কবি তপন সত্পথীর কবিতা
*
হিয়ার জন
কবি তপন সৎপথী

অসংশ্লিস্ট সব কিছু আজ বাদ দিয়ে দিন শেষে
একাই আমি বেরিয়ে গেছি তোমার দূরের দেশে
আসবো যখন গাঁয়ের পাশে
সাঁঝের প্রদীপ জ্বালবে বসে
সেই আলোতেই চিনে নেব আমার হিয়ার জন
প্রতিদিনই তোমায় আমি খুঁজি সারাক্ষন

ভয় নেই আজ কোন কিছুর অভাং দেহ জুড়ে
চলার পথটি নেব খুঁজে বিহঙ্গদের ভিড়ে
ডাকবে ঝিঁঝিঁ আকুল সুরে
ঠিকানা তাদের সামনে দূরে
বলবো তাদের ডাকছো কেন এমন সাঁঝে শুধু
চিনবো আমি কেমন করে বাজলে নূপুর মৃদু

এমনি ভাবে কখন আমি এলাম গাঁয়ের পথে
চকিৎপানে চাইলে তুমি প্রদীপ আলো হাতে
আঁচল খানি গলার পরে
শুভ্র বসন সাঁঝ আঁধারে
লাল পাড় টি লুটায় দেখি তোমার চরণ ছুঁয়ে
হাত ইশারায় বুঝিয়ে দিলে কানন পথের বাঁয়ে

আজকে রাতে খেলবো আমি উপ্ত কানন মাঝে
উপাসনা শেষ করে তাই এলাম তোমায় খুঁজে
এসেই দেখি অলক আঁকা
দূরের আকাশ মেঘে ঢাকা
গাছের ছায়া লুকিয়ে গেছে আঁধার ভরা রাতে
এমনি ক্ষণে ভয় কোরোনা এসো আমার সাথে

সাঁঝের বেলায় দিয়েছো খুলে বাসী বসন খানি
গরদ শাড়ির আচল টেনে বুক ঢেকেছো জানি
অমনি সাজেই এসো কাছে
জ্যোত্স্না খানি লুকিয়ে আছে
আঁধার রাতে খেলার ছলে হারায় যদি শেষে
শুভ্র বসন দেখতে পাবো পড়লে পথে খসে।

.         ****************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
নিরুদ্দেশ যাত্রা
কবি তপন সৎপথী

নিবিড় অরণ্য পথে চলি একা রোজ
তৃষাতুর চাতকের ডাক শুনি পথে ,
উলঙ্গ সুখের মোহ ফুরাইবে জানি
নিরুদ্দেশ যাত্রা পথ আছি একা রথে!
ফুরাইল পথে আজ বসন্তের বেলা ,
নিদ্রাহীন রাত্রি রব কাল পেঁচা দলে ,
অদৃষ্টের পরিহাস নিমিত্তের সব -
আকাঙ্ক্ষা কাঙ্খিত ফল ,কল্পিত হিল্লোলে!
কত বার ভাবিয়াছি দিব জলাঞ্জলি ,
বৃথা আশ আজিকার প্রয়োজন হীন!
আলো আঁধারিত পথ নিমিত্তের যাত্রী -
তুমি রাজা আমি প্রজা বৃহত্বের ঋণ!
চলে দিন ভাবনায় জীবন মরণ
সময় করিবে ঠিক সবারে হরণ।

.         ****************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
তোমার ছোঁয়া
কবি তপন সৎপথী

কে বলে গো নেই যে তুমি আর
আছো তুমি সব বেলাতে সাথে ,
না হয় এখন নীল আকাশে দূরে
ছোঁয়া তোমার পাই যে প্রতি রাতে!
কে বলে গো নেই যে তুমি আর
এই তো আছো সারা হৃদয় জুড়ে ,
সব বেলাতে তোমার আনা গোনা
ওই তো আঁচল নীল আকাশে উড়ে।
আজও আমার মাঠের পথে তুমি
চলতে গিয়ে পিছলে পড় আলে ,
কাজের শেষে ভিজলে ঘামে গা
দাও মুছিয়ে আপন আঁচল খুলে!
দুপুর বেলা স্নানের সময় তুমি
আজও দেখি চেয়ে আমার পানে ,
সাঁতার দিয়ে যাইনা গভীর জলে
তুমি ডাকো শালুক তুলি সনে।
স্নানের পরে গরম ভাতের থালে
তোমার হাতের গন্ধ আজও পাই ,
নুন আনতে গেলে রান্না ঘরে
আজও ভাবি লুকিয়ে পিছে যাই।
দুপুর ঘুমে মুদলে দুটি চোখ
ঘুম চোখেতে থাকো কাছা কাছি ,
আধো ঘুমে খুজলে তোমার ছোঁয়া
বলো তুমি এই তো কাছে আছি।
দুপুর শেষে বিকাল আসে একা
যাও যে মাঠে আনতে গরু সাথে ,
সকালের সেই শুকনো লতা পাতা
আসার পথে আজও নাও যে মাথে!
সন্ধ্যা হলে প্রদীপ হাতে তুমি
দেখলে দেখি তুলসী তলায় বোস ,
কে বলে গো আছো অনেক দূরে
রাত হলে যে আঁধার ডেকে আসো!
ভাঙা জানলায় দক্ষিণ বাতাস এলে
বলি বাতাস যাওনা রাতে দূরে ,
আমার রানীর ভাঙতে পারে ঘুম
জানলা ফাঁকে বাতাস বওয়া সুরে।
সবাই যখন বলে আমায় জানো
গেছো তুমি অনেক দূরে চলে,
ভাবি এমন বলে ওরা কেন
তোমায় চেয়ে বেশতো আছি ভুলে!!

.         ****************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
মায়াবী
কবি তপন সৎপথী

নীল কুয়াশায় তোমার চোখে -
বনলতার অবিলতা ,
হারিয়ে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছা -
কুচো কুচো সোনা রোদের- খেলায়।
আমার দৃষ্টির পঙ্কিলতা -
ঝিনুকের নির্নিমেষ ক্লান্তি বিহ্বলতা ,
অবিশ্বাসী স্বস্নিগ্ধ বকচ্ছপ ভাবনা-
গ্রাস করে আমায়।
কামনা-পূতিগন্ধের মোহময় আবেশ
ছিন্ন কর তুমি!
তোমার ভালোবাসা পর্নমোচীর
পাতা নয়তো ?
পাহাড়ীমেয়ের আবেগ-উচ্ছ্বাস -
দেহের প্রতিটি খাঁজ ,
সাঁওতাল মেয়ের মহুয়ার গন্ধ,
হারিয়ে যায় লিপস্টিক-রুজ-আরবি সেন্টে।
নীল কুয়াশায় ঝাপসা হয়ে নগ্ন হয় বাস্তব ,
শকুন চোখ তাকিয়ে থাকে -
লোলুপ দৃষ্টিতে!

.         ****************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
নিরক্ষরের অক্ষর জ্ঞান
কবি তপন সৎপথী

বিনম্র শ্রদ্ধায় ছুঁয়ে চরণ সবার ,
নিরক্ষর নির্বিশঙ্ক সাহিত্যের জ্ঞানে
নাহোক জারব লিপি স্বাক্ষর ভুবনে ,
ক্ষুদ্র হস্তে রচিয়াছে কাব্য কথা তার।
শ্রদ্ধেয় পাঠক পূজ্য অন্তরে তাহার ,
জ্ঞানী গুণী জন পদে সদা নম্র নত ,
তার্কিক জনের কাছে বাল্য শিশু মত!
আশীর্বাদ দেহ তারে যেমত যে যার।
সার্থক মানব জন্ম অবিপ্লুত জানি ,
না বুঝিয়া কতশত লিখিয়াছে বসি!
তাকাও বারেক ফিরি সৃষ্টি পাশে আসি
তাহার প্রয়াস হোক সার্থক সম্মানী।
শুভেচ্ছার ধূলি গায় থাকুক নিখিলে -
নিরক্ষর হর্ষান্বিত বর্ণমালা দলে!!

.         ****************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
মিথ্যা মোহে
কবি তপন সৎপথী

কঠিন তোমার অনুশাসন শক্ত তোমার মন
আমার ভাবনা আমার দিশা সঠিক নিরীক্ষণ ,
গর্ভ ভাঙার ঘুঙুর ধ্বনি অল্প আলোয় ম্লান
ইচ্ছা প্রবল দুর্বল বোধ মুখ খানা অম্লান!
হিংস্র হচ্ছে সমাজ পাড়া শান্ত চিড়িয়া ঘর
আপন হচ্ছে দূরের মানুষ কাছের বন্ধু পর ,
মিথ্যা আসায় বুক বাঁধা আজ সম্পর্কের ভিত
গ্রীষ্ম ভুলায় এক সূর্যেই আরামদায়ক শীত ,
ছিন্ন ভিন্ন গোপন অঙ্গ কবর দেবালয়ে
অমানুষ হাতে মরছে মানুষ বোম বারুদের ঘায়ে!
এখনও তেমন হয়নি কিছুই আবার হবে বেশি
মানুষ আরও হিংস্র হবে অগণতন্ত্রে খুশি ,
ধ্বংস হবে সাধের সমাজ জ্বলবে পাড়া ক্ষোভে
মানুষ ভুলবে পরিচয় তার পর হবে সব ভবে!
বিশ্বাস হবে ঠুনকো ভাবনা অবিশ্বাসই ঠিক
বিধির বিধান মিথ্যা মেনে নেশাতুর দশদিক।

.         ****************       
.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর