( আমার ) কালো মেয়ে পালিয়ে বেড়ায় কে দেবে তায় ধ’রে ( তারে ) যেই ধরেছি মনে করি অমনি সে যায় স’রে || বনের ফাঁকে দেখা দিয়ে / চঞ্চলা মোর যায় পালিয়ে ( দেখি ) ফুল হ’য়ে মা’র নূপুরগুলি পথে আছে ঝ’রে || তার কন্ঠহারের মুক্তাগুলি আকাশ আঙিনাতে তারা হ’য়ে ছড়িয়ে আছে দেখি আধেক রাতে | আমি কেঁদে বেড়াই কাঁদলে যদি আসে দয়া ক’রে ||
আমার কালো মেয়ে রাগ করেছে / কে দিয়েছে গালি / ( তা’রে ) কে দিয়েছে গালি | . রাগ ক’রে সে সারা গায়ে / মেখেছে তাই কালি || . যখন রাগ করে মোর অভিমানী মেয়ে . আরো মধুর লাগে তাহার হাসি মুখের চেয়ে . কে কালো দেউল করে আলো / ( অনু- ) রাগের প্রদীপ জ্বালি’ || . পরেনি সে বসনভূষণ, বাঁধেনি সে কেশ . তা’রি কাছে হার মানে রে ভুবনমোহন বেশ | . রাগিয়ে তা’রে কাঁদি যখন দুখে . দয়াময়ী মেয়ে আমার ঝাঁপিয়ে পড়ে বুকে . (আমার ) রাগী মেয়ে, তাই তা’রে দিই / জবা ফুলের ডালি ||
আমার কালো মেয়ের পায়ের তলায় / দেখে যা আলোর নাচন | মায়ের রূপ দেখে দেয় বুক পেতে শিব / যার হাতে মরণ বাঁচন || আমার কালো মেয়ের আঁধার কোলে / শিশু রবি-শশী দোলে ; (মায়ের ) একটু খানি রূপের ঝলক্ / ঐ স্নিগ্ধ বিরাট নীল-গগন || . পাগ্ লী মেয়ে এলোকেশী / নিশীথিনীর দুলিয়ে কেশ, . নেচে বেড়ায় দিনের চিতায় / লীলার রে তা’র নাইকো শেষ || . সিন্ধুতে ঐ বিন্দু খানিক / ( তার ) ঠিক্ রে পড়ে রূপের মানিক ; . বিশ্বে মায়ের রূপ ধরে না---- / মা আমার তাই দিগ্ বসন |
. ( আমার ) মা আছে রে সকল নামে . মা যে আমার সর্ব্বনাম | . যে নামে ডাক শ্যামা মাকে . পুর্ বে তাতেই মনস্কাম || . ভালোবেসে আমার শ্যামা মাকে . যার যাহা সাধ সেই নামে সে ডাকে, . সেই নামে মা দেয় যে সাড়া . কেউ শ্যামা কয়, কেহ শ্যাম || এক সাগরে মিশে গিয়ে সকল নামের নদী সেই হরি হর কৃষ্ণ ও রাম, দেখিস্ তাঁকে যদি | . নিরাকার সাকারা সে কভু . সকল জাতির উপাস্য সে প্রভু, . নয় সে নারী নয় সে পুরুষ . সর্ব্বলোকে তাঁহার ধাম | . মা যে আমার সর্ব্বনাম ||
(আমার) মা যে গোপাল-সুন্দরী | এক বৃন্তে কৃষ্ণ-কলি অপ্ রাজিতার মঞ্জরী || ( সে ) আধেক পুরুষ আধেক কৃষ্ণা নারী অর্দ্ধ কালি অর্দ্ধ বংশীধারী ; ( মা ) অর্দ্ধ অঙ্গে পীতাম্বর আধেক সে দিগম্বরী | মা যে গোপাল-সুন্দরী || ( সে ) এক পায়ে প্রেম-কুসুম ফোটায় নূপুর-পরা সেই চরণ, . ( মার ) সেই পায়ে রয় সর্প-বলয় . যে পায়ে প্রলয়-মরণ | আধ-ললাটে অগ্নি-তিলক জ্বলে চন্দ্র-লেখা আধেক ললাট-তলে শক্তিতে আর ভক্তিতে সে আছে যুগল রূপ-ধরি’ | মা যে গোলাপ-সুন্দরী ||
আমি মা ব’লে যত ডেকেছি, সে ডাক নূপুর হয়েছে ও রাঙা পায় | আমার শত বরষের কত নিবেদন ঐ চরণ জড়ায় কহিয়া যায় || ওমা তোরে নাহি পেয়ে লোকে লোকে যত অশ্রু ঝরেছে মা, মোর চোখে, সে অশ্রু-জল জবা ফুল হয়ে পূজা পেতে তোর চরণ চায় || আহা কত অপরাধ করেছিনু পদে সংহার করি সেই অপরাধ, বল্ লীলাময়ী, মিটেছে কি তোর মুন্ডমালিকা পরার সাধ | আমার যে ভক্তি পায়নি চরণতল, হয়েছে কি তা বিল্বদল, আমার মুক্তির তৃষা মুক্তকেশী মা ঐ এলোকেশ হয়ে চরণে জড়ায় ||
“কালি কালি” মন্ত্র জপি ব’সে লোকের ঘোর শ্মশানে | মা অভয়ার নামের গুণে শান্তি যদি পাই এ প্রাণে || এই শ্মশানে ঘুনিয়ে আছে / যে ছিল মোর বুকের কাছে সে, হয়ত আবার উঠবে জেগে মা ভবানীর নাম গানে || সকল সুখ শান্তি আমার হ’রে নিল যে পাষাণী শূন্য বুকে বন্দী ক’রে রাখ্ ব আমি তারেই আনি | মোর, যাহা প্রিয় মাকে দিয়ে জেগে আছি আশা-দীপ জ্বালিয়ে, মা’র সেই চরণের নিলাম শরণ যে চরণে আঘাত হানে ||
জগৎ জুড়ে জাল ফেলেছিস্ / শ্যামা কি তুই জেলের মেয়ে | ( তোর ) মায়ার জালে, মহামায়া, / বিশ্বভুবন আছে ছেয়ে || প’ড়ে মা তোর মায়ার ফাঁদে / কোটি নরনারী কাঁদে, তোর মায়া-জাল ততই বাঁধে / পালাতে যায় যতই ধেয়ে || চতুর যে মীন সেই জানে না, / জাল থেকে যে মুক্তি আছে ? ( তাই ) জেলে যখন জাল ফেলে, / সে লুকায় জেলের পায়ের কাছে | ও মা জাল এড়িয়ে তাই সে বাঁচে তাই মা আমি নিলাম শরণ / তোর ও দুটী রাঙা চরণ, ( আমি ) এড়িয়ে গেলাম মায়ার বাঁধন / মা তোর অভয় চরণ পেয়ে ||