কবি দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার-এর কবিতা
*
অমর! অজেয়---বাণীজগতের তারা
দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদার
শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণে লেখা, ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ
পত্রিকার ফাল্গুন ১৩৪৪ (১৯৩৮) সংখ্যায় প্রকাশিত।


অমর! অজেয়---বাণীজগতের তারা!
প্রয়াণে তোমার বঙ্গজননী নয়নের মণিহারা।
.                এই অশ্র অন্ধ পথে
.                জ্বাল জগৎ-মনের রথে
প্রিয়, অমৃত, চিরনব তব অশোক আলোর ধারা!
বঙ্গের তুমি, তুমি ভূবনের শরতের
.                                                শততারা!

.                              ******************               


.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
সবুজতীর্থ
দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদার
চিত্তজিৎ দে ও শ্যামাপ্রসাদ সরকার সম্পাদিত “প্রণাম নাও”, বৈশাখ ১৩৬৮ (মে ১৯৬১)
কাব্য সংকলনে প্রকাশিত।


বিশ্বকবি!
যেদিন প্রথম আমায় ডেকে তোমার চিঠি
এল, এখনো সেই দিনটি আসে তোমার স্পর্শ
মেখে।
দেখছি . . . সবুজ শাস তরুরা রোদ-ছায়া মিলিয়ে
স্বপ্নকুটির গড়ে খেলা করছে কবিদের সাথে।
.        পৃথিবী যে তাদের কাছ থেকে আর দূরে
থাকবে না, তোমায় ঘিরে, তার বাঁশী কী উচ্ছ্বল
সুরে উঠছে বেজে!
সে কোন্ অদেখা চিঠি পৌছলো, লেখা
তোমার নামের অক্ষরে, ভোর না হতেই আজ
পাচ্ছি আমার বাংলাদেশে, সারা পৃথিবীকে!
তরুণেরা উঠে আসছে নিঃশঙ্ক বুক, উঠছে
বেজে তাদের উত্সবের শঙ্খ! স্বপ্নপুরীর
তোরণ খুলে দিয়ে সত্যেরা বেরিয়ে আসছে
দল বেঁধে।
.        ইচ্ছে করে, প্রথম দিনের কথা আর আজেয়
কাহিনী মিশিয়ে, তোমায় লিখি চিঠি।
কোথায় লিখবো! সবখানে যে তোমার কথাই
সুরু হয়েছে। সবুজ দলের দেশে, তাদের
সাথে, কবিগুরু, লিখলেম প্রণাম, এই কলমেই,
চিরসবুজেরা দিচ্ছে তোমায় অঞ্জলি যে অমর
অমলতীর্থে।

.                              ******************               


.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
খোকার দেশ
দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদার
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সরল দে, এখ্লাসউদ্দিন আহমদ ও অর্ধেন্দু চক্রবর্তী সম্পাদিত
“পাঁচশো বছরের কিশোর কবিতা” (অক্টোবর ১৯৩৮) কাব্য সংকলনে প্রকাশিত।


খোকার দেশে                         কেবল হেসে
.                চাঁদটি উঠে আসে
সূর্য্যিমামার রাজধানীতে বেজায় চমক লাগে!
তারাদার বই কেড়ে নেয় ফুলবোনেরা জুটি’ ;
দীপের আলোয় হেসে উঠে মায়ের আঁখি দুটি!
খোকার দেশে                         হেসে হেসে
.                আঁধার আঁচল পাতে
অমৃতফল করতে চুরি চাঁদের আঙিনাতে ;
মেঘের বুকে দত্যিরা সব বিজলিমালা পরে
ধিংতা নাচন নেচে পালায় স্বপ্ন পাহাড় ভরে!
খোকার দেশে                         ভেসে ভেসে
.                রুপোলি গান-গাওয়া
ময়ূরপঙ্খী পালে লাগে রূপনদীটির হাওয়া ;
তেপান্তরের ছায়া পথে পক্ষিরাজের পিঠে
রাজপুত্রের তরোয়ালের ঝঞ্ঝনা কী মিঠে!
খোকার দেশে                         কেশে কেশে
.                সিংহ শেয়াল সারা ;
পা দুলিয়ে পাতার দোলায় বাতাস দিশেহারা,
ঝিনুকগুলি নদীর জলে জোচ্ছনাতে ভেজে,
ভোরের বেলায় উড়ে বেড়ায় প্রজাপতি সেজে!
খোকার দেশে                        এসে এসে
.                পরির শিশুগুলি
পড়ার বনে দেয় বুলিয়ে রামধনুকের তুলি
সেথায় আছে পেকে রসাল দাদামশা’র হাসি,
অশথ্তলায় বাজে অঘুম রাখালছেলের বাঁশি!

.                         ******************               


.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
সবুজ লেখা
দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদার
এখ্লাসউদ্দিন আহমদ ও অশোককুমার মিত্র সম্পাদিত “দুই বাংলার ছড়া” (জানুয়ারী
১৯৯৩) কাব্য সংকলনে প্রকাশিত।


সবুজ লেখা
.        সবুজ পাতার
.                সবখানে

ফুল ফোটে তাই
.        সবুজ রঙের
.                সব গানে।

সবুজ দেশের
.        সবুজ রংয়ের
.                অফুর সুর---

ডাক দিয়ে যায়
.        ফুলের ঘুমের
.                দূর সুদূর।

.               ******************               


.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
চাঁদের হাট
দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদার
ডঃ নীরদবরণ হাজরা সম্পাদিত “ছোটদের আবৃত্তিকোষ” (আগস্ট ২০০৭) কাব্য সংকলনে
প্রকাশিত।


নীল আকাশে                সূর্যিমামা                 ঝলক দিয়েছে।
সবুজ মাঠে                  নতুন পাতা               গজিয়ে উঠেছে।
পালিয়ে ছিল                সোনার টিয়ে              ফিরে এসেছে।
ক্ষীর নদীটির                তীরে খোকন             হাসতে লেগেছে।
হাসতে লেগেছে              রে খোকন                নাচতে লেগেছে।
মায়ের কোলে                চাঁদের হাট               ভেঙে পড়েছে।

.          
                    ******************               


.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
কিশোর
দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদার
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সরল দে সম্পাদিত “ছোটদের ৫০০ কবিতা” (জানুয়ারী ২০০৬) কাব্য
সংকলনে প্রকাশিত।


মায়ের চোখে দীপ্তিটি চাই, বোনের হাসি,
যাকেই দেখি তারই ভালোবাসার রাশি,
সাথির সাথে গলাগলি খেলার দেশে,
ভাইয়ের সাথে যুক্তিটি রোজ ঘরে এসে।

হাওয়ার দোলা সবুজ মাঠের খোলা বুকে
রোদ ও ছায়ায় ছুটোছুটি তালটি ঠুকে,
গাছের কাঁধে, নদীর কোলে ছাদের পিঠে,
বইয়ের পাতায় দিনটি যে যায় কী সে মিঠে!

দুষ্টুমিতে সাজাবি লাজ! ছুটির মজা,
প্রমোশন ও প্রাইজ এবং পান্ তো গজা,
অসুখেতে তেতো অষুধ! আবার রেলে
বাবার সাথে চেঞ্জে যাওয়া, সেরে গেলে।

পাড়া গাঁ আর শহর দুটি পাখির ডানা
চোখ যায় কি কোথা থেকে ফিরিয়ে আনা?
নদীর বাঁকে পাখির ঝাঁকে মেঘের পারে
মনে নিয়ে যায় কোন খানে দূর তারার সারে!

জানি না যে কখন হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়ি।
স্বপন এসে কোথায় রাজার সোনার ঘড়ি।
জাগি যখন দেখি যে ফের নতুন হয়ে
বাজিয়ে বাঁশি আলোতে সব চলছে বয়ে!

ইচ্ছে করে গান গেয়ে ভোর দুপুর সাঁঝে
ওদের সাথে ছুটি মনের পক্ষিরাজে।

.                          ******************               


.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
উপদেশ
দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদার
কালিদাস ভদ্র সম্পাদিত “আবৃত্তির সেরা ছোটদের ছড়া ও কবিতা” (বইমেলা ২০১২) কাব্য সংকলনে
প্রকাশিত।


এক

চেষ্টা কোনো নাই কো যাদের, কাজ করে না খেটে,
ধন, মান, রাজ্য --- ভাবে
আপনি আসে হেঁটে।
কাজটা জানে বিপদ ভারি! ঘুমটা ভাবে সুখ!
সেই কুঁড়েরা কক্ষনো না দেখে সুখের মুখ॥


দুই

ধরার ধূলোয় ছড়িয়ে আছে
মানিক মণির কণা,
কুঁড়েরা তা চোখটি খুলে
কক্ষনো দেখলো না।
যেচে এসে দেবতারা
দিয়ে গেলেও ধন,
কুঁড়েগুলোর দুঃখ তবু
ঘোচে না কখন।


তিন

ঝগড়াঝাঁটি করে যারা, নেই কো তাদের হিত,
এক করতে আর হয়, আর ঘটে বিপরীত।
রেগে যারা কাজটি নাশে খিটমিটিয়ে দাঁত,
শেষে তাদের ভাবতে হয় মাথায় দিয়ে হাত।
পেয়ে ধন হারায় যারা
ঝগড়া লড়াই করে,
ছাঁইপাশ আর ধূলাবালি
থাকে তাদের তরে।
কুঁড়ে আর কুঁদুলে করে আপন সর্বনাশ,
ভাগ্য কখন ওদের ঘরে করে না কো বাস।

.                 
           ******************                            


.                                                              
                          সূচীতে . . .   


মিলনসাগর