সরোজকুমারী দেবীর কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
১।  বে কেন?   
২।  
শ্যাম            
৩।  
কটি চুম্বন  
৪।  
মর্পণ       
৫।  
দুরাকাঙ্ক্ষা   
৬।  
দুটি চুম্বন  
৭।  
সপ্তম বর্ষ  
৮।  
বৃথায়   
*
তবে কেন?

তবে থাক এইখানে হোক সব শেষ,
বিদায়ের অশ্রুজল মুছে ফেল হায়,
যেখানে প্রাণের জ্বালা পরাণে মিশায়,
বলে দাও যাব আমি কোথা সেই দেশ |

এ চির অতৃপ্তি লয়ে পরাণেতে আর,
বহিতে পারি না হায় বাসনা-গরল |
থামে নাক' উচ্ছ্বসিত নয়নের জল,
নিশিদিন পরাণে গরজে পারাবার |

যাও তবে শেষ হোক সব এইখানে,
কেন আর মুখ-পানে চাও ফিরে ফিরে?
জান নাকি মিটিবে না এ আশা পরাণে,
নিমেষের সুখ দুঃখ নিমেষেই ঝরে!

কেন তবে এইখানে সব যাও ভুলে,
হের গো গরজে সিন্ধু সংসারের কূলে |

        ********
শ্যাম

শ্যাম! তুঁহু নিকরুণ অতি!
একলি রজনী ঘোরা          বালিকা যে দিশেহারা
নাজানি একেলা যায় কথি!
বাঁশরীকো রব শুনি          যেন ধায় পাগলিনী
আলু থালু কুন্তলক রাশ ;
আঙিয়া খসিয়া যায়          কণ্টক বিঁধিছে পায়
ম্লান ভেল অধর সহাস |
নিকরুণ তু যে কালা          একা সে দুখিনী বালা
এ আঁধারে বোলো গেল কথি?
চঞ্চল যমুনা-বারি          ডারল কি ক'রে তারি
নিরাশয় জীবনক ভাতি |
কে বলে করুণ তোয়          জনম-দুখিনী হোয়
তোহার পিরিতি যেবা করে |
তবু ত এ বিষ-মধু          ডবিয়ে রয়েছি বঁধু
নিশিদিন আঁখিজল ঝরে |
********
সমর্পণ

সেই বিদায়ের কালে হাত দুটি ধরে,
সজল দুইটি আঁখে চাহি আঁখিপানে,
দুটি কথা বলেছিল নীরবে কাতরে ;
তারকা হাসিতেছিল সুনীল গগনে |

সুধীরে বহিতেছিল বসন্ত সমীর,
চুমি চুমি কুসুমের লাজমাখা মুখে ;
কি জানি কিসের সুখে তটিনী অধীর,
মধুর চাঁদের আলো উছলে সে বুকে!

নীরব সন্ধ্যায় সেই তটিনীর তীরে,
মুখপানে চাহি চাহি সজল নয়নে,
নীরব প্রাণের ভাষা কহিল সুধীরে ;
বুঝিল সে ভাষা দোঁহে দোঁহার পরাণে |

দোঁহার পরাণ ল'য়ে যেন গো দু'জনে
সমর্পণ করিল সে সন্ধ্যার বিজনে |
    
           ********
একটি চুম্বন

চলে যায় পুন ফিরে এসে
 হাত তার ধরে নিজ করে |
থর থর কাঁপিল অধর
  আঁখি কোণে দুটি অশ্রু ঝরে |
কাতর মুখের পানে চেয়ে
  সান্ত্বনার কথা বলে তারে,
গলা ধরে উঠিল কাঁদিয়া
  সোহাগেতে বুকে চেপে ধরে |
যায় যায় পুন ফিরে এসে
  মুখ-পানে চাহিল তাহার,
ভাঙ্গা প্রাণ আরো ভেঙ্গে গেল
  উথলিত অশ্রু-পারাবার!
কুসুমের মত গেল ঝরে
  ধীরে ধীরে একটি চুম্বন,
অশ্রুজলে ফুটে ওঠে হাসি
  বরষাতে রবির কিরণ!

         ********
 
দুরাকাঙ্ক্ষা

অসীম জীবন-স্রোতে নাহি ত কিনারা!
চলেছি তাহার মাঝে ভেসে ভেসে হায়!
উছলিছে ঊর্মিমালা পরাণের ছায়স
চেয়ে আছে তার পানে আঁখি আত্মহারা!

আধ-ফুটো আশাগুলি ধীরে সরে যায়,
মরমের ভাষা যেন ফোটে নাক' আর!
বৈতরিণী বহে যায় পরাণে আমার,
তরঙ্গিত দিবানিশি ঘোর ঝটিকায় |

ঝটিকা থামিত যদি দাঁড়াত সে এসে
একবার জীবনের মাঝখানে মোর,
ফুটিত কুসুমরাশি চরণ-পরশে
সে সুখ-স্বপনে আঁখি হইত গো ভোর |

জীবন দুরাশা শুধু, মিটিবে না হায়,
আশায় আপনহারা প্রাণ তবু চায়!
  
         ********
আজ আমি এসেছি আবার!
কি দিব তোমায় ভাই,          কিছুই ভেবে না পাই,
লহ দুটি দীন উপহার |
ও রাঙা অধর দুটি,          লাজ-বাঁধ গেছে টুটি,
কি মোহেতে মুগধ নয়ন ;
আপনারে গেছি ভুলে,          চাও গো মুখানি তুলে,
ধর সখি দুইটি চুম্বন!
********
তারপর জানাশোনা দুইটি পরাণে!
আকুল ব্যাকুল হৃদি
শূণ্যপানে চেয়ে বাঁধি,
মাঝে বিরহের নদী মিলিব কেমনে,
কাটিত দীরঘ দিন আবার স্বপনে!

তখনো বিরহ শুধু, মিলন কোথায়!
নন্দন-সৌরভ ভেসে
পরাণে মিশিত এসে,
প্রেমের বিকাশ সে জে জানাইত হায়!
মুগ্ধ হিয়া শুধু তার আসার আশায় |

তারপর দেখাশোনা তোমায় আমায় |
পবিত্র প্রণয়কুলে
তুমি চেয়ে দেখ ভুলে,
আমি শুধু দেখিতেছি চাহিয়া তোমায়!
মুহুর্তে সে সুখস্বপ্ন ফুরাইল হায়!

আবার বাঁধিনু হৃদিস স্বরগের ফুল
দেখাতে মাধুরী তার
এসেছিল আর-বার ;
পলকে চলিয়া গেছে ভাঙ্গাইয়া ভুল!
আমরা দুজনে চেয়ে, পাথার অকূল |

আজ কেহ নাহি আর আমরা দুজন!
নাহিক আশার আলো,
নাহি দুঃখ-ছায়া কালো,
শুধু সাধ পাশে পাশে কাটাতে জীবন |
হেন সপ্তবর্ষ শত হউক পূরণ |
********
হাসিতে অশ্রুতে সারা          দিনু ক'রে আত্মহারা
কে জানিত প্রেম নিয়ে খেলা!
সে কর পরশে তার          পরাণের পারাবার,
হরষেতে উঠিল উছসি!
মুখে সরিল না কথা          রয়ে গেল হৃদে ব্যথা,
সে যে হায় চলে গেল হাসি |
মালাগাছি হাতে নিয়ে,          দিয়ে গেল ফিরাইয়ে,
ফুলহার ধূলিতে লুটায়!
প্রেম প্রাণ কেন আর!          যার আছে থাক তার,
আমার ত সকলি বৃথায়!
********