পতাকা উড়ছে মাথার উপর,স্বাধীন আমার দেশ। গণতন্ত্রের বুলি আওড়ে এই তো চলছে বেশ। ভাত জোটেনি বলে ঐযে আওয়াজ তুলছে কারা। জোটেনি ভাত তাই বলে কি ধর্ম হবে হারা? পেট ভরে না ধর্ম নিয়ে এসব যারা বলে, গণতন্ত্রে ঠিকানা তাদের ঐ গরাদের তলে। পায়নি আলো, ঘরে আঁধার,বস্তি আমার বাস। শোন হতভাগা ভোট আসছে আর তো কটা মাস। বছরের পর বছর গিয়েছে চাকরি পায়নি ছেলে। গণতন্ত্রে চাকরি মেলেনা নোটটুকু না দিলে। শিক্ষা মেলেনি,স্বাস্থ্য মেলেনি,এবার ইস্যু ভোটে। গণতন্ত্রে এসব ইস্যু ফিঁকে হয়ে যায় নোটে। শাসক চেনায় রাজপ্রহরী, বিরোধী চেনায় ইস্যু। গনতন্ত্রের ভোট বাক্সে জনগণ নেহাতই শিশু। . ******************
মেয়েটা নাকি মরেছে সকালে? এখন চিতায় জ্বলছে? এমন মেয়ের মরণ ভালো পাড়াপড়শিরা বলছে। গরীব ঘরের মেয়ে বাপু কিসের এতো পড়া। বিয়ে করে অল্প বয়সে ঘর সংসার গড়া । এই শিখেছি ছোট থেকে মা দিদিমার মুখে। এসব কথা মেনে চললে মেয়ে থাকবে সুখে। মেয়ে মানেই লক্ষ্মীমন্ত, মেয়ে মানেই ঘর। মেয়ে মানে রাগ অভিমান,সবার উপর বর। পড়বে,গায়বে দেশ গড়বে এমন মেয়ে কে চাই? মেয়ে মানে এসব ভুলে শ্বশুরবাড়ি যায়। বাপ মরেছে কোন অকালে, ঘরে একলা মা। বয়স বেড়েছে মেয়ের তবু বিয়ের কথায় না। এইতো সেদিন পাত্র এল বয়স না হয় । আমাদেরও বিয়ে হয়েছে বিয়ের পরে দাসী। মেয়ে নাকি পড়েছে কলেজে, দেশ গড়বার ভাবনা। শোন ওসব ফস্টিনষ্টি আমরা কি ছাই বুঝি না। কাল বিকেলে শুনলাম কেউ অ্যাসিড ঢেলেছে মুখে। একটা মেয়েকে টানছিল কজন ও গিয়েছিল রুখে। ধুর এসব বানানো গল্প টিভির লোকেরা বলে। আসলে মেয়েটা নষ্ট ছিল তাই গিয়েছে চলে।। . ******************
সূর্য এখনো উঠেনি আকাশে, তারারা যায়নি চলে। ঘুম ভেজানো ভোর রাতে ওরা পিঠে ব্যাগ তোলে। ঘুমঘুম চোখ, স্কুল বাসে রোজ নতুন গল্প হয়। সেই ভোরেতে আরেক দল আবর্জনা বয়। একদল যায় প্রোপার ড্রেসে ভবিষ্যতের ভাবনা। অন্যদলে যা পেয়েছি তার বেশি আর চায়না। ছেঁড়া কাপড় আধপেটা ভাত একটা দলের চাওয়া। অন্যদলের রেস্তোরা আর শপিংমলে পাওয়া। একটা দল দেশ গড়বে কিনবে নতুন গাড়ি। অন্যদলটা কাজ সেরে দেদার টানে বিড়ি। একটা দলে মার্কস মেলেনি, নতুন স্যারের গল্প। অন্যদলের কাগজ কুড়িয়ে মিলেছে টাকা অল্প। দু দিকেতে দুটো ভারত সমান তালে বয়। লেখাপড়া আর উন্নতিটা সবার জন্য নয়। . ******************
তেরঙ্গাতে ঢেকেছে শরীর, অশোকচক্রে বুক। জননীর কোলে ঘুমিয়ে বুঝেছি, মরণেও কতো সুখ। অস্ত্র হাতে লড়তে শিখেছি, বয়স যখন অল্প। দেশাত্মবোধ, জীবনদেওয়া সেফিন ছিল গল্প। রাত কেটেছে গ্রেনেড নিয়ে ভোরে গুলির লড়ায়। পেপারে বেরোনো খবর দেখে দেশবাসি করে বড়ায়। মরল কজন এই খবরটা নেহাতই একপেশে। এবার নাকি যুদ্ধ লাগবে? এই গল্প দেশে। টি.আর.পি তে খবর থাকে রাজনীতিতে গেম। সীমান্তে ঝাঁঝরা গুলির লড়ায়ে আমার দেশপ্রেম। যুদ্ধ জিতলে ভোট বাড়বে, পাঁচ বছরের ভাবনা। যুদ্ধ শেষে আমার গল্প তিন্দিন বই আর না। তোমার প্রেমে ভোট আছে, জাতিদাঙ্গার ভাবনা। আমার প্রেমের কফিন স্বাক্ষী তার বেশি আর চাইনা। . ******************
আমি ফুলমনি এই শহরের একটা গলিতে থাকি। বলুন না বাবু ধর্ম না পেট কোনটাকে আগে রাখি? বাপ ছেড়েছে মাকে আমার বয়স তখন ছয়। সেদিন বুঝেছি এসংসারে পুরুষ নামের ভয়। বই ছেড়েছি সেই থেকেই, একটু খাবার ভাবনা। বাদ গিয়েছে খেলনাপাতি ভুলেও ওসব আর না। কাজ নিয়েছি লোকের বাড়ি, পেট ভরানোর দায়। চেনা পথঘাট ইস্কুল মাঠ ভুলতে শিখেছি হায়। বয়স বেড়েছে একটু যখন সবে মাত্র নয়। নষ্ট করেছে সেদিন কাকু দেখিয়ে আমায় ভয়। স্বভাব নষ্ট অভাবের দায়ে সে কথা তখনো ভাবিনি। অল্প বয়সে লড়তে শিখেছি হার মানতে পারিনি। স্বপ্নভেজা দুচোখে আমার নতুন ভাবনা নিয়ে, প্রেম এসেছিল ভরা যৌবনে জীবনের গান গেয়ে। অভাবের ঘরে একলা মেয়ে প্রেম করছে জেনে। বুঝেও না বোঝা মা আমার সব নিয়েছিল মেনে। ভুলেও ভাবিনি এ সংসারে প্রেমের সওদা হয়। বিক্রি করেছে প্রেমিক আমায় বিয়েই সেটা নয়। সেদিন থেকে রঙ মেখে রোজ এই গলিতেই থাকি। এই গলিতেই জীবন আমার কষ্টটাকে ঢাকি। শরীর বেচে পেট চালানো এটাই ধর্ম জানি। বলুননা বাবু ধর্ম না পেট, কোনটাকে আগে মানি? . ******************