কবি শম্পা মাহাতোর কবিতা
*
আমার পৃথিবী
কবি শম্পা মাহাতো
রচনা ০৫.০৭.২০১৬


মৃত্যু যখন জীবনের চেয়ে বেশীই অর্থবহ
তখন বুঝি ভালো থাকা গুলো বেসামাল,দুঃসহ।
মতের অমিলে মেরে ফেলবার ছিল বুঝি অধিকার
পৃথিবীটা যেন নরক হবার নিয়েছে অঙ্গীকার।

রোদ্দুর নেই, বৃষ্টিও নেই, তবুও গুমরে আকাশ
এতগুলো প্রান অকালে ঝরেছে রোদনে ভরেছে বাতাস।
কি দেবে আজ শ্বান্ত্বনা সব মৃতের পরিবারে,  
অথবা যাদের রক্ত মিশেছে দুনিয়ার দরবারে।

কার দোষ ছিল? কারা বঞ্চিত?কারা ছিল অনাবাসী?
কারা মুসলিম? কারা জৈন অথবা ঈশ্বরে বিশ্বাসী।
গোলা বারুদ আর বোম বুঝি শুধু ভীষণ শাস্ত্রীয়!
একা আমি ছাড়া আর সকলেই আমার অনাত্মীয়।

তবু যুগে যুগে ইতিহাস ফেরে মানুষের হাত ধরে
আমার পৃথিবীর উন্মেষ হয় নবজাগরিত ভোরে।
অনেক তো হল, আর চাইনা মৃত্যু মৃত্যু খেলা
পৃথিবীতুতো আত্মীয় সব ভাসাও জীবন ভেলা।

.                 ******************               


.                                                                           
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
উড়ান
কবি শম্পা মাহাতো

এই পারেতে দাড়িয়ে ছিলাম আমি
ওই পারেতে মুক্তির হাতছানি
মধ্যখানে জং ধরা এক সাঁকো
ভিতরে কে বলল!  আসমানি।

স্বপ্নে দেখা মুঠোর ভিতর আকাশ
পায়ের নীচে বিশাল জলরাশি
পাশ ফিরলেই গোলাপ ফুলের বাগান
মন জানে সে ভীষণ সর্বনাশি।

তবুও আজ আগুন জ্বলুক চোখে
উড়ান দেব ওপার তোকে পাওয়ার।
হাওয়াও যদি কমায় গতি শেষে
প্রাণবায়ু টাই শক্তি দেবে জেতার।

হারিও যদি নিজের পরিচয়
সে হার আমার জেতার থেকেও বেশী
ফিরিয়ে দিলাম জং ধরা ওই সাঁকো
বেচব না মন অথবা মাংসপেশী।

.                 ******************               


.                                                                           
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
পুরাতন
কবি শম্পা মাহাতো
রচনা ০২.০৬.২০১৫

প্রেম তো আমরা দুজনেই করতাম
ঠিক যেরকম গোধূলীর সাথে সোনারোদ
পুকুরের সাথে কচুরীপানা ।

আজও সেই গাছগুলো অবিকল একইরকম
কেমন যেন মায়া হয় ওদের জন্য,
এতটুকুও আধুনিক হতে পারেনি।

এখনও ওদের সব নালিশ
জমা হয় মেঘেদের গায়ে,
কালশিটে আকাশ চুয়ে নেমে আসে
দাপুটে কালবৈশাখী,জৈষ্ঠের মধ্যরাতে।
কি তুমুল ব্যঞ্জনা তুমি আজও খুঁজে যাও আমার চোখে,
অথচ আমি এখন বৃষ্টি ভালোবাসি।

স্বর্ণমৃগ চাইছি না
একদিন আমার মৃতবত শরীরের পাশে বসে
বাঁশি বাজিয়ে শোনাবে!

ঢেউহীন জলজ স্পর্শ
যে জল আমাকে আমি বলেই চেনে
তার কাছে বন্দক রাখব প্রেম।

.                 ******************               


.                                                                           
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
নদী
কবি শম্পা মাহাতো
রচনা ১১.০৬.২০১৬


নদীর বুকে নৌকা বওয়ায় মাঝি।
মাঝির মুখে আস্কারা পায় গান।
নদীর গল্প পাখীর ঠোঁটে খুঁজি,

নীরব সে যে। শুষ্ক হয়ে জানায় অভিমান।

জলকেলিতে ব্যাস্ত যখন বক
হঠাৎ খুঁজে পায় কোন এক মাছ!
জল বুঝি চায় সবাই ফিরে যাক।

তার চরে তাও ঠায় দাঁড়িয়ে বন্ধুবেশি গাছ।

কোনো ভাষাই নেই কি নদীর প্রাণে!
দামাল ছেলে, সাঁতরে তোলে ঢেউ।
বৃষ্টি নামে নদীর আহ্বানে

ব্যাকুল নদীর গহীন মনের আঁচ পায়না কেউ।

তবুও কেমন নিশুত রাতের শেষে
বুক চিরে তার বেরোয় তপ্ত রবি।
পাগলপারা আবার ওঠে হেসে।

পার ঘেঁষে তার ফুটিয়ে তোলে নিখুঁত কোনো ছবি।

.                 ******************               


.                                                                           
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
ওপার থেকে দেখছি যে রাত ২
কবি শম্পা মাহাতো
রচনা ২৮.০৫.২০১৬


এমন সময় রাত্রি হল খুব বেয়ারা,
এমন সময় সজল হল চোখের তারা।
উদাসী হাওয়ার স্পর্শে হল বিষণ্ণ মন
আরেক ক্রোশ সরল দূরে যে ছিল আপন।

তাঁর তো কোন দায় ছিল না সঙ্গে থাকার,
সোহাগ করে আমার এ পথ আগলে রাখার,
তাঁর তো নিজের সবাই ছিল পরই আমি
ভুল বলে যে বলে স্নেহ নিন্মগামী।

আমার শুধু দোষই ছিল গুন ছিলনা,
সে তবু উদার এই কথাটাও সবার জানা।
আমি কেবল এসব খেলায় পিছিয়ে থাকি,
অন্ধকারে উড়তে থাকে জোনাক পাখী।

বুঝতে পারি খুব বেয়ারা আমার স্বভাব
আপন ভুলেই ফেরত পাওয়া কঠিন জবাব
আমার বোধহয় আঘাত পেতে ভালোই লাগে
আনমনা আজ তাকিয়ে থাকি। রাত ঢলে যায়  অস্তরাগে।

.                 ******************               


.                                                                           
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
ওপার থেকে দেখছি যে রাত ৩
কবি শম্পা মাহাতো
রচনা ৩১.০৫.২০১৬


তোকে আমি এইটুকুও ভুল বুঝিনি,
ভালোই শুধু বেসে গেছি। কোথাও কোন দোষ খুঁজিনি।
তবুও আজ বালিশ তুলো রাত বিরেতে কি যেন কয়!
আসলে আমি যতটা  তোর। ততটা ঠিক নিজেরও নয়।  

রাতদুপুরের বৃষ্টি জাগায় শারীরি শীত।
মনকে বোঝাই। বাঁচতে হলে বাঁচার মত বাঁচাই উচিৎ।
আমি তো রোজ অষ্টপ্রহর, নিজের সাথে নিজেই আছি।   
পাশার ঘুঁটি বানিয়ে চলি। হাড়ের জোগান দেয় দধীচি।

অল্প একটু সাজিয়ে নিলে সত্যি কথাও রূপকথা হয়।
যেসব কথা হয়নি বলা আধোঘুমে স্বপ্ন দেখায়।
এক  হাতে তোর গল্পের বই। আরেক হাতে এক মুঠোফোন।
সহজ সরল রাস্তা আমার। রাত ফুরোলেই ডেঞ্জার জোন।

রাত বাতিটা নিভিয়ে দিস,জলের গ্লাস টা মাথার পাশে।
আকাশ কুসুম চিন্তা আমার তৃষ্ণা পেতে ভালোই বাসে।
আহ্লাদী মন।  ছমছমে রাত মায়ের হাতটা আমার মাথায়।
রাত কেটে যায় অন্ধকার আর চাঁদের আলোর জোয়ার ভাটায়।

.                       ******************               


.                                                                           
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
কবিতা নয়
কবি শম্পা মাহাতো
রচনা ১৭.০৬.২০১৬


গতি নেই।যেটা আছে সেটা গতিজাড্য।
তুমি ভেবে যার কাছে দৌড়ে গেছি, দেখলাম সে অন্যকেউ।

অভিশপ্ত নিউরোন, আঙ্গুলে জড়িয়ে রেখো আঙ্গুল।
এই বিশাল পৃথিবীতে, কঞ্জুস রেশনের মত কতিপয় মানুষ বরাদ্দ। আমার জন্য।
যে অপারগতা নিয়ে বন্যা কে ভালবাসিনি
অথচ বৃষ্টি চেয়েছি রোজ, তাকে স্পর্শের অধিকার দিও।
বিনিময় যদি চাও। ইটের গাঁথুনি দিও দরজায়।
আমি নিশিদিন খোলা রাখব মনের সবকটা জানলা।
সূর্য্যদয় থেকে সূর্য্যের গলে পড়া অব্ধি ভালোবেসে রামধনু এঁকে দিও
আমার মেঘলা মনে আর এই গুটিকয়েক মানুষ আমায় ভালবেসো খুব।  

.                       ******************               


.                                                                           
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
সত্যি যদি সঙ্গে থাকো
কবি শম্পা মাহাতো
রচনা ০১.০৭.২০১৬

সত্যি যদি সঙ্গে থাকো। ভিজব না।
যতই এ মন বৃষ্টি হলেই ভিজতে চাক।

এই তো সেদিন বৃষ্টি ভেজা দৃষ্টিকোণ
তোমার সুরে সুর মিলিয়ে রাস্তাপার,
ভিজব বলে যেই না জোড়ে ছুটল মন
হাত ধরে এক ভীষণ বকা, খবরদার।

তোমার কথা শুনব না! সে সাধ্য কই
বৃষ্টি দেখি গাছের পাতায়, টাপুর টুপ,
বাধ্য হয়েই কেমন যেন নীরব রই
বিকেল ভাঙ্গা সন্ধ্যা দেখায় নতুন রূপ।

একটা তারে ভিজছে বসে একলা কাক
রাস্তাগুলো জলের নীচে যায় ডুবে,
ওড়না তোমার আমার আঙ্গুল জড়িয়ে থাক
দুরত্বের সব আশঙ্কারা যাক নিভে।

.                ******************               


.                                                                           
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
শ্রাবণের ধারা
কবি শম্পা মাহাতো
রচনা ১৬.০৮.২০১৬

বাতাসে ঘনীভুত আবার আবেগ
হাতের তালুতে খুঁজে চলি শুধু কোন রেখাটায় তুই।

এমনিতেই শ্যামলা বরন শ্রাবণ মাসের মেঘ
অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামে দৃষ্টি দিয়ে ছুঁই।
সাদা কাগজের নৌকা ভাসে
প্লাবনের ভাঁজে জলকেলি করে দুটি হাঁস দ্বিধাহীন,
যদিবা কূল নিশ্চিত হয় দূরের পরবাসে
চঞ্চল প্রাণ বানভাসি হয়ে, হয়ে পড়ে বড় ক্ষীণ।
আকাশের গায়ে তড়িৎ খেলে
বৃষ্টির জলে ডুবে যায় দেখি পারাপার, নদী, সাঁকো
এসকল দিনে গাছও ভেসে চলে
বাঁধভাঙ্গা জল মানে না বাঁধা যত তারে পিছু ডাকো।
একদিন তবু জল নেমে যায়
পথে প্রান্তরে,মাঠ ঘাট জুড়ে ফুটে ওঠে শুধু ক্ষত।

শ্রাবণ নেয়না এসকল দায়
রেখাটা বলছে তুইও নাকি আমারই মত আহত!

.                ******************               


.                                                                           
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর