কবি আবদুল করিম-এর কবিতা
চম্পাবতী
কবি আবদুল করিম
১৯৪৫ সালে প্রকাশিত, আবদুল কাদির ও রেজাউল করীম সম্পাদিত, বাঙ্গালী মুসলমান
কবিদের রচিত কবিতাবলীর সংকলন “কাব্য-মালঞ্চ”, ৫৯-পৃষ্ঠা। “কালুগাজী চম্পাবতী”-এর
কাব্যাংশ।

চম্পাবতি দাঁতে যবে মিশি লাগাইত।
সৌদামিনী কালে আহা চন্দ্র লুকাইত॥
জবাফুল লজ্জা পায় যবে পান খায়।
তাহার তুলনা আর না হেরি ধরায়॥
খঞ্জন জিনিয়া আঁখি, বঙ্কিম লোচন।
নয়ন হেরিলে তা’র ভুলয়ে ভুবন॥
কালো মেঘ জিনি’ তার দীর্ঘ কেশ মাথে।
নাগিনী লুকায় গড়ে তাহার শঙ্কাতে॥
কেশরী জিনিয়া তা’র মাঝাখানি সরু।
বনেতে লুকায় বাঘ মানি’ তারে’ গরু॥
নিতম্ব হেরিয়া তা’র মেদিনী গম্ভীর।
ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে ওঠে হইয়া অস্থির॥

সাত ভাই মাঝে সেই ছোট চম্পাবতি।
সবার দুলারী কন্যা বড় বুদ্ধিমতী॥
দ্বাদশ বত্সর যবে বয়স তাহার।
ঘুমায়ে গোলাপী পান করেন আহার॥

.        ************************                                                   
সূচীতে . . .   



মিলনসাগর
গাজীর লড়াই
কবি আবদুল করিম
১৯৪৫ সালে প্রকাশিত, আবদুল কাদির ও রেজাউল করীম সম্পাদিত, বাঙ্গালী মুসলমান
কবিদের রচিত কবিতাবলীর সংকলন “কাব্য-মালঞ্চ”, ৫৯-পৃষ্ঠা। “কালুগাজী চম্পাবতী”-এর
কাব্যাংশ।

দলে দলে কত বাঘ সাজিয়া আইল।
বাঘের গর্জ্জনে ধরা কাঁপিতে লাগিল॥
কত রূপ এল বাঘ, কি ক’ব কথায়।
লাল বাঘ, ধলা বাঘ, জটাধারী কায়॥
বেড়া-ভাঙা বাঘ এল ভীষণ বিশাল।
অসুর ও সিংহ মারি’ দেয় রসাতল॥
দানেওয়ারা বাঘ আসে কুর্দ্দন করিয়া।
গগনের সূর্ষ্য যায় খাইতে ধরিয়া॥
ভৃঙ্গরাজ বাঘ সাজে পর্ব্বত-আকার।
পাতালে বাসুকী কাঁপে গর্জ্জনে যাহার॥
চিলা-তক্ষু বাঘ সাজে চক্ষু পাকলিয়া।
মানুষ ধরিয়া খায় চিবিয়া গিলিয়া॥
মোনী বাঘ এল সবে আঁখি লাল ক’রে।
শৃগাল কুকুর পেলে ঘাড়ে গিয়া ধরে॥
পেঁচা-মুখো বাঘ বাঁকা এল বাঘ খেড়ী।
আওন বাওন এল চিতা নাগেশ্বরী॥
কত রঙ্গ বাঘ সাজে কত  ক’ব নাম।
সে সব লিখিলে কিছু নাহি পরিণাম॥
দলে দলে চলে বাঘ ব্রাহ্মণা নগরে।
সঙ্গেতে চলিল গাজী আষা ল’য়ে করে॥
তর্জ্জনে গর্জ্জনে বাঘ হিঙ্কারিয়া চলে।
যেমন ঘেরিল লঙ্কা বানর সকলে॥

ভয় পেয়ে মহারাজ কি করে তখন।
দক্ষিণা রায়ের কাছে করিলা গমন॥
সাজিয়া দক্ষিণা রায় রণ-মাঝে গেল।
তফাতে থাকিয়া গাজী দেখিবারে পেল॥
বাহান্ন হাজার ওঠে কুম্ভীর ভাসিয়া।
দক্ষিণার সঙ্গে রণে চলিল হাসিয়া॥
সকলে কহিল রায় এনেছে কুম্ভীর।
বাঘ লয়ে পালাইবে এখনি ফকির॥
কুমীরে কহিল রায় বাঘ ধরিবারে।
তাহা শুনি গাজী শাহা কহে গোস্বা ভরে॥
‘যত বাঘ আছে মোর চলহ সাজিয়া।
সকল কুম্ভীরে যেয়ে ফেলহ মারিয়া॥’
গাজীর হুকুম পেয়ে যত বাঘ ছিল।
কুম্ভীর সহিত তা’রা সংগ্রাম জুড়িল॥
বাঘের হুঙ্কারে কাঁপে মেদিনী তামাম।
কাঁপিয়া দক্ষিণা রায় গায়ে বহে ঘাম॥
হুঙ্কার মারিয়া বাঘ লেজ বক্র ক’রে।
কুমীরের উপরের লাফ দিয়া পড়ে॥
তবে ত কুমীরগণ ক্রোধেতে কাঁপিয়া।
ধরিল বাঘের পাও দশনে চাপিয়া॥

.        ************************                                                   
সূচীতে . . .   



মিলনসাগর