. বিভক্ত বাংলার, খুলনা জেলার, মূলঘর গ্রাম থেকে ১৯৪৬ সালে, কমলকুমার রায়চৌধুরীর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছিল
হাতে লেখা পত্রিকা, শারদীয়া আগে চলো। দেশভাগ ও পরবর্তী দাঙ্গা-বিধ্বস্ত বাঙালী জীবনের কঠিন পরিস্থিতি পার ক'রে,
কালের গ্রাসের হাত থেকে বাঁচিয়ে, নিচে দেওয়া একটি ভূমিকা সমেত, পত্রিকাটিকে সম্প্রতি আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন
শ্রদ্ধেয় ডঃ নবেন্দু সেন, বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেবার জন্য। এই গুরুদায়িত্ব অর্পণ করার জন্য আমরা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।
১৯৪৬ এর সেই হাতে-লেখা পত্রিকাটিকে আধুনিক প্রযুক্তির আভরণে পুনরায় প্রকাশিত করা হল মিলনসাগরের ১৪১৮ বঙ্গাব্দের শারদীয় নিবেদন হিসেবে!
অধ্যাপক নবেন্দু সেন তাঁর স্মৃতি থেকে আমাদের দিয়েছেন "আগে চলো"-র লেখক, শিল্পী ও সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্যদের
পরিচিতি যা আমরা নিচে দিয়ে দিলাম। আমরা সবাইকে অনুরোধ করছি যে যদি কেউ এই মানুষদের সম্বন্ধে আরও তথ্য
আমাদের জানান তাহলে তাঁদের নাম সমেত, আমরা এই পাতায় তুলে দেব আমাদের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ।
|
|
পরিচিতি
|
১।
|
সৌরেন্দ্র নাথ রায়চৌধুরী
|
মূলঘরের বড় বাড়ীর প্রথিতযশা শিল্পী।
|
২।
|
অনিল কুমার রায়চৌধুরী
|
মূলঘরের বড় বাড়ীর প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ব। পশ্চিমবঙ্গের অণ্ডাল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার হয়েছিলেন।
|
৩।
|
কালিদাস, নবরত্ন শিরোমণি
|
!
|
৪।
|
ক্ষেত্রনাথ রায়চৌধুরী
|
মৃলঘরের পশ্চিমপাড়ার ছুনন রায়চৌধুরীর পুত্র।
|
৫।
|
মন্মথনাথ ঘোষ
|
মূলঘরের ঘোষপাড়ার।
|
৬।
|
জীবনাথ রায়চৌধুরী
|
ছুনন রায়চৌধুরীর পুত্র। চাকরিসূত্রে তিনি দিল্লি প্রবাসী ছিলেন। অভিনেতা। সাহিত্য চর্চায় সুনাম অর্জন করেন। রামকৃষ্ণের ভূমিকায় অভিনয় করে খ্যাত হয়েছিলেন।
|
৭।
|
নির্মল সেনগুপ্ত
|
!
|
৮।
|
নেপাল চন্দ্র রায়
|
বিখ্যাত ঐতিহাসিক। মূলঘরের অন্যতম কৃতি সন্তান। রবীন্দ্র সান্নিধ্যে ধন্য। বিশ্বভারতীর অধ্যাপক ছিলেন।
|
৯।
|
বিহারীলাল চক্রবর্তী
|
মূলঘর খড়োরিয়া হাই ইংলিশ স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।
|
১০।
|
অশোকা রায়
|
শ্রীশচন্দ্র রায়চৌধুরীর (পুন) কন্যা। উচ্চশিক্ষিতা।
|
১১।
|
দেবকুমার
|
!
|
১২।
|
মথুরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত
|
মূলঘরের নতুন সেনের বাড়ির। লোকচরিত্র সমালোচক। মথুরেশচন্দ্র সেনগুপ্তর পুত্র মণীন্দ্রনাথের সঙ্গে বিয়ে হয় বাংলা সাহিত্যের অন্যতম স্থপতি রমেশচন্দ্র সেনের ৪র্থ কন্যা ইলা দেবীর।
|
১৩।
|
শৈলেন সেন
|
মূলঘরের নতুন সেনের বাড়ির। নানা গুণের যোগ্যতম ব্যক্তিত্ব। মূলঘরের কবি শচিন্দ্রনাথ সেনের মধ্যম পুত্র নীলরতন সেনের সঙ্গে একত্রে “আগে চলো” পত্রিকার কর্ণধার ছিলেন।
|
১৪।
|
কমলচন্দ্র রায়চৌধুরী
|
মূলঘরের পশ্চিমপাড়ার অন্যতম উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। সাহিত্যানুরাগীও। "আগে চলো" হাতে-লেখা পত্রিকার সম্পাদক।
|
১৫।
|
রমা সেনগুপ্ত
|
মূলঘরের কবি শচিন্দ্রনাথ সেনের কন্যা।
|
১৬।
|
বীথি বসু
|
!
|
১৭।
|
নীলরতন সেন
|
মূলঘরের কবি শচিন্দ্রনাথ সেনের মধ্যম পুত্র। পরবর্তীতে প্রখ্যাত ছান্দসিক ডঃ নীলরতন সেন। কমল রায়চৌধুরীর সঙ্গে একত্রে “আগে চলো” পত্রিকার কর্ণধার ছিলেন।
***************
|
|
কালের নির্মম প্রহার থেকে এ দুটি সম্পদ বাঁচিয়ে রাখার আশায় আমি আমার নিজের বড় ভাইঝি শিপ্রার স্বামী মিলন
সেনগুপ্তকে তাঁর মহামূল্যবান ওয়েবসাইটে (www.milansagar.com) ধরে রাখার জন্য দিয়েছি। শর্ত এই দুটি অতি মহার্ঘ বস্তুই
আমাকে তাঁর কাজ শেষ করে ফেরত দেবেন, যাতে আমার জীবত্কাল পর্যন্ত আমি এই দুটি সম্পদকেই আমার নিকট রাখতে
পারি, এবং অপত্য স্নেহে রক্ষা করতে পারি।
“আগে চলো” পত্রিকার কোন মুদ্রিত সংস্করণ ছিল না। ছিল না প্রথিতযশা অতি বড় কোন সাহিত্যিক নেতার আশির্বাণী; ছিল না
কোন আর্থিক সম্বল। গ্রাম বাংলার উদ্যমী কয়েকজন যুবক যুবতীর সাহিত্যচর্চার নিপাট উর্বর ক্ষেত্র মাত্র। কিন্তু লক্ষ্য করা যায়
যা তা কেবল কল্পনা বিলাসিত খেয়াল খুশির মনভোলানোর যন্ত্রণাও ছিল না। ছিল রীতিমত সমকালীন সমাজ, রাজনীতি এবং
অবশ্যই নিজেদের বর্দ্ধিষ্ণু গ্রামের অগ্রগতির পরিচিতি। শিক্ষা, দীক্ষা, ধর্ম, রুচি ও আভিজাত্যের সঙ্গে মানমাত্রার স্তরে উন্নীত
সাহিত্যবীক্ষার পরিচয়। ছিল উঁচু দরের উইট, জীবন পর্যবেক্ষণ এবং সমকালীন সমাজ চেতনার চর্চিত জিজ্ঞাসা ; যা যে কোন
বড় পত্রিকার সামগ্রী হতে পারতো। নাম না-জানা নিতান্ত গ্রামীন অবস্থানে সে সময়ের কয়েকটি তরতাজা যুবক যুবতীর
প্রাণভরা চেষ্টার ফসল এই “আগে চলো”।
আজ সে সময়েও নেই, সে সমাজও নেই, নেই সেই রুচি --- সবই পরিবর্তিত। তবু সেই অখ্যাত পত্রিকাটি যেন এক বৃহৎ
সত্যেরই আহ্বান জানায় --- “আগে চলো”! “চরৈবেতি”।
কোন উত্সাহীর দৃষ্টি পড়লেও পড়তে পারে এই অনিরুদ্ধ এগিয়ে যাবার সারস্বত পথে। আমি বিশ্বাস করি “আগে চলো”ই এখনো
আমার মনের এক সারস্বত পারমিতা।
. *****************
আগে চলো
ডঃ নবেন্দু সেন, নয়াদিল্লি, ৩রা অক্টোবর ২০১১, চলভাষ +৯১৯৮১১৩৮৬৫৫৭,
ইমেল : sensandy@hotmail.com
বর্তমান বাংলাদেশে, খুলনা জেলার, বাগেরহাট মহকুমার, মূলঘর গ্রামের যুবশক্তির সারস্বত
চেতনার অন্যতম চিহ্নায়ক হাতে লেখা একটি পত্রিকা হল “আগে চল”। কে বা কারা এই
পত্রিকার নামকরণ করেন তা আমার অজ্ঞাত। আমার নিতান্ত শৈশবেই এই সারস্বত চর্চার
সূত্রপাত সে সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই। নীলরতন সেন এবং শৈলেন সেনের বিরামবিহীন
কর্মোদ্যমে “আগে চলো” ক্রমাগত এগিয়েই চলেছিল।
আমার মধ্যম অগ্রজ, আমার পিতৃতুল্য শ্রী নীলরতন সেনের মুখে এবং নিজের অস্পষ্ট স্মৃতিতে শোনা ও দেখার এই অতি
আদৃত, অতি মূল্যবান সাহিত্য রুচির পত্রিকাখানির একটি মাত্র খণ্ড আমার নিকট অদ্যাবধি ছিল। অনুমান করি আমার
মধ্যমাগ্রজের অকুণ্ঠ স্নেহ ভালবাসা ও আমার প্রতি তাঁর দ্বিধাহীন আস্থাই তার কারণ। ঠিক যেমনটি ছিল আমাদের পিতার
অসাধারণ, অকপট সরল কাব্যচর্চার চিহ্নায়ক হাতে লেখা খাতাটি আমাকে অর্পণ করার ক্ষেত্রে। এ দুটি সারস্বত মেধার অমূল্য
সম্পদ আমার জীবনের পরম প্রাপ্তি।