আমরা ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ কবির কনিষ্ঠ পুত্র শ্রী সুমন কুমার দাশের কাছে যিনি আমাদের সাথে যোগাযোগ
করে কবির ছবি ও জীবন সম্বন্ধে তথ্য পাঠিয়েছেন। তাঁর ইমেল -
sumankumardas1971@gmail.com    

আমরা
মিলনসাগরে  কবিয়াল রাইগোপাল দাশ-এর কবিতা বা গণসঙ্গীত তুলে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে
দিতে পারলে এই প্রচেষ্টার সার্থকতা।




উত্স -
  • সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত গণসংগীত সংগ্রহ, ১৯৯০।
  • কবিপুত্র সুমন কুমার দাশের পাঠানো কবি-পরিচিতি। চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর কবিয়াল রাইগোপাল
    দাশ সমৃতি পরিষদ থেকে প্রকাশিত কবিয়ালের সংক্ষিপ্ত জীবনী।


কবিয়াল রাইগোপাল দা-এর মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন


আমাদের ই-মেল -
srimilansengupta@yahoo.co.in     


এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ৮.৮.২০১৬।
কবির ছবির সংযোজন - ২৪.৬.২০২১।
কবির দ্বিতীয় ছবি ও কবি-পরিচিতির সংযোজন - ৪.৭.২০২১।


...
রাইগোপাল দাসের কবিগানে শিক্ষা এবং দীক্ষা    
জেল ফেরত স্বদেশীদের থেকে মার্কসবাদ ও কমিউনিস্ট পার্টিতে    
কবির কবিগান ও বাম আন্দোলন নিয়ে কর্মবহুল জীবন    
কবিয়াল রাইগোপাল দাশ অন্য কবিয়াদের উপর তথ্যচিত্র    
কবির প্রগতিশীল কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁর উপরে নির্যাতন    
কবির পরিবার পরিচিতি    
রাইগোপাল দাসের কবিগানে শিক্ষা এবং দীক্ষা -
বাল্যকালে স্কুলে পড়ার সময় কবিগানের দিকে আকৃষ্ট হন। তার আগে দুই বছর মাতুলের যাত্রা দলে ছিলেন

যাত্রাদল ছেড়ে এসে গৌড়ীর মাঠের বৈষ্ণবদের কাছে কীর্তন গান শেখেন।  এক সময় কবিয়াল করিম বক্সের
কবিগান শুনে নিজে নিজে গান রচনায় মনোযোগ দেন এবং কবিয়াল হবার বাসনা জাগে। তাঁর গ্রামের
 
নিকটে
কবিয়াল রমেশচন্দ্র শীলের গ্রাম। সুতরাং রমেশ শীলের সঙ্গে যোগাযোগ বহু দিনের। রমেশ শীলের
প্রভাবে
 নিজের কৃষি কাজ দেখাশোনার সঙ্গে সঙ্গে কবিগানে মেতে উঠেন। রমেশ শীলকে আনুষ্ঠানিকভাবে
গুরু বরণ করেন।
কবিয়াল রাইগোপাল দাশ -   বাংলার
লোককবি কবিয়াল রাইগোপাল দাশ
 একজন
প্রথম সারির কবিয়াল ছিলেন। তিনি জন্মগ্রহণ
করেন
  অবিভক্ত  বাংলার  চট্টগ্রাম  জেলার
ধোরলা গ্রামে। ফেব্রুয়ারী। তিনি ছিলেন গরীব
কৃষক-সন্তান।
*
জেল ফেরত স্বদেশীদের থেকে মার্কসবাদ ও কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান -  পাতার উপরে . . .   
সেকালে চট্টগ্রামে যুব বিদ্রোহের কারণে তাঁদের গ্রামেও পুলিশ-মিলিটারীর অত্যাচার ছিল। কবিয়াল বলে
তিনি পুলিশের নজরের বাইরে ছিলেন। ১৯৩৭ সালের দিকে একে একে স্বদেশীরা মুক্তি পেয়ে গ্রামে ফিরতে
থাকেন। তাঁদের কাছে তিনি নতুন জীবন দর্শন মার্কসবাদের কথা জানেন। বিপ্লবের নতুন ব্যাখ্যা শোনেন ।
বিপ্লবী সারদা শীল, বিজয় সেন প্রমুখের সঙ্গে আলোচনায় তার রাজনৈতিক পড়াশোনায় আগ্রহ জাগে। তিনি
কৃষক সমিতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান। পরবর্তীতে তিনি বোয়ালখালী উপজেলা কৃষক সমিতির সভাপতি হন।
*
কবির কবিগান ও বাম আন্দোলন নিয়ে কর্মবহুল জীবন -                          পাতার উপরে . . .   
কবিগানকে উন্নত করার জন্য
রমেশ শীলকে সভাপতি ও ধীরেন্দ্র সেনকে সম্পাদক করে ১৯৩৮ সালে “রমেশ
উদ্বোধন-কবি সমিতি”
 নামে কবিয়ালদের সমিতি গঠিত হয়।  এই সমিতিতে  রাইগোপাল দাশ  কবিয়াল
হিসেবে যোগ দেন এবং সেই সময় থেকে পেশাদার কবিয়াল। কবিগানের সঙ্গে কৃষক সমিতির কাজ করতে
থাকেন। ১৯৪৩ সালে চট্টথাম জেলা কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় রাউজান থানার বাগোয়ান গ্রামে । এই
সম্মেলনে রমেশ শীল এবং জেলার কবিয়ালরা উপস্থিত ছিলেন। এখানেই জেলার প্রথম কবি সম্মেলন এবং
রমেশ শীলকে সভাপতি ও ফণী বড়ুয়াকে সম্পাদক করে চট্টগ্রাম জেলা কবিয়াল সমিতি গঠিত হয়। এই
সমিতির কার্যকরী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন রাইগোপাল দাশ, বরদাচরণ দে, সারদা বড়ুয়া, তারাচরণ
দাশ, শৈলেন সেন, গোবিন্দ দে।
 সহ সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন হেদায়েত ইসলাম খাঁ। এই সম্মেলনে
কবিগান হয়েছিল ‘কৃষক ও মজুতদার’।
 দেশভাগের  পরে  কবিয়ালরা বিপদ আপদের মধ্যেও দেশে থেকে
যান।
 ১৯৪৮ সালে জেলা কবিয়াল সমিতির সম্পাদক হন কবিয়াল রাইগোপাল দাশ।  কিন্তু রাজনৈতিক
মতভেদের কারণে তিনি পদত্যাগ করেন। কবিয়াল সমিতিতে ভাঙন ধরে। ১৯৪৫ সালে ময়মনসিংহ জেলার
নেত্রকোনায় সারা ভারত কৃষক সম্মেলনে, বর্দ্ধমান জেলার হাটগোবিন্দপুরে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কৃষক সম্মেলনে,
কলকাতার মুহম্মদ আলী পার্কে
 ফ্যাসিস্ট বিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘের তৃতীয় সম্মেলনে, ১৯৪৬ সালে
কলকাতায় ভয়ঙ্কর দাঙ্গার পরে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী অভিযানে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে
 এবং পার্ক
সার্কাসে
 রমেশ শীলের সঙ্গে কবিয়াল রাইপোগাল দাশ ও ফণী বড়ুয়া কবিগান গেয়েছিলেন। বাংলাদেশে
কাগমারীতে
 ভাসানী মৌলানার আওয়ামী লীগের সম্মেলনে,  রাইগোপাল দাশ ১৯৪৫ সালে চট্টগ্রামে ছাত্র
ফেডারেশনের প্রাদেশিক সম্মেলন এবং ১৯৪৩ সালে “চট্টগ্রাম রক্ষা কর” প্রদর্শনী উপলক্ষে সাংস্কৃতিক মেলায়
রমেশ শীলের সঙ্গে  রাইগোপাল দাশ,  ফণী বড়ুয়া,  হেদায়েত হোসেন এবং আরো অনেকে অংশ গ্রহণ
করেছিলেন।
*
কবিয়াল রাইগোপাল দাশ এবং অন্য কবিয়াদের উপর তথ্যচিত্র -           পাতার উপরে . . .   
১৯৪৮ সালে শ্রদ্ধানন্দ পার্কে
 কবিগানে রমেশ শীল ও রাইগোপাল দাশ  অংশগ্রহণ  করেছিলেন।  এঁদের
কবিগান শুনে কলকাতার মানুষ মুগ্ধ হয়েছিল, তৎকালীন
 পত্রিকায় অভিনন্দন জানিয়ে সংবাদ ও মন্তব্য
প্রকাশিত হয়েছিল।
 সুতরাং রাইগোপাল দাশ পশ্চিমবঙ্গেও পরিচিত। রমেশ শীলের জীবনাবসানের পরে
কবিয়াল রাইগোপাল দাশ ও ফণী বড়ুয়া
 কলকাতা  এসেছিলেন ১৯৭৮ সালে এবং মাকর্সবাদী কমিউনিস্ট
পার্টির রাজ্য
 সম্মেলন  উপলক্ষে  ক্যাথেডার  রোডের  মাঠে  অনুষ্ঠিত  সাংস্কৃতিক  অনুষ্ঠানে  কবিগান
গেয়েছিলেন। গানের বিষয় ছিল ‘ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র’ ৷ ১৯৮১ সালে ভারতীয় গণনাট্য সংঘের রাজ্য সম্মেলন
উপলক্ষ্যে বম্বের (
এখন মুম্বাই )  রণজি-স্টেডিয়ামে রাইগোপাল দাশ এবং রমেশ শীলের পুত্র যজ্ঞেশ্বর শীল
কবিগানে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

১৯৭৮ সালে বামফ্রন্টের সরকার ‘বাংলার কবিয়াল’
 নামে  একটি  তথ্যচিত্র  নির্মাণ  করে।  উদ্দেশ্য ছিল
কবিগানের সমাজচেতনা সম্পন্ন এই ধারার গান ফিল্ম করে রাখা। সুতরাং রাইগোপাল দাশ, ফণী বড়ুয়ার
এবং শেখ গোমানী দেওয়ানের কয়েকজন শিষ্যের গান দুই রীলে ফিল্ম করা হয়েছে। এই তথ্য চিত্রে রমেশ
শীল ও শেখ গোমানী দেওয়ানের সংক্ষিপ্ত জীবনী দেখানো হয়েছে। এই দলিলচিত্রের নির্মাতা শান্তি চৌধুরী।
ছবিটি একটি মূল্যবান দলিল চিত্র হিসাবে গণ্য হয়েছে।
*
কবির প্রগতিশীল কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁর উপরে নেমে আসা নির্যাতন -          পাতার উপরে . . .   
রাজনৈতিক বিশ্বাস এবং প্রগতিশীল কবিগানের জন্য রাইগোপালকে বারেবারে
 শাসকদলের নির্যাতনের
শিকার হতে হয়েছে। ১৯৫৬ এবং ১৯৭১ সালে তাঁর গৃহে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল, ১৯৫৪ সালে গ্রেপ্তারী
পরোয়ানা জারি হয়েছিল, তাঁকে বাড়িতে না পেয়ে ঘর তল্লাশীর অছিলায় তছনছ করা হয়েছিল।
 এইরূপ
পরিস্থিতির মধ্যে তিনি গান রচনা করেছেন, নাম গোপন করে দুরাঞ্চলে গিয়ে কবিগান গেয়েছেন। তিনি
বাংলাদেশে একজন সম্মানিত গণশিল্পী।

‘দূরদর্শন’-এ নিয়মিত অনুষ্ঠান করতেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের
সমর্থনে
 রমেশ শীলের  সঙ্গে  কবিয়াল রাইগোপাল দাশ শহর,  গ্রাম-গঞ্জে  মুসলিম লীগ   পাকিস্তানের
দুঃশাসনের বিরুদ্ধে নির্ভীক কণ্ঠে গান গেয়েছেন। কবি ১৯৮৭ সালের ১১ই নভেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে
পরলোক গমন করেন।
*
কবির পরিবার পরিচিতি -                                                              পাতার উপরে . . .   
কবিয়াল রাইগোপাল দাশ মৃত্যুকালে তিনপুত্র ও চার কন্যা রেখে গেছেন।
 তাঁরা বর্তমানে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে
প্রতিষ্ঠিত। বড় ছেলে অরূপ দাশ
 (পেইন্টার), মেজ ছেলে এডভোকেট তপন কান্তি দাশ, (বাংলাদেশ সুপ্রিম
কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগ, ঢাকা), ছোট ছেলে সুমন কুমার দাশ, (প্রধান শিক্ষক, কানুনগোপাড়া অখিল সঃ প্রাঃ
বিদ্যালয়, বোয়ালখালী), বড় মেয়ে প্রীতি দাশ (অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা, কুতুবদিয়া সরকারী বালিকা উচ্চ
বিদ্যালয়), মেজ মেয়ে দীপ্তি দাশ (সহকারী শিক্ষিকা, শামসুদ্দীন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কাপ্তাই), সেজ মেয়ে
শুভ্রা দাশ, (সহকারী শিক্ষিকা, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল),
 ছোট মেয়ে শুক্লা দাশ, (সরকারী শিক্ষিকা, পশ্চিম
গোমদণ্ডী সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়)।
*