কবি কুমুদ রঞ্জন মল্লিকের কবিতা |
পুরাণো চিঠির ফাইল কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক শ্রীজ্যোত্স্নানাথ মল্লিক, শ্রীকৌশাম্বীনাথ মল্লিক ও শ্রীসুধেন্দু মল্লিক সম্পাদিত “কুমুদ কাব্যমঞ্জুষা” কাব্যসংকলন থেকে নেওয়া | ১৯১৯ সালে প্রকাশিত “রজনীগন্ধা” কাব্যগ্রন্থের কবিতা। এটা বিয়ের নিমন্ত্রণের চিঠি মুছে গেছে আঁখরগুলা যত, রঙটি রাঙা তেমনি আছে লেগে অতীত বিয়ের পাক্ চূণারি মত | ২ এ যে বড়ই গরম গোছের চিঠি চেয়েছে কার সাতাশ টাকা বাকি কাট্ ঠোক্ রা কোথায় গেছে উড়ি নীরস শাখায় ঠোকর কটা রাখি | ৩ এখান যে হায় আনন্দেরি লিপি পরীক্ষাতে প্রথম পাশের খবর লাভের চেয়ে আনন্দটাই বেশী কাঁকুর চেয়ে বীজটা তাহার জবর | ৪ এ কি এ যে আদালতের শমন মুড়কি সাথে বোলতা কেন হেরি সাপ গিয়েছে খোলসখানা রাখি ফুলে এ ছুঁচ মিশলো কেমন করি | ৫ এ চিঠিটা লিখেছে বাড়ীর ছেলে ইষ্টাসিনে পাঠিয়ে দিতে গাড়ী ছেলের এখন বহুত ছেলেপুলে ঠাকুরদাদা চিনতে তাঁরে পারি | ৬ এখানা এক ঔষধেরি লিপি আসতেছে এঁক ঔষধালয় হতে কাল করেছে পাঁচটি টাকা ভি পি অনুরোধটা শীঘ্র সেটায় নিতে | ৭ এখানা এক আত্মীয়েরি টিঠি চেয়েছে হায় ত্রিশটি টাকা ধার দেখছি তাহার শীর্ণ হাতের পাতা পাওয়ার কোনো খবর নাহি আর | ৮ কোনটি ছেঁড়া শোকের খবর এটি অতীত ভোলা সুদূর বুকের ব্যথা, ছেলের গলায় সোণার হারের সাথে কেন রে এই বাঘের নখ গাঁথা | . ************************* . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
তৈজসের ইতিহাস কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক শ্রীজ্যোত্স্নানাথ মল্লিক, শ্রীকৌশাম্বীনাথ মল্লিক ও শ্রীসুধেন্দু মল্লিক সম্পাদিত “কুমুদ কাব্যমঞ্জুষা” কাব্যসংকলন থেকে নেওয়া | ১৯১৯ সালে প্রকাশিত “রজনীগন্ধা” কাব্যগ্রন্থের কবিতা। এই থালাখান দাদুর বিয়ের দানের সময় পাওয়া, ওর উপর কর্ত্তা-মায়ের বিশেষ ছিল দাওয়া, পড়লে কারো হাত হ’তে ও, সইত নাকো তাঁর, তোরঙ খুলে তুলতে যেতেন দিনে শতেকবার | ২ গয়াধামের গয়েশ্বরী, বৃন্দাবনের বাটি পয়মন্ত জিনিষ বড়, যায়নি আজও ফাটি ; লক্ষ্মীছাড়া গামলাখানা, ডাল ঢালা হয় যাতে, এসেছিল ভাগ্যহীনা খুড়ী-মায়ের সাথে’ ৩ বাঁটলোটিতে দাদুর মায়ের সাধের পায়স রাঁধা, দুষ্টু রাখাল লুকিয়ে নিয়ে পরকে দিলে বাঁধা, হয় যে বাবার অন্নপ্রাসন ধুম ধামেরি সাথ, এই বগিথাল এতেই বাবা প্রথম খেলেন ভাত | ৪ বোগ্ নোটি ওই --- বেশ যে মনে পড়ছে আজি মোর--- চৌধুরীদের মধ্যমেরি বিয়ের বিলানোর | তৈল ভরা বোগনো আহা মোণ্ডা – ভরা ঠোলা, অনেকদিনের কথাই বটে, যায়না তবু ভোলা | ৫ তুবড়ে-যাওয়া দাগ-ধরা ঐ গঙ্গাজলী ঘড়া মায়ের হাতে পড়লো কুয়োয় টানতে গিয়ে দড়া | তখন তিনি দশ বছরের ন-বসতের কনে, কেঁদেছিলেন কুয়োর ধারে মহাপ্রমাদ গনে | ৬ ছক্ কাটা ওই পানের বাটা ফুলশয্যার দান, বাবার বাবার ঠাকুরমা সে সাজতো ওতেই পান | খাগড়ায়ে ও পানের ডিবে, ময়লা ধূলা ঢাকা, দেখলে চোখে জল যে আসে কাকার স্মৃতি মাখা | ৭ প্রকাণ্ড ঐ পুষ্পপাত্র বার করিতে মানা এই ভিটারই বাস্তুযাগের জন্যে প্রথম আনা | মুখ-আঁটা যে কমণ্ডলু যত্নে দিলাম রেখে, আনেন সেটি জেঠাইমা যে বদরী-নারাণ থেকে | ৮ ঘরের প্রতি তৈজসেতে, রাঙ ঝালেরই ওর লেগেই আছে কতই শত উত্সবের-ই জোড়, কাঁসারী চায় বদলে নিতে আসছে প্রতি মাস গৃহস্থালীর তাম্রলিপি, স্নিগ্ধ ইতিহাস || . ************************* . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
ব্রজদাস কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক শ্রীজ্যোত্স্নানাথ মল্লিক, শ্রীকৌশাম্বীনাথ মল্লিক ও শ্রীসুধেন্দু মল্লিক সম্পাদিত “কুমুদ কাব্যমঞ্জুষা” কাব্যসংকলন থেকে নেওয়া | ১৯২০ সালে প্রকাশিত “নূপুর” কাব্যগ্রন্থের কবিতা। কালাপাহাড়ের কাল অভিযানে আজি ব্রজপুর ধ্বস্ত, দেবতা ফেলিয়া পাণ্ডার দল ছুটিয়া পলায় ত্রস্ত | সারা ব্রজধামে দীন ব্রজদাস মন্দিরে একা করিতেছে বাস, দেবতা সমুখে বসিয়া রয়েছে কুসুমাঞ্জলি হস্ত | ২ দেব মন্দির সুরভিত আজি ভুরু ভুরু ধূপ গন্ধে | প্রভাত আরতি করি ব্রজদাস প্রাণ ভরি পদ বন্দে | ভক্ত আজিকে একিরে বিভল টস্ টস্ করি পড়ে আঁখি জল, তৃষিত ভ্রমর পান করে যেন শ্রীমুখের মকরন্দে | ৩ সাজায়ে সাজায়ে খেদ নাহি মিটে আবার সাজায় ভক্ত শিশুকাল হ’তে রাধারমণের সে যে চির অনুরক্ত হাতের বাঁশিটি করি দেয় বাঁকা হেলাইয়া দেয় ময়ূরের পাখা, বাঞ্ছিত চির চরণে বুলায় করবীপরাগালক্ত | ৪ অঙ্গনে ঐ ঢুকিল সৈন্য করেতে করাল দণ্ড উপাড়ি ফেলিছে তুলসীর মূল করিছে লন্ড ভন্ড | পূজায় মগন ধীর ব্রজদাস বুঝিনে বহে না বহে নিশ্বাস, প্রেম আঁখিনীরে ভাসিয়া যেতেছে পাণ্ডু যুগল গণ্ড | ৫ মন্দির দ্বারে দাঁড়ায়ে পাহাড় হাঁকিয়া বলিলর তূর্ণ বুকেতে তাহার ভীম বিদ্বেষ নয়ন রোষেতে পূর্ণ | চাহিয়া বারেক ব্রজদাস পানে বলিল মির্জ্জা রহ এইখানে পূজাশেষে এই পাষাণ ছবিটা পদাঘাতে ক’রো চূর্ণ | ৬ প্রহরের পর প্রহর কাটিল হয় না যে পূজা ভঙ্গ, সাধক আজিকে লভিয়াছে বুঝি চির আরাধ্য সঙ্গ | চাহিয়া চাহিয়া দেখি সেনাপতি মনে মনে হায় করিল যে নতি, পরাণে তাহার কি ব্যথা জাগিল পুলকিত হল অঙ্গ | ৭ ফিরিয়া আসিল সে কালাপাহাড় সাথে সেই সেনাবর্গ, রোষ কষায়িত নয়ন সাগর করেতে দুলিছে খড়গ। দেখি পুজারিরে স্থির নিশ্চল কঠোর নয়ন হল ছল ছল, বুঝিল ভক্ত জীবন তাহার দেবেরে দিয়েছে অর্ঘ্য। ৮ মির্জ্জার পানে চাহিয়া দেখিল সেও সে সংজ্ঞা শূন্য কালাপাহাড়ের পাষাণ হৃদয় বারেক হইল ক্ষুন্ন। বলে বিচিত্র চিত্র যে হেতা চিনিতে নারিনু কোনটি দেবতা বুঝিতে নারিনু দেবতা নরের কাহার অধিক পুণ্য। ৯ আমি ত জানিনে দেবতা কোথাও রক্ষা ক’রেছে ভক্তে। ভক্ত দেবেরে অমর ক’রেছে আপন বক্ষ রক্তে। এসেছে দেবতা আজি মন্দিরে যেতেছি ফিরিয়া পদ বন্দি রে সাধু মির্জ্জারে চল লয়ে চল শোয়াইয়া হেম তক্তে। . ************************* . সূচীতে . . . মিলনসাগর |