কবি রমাসুন্দরী ঘোষের কবিতা |
বিদ্যাশিক্ষা বিষয়ে শিশুদিগের প্রতি শ্রীমতী রমাসুন্দরী কলিকাতা বামাবোধিনী সভা হতে প্রকাশিত, বামারচনাবলী, প্রথম ভাগ, ১১মাঘ ১২৭৮ (জানুয়ারী ১৮৭২) থেকে নেওয়া শুন ওহে শিশুগণ! শুন ওহে শিশুগণ, শৈশব অবধি কর, বিদ্যা উপার্জ্জন। কর যতন এখন, কর যতন এখন, যাহাতে পাইবে সবে বিদ্যা মহাধন॥ যদি এমন সময়, যদি এমন সময়, আলস্য বা আমোদেতে অবসান হয়। তবে না পাবে কখন, তবে না পাবে কখন, বিদ্যাধন হয় যাহা অমূল্য রতন॥ ক্রমে সংসার অনল, ক্রমে সংসার অনল, তাপিত করিবে সদা, হইয়া প্রবল। ইথে বুঝ শিশুগণে, ইথে বুঝ শিশুগণে, এই বেলা চেষ্টা কর, বিদ্যা উপার্জ্জনে॥ দেখ মূর্খ যেইজন, দেখ মূর্খ যেই জন, মনুষ্য নামেতে সেই, না হয় গণন। শুদ্ধ বিদ্যাহীন নরে, শুদ্ধ বিদ্যাহীন নরে, সকলে তুলনা করে, বানরে বানরে॥ যায় জীবন বৃথায়, যায় জীবন বৃথায়, কাহারো নিকটে নাহি, সমাদর পায়। হিতাহিত বিবেচিতে, হিতাহিত বিবেচিতে, নাহি পারে মূর্খ নর, আপন বুদ্ধিতে॥ আর বিদ্যাহীন জন, আর বিদ্যাহীন জন, বিজ্ঞ জ্ঞানী প্রায় সেই, না হয় কখন। যদি দেখিয়া এসব, যদি দেখিয়া এসব, তথাপি না হয় ওহে, জ্ঞানের উদ্ভব॥ তবু সময় রতন, তবু সময় রতন, আমোদে মাতিয়া যদি, কর হে ক্ষেপণ। তাহা হলে শিশুগণ, তাহা হলে শিশুগণ, জানিতে পারিবে নাহি, ঈশ্বর সৃজন॥ কত আছয়ে কৌশল, কত আছয়ে কৌশল, যাহার কারণ হয়, শোভিত ভূতল। কিবা নদ নদী গণ, কিবা নদ নদী গণ, পর্ব্বত সাগর আর, নির্জ্জন গহন॥ কিবা তারা অগণন, কিবা তারা অগণন, নিশীথ কালেতে করে, আকাশ শোভন। ফলফুলে বৃক্ষগণ, ফলফুলে বৃক্ষগণ, কেমন সুন্দর শোভা, করয়ে ধারণ। কেবা রচিল এমন, কেবা রচিল এমন, কি কৌশলে এ সকল, হয়েছে সৃজন। কিছু বুঝিতে নারিবে, কিছু বুঝিতে নারিবে, পশুর সমান নীচ, হইয়া থাকিবে। দেখ জলের কারণ, দেখ জলের কারণ, কেমন বাস্পেতে তাহা, হয়েছে সৃজন। পরে সেই জল হতে, পরে সেই জল হতে, পুনরায় বাস্পরাশি উঠে আকাশেতে। এই জলবাস্প বলে, এই জলবাস্প বলে, বিদ্যুৎ গতিতে রথ, চলে কি কৌশলে! সুধু বিদ্যার কারণ, সুধু বিদ্যার কারণ, অপূর্ব্ব কৌশল হেন, হয়েছে রচন। কিবা শারীর বিধান, কিবা শারীর বিধান, গণিত ভূগোল কিবা, পদার্থ বিজ্ঞান। কোন বিদ্যা না জানিবে, কোন বিদ্যা না জানিবে, অজ্ঞান তিমিরে মন আচ্ছন্ন থাকিবে। তাই বল হে এখন, তাই বল হে এখন, শৈশব অবধি কর, বিদ্যা উপার্জ্জন। . ************************* . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
মনের প্রতি উপদেশ রমাসুন্দরী ঘোষ কলিকাতা বামাবোধিনী সভা হতে প্রকাশিত, বামারচনাবলী, প্রথম ভাগ, ১১মাঘ ১২৭৮ (জানুয়ারী ১৮৭২) থেকে নেওয়া শুন শুন ওরে মন, শুন শুন ওরে মন, মোহপারাবারে আর হৈওনা মগন। তুমি জান না কি মন, তুমি জান না কি মন, তব বন্ধু সেই যিনি, জগৎ কারণ। যিনি করেন সৃজন, যিনি করেন সৃজন, চিরকাল যাঁহা হতে, হইবে রক্ষণ। আর যাঁহার কৃপায়, আর যাঁহার কৃপায়, দিবা নিশি কত সুখ, পাও হে ধরায়। তবে কেন ভুল তাঁরে, তবে কেন ভুল তাঁরে, মগন হইয়া থাকি, মোহ পারাবারে ? কেহ না হবে আপন, কেহ না হবে আপন, যখন করিবে গ্রাস, নিষ্ঠুর শমন। শুদ্ধ সেই নিরাধার, শুদ্ধ সেই নিরাধার, হইবেন ওরে মন, তোমার আধার। ইথে হওহে চেতন, ইথে হওহে চেতন, শেষেতে না হবে সঙ্গী, ভাই বন্ধু জন। সবে ভ্রাতা জ্ঞান করি, সবে ভ্রাতা জ্ঞান করি, সদ্ভাব করহ সদা, পক্ষপাত হরি। কর তাঁহারে স্মরণ, কর তাঁহারে স্মরণ, যিনি হন সকলের, দুঃখ-বিনাশন। ভাবি মিথ্যা এ সংসার, ভাবি মিথ্যা এ সংসার, ধর্ম্মের সঞ্চয় কর, শুন কথা সার। আর ইন্দ্রিয় সেবায়, আর ইন্দ্রিয় সেবায়, মত্ত হয়ে থাকি যেন, ভুলনা তাঁহায়। তাঁর লহয়ে শরণ, তাঁর লহয়ে শরণ, পাইবে তা হলে তুমি, অমূল্য রতন। হবে আত্মার উন্নতি, হবে আত্মার উন্নতি, যাহাতে পাইবে মন, চরমেতে গতি। ধর এই সদুপায়, ধর এই সদুপায়, তাহলে পাইবে তুমি, পরম পিতায়। . ************************* . সূচীতে . . . মিলনসাগর |