বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম-এর "শ্যামা সঙ্গীত"
থেকে কয়েকটি
১।
২।
৩।
৪।
৫।
৬।
৭।
৮।
৯।
১০।
১১।
১২।
১৩।
১৪।
১৫।
১৬।
১৭।
১৮।
১৯।
২০।
২১।
(আমার) কালো মেয়ে পালিয়ে বেড়ায় কে দেবে তায় ধ’রে  
আমার কালো মেয়ে রাগ করেছে     
আমার কালো মেয়ের পায়ের তলায় দেখে যা আলোর নাচন    
(আমার) মা আছে রে সকল নামে    
(আমার) মা যে গোপাল-সুন্দরী    
আমি মা ব’লে যত ডেকেছি    
আমি সাধ ক’রে মোর গৌরী মেয়ের নাম রেখেছি কালি    
আয় বিজয়া আয়রে জয়া    
আয় মা চঞ্চলা মুক্তকেশী শ্যামা কালি    
আয় মা ডাকাত্ কালি আমার ঘরে কর ডাকাতি    
“কালি কালি” মন্ত্র জপি ব’সে লোকের ঘোর শ্মশানে    
কালো রূপে মন ভুলালে কালোকে আয় বাসবি ভালো     
কৃষ্ণা নিশীথ নাচে ঝিল্লির নূপুর বাজে    
কে পরালো মুন্ডু-মালা আমার শ্যামা মায়ের গলে    
কে বলে মোর মাকে কালো মা যে আমার জ্যোতির্ম্মতী    
জগৎ জুড়ে জাল ফেলেছিস্ শ্যামা কি তুই জেলের মেয়ে    
জয় মহাকালি, জয় মধু-কৈটভ বিনাশিনী    
বল রে জবা বল্    
মহাকালের কোলে এসে গৌরী হ’ল মহাকালি    
শ্যামা নামের লাগ্ ল আগুন আমার দেহের ধূপ-কাঠিতে    
শ্মশানে জাগিছে শ্যামা, অন্তিমে সন্তানে নিতে কোলে    
*
শ্যামা সঙ্গীত, কাজী নজরুল ইসলাম

( আমার ) কালো মেয়ে পালিয়ে বেড়ায় কে দেবে তায় ধ’রে
( তারে ) যেই ধরেছি মনে করি অমনি সে যায় স’রে  ||
বনের ফাঁকে দেখা দিয়ে  / চঞ্চলা মোর যায় পালিয়ে
( দেখি ) ফুল হ’য়ে মা’র নূপুরগুলি পথে আছে ঝ’রে ||
তার কন্ঠহারের মুক্তাগুলি আকাশ আঙিনাতে
তারা হ’য়ে ছড়িয়ে আছে দেখি আধেক রাতে |
আমি কেঁদে বেড়াই কাঁদলে যদি আসে দয়া ক’রে ||

.       **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
শ্যামা সঙ্গীত, কাজী নজরুল ইসলাম

আমার কালো মেয়ে রাগ করেছে  /  কে দিয়েছে গালি / ( তা’রে ) কে দিয়েছে গালি |
.        রাগ ক’রে সে সারা গায়ে /  মেখেছে তাই কালি ||
.        যখন রাগ করে মোর অভিমানী মেয়ে
.        আরো মধুর লাগে তাহার হাসি মুখের চেয়ে
.        কে কালো দেউল করে আলো / ( অনু- )  রাগের প্রদীপ জ্বালি’ ||
.        পরেনি সে বসনভূষণ, বাঁধেনি সে কেশ
.        তা’রি কাছে হার মানে রে ভুবনমোহন বেশ |
.                রাগিয়ে তা’রে কাঁদি যখন দুখে
.        দয়াময়ী মেয়ে আমার ঝাঁপিয়ে পড়ে বুকে
.        (আমার ) রাগী মেয়ে, তাই তা’রে দিই /  জবা ফুলের ডালি ||


.       **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
শ্যামা সঙ্গীত, কাজী নজরুল ইসলাম

.                 মিশ্র আশাবরী--------দাদ্ রা

আমার   কালো মেয়ের পায়ের তলায় /  দেখে যা আলোর নাচন |
মায়ের   রূপ দেখে দেয় বুক পেতে শিব  / যার হাতে মরণ বাঁচন ||
আমার   কালো মেয়ের আঁধার কোলে  / শিশু রবি-শশী দোলে ;
(মায়ের ) একটু খানি রূপের ঝলক্   / ঐ স্নিগ্ধ বিরাট নীল-গগন ||
.          পাগ্ লী মেয়ে এলোকেশী  /  নিশীথিনীর দুলিয়ে কেশ,
.          নেচে বেড়ায় দিনের চিতায় /  লীলার রে তা’র নাইকো শেষ ||
.           সিন্ধুতে ঐ বিন্দু খানিক  /  ( তার ) ঠিক্ রে পড়ে রূপের মানিক ;
.          বিশ্বে মায়ের রূপ ধরে না----  /   মা আমার তাই দিগ্ বসন |


.                                **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
শ্যামা সঙ্গীত, কাজী নজরুল ইসলাম

.                         দেশী মিশ্র ----- দাদ্ রা

.                ( আমার ) মা আছে রে সকল নামে  
.                                মা যে আমার সর্ব্বনাম |
.                যে নামে ডাক শ্যামা মাকে  
.                                পুর্ বে তাতেই মনস্কাম ||
.                ভালোবেসে আমার শ্যামা মাকে  
.                                যার যাহা সাধ সেই নামে  সে ডাকে,
.                সেই নামে মা দেয় যে সাড়া  
.                                কেউ শ্যামা কয়, কেহ শ্যাম ||
এক সাগরে মিশে গিয়ে সকল নামের নদী  
সেই হরি হর কৃষ্ণ ও রাম, দেখিস্ তাঁকে যদি |
.              নিরাকার সাকারা সে কভু
.                                সকল জাতির উপাস্য সে প্রভু,
.                নয় সে নারী নয় সে পুরুষ
.                সর্ব্বলোকে তাঁহার ধাম |
.                মা যে আমার সর্ব্বনাম ||


.                                **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
শ্যামা সঙ্গীত, কাজী নজরুল ইসলাম

.           “গোপাল-সুন্দরী”  রূপ

(আমার) মা যে গোপাল-সুন্দরী |    
এক বৃন্তে কৃষ্ণ-কলি অপ্ রাজিতার মঞ্জরী  ||
( সে ) আধেক পুরুষ আধেক কৃষ্ণা নারী
অর্দ্ধ কালি অর্দ্ধ বংশীধারী  ;
( মা ) অর্দ্ধ অঙ্গে পীতাম্বর আধেক সে দিগম্বরী |
মা যে গোপাল-সুন্দরী  ||
( সে ) এক পায়ে প্রেম-কুসুম ফোটায়
নূপুর-পরা সেই চরণ,
.        ( মার ) সেই পায়ে রয় সর্প-বলয়
.        যে পায়ে প্রলয়-মরণ |
আধ-ললাটে অগ্নি-তিলক জ্বলে
চন্দ্র-লেখা আধেক ললাট-তলে
শক্তিতে আর ভক্তিতে সে আছে যুগল রূপ-ধরি’ |  
মা যে গোলাপ-সুন্দরী  ||


.                                **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
শ্যামা সঙ্গীত, কাজী নজরুল ইসলাম

আমি মা ব’লে যত ডেকেছি,  
সে ডাক নূপুর হয়েছে ও রাঙা পায় |
আমার শত বরষের কত নিবেদন  
ঐ চরণ জড়ায় কহিয়া যায় ||
ওমা তোরে নাহি পেয়ে লোকে লোকে  
যত অশ্রু ঝরেছে মা, মোর চোখে,
সে অশ্রু-জল জবা ফুল হয়ে  
পূজা পেতে তোর চরণ চায় ||
আহা কত অপরাধ করেছিনু পদে সংহার করি সেই অপরাধ,
বল্ লীলাময়ী, মিটেছে কি তোর মুন্ডমালিকা পরার সাধ |
আমার যে ভক্তি পায়নি চরণতল,  
হয়েছে  কি তা বিল্বদল,
আমার মুক্তির তৃষা মুক্তকেশী মা  
ঐ এলোকেশ হয়ে চরণে জড়ায়  ||


.                                **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
শ্যামা সঙ্গীত, কাজী নজরুল ইসলাম

আমি সাধ ক’রে মোর গৌরী মেয়ের নাম রেখেছি কালি |
পাছে লোকের দৃষ্টি লাগে মাখিয়ে দিলাম কালি
তার, সোনার অঙ্গে মাখিয়ে দিলাম কালি ||
হাড়ের মালা গলায় দিয়ে  
দিয়েছি তার কেশ এলিয়ে
তবু, আনন্দিনী নন্দিনী মোর দেয় রে কর-তালি |
নেচে নেচে দেয় রে কর-তালি  ||
চোখে চোখে রাখি তারে পাছে সে হারায়
তাই, কালো মেয়ের রূপ লেগেছে মোর আঁখি তারায় |
সে শ্মশান পথে বেড়ায় একা   
সহজে সে দেয় না দেখা ( রে )
শুধু, বনের জবা জানে আমার মেয়ে রূপের ডালি ||


.                                **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
শ্যামা সঙ্গীত, কাজী নজরুল ইসলাম

.                      ভৈরবী

আয় বিজয়া আয়রে জয়া  /  উমার লীলা যা রে দেখে  |
সেজেছে সে মহাকালি  /  চোখের কাজল মুখে মেখে  ||
সে ঘুমিয়ে ছিল আমার কোলে  /  জেগে উঠে কেঁদে বলে,
আমায় কালি সাজিয়ে দে মা  /  ছেলেরা মোর কাঁদছে ডেকে ||
চেয়ে দেখি মোর উমা নাই নাচে কালী দিগম্বরী,
হুঙ্কার দেয় কোটি গ্রহের মুন্ডমালা গলায় পরি’ |
আমি শুধু উমায় চিনি  /  এ কোন্ মহামায়াবিনী,
কালোরূপে বিশ্বভুবন  /  আকাশ-পবন দিল ঢেকে ||


.                                **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
শ্যামা সঙ্গীত, কাজী নজরুল ইসলাম

.                 বাঙ্গাল----ত্রিতাল

আয় মা চঞ্চলা মুক্তকেশী শ্যামা কালি  |
নেচে নেচে আয় বিকে আয়,  /  দিয়ে তাথৈ তাথৈ করতালি  ||
দশদিক আলো ক’রে  /  ঝঞ্ঝার মঞ্জীর প’রে
দুরন্ত রূপ ধ’রে আয়  /  মায়ার সংসারে আগুন জ্বালি  ||
আমার স্নেহের রাঙাজবা পায়ে দ’লে
কালো রূপ-তরঙ্গ তুলে  /  গগন-তলে সিন্ধুজলে  /  আমার কোলে আয় মা আয় |
তোর চপলতায় মা কবে  /  শান্ত ভবন প্রাণ-চঞ্চল হবে
এলোকেশে এনে ঝড় মায়ার এ খেলাঘর  /  ভেঙে দে মা আনন্দ-দুলালী  ||

.                                **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
শ্যামা সঙ্গীত, কাজী নজরুল ইসলাম

.        আয় মা ডাকাত্ কালি আমার ঘরে কর ডাকাতি |
.        যা’ আছে সব্ কিছু মোর লুটে নে মা রাতারাতি ||
.        আয় মা মশাল জ্বেলে ডাকাত্ ছেলে ভৈরবদের করে সাথী
.        জমেছে ভবের ঘরে অনেক টাকা যশঃ খ্যাতি |
.        কেড়ে মোর ঘরের চাবি নে মা সবই পুত্রকন্যা স্বজন জ্ঞাতি ||
.        মায়ার দুর্গে আমার দুর্গা নামও হার মেনেছে
.        ভেঙে দে সেই দুর্গ আয় কালিকা তাথৈ নেচে |
.        রবে না কিছুই যখন রইবে ভাঁড়ে মা’ ভবানী
.        মুক্তি পাবো সেদিন টানবো না আর মায়ার ঘানি |
খালি হাতে তালি দিয়ে কালি ব’লে উঠবো মাতি /  কালি কালি কালি বলে উঠবো মাতি
.        কালি কালি কালি বলে  /  খালি হাতে তালি দিয়ে উঠ্ বো মাতি ||


.                                **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
শ্যামা সঙ্গীত, কাজী নজরুল ইসলাম

“কালি কালি” মন্ত্র জপি ব’সে লোকের ঘোর শ্মশানে |
মা অভয়ার নামের গুণে শান্তি যদি পাই এ প্রাণে ||
এই শ্মশানে ঘুনিয়ে আছে  /  যে ছিল মোর বুকের কাছে
সে, হয়ত আবার উঠবে জেগে মা ভবানীর নাম গানে ||
সকল সুখ শান্তি আমার হ’রে নিল যে পাষাণী
শূন্য বুকে বন্দী ক’রে রাখ্ ব আমি তারেই আনি |
মোর, যাহা প্রিয় মাকে দিয়ে জেগে আছি আশা-দীপ জ্বালিয়ে,
মা’র সেই চরণের নিলাম শরণ যে চরণে আঘাত হানে ||


.                    **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
শ্যামা সঙ্গীত, কাজী নজরুল ইসলাম

.                কীর্ত্তনাঙ্গ সুর ------দাদ্ রা

কালো রূপে মন ভুলালে কালোকে আয় বাসবি ভালো |
মনের আঁধার ঘুচ্ বে রে তোর দেখিবি রূপের আলো ||
যমুনারি কালো জলে  /  কলো তমালেরি তলে
রাই এল যার বাঁশীর ভুলে সেই বাঁকা তার রূপ কালো  ||
জানিস নাক’ মহামায়ায়  /  কালো রূপে ভুবন ভোলায়,
পাগল  ভোলা বিভোর হল সেই কালো-মার চরণ তলায় |
পারের আলো দেখাবে যে সেই মরণের চরণ কালো ||

.                    **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
শ্যামা সঙ্গীত, কাজী নজরুল ইসলাম


কৃষ্ণা নিশীথ নাচে  /  ঝিল্লির নূপুর বাজে /  রিমঝিম রিমঝিম /  মৃদু আওয়াজে  ||
.           আঁধারে চাঁচর চিকুর খুলিয়া  / আপন মনে নাচে হেলিয়া দুলিয়া,
.            মুঠি মুঠি হিম-কণা তারা-ফুল তুলিয়া  /  ছুঁড়ে ফেলে ধরণী মাঝে  ||
.            তার মণি-হার খুলে পড়ে উল্কা-মানিক,  /  তার নাচের নেশায় ঝিমায় দশ্ দিক |
.            আধো রাতে আমি শুনি স্বপনে  /  তার গুঞ্জন-গীত কানে-কথা গোপনে,
.            কালো-রূপের শিখা  /  ওকি শ্যামা বালিকা  /  নাচে নাচে জাগাইতে নটরাজে ||

.                                         **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
শ্যামা সঙ্গীত, কাজী নজরুল ইসলাম


.                কে পরালো মুন্ডু-মালা /  আমার শ্যামা মায়ের গলে  |
.                সহস্রদল জীবন-কমল  /  দোলেরে যাঁর চরণ-তলে ||
.                কে বলে মোর মাকে কালো  /  মায়ের হাসি দিনের আলো,
.                মায়ের আমার গায়ের জ্যোতি /  গগন পবন জলে স্থলে  ||
.                শিবের বুকে চরণ যাঁহার  /  কেশব যাঁরে পায় না ধ্যানে,
.                শব নিয়ে সে রয় শ্মশানে  /  কে জানে কোন্ অভিমানে  ||
.                সৃষ্টিরে মা রয় আবরি’  /  সেই মা নাকি দিগম্বরী ?
.                ( তারে ) অসুরে কয় ভয়ঙ্করী  /  ভক্ত তাঁয় অভয়া বলে ||

.                                         **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
শ্যামা সঙ্গীত, কাজী নজরুল ইসলাম


.        কে বলে মোর মাকে কালো  /  মা যে আমার জ্যোতির্ম্মতী  |
.                কোটি চন্দ্র সূর্য্য তারা নিত্য করে মা’র আরতি ||
.                কালো রূপের মায়া দিয়ে  /  মহামায়া রয় লুকিয়ে,
.                মাকে আমার খুঁজে খুঁজে / নিব্ ল কোটি রবির জ্যোতি ||
.                যোগিন্দ্র যাঁর চরণ-তলে /  ধ্যান করে রে যাঁর মহিমা
.                ( মোরা ) দুটী নয়ন-প্রদীপ জ্বেলে  / খুঁজি সেই অসীমার সীমা |
.                মোরা সাজিয়ে কালি গৌরী মাকে  /  পূজা করি তমসাকে
.                মায়ের শুভ্ররূপ দেখেছে  /  শুভ্র শুচি যার ভকতি ||



.                                         **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
শ্যামা সঙ্গীত, কাজী নজরুল ইসলাম


জগৎ জুড়ে জাল ফেলেছিস্   /  শ্যামা কি তুই জেলের মেয়ে |
(  তোর ) মায়ার জালে, মহামায়া,  /  বিশ্বভুবন আছে ছেয়ে ||
প’ড়ে মা তোর মায়ার ফাঁদে  /  কোটি নরনারী কাঁদে,
তোর মায়া-জাল ততই বাঁধে /  পালাতে যায় যতই ধেয়ে ||
চতুর যে মীন সেই জানে না,  /  জাল থেকে যে মুক্তি আছে ?
( তাই ) জেলে যখন জাল ফেলে, /  সে লুকায় জেলের পায়ের কাছে |
ও মা জাল এড়িয়ে তাই সে বাঁচে
তাই মা আমি নিলাম শরণ /  তোর ও দুটী রাঙা চরণ,
( আমি ) এড়িয়ে গেলাম মায়ার বাঁধন  / মা তোর অভয় চরণ পেয়ে ||


.                                         **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
শ্যামা সঙ্গীত, কাজী নজরুল ইসলাম


জয় মহাকালি, জয় মধু-কৈটভ বিনাশিনী |
জয় যোগনিদ্রা জয় মহামায়া  /  জয় ধর্ম্ম প্রদায়িনী ||
ভয়াতুর ব্রহ্মা অসুর-আশঙ্কায়  /  বিষ্ণু নিদ্রাতুর তোমার মায়ায়,
রাজসিক সাত্ত্বিক দুই মহাদেবতায় / রক্ষা কর মা তুমি মহাভয় হারিণী ||
নীল জ্যোতির্ম্ময়ী অসীম তিমির-কুন্তলা মা গো,
আসন্ন প্রলয়-পয়োধির ঊর্দ্ধ্বে দেখা দাও, জাগো !
দশ পায়ে দশ দিকে আঘাত হানো,  / দশ হাতে দশবিধ আয়ুধ আনো,
দশ মুখ-কমলে অভয়বাণী  /  শোনাও আর্ত্তজনে বিপদ-বারিণী ||


.                        **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
শ্যামা সঙ্গীত, কাজী নজরুল ইসলাম


.                    মিশ্র দেশ----দাদ্ রা

বল রে জবা বল্  | /   কোন্ সাধনায় পেলি শ্যামা মায়ের চরণতল ||
মায়া-তরুর বাঁধন টু’টে  /  মায়ের পায়ে পড়্ লি লুটে,
মুক্তি পেলি, উঠ্ লি ফুটে আনন্দ বিহ্বল |
তোর সাধনা আমায় শেখা, জীবন হোক সফল ||
কোটি গন্ধ-কুসুম ফোটে বনে মনোলোভা
কেমনে মা’র চরণ পেলি তুই তামসী জবা |
তোর মত মার পায়ে রাতুল /  হবে কবে প্রসাদী ফুল
কবে, উঠবে রেঙে---- ওরে মায়ের পায়ের ছোঁয়া লেগে উঠ্ বে রেঙে,
কবে তোরই মত রাঙ্ বে রে মোর মলিন চিত্তদল ||


.                        **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
শ্যামা সঙ্গীত, কাজী নজরুল ইসলাম


.                    দুর্গা---- তেওড়া

মহাকালের কোলে এসে  /  গৌরী হ’ল মহাকালি |
শ্মশান-চিতার ভষ্ম মেখে /  ম্লান হ’ল  মা’ রূপের ডালি ||
তবু মায়ের রূপ কি হারায়,  /  ( সে যে ) ছড়িয়ে আছে চন্দ্রতারায় ;
মায়ের রূপের আরতি হয়  /  নিত্য সূর্য্য-প্রদীপ জ্বালি’ ||
উমা হ’ল ভৈরবী হায় বরণ ক’রে ভৈরবেরে
( হেরে’) শিবের শিরে জাহ্নবীরে শ্মশানে মশানে ফেরে |
অন্ন দিয়ে ত্রি-জগতে /  অন্নদা মোর বেড়ায় পথে,
ভিক্ষু শিবের অনুরাগে  /  ভিক্ষা মাগে রাজ-দুলালী |


.                        **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
শ্যামা সঙ্গীত, কাজী নজরুল ইসলাম


.                        ভূপালী---- দাদ্ রা
      
.               শ্যামা নামের লাগ্ ল আগুন  /  আমার দেহের ধূপ-কাঠিতে |
.                যত জ্বালি সুবাস তত  /  ছড়িয়ে পড়ে চারিভিতে  ||
.                ভক্তি আমার ধূমের মত  /  ঊর্দ্ধ্বে ওঠে অবিরত,
.                শিব-লোকের দেব-দেউলে মা’র শ্রীচরণ পরশিতে  ||
.                অন্তর-লোক শুদ্ধ হ’ল পবিত্র সেই ধূপ-সুবাসে,
.                নীল আকাশে চন্দ্র সম মা’র হাসিমুখ চিত্তে ভাসে |
.                সব কিছু মোর পু’ড়ে কবে  /  চিরতরে ভষ্ম হবে
.                মা’র ললাটে আঁক্ ব তিলক সেই ভষ্ম-বিভূতিতে ||



.                        **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
শ্যামা সঙ্গীত, কাজী নজরুল ইসলাম


.                                কৌশী ---- তেতাল

.        শ্মশানে জাগিছে শ্যামা, অন্তিমে সন্তানে নিতে কোলে  |
.        জননী শান্তিময়ী বসিয়া আছে ঐ চিতার আগুন ঢেকে স্নেহ-আঁচলে ||
.        সন্তানে দিতে কোল ছাড়ি সুখ-কৈলাস  
.        বরাভয় রূপে মা শ্মশানে করেন বাস,
.        কি ভয় শ্মশানে শান্তিতে যেখানে ঘুমাবি জননীর চরণ-তলে  |
.        জ্বলিয়া মরিলি কে সংসার-জ্বালায়,
.        তাহারে ডাকিছে মা “কোলে আয় কোলে আয়”
.        জীবনে শ্রান্ত ওরে ঘুম পাড়াইতে তোরে
.        কোলে তুলে নেয় মা মরণের ছলে  ||


.                        **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর