কবি প্রভাবতী দেবী সরস্বতীর কবিতা
*
তোমার লাগি
কবি প্রভাবতী দেবী সরস্বতী
ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকার আষাঢ় ১৩৫০ (জুলাই
১৯৪৩) সংখ্যা থেকে পাওয়া।


আজকে রাতের অন্ধকারে
.                        বাহির হব দুয়ার খুলে,
তোমার অভিসারের লাগি
.                        মন যমুনার কুলে কুলে।
তোমার বাঁশীর সুরে সুরে,
.                        গুঞ্জরিত মোর নূপুরে
মুঞ্জরিত অশোক শাখায়---
.                        উঠ্ বে ভরে ফুলে ফুলে
তোমার লাগি বাহির হব
.                        বন্ধু, আমার দুয়ার খুলে॥

.                *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
জাগাও
কবি প্রভাবতী দেবী সরস্বতী
বঙ্কিমচন্দ্র সেন সম্পাদিত দেশ পত্রিকার আশ্বিন ১৩৪৬ (অক্টোবর ১৯৩৯) সংখ্যা থেকে
পাওয়া।


এক মুষ্টি অন্ন তরে যাহারা বাড়ায়ে থাকে হাত,
তাহাদের লুপ্ত কর ধরা থেকে হে জগন্নাথ।
যে দারিদ্র্য মহাপাপ অপরাধ চলেছে বাড়ায়ে,
তাহাকে বরণ করে উহারাই চলেছে আগায়ে।
নিজেদের সত্তা ওরা ভুলে গেছে---আছে জড় হয়,
অমঙ্গল যাহা কিছু ধরায় আনিছে ওরা বয়ে।


দেখেছি ওদের - ওরা আবর্জনা হতে খাদ্য বাছে,
দেখেছি ওদের - ওরা ফেরে ধনীদের আগে পাছে।
শৃগাল কুকুর সাথে করে দ্বন্দ্ব আহার্য্য লাগিয়া,
অতি ক্ষুদ্র দান লভি পরিপূর্ণ হয় ক্ষুদ্র হিয়া।
যুগ যুগান্তর ধরি বংশধর ওরা রেখে যায়,
আশে পাশে রহে ওরা অতি দীন, অতি অসহায়।


পথপার্শে বৃক্ষতলে গড়ে নেয় নিজেদের স্থান,
উদরে অনন্ত ক্ষুধা সম তার মান অপমান।
ইহারা হারায় প্রাণ ধনীদের চালার তলায়,
কে জানিবে সে বারতা, চিহ্ন কিছু রহে না ধরায়।
কেবল গণনা কালে জানা যায়, নাম কিছু নাই,
কেন এরা বেঁচে থাকে,---ভগবান, তোমারে সুধাই।


ধরণীর আবর্জ্জনা,---সমব্যথী পায় না যাহারা,
বেঁচে থেকে মরে থাকে, সমাজের বহু দূরে তারা ;
কাতর প্রার্থনা বাণী শুধু যাহাদের মুখে ফুটে,
বুদ্বুদের মত তারা মুহূর্ত্তের তরে জেগে ওঠে,
কেন বেঁচে থাকে ওরা এই হীন দীনতা বরিয়া,
দয়াময়, কহ কেন, ইহাদের রেখেছ বাঁধিয়া?


দাও শক্তি জাগাইয়া,--- যে শক্তি ঘুমায়ে রহিয়াছে,
দাও দৃষ্টি---দেখে যেন কিবা আছে আগে আর পাছে।
যে অন্ন ধনীর তরে, আছে তাতে সম অধিকার
মানুষ সে---নয় ঘৃণ্য, শ্রেষ্ঠতম রচনা ধাতার।
কেন করে আত্মদান ধনীর রথের চক্রতলে,
অন্যায় পীড়নে মৃত্যু নহে বিধিলিপি---দাও বলে।


দাও শক্তি, দাও জ্ঞান, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াক
সত্য ন্যায্য অধিকার মানুষের মাঝে ফিরে পাক।
একই গৃহতলে ধনী, দরিদ্র্র লভিবে যবে স্থান,
সেই শক্তি লভিবারে ইচ্ছা দাও ওগো ভগবান।
মিথ্যা হয়ে যাক মিথ্যা এই ধনী দরিদ্রের জ্ঞান,
সত্য কর, পূর্ণ কর মানুষেরে তুমি ভগবান।

.                *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
বালুর চর
কবি প্রভাবতী দেবী সরস্বতী
বঙ্কিমচন্দ্র সেন সম্পাদিত দেশ পত্রিকার আশ্বিন ১৩৪৬ (অক্টোবর ১৯৩৯) সংখ্যা থেকে
পাওয়া।


দূরে নদী জেগে---এদিকে বিশাল চর,
.                ধূ ধূ করে বালু যতদূর চোখ যায় ;
সেই বালু দিয়ে সেখানে রচেছি ঘর
.                উপাদান তার বেদনায় নিরাশায়,
.                        একটি সবুজ গাছ যায়নাকো দেখা,
.                        পড়ে না সেথায় কাহারও চরণরেখা,
পাখীও হেথায় আসে না গাহিতে হেথায় গান---
.                সেই বালুচরে একা আমি বসে থাকি,
দিন আসে পুন দিন হয় অবসান।


বরষার ধারা যবে সেথা নেমে আসে
.                খসে খসে পড়ে আমার গড়ানো ঘর,
সে বালুর বুক ভরে না সবুজ ঘাসে,
.                কানে আসেনাকো পথভোলা কোন স্বর।
.                        কত আশা নিয়ে ছুটিযে জলের পানে,
.                        জলের পিপাসা তার পানে মোরে টানে,
পথ না ফুরায় যতদূরই আমি যাই---
.                কোথা সেই নদী জলভারা কূলে কূলে ;
দুটি পা চালিয়া পিছনে ফিরিয়া চাই,
.                এই মরুমাঝে ঘরকে যে যাই ভুলে।


কোথা কাঁদে চখা চখিরে চাহিয়া নিতি
.                পরাণে তাহার সে করুণ সুর বাজে
অন্তরে মন ধ্বনিছে তাহার গীতি,---
.                কোথা শ্যাম তরু, কোথা ফুলদল রাজে?
.                        কোথা পথভোলা অলি আসে ফিরে ফিরে,
.                        বসন্ত বায় বয়ে যায় কোথা ধীরে,
কোথা চাঁদ উঠে ছড়াইয়া দেয় আলো,
.                কোথা আছে আশা, স্নেহ, ভালোবাসা জাগি?
আমার কুটিরে জাগিছে নিকস কালো,
.                আমি একা জাগি এখনও আলোর লাগি।


শত বত্সর একদা যাইবে চলে,
.                পান্থ কোনও একদা আসিবে হেথা
মধুর বাতাস কানে যাবে কথা বলে---
.                জাগায়ে তুলিবে অন্তর মাঝে ব্যথা।
.                        খুঁজে পাবে সে চিহ্ন আমার কিছু,
.                        আমি রেখে যাব যা কিছু আমার পিছু,
পথহারা পথে বয়ে যাবে জলধারা,
.                সে পথও হারাবে মরুর মাঝারে এসে,
পান্থ কোনও হবে হেথা পথহারা,
.                কারও বাণী হেথা আসিবে না কানে ভেসে।


এই বালুচরে একা একা বসে থাকি---
.                আপন সমাধি আপনি রচনা করি,
দূরের পানেতে মেলে রাখি দুটি আঁখি,
.                হতাশায় মোর অন্তর উঠে ভরি।

.                *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
শরতে চতুর্থী
কবি প্রভাবতী দেবী সরস্বতী
হেমেন্দ্রকুমার রায় ও গিরিজাকুমার বসু সম্পাদিত দীপালী পত্রিকার ১৮ই পৌষ ১৩৪১ (৩রা জানুয়ারী
১৯৩৫) সংখ্যা থেকে পাওয়া।


সুন্দর সুনীল আকাশে                            চতুর্থীর শুভ্র বাঁকা চাঁদ
উঠিয়াছে ভাসি
আকাশ ধরার মাঝে                        বিস্তারিয়া দেছে মায়া ফাঁদ
বিশ্ব উঠে হাসি।
দিনের উত্সব গান                          ধীরে ধীরে মিলাইয়া আসে
পাখা গেছে নীড়ে,
আঁধার নামিয়া আসে                         দিবসের মৃদু আলো ভাসে
চাঁদ জাগে ধীরে।
ক্ষীণ চন্দ্রমার আলো,                         ভেসে ওঠে পৃথিবীর বুকে
চিকি চিকি জ্বলে---
তটিনীর কালো বুক                              অন্ধকার বনানীর মুখে
আলো ভেসে জ্বলে।
স্বপন ঘুমায়েছিল                               জাগিল এ সুখ স্পর্শ পেয়ে
দিবস ঘুমায়
দিন শেষে খেয়া বেয়ে                        চলে যায় তরী নিয়ে নেয়ে
গান শোনা যায়।
অতীততের শত স্মৃতি                        এ সময়ে মনে জেগে ওঠে
পুনঃ নিভে যায়
পল্লব ঝরিয়া গেছে                              পড়ে ফুল ধরাতলে লুটে
তবু কারে চায়,
আকাশে নক্ষত্র জেগে                         অমাবশ্যা নিশিথিনী কোলে
গাহিয়াছে গান,
স্মৃতিফুলে গাঁথা মালা                        আজও চাঁদিনীর বুকে দোলে
@@@@@@@ (পড়া যাচ্ছে না)
দূর যেন দূর হ’তে ডাক দেয়                        বলে---“জাগো চাও,
চাও মেলে চোখ,
তোমার যা কিছু আছে                      নিঃশেষিয়া সব ঢেলে দাও
শূন্য বক্ষ হোক।
ঝুলি ভরে সব নিয়ে                              নূয়ে তুমি পথ চলিয়াছ
পড়ে যাও ভারে,
আপনার ঘর ছাড়ি                            কেন তুমি ঘরে পশিয়াছ
তবু খোঁজ কারে
স্বপন মাখিয়া চাই                             চির সত্যে লাভ করিবারে
মিথ্যা ভেঙ্গে যাক,
কুয়াসা ঘুচিয়া যাক,                           আলোক ভাসাক দুনিয়ারে
ধরা আলো পাক।
জীবনের বাঁশী পুনঃ বাজিয়া                            উঠুক হৃদি মাঝে
সব ভুলে যাই,
পূর্ণিমার চাঁদ কেন                           চিরকাল-ই সুমুখেতে রাজে
তারে আমি চাই।
কিন্তু এ স্বপন মাত্র                              চতুর্থীর চাঁদ হাসে দূরে
পূর্ণিমা কোথায়?
বরষা চলিয়া গেছে                               শরৎ আসিল আজ ঘুরে
কে ডাকিছে আয়?
দিবসের গান ক্রমে                               নীরব হইয়া গেছে এবে
শব্দ যায় নাই
নক্ষত্রালোকিতারাত্রি,                           জীব হয় মত্ত মহোত্সবে
শুধু দেখি তাই।

.                *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
প্রথম বর্ষা
কবি প্রভাবতী দেবী সরস্বতী
হেমেন্দ্রকুমার রায় ও গিরিজাকুমার বসু সম্পাদিত দীপালী পত্রিকার ৯ই শ্রাবণ ১৩৪২
(২৫শে জুলাই ১৯৩৫) সংখ্যা থেকে পাওয়া।


প্রথম বরষা ঘনায়ে এসেছে
.                আঁধারে ঢেকেছে চারিধার
সকল আকাশ মেঘে মেঘে আজ
.                হইয়া গিয়াছে একাকার।

ওর বুকে যায় দামিনী ঝকিয়া
ভয়ে দুরু দুরু কেঁপে ওঠে হিয়া,
মহাকাল নাচে তাথিয়া তাথিয়া
.        আঁধার দেখায় ভয়,
দেয়া ডেকে ওঠে গুরু গুরু করি,
এনেছে যে তার বুক জলে ভরি,
মৃত্যু নামিছে বিষাণ ফুকারি---
.        আজি তার মহাজয়।

.                কে জাগিয়া আছে আজ,
দুয়ারে দাঁড়ায়ে আঁধারের বুকে
.                আজি রাজ অধিরাজ।

হারায়েছে পথ অভাগা পান্থ,
.                চলেছে এ পথে একা
যাহারে চাহিয়া চলিয়াছে, হায়
.                পায় নি তাহার দেখা।

স্ফুট বকুলের গন্ধ ভাসিয়া
বাতাসের সহ নিকটে আসিয়া
পূর্ণ করিছে পখিকের হিয়া
.        সুমিখে আঁধার নাচে,
পিছনে পশ্চাতে, মাথার উপরে
আঁধার জড়ায়ে আছে থরে থরে,
ঝকিছে দামিনী পথ ’পরে পড়ে
.        কি জানি অদূরে আছে।

.                পথ কই---পথ কই?
নিমেষের তরে শুভ্র আলোক
.                সুমেখে চমকে ওই।

পথের দিশারি, কোথায় রহিয়াছ
.                পথিকে দেখাও পথ,
সারথী হইয়া আজি এ আঁধারে
.                চালাইয়া চল রথ।

প্রথম বরষা ধারা পড়ে ঝরে,
পিছলায় পথ---কেবা হাত ধরে,
আসিয়া দাঁড়াও এ পথের পরে,
.        হাতখানি ধর তায়,
আসুক মৃত্যু, আসুক না ভয়,
মানিবে না আর সে তো পরাজয়
তুমি ছাড়া আর কেহ তার নয়,
.        ঘুচাও অন্ধকার।

.                মাথার উপরে থাক,
তোমার আলোকে পথ দেখাইয়া
.                তাহারে নিকটে ডাক।

.                *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      


মিলনসাগর       
*
মাটির বিশ্ব
কবি প্রভাবতী দেবী সরস্বতী
হেমেন্দ্রকুমার রায় ও গিরিজাকুমার বসু সম্পাদিত দীপালী পত্রিকার ৩০শে শ্রাবণ ১৩৪২ (১৫ই অগাস্ট
১৯৩৫) সংখ্যা থেকে পাওয়া।


মাটির এ পৃথিবী                        জড়ায়ে আছে মোরে
আকাশ ডাকে শুধু “আয়”
মন যে ছুটে চলে,                         আশাতে বুক ভরে
দূরেতে রাখে নিরাশায়।
মাটি মা আদরেতে                         মুখেতে দেয় চুমা
ভুলায়ে রাখিবারে চায়,
আকাশ রূপে তার                         মনকে টেনে নেয়
ডাকিছে---“আয় কাছে আয়।”


মাটি মা ফুল কত                       রেখেছে বুক ভরে
সুবাস ছড়াইছে তার,
নয়ন পড়ে যবে                             ফুলের দল পরে
কিছুতে ফেরে নাকো আর।
নদীর কল তান                       কানেতে ভেসে আসে
নিভায় শোক হাহাকার---
মাটি মা মোর পানে                   চাহিয়া মৃদু হাসে---
কহিছে, “কোথা যাবি আর?”


রঙিন আকাশ যে                       দিতেছে হাতছানি,
চাঁদিমা মাঝখানে রয়,
তারকা কত জেনো                     করিছে কানাকানি,
সময় নীরবেতে বয়।
অবাক হয়ে শুধু                        চাহিয়া আমি থাকি,
এ আলো সারা ধরা ময়,---
সেই তো পাঠায়েছে ;                   দেয়নি তবি ফাঁকি,
গাহিছে আলোকের জয়।


আকাশ ডাকে মোরে                    দু’ বাহু প্রসারিয়া
আদরে কোলে নিতে চায়।
আলোরে দেখে সেথা                    পুলকে ভরে হিয়া,
মিশিতে চাহে আঁখি মোয়।
তারারা গায় গান,                    কানেতে ভেসে আসে
কি জানি গান তারা গায়।
আকাশ চিরদিন চাহিয়া মোরে---হেসে’
ডাকিছে, “আয়, কাছে আয়।”

.                *************************               

.                                                                             
সূচীতে . . .      


মিলনসাগর       
*
প্রতিষ্ঠায় বিসর্জ্জন
কবি প্রভাবতী দেবী সরস্বতী
অনিলকুমার দে সম্পাদিত উদয়ন পত্রিকার অগ্রহায়ণ ১৩৪০ (ডিসেম্বর ১৯৩৩) সংখ্যা
থেকে পাওয়া।


একদিন শূন্য গৃহে দেবতা প্রতিষ্ঠা করি যবে,
.                                জানি নাই হ’বে মিছে খেলা,
সে দিনের স্মৃতি শুধু মনোমাঝে চিরদিন র’বে,
.                                আসে সন্ধ্যা---কেটে যায় বেলা।
দেবতা লুটায়ে পড়ে ধূলার মাঝারে একদিন,
.                                চেয়ে দেখি মাটি মাত্র সার,
দেবতা দেবত্ব ল’য়ে কালের কোলেতে হ’ল লীন,
.                                বৃথা ডাকি---সাড়া নাই তার।
তার লাগি তবু মোর অশ্রুরাশি পড়ে ঝ’রে ঝ’রে
.                                অন্তরেতে উচ্ছ্বসে ক্রন্দন,
বিস্ময়েতে তবু আমি বারে বারে চাই শূন্য ঘরে,
.                                ভাবি---কবে হ’ল বিসর্জ্জন?
ধ্বংস তার হ’য়ে গেছে, চিহ্ন তার কিছু আজ নাই,
.                                তথাপি সে মনে জেগে আছে,
ঘরের পানেতে চেয়ে ছায়া যেন দেখিবারে পাই
.                                স্মৃতি তার জেগে থাকে পাছে।
মরণ?---সে মিছে কথা, তার স্পর্শ মিছে হ’য়ে যায়
.                                মিছে তার ভ্রুকুটী করাল,
দুনিয়া দুনিয়া র’ল, সে সকলি মুছে নিতে চায়
.                                দেখাইয়া মূরতি ভয়াল।
পূজার সে ফুলগুলি মিছেই চয়ন আজও করি
.                                ফেলি জলে---ঢেউয়ে যায় ভেসে,
বৃথাই চন্দন ঘসি, পাত্রটী এখনও রাখি ভরি’,
.                                কাল উঠে উচ্চসুরে হেসে।
স্মৃতিই জাগিয়া র’ল,---দেবতা আজিকে নাই আর,
.                                প্রতিষ্ঠার হ’ল বিসর্জ্জন,
মন্দির ঘেরিয়া আজও জেগে আছে আর্ত্ত হাহাকার,
.                                স্মৃতি শুধু করিছে ক্রন্দন।

.                    *************************               

.                                                                             
সূচীতে . . .      


মিলনসাগর       
*
বাসনার বিসর্জ্জন
কবি প্রভাবতী দেবী সরস্বতী
ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকার আশ্বিন ১৩৪১ (অক্টোবর ১৯৩৪)
সংখ্যা থেকে পাওয়া।


শূন্য এ মন্দির মাঝে পেতেছিনু তোমার আসন,
তোমার চলার তরে হয়েছিনু আমি রাজপথ ;
তব প্রশংসায় ছিল উজ্জ্বলিত আমার ভাষণ,
প্রাণপণে চেয়েছিনু হইবারে তব মনোমত।
চাহিনু আমারে আমি পৃথিবীতে ছড়াইয়া দিতে,
চাহি নাই রাখিবারে বন্ধ করে অন্ধকারে ঘরে ;
চাহি নাই দস্যু সম কেবল লুটিয়া সব নিতে,---
তোমার পূজার অর্ঘ্য সাজাইয়াছিনু থরে থরে।
পৃথিবীর সাথে মোর পরিচয় হয়েছে যখন,
তখন আলাপ হল আকাশের চন্দ্রমার সনে,---
আমার জীবনে হল যৌবনের নব জাগরণ
কত আশা গুঞ্জরিয়া উঠে মোর সুপ্তিভাঙ্গা মনে।

হৃদয় গগনে উঠে ভাসি রবি চন্দ্র মনোহর,
ঢালে সে কিরণ-ধারা, প্রতি কোণ করে আলোকিত ;
তার মাঝে দৃপ্তরূপে দাঁড়াইয়াছিলে হে সুন্দর
তোমারে হেরিয়া আমি হয়েছিনু বিস্ময়ে চকিত।
কত ফুটেছিল ফুল,---রাত্রি ক্রমে ফুরাইয়া আসে ;
পূর্ণিমার চাঁদ ক্রমে ঢলে পড়ে পশ্চিমের কোলে।
শ্রান্ত দেহ লুটে পড়ে ; ---ভবিষ্যৎ খিলখিল হাসে ;
দূরেতে কে থাকি যেন অন্ধকার যবনিকা তোলে।
জয়ের বাসনা ছিল,---সে বাসনা গিয়াছে মিলায়ে ;
পরাজিত, ক্লান্ত আমি, ধূলিমাঝে পেতেছি শয়ন।
ফুল গেছে ঝরে পড়ে সারারাত সুগন্ধ বিলায়ে,
প্রভাত আলোকে মোর বাসনার হল বিসর্জ্জন।

.                    *************************               

.                                                                             
সূচীতে . . .      


মিলনসাগর       
*
মরণ
কবি প্রভাবতী দেবী সরস্বতী
সজনীকান্ত দাস সম্পাদিত “বঙ্গশ্রী” পত্রিকার মাঘ ১৩৫২ (জানুয়ারী ১৯৪৬) সংখ্যা থেকে
পাওয়া।


এসো তুমি এসো বন্ধু,---
.                মোর পাশে এসো চুপে চুপে,
.                দাও মোরে স্নিগ্ধ আলিঙ্গন।
হে চির সুন্দর শুভ্র,
এসো তুমি স্নিগ্ধ শান্ত রূপে,
পরিপূর্ণ করে তোল মোর এই নিখিল ভূবন
তোমার পরশ দিয়া ;
.                ভুলে যাই---আমি ভুলে যাই
এ জগতে পূর্ণ তুমি, তুমি ছাড়া আর কিছু নাই।

.                    *************************               

.                                                                             
সূচীতে . . .      


মিলনসাগর       
*
বিসর্জ্জন ও আবাহন
কবি প্রভাবতী দেবী সরস্বতী
ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ পত্রিকার জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৫ (মে ১৯৩৮) সংখ্যা
থেকে পাওয়া।

কাল গেছে শেষ চৈত্র---একটি বত্সর হল গত ;
আজিকে বৈশাখ এলো, প্রাতে হল উদ্বোধন তার।
পুরাতন চলে গেল, চিহ্ন তার জাগে শত শত,
যে কাল চলিয়া গেছে আজ তাহা ফিরিবেনা আর।

.                    *************************               

.                                                                             
সূচীতে . . .      


মিলনসাগর