কবিদ্বয় রাসু ও নৃসিংহ-র গান
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
*
ইহাই ভাবি হে গোবিন্দ সঘনে
আঁখি হাসে, পরানও পোড়ে আগুন
|
কী দোষ বুঝিলে, রাধারে ত্যজিলে,
কুঁজিরে পূজিলে কী গুণে ||
জগত সংসার, ভুলাইতে পার,
তোমর বঙ্কিম নয়নে |

ওহে কুঁজি অবহেলে,                     বসিয়ে বিরলে,
তোমারে ভুলালে কী গুণে ||
শ্যাম,রূপে গুণে পূর্ণ,                        সকলই সুধন্য,
অতুল্য লাবণ্য রাধারও |
ইহাই ভেবে মরি,                        কুবুজাবিহারি,
কী সুখে হয়েছ নাগর ||
শ্যাম, রূপের বিচার,                        যদি মনে কর,
মজেছে যাহার কারণে|
ওহে লক্ষ কুবুজারও,                        রূপের ভান্ডার,
শ্রীমতী রাধার চরণে||
শ্যাম, গুণের গরিমা,                        কী কহিব সীমে,
আগামে যাহার প্রমাণ |
যার গুণ গেয়ে,                        মুরলী বাজায়ে,
নাম ধর বংশীবদনো ||
শ্যাম, যার গুণাগুণ,                        করিতে সাধন,
সনাতন গেল কাননে |
ওহে এ বড়ো বেদন,                 ত্যজিয়ে সে ধন,
অধনে রেখেছ যতনে ||
শ্যাম, আপনার অঙ্গ,                   যেমন ত্রিভঙ্গ,
কালিয় ভূজঙ্গ কুটিলে |
কুবুজার অঙ্গ,                           রসের তরঙ্গ,
তাহাতে শ্রীঅঙ্গ ডুবালে ||
শ্যাম, এই ভূমন্ডলে,                        আধো গঙ্গাজলে,
রাধাকৃষ্ণ বলে নিদানে|
এখন কুঁজি-কৃষ্ণবলে,                        ডাকিবে সকলে,
ভুবন তরারে দুজনে ||
শ্যাম ত্যজিলে শ্রীমতী,           তাহাতে কী ক্ষতি,
যুবতি সকলি সহিল |
ভুজঙ্গমাণিক,                          হরে নিল ভেক
মরমে এ দুখ রহিল ||
শ্যাম, প্রদীপের আলো,প্রকাশ পাইল,
চন্দ্রমা লুকাল গগনে |
ওহে গোখুরের জল, জগতব্যাপিল,
সাগর শুকাল তপনে ||


.  
                                             **************                                          উপরে


মিলনসাগর
*
প্রাণনাথ মোর,                        সেজেছেন শংকর,
দেখসিয়ে প্রিয়ে ললিতে
|
অপরূপ দরশন, আজু প্রভাতে
|
বুঝি কারো কাছে,                        রজনি জেগেছে,
নয়ন লেগেছে ঢুলিতে
||
পার্ব্বতীনাথের,                                     অর্ধ-শশধর,
সবিতা অর্ধ কপালেতে
|
আমার নাগর,                                সেজেছেন সুন্দর,
চন্দন সিন্দূর ভালেতে
||
হায়! মথনের বিষ                         ভখিয়ে মহেশ,
নীল-কন্ঠদেশে নিশানা
|
নীলকন্ঠ নাম,                                অতি অনুপাম,
জগতে রয়েছে ঘোষণা ||
আমার নাগর,                                গিয়েছিলেন কারো,
কলঙ্ক-সাগর মথিতে|
ফুরায়ে মন্থন,                                  এনেছেন নিশান,
আঁখির অঞ্জন গলাতে ||
হায়! সে যেমন ভোলা তাহাতে উজ্জ্বলা,
গলে অস্থিমালা ছড়াতে |
মুখে কৃষ্ণ নাম,                         শিঙায় বলে রাম,
বিশ্রাম কুচনীপাড়াতে ||
পোহায় রজনি,                                     এই গুণমণি,
এসেছেন মন তুষিতে |
গুঞ্জছড়া গলে,                                  মুখে সুধা ঢালে,
রাধা রাধা বলে বাঁশিতে ||
হায়! ত্রিলোচন,                         হর, জগতে প্রচার,
এক চক্ষু যার কপালে |
কৃষ্ণপ্রেমে ভোরা,                            পাগলের পারা,
ধুতুরা শ্রবণযুগলে ||
ইহারও সেইমতো,                              সপত্র সহিত,
কদম্ব শ্রবণযুগেতে|
ত্রিলোচনচিহ্ন                                 দেখ দীপ্যমান,
কপালে কঙ্কণ আঘাতে ||


.                                               **************                                          
উপরে


মিলনসাগর
*
শ্রীমতীর মন,                               মানেতে মগন,
ওখানে এখন যেয়ো না |
মানা করি কলহ আর বাড়াও না |
বিষাদের বাতি,                        জ্বেলেছেন শ্রীমতী,
তাহাতে আহুতি দিয়ো না||
নিবেদন করি,                             ফিরে যাও হরি,
দুয়ারে দাঁড়ায়ে থেকো না |
কত নারীর সঙ্গে,                         করেছ কী রঙ্গ,
শ্রীমতীর শ্রীঅঙ্গ ছুঁয়ো না ||
শ্যাম,নিতি নিতি তব,                দেখি হে যে ভাব,
তথাচ সে সব পাসরি |
এ বারে তোমার,                     রাধা পাওয়া ভার,
যে ভাবে বসেছেন কিশোরী ||
জিনি মেরুগিরি,                          মানভরে ভারি,
মরিবার ভয় করে না |
যদি গিরিধারী,                           হতে চাহ হরি,
মনে করি রাধা পাবে না |
শ্যাম, কার ভাবে ভুলে,                 কহ কোথা ছিলে,
মজেছিলে কার প্রেমেতে |
প্রভাতে কেমনে,                         আইলে এ স্থানে,
নিলাজ বদন দেখাতে ||
সুখের নিশিতে,                         এখানে আসিতে,
তোমার মনেতে ছিল না |
বিপক্ষ হাসাতে,                          এসেছ প্রভাতে
করিতে কপট ছলনা ||
শ্যাম, শরমে কী করে,                বলি হে তোমারে,
শ্রীমতী রাধার কথাটি |
এবারে মাধবে,                        যে আনি মিলাবে,
সে খাবে রাধার মাথাটি ||
দিয়ে পদ দুটি,                        মাড়াবে যে মাটি,
শ্রীমতী তো সেটি ছোঁবে না|
তুলিয়ে সে মাটি,                        দিবে ছড়া ঝাঁটি,
শ্রীরাধার এটি কটকেনা ||


.                                               **************                                          
উপরে


মিলনসাগর
*
সখি, এ সকল প্রেম নয় |
ইহাতে মজিয়ে নাহি সুখের উদয়
|
সুহৃদভঞ্জন, লোকগঞ্জন,
কলঙ্কভাজন হতে হয়
||
এমন পিরিত করি,                  যাতে তরি দুদিক |
ঐহিক আর পার্থিক
|
শ্রীনন্দনন্দন,                                    দুখভঞ্জন,
সদা রাখি, মন তাঁরি পায়
||
অমিয় তেজে,          
                      গরলে মজে,
উপজে কী সুখ
|
কলঙ্ক ঘোষণা জগতে, মরণ হতে অধিক
||
হৃদয়মন্দিরমাঝে,        
               রসরাজে বসায়,
দেখিব আঁখি মুদিয়ে|
বিকায়ে সে পদে,      
                      বাঁধিব হৃদে,
কলঙ্ক বিচ্ছেদে নাহি ভয়
||
মনেরে করে চাতকপাখি, রাখিব বিশেষে
|
জলং দেহি জলং দেহি ডাকিব প্রেমের প্রয়াসে ||
ধ্বজবজ্রাঙ্কুশ পদ, সে নীরদ হইতে,
জাহ্নবী হলেন যাহাতে |
সেই কৃপা জলে,         
                     মন ডুবালে,
কালেরে করিব পরাজয় ||
কমলজ জন, সেবিত ধন, অরুণ চরণ
|
মনের তিমির বিনাশে, পাইলে কিরণ |
হৃদে আছে শতদল,  সে কমল ফুটিবে,
প্রেম পীযূষ ঘটিবে|
মন মধুব্রত,             
                হয়ে যেন রত,
সেই নামামৃতসুধা খায় ||
অমিয় আর গরল, দুই রাখিয়ে সাক্ষাতে,
নয়ন দিয়েছেন বিধাতা, দেখিয়ে ভখিতে!
ত্যজিয়ে এ সুধারস, কেন বিষ ভখিব,
কলুষ কূপে ডুবিব |
থাকিতে নয়ন,            
             অন্ধ সেই জন,
পেয়ে প্রেমধন সে হারায় ||


.                                               **************                                          
উপরে


মিলনসাগর
*
কহ সখি কিছু প্রেমেরই কথা |
ঘুচাও আমার মনের ব্য
থা |
করিলে শ্রবণ,                             হয় দিব্য জ্ঞান,
হেন প্রেমধন, উপজে কোথা |
আমি এসেছি বিবাগে,                      মনের বিরাগে,
প্রীতিপ্রয়াগে, মুড়াব মাথা ||
আমি রসিকের স্থান,         
            পেয়েছি সন্ধান |
তুমি নাকি জান, প্রেমবারতা
|
কাপট্য ত্যজিয়ে,           
               কহ বিবরিয়ে,
ইহার লাগিয়ে, এসেছি হেথা
||
হায়! কোন প্রেম লাগি,   
              প্রহ্লাদও বৈরাগী,
মহাদেব যোগী, কেমন প্রেমে
|
কী প্রেমকারণে,           
                    ভগীরথ জনে,
ভাগীরথী আনে, ভারতভূমে
||
কোন প্রেমে হরি,        
                   বধে ব্রজনারী,
গেল মধুপুরী, করে অনাথা
|
কোন প্রেমফলে,          
               কালিন্দীর কূলে,
কৃষ্ণপদ পেলে, মাধবীবতা ||


.                                               **************                                          
উপরে


মিলনসাগর
*
রসিক হইয়ে এমন কে করে |
কান্ডারি হইয়ে, তরঙ্গে ডুবায়ে,
রঙ্গ দেখে গিয়ে, দাঁড়ায়ে দূরে|
প্রাণ তুমি হে লম্পট, নিতান্ত কপট,
প্রকাশিলে শঠ খল আচারে |
নহে কে বা কোথা, এত নিষ্ঠুরতা,
করেছ সর্বথা নিজ জনারে ||
প্রাণ, আরো এক শুনো, বচনে তোমার ,
দাঁড়ালেম কুলের বাহিরে |
প্রাণ তুমি জেনে শুনে, বিরহতুফানে
ভাসালে এ জনে, ছলনা করে ||
তোমার চরিত, পথিক যেমতো,
হয়ে শ্রান্তিযুত, বিশ্রাম করে |
শ্রান্তি দূর হলে,যায় সেই চলে,
পুন নাহি চায় ফিরে ||


.                                               **************                                          
উপরে


মিলনসাগর