কবি অপরূপ রায়ের গণসঙ্গীত
*
আমরা সেইদিন চাইবো না যুদ্ধ
কথা - কবি অপরূপ রায়  
সুর - জলি বাগচী
জলি বাগচী ও দিপালী সেনগুপ্ত সম্পাদিত “গণবিষানের গানের স্বরলিপি” ( ২০১২ ) থেকে
নেওয়া | ( ১৯৯১ সালে আমেরিকায় ইরাক যুদ্ধের সময় রচিত হয়েছিল গানটি |  )


আমরা সেইদিন চাইবো না যুদ্ধ
যবে আমেরিকা হবে অবরূদ্ধ
নিজের দেশে

ততদিন তৃতীয় বিশ্বজুড়ে
প্রতিরোধী যুদ্ধের সব শিবিরে
উঠুক শিশুরা বেড়ে
বন্দুকের নল ভালবেসে---
হেসে হেসে

আমরা সেইদিন চাইবো না যুদ্ধ
যবে আমেরিকা হবে অবরুদ্ধ
নিজের দেশে

আমরা দেখেছি ভিয়েতনামে
শহরে, পাহাড়ে, গ্রামে
মার্কিনী হামলায় কত প্রাণ যায়
উড়ে এসে ভিন্ দেশে নির্মল বাতাসে
হানাদার দস্যুরা কি বিষ ছড়ায়

কিছু বেইমানকে ক’রে প্রলুব্ধ
আমেরিকা চালিয়েছে যুদ্ধ
পরের দেশে |
( তাই ) আমরা সেইদিন চাইবো না যুদ্ধ
যবে আমেরিকা হবে অবরুদ্ধ
নিজের দেশে |

( ওরা ) জ্বালিয়েছে ঘর-বাড়ি এশিয়ায়
( ওরা ) দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকার ধনসম্পত্তি
লুঠে নিয়ে যায় |

আমরা দেখেছি কোরিয়ায়, কিউবায়, পানামায়
গ্রেনাডায় দানবেরা যুদ্ধ বাধায়
বাগদাদে, বাসরায় হাজার লাশের পরে
কালো গণতন্ত্রের পতাকা ওড়ায় |

আজ মরুভূমি ত্রস্ত ও ক্রুব্ধ
ইরাকে বারুদ হল শুদ্ধ
সাগরে মিশে |

আমরা সেইদিন চাইবো না যুদ্ধ
যবে আমেরিকা হবে অবরুদ্ধ
নিজের দেশে |

.        *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
এ লড়াই বাঁচার লড়াই
কথা - কবি অপরূপ রায়
সুর - জলি বাগচী
জলি বাগচী ও দিপালী সেনগুপ্ত সম্পাদিত “গণবিষানের গানের স্বরলিপি” ( ২০১২ ) থেকে
নেওয়া |


এ লড়াই বাঁচার লড়াই
এ লড়াই জিততে হবে
শীর্ণ জীর্ণ হাতেই এ বাঁধন ছিঁড়তে হবে |

এ লড়াই ঝঞ্জা তোলে চেতনায় প্রাণে প্রাণে
কখনও উজান ঠেলে কখনও স্রোতের টানে
কখনও বদ্ধ আকাশ কখনও ঝড়ের হাওয়া
কখনও ভগ্ন হতাশ কুয়াশার পথ না পাওয়া
তবু এই লক্ষ হাতে বৈঠা বেয়ে মিলন তীরে ভিড়তে হবে |
এ লড়াই বাঁচার লড়াই এ লড়াই জিততে হবে |

এ লড়াই তোমার আমার হৃদয়ে ফুল ফোটাবার
রক্ষ মাঠের বুকে সোনালি ধান ফলাবার
সেই ধান লুঠ হয়ে যায় লুন্ঠন রুখতে হবে
এ লড়াই বাঁচার লড়াই ---- |

এ লড়াই গভীর খাদে
ঝরিয়ায় ধানবাদে
কাটে ঝাড়খন্ডী যুবক
কালো হীরে কালো হাতে
সে হীরে লুট হয়ে যায়
লুন্ঠন রুখতে হবে |||

এ লড়াই নীল সাগরে উত্তাল ঢেউয়ের তালে
সূর্য ওঠার আগে লাখো মাছ পড়বে জালে
সেই মাছ লুঠ হয়ে যায় লুন্ঠন রুখতে হবে
এ লড়াই বাঁচার লড়াই ----- |

এ লড়াই আকাশছোঁয়া প্রাসাদের চূড়ার পরে
রূপালি ঘাম যেখানে স্বপ্নের সৌধ গড়ে
সেই ঘাম লুঠ হয়ে যায় লুন্ঠন রুখতে হবে
এ লড়াই বাঁচার লড়াই ---- |

এ লড়াই বন্ধ দ্বারে সজোরে কড়া নাড়ায়
ধোঁয়াহীন চিমনি সেথায় মৃত্যুর থাবা বাড়ায়
নিশ্বাস লুঠ হয়ে যায় লুন্ঠন রুখতে হবে
এ লড়াই --- |

.        *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
এই ছেলেটা ভেলভেলেটা
কথা - কবি অপরূপ রায়
সুর - জলি বাগচী
জলি বাগচী ও দিপালী সেনগুপ্ত সম্পাদিত “গণবিষানের গানের স্বরলিপি” ( ২০১২ ) থেকে
নেওয়া |
    
                   
এই ছেলেটা ভেলভেলেটা
শহরপানে যাবি
চায়ের দোকানে বা বাবুর মকানে
চৌপর ঘন্টা খাটবি |

তোর বাপ গিয়েছে কোন সকালে
হাটে মাটে বিলে খালে
মাটি কেটে, জল ছেঁচে
সারাটা দিন রক্ত বেচে
আসবে কখন শুকনো মুখে
সেই ভরসায় থাকবি |

তাই শোন ছেলেটা ভেলভেলেটা
কেন মিছে উপোস করবি ?
তোর ছোট্ট শরীরে ঘাম ঝরিয়ে
সুখের জীবন গড়বি |

তোর মা গিয়েছে পরের ঘরে
দুধের ভাইকে কাঁখে করে
বাসন মেজে, কাপড় কেচে
সারাটা দিন রক্ত বেচে
আসবে কখন শুকনো মুখে
সেই ভরসায় থাকবি |

তাই চল ছেলেটা ভেলভেলেটা
জুতো পালিশ করবি
নয় মোটর গ্যারেজে
বা লেদ মেশিনে
তেলকালি মাখবি |

তোর লেখাপড়া চুলোয় যাক্
তোর ফুলের শরীর ধুলোয় থাক্
কবে কোন্ প্রভাতে স্বর্গ হতে
আসবে নিতে স্বর্ণরথে
পরীর দেশের মা টেরিজা
সেই ভরসায় থাকবি

তাই চল ছেলেটা ভেলভেলেটা
ক্ষুদে হাতে পাথর ভাঙবি
আর রাত্রি হলে, লক্ষ তারার কোলে
পরান ভরে কাঁদবি ||

.        *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
এখন আর কোরো নাকো এটা চাই ওটা চাই
কথা - কবি অপরূপ রায়
সুর - অপরূপ রায় ও
জলি বাগচী
জলি বাগচী ও দিপালী সেনগুপ্ত সম্পাদিত “গণবিষানের গানের স্বরলিপি” ( ২০১২ ) থেকে
নেওয়া | ( বিংশ শতাব্দীর ৮০-এর দশকে ভারতবর্ষে বিভিন্ন প্রান্তে যখন একদিকে বঞ্চিত
জনজাতি ও গোষ্ঠীরা তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছে, অন্যদিকে
শ্রমিক-কৃষক ও অন্যান্য নিপীড়িত শ্রেণীর লড়াই যখন দানা বাঁধছে, তখন শাসকগোষ্ঠী
একবাক্যে এই সমস্ত লড়াইকে বিচ্ছিন্নতাবাদ আখ্যা দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার নামে
চূড়ান্ত নিপীরণ শুরু করে এবং দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে | এই বিভ্রান্তি
কাটানোর লক্ষ্যে শাসকদের চরিত্র উন্মোচনের জন্য এবং ‘প্রকৃত’  ও ‘মেকি’ গণতন্ত্রের
তফাৎ টানার জন্য রচিত হয়েছিল গানটি | )


এখন আর কোরো নাকো এটা চাই ওটা চাই
দেশের এই দুর্দিনে খিদে ভুলে থাকো ভাই
সারা দেশ জুড়ে আজ শত্রু তো একটাই
.                              বিচ্ছিন্নতাবাদ |

বিচ্ছিন্নতা  পাঞ্জাবে আসামে
বিচ্ছিন্নতা  কাশ্মীরে মিজোরামে
বিচ্ছিন্নতা  ঝাড়খণ্ডী বনে
বিচ্ছিন্নতা  তামিলের মনে মনে
.                                  বিচ্ছিন্নতাবাদ |

চারিদিকে কেন এত দাবি দাওয়া উঠছে
জাতি নিয়ে ভাষা নিয়ে এত লোক মরছে
এ সবের পেছনের কারণটা হচ্ছে
.                                বিচ্ছিন্নতাবাদ |

বিচ্ছিন্নতা   দিল্লির বাজারে
এক রাতে শিখ খুন হাজারে হাজারে
বিচ্ছিন্নতা   ভিওয়ান্দি বস্তিতে
বিচ্ছিন্নতা    গুরুদ্বারে মসজিদে
.                                বিচ্ছিন্নতাবাদ |

খাঁটি শুধু উত্তর ভারতের হিন্দু
বাঁচাবে দেশকে দিয়ে রক্তের বিন্দু
দেশবাসী জেনে রেখো বিপদটা কিন্তু
.                                 বিচ্ছিন্নতাবাদ |

বিচ্ছিন্নতা   কেন্দ্রীয় দপ্তরে
নিয়োগ বন্ধ তাই বছর বছর ধরে
বিচ্ছিন্নতা   কারখানা ক্লোজারে
বিচ্ছিন্নতা   বেকারের হাহাকারে
.                                 বিচ্ছিন্নতাবাদ ||

কেন এত সুতাকল বন্ধ
পথে ঘাটে মাঠে দুর্ভিক্ষের গন্ধ
কারণটা কি যে তাতে নেই কোন সন্দ
.                                  বিচ্ছিন্নতাবাদ ||

বিচ্ছিন্নতা   খেতে কলে বন্দরে
বিচ্ছিন্নতা   গরীবের অন্তরে
বিচ্ছিন্নতা   বিদ্রোহী মন্ত্রে
বিচ্ছিন্নতা   খাঁটি গণতন্ত্রে
.                                 বিচ্ছিন্নতাবাদ ||

তাই আজ কান পেতে শোন নয়া সন্দেশ
এক দল এক নেতা তবে নাকি বাঁচে দেশ
নয়তো বা কেড়েকুড়ে সব করে দেবে শেষ
.                                বিচ্ছিন্নতাবাদ ||

বিচ্ছিন্নতা   খেতে কলে বন্দরে
বিচ্ছিন্নতা   গরীবের অন্তরে
বিচ্ছিন্নতা   বিদ্রোহী মন্ত্রে
বিচ্ছিন্নতা   খাঁটি গণতন্ত্রে
.                                বিচ্ছিন্নতাবাদ ||

.        *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
ও আঙ্কল একটা খেলা বলো না
কথা - কবি অপরূপ রায়
সুর - জলি বাগচী
জলি বাগচী ও দিপালী সেনগুপ্ত সম্পাদিত “গণবিষানের গানের স্বরলিপি” ( ২০১২ ) থেকে
নেওয়া | ( ১৯৮৬ সালে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ভারতবর্ষের নিপীড়িত জনজাতি
ও গোষ্ঠীর সংগ্রামগুলিকে ধামাচাপা দেবার জন্য সারা দেশে শুধু চুক্তি করে
বেড়াতে থাকেন | এমন কি তামিল টাইগারদের মোকাবিলা করার জন্য শ্রীলঙ্কায় শান্তিসেনা
পাঠান | রাজীবের এইসব হাস্যকর প্রচেষ্টাগুলিকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে গানটিতে | )


ও আঙ্কল একটা খেলা বলো না
যাতে কোনও নেই হার জিত
শুধু চুক্তি  চুক্তি চুক্তি চুক্তি চুক্তি চুক্তি
চু  -  কিৎ -- কিৎ |

পাঞ্জাব জুড়ে কারফিউ করে
কয়েক হাজার জেলে পুরে
“কালো বেড়াল” সঙ্গে নিয়ে
গেয়ে এলাম শান্তির গীত |
তাই চুক্তি  চুক্তি  চুক্তি  চুক্তি  চুক্তি  চুক্তি
চু -    কিৎ - কিৎ |

সারা আসামে চলছে গুলি
রক্তে হোলি খেল্ লো নেইলি
( আমি ) দিল্লি বসে অংক কষে
প্রফুল্লকে করলাম চিৎ
তাই চুক্তি  চুক্তি  চুক্তি  চুক্তি  চুক্তি চুক্তি
চু --  কিৎ  - কিৎ |

কাশ্মীরে ভোটে জেতার জন্য
আবদুল্লাকে করলাম ধন্য
মাথায় দিয়ে ফেজ টুপি
বললাম “মিঞা তুম হো মেরা মিত “
তাই চুক্তি  চুক্তি  চুক্তি  চুক্তি চুক্তি  চুক্তি
চু  -- কিৎ   কিৎ |

যখন জয়বর্ধন পিরভাকরণ
এসপার ওসপার জীবন মরণ
( আমি ) মিষ্টি হেসে পরের দেশে
নাক গলালাম এই তো রীত
তাই চুক্তি  চুক্তি  চুক্তি  চুক্তি চুক্তি  চুক্তি
চু – কিৎ - কিৎ |

এখন এল. টি.টি.ই শান্তি সেনা
কে কার শত্রু কেউ জানে না
আমি ভ্যাঙ্কুভারে রাণী মাকে
শুধোলেম --- “লন্ডনে কেমন শীত” ?

আংকল তোমার জবাব নেই
এ খেলায় না আছে যুক্তি, না হারজিৎ
শুধু চুক্তি  চুক্তি  চুক্তি  চুক্তি  চুক্তি  চুক্তি
চু – কিৎ  -কিৎ |

.        *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
কেন এখনও অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াও সাথী
কথা - কবি অপরূপ রায়
সুর - জলি বাগচী
জলি বাগচী ও দিপালী সেনগুপ্ত সম্পাদিত “গণবিষানের গানের স্বরলিপি” ( ২০১২ ) থেকে
নেওয়া |

কেন এখনও অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াও সাথী
পথ তো সবার চেনা
কেন এখনও বন্ধ দ্বারে আটকে আছ সাথী
ভাঙবার মন্ত্র সবার জানা

কেন এতকাল পুরোনো বুলির আড়ালে
নিজেকে হতাশার স্বপ্নে জড়ালে
কেন এখনও মিথ্যে মোহের জালকে
নিজ হাতে ছিঁড়তে পার না !

আজও বাতাসে ব্যর্থ নিশ্বাসে
কান্না আর বারুদের গন্ধ যে ভাসে

আজও প্রতিদিন এদেশের গ্রামে শহরে
লাখো লাখো আধা ফোটা ফুল ঝরে পড়ে
কেন এখনও ঝরে পড়া পাপড়ির আগুন নিয়ে
হৃদয় বাগানে তুফান তোল না |

.        *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
কেন খরা ও বন্যা আসে বছর বছর
কথা - কবি অপরূপ রায়
সুর - জলি বাগচী
জলি বাগচী ও দিপালী সেনগুপ্ত সম্পাদিত “গণবিষানের গানের স্বরলিপি” ( ২০১২ ) থেকে
নেওয়া |


কেন খরা ও বন্যা আসে বছর বছর
.        দাও আজ জবাব দাও |
কেন ভাঙে ভিটে বাড়ি ভাসে গ্রাম ও শহর
.        দাও আজ জবাব দাও |
মায়া কান্নায় ভুলবো না শোষণের বঞ্চনা
.        দাও আজ জবাব দাও |

হায়, তিরিশ বছর পার আমারা স্বাধীন
.        তিরিশ বছর হায় পার
তবু চোখের জলেই ভাসে রাত্রি ও দিন
.        মারী ও মড়ক হাহাকার |
বলি, প্রশাসনে বসে তবে করলেটা কি
.        দাও আজ জবাব দাও |
বলি, আর কতকাল বল চলবে ফাঁকি
.        দাও আজ জবাব দাও |

যে নদী হোয়াংহো ছিল দুঃখ চীনের
আজ তা উপচে দেয় সুখ
জলের ধারায় ভাসে ফসলের গান
আর নাচে জলবিদ্যুৎ |

হায়, গঙ্গাযমুনা তবু আজও অভিশাপ
.        গঙ্গাযমুনা তবু হায় |
আহা কত প্রাণ মুছে যায় কে রাখে হিসাব
.        নিষ্ঠুর এ খরা-বন্যায় |
বলি, কেন এ মৃত্যু অসহায়ের মতন
.        দাও আজ জবাব দাও |
বলি, পশুর মত আজও কেন এ জীবন
.        দাও আজ জবাব দাও |

.        *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
ঝরো ঝরো ঝরে শ্রাবণ
কথা - কবি অপরূপ রায়
সুর - জলি বাগচী ও অপরূপ রায়
জলি বাগচী ও দিপালী সেনগুপ্ত সম্পাদিত “গণবিষানের গানের স্বরলিপি” ( ২০১২ ) থেকে
নেওয়া |


ঝরো ঝরো ঝরে শ্রাবণ
আকাশ জুড়ে মেঘের নাচন
শুধু আমার পোড়া এ মন জুড়ালো না হায়
আজও বৃষ্টি ভরা সাঁঝে
পাতায় পাতায় কি সুর বাজে
কান্না আমার বুকের মাঝে ফুরালো না হায় |

কবে সেই কোন লগনে, লক্ষ প্রাণের আহ্বানে
ভাসিয়েছিল কারা ডিঙ্গা আসীম অজানায় হায় |

উথাল পাথাল ঢেউ-এর তালে
মত্ত মাতাল হাওয়ার পালে
জোর তুফানে বুক চিতিয়ে স্বপ্ন চোখে দামাল নেয়ে
পাড়ি দিল তরী বেয়ে ঝড়ের ঠিকানায় |

আজও দুই দশক পরে
তোমার ঘরে আমার ঘরে
ভাঙা দেওয়াল জুড়ে রক্তের দাগ দেখা যায় হায় |

শরীর জুড়ে নখের আঁচড়
ছিন্ন ভিন্ন লুন্ঠিত ধড়
তবুও বাজে না আশাবরী
পোহালো না শর্বরী
আজও তীরে ঝড়ের তরী ভিড়ল না হায় ||

.        *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
পান্তাভাতে বেগুন পোড়া অনেক খেয়েছি
কথা ও সুর - কবি অপরূপ রায়,
জলি বাগচী ও দিপালী সেনগুপ্ত সম্পাদিত “গণবিষানের গানের স্বরলিপি” ( ২০১২ ) থেকে
নেওয়া |


পান্তাভাতে বেগুন পোড়া অনেক খেয়েছি
মন বলে আজ চেখে দেখি মালাই ননী ক্ষীর |
মুশকিল আসান করো দয়াল গাজী পীর |

সাতসকালে গাই ছাগলে অনেক ছুটেছি
মন বলে আজ আরাম করি হই থিতু ধীর |
মুশকিল আসান করো দয়াল গাজী পীর |

ধানের শিষে ঘামের ফোঁটা অনেক দেখেছি
মন চায় আজ দেখতে সেখায় ভোরের শিশির |
মুশকিল আসান করো দয়াল গাজী পীর |

বানের তোড়ে ঘর ভেসেছে অনেক ভিজেছি
মন বলে আজ গড়ি পাকা শক্ত ভিতের নীড় |
মুশকিল আসান করো দয়াল গাজী পীর |

হয়নি আজও নিকে শাদি কেউ দেয়নি ঝি
মন চায় আজ হাতের ছোঁয়া সোহাগী বিবির |
মুশকিল আসান করো দয়াল গাজী পীর |

জন খেটেছি ভ্যান টেনেছি বাগ্ দা খুঁজেছি
মন বলে আজ এম. পি হয়ে যাই যমুনার তীর |
মুশকিল আসান করো দয়াল গাজী পীর |

মারের ভয়ে পরের বোঝা অনেক বয়েছি
মন চায় আজ হতে জোয়ান ভয় না মানা বীর |
মুশকিল আসান করো দয়াল গাজী পীর |

কাকতাড়ুয়া সারাটা দিন কাক্ তাড়াচ্ছি
আঁধার হলেই আসে মনে ইচ্ছেগুলোর ভিড়
এই মুশকিল আসান করো দয়াল গাজী পীর |

.            *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
বড় মায়া লাগে ছাড়িতে এ আরাম
কথা - কবি অপরূপ রায়
সুর - জলি বাগচী
জলি বাগচী ও দিপালী সেনগুপ্ত সম্পাদিত “গণবিষানের গানের স্বরলিপি” ( ২০১২ ) থেকে
নেওয়া | ( ১৯৯০ –এর ৩১শে জুলাই খাদ্য আন্দোলনের শহীদ স্মরণ দিবসে আবার
কলকাতায় সাধারণ মানুষের মিছিলের ওপর গুলি চলে এবং একজন ক্ষেতমজুর মারা
যান | ঘটনাটি ঘটে কলকাতার রাণী রাসমণি রোডে | পাশেই সিধু-কান্ হু ডহরে তখন
বামফ্রন্ট্র সরকারের উদ্যোগে খাদ্য আন্দোলনের শহীদ স্মরণ উত্সব চলছিল | )


বড় মায়া লাগে ছাড়িতে এ আরাম
তাই ছেড়েছি লড়াই
আর ভুলেছি সংগ্রাম ||

এখন মনে আফশোষ জাগে
কেন যে বুঝিনি আগে
( আমি ) নইলে বিধানবাবুর আগে
এমনি এমনি ছাগল চরাতাম ||

’৬৭-তে নকশালবাড়ি
( আর ) ‘৭৮-এ মরিচঝাঁপি
যদিও জনতা উঠেছে কাঁপি
আমরা দিয়েছি পুলিশকে হাজারো সেলাম ||

কলকারখানা সব বন্ধ হয়ে যায়
না থাকলে ভায়াবিলিটি কি বা উপায়
( তবু ) শিল্পে শান্তি রেখেছি বজায়
তাই খুশি গোয়েঙ্কা আর চলতরাম ||

এখন ১৩ বছর ধরে
ফুলে ফেঁপে গায় গতরে
মোদের ভরসা পুলিশ গুণ্ডা ক্যাডারে
আমরা নইলে গদী কবেই হারাতাম |

আমরা এখন করছি শাসন
( তাই ) আন্দোলনের নেই প্রয়োজন
( তবু ) তোমরা যখন শুনলেনা বারণ
আমরা ক্ষেতমজুরের বুকে গুলি চালালাম ||

এ শাহেনসা আলিমুদ্দিন খাঁ
তুঝে লাখো লাখো সেলাম |

.            *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর