কবি ডলি মিদ্যার কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।   www.milansagar.com
১।    প্রেরণা        
২।    
মেয়ের আত্মকথা        
৩।    
দ্বন্দ্ব       
৪।    
         
৫।    
ক্ষতি        
৬।    
র্দার আড়ালে      
৭।    
শ্রাবণ সন্ধ্যায়      
৮।    
লম     
৯।    
নির্বাচন       
      


.    
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা
১।    অহংকারের চিতা             
   
               

*
অহংকারের চিতা
ডলি মিদ্যা

ভেবে দেখো, সময় তো নেই
যাবার বেলা শেষ খেলা
মৃত্যু দাঁড়িয়ে
যুদ্ধের দাদামা বাজে,
মাঠে ঘাটে জ্বলছে দাবানল,
পিছোবার পথ নেই
কথা দেওয়া আছে |
মৃত্যু আসছে পিছে পিছে
পালাবার চেষ্টা মিছে
মাঠে ঘাটে এসেছে জোয়ার
দাম্ভিক, থাকো দূরে
চৃর্ণ হোক শেষ অহংকার |
যুবতী নারী ধর্ষণে ধর্ষণে
হচ্ছে ক্ষীণ
মৌন মুক শব্দহীন
শিশুদের জরাসন্ধ করে
ভাসাও নদীর জলে
না গর্ত খুঁড়ে!
অনেক উঁচুতে উঠতে চাও |
তাকাও না পিছনে ফিরে
জ্বলছে শ্মশানে চিতা অনেক
এবার জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড
কার অপেক্ষায়!

.              **************     
.                                                                                                   
উপরে        
.                                                          
অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                                                     সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত  
   
এই কবিতাটি  দুর্গাদাস মিদ্যা  সম্পাদিত 'আরাত্রিক' পত্রিকার প্রতিবাদ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |

মিলনসাগ
[ একটি অনুরোধ - এই সাইট থেকে আপনার ব্ লগ্ বা সাইটে, আমাদের কোন লেখা, কবিতা
বা তার অংশবিশেষ নিলে, আমাদের মূল পাতা
http://www.milansagar.com/index.html
দয়া করে একটি ফিরতি লিঙ্ক দেবেন আপনার ব্ লগ্  বা সাইট থেকে, ধন্যবাদ ! ]
*
প্রেরণা     

কখনো নিজেকে কষ্ট দিয়ে রাত জাগি
কখনো আঁধারে চাঁদ ধরার চেষ্টা করি
কখনো চাঁদের মত শিশুকে হাসতে দেখি
কখনো পূর্ণতা পেতে ছাই ভস্ম মাখি |
কখনো ভালো মানুষ দেখলে প্রেরণা জাগে
কখনো রাত গভীর হ'লে থাকি অনুরাগে |
কখনো আত্মাকে জানলে দূরে রয় ভয় |
কখনো সব কিছু ভুলে একেলা থাকতে হয় |

.               **************                              
.                                                                      
উপরে
.                                   অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                            সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


মিলনসাগর
*
মেয়ের আত্মকথা        

নতুন জায়গায় এসে জেনেছিলাম
সব কিছু মানিয়ে নিতে হবে
বলতে হয়নি, পা টিপে টিপে হেঁটেছি |
কোথায় পিচ্ছিল, কোথায় পিচ্ছিল নেই
চালচলন হাবভাব চিনিয়ে দিতে হয়নি |
এমন কি বাড়ির মানুষ জনকেও |
এই বাড়িতে এসে সবার সঙ্গে
ডুবে থাকতে চেয়েছিলাম |
কিছুদিন পর দেখি
.              সর ছাড়া ছাড়া ভাব
আস্তে আস্তে স্মৃতি থেকে
গেরো খসে পড়ে |
চোখের কোণে অসংখ্য জমা
বিন্দু বিন্দু জল |
জরায়ূর কান্না কেউ শোনে না |
অস্পষ্ট চোখে চাওয়া পাওয়া হীন
হতাশার অদ্ভুত এক জীবন |


.          **************                              
.                                                                      
উপরে
.                                   অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                            সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


মিলনসাগর
*
দ্বন্দ্ব             

কূট কচালি দিয়ে জগৎ বশ করা
দশের অন্ধকারে নিজেকে না হারিয়ে
হার জিতের প্রশ্ন থাকতে পারে বুঝে
রুটিন মাফিক কাজগুলো সেরে ফেলো |
ভেতরের দাহ্য পদার্থ সরিয়ে রাখো
অগ্নিকাণ্ডের ভয় থাকতে পারে |
তবুও কিছু ঠাণ্ডা ব্যবস্থা করে রেখো
দৈবাৎ কিছু ঘটতে পারে এটা জেনে |
পেট ঙূটভূট আমাশার লক্ষণ, না,
ভাষা সঞ্চয়ে রাখলে এরকম হয়
অথবা মনের মত মানুষের দেখা না পেলে |

.          **************                              
.                                                                      
উপরে
.                                   অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                            সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


মিলনসাগর
*
ভয়             

এই মূর্খ মন শুধু
এপাশ ওপাশ করে
জানে না কাকে খোঁজে সে
গলা যে শুকিয়ে কাঠ |

ভয় না ভয়ের মত
যেন তাকে হাতড়ায়
হাতের ছোঁয়া তাকে
জাগিয়ে তোলার ভান |

নিজেকে সরিয়ে রাখা
এ যে ভয়ঙ্কর খেলা
মূর্খ মন তুমি বোঝো
ভয়ের অন্য ভাষা কী |

.     ***********                              
.                                                                      
উপরে
.                                   অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                            সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


মিলনসাগর
*
ক্ষতি                       

নির্লজ্জ আকাশে অশনি সংকেত
ঘিরে ফেলে চারি দিক গাঢ় অন্ধকারে
এ-কি বৃষ্টির সংকেত, নাকি উল্কাপাত
বিস্ফোরক ঝড় উঠছে উঠবেই |

কিশোরীর বুক চিরে ঝড়ে শব্দে
নাড়ী ছেঁড়া ভ্রুণ ককিয়ে ওঠে
ভেতরে ক্রোধ | দাউ দাউ আগুন জ্বলে
তবুও নির্লজ্জ আকাশ পিছু ছাড়ে না |

অমর্ত্য জীবন ফিরে পাবো কবে
সেই ভেবে পোড়া চোখে ঘুম আসে না |
কিলবিল করে শত ক্ষত মনের গভীরে
ভাবি কি ভাবে বাঁচা যায় নরাধম এ সংসারে |

.     ***********                              
.                                                                      
উপরে
.                                   অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                            সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


মিলনসাগর
*
পর্দার আড়ালে                       

আমি মরার মত বাঁচতে চাই না
শুধু পৃথিবীটাকে চিনে নিতে পারি সেইটুকু |
মাথা উঁচু করে তাকাতেই দেখি
সামনে কালো পর্দায় ঢাকা |
দুহাত দিয়ে সরিয়ে দেখলাম
পর্দার আড়ালে কালো কালো মুখোশ
মুখোশগুলো দুহাত দিয়ে ধরতে গেলে
অন্ধকার আমাকে ঘিরে ফেলে
আমি অন্ধকারে নিজেকে হারিয়ে
আমার হাতদুটো খুঁজে বেড়াই |

.          *****************                              
.                                                                      
উপরে
.                                   অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                            সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


মিলনসাগর
*
শ্রাবণ সন্ধ্যায়                       

সেই দিনও কি ছিল শ্রাবণের মেঘ
নিকষ কালো অন্ধকারে আচ্ছাদিত
অনবরত শোনায় গুড় গুড় গর্জন
নারীর ক্রন্দন |
চারিদিকে একই সুরে কান্নার আওয়াজ
কে কোথায় ? কে কোথায় শুধু ডাকে ধ্বনি |
নাম গোত্রহীন, পরিচয়হীন লাশগুলো
তখনো উঠছে, শুধু উঠছে গোপনে গোপনে,
আত্মীয় স্বজন হতচকিত হয়ে
আপন জনকে খুঁজছে |
এই শব্দ এ আওয়াজ মানুষকে করে অসহায় |
গুড় গুড় করে গুলির বর্ষণ
যখন তখন কানে ভেসে আসে
শ্রাবন সন্ধ্যায় |

.          *****************                              
.                                                                      
উপরে
.                                   অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                            সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


মিলনসাগর
*
কলম                       

কলম, তুমি লিখতে পারো
শিখিয়ে দেবে কোনো কিছুর বিনিময়ে
অনেক চিঠি পাঠাবো
কোন এক অজানা দেশে
আসল বেশে নয়, পুরোটা ছদ্মবেশে |

দেশ দেশান্তর থেকে চিঠিগুলো যখন ভাসবে
তখন তোমাকে ডেকে পাঠাবো,
নির্জন নিরিবিলি ধানখেতগুলো
যখন সবুজে সবুজে আমাদের
দুজনকে মুড়ে ফেলবে,  কেউ আমাদের
দেখতে পাবে না, এ খেত ও খেত লুকোচুরি
খেলব | দুচারটে ধানের গুছি পা-মাড়িয়ে
চলে যাব | কাউকে জানতে দেব না |
আস্তে করে ওদের আবার সোজা করে
দাঁড় করিয়ে দেব | পাকা ধান খামারে
এলে তোমাকে চিঠি পাঠাব |
তুমি আমার সঙ্গে ধান মাপা শিখবে
খড়ের আঁটি বাঁধা, এসব শুনে রাখো
কলম, সব কিছু লেখার বিনিময়ে |
টিপসই দেব না আর | এবার তোমাকে
দিয়ে সই করিয়ে নেব | কলম
বিশ্বাসঘাতকতা কোরো না যেন!

.          *****************                              
.                                                                      
উপরে
.                                   অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                            সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


মিলনসাগর
*
নির্বাচন                       

ওরা বদলাতে চেয়েছিল রাত্রিটাকে
ভেবেছিল ছিঁড়ে আনবে নতুন সকাল |
জোটবদ্ধ সারি দিয়ে
দৃঢ়বদ্ধ সিদ্ধান্তে ব্যালটের মধ্য দিয়ে
নিশ্চিন্তে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল |

বদলে গেল রাজা | কিন্তু অবাক
বদল হ'ল না ওদের হাঁড়ির হাল |
আজও মাথার উপরে নিরাপত্তার স্তম্ভ নেই
মানুষের দাবিতে বেঁচে থাকার
দম্ভ নেই | যেন সূতোর খেই
হারাচ্ছে আজকাল |

এখনও অন্ধকার ঘর
রাত্রির আগমনে
এখনও রুগ্ন শিশুরা
ঘুরে দুমুঠো অন্নের সন্ধানে |

এখনও বন্ধ শিক্ষার দরজা
কতটুকু পাওয়া যায়
কতটুকু পাওয়া উচিৎ
দিনরাত শুধু তার সূত্রটুকু খোঁজা |

এখনও বেআব্রু যৌবন
উঁকি মারে জীবনের কিনারে
এখনও পথ্যহীন শিশু নিঃসাড়
পড়ে থাকে ধুম জ্বরে |

অথচ এরাও ছিল একান্ত
অনুগত গণতন্ত্রের সৈনিক
মতামত জানিয়েছে চটের আড়ালে
ঘিরে থাকা আলাদ্দিনের আশ্চর্য প্রদীপ |

.          *****************                              
.                                                                      
উপরে
.                                   অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
.                            সিঙ্গুরের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত       


মিলনসাগর