কবি কুমুদ রঞ্জন মল্লিকের কবিতা
*
ছুটছে তাদের ঘরের টানে |
বন্ধন-হীন উড়বে উধাও,
দৃষ্টি মানস-সরের পানে |

আয়রে হরিণ দল বেঁধে ভাই,
কেবল ছুটি, কেবল লাফাই,
বাঁধন যেদিন পড়বে গলায়
আনন্দেতে পড়তে রাজি |

রাণীর সোনার ভাঙলো শিবির
নেই ক মোটেই নেই পিছু টান্ ,
নবীন মীন্ আজ নূতন ঢলে
উল্লাসেতে ছুটবে উজান |

বিশ্ব-বাধায় আর কি ভোলে,
ছুটছে চকোর নভের কোলে,---
সুধা না পাই তায় ক্ষতি নাই,
সোহাগ পেলেই আমরা বাঁচি |

.        *************************              
.                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
মমতা মোর পথের কীটও
পায় যেন হায় পায় যেন গো,
বনবিহগের কণ্ঠে হউক অমর আমার ভাষা !

ভক্তি-বিহীন সম্বল-হীন দুঃখী অকপট,
শক্তি নাহি গড়তে দেউল, সান্ত্বনারি মঠ |
দরদী এই দীনের হিয়া
নিঝরে যাক প্রণয় দিয়া
হয়তো কোন তৃষিতেরি মিটতে পারে তৃষা |

জনিলে এ মানব জনম আবার পাব কি না,
নিরুদ্দেশের যাত্রী রাখি প্রণয়রাখির চিনা |
অনুভূতির ছিন্ন সূত্র
যাই রেখে যাই যত্রতত্র,
পারবে না যা করতে পরশ কালের কর্মনাশা |

হয়তো কারো হরবে ক্ষুধা আমার তরুর ফল,
স্নিগ্ধ কারো করবে দেহ অশ্রুদীঘির জল |
ঝরা ফুলের গন্ধে ও রে
হয়তো কেহ স্মরবে মোরে
ভাবুক পথিক বলবে হেসে---লোকটা ছিল খাসা |

.        *************************              
.                                                                                       
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
ভুলি কোশল-পৌরভবন,                  ভুলতে নারি অশোক-কানন,
সরমার সে সখীত্বটি বন্দিনী মা সীতার সাথে |

ভুলি দ্বারাবতীর ঘটা, কংসবধের গৌরবও |
ভুলায় কুরুক্ষেত্র গোটা বিদুর-ক্ষুদের সৌরভও |
বাঁশরী আর শিখীর পাখা                    সুদর্শনকে দেয় যে ঢাকা,
সুদামার প্রেম-সখ্যে যে ম্লান পাণ্ডব এবং কৌরবও |

ভুলতে নারি সারনাথ আর নালন্দা-মঠ-ধ্বংসটিকে,
মনে পড়ে বুদ্ধদেবের বুকে কাতর হংসটিকে |
হাজার হাজার মূর্তি তাহার              উহার কাছে মানছে যে হার,
পূর্ণতা দেয় বিরাট করে ক্ষুদ্র তাহার অংশটিকে |

মহামায়ায় যতই মানাক সিংহ এবং সিংহাসনে,
রামপ্রসাদের বেড়ার ধারে দেখেই যে হয় হিংসা মনে |
বাদ্য ঘন্টা লক্ষ বলি
মিলনসাগর ডট কম অলক্ষে সব যায় যে চলি---
বক্ষে জাগে দৃষ্টি মায়ের মিষ্ট হাসি চন্দ্রাননে |

আদর করি শিখীর চেয়ে চূড়ার শোভা শিখীর পাখা,
বিশাল রসের বনের চেয়ে ঘটের ছোটো আমের শাখা |
খনি রেখে মণিই তুলি,                  মধু পেয়ে ভ্রমর ভুলি |
মা মেনকার অশ্রুকণায় বিশাল গিরীশ পড়ল ঢাকা |

.        *************************              
.                                                                                           
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
*
     ক্যাস-বাক্সের চাবি
কোনো ক্রমে মোর চলিতনা শুধু
     তাহার উপরে দাবী |
এ চক পুরীর চাবি মোর প্রিয়া
     যতনে রাখিত কাছে,
চাহিলে কখনো পাই নাই আমি
     ভাবিতাম কি যে আছে !
আজ দিয়ে গেল শেষ সন্দেশ
     সকলের শেষ দান,
দানের ভঙ্গি দাতার মিনতি
     ব্যাকুল করিছে প্রাণ |
মিলনসাগর ডট কম |

চলে গেছে প্রিয়া বরষ কেটেছে
     চোখের বরষা ল'য়ে,
শূণ্য শায়রে ভ্রমর গুমরে
     পদ্ম-পরাগ ব'য়ে |
বিজন দুপুরে উদাসী পরাণ
     হাতে নাই কোন কাজ,
বাক্সটি তার কাছেতে আনিয়া
     খুলিয়া দেখিনু আজ |
রহিয়াছে সেই আশির্ব্বাদীর
      ইয়ারিং এক জোড়া,
ঠাকমার দেওয়া প্রাচীন ঝুমকা
      লাল কৌটায় ভরা |


হার এক ছড়া গুরু বক্ষের
      গুমর মাখানো যাতে,
বিয়ের নলক রূপের ঝলক
      জড়ানো রয়েছে তাতে |
শাঁখার সোনার পাত এতটুকু
      ক'টি কাঁচ পোকা টিপ,
লাবনীর নভে সাঁঝের তারকা
      সুষমার হেম-দীপ |
তারি সাথে আছে চিঠি এক তাড়া
      অনেক দিনের লেখা,
নব-অনুরাগ-রঞ্জিত লিপি
      আজ পড়িতেছি একা |


পড়ি আর কাঁদি কত শরতের
      গত উত্সব স্মরি,
ঝরা শেফালির আলিঙ্গনের
      আমেজ রয়েছে মরি |
ছোট ছোট কথা ছোট দুখ সুখ
      গাঁথা আছে তার মাঝে,
ফুল-শয্যার শুষ্ক কুসুমে
      অতীত সুরভি রাজে |
যৌবন হেথা বাঁধা পড়িয়াছে
      দেখে মনে হয় ভুল,
কুড়ানো উপলে পাই যে আবার
      ঝরনারি কুলু-কুল |
মিলনসাগর ডট কমের কবিতা

ক্ষুদ্র ঝিনুক প্রেম সাগরের
      খবর দিতেছে ভাই,
চরণ সিঁদুরে দেবী প্রতিমার
      কৃপার আভাস পাই |
হায় আঙ্গুরের বাক্সে আমার
      রাখিল কে হীরাচূর,
লক্ষ্মীর ঝাঁপি করিল কে মোর
      বেদনায় ভরপুর |
পূজারিনী যবে খুলে দিয়ে গেল
      আজি মন্দির-দ্বার,
আছে ধূপ দীপ, বিল্বপত্র
      দেবী যে নাহিক আর |

.        *************************              
.                                                          
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
             যদিই আঁধার হয়ে এসে,
তবু নদীর মাঝে মাঝে
        তরী মোদের চলুক ভেসে |
এই গাঁয়ের ভাই নামটি শুনে,
প্রাণটা এমন করে কেনে,
ঘুমপাড়ানো কোন্ বেদনা,
        জেগে উঠে হৃদয় মাঝে ;
তরী হেথা বাঁধব না কো আজকে সাঁঝে |

           ৩
মৌন সাঁঝের ম্লান মাধুরী,
        কতই ব্যথা আনছে ডেকে,
গ্রামের সাঁঝের দীপটি ছোট,
        বিষাদ-ছবি দিচ্ছে এঁকে |
একটি গৃহ হোথায় কি না
ছিল আমার বড়ই চিনা
ছবিটি যার আজও আমার
        হৃদয়-কোণে সদাই রাজে
তরী হেথা বাঁধব না কো আজকে সাঁঝে |

            ৪
এই নদীরই এই ঘাটেতে
        এমনি সাঁঝে আমার প্রিয়া,
যেত' ছোট কলসীখানি
        কোমল তাহার বক্ষে নিয়া,
সোহাগে জল উথলে উঠি
বক্ষে তাহার পড়ত' লুটি,
পথের মাঝে আমায় দেখে
        ঘোমটা দিত হর্ষে লাজে,
তরী হেথা বাঁধব না কো আজকে সাঁঝে |

            ৫
ওই ঘাটে ওই গাছের পাশে,
        তটিনীর ওই শ্যামল কূলে,
দিয়েছি সেই স্বর্ণলতায়
        আপন হাতে চিতায় তুলে |
  আজকেও সেই চিতার 'পরে
  শিখিল বকুল পড়ছে ঝ'রে
  আজও মধুর মুখখানি তার
         দেয় যে বাধা সকল কাজে,
তরী হেথা বাঁধব না কো আজকে সাঁঝে |

.        *************************              
.                                                                   
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
আজি এ বাদলে ম্লান মুখ তার
          উঁকি ঝুঁকি মারে চিতে |

ধুনি জ্বালিবার কড়ি দিব বলি'
          গিয়াছিনু আমি ভুলি,
নিশিথে সাধুর ক্লেশ হ'ল কত
          মন করে বলাবলি |
 আকাশেতে আজি শুনি ডাক তার
 সরমেতে মরি মরম মাঝার
 চোখে আসে জল ক্ষমা মাগি আমি
          করিয়া কৃতাঞ্জলি |

রেলে যেতে কবে লয়েছিনু ফল
          দিলাম পয়সা ছুড়ি,
কোথায় পড়িল ভীড়ের মাঝার
          খুঁজিতে লাগিল বুড়ী |
 গাড়ী চলে এলো জানিনে ত' আহা
 গরীব মালিক পেলে কিনা তাহা
 আজ মনে হয় সে রয়েছে চাহি
          নামায়ে ফলের ঝুড়ি |

দিতে ভুলে গেনু দূর যাত্রীর
          চেয়ে-লওয়া পাখা খানি,
কোথায় পাঠাব জানিনে ঠিকানা
          রেলে জমা দিনু আনি |
 আজি সে আসিয়া পাখা চায় যেন
 বলে ফিরে তুমি দাও নাই কেন ?
 বুঝিতে পারিনে সামলাবো কিসে
          এত বড় রাহা জানি |

মন্দির পথে মালা দিতে এলে
          লই নাই তাহা গলে,
ভিখারী বালকে ফিরায়ে দিয়াছি
          কোথা কটু কখা বলে |
 কোথা ব্যথা দেখি ঝরে নাই আঁখি,
 কোথা কি অর্ঘ্য আসি নাই রাখি,
 পূজ্যে কোথায় পূজিতে ভুলেছি'
          ভকতির শতদলে |

দীর্ঘ পথেতে পরিচয় হলো
           যে সব সুহৃদ্ সনে
লওয়া হয় নাই খবর তাদের
মিলনসাগর ডটকম বেদনা দিয়াছি মনে |
 আজ জেগে উঠে তাহাদের স্মৃতি
 অযাচিত কৃপা, অযাচিত প্রীতি,
 হায় এ বেতার বুকের সেতারে
          বাজিছে ক্ষণে ক্ষণে |

স্মৃতির সুরভি বুকেতে ভরিয়া
কপি ও পেস্ট করাসভয়েতে আজ ভাবি
পথ ফুরাইল মিটিল না কই
মিলনসাগর ডটকমএখনো পথের দাবী |
  এদেরি লাগিয়া হয় ত' আবার,
  পেতে হবে ক্লেশ আসা ও যাবার,
  কিরাতের দাবী না মিটায়ে ঘরে
          আনিলাম মৃগনাভি |

.        *************************              
.                                                          
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
ঠাঁই কি পাবে না সে স্বাধীনতার সুধার মহোত্সবে ?
আট-শতাব্ দী-ব্যাপী স্বজাতির হীনতার অপবাদ
হৃদয় রক্তে ধুয়ে দিতে যারা করিল ডঙ্কানাদ---
তাদের বারংবার আজি শুভদিনে গোটা এ-ভারত জানায় নমস্কার |

        ৩
সুদূরদর্ষী মনীষী যে সব দিব্যদৃষ্টিমান,
ধ্যানে নেহারিয়া দেশের এ-রূপ গাহি বন্দনা গান,
ভবিষ্যতের এ মহিমময় দিনের পাইল টের,
রসনা যাদের আস্বাদ পেল অনাগত অমৃতের,
ব্যথিত করিল যাদের হৃদয় পরাধীনতার গ্লানি,
শব-সাধনায় জাতিরে জাগাল দিয়া অভয়ের বাণী---
তাদের বারংবার আজি শুভদিনে গোটা এ-ভারত জানায় নমস্কার |

         ৪
কটিবাস-পরা যে-মহামানব নীরব তপস্যায়
এ-দেশ জাতির মুক্তি আনিল কেবল অহিংসায়,
কোনো দেশে কোনো যুগে যাহা হয়নি অনুষ্ঠিত
সেই অসাধ্য় করিয়া---ধরা হল বিস্মিত |
মনুষ্যত্বের হল বড়, যারা বড় ছিল পশু বলে,
সিংহ তাহার কেশর লুটাল সাধুর চরণ-তলে---
তাদের বারংবার আজি শুভদিনে গোটা এ-ভারত জানায় নমস্কার |

        ৫
এসো স্বাধীনতা চিরকাঙ্খিত, ছিলে হয়ে তুমি পর,
চেযে আশাপথ ছিল এ-ভারত সহস্র বত্সর |
প্রাণ-প্রতিষ্ঠা কর তুমি পুন ইহার মৃত্তিকায়,
মহাভারতের গৌরবময় যুগ যেন ফিরে পায় |
হোক খণ্ডিত---অখণ্ড হতে হবে না অধিক দেরি,
বাজিয়া উঠুক শঙ্খ ঘন্টা সঘনে বাজুক ভেরি |
তাদের বারংবার আজি শুভদিনে গোটা এ-ভারত জানায় নমস্কার |

.        *************************              
.                                                                  
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
*
প্রায়শ্চিত্ত

.        ডক্টর জনসন---
বিশ্ব জুড়িয়া সন্মান তাঁর
.       কোন দিকে কম নন্!
পান্ডিত্যের নাহি তাঁর সীমা,
গুরু গৌরব, অগাধ গরিমা  ;
দেশের কবি ও জ্ঞানী গুণী জন,
.       তাঁর মুখ চেয়ে রন্  |



.        পেলে তাঁর দরশন,
বালক-বৃদ্ধ ধনি-দরিদ্র
.        সবে কৃতার্থ হন্   |
তিনি পথে গেলে জমে ওঠে ভিড়,
আঁখি-মোড়া পথ, জনতা নিবিড়,
যেমন কঠোর তেমনি কোমল,
.        তেমনি উদার মন !




.        একদিন জুন মাসে
প্রখর রৌদ্রে আছেন একাকী
.        দাঁড়ায়ে পথের পাশে |
বৃদ্ধ মনীষা টুপি-হীন শির,
ঘাম ঝরে গায়ে, ঝরে আঁখি-নীর,
কর-যোড় করি’ দাঁড়ায়ে আছেন----
.        শিশুরা দেখিয়া হাসে  |


.        রুদ্ধ গৃহের দ্বার,
ক্ষুদ্র গ্রামের ত্যক্ত বিপণি,
.        লোক-জন নাহি আর  |
পথ দিয়া কত গাড়ী-ঘোড়া যায়,
দেখি’ জনসনে থমকি’ দাঁড়ায়,-----
হেন দাম্ভিক পন্ডিত হেথা
.        প্রতীক্ষা করে কার !


.        সেই জনসন কি না ?
লর্ড-প্রাসাদের  অপেক্ষাগারে
.        ঢুকিতে যে করে ঘৃণা !
শির নোয়াইতে জানে না যে জন,
সে কেন দাঁড়ায়ে এখানে এমন !----
হেন অঘটন ঘটেনা কখনো
.        বিশেষ কারণ বিনা !


.        জনেক বন্ধু তাঁর
সবিনয়ে আসি’ জিজ্ঞাসা করে
.        মঙ্গল-সমাচার |
বলে, “ এত রোদে এই দীন-বেশে
কেন দাঁড়াইয়া হীন দ্বারদেশে ?
দর্শনীয়ই চাহে দর্শন-----
.        এমন ভাগ্য কার” ?



.        জনসন কন্ ধীরে,-----
তখনও তাঁহার নয়ন যুগল
.        আপ্লুত আঁখি-নীরে |
“হয়তো বন্ধু জাননাকো তুমি----
কত বড় মোর এ তীর্থভূমি !
এই ঘরে ছিল পিতার দোকান,
.        তাঁর স্মৃতি আছে ঘিরে !


.        বহু বহুদিন গত,
বাবার শরীর দারুণ গ্রীষ্মে
.        ভালো ছিলনাকো তত !
বলিলেন ডাকি’, “শোন্ জনসন,
(ছিলাম পিতার আদরের ধন )
আজিকার মত খোল্ গে দোকান----
.        ক্রেতা ফিরে যাবে কত !”


.        শুয়ে ছিনু আরামেতে ,-----
মাকে বলিলাম, “ এত রোদে বলো,
.        পারিব না আমি যেতে !”
বাবা কোনো কথা নাহি বলি’ আর
রৌদ্রে গেলেন দোকানে তাঁহার |
তিনি ভুলিলেন,----সে অবাধ্যতা
.        আমি স্মরি দিনে-রেতে !



.        নিদাঘের দিনে ঘরে
পিতার আমার ক্ষমা-সুন্দর
.        মুখখানি মনে পড়ে !
মনে পড়ে সেই দিবসের কথা,----
জাগে ব্যাকুলতা, বুকে বাজে ব্যথা,
কৈশোরের সে অপরাধ স্মরি’
.        দু’নয়নে ধারা ঝরে !


.        পিতা তো আমার নাই !
বছর বছর সেই দিনে হেথা
.        আমি ক্ষমা চেয়ে যাই  !
এড়াতে চাহিনু যে রৌদ্র ভয়ে,
দেখি সে রৌদ্র গায়ে বেশ সহে ;
লঘু হোক তবু এ প্রায়শ্চিত্তে----
.        কিছু সান্ত্বনা পাই !



.        বছর বহিয়া যায়-----
পিতাই ধর্ম্ম, পিতাই স্বর্গ,
.        এখন জেনেছি হায় !
বৃদ্ধ শিশুর এই অনুতাপ
স্খালন করিতে পারে কি সে পাপ ?
এ ঘোর কাকুতি স্বর্গে কি তাঁর
.        অন্তরে পঁহুছায় ?”

.        *************************              
.                                                                   
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
আমাদের সঙ্গী
কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক
উত্থানপদ বিজলী সম্পাদিত, “ছোটদের আবৃত্তির ছড়া ও কবিতা” সংকলনের কবিতা।


গুটি ছয় পায়রা ও গুটিকত হাঁস রে,
আমাদের ঘরে করে একসাথে বাস রে।
.        আসে কাক এক ঝাঁক
.        করে খুব হাঁক ডাক
কোকিলের কনসার্ট শুনবি তো যাস রে।

চলে দোয়েলের শিস, শালিকের গীত-ও
খঞ্জন মাঝে মাঝে করে যায় নৃত্য।
.        মাছরাঙা আসে যায়,
লয়ে কাঠঠোকরায়,
----চিলেরা ডাকে সব হরষিত চিত্ত।

দল বেঁধে টুনটুনি আসে হেথা চরতে,
বাবুইরা তালগাছে লাগে বাসা গড়তে।
.        ‘বেনেবুড়ি’ মারে ডুব
.        পুণ্যটা করে খুব,
ফিঙে আসে বেছে বেছে শুয়োপোকা ধরতে।

ঝাঁক বেঁধে বনটিয়া, কভু আসে মুনিয়া
বলাকার সারি শেষ হয় নাকো গুনিয়া
.        উড়ে বাজপক্ষী
.        কত যেন লক্ষী !
চঞ্চুর জোরে ভাবে জিনবে সে দুনিয়া।

মাধবীর শাখে বাঁধে মৌমাছি চাক রে
করে মধু গুঞ্জন গুন গুন ডাক রে
.        কভু আসে চন্দনা
.        গেয়ে যায় বন্দনা
টাকসোনা-ডাক শুনে লেগে যায় তাক রে।

অজয়ের ভাঙনেতে করে বাড়ি ভঙ্গ।
তবু নিতি নিতি হেরি নব নব রঙ্গ।
.        চায় না এ কুঞ্জ
.        ছেড়ে যেতে মন যে,
একসাথে কোথা পাবে এত সাধুসঙ্গ ?

.        *************************              
.                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
আমার বাড়ি
কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক
আমরা কৃতজ্ঞ শ্রীমতী ইলোরা রায়ের কাছে যিনি আমাদের এই কবিতাটি পাঠিয়েছেন।
প্রাপ্তি - ৩১.০৭.২০১৭। কবিতাটি আমাদের কাছে চেয়ে পাঠিয়েছিলেন শ্রী সমীর বিশ্বাস।
তাঁর ইমেল
- biswas.baruipur@gmail.com    

বাড়ি আমার ভাঙন ধরা অজয় নদীর বাঁকে,
জল সেখানে সোহাগ-ভরে স্থলকে ঘিরে রাখে।
সামনে ধূসর বেলা,                                   জলচরের মেলা,
সুদূর গ্রামের ঘর দেখা যায় তরুলতার ফাঁকে।

ঠিক দুপুর্ বাতাস লেগে নাচে জলের ঢেউ
আমি দেখি আপন মনে আর দেখে না কেউ।
জেলেরা দেয় বাচ,                                লাফায় বোয়াল মাছ,
নীরব আকাশ মুখর করে শঙ্খচিলে ডাকে।

ভাঙা বাড়ির ভাঙা ঘটে আছড়ে পড়ে জল
মেঠো ফুলের মিঠা বাসে মন করে চঞ্চল।
যত দূরেই চাই,                                    শোভার সীমা নাই---
পল্লীবধু কলসি করে জল লয়ে যায় কাঁখে।

মাধবী আর মালতীতে ঘেরা উঠান মোর,
আমের গাছে কোকিল ডাকে সারাটি দিনভর---
দোয়েল-পাপিয়ায়,                                  গানে কানন ছায়---
চক্র রচে মৌমাছিরা নিত্য ঝাঁকে ঝাঁকে।

.        *************************              
.                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর