ভোরের আকাশ লাল সিঁদুরে কথা ও সুর - কবি অপরূপ রায় জলি বাগচী ও দিপালী সেনগুপ্ত সম্পাদিত “গণবিষানের গানের স্বরলিপি” ( ২০১২ ) থেকে নেওয়া |
ভোরের আকাশ লাল সিঁদুরে রাঙিয়ে দিয়ে কোন সুদূরে মেঘপটুয়া অচিনপুরে উড়ে উড়ে যায় নীচে সবুজ গালিচাতে সূর্যমুখী জবার সাথে প্রজাপতি খেলায় মাতে উড়ে উড়ে যায় |
সেই প্রহরে একলা ঘরে ছোট্ট সোনা ঘুমের ঘোরে লক্ষ যোজন দূরে পরীর দেশে ভেসে যায় | বলে হেথায় রাত পোহায় না এ দানোর দেশ আর যে সয়না হেথায় দত্যি আমার মুখের গরস কেড়ে খায় | যাব উড়ে ভেসে ভেসে সব পেয়েছি মেঘের দেশে দেখব চাঁদের বুড়ি সুতো বানায় চরকায় ||
মুমূর্ষু বা সুন্দরী এক তিলোত্তমা কথা - কবি অপরূপ রায় সুর - জলি বাগচী জলি বাগচী ও দিপালী সেনগুপ্ত সম্পাদিত “গণবিষানের গানের স্বরলিপি” ( ২০১২ ) থেকে নেওয়া | ( ১৯৮৪ –র একটি পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র ক’রে কলকাতাকে ঘিরে একটি বিতর্ক দানা বেঁধে ওঠে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের মধ্যে | তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী কলকাতা সফরে এসে এই শহরকে ‘মুমূর্যু নগরী’ ব’লে চিহ্নিত করেন | তার প্রতিবাদে রাজ্য সরকার দেয়ালে দেয়ালে জীবনানন্দের কবিতা উত্কীর্ণ করে বলেন, ‘কলকাতা কল্লোলিনী তিলোত্তমা’। এই সময় এই শহরের রাস্তায় বাস করতে বাধ্য হন যে বিশাল সংখ্যক মানুষ তাদের বুকে গুমরে থাকা প্রশ্নকে হাজির করার প্রচেষ্টা ছিল এই গানটিতে। )
মুমূর্ষু বা সুন্দরী এক তিলোত্তমা হোক না শহর তোর তাতে কি || তোর জঠরে জীবন জুড়ে জ্বলছে যখন খিদের আগুন ধিকি ধিকি ||
ভিটে ছেড়ে যন্ত্রনাতে কোন সে গভীর রাতে এলি তুই নিঃস্ব হাতে বাবুদের ক’লকাতাতে সেই থেকে আজ এই শহরে তোর কপালে ভিক্ষে ছাড়া আর জুটলোটা কী ?
ঘর তোর পথের পাশে ছাদ তার দূর আকাশে যখনই বর্ষা আসে ভাসে ঘর সর্ব্বনাশে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এলে হাড়গিলে তোর ছোট্টখোকা বাঁচবে না কী ?
আশ্বিনে বাদ্যি বাজে এ শহর আলোয় সাজে শুধু তুই পথের মাঝে মরমে মরিস লাজে তখন দুগ্গা মায়ের কাপড় ছিঁড়ে তোর সোহাগীর লজ্জাকে তুই ঢাকিস না কী ?
পৌষে মাঘের শীতে এ শহর জোর খুশী তে মাতে যে ছন্দে গীতে শুধু তুই জ্বালাস চিতে সেই চিতার আগুন জানায় তোকে খালি পেটে স্বাধীনতা মিথ্যে ফাঁকি ||
কিম্বা ফাগুন মাসে শিমুলে লাল পলাশে এ শহর হাওয়ায় ভাসে শুধু তুই মরিস ত্রাসে সেই ফাগুন হাওয়ায় খিদের জ্বালায় তোর ছাওয়ালী হ’ল বুঝি গতরখাকী ||
এই তোর গল্প গাথা ছেঁড়া চট ছেঁড়া কাঁথা বাবুদের মাথাব্যাথা বাঁচবে কি শহর কলকাতা তোর কবরে শহর গড়ে ফানুশ যারা ওড়ায় তারা মানুষ না কী ?
রথের রশি টানলো রুশি কথা - কবি অপরূপ রায় সুর - জলি বাগচী জলি বাগচী ও দিপালী সেনগুপ্ত সম্পাদিত “গণবিষানের গানের স্বরলিপি” ( ২০১২ ) থেকে নেওয়া | ( পূর্ববর্তী শতকের আশির দশকে তখনকার সোভিয়েত রাশিয়ার কর্ণধার গর্বাচভ চালু করেন ‘গ্লাসনস্ত’ ও ‘পেরেস্ত্রৈকা’ | গ্লাসনস্ত –এর অর্থ হল—‘খোলা হাওয়া’ আর পেরেস্ত্রৈকা-র অর্থ হল – ‘অর্থনৈতিক সংস্কার’ | খোলা হাওয়া আর অর্থনৈতিক সংস্কার-এর ভিতর দিয়ে তখন রাশিয়ায় চালু করা হয়েছিল পুঁজিবাদের ‘খোলা হাওয়া’--- অর্থাৎ, এতদিন যা গোপন ছিল, এবার সেই গোপনতা ছিঁড়ে ফেলে খোলাখুলিভাবে পুঁজিবাদ কায়েম হয়েছিল | এই প্রেক্ষিতে রচিত আমাদের গানটি | )
রথের রশি টানলো রুশি হলেন খুশি জগন্নাথ বুদ্ধি হারান বুদ্ধবাবু বিস্মিত হন বিশ্বনাথ | আঁতকে উঠে চমকে বলেন --- এবার কি আর রক্ষা আছে সোনার ঝাঁটায় রাস্তা সাফের মার্কসীয় কোনও ব্যাখ্যা আছে ?
রেল ধর্মঘটের বিরোধ করার কূটনৈতিক যুক্তি ছিল ( আর ) এমার্জেন্সি সমর্থনে রাজনৈতিক চুক্তি ছিল | রাজীবজিকে মদত দিতে হোকনা প্রভদা পঞ্চমুখ, কি আসে যায় যদি জুটে যায়ে মস্কো ঘোরার স্বর্গসুখ |
কিন্তু এখন এ কি কাণ্ড অতি প্রকাণ্ড সর্বনাশ ইস্কনিদের উস্কানিতে রশি হলো গলার ফাঁস,
তাই ঠিক করেছি এই ব্যাপারে করবই একটা সেমিনার ( আর ) আলোচনায় বুঝতে হবে কি হলো আজ রাশিয়ার
মস্কো থেকে জবরদস্ত নেতা এলেন ত্রস্ত বললেন --- রশি হলো পেরেস্ত্রৈকা ( আর ) ঝাঁটা ! ঝাঁটা গ্লাসনস্ত |
হন্যে হয়ে অর্থনীতির আকাশ পাতাল খুঁজি কথা - কবি অপরূপ রায় সুর - জলি বাগচী জলি বাগচী ও দিপালী সেনগুপ্ত সম্পাদিত “গণবিষানের গানের স্বরলিপি” ( ২০১২ ) থেকে নেওয়া |
হন্যে হয়ে অর্থনীতির আকাশ পাতাল খুঁজি কোন মুলুকে হারিয়ে গেল মন ভোলানো পুঁজি পুঁজি দেখতে কেমন কেউ জানে না |
পুঁজি দেখতে কেমন কেউ দেখে নি তাকে কেউ বা বলে পুঁজি না কি যমের ঘরে থাকে তবে একটা কথা পুঁজির কিন্তু নেই কোন গোঁফ দাড়ি পুঁজির শুধু পতি হয় অতএব পুঁজি নারী কিন্তু নারী ভয়ংকরী নেই মনে ডর ভয় হন লেডি ম্যাকবেথ কখনও বা হেলেন অফ ট্রয়
কিসের দ্বন্দ্বে দোলে পুঁজি হয় বাজার খান খান বুঝিয়ে ছিলেন বহু আগে দুই পাগল জার্মান
দেখি মুক্ত পুঁজি মুক্ত কচ্ছ ভ্রষ্টা সৃষ্টিছাড়া এক গোলার্ধে পুঁজির বন্যা এক গোলার্ধে খরা
পুঁজির জনম পুঁজির আতুর ঘাম ঝড়ানো শ্রমে সেই আতুড় থেকেই পুঁজি উধাও কেড়ে নিয়েছেন যমে | আর যমদুতেরা অষ্টপ্রহর পুঁজির খেলায় মাতেন রক্তমাখা ঠান্ডা হাতে মুন্ডমালা গাঁথেন | তাই ঘনিয়ে আসে ঘোর দুপুরে হঠাৎ করে সন্ধ্যা গোলক ধাঁধায় ঘোরে পুঁজি সবাই বলে মন্দা |
যখন মেরিল লিন্ চ আর লেহম্যান ব্রাদার্স দেউলিয়া চিত্পাত স্বাধীন পুঁজির প্রবক্তাদের মাথায় বজ্রপাত | ( তবে কি ) তবে কি বীজার তত্ত্ব ভুল অসত্য একথা মানতে হয় আর দিকভ্রান্ত মত্ত পুঁজির লাগাম টানতে হয় | যখন বেসরকারকে অর্থ জোগায় জনতার সরকার পাগল সাহেব শিগগীর এসো, আজ তোমাদেরই দরকার
হুড়মুড়িয়ে ভাঙলো বাড়ি তাসের ঘরের মত কথা - কবি অপরূপ রায় সুর - গাজীর গানের সুর জলি বাগচী ও দিপালী সেনগুপ্ত সম্পাদিত “গণবিষানের গানের স্বরলিপি” ( ২০১২ ) থেকে নেওয়া | ( কলকাতার শরৎ বসু রোডে শিবালিক অ্যাপার্টমেন্ট ভেঙে পড়লে শুয়ে থাকা বহু মানুষের প্রাণ যায় | )
হুড়মুড়িয়ে ভাঙলো বাড়ি তাসের ঘরের মত তারই নীচে পড়লো চাপা হাড়হাভাতে যত—আহা হাড়হাভাতে যত | দৌড়ে এলেন মন্ত্রীমশাই দৌড়ে এলো পুলিশ হুকুম হলো “লাশগুলোকে গভীর রাতে তুলিস” --- যেন কেউ দেখে না | কারণ--- দিনের বেলায় যদি কোনও লাশ ফিরে পায় প্রাণ উল্টোপাল্টা প্রশ্ন তুলে করবে যে হয়রান – প্রশ্নে করবে যে হয়রান | ধরো যদি শুধোয় “কেন উঁচু বাড়ীই হবে যখন তারই পাশে মানুষগুলো ফুটপাতে রবে” --- কেন ফুটপাতে রবে | কিংবা বলে “কর্পোরেশন চোর তো সবার জানা তবে দোষীদের শাস্তি দিতে কোন আইনে মানা” --- বল কোন আইনে মানা | নাকি এসব বালিঠাসা ঠুনকো বাড়ি গড়ে তোমাদের ইলেকশনের ভাঁড়ার উঠবে ভরে – ভাঁড়ার উঠবে ভরে আহা | বারে বারে ভাঙলো বাড়ি দিলে কত ভাষণ বলিহারি রাগ তোমাদের বলিহারি শাসন --- বলিহারি শাসন তোদের | এইরকম সব আগডুম বাগডুম প্রশ্ন করতে পারে নেই ভরসা যদিও মরা কাঙাল জনতারে – মরা কাঙাল জনতারে | তাই জলদি জলদি লাশগুলোকে করতে হবে পাচার ধাপার মাঠে রাখবো ফেলে হবে শকুনের খাবার--- ( হবে ) শকুনের খাবার | তারপরে নয় গঙ্গাজলে নেব দু’হাত ধুয়ে --- হাত নেবো ধুয়ে ( আর ) আন্তর্জাতিক সমস্যাটা ভাববো ঘরে শুয়ে ---( আহা ) ভাববো ঘরে শুয়ে |
আজ তুঝে এক কহানী সুনাউঁ কথা - কবি অপরূপ রায় সুর - প্রচলিত ভাংরা সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসংগীত সংগ্রহ” ( ১৯৯০ ) থেকে নেওয়া |
আজ তুঝে এক কহানী সুনাউঁ . কহানী হ্যায় এক দেশ কী অইর ইয়ে যো কহানী সচ্ হী কহানী . কোই না অবং তক্ পেশ কী।
ইয়ে দেশ হঁসীন্ হ্যায়, গাঁও হঁসীন্ হ্যায় . হসীনা ইসকী রাণী লেকিন জন্ তা মরেঁ ভুখ সে . সহে কাফী পরেশানী ---
কি ম্যায় নে ঝুঠ্ বোলেয়াঁ?---কোই না কি ম্যায় নে গলত্ বোলেয়াঁ?---কোই না গ্যার কানুনী বোলেয়াঁ? কোই না ভাই, কোই না ভাই, কোই না ভাই, কোই না ম্যায় সচ্ কহুঁ (৪)।
ইঁহা লাখো ক্রীশ্চান, বৌধ জৈন হ্যায় . হ্যায় শিখ, মুসলমান ফির সেকুলারিজম্ পর . হ্যায় নাম হিন্দুস্থান-- কি ম্যায় নে ঝুঠ্ বোলেয়াঁ?---কোই না কি ম্যায় নে গলত্ বোলেয়াঁ?---কোই না গ্যার কানুনী বোলেয়াঁ? কোই না ভাই, কোই না ভাই, কোই না ভাই, কোই না
ইঁহা হর সাল কালা কানুন বনে . বনে হ্যায় নয়ে নয়ে জেল অউর পাঁচসালা পরিয়োজনা . হো গই বিল্ কুল্ ফেল--- কি ম্যায় নে ঝুঠ্ বোলেয়াঁ?---কোই না কি ম্যায় নে গলত্ বোলেয়াঁ?---কোই না গ্যার কানুনী বোলেয়াঁ? কোই না ভাই, কোই না ভাই, কোই না ভাই, কোই না
ইঁহা জমাখোরী, কালাবাজারী . ভর্ লি অপনী ডালী অউর ট্যাক্স দেকর হাম হী লোগোঁ কী . জেব হো গই খালী--- কি ম্যায় নে ঝুঠ্ বোলেয়াঁ?---কোই না কি ম্যায় নে গলত্ বোলেয়াঁ?---কোই না গ্যার কানুনী বোলেয়াঁ? কোই না ভাই, কোই না ভাই, কোই না ভাই, কোই না
তুনে অগর সচ্ ভী বোলা . তুঝে মিলেগা দণ্ড্ এউর কালে রুপিয়া ওয়ালোঁ কে লিয়ে . হ্যায় “ইস্পেশাল বণ্ড”--- কি ম্যায় নে ঝুঠ্ বোলেয়াঁ?---কোই না কি ম্যায় নে গলত্ বোলেয়াঁ?---কোই না গ্যার কানুনী বোলেয়াঁ? কোই না ভাই, কোই না ভাই, কোই না ভাই, কোই না
আসাম, গুজরাত, তামিল, পঞ্জাব . চারোঁ তরফ হঙ্গামা ডর কে মারে রাণী বোলী . বচাও রশিয়া মামা--- কি ম্যায় নে ঝুঠ্ বোলেয়াঁ?---কোই না কি ম্যায় নে গলত্ বোলেয়াঁ?---কোই না গ্যার কানুনী বোলেয়াঁ? কোই না ভাই, কোই না ভাই, কোই না ভাই, কোই না
দেখকে সারী চিজেঁ জন্ তা . জোর মচাই শোর কহনে লগী হ্যায় দেশ কী রাণী . নম্বরী এক চোর--- কি ম্যায় নে ঝুঠ্ বোলেয়াঁ?---কোই না কি ম্যায় নে গলত্ বোলেয়াঁ?---কোই না গ্যার কানুনী বোলেয়াঁ? কোই না ভাই, কোই না ভাই, কোই না ভাই, কোই না