কবি অর্ঘ্য দত্তর কবিতা
*
এক আত্মহত্যা
কবি অর্ঘ্য দত্ত

ছেড়া কম্বলে স্বপ্নরা উকি মারে ,
পালকবিহীন ডানা আকাশ ছুঁতে চায় ;
.     নীলচে সাদা মেঘের উপরের
.               বেরঙ শূন্যতা ।
  
উবে যায় স্বপ্ন যত , মিথ্যা সেজে রঙ্গশালায় । বুঝলো -
. সবুজ পৃথিবী দাম্ভিকতায় অবুঝ ।
.  ব্রাত্য জীবনের ভিড়ে একা সে ,
.      মুচড়ানো মেরুদন্ডে জমছে মিথ্যার ভার ।

নগ্ন দেহে চলেছে সে অশান্ত অগ্নেয়গীরির ঠোঁটে ;
.        বাস্তব যার রক্তিম , উত্তপ্ত প্রবাহে ।
খামখেয়ালি মন ছেড়েছে নুন্যতম কাপড়ের চাহিদা ;
.  সেটাও হয়তো খুন হতো তীব্র ক্ষোভে ; নিমেষেই।

শুধু পরে থাকলো এক বিন্দু জলের তেষ্টা ,
.   শুষে নেয় নিমেষেই যা ঠুনকো লোকলজ্জা ।

.              ****************                          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
আমার বাবা
কবি অর্ঘ্য দত্ত

বিরামহীন পরীক্ষায় ভেঙেছি প্রতিটা ইচ্ছে
,      আপনজনদের স্বপ্নের হাতুড়ির ঘাতে আঘাতে ।
'ছেলে ' হয়েছি ; তাই সখের রাস্তায় হাজারো কাঁটা
দায়িত্বের ভারে ভাঙা কোমরে তলিয়ে যাচ্ছে
.               কতো নেশা আর পিছুটানের বাঁধা ।

দেখেছি তো ছোটবেলা থেকেই বাবাকে ;
.    চোখের নিচের কালি র প্রতিটি রেখায় লেখা আছে-
.  কত কবিতা , কত গল্প , কত অসম্পূর্ণ নিবন্ধ - অপ্রকাশিত যা !
কিছু ছোটো খাটো নিজের আবদার আছে তাতে,
.                   আর বাকিগুলো ! বুঝে নিয়েছি ,
সময় আর বয়সের সাথে জমতে থাকা আশাহত বেদনা
.              আর কর্তব্যের শিকলের আঁচড় !
.       জীবনের কত বিবর্ণতা , আর সবুজের আঁচড় ।

.              ****************                          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ঘুমন্ত
কবি অর্ঘ্য দত্ত

চারিপাশ টা দেখছি রঙিন চশমার ওপার থেকে ,
.        কোনো রঙ চোখে পড়েনা তেমন !
তাই , উষ্ণতা-তেজ স্থির যেন আজ ।
সুবিধাবাদীদের বিভীষিকায় উত্তপ্ত
.      কোটি প্রহর-কোটি মানুষের শীতঘুম !
আদিম শেকড়ের ঘ্রান আদিমতায় লুপ্ত ।
বিদেশী আরাধনায় জমছে ধুলো
.     স্তূপাকার দেশি ফাইলে , অবিরত !
মাকড়সা করছে সন্ধি , দেখছে নামের ক্ষত ।
কেউ শুনতে পাচ্ছেনা বুঝি
.      ক্লীব , বিধবা রাজতন্ত্রের হৃদধ্বনির সাইরেন !
পরমুখোপেক্ষিতা , গর্জনের ফিসফিসে বাণী । (বেশ)
(তবে) ধনুক-ছিলামে বাঁধা প্রতিবাদ , অপেক্ষা মুখরতার
.     চারিপাশে শব্দঝড় , স্লোগান , বিসর্জনের ডাক !
কেউ শুনলে আর্জি জানাবেন , পাশে থাকার অঙ্গীকার ।

.              ****************                          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ফুল
কবি অর্ঘ্য দত্ত
       
আমার জন্ম সেই ছোট্ট কুড়ীর মধ্য দিয়ে ,
. যখন সারা উদ্ভিদ শরীরে উঠে শিহরন
.   নতুন জীবন নিয়ে ।
তখনও পাপড়ি মিলিনি আমি
. বাইরেটা ছিল অজানা,
.  কল্পনার জগত বানিয়েছিলাম মনের ভিতরে
.              একাকী, অবচেতনে।

তারপর ধীরে ধীরে মিষ্টি স্বপ্নগুলি
. ত‍্যাগ দিল আমারে ,
. সত্যটা কাছে আসলো ; সব অংক ভুল হলো ,
.  বুঝলাম শুরু করতে হবে নতুন নিয়মে ।

এবার চিনতে থাকলাম বাইরেটাকে ,
. কত গাছ-ফুল-পাখি-অসীম নীলাকাশ:
.  আর তাতে বাতাসের নির্ভীক শাসন ,
.   কখনোবা ঈশ্বর জলের ফোঁটা হয়ে সিক্ত করছে রুক্ষতা ,
.     কখনোবা আসে তাঁর তান্ডব- রূদ্রমুর্তি।
.               এতো কল্পনাতীত !
বাস্তব জগৎ এত সুন্দর বুঝলাম যখন
. শুরু হল একটা একটা করে পাপড়ি উন্মোচন,
.  বাঁধা ছিল যা মিথ্যার জালে ।

অনেক মৃত্যুবাঁধন - স্মৃতির গলি পেরিয়ে ,
.  আজ হয়তো রাজপথে এসেছি।
তবু মনে হয় ,
. অলিগলিতে-দেওয়ালে কষা অংকগুলো মিলেনি আজও !
. অভিজ্ঞতার বয়স যেন সবে কয়েক মাস !
বারবার মনে হয় এইতো হয়েছে শুরু,
. বাস্তবকে চিনতে চিনতে যখন
.                বাস্তবের ভারে খষে পড়বে
একটার পর একটা বাদামি বেরং পাপড়ি
.                    মায়া ছেড়ে,
তখন হয়তো বলতে পারব আমি ফুল হয়েছিলাম।

.              ****************                          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
হেমন্তের ভালোবাসা
কবি অর্ঘ্য দত্ত

হেমন্ত জাগে নন্দনের দক্ষিণদ্বারে ;
. উতলা, উন্মত্ত প্রাচীন বাতাস
.  শান্ত-স্নিগ্ধ হাতে নতুন প্রেমের গুপ্ত কথা লিখে।

যুগান্তরের যৌবন উন্মাদ নৃত্যে দেয় চুম্বন,
. পশ্চিমাকাশ সাজায় একটি চাঁদ ও নক্ষত্র যোগে
.  তুলসী মঞ্চের দীপ্তশিখা সম্ভাবনায় কম্পমান ।

অমাবস‍্যার স্তব্ধ নিবিড় রাতে জোনাকির উজ্জ্বল আগমন
. যেন 'বসন্ত' আনে নিবিড় ভাবে ; ঠিক তোমার মত ;
.   এ হেমন্তে উষ্ণতার মৃদু স্বনন ।

কচি ঘাসের শিশিরভেজা বিছানায় ;
. সাজানো আকাশ আর নরম দুই হাত
.  গীত-ছন্দ ভরা জীবন দিয়েছে আমায় ।

নীলাঞ্জনা ; তোমার হাসিখানি নিয়ে আসে ভোর
. স্নিগ্ধ প্রশান্ত ভালোবাসায় দিলে
.  আশার নতুন কিরণ - বিষাক্ত নিখিলের ।

স্ব-হত্যা আজ তিক্ত
.     পেয়েছি একটা কারণ, তোমার মতন ; যা-
.                জোনাকির আলোয় সিক্ত।

.              ****************                          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
অতীত
কবি অর্ঘ্য দত্ত

দুজনে মেখেছিলাম পড়ন্ত রোদের শান্ত রঙিন ছোঁয়া
ওই অন্ধকার গলিতে কত গল্প জমে আছে এখনোও ;
আমাদের স্মৃতি-রোমান্টিকতা ঐসব গলির অন্দরে-অন্দরে ,
স্বাচ্ছন্দ্যে আবিষ্কার করেছি দুজন দুজনকে।

নীরা, মনে আছে,
একসঙ্গে মেখেছিলাম শিউলি ফুলের গন্ধ;
দুজনে এনেছিলাম  শরতের আবহ।
লাভ করেনি হয়তো অমরত্ব , এই সম্পর্ক
ভবিষ্যতের চুম্বন দেখিয়েছে অন্যপথের অংক।

তবে আজ ; আমি একা
কল্পনার বন‍্যায় পায়ের নিচে মাটি সরেছে ,
মনটা কিন্তু রয়ে গেছে একই গভীরতায়।
.               অনুতপ্ত দুজনেই ।

.              ****************                          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
অবসান
কবি অর্ঘ্য দত্ত

বছরভর 'পিতৃতন্ত্র'র পর কয়েকদিন 'দেবীপক্ষ' ,
.  দশমীতেই হয়তো খুন হয় দেবীপক্ষের সময়সীমা ।

যেন 'অবসান' ঘটে মা-বোনের স্বাধীন চলাফেরার,
যেন 'অবসান' ঘটে মাঝরাতে নারী স্বাধীনতার।

দেখছো না ,
.  নেকড়েগুলো আবার তাদের দাঁত নখ বের করে
.        হামলে পড়ার উপক্রম করছে ।

চ্যানেল ঘুরিয়ে দেখলাম আজ -
. কোথাও  নির্ভয়া কাণ্ডের ছায়া !
. কোথাও বা খুন হয়েছে 'মা' অবলীলায় !
.   যেন  বহু কষ্টে চার দিন দুষ্টু আত্মাগুলো
.    আবদ্ধ ছিল মন্ত্রপুত মদের বোতলে ; ছিল ক্ষূধার্ত।

.                আজ আবার দ্বারা মুক্ত !
.    শুরু হলো আবার দেবত্ব নারীস্বত্তার হত্যা।

.              ****************                          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
মৃতদের মিছিল
কবি অর্ঘ্য দত্ত

মৃতদের মিছিল চলছে  সুপ্ত কারাগারে ,
. দূরে ; ওই দূরে তাদের গোঙানির ক্ষীণ প্রতিধ্বনি
.   বজ্রপাতে বিলীন, আর আধারে যায় মিশে।

প্রতিবাদ কে এরা ফেলেছে জলন্ত হোমকুন্ডে
.   বাধা-কাঁটাপূর্ণ পথকে দূরে ফেলে,
.    পচা-গলা দেহে পরশমনির খোঁজে ।

বনবাসী হৃদয় এদের, আত্মসুখের অন্ধকারে ডুবে
. পথহারা পাখির মত অস্থায়ী চিত্তে,
.   অসত্যের পর্দা সরিয়ে মিথ্যা বাস্তব খুঁজে ।

মৃতদের মিছিল চলবে সেই গুপ্ত কারাগারে
.  কর্মরত মাথাগুলি দোলে আশায়-আশায়,
.     ক্ষীন আলোচনা ঢাকা পড়ে একনায়কতন্ত্রে ।

.              ****************                          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
ক্লান্ত পথিক আর সফলতা
কবি অর্ঘ্য দত্ত

.       সামনের লক্ষ্য দেখেছো কোনোদিন নিজ চোখে ?
কতো পাখির কতো কুজন - দুর থেকে ভালো ,
বাইরেটা দেখে কতো সমালোচনা ! কতো নিন্দার ফুলকি !
.                -  কত বেনামী স্বত্তার ।
.    আমি কিন্তু অক্ষম , স্বল্পদৃষ্টি যে আমার ।

সমাজের দূষিত রক্ত ধমনীকে পেঁচিয়ে দিয়েছে !
.   জাতিসত্তার কুলষতা সফলতার পরিধি বাড়িয়েছে ।
উন্নতির রাস্তায় কতো পর্দা !  এগোতে গিয়ে ,
সাদা ইউনিফ্রম দূষণের বিষে নীল হবে ,
.        লাল হবে তারপর সম্মান অর্জনের মেঠোপথে ,
.                    স্বসম্মান বলির রক্তে ।

রাস্তাটা এবড়োখেবড়ো নয় , মসৃণতার প্রলেপ লেপা ।
.     প্রতিটি বাঁক চেতনার পরিপন্থী ,
.  ক্লান্ত পথিক সফলতার রাস্তায় খুন হয় ( নিঃশব্দে)
.      বিকৃত চাপা গর্জনে বহাল তবু শান্তি ।

.              ****************                          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর
*
অন্ধকারের শিখা
কবি অর্ঘ্য দত্ত

জীবনটা বদ্ধ জানালার ওপরের
.    কালো ঘরের সাথী ।
নিয়তির গর্ভ যন্ত্রণায় কুঁকড়ানো
. পাল্লাগুলি দিয়ে ঘেরা । সূর্যাস্ত চিরকালের সঙ্গী ।
ভোর নাই , গোধূলি নাই , সাঁঝ নাই ;
.    নিরুত্তর যেখানে প্রকৃতির ঋতুচক্র ।
কম্পমান , মিটমিটে শিখায় জ্বলে স্বপ্ন-ইচ্ছে-কর্তব্য ;
মানবতার উজ্জ্বলতা নেই তাতে !
.  সেই আলোটুকুর আভা শুধু পদ‍্যগ্লানিতে ভিজে ,
.     ধুলোমাখা আসবাবের চতুর্দিকে লুটিয়ে
.           আঁচড় কাটে ক্ষতে ।

ভাঙা কার্নিশের মরচে ধরা হাড়গোড়
.   দেখেছে সব ; নির্লজ্জের মত চেয়ে ।

.              ****************                          
.                                                                            
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর