কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজের বৈষ্ণব পদাবলী
*
শুনিয়া রাধিকা বাণী ব্রজপ্রেম মনে আনি
ভণিতা নেই
কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজ
কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত চৈতন্যচরিতামৃতের গীত। মধ্যলীলা, ১৩শ পরিচ্ছেদ, পৃ-২৯৭।

পুনর্যথারাগেণ।

শুনিয়া রাধিকা বাণী                                ব্রজপ্রেম মনে আনি
ভাবে ব্যাকুলিত দেহ মন।
ব্রজলোকে প্রেম শুনি                               আপনাকে ঋণী মানি
করেন কৃষ্ণ তাঁরে আশ্বাসন॥
প্রাণপ্রিয়ে! শুন মোর এ সত্য বচন।
তোমা সবার স্মরণে                              ঝুরোঁ মুঞি রাত্রি দিনে
মোর দুঃখ জানে কোন জন॥ ধ্রু॥
ব্রজবাসী যত জন                                     মাতা পিতা সখাগণ
সবে হয় মোর প্রাণ সম।
তার মধ্যে গোপীগণ                                  সাক্ষাৎ মোপ জীবন
তুমি মোর জীবনের জীবন॥
তোমা সবার প্রেমরসে                              আমাকে করিল বশে
আমি তোমার অধীন কেবল।
তোমা সবা ছাড়াইয়া                               আমা দূর দেশে লঞা
রাখিয়াছে দুর্দ্দৈব প্রবল॥
প্রিয়া প্রিয় সঙ্গ হীনা                                  প্রিয় প্রিয়া সঙ্গ বিনা
নাহি জীয়ে এ সত্য প্রমাণ।
মোর দশা শুনে যবে                                   তার এই দশা হবে
এই ভয়ে দোঁহে রাখে প্রাণ॥
সেই সতী প্রেমবতী                                    প্রেমবান সেই পতি
বিয়োগে যে বাঞ্ছে প্রিয় হিতে।
না গণে আপন দুঃখ                                     বাঞ্ছে প্রিয়জন সুখ
সেই দুই মিলে আচরিতে॥
রাখিতে তোমার জীবন                                সেবি আমি নারায়ণ
তাঁর শক্ত্যে আসি নিতি নিতি।
তোমা সনে ক্রীড়া করি                                পুনঃ যাই যদু পুরী
তাহা তুমি মান আমা স্ফুর্ত্তি॥
মোর ভগ্যে মো বিষয়ে                             তোমার যে প্রেম হয়ে
সেই প্রেম পরম প্রবল।
লুকাইয়া আমা আনে                            ক্রীড়া করায় তোমা সনে
প্রকটেহ আনিবে সত্বর॥
যাদবের বিপক্ষ                                        দুষ্ট যত কংস পক্ষ
তাহা আমি কৈল সব ক্ষয়।
আছে দুই চারি জন                                   তাহা মারি বৃন্দাবন
আইলাম জানিহ নিশ্চয়॥
সেই শত্রুগণ হৈতে                                        ব্রজজন রাখিতে
রহি রাজ্যে উদাসীন হঞা।
যেবা স্ত্রী পুত্র ধন                                      করি রাজ্য আবরণ
যদুগণের সন্তোষ লাগিয়া॥
তোমার যে প্রেমগুণ                                  করে আমা আকর্ষণ
আনিবে আমা দিন দশ বিশে।
পুনঃ আসি বৃন্দাবনে                                    ব্রজবধু তোমা সনে
বিলাসিব রজনী দিবসে॥
এত তাঁরে কহি কৃষ্ণ                                   ব্রজে যাইতে সতৃষ্ণ
এক শ্লোক পড়ি শোনাইল।
সেই শ্লোক শুনি রাধা                                   খণ্ডিল সকল বাধা
কৃষ্ণ প্রাপ্তি প্রতীতি হইল॥

.            *************************              
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
কৃষ্ণের যতেক খেলা সর্ব্বোত্তম নরলীলা
ভণিতা নেই
কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজ
কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত চৈতন্যচরিতামৃতের গীত। মধ্যলীলা, ২১শ পরিচ্ছেদ, পৃ-৫২৫।

যথা রাগঃ।

কৃষ্ণের যতেক খেলা                                সর্ব্বোত্তম নরলীলা
নববপু তাহার স্বরূপ।
গোপবেশ বেণু কর                                নব কিশোর নটবর
নরলীলা হয় অনুরূপ॥
কৃষ্ণের মধুর রূপ শুন সনাতন।
যে কৃষ্ণের এক কণ                                ডুবায় সব ত্রিভুবন
সব প্রাণী করে আকর্ষণ॥ ধ্রু॥
যোগমায়া চিচ্ছক্তি                                বিশুদ্ধ সত্ব পরিণতি
তার শক্তি লোকে দেখাইতে।
এইরূপ রতন                                        ভক্তগণের গূঢ়ধন
প্রকট কৈল নিত্য লীলা হৈতে॥
রূপ দেখি আপনার                             কৃষ্ণের হয় চমত্কার
আস্বাদিতে মনে উঠে কাম।
স্বসৌভাগ্য যার নাম                              সৌন্দর্য্যাদি গুণগ্রাম
এই রূপে তার নিত্য ধাম॥
ভূষণের ভূষণ অঙ্গ                                তাহে ললিত ত্রিভঙ্গ
তার উপর ভ্রুধনু নর্ত্তন।
তের্ ছে নেত্রান্ত বাণ                                    তার দৃঢ় সন্ধান
বিদ্ধে রাধা গোপীগণ মন॥
ব্রহ্মাণ্ডাদি পরব্যোম                                তাঁহা যে স্বরূপগণ
তা সবার বলে হরে মন।
পতিব্রতা শিরোমণি                                যারে কহে বেদবাণী
আকর্ষয়ে সেই লক্ষ্মীগণ॥
চড়ি গোপী মনোরথে                                 মন্মথের মন মথে
নাম ধরে মদনমোহন।
যিনি পঞ্চশর দর্প                                     স্বয়ং নব কন্দর্প
রাস করে লঞা গোপীগণ॥
নিজ সম সখা সঙ্গে                                  গোপণ চারণ রঙ্গে
বৃন্দাবনে স্বচ্ছন্দ বিহার।
যায় বেণুধ্বনি শুনি                                  স্থাবর জঙ্গম প্রাণী
পুলক কম্প অশ্রু বহে ধার॥
মুক্তাহার বক পাঁতি                                ইন্দ্রধনি পিচ্ছ তথি
পীতাম্বর বিজলী সঞ্চার।
কৃষ্ণ নব জলধর                                        জগৎ শয্য উপর
বরিষয়ে লীলামৃত ধার॥
মাধুর্য্য ভগবত্তা সার                                ব্রজে কৈল পরচার
তাহা শুক ব্যাসের নন্দন।
স্থানে স্থানে ভাগবতে                                বর্ণিয়াছে নানামতে
তাহা শুনি নাচে ভক্তগণ॥
কহিতে কৃষ্ণের রসে                             শ্লোক পড়ে প্রেমাবেশে
প্রেমে সনাতন হাতে ধরি।
গোপী ভাগ্য কৃষ্ণগুণ                                   যে করিল বর্ণন
ভাবাবেশে মথুরানাগরী॥

.            *************************              
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
কামগায়ত্রী মন্ত্ররূপ হয় কৃষ্ণের স্বরূপ
ভণিতা নেই
কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজ
কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত চৈতন্যচরিতামৃতের গীত। মধ্যলীলা, ২১শ পরিচ্ছেদ, পৃ-৫৩০।

যথা রাগঃ।

কামগায়ত্রী মন্ত্ররূপ                                হয় কৃষ্ণের স্বরূপ
সার্দ্ধ চব্বিশ অক্ষর তার হয়।
সে অক্ষর চন্দ্র চয়                                   কৃষ্ণ করি উদয়
ত্রিজগত কৈল কামময়॥
সখি হে! কৃষ্ণ মুখ দ্বিজরাজ।
কৃষ্ণ বপু সিংহাসনে                                বসি রাজ্য শাসনে
করে সঙ্গে চন্দ্রের সমাজ॥ ধ্রু॥
দুই গণ্ড সুচিক্কণ                                      জিনি মণি দর্পণ
সেই দুই পূর্ণচন্দ্র জানি।
ললাটে অষ্টমী ইন্দু                                তাহাতে চন্দন বিন্দু
সেও এক পূর্ণচন্দ্র মানি॥
কর নখ চাঁদের ঠাট                            বংশী উপর করে নাট
তার গীত মুরলীর তান।
পদনখ চন্দ্রগণ                                        তলে করে নর্ত্তন
নূপুরের ধ্বনি যার গান॥
নাচে মকর কুণ্ডল                                      নেত্রলীলা কমল
বিলাসী রাজা সতত নাচায়।
ভ্রুধনু, নাসাবাণ                                       ধনুর্গুণ দুই কাণ
নারী মন লক্ষ্য বিন্ধে তায়॥
এই চাঁদের বড় নাট                                পসারি চাঁদের হাট
বিনি মূলে বিলায় নিজামৃত।
কাহো স্মিত জ্যোত্স্নামৃতে                        কাহাকে অধরামৃতে
সব লোকে করে আপ্যায়িত॥
বিপুল আয়তারুণ                                       মদন মদ ঘূর্ণন
মন্ত্রী যায় এ দুই নয়ন।
লাবণ্য কেলি সদন                                    জল নেত্র রসায়ন
সুখময় গোবিন্দ বদন॥
যার পুণ্য পুঞ্জ ফলে                                সে মুখ দর্শন মিলে
দুই আঁখি কি করিবে পান।
দ্বিগুণ বাড়ে তৃষ্ণালোভ                        পীতে নারে মনঃ ক্ষোভ
দুঃখে করে বিধির নিন্দন॥
না দিলেক লক্ষ কোটি                            সবে মিলে আঁখি দুটি
তাহে দিলে নিমেষ আচ্ছাদনে।
বিধি জড় তপোধন                                     রসশূন্য তার মন
নাহি জানে যোগ্য সৃজনে॥
যে দেখিবে কৃষ্ণানন                                    তার করে দ্বিনয়ন
বিধি হঞা হেন অবিচার।
মোর যদি বোল ধরে                            কোটি আঁখি তায় করে
তবে জানি যোগ্য সৃষ্টি তার॥
কৃষ্ণাঙ্গ মাধুর্য্য সিন্ধু                                      মুখ সুমধুর ইন্দু
অতি মধুস্মিত সুকিরণ।
এ তিনে লাগিল মন                                লোভে করে আস্বাদন
শ্লোক পড়ে স্বহস্ত চালন॥

.            *************************              
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
আমি কৃষ্ণপদ দাসী তিঁহো রস সুখ রাশি
ভণিতা নেই
কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজ
কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত চৈতন্যচরিতামৃতের গীত। অন্ত্যলীলা, ২০শ পরিচ্ছেদ, পৃ-৩০৬। পদটি নীচে
দেওয়া শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর স্বরচিত শ্লোকটির ভাবার্থ হিসেবে রচিত হয়েছে।

আশ্লিষ্য বা পাদরতাং পিনষ্টু মামদক্শনাম্মর্ম্মহতাং করোতু বা।
যথা তথা বা বিদধাতু লম্পটোমত্প্রাণনাথস্তু স এব নাপরঃ॥

অনুবাদ -
তিনি আমাকে আলিঙ্গন করিয়া পাদসেবার দাসীই করুণ বা মহাদুঃখে ফেলাইয়া নিষ্পেষিতাই করুণ, অথবা
দর্শনসুখে বঞ্চিত করিয়া মর্ম্মাহতাই করুন, কিম্বা বহুবল্লভ হইয়া যেখানে সেখানে বিহারই করুন, হে সখি!
তিনি পর নহেন, আমারই প্রাণনাথ।
---জগদীশ্বর গুপ্ত, চৈতন্যচরিতামৃতের সরল টীকা ও ব্যাখ্যাকার॥

যথা রাগঃ।

আমি কৃষ্ণপদ দাসী                                    তিঁহো রস সুখ রাশি
আলিঙ্গিয়া করে আত্মসাত।
কিবা না দেন দরশন                                না জানে মোর তনুমন
তবু তিঁহো মোর প্রাণনাথ॥
সখি হে! শুন মোর মনের নিশ্চয়।
কিবা অনুরাগ করে                                  কিবা দুঃখ দিয়া মারে
মোর প্রাণেশ্বর কৃষ্ণ অন্য নয়॥
ছাড়ি অন্য নারীগণ                                        মোর বশ তনু মন
মোর সৌভাগ্য প্রকট করিয়া।
তা’সবারে দিয়া পীড়া                                আমা সনে করে ক্রীড়া
সেই নারীগণে দেখাইয়া॥
কিবা তিঁহো লম্পট                                          শঠ, ধৃষ্ট, সকপট,
অন্য নারীগণ করি সাথ।
মোরে দিতে মনঃ পীড়া                                মোর আগে করে ক্রীড়া
তবু তিঁহো মোর প্রাণনাথ॥
না গণি আপন দুঃখ                                      সবে বাঞ্ছি তাঁর সুখ
তাঁর সুখে আমার তাত্পর্য্য।
মোরে যদি দিলে দুঃখ                                      তাঁর হৈল মহাসুখ
সেই দুঃখ মোর সুখ বর্য্য॥
যে নারীকে বাঞ্ছে কৃষ্ণ                                      তার রূপে সতৃষ্ণ
তারে না পাঞা কাহে হয় দুঃখী।
মুঞি তার পায়ে পড়ি                                  লঞা যাঙ হাতে ধরি
ক্রীড়া করাঞা তাঁরে করোঁ সুখী॥
কান্তা কৃষ্ণে করে রোষ                                    কৃষ্ণ পায় সন্তোষ
সুখ পায় তাড়ন ভর্ৎসনে।
যথাযোগ্য করে মান                                    কৃষ্ণ তাতে সুখ পান
ছাড়ে মান অলপ সাধনে॥
সেই নারী জীয়ে কেনে                                কৃষ্ণের মর্ম্ম নাহি জানে
তবু কৃষ্ণে করে গাঢ় রোষ।
নিজ সুখে মানে লাভ                                 পড়ুক তার শিরে বাজ
কৃষ্ণের মাত্র চাহি যে সন্তোষ॥
যে গোপী করে মোর দ্বেষে                             কৃষ্ণের করে সন্তোষে
কৃষ্ণ যারে করে অভিলাষ।
মুঞি তার ঘরে যাঞা                                তারে সেবোঁ দাসী হঞা
তবে মোর সুখের উল্লাস॥
কুষ্ঠীবিপ্রের রমণী                                        পতিব্রতা শিরোমণি
পতি লাগি কৈল বেশ্যার সেবা।
স্তম্ভিলে সূর্য্যের গতি                                      জীয়াইলে মৃতপতি
তুষ্ট কৈল মূখ্য তিন দেবা॥
কৃষ্ণ মোর জীবন                                          কৃষ্ণ মোর প্রাণধন
কৃষ্ণ মোর প্রাণের পরাণ।
হৃদয় উপরে ধরোঁ                                     সেবা করি সুখী করোঁ
এই মোর সদা রহে ধ্যান॥
মোর সুখ সেবনে                                         কৃষ্ণের সুখ সঙ্গমে
অতএব দেহ দেঙ দান।
কৃষ্ণ মোরে কান্তা করি                                কহে মোরে প্রাণেশ্বরী
মোর হয় দাসী অভিমান॥
কান্ত সেবা সুখপূর                                       সঙ্গম হৈতে সুমধুর
তাতে সাক্ষী লক্ষ্মী ঠাকুরাণী।
নারায়ণের হৃদে স্থিতি                                  তবু পাদসেবায় মতি
সেবা করে দাসী অভিমানী॥
এই রাধার বচন                                            শুদ্ধ প্রেমের লক্ষণ
আস্বাদয় শ্রীগৌররায়।
ভাবে মন নহে স্থির                                    সাত্বিকে ব্যাপে শরীর
মন দেহ ধারণ না যায়॥
ব্রজের বিশুদ্ধ প্রেম                                         যেন জাম্বুনদ হেম
আত্মসুখের যাহে নাহি গন্ধ।
সে প্রেম জানাইতে লোকে                               প্রভু কৈল এই শ্লোকে
পদে কৈল অর্থের নির্ব্বন্ধ॥

ই পদটি আংশিক, ১৯৬১ সালে প্রকাশিত, বিমান বিহারী মজুমদার সম্পাদিত “ষোড়শ শতাব্দীর
পদাবলী-সাহিত্য”, ৫৩০-পৃষ্ঠায় এভাবে দেওয়া রয়েছে।

আমি কৃষ্ণপদদাসী                                    তিঁহো রস-সুখরাশি
আলিঙ্গিয়া করে আত্মসাৎ।
কিবা না দেন দর্শন                                জারে আমার তনু মন
তবু তিঁহো মোর প্রাণনাথ॥
সখি হে! শুন মোর মনের নিশ্চয়।
কিবা অনুরাগ করে                                কিম্বা দুঃখ দিয়া মারে
মোর প্রাণেশ কৃষ্ণ অন্য নয়॥
ছাড়ি অন্য নারীগণ                                     মোর বশ তনু মন
মোর সৌভাগ্য প্রকট করিয়া।
তা সবারে দেন পীড়া                              আমা সনে করে ক্রীড়া
সেই নারীগণে দেখাইয়া॥
কিবা তিঁহো লম্পট                                      শঠ, ধৃষ্ট, সুকপট,
অন্য নারীগণ করি সাত।
মোরে দিতে মনঃপীড়া                             মোর আগে করে ক্রীড়া
তবু তিঁহো মোর প্রাণনাথ॥
না গণি আপন দুঃখ                                   সবে বাঞ্ছি তাঁর সুখ
তাঁর সুখে আমার তাত্পর্য্য।
মোরে যদি দিলে দুঃখ                                   তাঁর হয় মহাসুখ
সেই দুঃখ মোর সুখবর্য্য॥

.            *************************              
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
এই কৃষ্ণের বিরহে উদ্বেগ মন সিথির নহে
ভণিতা নেই
কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজ
কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত চৈতন্যচরিতামৃতের গীত। অন্ত্যলীলা, ১৭শ পরিচ্ছেদ, পৃ-২৬৮।

যথা রাগঃ।

এই কৃষ্ণের বিরহে                                  উদ্বেগ মন সিথির নহে
প্রাপ্ত্যুপায় চিন্তন না যায়।
যে বা তুমি সখীগণ                                     বিষাদে বাউল মন
কারে পুছোঁ ? কে কহে উপায় ?
হাহা সখি! কি করি উপায়?
কাহা করোঁ ? কাঁহা যাঙ ? কাঁহা গেসে কৃষ্ণ পাঙ ?
কৃষ্ণ বিনা প্রাণ মোর যায়॥
ক্ষণে মন স্থির হয়                                    তবে মনে বিচারয়
বলিতে হইল ভাবোদেগম।
পিঙ্গলার বচন স্মৃতি                                  করাইল ভাব মতি
তাতে করে অর্থ নির্দ্ধারণ॥
দেখি এই উপায়ে                                  কৃষ্ণ আশা ছাড়ি দিয়ে
আশা ছাড়িলে সুখী হয় মন।
ছাড়ি কৃষ্ণ কথা অধন্য                                কহ অন্য কথা ধন্য
যাতে হয় কৃষ্ণ বিস্মরণ’॥
কহিতে হইল স্মৃতি                                  চিত্তে হৈল কৃষ্ণস্ফুর্ত্তি
সখিকে কহে হইয়া বিস্মিতে।
যাহে চাহি ছাড়িতে                                সে শুইয়া আছে চিতে
কোন রীতে না পারি ছাড়িতে॥
রাধাভাবের স্বভাব আন                           কৃষ্ণ করায় কামজ্ঞান
কামজ্ঞানে ত্রাস হৈল চিত্তে।
কহে যে জগৎ মারে                                     সে পশির অন্তরে
এই বৈরি না দেয় পাসরিতে॥
ঔত্সুক্যের প্রাধান্য                                  জিনি অন্য ভাবসৈন্য
উদয় কৈল নিজ রাজ্য মনে।
মনে হৈল লালস                                        না হয় আপন বশ
দুঃখ মনে করেন ভর্ৎসনে॥
মন মোর বাম দীন                                    জল বিনা যেন মীন
কৃষ্ণ বিনা ক্ষণে মরি যায়।
মধুর হাস্য বদনে                                         মননেত্র রসায়নে
কৃষ্ণতৃষ্ণা দ্বিগুণ বাড়ায়॥
হাহা কৃষ্ণ! প্রাণধন!                                      হাহা পদ্ম লোচন!
হাহা দিব্য সদ্গুণসাগর!
হাহা শ্যামসুন্দর!                                        হাহা পীতাম্বরধর!
হাহা রাসবিলাস নাগর!
কাঁহা গেলে তোমা পাই ?                             তুমি কহ তাঁহা যাই
এত কহি চলিলা ধাইয়া।
স্বরূপ উঠি কোলে করি                                প্রভুরে আনিল ধরি
নিজ স্থানে বসাইল লঞা॥
ক্ষণে প্রভুর বাহ্য হৈল                                স্বরূপেরে আজ্ঞা দিল
স্বরূপ! কিছু কর মধুর গান।
স্বরূপ গায় বিদ্যাপতি                                     গীতগোবিন্দ গীতি
শুনি প্রভুর জুড়াইল কাণ॥

.            *************************              
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
হৈল গোপী ভাবাবেশ কৈল রাসে পরবেশ
ভণিতা নেই
কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজ
কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত চৈতন্যচরিতামৃতের গীত। অন্ত্যলীলা, ১৭শ পরিচ্ছেদ, পৃ-২৬৪।

যথা রাগঃ।

হৈল গোপী ভাবাবেশ                                কৈল রাসে পরবেশ
কৃষ্ণের শুনি উপেক্ষা বচন।
কৃষ্ণের মধুর বাণী                                ত্যাগে তাহা সত্য মানি
রোষে কৃষ্ণে দেন ওলাহন॥
নাগর! কহ তুমি করিয়া নিশ্চয়।
এই ত্রিজগত ভরি                                  আছে যত যোগ্য নারী
তোমার বেণু কাহা না আকর্ষয়॥ ধ্রু॥
কৈলে জগতে বেণু ধ্বনি                             সিদ্ধ মন্ত্রাদি যোগিনী
দূতী হঞা মোহে নারী মন।
মহোত্কণ্ঠা বাড়াইয়া                                  আর্য্যপথ ছাড়াইয়া
আনি তোমায় করে সমর্পণ॥
ধর্ম্ম ছাড়াও বেণু দ্বারে                              হান কটাক্ষ কামশরে
লজ্জা ভয় সকল ছাড়াও।
এবে আমায় কর রোষ                               কহ পরিত্যাগ দোষ
ধার্ম্মিক হঞা ধর্ম্ম শিখাও॥
অন্য কথা অন্য মন                                 বাহিরে অন্য আচরণ
এই সব শঠ পরিপাটী।
তুমি জান পরিহাস                                    হয় নারীর সর্ব্বনাশ
ছাড় এই সব কুটিনাটি॥
বেণুনাদ অমৃতঘোলে                            অমৃত সমান মিঠা বোলে
অমৃত সমান ভূষণ শিঞ্জিত।
তিন অমৃতে হরে কাণ                                  হরে মন হরে প্রাণ
কেমনে নারী ধরিবেক চিত॥
এত কহি ক্রোধাবেশে                                ভাবের তরঙ্গে ভাসে
উত্কণ্ঠা সাগরে ডুবে মন।
রাধার উত্কণ্ঠা বাণী                                  পড়ি আপনি বাখানি
কৃষ্ণ মাধুর্য্য করে আস্বাদন॥

.            *************************              
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
কণ্ঠের গম্ভীর ধ্বনি নবঘন ধ্বনি জিনি
ভণিতা নেই
কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজ
কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত চৈতন্যচরিতামৃতের গীত। অন্ত্যলীলা, ১৭শ পরিচ্ছেদ, পৃ-২৬৫। এই পদটি
এই গ্রন্থে “হৈল গোপী ভাবাবেশ কৈল রাসে পরবেশ” পদের ঠিক পরবর্তী পদ।

পুনর্যথা রাগঃ।

কণ্ঠের গম্ভীর ধ্বনি                                   নবঘন ধ্বনি জিনি
যার গানে কোকিল লাজ পায়।
র এক শক্তি কণে                                  ডুবায় জগতের কাণে
পুনঃ কাণ বাহুড়ি না যায়॥
কহ সখী! কি করি উপায় ?
কৃষ্ণের সে শব্দ গুণে                                হরিলে আমার কাণে
এবে না পীই তৃষ্ণায় মরি যায়॥ ধ্রু॥
সে শ্রীমুখ ভাষিত                                  অমৃত হৈতে পরামৃত
স্মিত কর্পূর তাহাতে মিশ্রিত।
শব্দ, অর্থ, দুই শক্তি                                নানা রস করে ব্যক্তি
প্রত্যক্ষরে নর্ম্ম বিভূষিত॥
সে অমৃতের এক কণ                                  কর্ণচকোর জীবন
কর্ণচকোর জীয়ে সেই আশে।
ভাগ্যবশে কভু পায়                             অভাগ্যে কভু নাহি পায়
না পাইলে মরয়ে পিয়াসে॥
যেবা বেণু কলধ্বনি                                   একবার তাহা শুনি
জগন্নারীচিত্ত আলুলায়।
নীবিবন্ধ পড়ে খসি                                    বিনা মূলে হয় দাসী
বাউলী হঞা কৃষ্ণপাশে ধায়॥
যে বা লক্ষ্মী ঠাকুরাণী                                তিঁহো একাকিনী শুনি
কৃষ্ণপাশে আইসে প্রত্যাশায়।
না পেয়ে কৃষ্ণের সঙ্গ                                  বাড়ে তৃষ্ণার তরঙ্গ
তপ করে তবু নাহি পায়॥
এই শব্দামৃত চারি                                    যার হয় ভাগ্য ভারি
সেই কর্ণ ইহা করে পান।
ইহা যেই নাহি শুনে                             সে কাণ জন্মিল কেনে ?
রাণাকড়ি সম সেই কাণ’॥
করিতে ঐছে বিলাপ                                    উঠিল উদ্বেগ ভাব
মনে কিছু নাহি আলম্বন।
উদ্বেগ, বিষাদ, মতি                            ঔত্সুক্য, ত্রাস, ধৃতি, স্মৃতি,
নানা ভাবে হইল মিলন।
ভাব সাবল্যে রাধার উক্তি                           লীলা সুখে হৈল স্ফুর্ত্তি
সেই ভাবে পড়ে এক শ্লোক।
উন্মাদের সামর্থ্যে                                সেই শ্লোকের করে অর্থে
সেই অর্থ নাহি জানে লোক॥

.            *************************              
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
কৃষ্ণরূপ শব্দ স্পর্শ সৌরভ অধররস
ভণিতা নেই
কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজ
কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত চৈতন্যচরিতামৃতের গীত। অন্ত্যলীলা, ১৫শ পরিচ্ছেদ, পৃ-২৩০।

যথা রাগ।

কৃষ্ণরূপ শব্দ স্পর্শ                                  সৌরভ অধররস
যার মাধুর্য্য কহন না যায়।
দেখি লোভে পঞ্চজন                                এক অশ্ব মোর মন
চড়ি পঞ্চ পাঁচ দিকে ধায়॥
সখি হো শুন মোর দুঃখের কারণ।
মোর পঞ্চেন্দ্রিয়গণ                                   মহালম্পট দস্যুপণ
সবে কহে ‘হর পরধন’॥ ধ্রু॥
এক অশ্ব একক্ষণে                                পাঁচে পাঁচ দিকে টানে
এক মন কোন দিকে ধায় ?
এক কালে সব টানে                                গেল ঘোড়ার পরাণে
এই দুঃখ সহন না যায়॥
ইন্দ্রিয়ে না করি রোষ                            ইহা সবার কাঁহা দোষ
কৃষ্ণরূপাদি মহা আকর্ষণ।
রুপাদি পাঁচ পাঁচে টানে                            গেল ঘোড়ার পরাণে
মোর দেহে না রহে জীবন॥
কৃষ্ণরূপামৃতসিন্ধু                                     তাহার তরঙ্গ বিন্দু
এক বিন্দু জগত ডুবায়।
ত্রিজগতে যত নারী                                  তার চিত্ত উচ্চ গিরি
তাহা ডুবায় আগে উঠি ধায়॥
কৃষ্ণের বচন মাধুরী                                      নানা রস নর্ম্মধারী
তার অন্যায় কহন না যায়।
জগতের নারীর কাণে                              মাধুরীগুণে বান্ধি টানে
টানাটানি কাণের প্রাণ যায়॥
কৃষ্ণ অঙ্গ সুশীতল                                কি কহিব তার বল ?
ছটায় জিনে কোটীন্দু চন্দন।
সশৈল নারীর বক্ষ                                   তাহা আকর্ষিতে দক্ষ
আকর্ষয়ে নারীগণ মন॥
কৃষ্ণাঙ্গ সৌরভ্য ভর                                       মৃগমদ মনোহর
নীলোত্পলের হরে গর্ব্ব ধন।
জগত নারীর নাসা                                তার ভিতর পাতে বাঁসা
নারীগণে করে আকর্ষণ॥
কৃষ্ণের অধরামৃত                                   তাহে কর্পূর মন্দস্মিত
স্বমাধুর্য্যে হরে নারী মন।
অন্যত্র ছাড়ায় লোভ                                   না পাইলে মনক্ষোভ
ব্রজনারীগণের মূল ধন॥
এত কহি গৌরহরি                                      দুই জনার কণ্ঠ ধরি
কহে শুন স্বরূপ রামরায়।
কাঁহা করোঁ ? কাঁহা যাঁও ?                      কাঁহা গেলে কৃষ্ণ পাঁও ?
দোঁহে মোরে কহ সে উপায়॥

.            *************************              
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
কৃষ্ণ জিতি পদ্মচান্দ পাতিয়াছে মুখফান্দ
ভণিতা নেই
কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজ
কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত চৈতন্যচরিতামৃতের গীত। অন্ত্যলীলা, ১৫শ পরিচ্ছেদ, পৃ-২৩৯।

যথা রাগঃ।

কৃষ্ণ জিতি পদ্মচান্দ                                পাতিয়াছে মুখফান্দ
তাতে অধরমধুরস্মিত চার।
ব্রজনারী আসি আসি                              ফান্দে পড়ি হয় দাসী
ছাড়ি লাজ পতি ঘর দ্বার॥
বান্ধব কৃষ্ণ করে ব্যাধের আচার।
নাহি মানে ধর্ম্মাধর্ম্ম                                     হরে নারীমৃগীমর্ম্ম
করে নানা উপায় তাহার॥ ধ্রু॥
গণ্ডস্থল ঝলমল                                          নাচে মকর কুণ্ডল
সেই নৃত্যে হরে নাচীচয়।
সস্মিত কটাক্ষ বাণে                                  তাসবার হৃদয় হানে
নারী বধে নাহি কিছু ভয়॥
অতি উচ্চ সুবিস্তার                                লক্ষ্মী শ্রীবত্স অলঙ্কার
কৃষ্ণে যে ডাকাতিয়া বক্ষঃ।
ব্রজদেবী লক্ষ লক্ষ                                    তা সবার মন বক্ষঃ
হরি দাসী করিবারে দক্ষ॥
সুবলিত দীর্ঘার্গল                                         কৃষ্ণের ভুজযুগল
ভজ নহে কৃষ্ণ সর্পকায়।
দুই শৈল ছিদ্রে পৈশে                                নারীর হৃদয়ে দংশে
মরে নারী সে বিষ জ্বালায়॥
কৃষ্ণকরপদতল                                        কোটিচন্দ্র সুশীতল
জিনি কর্পূর বেণামূল চন্দন।
একবার দ্বারে স্পর্শে                                  স্মরজ্বালাবিষনাশে
যার স্পর্শে লুব্ধ নারীমন॥
এতেক বিলাপ করি                                   বিষাদে শ্রীগৈরহরি
এই অর্থে পড়ে এক শ্লোক।
এই শ্লোক পাঞা রাধা                                বিশাখারে কহে রাধা
উঘাড়িয়া হৃদয়ের শোক॥

.            *************************              
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
তনু মন করায় ক্ষোভ বাড়ায় সুরত লোভ
ভণিতা নেই
কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজ
কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত চৈতন্যচরিতামৃতের গীত। অন্ত্যলীলা, ১৬শ পরিচ্ছেদ, পৃ-২৫৬।

যথা রাগঃ।

তনু মন করায় ক্ষোভ                                বাড়ায় সুরত লোভ
হর্ষ শোকাদি ভাব বিনাশয়।
পাসরায় অন্য রস                                    জগৎ করে আত্মবশ
লজ্জা ধর্ম্ম ধৈর্য্য করে ক্ষয়॥
নাগর! শুন তোমার অধর চরিত।
মাতায় নারীর মন                                     জিহ্বা করে আকর্ষণ
বিচারিতে সব বিপরীত॥
আছুক নারীর কায                                   কহিতে বাসিয়ে লাজ
তোমার অধর বড় ধৃষ্ট রায়।
পুরুষে করে আকর্ষণ                                 আপনা পীয়াইতে মন
অন্য রস সব পাসরায়॥
সচেতন রহু দূরে                                    অচেতন সচেতন করে
তোমার অধর বড় বাজীকর।
তোমার বেণু শুষ্কেন্ধন                              তার জন্মায় ইন্দ্রিয় মন
তারে আপনা পীয়ায় নিরন্তর॥
বেণু ধৃষ্ট পুরুষ হঞা                                     পুরুষাধর পীয়াইয়া
গোপীগণে জানায় নিজ পান ।
ওহে শিন গোপীগণ                                বলে পিঙো তোমার ধন
তোমার যদি থাকে অভিমান॥
তবে মোরে ক্রোধ করি                                লজ্জা ভয় ধর্ম্ম ছাড়ি
ছাড়ি দিমু করসিয়া পান।
নহে পিমু নিরন্তর                                তোমায় মোর নাহিক ডর
অন্য দেখোঁ তৃণের সমান॥
অধরামৃত নিজস্বরে                                     সঞ্চারিয়া সেই বলে
আকর্ষয়ে ত্রিজগত জন।
আমরা ধর্ম্মে ভয় করি                                   রহি যদি ধৈর্য ধরি
তবে আমায় করে বিড়ম্বন॥
নীবি খসায় গুরু আগে                             লজ্জা ধর্ম্ম করায় ত্যাগে
কেশে ধরি যেন লঞা যায়।
আনি করায় তোমার দাসী                           শুনি লোক করে হাসি
এই মত নারীরে নাচায়॥
শুষ্ক বাঁশের কাঠখান                                   এত করে অপমান ?
এই দশা করিল গোঁসাঞি।
না সহি কি করিতে পারি                                তাহে রহি মৌন ধরি
চোরার মাকে ডাকি কান্দিতে নাই॥
অধরের এই রীতি                                           আর শুন কুনীতি
সে অধর সনে যার মেলা।
সেই ভক্ষ্য। ভোজ্য পান                                     হয় অমৃত সমান
নাম তার হয় কৃষ্ণ ফেলা॥
সে ফেলার এক লব                                       না পায় দেবতা সব
এ দম্ভে কেবা পাতিযায় ?
বহু জন্ম পুণ্য করে                                     তবে সুকৃতি নাম ধরে
সে সুকৃতি তবে লব পায়॥
কৃষ্ণ যে খায় তাম্বূল                                      কহে তার নাহি মূল
তাহে আর দম্ভ পরিপাটী।
তার যে বা উদ্গার                                    তারে কয় অমৃতসার
গোপীর মুখ করে আলবাটী॥
এ সব তোমার কুটিনাটি                                  ছাড় এই পরিপাটী
বেণু দ্বারা কাহে হর প্রাণ ?
আপনার লাগি হাসি                                  নহ নারীর বধ ভাগী ?
দেহ নিজাধরামৃত দান॥

.            *************************              
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর