কবি বিশ্বরূপ রায়ের কবিতা
*
অস্থির সময়ের পাখি
কবি বিশ্বরুপ রায়


অস্থির সময়ের পাখি তুমি,
যা তোমার,আজ তাতে অন্যের অধিকার।
যা সহজ সরল সভ্য,আজ তা সময়ের
যাঁতাকলে পিষ্ঠ নিষ্ঠুর ভবিতব্য।
খোলা মনে উড়বার অধিকার নেই কারও,
চোরাবালির পাঁকে মানবতা তলিয়ে যাচ্ছে
আরও !আরও!আরও!
ঝটপটানি শুনলেই ভয় বাসা বাঁধে মনে।
নীতি,বিবেক,সংস্কৃতি বর্জিত ব্যভিচারিরা
দাপিয়ে চলেছে অতি সাধারণ মননে।
মুক্তিকামীর মর্মবেদনা গুমরে গুমরে কাঁদে,
ওদের স্তব্ধ করতে হবে;প্রতিযোগীতায়
মেতেছে যত বর্বর জহ্লাদে।
ভয় পেয় নাকো,ডানা ঝাপটাও,
যত আঘাতেই হও বিক্ষত,
এ তোমারই জয়,মুক্তিধারার অমৃতবারি
তোমারই পক্ষ্ণস্নাত।

.                 ******************               


.                                                                           
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
বসন্ত পঞ্চমী
কবি বিশ্বরুপ রায়


সকাল সকাল ঘুমের থেকে ওঠা
চোখ ডলতে ডলতে স্নান করা,
শ্রীপঞ্চমীর শ্রী আসবে বলে
সারা গায়ে হলুদ মাখার তাড়া।
পাটভাঙ্গা নতুন বাসন্তী শাড়ি,
আদ্দিকরা নতুন পাঞ্জাবি,
তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাওয়া স্কুলে
পূজোর যোগাড়,ব্যস্ত মুখর ছবি।
আজ যে মধুর বসন্ত পঞ্চমী
আজ বাঙ্গালীর বাণীর আরাধনা,
মুক্তাহারে হংসরূঢ়া দেবী
স্নিগ্ধ,সুভ্র মাতা স্বেতবসনা।
ছোট্ট খুকির বড়ো শাড়ি পরা
মাঝ রাস্তায় হোঁচট খাওয়ার ভয়,
তরুন বুকে নতুন আলোড়ন
হৃদয় বীনায় নতুন গানের লয়।
অঞ্জলিটা তাড়াতাড়ি সেরে
সারাটাদিন বাঁধনছাড়া ঘোরা,
ওই মেয়েটা তাকাল বাঁকাচোখে,
ওই ছেলেটার হাসিটা কেমনধারা!
আজকে কোনো নিষেধ নেইকো মানার
যেথায় খুশি যাওয়া প্রানের টানে,
মনটা যে আজ প্রজাপতি হয়ে
উড়ে বেরায় ভালোবাসার গানে।
সন্ধ্যারতির মিষ্টি আলোয় আলোয়
কত নতুন আঁখির মিলন ঘটে,
বীনার তারে মনের গহন কথা
অমূর্ত প্রেম মূর্ত হয়ে ওঠে।
আসছে বছর আবার এসো গো মা
আকুল প্রানে তোমার কাছে চাওয়া,
নতুন করে অনেককিছু পাওয়া,
বা পুরনোকেই নতুন করে পাওয়া।

.                 ******************               


.                                                                           
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
হঠাৎ করে
কবি বিশ্বরুপ রায়


কতশত মুখের ভীরে হঠাৎ করে সেদিন
চেনা একটা মুখের আদল,হাসিটি- অমলিন,
উঠল ভেসে মানসপটে।বহু বছর পরে
জীবনটাকে পিছনফিরে দেখতে ইচ্ছা- করে।
কত স্বপ্ন-আশা ভালোবাসার প্রগাঢ়তা- নিয়ে
দিনগুলো সব থাকত ভরে।আঁধার রাস্তা- দিয়ে
ভয়ে ভয়ে হেঁটে যেতাম,হাতটা ধরে একটু- উষ্ঞতায়
সারা শরীর রোমাঞ্চিত,শ্রান্তি সকল ধুয়ে- মুছে যায়।
স্বপ্নময় দিনগুলো সব হারিয়ে গেল কঠিন- বাস্তবতায়
রুজি-রুটির টানে।মনের অতল গহ্বরে- হারিয়ে হারিয়ে যায়।
হঠাৎ সে সব সুখের স্মৃতি একটা মুখের- আদল হয়ে আসে,
জীবন নদীর স্রোতের টানে ভালোবাসা- মুখ লুকিয়ে হাসে।

.                       ******************               


.                                                                           
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
মৃত্যুর রুপ
কবি বিশ্বরুপ রায়


মৃত্যু তুমি কি কালো?নাকি
রঙ্গমঞ্চের শেষ যবনিকাপাত,
মৃত্যু তুমি কি কঠোর?নাকি
বাস্তবতার নিষ্ঠুর আঘাত।
তুমি কি শীতল গঙ্গোত্রীর হিমবাহের মত!
জীবনের ব্যস্ততা থেকে মুক্ত,
স্নিগ্ধ,সমাহিত।
তুমি কি বেদনাময়,জীবনযুদ্ধের পরাজিত- মুখ!
রোগক্লিষ্ট জীর্ন দেহে রোগমুক্তির নির্মল- সুখ।
তুমি কি বাঁধনহারা,নতুন পথে চলার- খুশিতে!
চিরচেনা জগৎ থেকে বিচরণে অঞ্জাত- অপরিচিতে।
রুপ যাই হোক না কেন তুমিই চিরন্তন- জগতে,
আগমন তোমার তাই- অতর্কিতে,নিঃশব্দে,নিভৃতে।

.                       ******************               


.                                                                           
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
নীলা
কবি বিশ্বরুপ রায়


ফোন নম্বর পাল্টাবেনা বলে কথা দিয়েছিল নীলাকে,
সে কথা রেখেছে সমীরন।
প্রথম প্রথম ভালোবাসে বলে পাল্টায়নি,
কিন্তু পরে এত জায়গায় নম্বর দেয়া হয়েছে যে পাল্টাতে পারেনি।
দিন গড়িয়ে বছর গেছে অনেক,
মনের কোনায় এক চিলতে আশা ঝিলিক দিত মাঝে মাঝে।
হয়তো নীলার ফোন আসবে,কিন্তু আসেনি।
বহুদিন বাদে বাদে অজানা নম্বরের কোনো মিসকলে জেগেছে আশা।
কিন্তু কথা দিয়েছিল নীলাকে কোনোদিন বিরক্ত করবেনা তাই উল্টে ফোন করেনি
কোনোদিন।
আজ তার ভরা সংসার,ভালোবাসার অভাব নেই।তবুও মনের মাঝে চোরাগোপ্তা আশা
বেঁচে থাকে।হয়তো কোনোদিন ফোন করবে নীলা,করেনি।
হয়তো ভালো আছে,সুখে আছে নীলা।

.                       ******************               


.                                                                           
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
বর্ষার রোষ
কবি বিশ্বরুপ রায়


শ্রাবনের ভেজা বেলা,
বসিয়া আমি একেলা,
শুনিতেছি বৃষ্টির টিপ্ টিপ্ স্বর।
বরষার গন্ধভরা এ কোন বাসর?
ধেয়ে আসে ভাগিরথী,
দামোদর রোষে অতি,
মাঠ গ্রাম জনপদ প্লাবিয়া বিস্তার,
যে দিকেতে চাই দেখি জলে একাকার।
প্রকৃতি প্রচন্ড অতি,
স্থির নাহি তার গতি,
ঢেউয়ের সফেন ক্লেদে দেখি তার হাসি,
হে মাতা!তুমি কি তবে এতই রাক্ষসী?
ধান গেল,পাট গেল,
পোয়াতির শিশু গেল,
তোমার প্রলয় নাচে সব হল পিষ্ঠ,
প্রনমি তোমায় মাতা তিষ্ঠ!তিষ্ঠ!তিষ্ঠ!
অধম সন্তান মোরা,
তুমি মা শক্তির ধারা,
বরষণ কর ভবে শান্তি স্নিগ্ধ সূধা,
স্নেহধন্য করো সবে হে মাতা বসুধা।

.                  ******************               


.                                                                           
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
প্রাক্ বর্ষা
কবি বিশ্বরুপ রায়


প্রাক্ বর্ষার বারিবর্ষনে ধরনীর তপ্ত বুকে এনেছে প্রশান্তির পরশ।
রুখা-শুখা ম্রিয়মান বনানী নব উদ্যমে বেড়ে উঠতে শুরু করেছে।চারিদিকে তাকালেই চাপ
চাপ সবুজের মেলা অনাবিল শান্তি আনে মনে।
বর্ষাস্নাত সূর্য যেন চাঁদের পেলব মায়াবী আলোয় উদ্ভাসিত।
নব কিশলয়ের মত আমাদেরও মনের সমস্ত মলিনতা,দীনতা,কলুষতা ঝেড়ে সতেজ হয়ে
উঠতে হবে,কি ভালোই হবে সেই পৃথিবী!
সূর্যকণায় ক্লোরোফিলের উত্তেজনা অনুভব করব আমরাও।
ঞ্জানের আলোয় বিবেক প্রদীপ আমাদেরও জ্বলবে।

.                  ******************               


.                                                                           
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
অস্থির সময়
কবি বিশ্বরুপ রায়


সময়টা যে বড়ই অস্থির
ছুটছে সবাই অলীক তাড়নায়,
পাল্লা দিয়ে চলে সবাই-সবায়
কেউ জানেনা কখন হবে স্থির।
কি আছে এই অসাড় অস্থিরতার,
সত্যিই কি এর আছে প্রয়োজন?
মনের কাছে প্রশ্ন করে মন
উত্তরটা হয়না পরিস্কার।
বিবেক বুদ্ধি সব যেন আজ রুদ্ধ
স্বার্থসিদ্ধিই মূলমন্ত্র আজ,
ভ্রস্টাচারে পঙ্কিল সমাজ
সততা আজ নিজেই অবরুদ্ধ।
চলছে যত ভোজবাজির খেলা
ব্যাস্ত সবাই আখের গোছানোয়,
মানবতা স্তব্ধ মূঢ়তায়
অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়ার পালা।

.                  ******************               


.                                                                           
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
নতুন বার্তা
কবি বিশ্বরুপ রায়


সারা রাতের ঝড়-ঝাপটা,ছিটেফোঁটা বৃষ্টি
কাটিয়ে ভোরের সূর্য উঠল নতুন বার্তা নিয়ে।
দাবদাহে দগ্ধ ধরনী শান্তি পেল আবার।
কিন্তু চারিদিকে চলছে যেসব অসভ্য বর্বরতা,
তার থেকে সে কবে পাবে নিস্তার?
মানবতা আজ আক্রান্ত জান্তব পশুর আস্ফালনে,
দন্ত-নখরে,কামড়ে-আঁচরে আজ সে রক্তাক্ত।
যার পাশবিকতা থেকে রক্ষা পায়না শৈশব,
তার কি শাস্তি হবেনা?
ব্যভিচারিদের চরিত্রে লাগাম পরাবে কে?
এদের জন্য আসবেনা কোনো যুগাবতার!
প্রয়োজনও নেই।কারন এদের জন্য যথেষ্ট আমরাই।
দাঁড়াও জনতা মানব প্রাচীর গড়ে,বিবেক-বাণে বিদ্ধ কর এদের।
এরা সব ব্রহ্মানন্দের দল,আমরা সবাই বিক্রম!
আমাদের নিঃস্পাপ দৃষ্টিতে এরাও চলে যাবে রসাতলে।
নতুন সূর্য উঠবে,মানবতা-ভালোবাসা-শিষ্টাচার-সহনাগরিকতার নতুন বার্তা নিয়ে।

.                  ******************               


.                                                                           
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
সম্পর্ক
কবি বিশ্বরুপ রায়


জীবনটা কাটছিল বেশ মসৃন ভাবেই।
হঠাৎই ছন্দপতন ! বিচিত্র এক টানা-পোড়েনে সম্পর্কগুলো কেমন মোচড়াতে শুরু করল।
হয়তো কবেই শুরু হয়েছিল ভাঙ্গন,কিংবা আজও তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র !
সব প্রিয় সম্পর্করা জটিল হয়ে দলা পাকিয়ে গেল।জানিনা এভাবেই চলতে থাকবে নাকি
এটাই হবে নতুন কোন সম্পর্কের সমীকরণ।পিছনে তাকালেও দেখি সমান্তরাল,ত্রিভুজ বা
বৃত্তাকার সম্পর্কের জাল,এই জালে জড়িয়েই মানুষের হাল বেহাল।
কিন্তু আমি তো সম্পর্ক চাই ; আসুক তা নতুন আঙ্গিকে,নতুন পরিপ্রেক্ষিতে।
যেভাবেই আসুক তা যেন হয় সত্য-সুন্দর।
জীবন আবারও চলুক মসৃন ভাবেই।

.                  ******************               


.                                                                           
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর