কবি ব্রজলাল অধিকারীর গণসঙ্গীত
*
এই দুনিয়ায় পয়সা নাই যার
কথা ও সুর - কবি ব্রজলাল অধিকারী
সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসংগীত সংগ্রহ” (১৯৯০) কাব্যসংকলন থেকে নেওয়া |


এই দুনিয়ায় পয়সা নাই যার
.                বিফল জনম তার |
যার হাতে নাই পয়সা কড়ি
তার বাপ মায় কয় মরি মরি
অধম ছেলে পেটে ধরি
.                দুখে জনম গেল আমার ||

লাঞ্ছনা গঞ্জনা সয়ে
থাকি এক পাশে শুয়ে
আমি কোন দোষ করি না
.                তবুও কয় বউ সর সর ||

যাই যদি ভাই শ্বশুর বাড়ি
বিরক্ত হয়ে শাশুড়ী
কয় রাতে কে চড়াবে হাঁড়ি
.                ভেবে অঙ্গ জর জর ||

সেই লোকটারই পয়সা হলে
প্রাণ প্রেয়সী ঘোমটা তুলে
আড় নয়নে হেসে বলে
.                খাও প্রাণনাথ জলখাবার ||

.            *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
আমি এক ছন্নছাড়া নীড়হারা
কথা ও সুর - কবি ব্রজলাল অধিকারী
সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসংগীত সংগ্রহ” (১৯৯০) কাব্যসংকলন থেকে নেওয়া |


আমি এক ছন্নছাড়া নীড়হারা বুনো পাখি
বঞ্চিত শোষিত জাগো জাগো বলি
.                নিশীথে উঠিগো ডাকি ||
হইবে হইবে নিশি অবসান,
.                জাগিলে শ্রমিক জাগিলে কিষাণ,
জাগিলে মজদুর হলে একপ্রাণ
মিলিবে পথের দিশা |
ঐক্য সংগ্রাম করিলে কাটিবে
.                এ ঘোর তিমির নিশা ||
ভুলি ভেদাভেদ হিংসার ক্লেদ
.                হওরে আগুয়ান কাজে
দীন বলিয়া কি হীন হব মোরা ?
.                মরিব কি পাছে লাজে ||
স্বজন সাজিয়া যে করে শোষণ
.                তারে ভাব নিজ জ্ঞাতি ?
বাহিরে মানব অন্তরে দানব
.                সে কিরে তোদের জাতি ||
চিনে নাও আপন নিপীড়িতজন
.                চিনে নাওরে শোষিত
কিবা অপরাধে তোমরা হতেছ ভাই
.                যুগে যুগে বঞ্চিত ?
ধনিকে বণিকে গিয়াছে মিলিয়া
.                রণডংকা তাই উঠিছে বাজিয়া ||
তাই তো বিশ্ব উঠিছে কাঁপিয়া
.                মরণের হাহাকারে |
তাই বুঝি আজ ভরিয়াছে দিক
.                অন্যায় অবিচারে ||
ভুলি ভেদাভেদ তাই হাতে বাঁধ আজ
.                মিলনের মহারাখী |
শোষিত বঞ্চিত জাগ জাগ বলি
.                ডাকিছে বনের পাখি ||

.            *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
চাকরি দাও চাকরি দাও
কথা ও সুর - কবি ব্রজলাল অধিকারী
সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসংগীত সংগ্রহ” (১৯৯০) কাব্যসংকলন থেকে নেওয়া |


চাকরী দাও চাকরি দাও বলে
.                মরছ কেবল ঘুরে
( তোমার ) হাতের কাছে সোনার খনি
.                দেখলে না তা খুঁড়ে |

আলসে খানায় লেখালি নাম
.                ঘুরাফেরা নেই কোনো কাম |
বাপের পয়সায় টানছ সিগার
.                বেলবটম ও সুট পরে |

মাটি যে তোর খাঁটি সোনা
.                চষলে কি ফসল হয় না |
মাটি ধরতে করছ হেলা
.                লক্ষ্মীছাড়া ওরে ||

.            *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
শ্রমিক বলে চাষী ভাই
কথা ও সুর - কবি ব্রজলাল অধিকারী
সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসংগীত সংগ্রহ” (১৯৯০) কাব্যসংকলন থেকে নেওয়া |


শ্রমিক বলে চাষী ভাই
.                চাষী বলে শ্রমিক ভাই
গগনে ঐ বাড়ছে বেলা
.                চল চল কাজে যাই || [ ধুয়া ]

মনকে বানাও কামারশাল
.                গড় দাও কাস্তে কোদাল
শ্রম আগুনে পোড়াও লোহা
.                তখন হবে লাল |
হাতুড়ির ঘায় ধরাও আকার
.                নীচ জনগণ যেন নেহাই ||
আমি কাস্তেটি ধরি
.                তুমি ধর হাতুড়ি
চল কল কারখানা আর
.                ক্ষেত খামারে উত্পাদন করি |
নিজেও যাই হাটে বেচি
.                নিজে বাঁচি দেশ বাঁচাই ||

গাওরে ঘুম-ভাঙানো গান
.                গানে জাগাও দেশের প্রাণ
গণতন্ত্র রক্ষা হবেই
.                ঠিক রাখলে ইমান |
শোষিত বঞ্চিত মোরা
.                শোষণ মুক্তির সংগ্রাম তাই ||

.            *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
তোমার নাওয়ে করল না সোয়ারী
কথা ও সুর - কবি ব্রজলাল অধিকারী
সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসংগীত সংগ্রহ” (১৯৯০) কাব্যসংকলন থেকে নেওয়া |


তোমার নাওয়ে করল না সোয়ারী
.                অ সুবল গোঁসাইজী
তোমার নাওয়ে করলো না সোয়ারী || [ ধুয়া ]

গোঁসাইজী, নিজের কথা কই না লাজে
.                কইতে গেলে মুখে বাজে
.                অর্ধাহারে অনাহারে মরি |
.                বাড়ছে কেবল জিনিসের দাম
.                অনুপাতে হয় না ইনকাম
.                হাটে গেলে মাথায় পরে বাড়ি |

গোঁসাইজী, কইব কত দুঃখের কথা
.                অকালে হৈল বুকে ব্যথা
.                আশির জুনে পুইড়া গেল বাড়ি
.                কাঙাল তারণ শুইনে নাম
.                চরণে শরণ নিলাম
.                দয়া করে পার কর কাণ্ডারী ||

গোঁসাইজী, গুরুভক্তি যার অন্তরে
.                তার ছাওয়াল যে ভাতে মরে
.                তার মা যে ভিক্ষা করে লোকের বাড়ি বাড়ি |
.                তুমি যদি পাও তার দেখা
.                দিও আমার এই যে লেখা
.                বলো দয়া করতে ত্রিপুরারি ||

.              *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
গ্রাম গঞ্জের উন্নতির জন্য
কথা ও সুর - কবি ব্রজলাল অধিকারী
সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসংগীত সংগ্রহ” (১৯৯০) কাব্যসংকলন থেকে নেওয়া |


গ্রাম গঞ্জের উন্নতির জন্য
.                পঞ্চায়েতের নির্বাচন
বাম দলে করিব জয়ী ঠিক করেছি মন |
শুন বন্ধুগণ বলি তার কারণ
.                বামদলে করিব জয়ী |--- [ধুয়া ]

বামে দেয়রে কাপড়-ভাত
.                গরীব তাঁতী পাইল তাঁত,
কৃষকরা পায় কৃষিঋণ আর
.                ভাল রাস্তা ঘাট,
পাড়ায় পাড়ায় রাস্তা কুয়া
.                জলাশয় করে খনন ||

পাড়ায় হয়েছে ইস্কুল
.                এখন টিফিন পায় ছাওয়াল
কম দামে জনতা শাড়ি
.                জেলেরা পায় জলা জাল |
রিক্সাওলায় রিক্সা পাইল
.                আছেনি মনে স্মরণ ||

বামে চাকুরি দিল ভাই
.                হিসাব করলে দেখতে পাই
পাঁচ বছরে চল্লিশ হাজার
.                তুলনা যার নাই |
পাহাড়ী ভাই পাইল সূতা
.                জুমিয়া পায় বীজধান ||

গোঁসাই তারকনাথে কয়
.                ব্রজ করিস না তুই ভয়
যাদের কাছে ধর্ম আছে
.                তাদের হবেই জয় |
কাস্তে তারা হাতুড়িতে,
.                করছে দেশের উন্নয়ন ||

.              *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
আদর করে স্নেহভরে কোলে দিলে ঠাঁই
কথা ও সুর - কবি ব্রজলাল অধিকারী
সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসংগীত সংগ্রহ” (১৯৯০) কাব্যসংকলন থেকে নেওয়া |


আদর করে স্নেহভরে কোলে দিলে ঠাঁই
ধন্য করলে তুমি বন্ধু যার তুলনা নাই || [ ধুয়া ]

দুঃখের বোঝা বয়ে সাথে
ঘুরছিলাম ওই পথে পথে
অজ্ঞান ঘুচালে তাতে
.                জ্ঞানের দীপ জ্বালাই ||

দূর করিলে জাত অভিমান
শোষণ মুক্তির দিলে সন্ধান
কন্ঠে মোদের দাও ঐকতান
.                চিনালে ভাই ভাই ||

চেতনারই মশাল জ্বেলে
.                এক করিলে শিল্পীদলে
ভেবে বলে ব্রজলালে
.                যেন না হারাই ||

.              *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
লোকশিল্পী সংগঠন ভাই
কথা ও সুর - কবি ব্রজলাল অধিকারী
সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত “গণসংগীত সংগ্রহ” (১৯৯০) কাব্যসংকলন থেকে নেওয়া |


লোকশিল্পী সংগঠন ভাই
.                কে করল গঠন |
মরার ধরে ফিরিল প্রাণ
মরা গাঙে বয় প্লাবন || [ ধুয়া ]

ভাইরে – ভাই কেমন একটি আজগবিকল
দেশে হইল সিনেমার চল
বলতে গেলে বলে পাগল
পোশাকপরা বাবুগণ |
শালী যদি আসে বাড়ি
সিনেমায় যায় রিক্ শা চড়ি
না দেখিলে লাভ স্টোরি
.                শান্ত হয় না তাদের মন ||

দেখতে হয় দেখ সিনেমা
সবটাকে মন্দ বলি না
ব্যবসা ভিত্তিক যেই সিনেমা
মনকে নেয় অধঃপতন |
মনটারই প্রতিরোধে আয়রে বাউল সারি বেঁধে
পড়ব না আর ওদের ফাঁদে
.                 জাগাও দেশের জনগণ ||

পথিক মোদের বামফ্রন্ট সরকার
দূর করতে ঘোর অন্ধকার
আউল বাউল সবাই মিলে করছে রাজ্য সংগঠন ||
প্রাণভরে গাই বাউল সারি
গড়িয়া গাজন যে যা পারি
ব্রজলাল কয় মরি মরি
.                  ধন্য হল এ জীবন ||

.              *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর