গল্পকার কবি প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের কবিতা
*
চির-নব
কবি প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়
জ্ঞানদানন্দিনী দেবী / রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত, “ভারতী ও বালক” পত্রিকার কার্ত্তিক
১২৯৭ (নভেম্বর ১৮৯০) সংখ্যায় প্রকাশিত। এই কবিতাটিই কবি প্রভাতকুমার  
মুখোপাধ্যায়ের প্রথম প্রকাশিত কবিতা। কবির তখন মাত্র ১৭বছর বয়স।

.        (১)
নিতিই ভেরের বেলা
কুহরে পিক কুল,
পবন খেলা করে
লইয়া ফোটা ফুল।

.        (২)
ক্রমশঃ ধরা খানি
সজীব হয়ে উঠে,
যে যার কায পানে
'সকলে যায় ছুটে।

.        (৩)
লোহিত রঙ মাখা
যে দিকে নভঃ খানি,
সে দিকে চেয়ে থাকি,
উঠিবে দিনমণি।

.        (৪)
হেরিয়া সেই শোভা
মোহিত হ’য়ে থাকি,
উথলি উঠে হিয়া,
ভরিয়া যায়া আঁখি।

.        (৫)
নিতিই সাঁঝের্-বেলা
পবন বহে ধীরে,
সরসী-হৃদে তোলে
শতটি লহরীরে।

.        (৬)
বিষাদে দিনমণি
ক্রমশঃ লাল লাল,
সরোজি কাঁদে বসি
রাঙিয়ে দুটি গাল।

.        (৭)
গাভীরা মাঠে থেকে
'আবাসে আসে ফিরে।
কৃষক তার পাছে
লাঙল লয়ে শিরে।

.        (৮)
পাখীরা গাছে বসে
পূরবী গেয়ে গেয়ে,
ঘুমায়ে পড়ে ত্বরা
মাথাটি নীড়ে থুয়ে।

.        (৯)
সোণার চাঁদ খানি
আকাশে হাসে আসি।
সোহাগে ফুটে উঠে
বাগানে ফুল-রাশি।

.        (১০)
জোছনা, সরলতা
মাথিয়া মুখ ময়,
আমোদে ছেলে মেয়ে
“আয়রে চাঁদ” কয়।

.        (১১)
হেরিয়া সেই শোভা।
মোহিত হ’য়ে থাকি,
উথলি উঠে হিয়া
ভরিয়া যায়া আঁখি।

.        (১২)
গভীর নিশাকালে
কখনো জেগে উঠে,
হেরিতে চাঁদিমারে,
বাহিরে যাই ছুটে।

.        (১৩)
চাঁদের ক্ষীণ আলো
ধরণী গায়ে মাখা,
নিখিল চরাচর
ঘুমের কোলে রাখা।

.        (১৪)
কখনো দু একটি
মেঘেরা ছুটে এসে
নাচিয়া চলে যায়
চাঁদের গায়ে ঘেঁসে।

.        (১৫)
হেরিয়া সেই শোভা
মোহিত হয়ে থাকি,
উথলি উঠে হিয়া,
ভরিয়া যায় আঁখি।

.        (১৬)
গভীর নিশাকালে,
প্রভাতে, দিবাভাগে,
নিতি যা দেখি, শুনি,
নিতি তা ভাল লাগে।

.        (১৭)
প্রকৃতি প্রতিদিন
গাহেন এক(ই) গান,
নিয়ত সেই গান,
তবুও ভরে প্রাণ।

.        (১৮)
প্রকৃতি, এই গান,
শিখিল কাছে যাঁর,
তাঁহার পায়ে কবি
প্রণমে বার বার।

.      ****************                          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ফুলের কথা
কবি প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়
জ্ঞানদানন্দিনী দেবী / রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত,  “ভারতী ও বালক” পত্রিকার মাঘ ১২৯৭
(ফেব্রুয়ারী ১৮৯১) সংখ্যায় প্রকাশিত।

মধুর-প্রভাতে মেলিয়া নয়ন,
চাহিনু চারিটি পাশ,
আমারি মতন অযুত ফুলেরা
ফেলিছে সুরভি-শ্বাস।
কেহ বা ফুটেছে, অপর কেহ বা
একটু ফুটিতে বাকী---
মলয় বলিছে “কুসুম বালিকা,
এখনো ফুটিবে না কি?”
দেখিতে দেখিতে লোহিত-পূরবে
আসিল লোহিত ভানু,
হাসিয়া উঠিল ধরণী-হৃদয়ে
প্রতি এক পরমাণু।
সেই খণ থেকে, আপনার মনে
হাসিয়া আকুল আমি---
একটি সুখের ভাবনা ভাবিয়া
কাটাই দিবস যামি।
এই ধরাতলে ক্ষণিক-জীবনে
আর কিবা কাজ আছে?
হাসির, ভাসিব জীবন ভরিয়া,
আর কিবা সুখ আছে?
প্রভাত-জীবন অতীত হ’য়েছে
এখনো তেমনি হাসি,
বারেকের তরে বিরক্ত করেনি
একটি ঝটিকা আসি।
যে ক্ষণে আসিয়া অচেনা-প্রেমিক,
হৃদয়ের রাজা মোর,
মৃদুল-পরশে ভাঙিয়া দিবেন
ফুলের স্বপন-ঘোর,
বাসনার ধন নিকটে পাইয়া
হেথা না থাকিব আর,
তখনি আমার কুসুম-হদয়
মিশাব চরণে তাঁর।
জানি না, মানব, কেন তুমি ভাব
জীবন পরীক্ষা-ময়,
আমার মতন হাসিয়া হাসিয়া
ভাবিতে পারনা তায়?

.                           ****************                          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ব্যাপ্তি
কবি প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়
হিরন্ময়ী দেবী ও সরলা দেবী সম্পাদিত, “ভারতী” পত্রিকার বৈশাখ ১৩০৪ (মে ১৮৯৭)
সংখ্যায় প্রকাশিত।

যখনি দেখিতে পাই পবিত্র কোমল
প্রণয়ের চিত্র কোনও কবিবর্ণনার
ফুটিয়া উঠিছে ধীরে, অমনি আমার
চিত্তে উছলিয়া উঠে আগ্রহ প্রবল।
মনে হয় নায়ক যে, সে আমি আপনি ;
আমারি সে প্রিয়তমা আপনি নায়িকা ;
---গ্রাসে বুঝি আমাদেরি, শত বিভীষিকা ;
হাসে বুঝি, আমাদেরি মিলনরজনী।
তা হলে ত একমাত্র আমরা দুজনে
মানবের কাব্যরাজ্যে রয়েছি ভরিয়া,
বাল্মীকির দিন হতে প্রচার করিয়া
মহাশুভ প্রেমনীতি অশেষ যতনে।
উন্মাদিয়া লক্ষকোটি কবির হৃদয়
করিয়াছি লক্ষকোটি প্রেম-অভিনয়!

.             ****************                          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
কাব্যবিজ্ঞান
চন্দ্রের ইতিবৃত্ত
কবি প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়
হিরন্ময়ী দেবী ও সরলা দেবী সম্পাদিত, “ভারতী” পত্রিকার শ্রাবণ ১৩০৪ (অগাস্ট ১৮৯৭) সংখ্যায় প্রকাশিত
। কবিতাটি “যথা দৃষ্টং তথা টাইপং” করা হয়েছে!

নূতন নূতন যবে
বিশ্বরাজা সৃষ্ট হয়েছিল,
একদিন সে রাজ্যের মন্ত্রীবর আসি,
বিশ্বের রাজারে নিবেদিলঃ---
“রজনীতে চন্দ্র কেন ওঠে?
আলোকের কিবা প্রয়োজন?
দিবসের পরিশ্রম যথেষ্ট নহে কি?
রজনী ত বিশ্রাম কারণ।
“আলোকেরই প্রয়োজন যদি,
এরও সর্ষপ 'আদি জন্মিবে প্রচুর ৷
মানব, উদ্যমশীল,---পারিবে না তারা
এক্ষুদ্র অভাবটুকু করিবারে দূর?
“রাজনীতি-বিশারদ মহারাজা তুমি,
কেন তব অপব্যয় এত?
আমি বলি পরামর্শ, অনর্থক উহা,
চন্দ্রটারে কর পদচ্যুত।”
মন্ত্রীর শুনিয়া কথা,
ভগবান চন্দ্রমারে দিলেন বিদায়।
নিশি নিশি অমাবস্যা কতধুগ ধরি
রহিল ধরায়।
কিছুই আপত্তি কেহ কভু না করিল ;
অবশেষে, প্রণয়ী দম্পতি,
একদিন হাসি হাসি আসি,
বিভুপদে করিল প্রণতি।

ভগবানে বলিয়া কহিয়া,
অনেক করিয়া অনুনয়,
অভিমত করিল তাঁহার ;---
আকাশেতে আবার হইল চন্দ্রোদয়।

চন্দ্র ত গিয়াইছিল ;
প্রণয়ীর উদযোগেতে হইল আবার।
সে অবধি প্রণয়ীরই সম্পত্তি ওখানা ;
চন্দ্রটাতে তাহাদেরি পূর্ণ অধিকার।

.             ****************             
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
কাব্যবিজ্ঞান
বৈজ্ঞানিক গবেষণা
কবি প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়
হিরন্ময়ী দেবী ও সরলা দেবী সম্পাদিত, “ভারতী” পত্রিকার শ্রাবণ ১৩০৪ (অগাস্ট ১৮৯৭) সংখ্যায়
প্রকাশিত।

পদার্থ বিজ্ঞানে এত উন্নতি হইল ;---
তাড়িত ছুটিয়া
ধরা প্রদক্ষিণ করি একাদশ বার
নিমেষেই আসিছে ফিরিয়া ;
প্রণয় বিজ্ঞানে তবে কেন না হইবে?
---আমরা করেছি আবিষ্কার ;
চুম্বনের বিনিময় বিরহী-প্রণয়ী
স্বচ্ছন্দে করিবে এইবার!

পুর্ণিমার মধ্যরাত্রে ছাদের উপরে উঠি,
গ্রণয়ী বা প্রণয়িনী আছেন যেখানে,
মান চিত্রে সেই গ্রাম, নগর অথবা পল্লী
যে দিকে অঙ্কিত, মুখ ফিরি তার পানে ;
তিনবার প্রিয়নাম মৃদু উচ্চারণ করি
একটি চুম্বন দিবে বাতাসে ছাড়িয়া।

.             ****************             
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
সে আমার
কবি প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়
হিরন্ময়ী দেবী ও সরলা দেবী সম্পাদিত, “ভারতী” পত্রিকার ভাদ্র ১৩০৪ (সেপ্টেম্বর ১৮৯৭) সংখ্যায়
প্রকাশিত।

শুধু রজনীর নহে সে আমার,
সে আমার সারা দিবসের।
শুধু বসন্তের নহে সে আমার,
সে আমার সারা বরষের।
কেবল সুখের নহে সে আমার,
সুখের দুঃখের সমানে।
কেবল নহে সে কণ্ঠের সঙ্গীত,
সে-ই অশ্রধারা নয়ানে।
শুধু যৌবনের নহে সে আমার,
সে আমার সারা জনমের।
শুধু এ জন্মের নহে সে আমার,
সে আমার চিরজীবনের।
এমন পৃথিবী এ সৌরজগতে
রহিয়াছে আরও কতখান ;
সে সকল যদি হয় চেতনের
ক্রম-উন্নতির বাসস্থান ;
যদি, এ সৌরজগতে পৃথিবীর চেয়ে
সমুন্নত গ্রহ রহে গো,
তবে, সে সব গ্রহেরও হবে সে আমার,
শুধু পৃথিবীর নহে গো।
এ সৌরজগৎ তুচ্ছ অতিশয়
সারা ব্রহ্মাণ্ডের তুলনায়---
কত কোটি কোটি এমন প্রকার
যাহার শরীরে শোভা পায়।
আর, জীবলোক যদি এ সৌরজগতে
বিশেষতঃ নাহি বদ্ধ রয়,
তবে, সৌরজগতেরো নহে সে কেবল,
সে আমার সারা বিশ্বময়!!

যে আনন্দ প্রাণে উঠিছে উছসি
শ্রকাশিব তাহা কেমনে?
ক্ষমতা আমার বালুকণ শুধু
ভাব-হিমালয় তুলনে।
অসীম বিশ্বের বিধাতারে যদি
অসিত প্রস্তরে গড়ায়ে,
রেখেছে মানুষ বারাণসীধামে
সঙ্গীর্ণ মন্দিরে বাসায়ে ;
তবে, আমারো এ ভাব, কি করিব বল,
ছন্দঃ প্রতিমার গড়িব।
তাহা, জগৎ হইতে গোপনে রাখিয়া
আমিই কেবল হেরিব!
প্রতিমা হইতে সে ভাবস্বরূপ
কভু অনুমিত হবে না।
বিশ্বনাথে লোকে প্রস্তর ভাবিবে,
তা কভু আমার সবে না।

.             ****************             
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
গাজিপুরে গোলাপক্ষেত্র
কবি প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়
হিরন্ময়ী দেবী ও সরলা দেবী সম্পাদিত, “ভারতী” পত্রিকার বৈশাখ ১৩২৩ (মে ১৯১৬) সংখ্যায় প্রকাশিত।
কবিতার আগে কবির, সম্পাদককে লেখা একটি চিঠি আছে!

[ “ভারতী" সম্পাদক মহাশয়গণ-সমীপেষু। আপনারা জানেন কিনা বলিতে পারি না, পূর্বে আমি একজন কবি
ছিলাম এবং সেকালে “ভারতী”তে আমার বহু কবিত| ছাপা হইয়াছিল। “ভারতী”র চত্তারিংশত্তম জন্মদিন
উপলক্ষ্যে, “ভারতী”র পুরাতন-লেখক হিসাবে আমার কাছেও আপনারা লেখা চাহিয়াছেন। নিম্নে যে
কবিতাটি পাঠাইলাম, তাহা ১৮৯১ খৃষ্টাব্দে রচিত। কবিতাটি "ভারতী'তে পাঠাইবার জন্য নকল করিয়া
রাখিয়াছিলাম, এমন সময় নূতন “ভারতী” আসিলে মোড়ক খুলিয়া দেখিলাম, তাহাতে কবিবর শ্রীযুক্ত
দেবেন্দ্রনাথ সেন-মহাশয়ের "গাজীপুর" শীর্ষক এক কবিতা বাহির হইয়াছে, তাহাতেও গোলাপক্ষেত্রের বর্ণনা
রহিয়াছে (আপনারা সেটি দেখিয়াছেন কি?---না, আপনারা উভয়েই তখন বোধ হয় অতি বালক)।
দেবেন্দ্রবাবুর সে কবিতার তুলনায় আমার কবিতাটি, হংস-পার্শ্বে বকোযথার মত আমার মনে হইল, তাই
সেটি আর “ভারতী”তে পাঠাই নাই। লেখক ]

গোলাপ---গোলাপ শুধু দিগন্ত অবধি!
কোন্‌ রত্ন-ব্যবসায়ী নানা কার্যে ভুলে
এ শোভা-বিপণিখানি ফেলে গেল খুলে
বহাইয়া দিকে দিকে সৌন্দর্য্যের নদী!
অজস্র গোলাপ-বালা মন্দ মন্দ দুলে
কৃহক অঞ্জন এ কি চক্ষে দিল আনি---
যেন হায় প্রেয়সীর প্রেমলিপিখানি,
ফুটিয়াছে ভাব-পুষ্প মাধুরী হিল্লোলে।
এ কি সুষমার মেলা! ---বসন্ত প্রভাতে
সুবিস্তৃত পুষ্পরাজ্য। কিন্ত হায়,
শিশির তপন-তাপে শুকাইলে গায়,
বাহিরিল মালীগণ পাত্র হাতে হাতে।
ভাঙ্গিল শোভার হাট ; ---সারাদিন ধরি
কাঁদে কালো গাছ গুলি গুমরি গুমরি।

.             ****************             
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
সেকালের প্রতি
কবি প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত, “ভারতী” পত্রিকার ১৩০৫ (১৮৯৮)-এর কোনও সংখ্যায়
প্রকাশিত। আমরা পেয়েছি সুকুমার সেনের “বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস” ৪র্থ খণ্ড, ৩য়
পরিচ্ছেদ ৪, ৪২-পৃষ্ঠা থেকে। সুকুমার সেনের মতে এই কবিতাটি প্রভাতকুমারের “ভালো
কবিতার অন্তর্গত”। মিলনসাগরে প্রকাশ ১৩.৬.২০২০।

প্রণাম। শুনিয়া তব মহত্ত্বের কথা
আসিয়াছি দূর হতে দরশন আশে।
অবাক দাঁড়ায়ে আছি মন্দির পাশে ;
হেরিতেছি স্বর্ণময় চূড়ার উচ্চতা। . . .
কিন্তু হে পূজিত, ওহে বিরাট, মহান্,
প্রতিমূর্ত্তিখানি তব যেমন সুন্দর,
ছিল হেন তুষ্টি-সুখে চিরদীপ্যমান
সত্য কি জীবিতকালে কব কলেবর?
---অথবা জর্জ্জর ছিলে ক্ষুধায় তৃষ্ণায়,
অভিশপ্ত “আজ-কাল:, ইহারি দশায়?

.             ****************             
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
মঙ্গল-গ্রহ
কবি প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়
সরলা দেবী সম্পাদিত, “ভারতী” পত্রিকার জ্যৈষ্ঠ ১৩০৪ (জুন ১৮৯৭) সংখ্যায় প্রকাশিত।
মিলনসাগরে প্রকাশ ১৩.৬.২০২০।


সন্ধ্যাগগনে মঙ্গল-গ্রহ
জলিছে দেখিতে পাই।
জানিনা সেখানে মানুষ-আবাস
আছে কি নাই।
জানিনা সেখানে বহে কি পবন,
ফোটে কি ফুল ;
হাসে কি চন্দ্র, বিহগ করে কি
নিশীথে দিবস-ভুল।
@@র প্রকৃতি, স্বাদে রূপে গুণে
যদি গো এমনি হয় ;
@চ মানুষ একটি কোথাও
নাহিক রয় ;
তাহলে, বিধাতা, করি এ ভিক্ষা
যুড়িয়া কর,
@@র আমরা দুজনে
@খানে১ বাঁধিৰ ঘর।

বিশাল জগৎ, বিপুল প্রকৃতি,
বিরাট আকাশ, জল।
শীতল পবন, সুতানবর্ষী
বিহগদল।
বিবিধ বর্ণ বিচিত্র বাস
কুসুম কোটি।
কেহ নাই সারা জগৎ ভিতরে ;
কেবল আমরা দুটি!
প্রকৃতি যেখানে বিছায়ে রেখেছে
মোহন মাধুরী-জাল ;
প্রবল যেখানে বসন্ত আর
বর্ষাকাল ;
ফলের ফুলের তরু অসংখ্য,
গিরির গায় ;
নিকটে ক্ষুদ্র স্বচ্ছ তটিনী
সতেজ বহিয়া যায় ;

এমন একটি নিভৃত-আলয়
যতনে অন্বেষিয়া,
লতা পাতা ফুলে রচিব কুটীর
দোঁহে মিলিয়া।
আদিম মানব আদিম মানবী
মোরা দুজনে,
যুগ যুগ ধরি করিব বসতি
সে নব ইডেন-বনে !

@@ - অপাঠ্য অক্ষর।
১ - “সেখানে” হতে পারে।

.             ****************             
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
প্রেমের সৌরভ!
কবি প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়
রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত “প্রদীপ” পত্রিকার জ্যৈষ্ঠ ১৩০৫ (মে ১৮৯৮) সংখ্যায়
প্রকাশিত। মিলনসাগরে প্রকাশ ১৩.৬.২০২০।


এক রতি-পরিমাণ মৃগনাভি যদি
.                        কক্ষেতে রাখিলে,
বিংশতি বত্সরকাল সেই কক্ষ মাঝে
.                        সে সুগন্ধ মিলে ;
আমার অন্তর-কক্ষে রহিয়াছে যাহা
.                        ---প্রেম সুমধুর---
কোটি কোটি জন্ম তাহা আমার বিশ্বাস---
.        রাখিবে এ হৃদি খানি গন্ধে ভরপুর।

.             ****************             
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর