কবি তরঙ্গিণী দাসীর কবিতা
*
প্রিয় সখা
কবি তরঙ্গিণী দাসী
কবির “নিষ্ফল তরু” (১৮৭৭) কাব্য ও প্রবন্ধ গ্রন্থের কবিতা।


সখা হে সে দিন তব পড়ে কিহে মনে।
এক প্রাণে এক মনে
এক অঙ্গ সম্মিলনে
গলায় গলায় ধরি আহ্লাদে দুজনে
ভ্রমিতাম কত সুখে নগরে বিজনে॥


উঠিতেন ধীরে ধীরে শান্ত দিনমণি
উজলি উদয়-গিরি
সোণার বরণ ধরি,
বিচিত্র গগন-ভালে! মন-বিমোহিনী
হাসিত অতল জলে ফুল্ল কমলিনী॥


হেরিয়া সে শোভা মম হরষিত মন।
নিশা অবসান দেখি
শাখী ছেড়ে যত পাখী
উড়িত আমোদে মাতি বিহঙ্গমহণ।
ছড়াত গগন ভরি মধুর কূজন॥


উঠিতাম মনোরঙ্গে দেখিতাম হায়
নিশার নীহার-হারে
শতদলে শোভা করে
যেন শতেশ্বরী হার পরেছে গলায়,
আহ্লাদে অবশ তনু আমোদে মাতায়॥


প্রকৃতির নব শোভা নয়ন-রঞ্জিনী।

.        *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
বিধবার স্বপ্ন
কবি তরঙ্গিণী দাসী
কবির “নিষ্ফল তরু” (১৮৭৭) কাব্য ও প্রবন্ধ গ্রন্থের কবিতা।


স্বজনী রে যাতনা পেতেছি অন্তরে রে।
কি আর তোমারে কব,     হয়ে আছি যেন শব,
মরম আঘাতে মম পরাণ ফাটিতেছে রে।
কেন নিদ্রা দেখাইল,        কেন পুনঃ হ’রে নিল,
প্রবল অনল কেন হৃদয় জ্বালিল রে।
নিদ্রায় নিশীথ কালে,          ছিনু সই কুতূহলে,
দেখিলাম প্রাণ সখি অপূর্ব্ব স্বপন রে।
প্রাণেশ্বর মম পাশে,   আসিতেছে হেসে হেসে,
ধরিয়ে চরণ দুটি যতনে কহিল রে।
প্রিয়তমে প্রাণপ্রিয়ে,       একবার দেখ চেয়ে,
অধীন তোমার লাগি বিষাদ অন্তরে রে।

বেড়াইছে বনে বনে,     প্রিয়ে তব অন্বেষণে,

.        *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
প্রিয়তমার প্রতি
কবি তরঙ্গিণী দাসী
কবির “নিষ্ফল তরু” (১৮৭৭) কাব্য ও প্রবন্ধ গ্রন্থের কবিতা।



মরি নাই বিধুমুখী আছি ম্রিয়মাণ।
আইনু আশার সাথে
জ্বালাইতে জ্বালা নিতে
ক্ষমা কর জ্বালাওনা জ্বলিতেছে প্রাণ
তাই বুঝি বলে সবে উলঙ্গ কৃপাণ॥


ভেবেছিনু চিরদিন সুখের মিলনে।
কাটাইব হেসে হেসে
থাকিব প্রিয়ার পাশে
নব নব সুখ আসি তুষিবে দুজনে
বিচ্ছেদ ভিষণ শব্দ শুনিব না কানে॥


আশা ছিল সযতনে সদত তোমারে
তুষিব হৃদয় রাখি
সদত জুড়াবে আঁখি
সদত ভাসিব সুখ-প্রেম-সিন্ধুনীরে।
সাজা’ব প্রণয় ছবি নূতন বাহারে॥


আছে কি সই মনে হায় সে সুখ-রজনী,
চাঁদের শীতল কর
মলয় মর মর
পিকের সপ্তমোপরি সুমধুর ধ্বনি।
সুখ বিভাবরী! মনে আছে কি মানিনি॥


গেছ ভুলে আমাকেও বুঝেছি ললনা।

.        *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
প্রিয়তমের প্রতি
কবি তরঙ্গিণী দাসী
কবির “নিষ্ফল তরু” (১৮৭৭) কাব্য ও প্রবন্ধ গ্রন্থের কবিতা।



কেমনে ভুলিব সেকি ভুলিবার ধন।
যদি ভুলিবার হ’ত
তা হলে ভুলিয়ে যেত
মধু মাখা চাঁদ আঁকা সূচাক বদন।


জ্বলিতেই আসিয়াছি মেদিনী মাঝারে।
জ্বলিয়ে হইনু সারা,
আঁখি হ’ল তারাহারা
তোমাকেও জ্বালাইনু বিবিধ প্রকারে।
জ্বলিব যাবৎ রব মেদিনী মাঝারে॥


জানি নাই কি অমূল্য প্রণয় রতন।
কৌমার-সুলভ সুখে
আছিনু মনে সুখে
জানি নাই ভালবাসা প্রণয় কি ধন।
ভাবি নাই এক দিনো হইবে এমন॥


হৃদয়েতে সমুদ্ভবা প্রেম তরঙ্গিণী।
কেন্দ্রে কেন্দ্রে করি ধরি
ছুটিয়াছে কল্লোলিনী
অনন্ত সাগরে মিলে মানস-রঞ্জিনী।
সেই সুখদিন আজি কোথালো সঙ্গিনী॥


হেরিলে তোমার অই সুচারু আনন।

.        *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
*
মান্দ্রাজ-দুর্ভিক্ষ
কবি তরঙ্গিণী দাসী
কবির “নিষ্ফল তরু” (১৮৭৭) কাব্য ও প্রবন্ধ গ্রন্থের কবিতা। ১৯৭৭ সালে মাদ্রাজে প্রচণ্ড দুর্ভিক্ষ হয়, যাকে
“দ্য গ্রেট ম্যাড্রাস ফেমিন অফ ১৮৭৭” নামে অভিহিত করা হয়। দক্ষিণ ভারতের এই দুর্ভিক্ষে, অনাহারে
প্রায় ৫৫লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। জাতীয় কংগ্রেসের গঠনের ৮ বছর পূর্বে বাংলার এক সামান্য নারী
ইংল্যাণ্ডের রাণীর কাছে করছেন প্রতিবাদ, তাঁর এই কবিতার মধ্য দিয়ে!



ভারতে আবার কেন হাহাকার ধ্বনি।
ভীষণ নিনাদ করি
বাজিল অকাল ভেরি
অনশনে মরিতেছে লক্ষ লক্ষ প্রাণী।
কে আর শুনিবে সেই দুঃখের কাঁদুনি॥


মান্দ্রাজ-দুর্ভিক্ষ শুনে প্রাণ ফেটে যায়।
উলঙ্গ কৃপাণ করে
যতনে ধারণ ক’রে
দুর্ভিক্ষ ভীষণ বেষে হায়! হায়! হায়!
প্রথমে পশিল আসি দরিদ্র-চালায়॥


অনাথ হইল ছায় যত গৃহিজন।
দিন রাত খেটে খেটে
নাহি মুষ্টি অন্ন পেটে
নিরাহারে প’ড়ে আছে শবের মতন।
কে দেবে যতনে মুখে সলিল ওদন?


কি হ’ল! কি হ’ল! হায় কি হ’ল! কি হ’ল!
দুর্ভিক্ষ-রাক্ষসী আসি
শত শত প্রাণী নাশি
চৌদিক জ্বালিয়া হায় জ্বালিল অনল।
জ্বলিল সোণার বঙ্গে ঘোর চিতানল।


প’ড়ে আছে শিশু-পুত্র শবের মতন।
জনক কাঁদিছে পাছে
দয়িতা তাহার কাছে
হাহাকারে করিতেছে ধরায় লুণ্ঠন।
জ্বলিছে জঠরানল সংশয়-জীবন।


কে দিবে আহার তারে করিয়ে যতন।

.        *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর       
কাঁদিল ভারত-মাতা, কাঁদিল পাষাণ।

১০
কোথা গো ভারতেশ্বরি ইংলণ্ডবাসিনি!
চেয়ে দেখ একবার
মান্দ্রাজের ছাপখার
জঠর-অনলে পুড়ে দিবস যামিনী
ছটফটি করে সবে হাহাকার ধ্বনি।

১১
এখন নিশ্চিন্ত থাকা তব অনুচ্ত।
কর কর দয়া দান
রাখ তনয়ের প্রাণ
ঘুচাও দারিদ্র্য-জ্বালা কর গো বিহিত।
নচেৎ মান্দ্রাজবাসী মরিবে নিশ্চিত॥

১২
ধনবান ছিল যারা দরিদ্র এখন।
দরিদ্র আছিল যারা
পথে পথে ফেরে তারা
হা অন্ন হা অন্ন করি করিছে রোদন।
*
ভারতাঙ্গনা
কবি তরঙ্গিণী দাসী
কবির “নিষ্ফল তরু” (১৮৭৭) কাব্য ও প্রবন্ধ গ্রন্থের কবিতা।


নৈদাঘ নীলিমাকাশে নক্ষত্র নিকর,
হীরক খণ্ডের প্রায়
চারিদিকে শোভা পায়
শোভিছে রতন-ভাতিশশী মনোহর।
পূর্ব্ব দিকে পরকাশি
ছড়াইছে সুধারাশি
উথলিল চকোরের প্রেমের সাগর
মৃদুল দক্ষিণানিল বহে ঝর্ ঝর্॥

কল্লোলিনী কলস্বরে করে কুল কুল।
দুই কূল কাঁপাইয়া
যাইতেছে প্রবাহিয়া
অনন্ত সাগরে ধায়, আনন্দ অতুল।
গৃহ-চূড়া তরু-শাখা
সুধাংশু কিরণ মাখা
নিস্তব্ধা রজনী এবে নিদ্রায় আকুল॥
কলরব নাহি করে পশুপক্ষকুল॥

হাসিতেছে প্রকৃতি দেবী বিশ্ব বিমোহিয়া।
এ হেন সুখের কালে
কেবা হাত দিয়ে গালে
নীরবে কাঁদিছে বসি থাকিয়া থাকিয়া॥
রক্তিমা বরণ মুখ
নাহি মনে কিছু সুখ
অশ্রু-জলে বক্ষঃস্থল যাইছে ভাসিয়া।
দুঃখের সাগর বহে হৃদয় ভাঙ্গিয়া॥

উজ্জ্বল সুধাকর পড়েছে শরীরে।
অনিমেষে বার বার
হেরিনু সে ললনার
বিরাজিছে পূর্ণশশী বদন গম্ভীরে।
হস্ত পাদ আদি তার
কি কহিব শোভাধার
শূন্য ছাড়ি দ্বিজরাজ শোভিছে শরীরে।
এ হেন ললনা কেন বিজন প্রান্তরে॥

কেন বা বিজন বনে কাঁদিছে কামিনী।
দেখিতে দেখিতে তার
চিন্তা-মেঘে পুনর্ব্বার
গ্রাসিল রে মুখশশী শিহরে রমণী।
দুই গণ্ডস্থল দিয়া
অশ্রুনীর প্রবাহিয়া
পড়িছে ধরনী’ পরে
বসুমতী স্নান করে
হায় রে বামার দুঃখে কাঁদিছে ধরণী।
কেন রে বিজন বনে কাঁদিছে কামিনী॥

নবীনা ষোড়শী বালা দুঃখেতে মগন।
উন্মীলি নয়ন-তারা
হেরিল শোভন তারা
আবার দুঃখেতে গেঁট করিল বদন।
কভু থাকে মৌন ভরে
কখন রোদন করে
বহুবিধ বিলাপিয়া
বদনে বসন দিয়া
হায় পাগলিনী প্রায় করিছে রোদন।
বিদারিল গিরি-শৃঙ্গ ব্যাপিল কানন॥

প্রকাশি মনের কথা কহিল সুন্দরী।
“করিয়াছিলাম মনে
যাইয়ে বিজন বনে
জুড়াব তাপিত হিয়া বনশোভা হেরি।
শৈলবালা কত শত
প্রবাহিছে অবিরত
গৈরিক বালুকা গুণে সুনির্ম্মল বারি।
ঝরে যেন মন্দাকিনী ঝর ঝর ঝরি।

মনে ছিল এ সকল করি দরশন।
হৃদয়ের জ্বালা যত
সকলি হইবে হত
তা না হ’য়ে মন মম দহে অনুক্ষণ।
নিশ্চয় জেনেছি মনে
মম সম ত্রিভুবনে
অভাগা বিধাতা আর করে নি সৃজন।
সুখ মুখে শোকরাশি করিল গঠন॥

হায় রে আমার মত কে আছে দুখিনী।
কেবা এই ধরাতলে
মোর মত দুঃখে জ্বলে
কাঁদিয়ে পোহায় কেবা দিবস যামিনী।
নয়নেতে অবিরত
বারিধারা বহে কত
অস্রুনীর নদী হ’য়ে
যাইতেছে প্রবাহিয়ে
বিধাতা করেছে মোরে ভারত কামিনী।
কে আছে আমার মত জনম-দুঃখিনী॥

বঙ্গনারী সমতুলা দুর্ভাগা এমন
নাহিক কোথাও আর
খুঁজে দেখ ত্রিসংসার
নাহিক মিলিবে আর এদের মতন।
যদি দয়া ইচ্ছা মনে
কর বঙ্গনারীগণে
কর দয়া হবে লাভ ধর্ম্ম রত্ন ধন।
বঙ্গবালা পানে চাহ সদাশয়গণ॥

রে বিধাতঃ, কেন তবে এত বিড়ম্বন!”
কহিতে কহিতে কথা
মরমে পাইয়ে ব্যথা
উচ্চৈঃস্বরে বিধুমুখী করিল রোদন।
সুখ-সূর্য্য অস্তাচলে
জনমে গিয়াছে চ’লে
পূর্ণিমা রজনী মোর
মনে হয় অন্ধ ঘোর
দুঃখ পারাবারে আমি হয়েছি মগন।
জনমের মত হায় রহিল রোদন॥

গেল চলি বিধুমুখী কাঁদিয়া কাঁদিয়া
উন্মাদিনী প্রায় বেশ
এলায়ে পড়েছে কেশ
যেন স্থিরা সৌদামিনী রয়েছে পড়িয়া।
বিধি কি উচিত তোর
দিতে এ যাতনা ঘোর
বঙ্গেতে পাঠালি কেন রমণী সৃজিয়া।
আবার দিইলি কেন অতলে ফেলিয়া॥

.        *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর
*
পাখী
কবি তরঙ্গিণী দাসী
কবির “নিষ্ফল তরু” (১৮৭৭) কাব্য ও প্রবন্ধ গ্রন্থের কবিতা।



কে তুমি রে বিহঙ্গম ডাকিছ বসিয়া।
মধুর ললিত স্বরে
আহা কত সুধাক্ষরে
ডাকিতেছ ওরে পাখি কোথায় থাকিয়া।
বলনা আমারে তুমি যথার্থ করিয়া॥


বড় ভালবাসি আমি পাখিরে তোমায়।
ডাক রে বিহঙ্গ ডাক
পরাণ শুনে জুড়াক
এমন মধুর আর নাই রে ধরায়।
ও সঙ্গীত হৃদে মম অমৃত বর্ষায়॥


বল দেখি কোন দেখে তব বাসঘর।
কোথায় সে অভিরাম
রমণীয় সুখধাম
দেখিতে কৌতুকী মম হতেছে অন্তর।
খুলে বল কোথা সেই দেশ মনোহর॥


ওরে পাখি সত্য কথা বল রে আমায়
সে দেশের বাসী যত
সবে কি তোমার মত
সদত আনন্দ-চিতেত প্রফুল্লিত-কায়?
ওরে পাখি সত্য কথা বল্ রে আমায়॥


তোমার মধুর রব করিয়ে শ্রবণ।
পূর্ব্ব স্মৃতি কথা যত
এবং মনে হয় কত
অশ্রুজল ক্ষণে ক্ষণে হতেছে পতন।
সহসা সঙ্গীতে কেন ঝরিল নয়ন?


জানি না সঙ্গীতে তোর আছে সুধু কত
যতই শুনিতে পাই
আবার শুনিতে চাই
জেগে ওঠে হৃদয়েতে পূর্ব্ব সুখ যত।
ভাসায় নয়ন-জলে হৃদয় নিয়ত॥


আর যে কিছুই ভাল লাগে না এখন।
সদা ইচ্ছা করি মনে
পাখিরে তোমার সনে
সদত গগন-পথে করিব ভ্রমণ।
শুনিব ললিত কণ্ঠে অমৃত নিস্বন॥

.        *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর
*
উদিল বসন্ত ঋতু বসুন্ধরা মাঝারে
কবি তরঙ্গিণী দাসী
কবির “নিষ্ফল তরু” (১৮৭৭) কাব্য ও প্রবন্ধ গ্রন্থের কবিতা।


উদিল বসন্ত ঋতু বসুন্ধরা মাঝারে।
বিহঙ্গ নিনাদছলে, জয় জগদীশ ব’লে,
গায় মনঃকুতূহলে কিবা মধুর স্বরে।
উন্নত পাদপ-শিরে, মলয়-অনিল ধীরে
বহিল, মঞ্জরী তাহে মৃদু মৃদু দুলিল।
নবীন মুকুলরাশি, ধরে শোভা রাশি রাশি,
সৌরভে আকুল হ’য়ে মধুকর উড়িল।
গুন্ গুন্ মৃদু স্বরে, ঈশ-গুণ গান করে,
আনন্দে বিভোর তনু বিভু-প্রেম মাতিল।
বসিয়ে রসাল-ডালে, পিকবর কুতূহলে,
আনন্দে মধুর স্বরে কুহুরব করিল।
ফুটিল কুসুমচয়, নবীন সৌন্দর্য্যময়,
প্রকৃতি কুসুম-দামে অপরূপ সাজিল।
ফুলভরে তরুগণ, নতশির অনুক্ষণ,
প্রেম-মকরন্দ-বারি অবিরল ঝরিল।
ধন্য হে বসন্ত তুমি, তোমারে জগতস্বামী,
স্বহস্তে গঠন ক’রে ধরণীতে পাঠা’ল।
দেখ, হে বসন্তরাজ, সাধিতে পিতার কাজ,
আনন্দে উন্মত্ত স্বরে কভু যেন না ভু’ল।
হিতশিক্ষা অনুক্ষণে, শিখাও মানবগণে,
বিফলে দিবস যেন নাহি যায় চলিয়ে।
কুটিল মানব-মন, জানে না ঈশ কি ধন,
অলীক আনন্দাবেশে দেয় প্রাণ ঢালিয়ে।
তোমার প্রেরক যিনি, কোথায় থাকেন তিনি,
ব’লে দাও ঋতুরাজ যাই সেথা চলিয়ে।
দীননাথ কৃপাসিন্ধু, দাও কৃপা বারিসিন্ধু,
কাতরে কাঁদিয়ে ক’ব চরণেতে পড়িয়ে।
সন্তান-রোদন শুনে, পিতা সুকোমল প্রাণে,
লবেন জনক মোরে সুকোমল কোলেতে।
ব’লে দাও ঋতুরাজ, কোথা সে রাজাধিরাজ?
নাহি কি সে পুণ্যধাম কলুষিত জগতে?

.        *************************      

.                                                                             
সূচীতে . . .      



মিলনসাগর