মিলনসাগরে কবি নরেন্দ্রনাথ মিত্রর কবিতার পাতা তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য।
উত্স -
- কবি নরেন্দ্রনাথ মিত্রর “আত্মকথা”, নিরঞ্জন চক্রবর্তী সম্পাদিত “নরেন্দ্রনাথ মিত্র রচনাবলী, ১ম খণ্ড”,
১৯৫৬, পৃষ্ঠা-৫৯৫।
- ধীরেন্দ্রনাথ মিত্র (কবি নরেন্দ্রনাথ মিত্রর ভাই), “আমাদের কথা”, পরিশিষ্ট, নিরঞ্জন চক্রবর্তী সম্পাদিত
“নরেন্দ্রনাথ মিত্র রচনাবলী, ১ম খণ্ড”, ১৯৫৬, পৃষ্ঠা-৬২২।
- শিশিরকুমার দাশ সম্পাদিত, সংসদ বাংলা সাহিত্য সঙ্গী।
- সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, “সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান ১ম খণ্ড”।
- কথাসাহিত্য : উপন্যাস ও ছোটগল্পে নরেন্দ্রনাথ মিত্র (১৯১৬ খ্রীঃ-১৯৭৫ খ্রীঃ), মিলিয়নকনটেন্ট.কম।
- বাংলা উইকিপিডিয়া।
কবি নরেন্দ্রনাথ মিত্রর মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন।
আমাদের ই-মেল - srimilansengupta@yahoo.co.in
এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ২১.১০.২০২২
. ^^ উপরে ফেরত
...
কবি নরেন্দ্রনাথ মিত্র - মূলতঃ এই গল্পকার ও
ঔপন্যাসিক জন্মগ্রহণ করেন অবিভক্ত বাংলার ফরিদপুর
জেলার ফরিদপুর শহর থেকে ২২মাইল দক্ষিণে, ছোট্ট
“কুমার” নদীর তীরে সগরদি গ্রামে। পিতা মহেন্দ্রনাখ মিত্র,
ভাঙা শহরে উকিলের সেরেস্তায় মুহুরীর কাজ করতেন।
নরেন্দ্রনাথের মা ছিলেন মহেন্দ্রনাথের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী,
যিনি কবির শৈশবেই মারা যান। কবিরা তাঁর বড়মা অর্থাৎ পিতার প্রথম পক্ষের স্ত্রী জগমোহিনী দেবীর
কাছেই মানুষ হয়েছিলেন, যাঁর পর পর ছয়টি কন্যা সন্তান হয়ে মারা যায়। কবিরা মায়ের অভাব
কোনোদিন বুঝতে পারেননি।
কবি নরেন্দ্রনাথ মিত্রর শিক্ষাজীবন - পাতার উপরে . . .
কবি নরেন্দ্রনাথ মিত্রর শিক্ষাজীবন শুরু হয় তাঁর সগরদি গ্রামের এম.ই. স্কুলে। ১৯৩৩ সালে ভাঙা হাই স্কুল
থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন ফার্স্ট ডিভিশনে। ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আই.এ. পাশ করে
কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজ থেকে বি.এ. পাশ করেন ১৯৩৯ সালে। কলেজ জীবনে তিনি থাকতেন
শোভাবাজারের একটি মেসে, তাঁর ছোট ভাই ধীরেন্দ্রনাথের সাথে। সেই মেসেই থাকতেন তাঁর বন্ধু নারায়ণ
গঙ্গেপাধ্যায়। তাঁদের বন্ধুত্ব ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে পড়ার সময় থেকেই। সম্পূর্ণ কলেজ জীবনের পড়াশুনা-
থাকা-খাওয়ার খরচা কবি নিজে টিউশনি করে উঠিয়েছিলেন।
কবি নরেন্দ্রনাথ মিত্রর কর্মজীবন - পাতার উপরে . . .
১৯৩৯ সালে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়। কবি এই সময় কসকাতায় অর্ডিন্যান্স ফ্যাকটরিতে সৈন্যদের
ব্যবহারের সামগ্রীর চেকার হিসেবে চাকরি পেয়েছিলেন। এর পরে তিনি তাদেরই অফিসে ক্লারিকেল
চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৪৩ সালে কলকাতায় জাপানীরা বোমা বর্ষণ করে। সেই কারণে কবিরা ফরিদপুরে
চলে যান, চাকরি ছেড়ে। কলকাতায় ১৯৪৬ সালের দাঙ্গার সময়ে তাঁরা ভাড়া থাকতেন ৭/১ ব্রজদুলাল
স্ট্রীটে। এই বাসাতেই তিনি লেখেন তাঁর বিখ্যাত গল্প “রস”। টুকটাক পারটাইম কাজও করেছেন কয়েকটি
পত্রিকার অফিসে। এরপর কবি ক্যালকাটা ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে চাকরি পান, চেক পাস করার। ১৯৪৭ সালে
সেখানে ভুল করে একটি জাল চেক পাস করে দেওয়ার ফলে ব্যাঙ্ক তাঁর নামে কেস করে। উচ্চ আদালতে
মামলার নিষ্পত্তি করে ব্রিটিশ জজ মিঃ ব্ল্যাক বলেছিলেন . . .
“সাহিত্যিক মানুষ, সে অন্য জগতে বিচরণ করে। তার তো ভুল হতেই পারে। কিন্তু বড় ভুল হয়েছে
ব্যাঙ্কের, এমন মানুষকে তাঁরা ও রকম কাজ দিলেন কেন?”
মামলায় বেকসুর ছাড়া পাবার পরে কবি সেই চাকরিতে ইস্তফা দেন। কবি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়,
কবি সজনীকান্ত দাস, ডাক্তার পশুপতি ভট্টাচার্য প্রমুখরা তাঁকে এই মামলার সময় নানাভাবে সাহায্য
করেছিলেন।
দেশভাগের সময় পরিবারকে দেশের বাড়ী থেকে নিয়ে এসে থাকতে শুরু করেন কলকাতায়। "কৃষক" ও
"স্বরাজ" পত্রিকাতেও তিনি কিছু দিন কাজ করেছিলেন। ১৯৫০ সাল থেকে আমৃত্যু তিনি আনন্দবাজার
পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কর্মসূত্রে তিনি কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, কবি গৌরকিশোর ঘোষ, সাহিত্যিক
বিমল কর, শাস্তিরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখদের বন্ধুস্থানীয় ছিলেন।
কবি নরেন্দ্রনাথ মিত্রর সাহিত্যজীবনের হাতেখড়ি - পাতার উপরে . . .
ভাঙা হাই স্কুলের ক্লাস নাইনে পড়ার সময়ে কয়েকজন বন্ধু মিলে “আহ্বান” নামের একটি হাতে-লেখা পত্রিকা
বের করেছিলেন। সেই পত্রিকায় তিনি ধারাবাহিকভাবে “মুক্তার হার” নামে একটি উপন্যাসও লিখে
যাচ্ছিলেন যা অসমাপ্তই রয়ে যায়। প্রায় একই সময় তাঁর সম্পাদনায় ও ভাই ধীরেন্দ্রনাথের ব্যবস্থাপনায়,
তাঁদের গ্রাম থেকে “মাসিক মুকুল” নামে আরেকটি হাতে-লেখা পত্রিকা প্রকাশ করতেন। পত্রিকাটি
কার্বন কপি করে, চার আনা দামে বিক্রীও হয়েছিল দু-এক কপি!
ফরিদপুর কলেজে পড়বার সময়ে বন্ধুবর নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে মিলে “জয়যাত্রা” নামে একটি হাতে-
লেখা পত্রিকা বার করতেন যা বেশীদিন চলে নি। সেখানে তিনি “নিখিলের চিঠি” নামে একটি পত্রোপন্যাস
লেখা শুরু করেছিলেন। হাতের লেখা খুব সুন্দর ছিলো বলে পত্রিকাটি নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় লিখতেন। পরে
আরেকদল বন্ধুর সঙ্গে “অভিসার” নামের আরেকটি হাতে-লেখা পত্রিকা বার করেছিলেন।
বলাবাহুল্য আমরা এই হাতে-লেখা পত্রিকাগুলির একটিও যোগাড় করে উঠতে পারিনি কারণ তা আর নেই।
কিন্তু এই কবির প্রকাশিত হাতে-লেখা পত্রিকাগুলি মিলনসাগরে না থাকলেও, সৌভাগ্যবশত দিল্লী
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং কবি নবেন্দু সেন তাঁর আদি বাড়ী খুলনা জেলার মূলঘর গ্রাম
থেকে প্রকাশিত, প্রখ্যাত ছান্দসিক নীলরতন সেন (বয়স মাত্র ২১ বছর) ও কমল রায়চৌধুরী সম্পাদিত,
হাতে-লেখা পত্রিকা “আগে চলোর” ১৯৪৬ সালের শারদীয়া সংখ্যার একটি কপি দিয়েছিলেন যা আমরা
মিলনসাগরে তুলেদিয়েছি, তাঁর লেখা একটি ভূমিকা সহ। এই হাতে-লেখা “আগে চলো” পত্রিকাটি থেকে
পাঠক আন্দাজ করতে পারবেন যে সেকালের হাতে-লেখা পত্রিকাগুলির মান কত উঁচু হতো। মিলনসাগরে
পত্রিকাটির পাতায় গিয়ে পড়তে এখানে ক্লিক করুন . . .। পাঠক চাইলে সেই পাতা থেকে পত্রিকাটির PDF
ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
কবি নরেন্দ্রনাথ মিত্রর কবিতা - পাতার উপরে . . .
সাহিত্য জীবনের শুরতে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন কবি হিসেবেই। মিলনসাগরে নরেন্দ্রনাথ মিত্রের কবিতা
নিয়ে আমরা চর্চা করলেও তিনি আসলে গল্পকার ও ঔপন্যাসিক হিসেবেই খাতিলাভ করেন। সম্ভবত
বেশীরভাগ বাঙালী জানেনই না যে তিনি কবিতাও লিখেছিলেন!
তাঁর প্রথম ছেপে প্রকাশিত হওয়া রচনা “মূক” শিরোনামের কবিতা। কবিতাটি কবি বঙ্কিমচন্দ্র সেন
সম্পাদিত “দেশ” পত্রিকার, শ্রাবণ, ১৩৪৩ সংখ্যায় (জুলাই ১৯৩৬) প্রকাশিত হয়। সেই সময়ে “দেশে”-এর
কবিতা বিভাগের সম্পাদক ছিলেন প্রখ্যাত গান্ধীবাদী স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা কবি বিজয়লাল চট্টোপাধ্যায়।
ঔপন্যাসিক, গল্পকার ও কবি নরেন্দ্রনাথ মিত্র, তাঁর আত্মকথার ৬০৮-পৃষ্ঠায় কবিতা সম্বন্ধে লিখেছেন . . .
“. . . যদিও সেই ৩৬ সনের পর থেকে প্রায় বিশ বছর ধরে কবিতা লিখেছি, তবু সেই ধারা ক্ষীণ থেকে
ক্ষীণতর হয়েছে, এখন তো প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে। যাঁরা কবিতা আর গদ্য দুই-ই লেখেন, তাঁরাই জানেন
কবিতা লেখায় আনন্দ কত বেশি। কবিতা যতই দুর্বল, আর সমকালের তুলনায় রীতির দিক পুরাকালের
হোক না, তার মধ্যে ব্যক্তিসত্তাকে যেভাবে ঢেলে দেওয়া যায় তেমন আর কোনো রচনায় যায় না।”
এর পর ১৯৩৯-৪০ (কবির “আত্মকথায়”) সালে কবি নরেন্দ্রনাথ, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ও বিষ্ণুপদ
ভট্টাচার্য্যের সঙ্গে একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন “জোনাকি” নামে। ডঃ শিশিরকুমার দাশের “সংসদ সাহিত্য
সঙ্গী” গ্রন্থে এই গ্রন্থটির রচনাকাল ১৯৩৮ দেওয়া রয়েছে। আমরা সেই কাব্যগ্রন্থে প্রকাশিত কবির কবিতা
এখানে তুলে দিয়েছি, তাঁর রচনাবলী ১ম খণ্ড থেকে। তার পরে “নিরিবিলি” নামে তাঁর আরেকটি কাব্যগ্রন্থ
প্রকাশিত হয়েছিলো, যা আমরা হাতে পাই নি।
এছাড়া তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। আমরা “দেশ”, “পরিচয়” ও “বঙ্গশ্রী” পত্রিকায়
প্রকাশিত চারটি কবিতা এখানে তুলে দিয়েছি।
কবির "জোনাকি" কাব্যগ্রন্থের "ভাষা" কবিতাটি যেন আমাদের আরও দৃঢ়তার দিকে এগোতে আহ্বান করে।
কবি নরেন্দ্রনাথ মিত্রের রচনাসম্ভার - পাতার উপরে . . .
নরেন্দ্রনাথ মিত্রের উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিক “হরিবংশ” যা পরে বই আকারে
“দ্বীপপুঞ্জ” (১৯৪৬), “অক্ষরে অক্ষরে” (১৯৪৯), “সঙ্গিনী” (১৯৪৯), “দেহমন” (১৯৫০), “দূরভাষিণী” (১৯৫২),
“চেনামহল” (১৯৫৩), “গোধূলী” (১৯৫৩), “অনুরাগিণী” (১৯৫৬), “সহৃদয়া” (১৯৫৬), “শুক্লপক্ষ” (১৯৫৬),
“কন্যাকুমারী” (১৯৫৮), “অনামিতা” (১৯৫৮), “সুখ দুঃখের ঢেউ” (১৯৫৮), “কথা কও চোরাবালি” (১৯৫৯),
“হেডমাস্টার” (১৯৫৯), “জলপ্রপাত” (১৯৫৯), “উত্তরপুরুষ” (১৯৬০), তিন দিন তিন রাত্রি” (১৯৬০), “রূপমঞ্জুরী”
(১৯৬০), “উপনগর” (১৯৬১), “পরম্পরা” (১৯৬২), “মহানগর” (১৯৬৩), দ্বৈত সঙ্গীত” (১৯৬৪), “পতনে উত্থানে”
(১৯৬৪), “তমস্বিনী” (১৯৬৪), “সূর্যসাক্ষী” (১৯৬৪), “দয়িতা” (১৯৬৯), “প্রতিধ্বনি” (১৯৭০), “উপছায়া” (১৯৭১),
“সুরের বাঁধনে” (১৯৭১) প্রভৃতি।
নরেন্দ্রনাথ মিত্রের ছোট ও বড় গল্পের মধ্যে মধ্যে রয়েছে “রস”, “সন্ধান”, “চোর”, “এক পোয়া দুধ”, “একটি
প্রেমের গল্প”, “দ্বিবচন”, “বিবাহবাসর”, “পালঙ্ক”, “রত্নাবাই”, “চাঁদমিয়া”, “শ্বেতময়ূর”, “সংসার”, “দ্বৈরথ” প্রভৃতি।
তাঁর লেখা অনেক গল্প ও উপন্যাস থেকে সিনেমা ও থিয়েটার করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ১৯৭৩ সালে
তাঁর “রস” গল্পটির হিন্দী ভাষায় চলচিত্রায়ণ “সৌদাগর” নামে। নির্দেশক ছিলেন শুভেন্দু রায়। অভিনয়
করেছিলেন অমিতাভ বচ্চন, নূতন, পদ্মা খান্না প্রমুখরা।