কবি ইরা ভঞ্জের কবিতা
*
খুঁজে নাও
কবি ইরা ভঞ্জ

ব্যর্থতার আক্রোশে আক্রান্ত পৃথিবী উত্তাল
নদীর কাছে গিয়েও নদীতে নামেনি যুবক

হাল ধরতে পারেনি বলে ভাঙছে জীবন
মায়া-প্রেম হারিয়ে ঘাটে-আঘাটে প্রেম পাগল

চলতে চলতে ছুঁড়ে ফেলে পরশপাথর, নাদান
বোঝে না কে যে বন্ধু কে তার আপনজন।

মত্তোন্মাদে ঝাঁপিয়ে পড়ে, শুভাকাঙ্ক্ষীর রক্ত ঝরায়
ওলটপালট যা আছে যা পায় সবই হারায়

জননী ধরিত্রীর চোখ বেয়ে দুঃখ-জল নদী হয়ে যায়---
নামতে হবে নদীতে তোর শান্ত অস্থির নাবালক,

গভীরে যাও, মুক্তো ঝিনুক পারো পেতে হাতের পাতায়
মাটির বুকে শীতল জলে খুঁজে নাও প্রকৃত আশ্রয়।

.                  *************************  

.                                                                                   
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
চাই শাশ্বত সংখ্যাহীন সবল পরীক্ষিৎ
কবি ইরা ভঞ্জ

আমি চাই,
আমাকে প্রথম বরদানে অন্ধ করে দাও,
অনুভবের সূক্ষ্ম আলোয়
হয়ে উঠি আলোময়।

আমি চাই,
আমাকে দ্বিতীয় বরদানে দাও করে বধির।
সকল কিছু নয়, যা কিছু প্রকৃত নির্যাস
সুষমার সারাত্সারে আসুক শ্রবণে
স্বননে স্বননে শরীরী তন্তুতে তন্তুতে,

আমি চাই,
আমাকে
তৃতীয় বরদানে নয় মূক
নয় ভোরের পাখি অথবা আগুন-কুসুম।

বাস্তুহারাদের পুরনো মাটি
দিতে পারি ফিরিয়ে
লাউবীজ পুঁতে দু’মুঠো শাকান্নে
সহজ জীবন যাপনে
যারা জন্ম দেবে ব্যর্থ অভিমন্যু নয়,
অমলিন শাশ্বত সংখ্যাহীন সবল পরীক্ষিৎ।

.       *************************  

.                                                                                   
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
নবান্ন
কবি ইরা ভঞ্জ
(এই কবিতাটি সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম আন্দোলন চলা কালীন প্রতিবাদী কবিতা, ১/৬৩ এ, বিদ্যাসাগর কলোনী, কলকাতা
৭০০০৪৭ থেকে প্রকাশিত "বুলেটিন" পত্রিকার ২৫শে বৈশাখ ১৪১৪ (২০০৭) এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |)

আমি "নবান্নের" প্রধান সমাদ্দার
রাজার কূটচক্রে লুট হয়ে গেছে ধানের ক্ষেত
ভাঙা সানকি নিয়ে হাত পেতে দাঁড়িয়েছি
তোদের দরোজায় মা একটু ফ্যান দিবি'
কান্না জড়ানো রুক্ষ উত্তর ছুটে আসে
"ফ্যান দেব কিরে মিনসে
চাল বাড়ন্ত আজ ঘরে ঘরে
জানিস নে তুই সোনা ধান
ডলে দিয়েছে সামন্ত সেনারা
রক্তনদী বইছে এখন বাংলার মাঠে
আমি প্রধান হেঁকে উঠি,
দয়াল লাঠি গাছ আনো,
রাজার জাল ছিঁড়ে চলো
আমরা নতুন ধান ফলাবো,
ভাতের গন্ধে ভরে উঠবে মায়ের আঙিনায়
আবারও ইতিহাস গড়ে দেওয়া "নবান্ন" |

.       *************************  

.                                                                                   
সূচিতে . . .   
.                             
অন্যান্য কবিদের সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার সূচির পাতায় . . .    
.                                           
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায় . . .   

মিলনসাগর
*
নয়া ইতিহাস    
কবি ইরা ভঞ্জ
(
এই কবিতাটি সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম আন্দোলন চলা কালীন প্রতিবাদী কবিতা, 'একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন কমিটি'-র
পত্রিকার ১ জুলাই ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
)

পিপীলিকার পাখা ওঠে মরণের তরে
কত যে ঝাপটানি দিল তিরিশ বছরে |
"বলে লোকে, অতি বাড় বেড়ো না ঝড়ে পড়ে যাবে|"
বিশ্বায়নের গানে শিল্পায়নের ধুয়ো ধরে
শিশুর মুখের গ্রাস নেবে কেড়ে |
করতে গিয়ে ধুরন্ধর দলবাজি
দিলি যে নিজেরই মুখে চুনকালি,
যখন আগ্রাসী থাবায় আপন ঘর ভাঙে
ফেলা থুতু চাটিস তাই বারে বারে
এক কান পকেটে পুরে
দু-কান কাটাদের লজ্জা নাইরে |
আবরণ খুলে গেছে মগজের কোশে
সুচেতনার জলবিন্দুমাত্র নেই অবশেষে |
দু-হাজার সাতে গিরগিটির জাত
লিখে দিল মানবতার কালা-ইতিহাস
মানুষের বুকের রক্তে করে যারা স্নান
বাস্তুহারা শস্যহীন নিপীড়িত জন
ছিঁড়েকুটে করবে এবার স্বেচ্ছাচারী রাজা খানখান |
বেঁচে থাক ঘরে ঘরে যত ভাইবোন
মানুষের জেগেছে পিঠে কুলো বাঁধা হুঁশ আর মান
ভাঁওতাবাজিতে নয় আর অসম উন্নয়ন
নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুর দিয়েছে সাহসী আহ্বান
তারা আজ প্রতিজ্ঞায় অটল, প্রতিবাদী
বিনা যুদ্ধে দেবে না কণামাত্র আবাদি ভূমি,
নজির গড়ল তাবৎ মানুষই
দেশবাসীর জন্য দেশ, দেশের জন্য নয়া ইতিহাস
                       আমরাই গড়ে তুলি |

.       *************************  

.                                                                                   
সূচিতে . . .   
.                             
অন্যান্য কবিদের সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার সূচির পাতায় . . .    
.                                           
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায় . . .   

মিলনসাগর