গণতন্ত্র-বাম-চোখ কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক ছিতামনির চোখ, লক্ষ্মীমণির পেটে লাথি তো বিশাল ঘটনা | তাই থেকে বারুদে আগুণ লাগলো জঙ্গলমহলে | কিন্তু তার মাস তিনেক পরে মুখ্যমন্ত্রীর পূর্ব মেদিনীপুর সফর নিয়ে নিরাপত্তা প্রস্তুতির ঘটা, তা থেকেই এ গান | [ স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর ২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া। ]
পাখী বলে চোখ গেল রে ছিতামণির চোখ গেল, বন্দুকেরই কুঁদোর ঘায়ে বা চক্ষুটা থেঁতলালো |
বউ কথা কও সাধে পাখি বউ তো পাথর, নেই সাড়া, পোয়াতি-মা’র পেটের বাচ্চা লাথির চোটে যায় মারা
সব্বেনেশে গণতন্তর ফক্কা ভোটের নেতা খেলায় পাঞ্জা ছক্কা কেবল কোন্দল কুলকুলি তুই থুলি না মুই থুলি, গুণ্ডা-পুলিশ-হার্মাদেরা বাজায় টরে-টক্কা ||
কোয়েল বলে কু দেবোনা গান ধরি বল্ কোন্ সুখে | অপমানের মেঘের কালো মা-বোনেদের চোখ মুখে |
ময়না বলে সয়না সয়না শরম ভরম সব খেলে | তবু কেন হয়না সাজা খেলনা আইন দাও ফেলে |
সব্বোনেশে গণতন্তর -------- বাজায় টরে টক্কা ||
বগা নেতার জনসভা পুলিশ যাবে এককাড়ি | যাবার পথে ইধার উধার উজার বস্তি ঘরবাড়ি |
ধোপদুরস্ত মুচ্ কি হাসি ধমক-ধামক উস্কানি ভুল-ভাল্ সব বাসি কথা ওই নেতাই চোখের মণি
সব্বোনেশে গণতন্তর -------- বাজায় টরে টক্কা ||
দোয়েল বলে দোহাই তোদের আর দেয়ালা করিস না | তামাম দেশের মালিক হয়ে এমন করে মারিস না |
বাজ বলে রাজ তোদেরই তো ঝাপটে ডানা উড়াল দে | পরগাছাদের নিকেশ করে হিসেব কিতেব মিটিয়ে নে |
বিচার করো কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক এ রাজ্যে কালাকানুন U A P A এর দু নম্বর বন্দী স্বপন দাশগুপ্ত | বাম মানসিকতা যাদের, যাঁরা গণতন্ত্রপ্রিয়, যাঁরা মানবিধিকার আন্দোলন করেন, তারা সকলেই মনে করেন যে স্বপন দাশগুপ্ত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বলি | তাকে খুন করা হযেছে | [ স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর ২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া। ]
নালিশ করবো কারে ! আমার মামলা রুজু করি . মানুষের দরবারে || এ মামলা তো খুনের মামলা, আমি ফরিয়াদি তোমরা উকিল জজ্ ম্যাজিষ্টর, সরকার অপরাধী | ( তাই ) মামলা দিলাম সবার বড়ো . আদালতের ধারে ||
পিপ্ লস মার্চ পত্রিকা করতো বন্ধু স্বপন দাশগুপ্ত, ছাপতো বিপ্লবেরই কথা দমন পীড়ন বিরোধিতা, করতো না তোয়াক্কা কোনো পার্টি বা সরকারে |
সাংবাদিকের স্বাধীনতা ওসব কেবল কথার কথা, ইউ-এ পি-এ আইন কেন আটক করলো তারে ! এই আমার প্রথম ফরিয়াদ . মানুষের দরবারে ||
মানুষটা অসুস্থ ছিল, ওষুধ পথ্য বন্ধ হোলো, বাঁচবে না আর বুঝে নিলো, তা-পর হাসপাতালে দিলো, ( কেন ) দেখা করতে দেয়নি আত্মীয় বন্ধুরে !
ঠাণ্ডা মাথায় নিসেব করে মেরেই ছাড়লো মানুষটারে জ্যান্তে মারার এ চক্রান্ত চললো কারাগারে | ছ-নম্বর ফরিয়াদ আমার . মানুষের দরবারে ||
কি বিপদ! কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক কর্পোরেট পুঁজির দারোগা—এদেশের সব রাজনৈতিক দল, সব নেতা | ওরা নেপো | বাপের লুটে খাবার পরিকল্পনা জল জঙ্গল জমি দখলের জন্য কত কি করছে | কিন্তু ফাঁস হয়ে গেছে উন্নয়নের নামে এসব কানামাছি খেলা | শুরু লড়াই এবং ভাঙতে লড়াই ভাঙতে ‘অপারেশন গ্রীণহান্ট’ | তবু ----- | [ স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর ২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া। ]
রাজনৈতিক দল, মুখ ও মুখোশ কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক পরিবর্তন কি ব্যবস্থায় চাইছে, কোনো রাজনৈতিক দল | ভোট বাজেরা চাইছে না | সুশীল সমাজ ? না তারাও নয় | পরিবর্তন আসছে বিপ্লবী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে | জনগণ সে পরিবর্তন চায় আর তারাও পরিবর্তনের মূল শক্তি | জানুয়ারী, ২০১০ | [ স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর ২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া। ]
এ কোন যুদ্ধ! কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক জনগণের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ এবং ইতিহাসের শিক্ষা এই গানে | ২০০৯ থেকে গেয়েছি | [ স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর ২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া। ]
যুদ্ধ জারি করেছে সরকারে হে . সরকারে করেছে যুদ্ধ জারি ||
ভালো করার মুরোদ তো নাই, গদির গুমোর বড়ো বালাই, আসল কাজ তো বড়ো পুঁজির উমেদারি |
লালগড়ের ডাক এসেছে কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক নকশালবাড়ীর ধারাবাহিকতায় লালগড় আন্দোলন | সুরজগড় থেকে লালগড় --- সামান্য বিরোধী সংগ্রামের উজ্জ্বল ধারাবাহিকতা | দলমত নির্বিশেষে সমস্ত গণতন্ত্রপ্রিয় ও দেশপ্রেমিক মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ লড়াইয়ে পাশে দাঁড়াতেই হবে | এটাই সময়ের ডাক, ঐতিহাসিক দায় মে / ২০০৯ | [ স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর ২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া। ]
নতুন করে নতুন সুরে লাগুক আগুন উঠুক তুফান | লালগড়েরই ডাক এসেছে | জাগো মজুর জাগো কিষাণ ||
হাজার বুকের পাঁজরা দিয়ে আঁধার ভাঙা বাজ বানিয়ে, এগিয়ে চলো হাত তুলে শহীদ সাথীর স্বপ্ন নিশান ||
গ্রীণহান্টের ছড়া গান ? কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক ছড়া, গানও হয় | হয়েছে | গ্রীণহান্ট অপারেশানে কে দেখা, যদিও হাল্কা চলে , তবু মর্মবস্তু বোঝ হয় মার খায় না | পৈশাচিক বর্বরতা ও রাষ্ট্রীয় সম্ত্রাসকে তুলে ধরার ধরার চেষ্টায়, আগষ্ট, ২০০৯ | [ স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর ২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া। ]
লাচার লাগছে কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক ২৫শে মে , ২০১০ এ জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় মৃত ও আহতদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা | বলার অপেক্ষা রাখেনা যে কারা দায়ী সে প্রশ্নে সঠিক অবস্থান নেওয়া খুবই কঠিন ছিলো | [ স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর ২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া। ]
বিপ্লবী গুপীদাকে মনে রেখে কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক আজীবন বিপ্লবী গুপীদা আর নেই | গণ আন্দোলনের জমায়েত-কর্মসূচীতে তার দেখা আমার সাথে | সখ্য নয় –বন্ধুত্ব নয়, সে এক অন্য অন্তরঙ্গ পরিচয় | তাই এ গান তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা | ১৩ / ৭ / ২০১০ | [ স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর ২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া। ]
তার ইমানের মানের দায়ে, শূন্যতাটা ভরাট করো | লাল টুকটুক নিশানটা তার, হাজার হাতে উঁচিয়ে ধরো ||
নেই এ দুখের কোনো দাওয়াই, মিছিলটা টান্ টান্ রাখো ভাই | একতার হাত ছড়িয়ে দিয়ে, প্রতিরোধের দেয়াল গড়ো ||
বুকের ক্ষত তাজাই রবে, পেছল পথে দিশা পাবে | চিতার আগুন চোখের তারায়, ঝলসে উঠুক আরো আরো ||
মতের পথের বাঁকে মোড়ে, ঘুরিস নে কু-আশার ঘোরে | পাখির চোখটা লক্ষ্য রেখে, লড়াই লড়াই শ্লোগান ধরো || লালগড় আর লাল দুনিয়া, তার দুচোখের খোয়াব নিয়া | শিকল ভাঙার ছন্দে সুরে, কদম্ কদম্ সামনে বড়হো ||
কামারশালায় লেগেছে আগুন কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক শঙ্খ ঘোষ মশাইয়ের অনুবাদে চেরাবান্ডারাজুর এই কবিতাটি ‘বিপ্লবী লেখক শিল্পী বুদ্ধিজীবি সংঘ’ দ্বারা প্রকাশিত ঢেউয়ে ঢেউয়ে তলোয়ার নামক কবিতা সংকলনে ছিল | প্রথম নিজের সুরে গাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম | বলা যায়, সেটাই আমার সুর সংযোজন করার চেষ্টা | অবশ্য ১৯৮৩ সালের সে চেষ্টা বিফল হয়নি বলা যেতেই পারে | [ স্বপন দাসাধিকারী সম্পাদিত, ‘এবং জলার্ক, সঙ্গীত সমাজ ইতিহাস’ এপ্রিল—সেপ্টেম্বর ২০১০ সংখ্যা থেকে নেওয়া। ]
কামারশালায় লেগেছে আগুন প্রতিটি হাপর ফুঁসছে, আগুনে আগু জ্বালো সাথী জ্বালো প্রতীক্ষা করে থেকো না কখন ভোরের সূর্য উঠছে ||
পড়শি তোমার নেমে গেছে মাঠে রুখা শুখা মাটি চষতে, তুমিও লাঙল ধরো সাথী ধরো চলে গেলে ফিরে পাবে না সময় বসো না হিসেব কষতে ||
উর্বরা জমি চাই যে তোমার চাই উপযোগী সার, ঠাঁই চাই মাথা গোঁজার জন্য গরুর গাড়ীর চাকা দুটিও যে বদলানো দরকার ||
বজ্র নিনাদে জাগছে তরাই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, চোখ রাখো সেই অশনি ঝলকে লাঙলের ফালে শান দাও, লড়াই বাঁচার জন্য ||