কবি কুমুদ রঞ্জন মল্লিকের কবিতা
*
অগ্রদানীর ছেলে
কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক
শ্রীজ্যোত্স্নানাথ মল্লিক, শ্রীকৌশাম্বীনাথ মল্লিক ও শ্রীসুধেন্দু মল্লিক সম্পাদিত “কুমুদ কাব্যমঞ্জুষা”  
কাব্যসংকলন থেকে নেওয়া | “নূপুর” ( ১৯২০ ) কাব্যগ্রন্থের কবিতা।

চুন-বালি-খসা কঙ্কালসার জঞ্জাল ভরা বাড়ী,
ঘন জঙ্গলে ঘেরা চারিধার, দেখিলে চিনিতে পারি |
সর্বদা তার রুদ্ধ দুয়ার, কেহ নাই মনে হয়—
দেয় ধূম আর ক্ষীণ আলোটুকু বসতির পরিচয়,
বালক পুত্র লয়ে হোতা থাকে কৃপণ অগ্রদানী
পত্নী তাহার দু’বছর আগে ধরা ত্যজিয়াছে জানি |
এমনি পাষাণ যখন তখন চলে যায় কাজ পেলে,
বিজন কুটীরে দশ বছরের ছেলেকে একাকী ফেলে |
স্নিগ্ধকান্তি ছেলেটি তাহার স্নেহ-মমতায় মাখা—
যেন লৌহের স্তম্ভের গায় কনক-কুসুম আঁকা |
পুত্র এমনি পিতার বাধ্য যাবে না বাহিরে আর ---
রহে জীবন্ত মণি-মরকত রুধি’ ভাণ্ডার-দ্বার |


পিতা চলে গেলে একাকী বালক দেখে আনমনে বসি’,
গাছে থলো থলো আমগুলি যেন পড়িবারে চায় খসি’ |
দেখে গাছ ভরে ফলিয়া রয়েছে শ্যাম নারিকেল-কাঁদি,
স্নেহের সলিল তৃষিতের লাগি’ রাখিয়াছে যেন বাঁধি,
অশ্বথ্ব গাছে নব কিশলয়--- অরুনাভ কচিপাতা,
কবে ছায়া দান করিতে পারিবে তারি লাগি’ ব্যকুলতা |
দেখিয়া দেখিয়া ভরে উঠে আহা ছোট বালকের বুক,
ভাবে মনে মনে অজ্ঞাতে যেন—দানের কতই সুখ |
সন্ধ্যায় পিতা ডাকে নাম ধরি, যেমন দুয়ারে আসি’—
ত্বরিতে বালক খুলি দেয় দ্বার মুখেতে ধরে না হাসি |
পরদিন গৃহে রাখি তনয়ের পিতা চলে যায় প্রাতে,
বত্সর যেন সুখস্মৃতি রাখে পুরানো পাঁজির পাতে |


বালক বিকালে চেয়ে চেয়ে দেখে সুনীল আকাশখান,
দেখে সে কেমন মূমূর্ষু রবি করে হিরণ্য দান |
সন্ধ্যায় দেখে ধনী সুধাকর রজতে ডুবায় ধরা,
দেখে নীরদের দানসাগরেতে কতই বিনয় ভরা |
দেখিয়া দেখিয়া কী এক ব্যথায়, ভরে উঠে তার বুক,
ভাবে মনে মনে লওয়া চেয়ে হায় দেওয়ায় বৃহৎ সুখ |
বহুদিন পর কৃপণ জনক মরণ আগত স্মরি,--
শিয়রে কাছে ডাকিয়া তনয়ে বলিল সোহাগ করি,
সত্যই বাছা দানে বহুসুখ--- তব করে আজি তাই—
যুগ সঞ্চিত বিপুল অর্থ আজ আমি দিয়ে যাই |
এত কৃপণতা এত হে কষ্ট সকলি সফল লাগে—
তব চাঁদ মুখ হয় নাকো ম্লান যেন দারিদ্র-দাগে |


পিতার বিয়োগে অমিত অর্থ আসিল যুবার করে,
নিরজনে তারে প্রকৃতি গড়েছে ঘন অনুরাগ ভরে |
সে বছর হল অন্ন-অভাব --- এ সারা বাংলা জুড়ি’---
আহার অভাবে পলে পলে মরে ছেলে মেয়ে বুড়া বুড়ী |
অনশন-ক্ষীণ তনয়ের মুখ চাহিয়া মরিল মাতা,
বড় বড় হায় জমিদার-ঘরে দু’বেলা পড়ে না পাতা |
তখন দয়ালু, স্বভাব দুলাল – অগ্রদানীর ছেলে—
দুহাতে তাহার ভাণ্ডার দিল গরিবের তরে ঢেলে |
খুলি’ দিল শত অন্নসত্র --- প্রচুর পান্থশালা,
আপনি খাইল গরিবের সনে একসাথে পাতি থালা ;
কষ্টার্জিত অর্থ পিতার দীন হীনে দিল বাঁটি’—
চতুর যাহারা বলিল, এ বেটা একেবারে হল মাটি |


শুনি’ সংবাদ নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়.—
চাহিলেন ডাকি’ উপাধি-ভূষণে ভূষিত করিতে তায় |
নিষেধ করিল বিনয়ে যুবক জুড়িয়া যুগল পাণি—
পরের দানেতে আমরা পালিত পতিত অগ্রদানী |
আমরা নিলাম সমাজের দান, জানি তা সবার আগে
সার্থক হবে—আজি যদি তাহা ভুখারীর কাজে লাগে |
আসন হইতে নামিয়া তখন কোলাকুলি করি’ রাজা,
বলেন, জীবন ধন্য আমার ----সার্থক তুমি প্রজা |
চৌদ্দ পুরুষ আগে দান লয়ে পতিত যদিই হ’লে
ব্রাহ্মণ চেয়ে ব্রাহ্মণ তুমি আজি এ দানের ফলে |
আজ হতে তুমি দানীর অগ্র, নহ হে অগ্রদানী—
কপিলের শাপ ঘুচাইলে তুমি প্রেমের বন্যা আনি’ |

.              *************************              
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
বকুলতরু
কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক
শ্রীজ্যোত্স্নানাথ মল্লিক, শ্রীকৌশাম্বীনাথ মল্লিক ও শ্রীসুধেন্দু মল্লিক সম্পাদিত “কুমুদ কাব্যমঞ্জুষা”  
কাব্যসংকলন থেকে নেওয়া | “অজয়” ( ১৯২৭ ) কাব্যগ্রন্থের কবিতা।

এই বকুলতরুটি শ্রীপাট কোগ্রামে লোচনদাসের আখড়ার নিকট অজয় নদের তীরে প্রায় পাঁচ শত বত্সর
অবস্থিতি করিতেছিল  | কোন ভাগ্যবতী তাঁহাকে প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন | অজয়ের সর্বগ্রাসী ভাঙ্গন,
তরুটিকে গ্রাস করিয়াছে | বকুল-তলাটি সমস্ত গ্রামবাসীর মিলন আনন্দ ও বিশ্রামের স্থান ছিল | শাস্ত্র কথা
সংকীর্তন প্রভৃতির জন্য ব্যাবিহৃত হইত  |


পাঁচশো বছর হেতায় ছিলে প্রাচীন বকুলগাছ,
অজয় নদের ভাঙনেতে পড়লে ভেঙে আজ |
কালো ছিলে নিবিড় শ্যামল লোহার মত দৃঢ়
ফুলের রাজা প্রফুল্ল মুখ লাখো পাখীর গৃহ |
কাল ও ছিল সত্র তোমার জমাট মনোহর,
সারা দিবস অতিথ ভ্রমর গুঞ্জন মুখর |
কাল ও ছিল তোমার তলে ছেলে মেয়ের ভিড়,
আজকে নত নদীর জলে অভ্রভেদী শির |
সিদ্ধ তুমি না হও মোদের বৃদ্ধ বকুল গাছ,
বক্ষ উঠে টন্ টনিয়ে চললে তুমি আজ |
তুমি মোদের অক্ষয় বট তুমি বোধিদ্রুম ,
মাতামহের পিতামহ তোমায় নমো মনঃ |
শৈশবেরি গোকুল তুমি স্নেহের ব্রজধাম,
বার্দ্ধক্যেরি প্রভাস তুমি পুণ্য তব নাম |
অক্ষরণের কুরুক্ষেত্র দেখলে হত ভ্রম
রামায়ণের তুমিই মোদের বাল্মীকি আশ্রম |
পুরাণের নৈমিষারণ্য তুমিই ব্যাসাসন –
সংকীর্তনে তুমিই মোদের শ্রীবাস অঙ্গন |
তুমিই মোদের সুহৃদ সখা তুমি গুরুর গুরু |
হোলো তোমার চরণ তলেই ভক্তি জীবন সুরু |


লোচন দাসও তোমার তলে করেছিলেন খেলা
বাদল দিনে নালার জলে ভাসিয়েছিলেন ভেলা |
তোমার ফুলে মালা গেঁথে ছেলে খেলার ছলে
অলক্ষ্যেতে পরিয়েছেন বনমালীর গলে |
তোমার তলে পড়িয়াছে তাঁহার চোখের জল
তুমিই প্রথম শুনিয়াছ চৈতন্য মঙ্গল |
কাছেই তোমার শিবের দেউল তুমি মোদের কাশী
ঘরের কাছেই স্বর্গ মোদের তোমায় ভালবাসি |


শুনিয়াছ যুগের যুগের ছেলেমেয়ের কথা,
উত্সবেরি আনন্দ ও ভাঙ্গা বুকের ব্যথা |
প্রাচীনতম বাসিন্দা যে তুমি গ্রামের বুড়া
একটি তোমার চুল পাকেনি চির শ্যামল চূড়া |
সুদূর থেকে তোমায় দেখে উঠতো ভরি বুক,
তুমিই সবার গৃহস্বামী আদর মাখা মুখ |
আজকে তোমার স্বর্গারাহণ ওগো বনস্পতি |
আজকে গোটা গ্রামের অশৌচ গোটা গ্রামের ক্ষতি
মনে পড়ে তোমার স্নেহ তোমার শীতল ছায়া
মনে পড়ে ফুলের সুবাস, স্নিগ্ধ মধুর হাওয়া |
জমছে মনে হারিয়ে যাওয়া চেনা মুখের ভিড়
প্রিয় জনের বিচ্ছেদেরি যন্ত্রণা নিবিড় |


তুমি গোটা গ্রামের দায়াদ অযুত নাতি, পুতি,
চোখের জলে স্বর্গগামী করি তোমার স্তুতি |
নন্দনেতে ঠাঁই হবে হে কল্পতরুর কাছে,
গ্রামের তরুণ বৃদ্ধ বালক স্বর্গ তোমায় যাচে |
স্বর্গ থেকে বকুলতরু মর্তপানে চেয়ে,
আশীর্ব্বাদী তোমার ফুলে বুকটি দিয়ো ছেয়ে |
মিত্র ও দৌহিত্র তোমার ভুলতে তোমায় নারি,
আমায় করো তোমার প্রেমের উত্তরাধিকারী |

.              *************************              
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
পল্লী-শ্রী
কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক
শ্রীজ্যোত্স্নানাথ মল্লিক, শ্রীকৌশাম্বীনাথ মল্লিক ও শ্রীসুধেন্দু মল্লিক সম্পাদিত “কুমুদ কাব্যমঞ্জুষা”  
কাব্যসংকলন থেকে নেওয়া |  “অজয়” ( ১৯২৭ ) কাব্যগ্রন্থের কবিতা।


মূর্খ গরিব নামহীন মোর মা হয়েই তুই থাকলি মা |
সব দিকে আমি ছোট বলে তুই আগ্ লিয়ে কোলে রাখলি মা |
পাঠাবি কোথায় নাহি সৌরভ তুলিবি কোথায় নাহি গৌরব
পরে নিলে নাতো ঘরে রেখে দিলি তাইত আমারে পাগ্ লী মা |


তোরি আঁচলের খুঁট ধরে যাই, ভরা অজয়ের ঘাট পানে ;
তোরি পাদমূলে দাঁড়াইয়া চাই রামধনু আঁকা মাঠ পানে  |
মন্দিরে তোর সাথে সাথে যাই, পীযুষ প্রসাদ হাত ভরে পাই,
ভগবতী যার সুমুখে তাহার বৃথা ভাগবত পাঠ কেনে ?


দিওনা আমারে দরবারে যেতে দুরু দুরু কাঁপে বক্ষ মা,
আছে শুধু দীন দুর্ব্বল দুখী অক্ষম সাথে সখ্য মা |
জ্ঞানাঞ্জনের শলাকার ভার জলভরা চোখ সবে না আমার,
কাজল-লতার কাজলে তোমার জুড়াও নয়ন, রক্ষ মা |



তুই গড়ে দিস্ পাতার টোপর সোণার কিরীট সেই মা মোর,
তোর আঁচলের মধুর বাতাস আয়াস করে কি পায় চামর !
পারিনে পুঁথির ওলটাতে পাত, দিই শিষ, শ্যামা পাপিয়ার সাথ,
গুণ না থাকুক, গুণ গুণ করি বেড়িয়া ও পদ ওই ভ্রমর |


যেন মা তোমার স্নেহের দীঘিতে কমলের সাথে নাইতে পাই |
যেন মা তোমার বিপিন ভবনেপাপিয়ার সাথে গাইতে পাই |
চন্দন সাথে যেন রোজ রোজ পরশি মা তোর চরণ সরোজ,
যেন মা তোমার চাতকের মত হরির করুণা চাইতে পাই |

.              *************************              
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
গ্রাণ্ডট্রাঙ্ক রোড
কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক
শ্রীজ্যোত্স্নানাথ মল্লিক, শ্রীকৌশাম্বীনাথ মল্লিক ও শ্রীসুধেন্দু মল্লিক সম্পাদিত “কুমুদ
কাব্যমঞ্জুষা”  কাব্যসংকলন থেকে নেওয়া |  “অজয়” ( ১৯২৭ ) কাব্যগ্রন্থের কবিতা।

চলিয়াছ তুমি সড়কের রাজা কলিকাতা হতে পেশবার
সুবিধা পেয়েছ কত নদ নদী নগরীর সাথে মেশবার
.        আঙুর পেস্তা কিসমিস
.        পেতে জিভ করে নিশপিস
ডাকে খাইবার গিরিপথ, ডাকে ডাকিনী এলায়ে কেশভার |

.                                ২
পাকুড় পাথরে চূণার আদরে কাঁকরে কাঁকরে ছয়লাপ,
কোথা কালো কোথা শুভ্র পাংশু কোথা লাল করে জয়লাভ |
.        পথে পথে ছায়া ছত্র
.        হরিণ হরিৎ পত্র |
সিন্ধু বরুণা গঙ্গা যমুনা দর্শনে হরি লয় পাপ |

.                                ৩
কোথাও গো গাড়ী আদার ব্যাপারী জাহাজের খোঁজে চলেছে,
টোঙ্গা এককা পাল্ কী লক্ কা টলছে |
.        ছুটছে অশ্ব দুষ্ট,
.        উষ্ট্রের দল পুষ্ট,
কোথাও মোটর ভাপ্ রা উগারি দাপটে দুনিয়া দলছে |

.                                ৪
সাঁওতাল কুলি কোথাও করিছে আয়োজন আল বাঁধবার,
খর্জ্জুর গাছে রজ্জুতে বাঁধা বংশী ও হাঁড়ি বাঁধবার |
.        কাবুলীরা লাঠি হস্তে
.        চলেছে চাহে না বসতে,
জননীর কোলে ছোট ছেলে ওই তোড়জোড় করে কাঁদবার |

.                                ৫
কোথও নিকানো মাটির ছাদেতে বধুরা কাটিছে চরকা,
রাঙা পাথরের বুরুজের গায়ে মর্মরে গাঁথা ঝরকা |
.        রূপসী কৃষক কন্যা
.        ছুটায় রূপের বন্যা,
কোথাও ঢেকেছে রমণীর রূপ রমণীয় সব বোরখা |

.                                ৬
কোথাও চলেছে ওড়না উড়ায়ে পরি সার্ট সায়া সুক্ তন,
টোপ টুপি আর পাগড়ীর সাথে খোলা শির ভ্রমে ভুক্তন |
.        চলে পল্টন মার্চ্চে
.        পরমায়ু সব বাড়ছে
কোথাও নাঙ্গা সন্ন্যাসী চলে সবকেশী সব লুপ্তম |

.                                ৭
বহুভাষী তুমি কথা কও কভু উর্দ্দু ফারসী বাঙলায়,
হিন্দি পুস্ত সবে ওয়াকিফ্ বলো কে তোমারে সামলায়,
.        সুর যে তোমাকে  হাতড়ায়,
.        ঠুংরি কাজরী দাদ্ রায়
ঘটাও সখ্য খান্দানী সেখ, বাবু, শেঠ, লালা, লাঙলায় |\

.                                ৮
ধর্ম তোমার বিশ্বজনীন পথে পথে তব মন্দির,
নগরে নগরে কত মসজিদ গির্জা ও প্রতিদ্বন্দ্বীর |
.        সমাধির সব গম্বুজ
.        কাল নীরে শ্বেত অম্বুজ
রয়েছে দাঁড়ায়ে, স্বর্গে মর্ত্যে ফন্দি করিছে সন্ধির |

.                                ৯
পথ দেখাইয়া পাণিপথ দিয়া,  ভাঙ গড় কত দিল্লী,
কোথাও তোমার বাজিছে সারঙ, কোথাও ডাকিছে ঝিল্লী |
.        কোথাও মিনার উঠছে,
.        কোথাও বীণা তার টুটছে,
কোথাও উগ্র ব্যাঘ্রের বাসা কোথাও আভীরপল্লী |

.                                ১০
তুমি নিয়ে যাও দুর্বার সেনা কামান অশ্ব হস্তী,
দেশের ফসল নষ্টকরিয়া ছড়ায়ে মৃতের অস্থি |
.        লয়ে যাও দিবারাত্রি—
.        ঝোলা ঝাণ্ডা ও যাত্রী,
সোহাগে কোথাও লোহাকে গলাও দরিয়ায় স্থাপো বস্তি |

.                                ১১
বাঙ্ লা হইতে সঙ্গে নিয়েছ গোবর সর্ষে বাবলায়,
সটান চলেছ দৌড়ে কোথায় ধরিয়া কে তায় সামলায় |
.                রক্ষা সাধু ও শ্রেষ্ঠের
.                ওটা যে নিয়ম কৃষ্ণের
হরি রাখে যারে মারিবে কি তায় বাঘে, সাপে নাহি খাবলায় |

.                                ১২
স্বর্গ না হোক ভু-স্বরগ যেতে সড়ক বানালে শের শা,
সিধা আগাগোড়া, নয় বাঁকাচোরা, কোনোখানে নয় তেরচা |
.                ভারতের দুই প্রান্ত
.                এক করি তবে ক্ষান্ত
গঙ্গার তুমি সঙ্গীই বট, দেখে মনে হয় ঈর্ষা |

.                                ১৩
তুমিই মিশালে আমে আখরোটে, আলুবোখরায় চালতায়,
এক পর্দ্দায় ফুটি সর্দ্দার পুনকো পালং পলতায় |
.         বাঙালী এবং তুর্কে
.         দুর্গাবাড়ী  ও দুর্গে,
জর্দ্দার সাথে সাঁচিপান আর সুর্মার সাথে আলতায় |

.                                ১৪
তুমিই মিশালে শালে মসলিনে হুকা কাছে এল ফরশী |
মিহিদানা কাছে বেদনা বসিল বর্শার কাছে বঁড়শী |
.         হিঙ্ কলায়ের পার্শ্বে,
.         চিনে লওয়া আর ভার সে,
ভুট্টা বালাম বাসমতি সব একদম পাড়াপড়শী |

.                                ১৫
বিলকুল ভাই তকলিফ নাই হরঘড়ি সব ছুটছে,
কোথা থাকে ময়ূরের ঝাঁক, টিয়া টাকসোণা উড়ছে,
.        হরিণ উষর ক্ষেত্রে
.        চাহিছে আকুল নেত্রে
বাঙালীর ছেলে বাংলার লাগি তবু আঁখি মন ঝুরছে |

.              *************************              
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
ভক্তির যুক্তি
কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক
শ্রীজ্যোত্স্নানাথ মল্লিক, শ্রীকৌশাম্বীনাথ মল্লিক ও শ্রীসুধেন্দু মল্লিক সম্পাদিত “কুমুদ
কাব্যমঞ্জুষা”  কাব্যসংকলন থেকে নেওয়া |  “অজয়” ( ১৯২৭ ) কাব্যগ্রন্থের কবিতা।


শুভ ফাল্গুনে দেখা হল মোর এক কৃষকের সাথে
পুলকে দেখিছে ক্ষেতের ফসল হুঁকাটি লইয়া হাতে |
দেখিয়া আমারে নোয়াইয়া মাথা কহিল ঠাকুর শোনো—
তুমি পণ্ডিত, আমি তো মুর্খ, জ্ঞান নাই মোর কোনো |
পাড়ায় আজিকে তর্ক হয়েছে একটা বিষয় নিয়ে,---
এই দুনিয়ার মালিক যে-জন, পুরুষ বটে কি মেয়ে ?
ধর্মরাজের দেয়াশী মহেশ বলিয়াছে জটা নাড়ি
ধরার কর্ত্তা জগদীশ্বর হইতে পারে কি নারী ?
আমি তো অবাক ! প্রসব করেছে এইযে দুনিয়াখানা
শ্যামা মা আমার, একথা জানেনা, সবারি তো আছে জানা |
জগৎ-জননী মা না হত যদি দোপাটী পেত কি ফোঁটা ,
গোলাপ পেত কী রাঙা চেলি তার, কদলী গরদ গোটা ?
ময়ূর পেত কি ময়ূরকন্ঠি , রেশমী  পোষাক টিয়া,
ঝুঁটি কোথা পেত ছোট বুলবুলি বাঁধা লাল ফিতা দিয়া ?
ছেলে মেয়েদের খেতে দিতে পারে, পারে সে সোহাগ দিতে
টিপ্ কাজলেতে সাজাইতে পারে, দেখিনি তো হেন পিতে |
সুমুখেতে দেখ দুষ্টু বোলতা সোনালী ঘুন্সী পরা,
বকের কামিজে কিবা ইস্তিরি যায়না ময়লা করা |
ডোবার যে পানা তাহারও পোষাক তাহাতেও ফুল-কাটা,
ওর ও গায়ে দেখ সবুজ দোলাই ওই যে খেজুর কাঁটা |
ভূতলে গগনে গিরি নদী বনে দেখুক চাহিয়া কেহ
চারিদিক দিয়া গড়ায়ে পড়িছে মায়ের গভীর স্নেহ |
তুমিই, ঠাকুর, কর মীমাংসা, বলিল সে হাসি মুখে,
আমি তার সেই কর্কশ কর টানিয়া নিলাম বুকে |
বলিলাম জেনো ধর্ম ক্ষেত্র এই সে তোমার মাঠ,
নীরবে হেথায় তুমিই করেছ বুকের চণ্ডীপাঠ |
তুমি ভক্তির গরদ পরেছ, তোমারে প্রণাম কোটি,
পাতা খেয়ে খেয়ে ভোঁতা মুখ মোর এখনো বাঁধছি গুটি |

.              *************************              
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
অজয়ের চর
কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক
শ্রীজ্যোত্স্নানাথ মল্লিক, শ্রীকৌশাম্বীনাথ মল্লিক ও শ্রীসুধেন্দু মল্লিক সম্পাদিত “কুমুদ
কাব্যমঞ্জুষা”  কাব্যসংকলন থেকে নেওয়া | “স্বর্ণসন্ধ্যা” ( ১৯৪৮ ) কাব্যগ্রন্থের কবিতা।


আমি বসে দেখি অজয় নদীর চর,
নব নব রূপ ধরে সে নিরন্তর |
.             দূরে বহে স্রোত রজত রেখার মত
.             শত জলচর কলরব করে কত |
কাশবনে তার যত চাতকের ঘর |

সোনালী ঊষার আগে তারে দিনমণি
করে ‘কোলার’-এর যেন স্বর্ণের খনি |
.              ক্ষণেক পরেই শুভ্র রবির তেজে—
.              ‘গোলকুণ্ডার’ হীরক আকর সে যে,
জগৎ শেঠের বাদশাহা বন্দর |

বৈকালে তার বুক দিয়া সারি সারি
কুম্ভ লইয়া আসে যায় কত নারী |
.               তখন ও বেলা অপূর্ব্ব মনোলোভা,
.               ধরে এক নব কুম্ভমেলার শোভা,
ছায়া ও আলোর হরিহর-ছত্তর |

ভূর্জ্জপত্র সম ওরে কভু দেখি
অচেনা আঁখরে কে গেছে কাব্য লেখি |
.                হেরি কৌতুকে উল্লাসে বারবার
.                হক এলোমেলো তবুও চমত্কার |
খেয়ালী কবির ছড়ানো এ দপ্তর |

অপরূপ হয় সে যে মাঘী পূর্ণিমায়
ধূলায় গঠিত দেহ তার ঝরে যায় |
.              ভালে শশী তার, পুণ্য শুভ্র দেহ
.              ভুল করিবে না যদি শিব ভাবে কেহ ---
মুক্ত আত্মা অনিন্দ্য সুন্দর |

অজয়ের চর ভুলায় আমার মন—
দর্শনীয়ের পাই সেথা দরশন |
.               তীর্থের ফল সেই দেয় মোরে আমি,
.               আমি ত তারেই কন্যাকুমারী জানি
সেই মোর সেতুবন্ধ রামেশ্বর |

.              *************************              
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
দাবী
কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক
শ্রীজ্যোত্স্নানাথ মল্লিক, শ্রীকৌশাম্বীনাথ মল্লিক ও শ্রীসুধেন্দু মল্লিক সম্পাদিত “কুমুদ কাব্যমঞ্জুষা”  
কাব্যসংকলন থেকে নেওয়া |  “অজয়” ( ১৯২৭ ) কাব্যগ্রন্থের কবিতা।


টার্কী কি টাসখাণ্ড টোকিয়ো কি মস্কো
কেনেডা কি কেন্ টাকী যেথা হ’ক বাস গো |
হ’ক বেশ হ’ক দেশ আহারাদি ভিন্ন,
একেবারে মুছে যা’ক স্বজাতির চিহ্ন,
যে ভাষায় কথা কয়, সেখানেই রয় সে
হিন্দু সে হিন্দু আর কিছু নয় সে |


অমৃতের অধিকার জন্মের সঙ্গে
সূর্য্যের রশ্মি সে বিম্বিত রঙ্গে,
চরণে কি শিরে র’ক হক সে বিবর্ণ
সনাতন ছাপ মারা সে যে সেই স্বর্ণ |
জন্মের অধিকার জোরে পুনঃ লয় সে
হিন্দু সে হিন্দু আর কিছু নয় সে |


প্রলোভনে ভয়ে যদি ত্যজে নিজ ধর্ম
অনুতাপে পরে যদি বিঁধে তার মর্ম |
অনাচার করি যদি পরে হয় ক্ষুণ্ণ,
পুনঃ ফিরে আসা যদি ভাবে মনে পুণ্য
করি হরি নাম করে সভ পাপ ক্ষয় সে
হিন্দু সে হিন্দু আর কিছু নয় সে


যে ডোবায় ডুব দিক সে যে রাজহংস
শুভ্রতা কোন মতে হবে নাক ধ্বংস |
যেই দিকে ছুটে যায় বর্ষার জল গো
গঙ্গার বুকে এলে পূত নির্মল গো |
অভয়ের বাণী স্মরি সব ব্যথা সয় সে
হিন্দু সে হিন্দু আর কিছু নয় সে |


যে বনেই থাক আর যে নামেই ডাকবে,
চন্দন চিরদিন চন্দন থাকবে |
কুর্ত্তা কামিজ কোটে খেদ নাহি বিন্দু
যে বাসেই ঢাকা থাক বুক তার হিন্দু |
ডাক নামে ডাকিলেই শুনি তন্ময় সে
হিন্দু সে হিন্দু আর কিছু নয় সে |


শ্মশানেতে শ্যামা তার গৃহে তার লক্ষ্মী
আপদে বিপদে তার নারায়ণ রক্ষী |
বাণী তার জিহ্বার বুকে তার স্বর্গ
প্রাণ কাঁদে ইহাদিকে করিতে যে পর গো |
শিরে সে হিন্দু আর কিছু নয় সে |

.              *************************              
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
কালিদাস
কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক
শ্রীজ্যোত্স্নানাথ মল্লিক, শ্রীকৌশাম্বীনাথ মল্লিক ও শ্রীসুধেন্দু মল্লিক সম্পাদিত “কুমুদ
কাব্যমঞ্জুষা”  কাব্যসংকলন থেকে নেওয়া |  “স্বর্ণসন্ধ্যা” ( ১৯৪৮ ) কাব্যগ্রন্থের কবিতা।


উজ্জয়িনীর রঙ্গমঞ্চে – নবরত্নের সভাতে,
রাজা বিক্রম বিষণ্ণ মন বসিয়া আছেন প্রভাতে |
হয়ে গেছে কাল, শকুম্তলার সর্ব প্রথম অভিনয়,
নট-নটী দল বিদায় মাগিছে – প্রণতি জানায়ে সবিনয় |
কি সুধার পরিবেশন করেছে – সে কি আদর্শ চারুতার,
দিকে দিকে ছোটে যশসৌরভ সেই অপূর্ব্ব বারতার |
তন্ময় আজ গোটা রাজধানী – একই কথা সব ভবনে,
‘মৃদু মৃগ দেহে মেরোনাক শর’--- এখনো পশিছে শ্রবণে |

শকুন্তলার বিরহে যেমন অবসাদলীন তপোবন,
বিশাল নগরী তেমনি হয়েছে – শিথিল সবার দেহ মন |
বলিলেন রাজা --- হে কবি তোমার প্রতিভা দিয়েছে যে আভাষ
সেই যে যুগের শ্রেষ্ঠ কীর্ত্তি, সেই ত মোদের ইতিহাস |
যা কিছু রম্য – যাহা সুমধুর – তুমি রেখে গেলে কুড়ায়ে
কালভাণ্ডারে তব অবদান—দানেতে যাবে না ফুরায়ে |
শত সহস্র বরষ পরেও ওই সুধারস গড়াবে,
জন্মান্তর সৌর্হাদ্য কি ক্ষণেকের তরে স্মরাবে ?
বনজ্যোত্স্নার কুসুমোদগম, মৃদুগুঞ্জন ভ্রমরের,
‘হংসপদী’র গীতলহরী ভোগ্য করিলে অমরের |
তরু-আলবালে জল দেয় বালা--- মৃগ করে কার পথরোধ
তাদেরও চিত্র মধুর করেছে নিবিড় তোমার রসবোধ |
মোদক-খণ্ড-লোভী মাধব্য --- মোর কঞ্চুকী, সারথি,
অনন্ত প্রাণ লভিয়া আজিকে হেরিছে তোমার আরতি |
পরভৃতা তব শুনিয়াছে শ্লেষ --- আতপত্র ও হাসিছে
মূক ও মৌন তোমার পরশে মুখর হইয়া আসিছে |

সে দিনের সেই উত্সব প্রাতে দেখিনু দাঁড়ায়ে দুজনায়
একদিকে উঠে রাঙা হয়ে রবি--- আন দিকে শশী ডুবে যায়
লোক ভাগ্যের ব্যসন উদয়ে কি ছবি ফুটালে তুলিতে |
অতুলন তব প্রকাশভঙ্গী কিছু যে দেবে না ভুলিতে |
সিপ্রা অনিলে কি মন্ত্র দিলে ? মূর্ত্তি রচিলে কি রসের
মোদের ক্ষণিক দুখ সুখ হল—আনন্দ চিরদিবসের |
অতিসন্ধানী, কঠিন বড়ই তোমার নিকট করা বাস
মরমের ব্যথা, সরমের কথা, কিছুই রাখনি অপ্রকাশ |

আকাশঘেরা ও ইন্দ্রজালেতে সকলি ধরেছ যাদুকর
তত্ত্ব খুঁজিতে মোরা হত হই—কৃতী ত তুমিই মধুকর |
আজিকার আমি প্রবল মালিক কেহ নই আমি কালিকার
জীর্ণতুচ্ছ লৌহতন্ত্ত নবরত্নের মালিকার |
হে মহামানব চিনেও চেনেনি হয় ত করেছি কুভাষণ---
কাল-কালিমার অনেক ঊর্দ্ধে উজ্জ্বল তব সুখাসন |
অনন্ত পথে উট জয়রথে কত করিয়াছি পরিহাস,
তুমি যে আমার --- এই গৌরব – আমরা তোমার, কালিদাস |

হে কবি এ যুগ ধন্য করিলে --- সজীব করিলে আঁকিয়া,
মহাকালভালে অমৃতক্ষরা শশিকলা গেলে রাখিয়া |
রাজ্য ও রাজা মিলাইয়া যাবে--- কালসাগরেতে পাবে লয়
তুমি আমাদের শরণ সুহৃদ, তুমি আমাদের পরিচয় |
বিনীত বেশেতে যেতে হবে কবি পরাইয়া দাও তব চীর
অকূলের কূলে দেখাইয়া দাও কোথা আশ্রম মরীচির |
বন্ধুর দেওয়া বিজয় তিলক মুছ না হে কবি মুছ না
আসে অনাগত গুরু গৌরব --- আমি করি তার সুচনা |

.              *************************              
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
মায়ের দোষে
কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক
শ্রীজ্যোত্স্নানাথ মল্লিক, শ্রীকৌশাম্বীনাথ মল্লিক ও শ্রীসুধেন্দু মল্লিক সম্পাদিত “কুমুদ
কাব্যমঞ্জুষা”  কাব্যসংকলন থেকে নেওয়া |  “স্বর্ণসন্ধ্যা” ( ১৯৪৮ ) কাব্যগ্রন্থের কবিতা।


খেপা মায়ের রাজ্য এটা নাইকো তাতে সন্দেহ,
পাগলামি এর হাওয়ায় জলে রূপ রসে আর গন্ধেও |
.         সাগর আছে সদাই মেতে—
.         হয় না দেরী প্রমাণ পেতে,
বৃষ্টি মেঘে বিদ্যুতেতে রৌদ্র মেঘমন্দ্রেও |

ঘূর্ণিপাকে ঝঞ্ঝা আসে বুঝতে পারি ভাবটা কি ?
চূর্ণ করে ডুবিয়ে ভেঙ্গে বিশেষ উহার লাভটা কি ?
আগুন ছড়ায় ঐ যে গিরি
.          বেশ ত ছিল শান্ত ধীরই,
খে্ প্ লো কেন ? থাকত না তো কারুই ভাল মন্দেও |

যতই দেখি ততই ভাবি যাই মরে যাই লজ্জাতে,
পাগলী মায়ের দোষ যে সবার অস্থি এবং মজ্জাতে |
.            সাধক ভাবুক প্রেমিক কবি,
.            কেউ সোজা নয় পাগল সবাই,
ঘোর ক্ষেপামীর ভূত চাপে যে দিগ্বিজয়ীর স্কন্ধেও |

ঘোর লেগেছে গ্রহ তারায় ধূমকেতু ওই দৌড়িছে,
ডুবছে জলে কেবল কেন সুধাও না পানকৌড়িকে |
.             গাছপালা সব কি হিল্লোলে
.             বিরামবিহীন সবাই দোলে ?
উন্মাদনা ছাপিয়ে পড়ে বাঁশের বাঁশীর রন্ধ্রেও |

শিখীর হঠাৎ নৃত্য কেন ?  কিসের আমোদ টুনটুনির ?
চোখ বুঁজে রয় পেচক কেন সহি বেদন গুমটুনির ?
.          একঘেয়ে হায় নিত্য শুনি,
.          এই যে বুকের ধুকধুকানি,
পাগলামিরই পাই পরিচয় উহার গতি  ছন্দেও |

জোয়ার ভাঁটায় ও ঝোঁক কিসের অমায় এবংপুর্ণিমায়,
মেঘমালা সব ছুটছে কেন চক্রবালের দূর সীমায় ?
.             কল্যাণ  এবং দেশের মাঝে,
.             হঠাৎ কেন দীপক বাজে ?
বীণার তারে অঙ্গুলি তাঁর দেখতে যে পায় অন্ধেও |

.              *************************              
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
অভাবের আনন্দ
কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক
শ্রীজ্যোত্স্নানাথ মল্লিক, শ্রীকৌশাম্বীনাথ মল্লিক ও শ্রীসুধেন্দু মল্লিক সম্পাদিত “কুমুদ
কাব্যমঞ্জুষা”  কাব্যসংকলন থেকে নেওয়া |  “স্বর্ণসন্ধ্যা” ( ১৯৪৮ ) কাব্যগ্রন্থের কবিতা।


দালান বাড়ী নয়কো মোদের আছে সবার জানা তো,
কিন্তু মাটির আঙ্গিনাতে ‘এলুন’ বড়ই মানাতো |
ছিলনাক হার ত সোনার কোথায় পাব আমরা তা ?
হারকে দিত হার মানিয়ে মোদের গলার শ্যামলতা |
অভাব ছিল, অভাব ছিল বলছে তারে কে মন্দ ?
কিন্তু তাহার সঙ্গে ছিল স্বভাবজাত আনন্দ |
কারু ছিল ময়না টিয়া পায়রা ঝাঁকে ঝাঁকেতে,
মোদের কোকিল মাৎ করিত কিন্তু সবার ডাকেতে |
মোদের বাড়ীর ফলন্ত জাম ভোমরা সম কালো সে,
মিষ্ট যেমন, পুষ্ট তেমন, পীচের চেয়ে ভাল সে |
অভাব ছিল, অভাব ছিল বলছে তারে কে মন্দ ?
কিন্ত তাহার সঙ্গে ছিল স্বভাবজাত আনন্দ |
পিপীলিকার মতন অভাব করতো বটে বিব্রত,
দংশন তার ছিল নাক মোটেই এমন তীব্র তো ?
অভাব সাথে থাকতো তখন উত্সাহ আর স্ফূর্ত্তি যে |
ভাঙা বুকের আট্ চালাতে লক্ষ্মীদেবীর মূর্ত্তি যে |
গরুড় তখন উঠতো উধাও ভাণ্ড সুধার স্পর্শিতে
রুই মাছ এসে ঠোকর দিত পুঁটী মাছের বড়সীতে |
অভাবকে হায় বিশ্রী এমন কুশ্রী এমন করলে কে ?
কার্ত্তিকের সে মযূর ভেঙে এ কাল-পেঁচা গড়লে কে ?

.              *************************              
.                                                                                 
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*