কবিদ্বয় রাসু ও নৃসিংহ-এর গান যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে। |
ইহাই ভাবি হে গোবিন্দ সঘনে আঁখি হাসে, পরানও পোড়ে আগুন | কী দোষ বুঝিলে, রাধারে ত্যজিলে, কুঁজিরে পূজিলে কী গুণে || জগত সংসার, ভুলাইতে পার, তোমর বঙ্কিম নয়নে | ওহে কুঁজি অবহেলে, বসিয়ে বিরলে, তোমারে ভুলালে কী গুণে || শ্যাম,রূপে গুণে পূর্ণ, সকলই সুধন্য, অতুল্য লাবণ্য রাধারও | ইহাই ভেবে মরি, কুবুজাবিহারি, কী সুখে হয়েছ নাগর || শ্যাম, রূপের বিচার, যদি মনে কর, মজেছে যাহার কারণে| ওহে লক্ষ কুবুজারও, রূপের ভান্ডার, শ্রীমতী রাধার চরণে|| শ্যাম, গুণের গরিমা, কী কহিব সীমে, আগামে যাহার প্রমাণ | যার গুণ গেয়ে, মুরলী বাজায়ে, নাম ধর বংশীবদনো || শ্যাম, যার গুণাগুণ, করিতে সাধন, সনাতন গেল কাননে | ওহে এ বড়ো বেদন, ত্যজিয়ে সে ধন, অধনে রেখেছ যতনে || শ্যাম, আপনার অঙ্গ, যেমন ত্রিভঙ্গ, কালিয় ভূজঙ্গ কুটিলে | কুবুজার অঙ্গ, রসের তরঙ্গ, তাহাতে শ্রীঅঙ্গ ডুবালে || শ্যাম, এই ভূমন্ডলে, আধো গঙ্গাজলে, রাধাকৃষ্ণ বলে নিদানে| এখন কুঁজি-কৃষ্ণবলে, ডাকিবে সকলে, ভুবন তরারে দুজনে || শ্যাম ত্যজিলে শ্রীমতী, তাহাতে কী ক্ষতি, যুবতি সকলি সহিল | ভুজঙ্গমাণিক, হরে নিল ভেক মরমে এ দুখ রহিল || শ্যাম, প্রদীপের আলো,প্রকাশ পাইল, চন্দ্রমা লুকাল গগনে | ওহে গোখুরের জল, জগতব্যাপিল, সাগর শুকাল তপনে || . ************** উপরে মিলনসাগর |
প্রাণনাথ মোর, সেজেছেন শংকর, দেখসিয়ে প্রিয়ে ললিতে | অপরূপ দরশন, আজু প্রভাতে | বুঝি কারো কাছে, রজনি জেগেছে, নয়ন লেগেছে ঢুলিতে || পার্ব্বতীনাথের, অর্ধ-শশধর, সবিতা অর্ধ কপালেতে | আমার নাগর, সেজেছেন সুন্দর, চন্দন সিন্দূর ভালেতে || হায়! মথনের বিষ ভখিয়ে মহেশ, নীল-কন্ঠদেশে নিশানা | নীলকন্ঠ নাম, অতি অনুপাম, জগতে রয়েছে ঘোষণা || আমার নাগর, গিয়েছিলেন কারো, কলঙ্ক-সাগর মথিতে| ফুরায়ে মন্থন, এনেছেন নিশান, আঁখির অঞ্জন গলাতে || হায়! সে যেমন ভোলা তাহাতে উজ্জ্বলা, গলে অস্থিমালা ছড়াতে | মুখে কৃষ্ণ নাম, শিঙায় বলে রাম, বিশ্রাম কুচনীপাড়াতে || পোহায় রজনি, এই গুণমণি, এসেছেন মন তুষিতে | গুঞ্জছড়া গলে, মুখে সুধা ঢালে, রাধা রাধা বলে বাঁশিতে || হায়! ত্রিলোচন, হর, জগতে প্রচার, এক চক্ষু যার কপালে | কৃষ্ণপ্রেমে ভোরা, পাগলের পারা, ধুতুরা শ্রবণযুগলে || ইহারও সেইমতো, সপত্র সহিত, কদম্ব শ্রবণযুগেতে| ত্রিলোচনচিহ্ন দেখ দীপ্যমান, কপালে কঙ্কণ আঘাতে || . ************** উপরে মিলনসাগর |
শ্রীমতীর মন, মানেতে মগন, ওখানে এখন যেয়ো না | মানা করি কলহ আর বাড়াও না | বিষাদের বাতি, জ্বেলেছেন শ্রীমতী, তাহাতে আহুতি দিয়ো না|| নিবেদন করি, ফিরে যাও হরি, দুয়ারে দাঁড়ায়ে থেকো না | কত নারীর সঙ্গে, করেছ কী রঙ্গ, শ্রীমতীর শ্রীঅঙ্গ ছুঁয়ো না || শ্যাম,নিতি নিতি তব, দেখি হে যে ভাব, তথাচ সে সব পাসরি | এ বারে তোমার, রাধা পাওয়া ভার, যে ভাবে বসেছেন কিশোরী || জিনি মেরুগিরি, মানভরে ভারি, মরিবার ভয় করে না | যদি গিরিধারী, হতে চাহ হরি, মনে করি রাধা পাবে না | শ্যাম, কার ভাবে ভুলে, কহ কোথা ছিলে, মজেছিলে কার প্রেমেতে | প্রভাতে কেমনে, আইলে এ স্থানে, নিলাজ বদন দেখাতে || সুখের নিশিতে, এখানে আসিতে, তোমার মনেতে ছিল না | বিপক্ষ হাসাতে, এসেছ প্রভাতে করিতে কপট ছলনা || শ্যাম, শরমে কী করে, বলি হে তোমারে, শ্রীমতী রাধার কথাটি | এবারে মাধবে, যে আনি মিলাবে, সে খাবে রাধার মাথাটি || দিয়ে পদ দুটি, মাড়াবে যে মাটি, শ্রীমতী তো সেটি ছোঁবে না| তুলিয়ে সে মাটি, দিবে ছড়া ঝাঁটি, শ্রীরাধার এটি কটকেনা || . ************** উপরে মিলনসাগর |
সখি, এ সকল প্রেম নয় | ইহাতে মজিয়ে নাহি সুখের উদয় | সুহৃদভঞ্জন, লোকগঞ্জন, কলঙ্কভাজন হতে হয় || এমন পিরিত করি, যাতে তরি দুদিক | ঐহিক আর পার্থিক | শ্রীনন্দনন্দন, দুখভঞ্জন, সদা রাখি, মন তাঁরি পায় || অমিয় তেজে, গরলে মজে, উপজে কী সুখ | কলঙ্ক ঘোষণা জগতে, মরণ হতে অধিক || হৃদয়মন্দিরমাঝে, রসরাজে বসায়, দেখিব আঁখি মুদিয়ে| বিকায়ে সে পদে, বাঁধিব হৃদে, কলঙ্ক বিচ্ছেদে নাহি ভয় || মনেরে করে চাতকপাখি, রাখিব বিশেষে | জলং দেহি জলং দেহি ডাকিব প্রেমের প্রয়াসে || ধ্বজবজ্রাঙ্কুশ পদ, সে নীরদ হইতে, জাহ্নবী হলেন যাহাতে | সেই কৃপা জলে, মন ডুবালে, কালেরে করিব পরাজয় || কমলজ জন, সেবিত ধন, অরুণ চরণ | মনের তিমির বিনাশে, পাইলে কিরণ | হৃদে আছে শতদল, সে কমল ফুটিবে, প্রেম পীযূষ ঘটিবে| মন মধুব্রত, হয়ে যেন রত, সেই নামামৃতসুধা খায় || অমিয় আর গরল, দুই রাখিয়ে সাক্ষাতে, নয়ন দিয়েছেন বিধাতা, দেখিয়ে ভখিতে! ত্যজিয়ে এ সুধারস, কেন বিষ ভখিব, কলুষ কূপে ডুবিব | থাকিতে নয়ন, অন্ধ সেই জন, পেয়ে প্রেমধন সে হারায় || . ************** উপরে মিলনসাগর |
কহ সখি কিছু প্রেমেরই কথা | ঘুচাও আমার মনের ব্যথা | করিলে শ্রবণ, হয় দিব্য জ্ঞান, হেন প্রেমধন, উপজে কোথা | আমি এসেছি বিবাগে, মনের বিরাগে, প্রীতিপ্রয়াগে, মুড়াব মাথা || আমি রসিকের স্থান, পেয়েছি সন্ধান | তুমি নাকি জান, প্রেমবারতা | কাপট্য ত্যজিয়ে, কহ বিবরিয়ে, ইহার লাগিয়ে, এসেছি হেথা || হায়! কোন প্রেম লাগি, প্রহ্লাদও বৈরাগী, মহাদেব যোগী, কেমন প্রেমে | কী প্রেমকারণে, ভগীরথ জনে, ভাগীরথী আনে, ভারতভূমে || কোন প্রেমে হরি, বধে ব্রজনারী, গেল মধুপুরী, করে অনাথা | কোন প্রেমফলে, কালিন্দীর কূলে, কৃষ্ণপদ পেলে, মাধবীবতা || . ************** উপরে মিলনসাগর |
রসিক হইয়ে এমন কে করে | কান্ডারি হইয়ে, তরঙ্গে ডুবায়ে, রঙ্গ দেখে গিয়ে, দাঁড়ায়ে দূরে| প্রাণ তুমি হে লম্পট, নিতান্ত কপট, প্রকাশিলে শঠ খল আচারে | নহে কে বা কোথা, এত নিষ্ঠুরতা, করেছ সর্বথা নিজ জনারে || প্রাণ, আরো এক শুনো, বচনে তোমার , দাঁড়ালেম কুলের বাহিরে | প্রাণ তুমি জেনে শুনে, বিরহতুফানে ভাসালে এ জনে, ছলনা করে || তোমার চরিত, পথিক যেমতো, হয়ে শ্রান্তিযুত, বিশ্রাম করে | শ্রান্তি দূর হলে,যায় সেই চলে, পুন নাহি চায় ফিরে || . ************** উপরে মিলনসাগর |