কবি দীনেশচন্দ্র সেন রায়বাহাদুরের কবিতা |
পূজার কুসুম কবি দীনেশচন্দ্র সেন রায়বাহাদুর কবির ১৫ বছর বয়সে লেখা, কলকাতা থেকে প্রকাশিত, অক্ষয়চন্দ্র সরকার সম্পাদিত “নবজীবন” পত্রিকার মাঘ ১২৯১ বঙ্গাব্দ সংখ্যায় (জানুয়ারী ১৮৮৫ খৃষ্টাব্দ) এই “পূজার কুসুম” কবিতাটি ছাপা হয়। এই কবিতাটির উল্লেখ রয়েছে কবির আত্মজীবনী “ঘরের কথা ও যুগসাহিত্য” গ্রন্থে। (বঙ্গের বিধবা) অপঙ্কিল ফুলরাশি, স্নিগ্ধোজ্জ্বল মুখে হাসি, কেমন মধুর শোভে একাকী বিজনে, মানব অস্পৃষ্ট পূত সৌন্দর্য্য কিরণে। গরিমা মাধুরী ছায়া, উজলিত শুভ্রকায়া, চন্দ্রিকা হাসিয়া তাহে সুগন্ধ বিতরে, হাসিছে অতুল রূপ আপনার ভরে। মধুর সুন্দর বাসে, বল্লরী পল্লব পাশে, দেখ দেখি ফুল্ল ফুল ললনার মুখ, অকাতরে শোভা করে, নাহি চায় সুখ। কেনরে মানব! ফুল ফুটিতে না দিবে? কোমল কোরক তুলে, খেলিবে রে ঐ ফুলে, আনি অকোমল করে কমল ছিঁড়িবে? স্বর্গশোভা পাপস্পর্শে পঙ্কিল করিবে? ঐ সাদা ফুল বনে শোভিছে সুন্দর, দূরেতে বিহঙ্গ ডাকে, একা ফুল ফুটে থাকে, ছড়ায়ে শিশির পড়ে মুখের উপর, বিজন বিপিনে ফুল হাসিছে নিথর। চপল লাবণ্য নাই, আঁখি অনিমিখ তাই, শাদা ফুল শাদা রূপে কেমন শোভিছে, একাকী হাসিছে ফুল একাকী খেলিছে। ওহে নর! তোমার ও অঙ্গুলি পীড়নে, ছিঁড় না সাধের ফুল, ভূতলে অসমতুল, একা খেলে একা হেসে থাকুক বিজনে, ঢালিও না পঙ্কিলতা পবিত্র জীবনে। দেবতার উপহার ও ফুলটি বনে, সকলই লুটিলি তোরা, দুকুল কুসুমে পোরা, ঐটি রেখেছি শুধু দেবতা পূজনে, দেবের দোহাই ফুল ছিঁড়না কাননে। শোভে না কি কমলিনী শৈবার ভূষণ, না থাকিলে অলঙ্কার, মণি বিজড়িত হার, স্বভাবের বেশভূষা নহে কি মোহন? চয় না স্বভাব-রূপ শিল্প আভরণ। অতুল লাবণ্য তায় নাহি অলঙ্কার, আলু থালু কৃষ্ণ কেশ, মধুর পবিত্র বেশ, চম্পকের তীব্র গন্ধ নাহিক উহার, বন মল্লিকার বাস বিমল সঞ্চার। বহুদিন সুপবিত্র ভারতেতিহাসে, ছোঁয় নাই কোন নর, একা একা নিরন্তর, শোভিয়াছে ঐ ফুল ভকতি-বিকাশে পূজার কুসুম ওটি দেবতা সকাশে। ডাকিছে দেবের প্রেম স্বভাবের বেশে, চারি দিকে মুখ ছেয়ে, পড়িছে অলক বেয়ে, ডাকিছে দেবের দয়া প্রেমের আবেশে, ছিঁড় না ভারত-ফুল বিলাতী সাহসে। একাকিনী থাকে বালা তাকায়ে গগনে, চন্দ্রিকা চাঁদনি মেলা, তারকা করিছে খেলা, ভাসিছে সুনীল-পট সোণার কিরণে একাকিনী দেখে বালা মুগধ নয়নে। সে নয়নে ভক্তি ভরা, বিভোর আনন্দে, নয়নে গগনে মিল সুললিত ছন্দে, জলভরা ছল ছল নোয়ায় সে আঁখি, চরণে শরণ লয় ভগবানে ডাকি। নিচল নিথর ভাব, নিতান্ত নিঝুম, স্বর্গের স্বপন তার, স্বর্গে মর্ত্ত্যে একাধার, তিষ্ঠ, তিষ্ঠ, ভাঙ্গায়ো না তার ঐ ঘুম, উত্সর্গ করা ওটি পূজার কুসুম। . **************** . সূচীতে . . . মিলনসাগর |