ) থেকে নেওয়া | ( ১৯৯১ সালে আমেরিকায় ইরাক যুদ্ধের সময় রচিত হয়েছিল গানটি | )
আমরা সেইদিন চাইবো না যুদ্ধ যবে আমেরিকা হবে অবরূদ্ধ নিজের দেশে
ততদিন তৃতীয় বিশ্বজুড়ে প্রতিরোধী যুদ্ধের সব শিবিরে উঠুক শিশুরা বেড়ে বন্দুকের নল ভালবেসে--- হেসে হেসে
আমরা সেইদিন চাইবো না যুদ্ধ যবে আমেরিকা হবে অবরুদ্ধ নিজের দেশে
আমরা দেখেছি ভিয়েতনামে শহরে, পাহাড়ে, গ্রামে মার্কিনী হামলায় কত প্রাণ যায় উড়ে এসে ভিন্ দেশে নির্মল বাতাসে হানাদার দস্যুরা কি বিষ ছড়ায়
কিছু বেইমানকে ক’রে প্রলুব্ধ আমেরিকা চালিয়েছে যুদ্ধ পরের দেশে | ( তাই ) আমরা সেইদিন চাইবো না যুদ্ধ যবে আমেরিকা হবে অবরুদ্ধ নিজের দেশে |
( ওরা ) জ্বালিয়েছে ঘর-বাড়ি এশিয়ায় ( ওরা ) দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকার ধনসম্পত্তি লুঠে নিয়ে যায় |
আমরা দেখেছি কোরিয়ায়, কিউবায়, পানামায় গ্রেনাডায় দানবেরা যুদ্ধ বাধায় বাগদাদে, বাসরায় হাজার লাশের পরে কালো গণতন্ত্রের পতাকা ওড়ায় |
আজ মরুভূমি ত্রস্ত ও ক্রুব্ধ ইরাকে বারুদ হল শুদ্ধ সাগরে মিশে |
আমরা সেইদিন চাইবো না যুদ্ধ যবে আমেরিকা হবে অবরুদ্ধ নিজের দেশে |
এ লড়াই বাঁচার লড়াই কথা - কবি অপরূপ রায় সুর - জলি বাগচী জলি বাগচী ও দিপালী সেনগুপ্ত সম্পাদিত “গণবিষানের গানের স্বরলিপি” ( ২০১২ ) থেকে নেওয়া |
এ লড়াই বাঁচার লড়াই এ লড়াই জিততে হবে শীর্ণ জীর্ণ হাতেই এ বাঁধন ছিঁড়তে হবে |
এ লড়াই ঝঞ্জা তোলে চেতনায় প্রাণে প্রাণে কখনও উজান ঠেলে কখনও স্রোতের টানে কখনও বদ্ধ আকাশ কখনও ঝড়ের হাওয়া কখনও ভগ্ন হতাশ কুয়াশার পথ না পাওয়া তবু এই লক্ষ হাতে বৈঠা বেয়ে মিলন তীরে ভিড়তে হবে | এ লড়াই বাঁচার লড়াই এ লড়াই জিততে হবে |
এ লড়াই তোমার আমার হৃদয়ে ফুল ফোটাবার রক্ষ মাঠের বুকে সোনালি ধান ফলাবার সেই ধান লুঠ হয়ে যায় লুন্ঠন রুখতে হবে এ লড়াই বাঁচার লড়াই ---- |
এ লড়াই গভীর খাদে ঝরিয়ায় ধানবাদে কাটে ঝাড়খন্ডী যুবক কালো হীরে কালো হাতে সে হীরে লুট হয়ে যায় লুন্ঠন রুখতে হবে |||
এ লড়াই নীল সাগরে উত্তাল ঢেউয়ের তালে সূর্য ওঠার আগে লাখো মাছ পড়বে জালে সেই মাছ লুঠ হয়ে যায় লুন্ঠন রুখতে হবে এ লড়াই বাঁচার লড়াই ----- |
এ লড়াই আকাশছোঁয়া প্রাসাদের চূড়ার পরে রূপালি ঘাম যেখানে স্বপ্নের সৌধ গড়ে সেই ঘাম লুঠ হয়ে যায় লুন্ঠন রুখতে হবে এ লড়াই বাঁচার লড়াই ---- |
এ লড়াই বন্ধ দ্বারে সজোরে কড়া নাড়ায় ধোঁয়াহীন চিমনি সেথায় মৃত্যুর থাবা বাড়ায় নিশ্বাস লুঠ হয়ে যায় লুন্ঠন রুখতে হবে এ লড়াই --- |
এখন আর কোরো নাকো এটা চাই ওটা চাই কথা - কবি অপরূপ রায় সুর - অপরূপ রায় ও জলি বাগচী জলি বাগচী ও দিপালী সেনগুপ্ত সম্পাদিত “গণবিষানের গানের স্বরলিপি” ( ২০১২ ) থেকে নেওয়া | ( বিংশ শতাব্দীর ৮০-এর দশকে ভারতবর্ষে বিভিন্ন প্রান্তে যখন একদিকে বঞ্চিত জনজাতি ও গোষ্ঠীরা তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছে, অন্যদিকে শ্রমিক-কৃষক ও অন্যান্য নিপীড়িত শ্রেণীর লড়াই যখন দানা বাঁধছে, তখন শাসকগোষ্ঠী একবাক্যে এই সমস্ত লড়াইকে বিচ্ছিন্নতাবাদ আখ্যা দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার নামে চূড়ান্ত নিপীরণ শুরু করে এবং দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে | এই বিভ্রান্তি কাটানোর লক্ষ্যে শাসকদের চরিত্র উন্মোচনের জন্য এবং ‘প্রকৃত’ ও ‘মেকি’ গণতন্ত্রের তফাৎ টানার জন্য রচিত হয়েছিল গানটি | )
এখন আর কোরো নাকো এটা চাই ওটা চাই দেশের এই দুর্দিনে খিদে ভুলে থাকো ভাই সারা দেশ জুড়ে আজ শত্রু তো একটাই . বিচ্ছিন্নতাবাদ |
বিচ্ছিন্নতা পাঞ্জাবে আসামে বিচ্ছিন্নতা কাশ্মীরে মিজোরামে বিচ্ছিন্নতা ঝাড়খণ্ডী বনে বিচ্ছিন্নতা তামিলের মনে মনে . বিচ্ছিন্নতাবাদ |
চারিদিকে কেন এত দাবি দাওয়া উঠছে জাতি নিয়ে ভাষা নিয়ে এত লোক মরছে এ সবের পেছনের কারণটা হচ্ছে . বিচ্ছিন্নতাবাদ |
ও আঙ্কল একটা খেলা বলো না কথা - কবি অপরূপ রায় সুর - জলি বাগচী জলি বাগচী ও দিপালী সেনগুপ্ত সম্পাদিত “গণবিষানের গানের স্বরলিপি” ( ২০১২ ) থেকে নেওয়া | ( ১৯৮৬ সালে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ভারতবর্ষের নিপীড়িত জনজাতি ও গোষ্ঠীর সংগ্রামগুলিকে ধামাচাপা দেবার জন্য সারা দেশে শুধু চুক্তি করে বেড়াতে থাকেন | এমন কি তামিল টাইগারদের মোকাবিলা করার জন্য শ্রীলঙ্কায় শান্তিসেনা পাঠান | রাজীবের এইসব হাস্যকর প্রচেষ্টাগুলিকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে গানটিতে | )
ও আঙ্কল একটা খেলা বলো না যাতে কোনও নেই হার জিত শুধু চুক্তি চুক্তি চুক্তি চুক্তি চুক্তি চুক্তি চু - কিৎ -- কিৎ |
পাঞ্জাব জুড়ে কারফিউ করে কয়েক হাজার জেলে পুরে “কালো বেড়াল” সঙ্গে নিয়ে গেয়ে এলাম শান্তির গীত | তাই চুক্তি চুক্তি চুক্তি চুক্তি চুক্তি চুক্তি চু - কিৎ - কিৎ |
কেন এখনও অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াও সাথী কথা - কবি অপরূপ রায় সুর - জলি বাগচী জলি বাগচী ও দিপালী সেনগুপ্ত সম্পাদিত “গণবিষানের গানের স্বরলিপি” ( ২০১২ ) থেকে নেওয়া |
কেন এখনও অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াও সাথী পথ তো সবার চেনা কেন এখনও বন্ধ দ্বারে আটকে আছ সাথী ভাঙবার মন্ত্র সবার জানা
কেন এতকাল পুরোনো বুলির আড়ালে নিজেকে হতাশার স্বপ্নে জড়ালে কেন এখনও মিথ্যে মোহের জালকে নিজ হাতে ছিঁড়তে পার না !
আজও বাতাসে ব্যর্থ নিশ্বাসে কান্না আর বারুদের গন্ধ যে ভাসে
আজও প্রতিদিন এদেশের গ্রামে শহরে লাখো লাখো আধা ফোটা ফুল ঝরে পড়ে কেন এখনও ঝরে পড়া পাপড়ির আগুন নিয়ে হৃদয় বাগানে তুফান তোল না |
কেন খরা ও বন্যা আসে বছর বছর কথা - কবি অপরূপ রায় সুর - জলি বাগচী জলি বাগচী ও দিপালী সেনগুপ্ত সম্পাদিত “গণবিষানের গানের স্বরলিপি” ( ২০১২ ) থেকে নেওয়া |
কেন খরা ও বন্যা আসে বছর বছর . দাও আজ জবাব দাও | কেন ভাঙে ভিটে বাড়ি ভাসে গ্রাম ও শহর . দাও আজ জবাব দাও | মায়া কান্নায় ভুলবো না শোষণের বঞ্চনা . দাও আজ জবাব দাও |
হায়, তিরিশ বছর পার আমারা স্বাধীন . তিরিশ বছর হায় পার তবু চোখের জলেই ভাসে রাত্রি ও দিন . মারী ও মড়ক হাহাকার | বলি, প্রশাসনে বসে তবে করলেটা কি . দাও আজ জবাব দাও | বলি, আর কতকাল বল চলবে ফাঁকি . দাও আজ জবাব দাও |
যে নদী হোয়াংহো ছিল দুঃখ চীনের আজ তা উপচে দেয় সুখ জলের ধারায় ভাসে ফসলের গান আর নাচে জলবিদ্যুৎ |
হায়, গঙ্গাযমুনা তবু আজও অভিশাপ . গঙ্গাযমুনা তবু হায় | আহা কত প্রাণ মুছে যায় কে রাখে হিসাব . নিষ্ঠুর এ খরা-বন্যায় | বলি, কেন এ মৃত্যু অসহায়ের মতন . দাও আজ জবাব দাও | বলি, পশুর মত আজও কেন এ জীবন . দাও আজ জবাব দাও |
ঝরো ঝরো ঝরে শ্রাবণ কথা - কবি অপরূপ রায় সুর - জলি বাগচী ও অপরূপ রায় জলি বাগচী ও দিপালী সেনগুপ্ত সম্পাদিত “গণবিষানের গানের স্বরলিপি” ( ২০১২ ) থেকে নেওয়া |
ঝরো ঝরো ঝরে শ্রাবণ আকাশ জুড়ে মেঘের নাচন শুধু আমার পোড়া এ মন জুড়ালো না হায় আজও বৃষ্টি ভরা সাঁঝে পাতায় পাতায় কি সুর বাজে কান্না আমার বুকের মাঝে ফুরালো না হায় |
কবে সেই কোন লগনে, লক্ষ প্রাণের আহ্বানে ভাসিয়েছিল কারা ডিঙ্গা আসীম অজানায় হায় |
বড় মায়া লাগে ছাড়িতে এ আরাম কথা - কবি অপরূপ রায় সুর - জলি বাগচী জলি বাগচী ও দিপালী সেনগুপ্ত সম্পাদিত “গণবিষানের গানের স্বরলিপি” ( ২০১২ ) থেকে নেওয়া | ( ১৯৯০ –এর ৩১শে জুলাই খাদ্য আন্দোলনের শহীদ স্মরণ দিবসে আবার কলকাতায় সাধারণ মানুষের মিছিলের ওপর গুলি চলে এবং একজন ক্ষেতমজুর মারা যান | ঘটনাটি ঘটে কলকাতার রাণী রাসমণি রোডে | পাশেই সিধু-কান্ হু ডহরে তখন বামফ্রন্ট্র সরকারের উদ্যোগে খাদ্য আন্দোলনের শহীদ স্মরণ উত্সব চলছিল | )
বড় মায়া লাগে ছাড়িতে এ আরাম তাই ছেড়েছি লড়াই আর ভুলেছি সংগ্রাম ||
এখন মনে আফশোষ জাগে কেন যে বুঝিনি আগে ( আমি ) নইলে বিধানবাবুর আগে এমনি এমনি ছাগল চরাতাম ||
’৬৭-তে নকশালবাড়ি ( আর ) ‘৭৮-এ মরিচঝাঁপি যদিও জনতা উঠেছে কাঁপি আমরা দিয়েছি পুলিশকে হাজারো সেলাম ||
কলকারখানা সব বন্ধ হয়ে যায় না থাকলে ভায়াবিলিটি কি বা উপায় ( তবু ) শিল্পে শান্তি রেখেছি বজায় তাই খুশি গোয়েঙ্কা আর চলতরাম ||
এখন ১৩ বছর ধরে ফুলে ফেঁপে গায় গতরে মোদের ভরসা পুলিশ গুণ্ডা ক্যাডারে আমরা নইলে গদী কবেই হারাতাম |
আমরা এখন করছি শাসন ( তাই ) আন্দোলনের নেই প্রয়োজন ( তবু ) তোমরা যখন শুনলেনা বারণ আমরা ক্ষেতমজুরের বুকে গুলি চালালাম ||