কবি বেলা গুহর কবিতা
*
উত্সব
কবি বেলা গুহ
বিজয়চন্দ্র মজুমদার ও দীনেশচন্দ্র সেন সম্পাদিত বঙ্গবাণী পত্রিকার আষাঢ় ১৩২৯ (জুলাই
১৯২২) সংখ্যা থেকে নেওয়া।


নিখিল-ভুবনে একি আনন্দ,
.                উত্সব কলরোল!
উতলা করিয়া নিথর হৃদয়
.                কে দিল এমন দোল!
ঘুচাইয়া দিল সকল দ্বন্দ্ব,
শঙ্কা-সরম, সকল বন্ধ,--
ঝঙ্কারি, উঠি বিশ্ব বীণায়
.        একি এ মধুর বোল !

শিশির-সিক্ত লতিকার সনে
.        কিরণের কোলাকুলি,
অসীমের সাথে মিলিতে সসীম
.        দিয়াছে পরাণ খুলি !

ফুটে ওঠে হাসি সবার আননে,
সুখ-তরঙ্গ ভুবনে ভবনে—
বিরহবিধুর অধীর হৃদয়
.        পেয়েছে শান্তি-কোল
বিশ্ব সভায় উত্সব আজি
.        উচ্ছল কলরোল !!

.        *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
বত্সরের নূতন দিনে
কথা - কবি বেলা গুহ
সুর ও স্বরলিপি - মোহিনী সেনগুপ্তা
অক্ষয়কুমার নন্দী ও সুরবালা দত্ত সম্পাদিত “মাতৃ-মন্দির” পত্রিকার বৈশাখ ১৩৩১ (মে
১৯২৪) সংখ্যা থেকে নেওয়া।
      

॥ যোগীয়া, ঢিমে-তেতালা॥

বত্সরের এই নূতন দিনে
.        গানটী তোর আজ ধর্-না রে ;
নূতন আলোয় প্রাণখানি তোর
.        ভর্-না রে আজ ভর্-না রে!
পুরাণো যা রইল পাছে,
হৃদয়-পাতে আঁকাই আছে—
অতীতকে তুই নূতন মাঝে
.        সফল আজি কর্-না রে !
বত্সরের এই নূতন দিনে
.        গানটী তোর আজ ধর্-না রে !!
নূতনকে আজ কর্-না বরণ,
নূতন পথে চলুক চরণ—
নূতন আলোয় চোখ মেলে তুই
.        নূতনকে আজ বর্-না রে !
বত্সরের এই নূতন দিনে
.        গানটী তোর আজ ধর্ না রে !!
প্রাণ-সাগরে চল্ ছে সবাই
.        নূতন পথের যাত্রী রে,--
অতীত যে ভাই সকল জ্ঞানের,
.        সকল সুখের ধাত্রী রে !
.        খেল্ ছে হাওয়া উঠ্ ছে যে ঢেউ,
.        লুকিয়ে আজি থাকিস্-না কেউ ;
অনন্ত এই প্রাণ-সাগরে
.        ঝাঁপ্ দিয়ে আজ পড়-না রে !
নূতন মাঝে প্রাণ লয়ে তুই
.        গানটী তোর আজ ধর্ না রে !!

.        *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
মাতৃ-বন্দনা
কবি বেলা গুহ
অক্ষয়কুমার নন্দী ও সুরবালা দত্ত সম্পাদিত “মাতৃ-মন্দির” পত্রিকার আশ্বিন ১৩৩১
(অক্টোবর ১৯২৪) সংখ্যা থেকে নেওয়া।


.        নাহি জ্ঞান, নাহি শক্তি,
.        নাহি শ্রদ্ধা, নাহি ভক্তি,
অনুরক্তি-হীনে মুক্তি দাওগো জননী!
.        আরাধিব কোন্ মন্ত্রে,
.        পূজিব মা কোন্ তন্ত্রে,
নাহি জানি কোন্ ফুলে পূজি পা দুখানি ?
.        কিরূপে করিব পূজা
.        অয়ি মাতঃ দশভূজা,
কৃপা করি হৃদি-পদ্মে কর অধিষ্ঠান ;
.        পাপ-তাপ ঘুচাইয়া,
.        আঁখি-জল মুছাইয়া,
দেখাও সত্যের পথ উজ্জ্বল মহান্ !
.        মাতৃ-স্নেহ ক’রে দান
.        তৃপ্ত কর শুষ্ক প্রাণ,
অধমে কৃতার্থ কর শুভদৃষ্টি দানে,
.        করুণা-কিরণ দিয়া
.        জ্ঞান-আঁখি বিকশিয়া
রহ চির বিরাজিতা হৃদয়-আসনে |

.        *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
মাতৃ-মন্দিরে
কবি বেলা গুহ
অক্ষয়কুমার নন্দী ও সুরবালা দত্ত সম্পাদিত “মাতৃ-মন্দির” পত্রিকার মাঘ ১৩৩১ (ফেব্রুয়ারী
১৯২৫) সংখ্যা থেকে নেওয়া।


মন্দিরে আজ গভীর ছন্দে
.                বোধন-শঙ্খ বাজে,
কি নব চেতনা-সুখ-তরঙ্গ
.                বহিছে বিশ্ব-মাঝে।
.   চির শোভাময় এ শুভ লগন
.   মুখরিত আজ প্রভাত গগন
.   কুসুম-গন্ধে ভুবন মগন—
.                ধরণী শোভন সাজে |
লক্ষ ধারায় বিশ্ব-মাঝারে
.                ঝরিছে শান্তি-ধারা,
আয় তোরা আয় বেদনা-ব্যথিত
.                পিয়ে নে’ আত্ম-হারা |
.    মান-অভিমান আজি যাও ভুলি,
.    পতিতেরে বুকে লহ স্নেহে তুলি ;
.    গোপন মরম দাও আজি খুলি’
.                থেকনা অন্ধ লাজে |

.        *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
মরণের বাঁশী
কবি বেলা গুহ
বিজয়চন্দ্র মজুমদার ও দীনেশচন্দ্র সেন সম্পাদিত বঙ্গবাণী পত্রিকার আষাঢ় ১৩৩২ ( জুন
১৯২৫ ) সংখ্যা থেকে নেওয়া |


ওই বাজে দূরে                 সুমধুর সুরে
.     মরণের বাঁশী উদাস করি’---
সাগরের পারে      কে ডাকে আমারে
.     কার বাণী দিল হৃদয় ভরি’ ?
.            সুখের লালসা, ধরার বিত্ত,---
.            সকলি মিথ্যা-----সবই অনিত্য,
.            এ চির সত্য উজল আঁখরে
.                 কেন দিল আঁকিয়া চিত্ত’পরি !!

হরি প্রাণ-ক্ষুধা               আহা কিবা সুধা
.      ভরিয়া রয়েছে বাঁশির সুরে,
মিটিল তিয়াসা,        প্রেমের পিয়াসা—
.    সকল বেদনা গিয়াছে দূরে |
.            গভীর আঁধার পলকে টুটিয়া,--
.            আলোকের হাসি উঠিল ফুটিয়া,
.             লাজ ভয়-মান হ’ল অবসান
.                            বন্ধু এসেছে বর্ত্তি ধরি’ !!

.      
           *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
খেয়া
কবি বেলা গুহ
বিজয়চন্দ্র মজুমদার ও দীনেশচন্দ্র সেন সম্পাদিত বঙ্গবাণী পত্রিকার পৌষ ১৩২৯ (ডিসেম্বর
১৯২২ ) সংখ্যা থেকে নেওয়া |


ওরে আমার নেয়ে !
.        ওপার হ’তে এস এপার
খেয়ার তরী বেয়ে |
.   ঘাটে বেলা কাট্ ছে একা—
.   মিলিয়ে এল পারের রেখা ;
.   সন্ধ্যাবেলার আঁধার রাশি
.         নাম্ ছে আকাশ ছেয়ে |
পার করে দে’ এবার মোরে
.        ওরে আমার নেয়ে ||
ছুট্ ছে নদী কল্ কলিয়ে
.        হাজার লহর তুলে’ ;
ঢেউএর সাথে নৃত্য তালে
.        উঠ্ ছে হৃদয় দুলে’ |
দিনের খেলা সবার মাঝে
সাঙ্গ হ’ল বিজন সাঁঝে,---
ঘরের পানে পাড়ি এবার
.        আনন্দ গান গেয়ে ||

.          *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
কবি
কবি বেলা গুহ
বিজয়চন্দ্র মজুমদার ও দীনেশচন্দ্র সেন সম্পাদিত বঙ্গবাণী পত্রিকার ভাদ্র ১৩৩৯ ( আগষ্ট
১৯২২ ) সংখ্যা থেকে নেওয়া |


হে কবি !  আজি এ নবীন বরষে
.           মাতাও নবীন গানে,
তব সুমধুর সুরধারা আজি
.           বহাও সবার প্রাণে !

আজিকে যাহারা অলস-শয়নে
মগ্ন আকাশ-কুসুম চয়নে,
ফুটাও তাদের অন্ধ নয়ন
.           নূতন আলোক দানে ||

পথের ধূলায় লুটিছে যাহারা,
.            ফেলিছে নয়ন-জল ;---
বিপুল সাহসে উঠিয়া দাঁড়াক
.             লভিয়া নবীন বল |

ভুলে যাক্ সবে মিছে দলাদলি,
আসুক ছুটিয়া ধরে গলাগলি,---
লভুক আজিকে নূতন জীবন
.         তব গীত-সুধা পানে ||

.          *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর