বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম-এর "ভক্তি গীতি"
থেকে কয়েকটি
১।
২।
৩।
৪।
৫।
৬।
৭।
৮।
৯।
১০।
১১।
১২।
১৩।
১৪।
১৫।
১৬।
১৭।
১৮।
১৯।
২০।
২১।
২২।
২৩।
২৪।
২৫।
২৬।
২৭।
২৮।
২৯।
৩০।
৩১।
৩২।
৩৩।
৩৪।
৩৫।
৩৬।
৩৭।
৩৮।
৩৯।
৪০।
অন্তরে তুমি আছ চিরদিন ওগো অন্তর্য্যামী    
আমার অহংকারের মূল কেটে দে কাঠুরিয়ার মেয়ে      
আমি কৃষ্ণচূড়া হতাম যদি হতাম ময়ূর-পাখা, (সখা হে)    
আমি বাঁধন যত খুলিতে চাই জড়িয়ে পড়ি তত    
আহার দেবেন তিনিই, ওরে জীব দিয়াছেন যিনি    
আয় অশুচি আয়রে পতিত এবার মায়ের পূজা হবে    
আয় মা উমা! রাখব এবার    
এবার নবীন মন্ত্রে হবে জননী তোর উদ্বোধন    
এল নন্দের নন্দন নব-ঘনশ্যাম    
এল রে শ্রীদুর্গা    
ওরে নীল যমুনার জল বল্ রে মোরে বল্    
কি নাম ধরে ডাক্ বো তোরে মা তুই দে ব’লে    
কুল রাখ না-রাখ তুমি সে জান    
কৃষ্ণ কৃষ্ণ বল্ রসনা রাধা রাধা বল্    
কে সাজালো মাকে আমার বিসর্জ্জনের বিদায় সাজে    
খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু আনমনে    
খেলিছে জলদেবী সুনীল সাগর জলে     
গগনে কৃষ্ণ মেঘ দোলে - কিশোর কৃষ্ণ দোলে বৃন্দাবনে    
গোঠের রাখাল, বলে দে রে কোথায় বৃন্দাবন    
চঞ্চল সুন্দর নন্দকুমার    
চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়    
জবা কুসুম-সঙ্কাশ ঐ উদার অরুণোদয়    
জয় বিগলিত-করুণা রূপিণী গঙ্গে    
জয় বিবেকানন্দ সন্ন্যাসী বীর চীর গৈরিকধারী    
জয়তু শ্রীরামকৃষ্ণ নমো নম    
জাগো জাগো শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্ম-ধারী    
তুমি যদি রাধা হতে শ্যাম    
দাও দাও দরশন পদ্ম-পলাশ-লোচন    
দেখে যা তোরা নদীয়ায়    
বর্ণচোরা ঠাকুর এল রসের নদীয়ায়    
বর্ষা গেল, আশ্বিন এল, উমা এল কই    
ব্রজ গোপী খেলে হোরী খেলে আনন্দে নব ঘন-শ্যাম সাথে    
ভাদরের ভরা নদীতে ভাসায়ে (সৌজন্যে - শ্রী বিমল ভূষণ ও কবি সোনালী সেনগুপ্ত)  
মাকে আমার দেখেছে যে    
মাগো আমি মন্দমতি তবু যে সন্তান তোরই    
সুখ-দিনে ভুলে থাকি, বিপদে তোমারে স্মরিয়া    
হে গোবিন্দ রাখ চরণে    
হেলে দুলে চলে বন-মালা গলে গোট-বিহারী বনে বন-মালী সাজে    
হোরীর রঙ লাগে আজি গোপিনীর তনু মনে    
হে পার্থ-সারথি! বাজাও বাজাও পাঞ্চজন্য শঙ্খ    
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

.                        ভজন

অন্তরে তুমি আছ চিরদিন  /   ওগো অন্তর্য্যামী  |
বাহিরে বৃথাই যত খুঁজি , তাই /  পাই না তোমারে আমি ||
প্রাণের মতন আত্মার সম  /  আমাতে আছে হে অন্তরতম,
মন্দির রচি’ বিগ্রহ পূজি  /  দেখে তুমি হাস স্বামী ||
সমীরণ সম আলোর মতন  / বিশ্বে রয়েছ ছড়ায়ে
গন্ধ কুসুমে সৌরভ সম   / প্রাণে প্রাণে আছ জড়ায়ে ||
তুমি বহুরূপী তুমি রূপহীন /  তব লীলা হেরি অন্ত-বিহীন,
তব লুকোচুরি-খেলা-সহচরী   /  আমি যে দিবস যামী ||


.       **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

.        আমার অহংকারের মূল কেটে দে কাঠুরিয়ার মেয়ে,
.        কত নিরস তরু হলো মুঞ্জরিত তোর চরণ পরশ পেয়ে !
রোদে পুড়ে জলে ভিজে দিয়েছি ফুল ফল  / শাখায় আমার নীড় বেঁধেছে বিহঙ্গের দল |
.        বটের মত সারা দেহ মাগো মায়ার জটে আছে ছেয়ে ||
.        ও মা মূল আছে তাই বৈতরণীর কূলে আছি পড়ি
.        নইলে হতাম খেয়া ঘাটের পারাপারের তরী |
.        তুই খড়্ গের ভয় দেখাস্ মিছে  /  ওমা , মুক্তি আছে এরি পিছে ( মাগো )
.        তোর হাসির বাঁশী শুনতে পাবো  /  আসির আঘাত খেয়ে ||


.                                  **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

.    মিশ্র গৌড়সারঙ  ( কীর্ত্তনাঙ্গ ), দাদ্ রা  ( দ্রুত )

আমি কৃষ্ণচূড়া হতাম যদি হতাম ময়ূর-পাখা, ( সখা হে ) !
তোমার বাঁকা চূড়ায় শোভা পেতাম ওগো শ্যামল বাঁকা  ||
আমি হলে গোপীচন্দন, শ্যামা , অলকা-তিলকা হতাম ;
শ্যাম, ও চাঁদমুখে অলকা-তিলকা হতাম |
শ্রীঅঙ্গের পরশ পেতাম হ’লে কদম-শাখা ||
আমি বৃন্দাবনে বন-কুসুম হতাম যদি কালা,
কন্ঠ ধ’রে ঝ’রে যেতাম হয়ে বনমালা |
আমি নূপুর যদি হতাম হরি  /  কাঁদতাম শ্রীচরণ ধরি’
ব্রজবুলি হলে রইত বুকে চরণ-চিহ্ন আঁকা ||


.                                  **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

আমি  বাঁধন যত খুলিতে চাই জড়িয়ে পড়ি তত  
শুভদিন এল না দিনে দিন হ’ল হায় গত ||
শত দুঃখ অভাব নিয়ে  
জগৎ আছে জাল বিছিয়ে
অসহায় এ পরাণ কাঁদে জালে মীনের মত ||
বোঝা যত কমাতে চাই ততই বাড়ে বোঝা,  
শান্তি কবে পাব কবে চল্ ব হয়ে সোজা |
দাও ব’লে হে জগৎ-স্বামী
মুক্তি কবে পাব আমি ?
কবে উঠ্ বে ফুটে জীবন আমার ভোরের ফুলের মত ||


.                                  **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

.               ভজন

আহার দেবেন তিনিই, ওরে  
জীব দিয়াছেন যিনি  |
( তোরে ) সৃষ্টি ক’রে, তোর কাছে যে
আছেন তিনি ঋণী  ||
সারা জীবন চেষ্টা ক’রে  
ভিক্ষা মুষ্টি আন্ লি ঘরে
তাঁর কাছে তুই হাত পেতে দেখ্  
কী দান দেন তিনি ||
না চেয়ে, দেখ্ ক্ষেতের ফসল
পায় বৃষ্টির জল,
তুই যে পেলি পুত্রকন্যা,   
কে দিল, তা বল্  ||
যাঁর করুণায় এত পেলি  
কেবল তাঁরেই ভু’লে গেলি,
( তোর) ভাব্ নার ভার তাঁকে দিয়ে  
ডাক্ রে নিশিদিনই ||
তাঁকে ডাক্ রে নিশিদিনই  ||

.         **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

.                     দেশ মিশ্র-------দাদ্ রা

আয় অশুচি আয়রে পতিত এবার মায়ের পূজা হবে |
যেথা, সকল জাতির সকল মানুষ নির্ভয়ে মা’র চরণ ছোঁবে ||
.                ( সেথা )  এবার মায়ের পূজা হবে ||
( সেথা ) নাই মন্দির নাই পূজারী   /  নাই শাস্ত্র নাই রে দ্বারী
( সেথা ) মা ব’লে যে ডাক্ বে এসে মা তাহারেই কোলে ল’বে  ||
( মা ) সিংহ-আসন হ’তে নেমে বসেছে দেখ ধূলির তলে,
( মার ) মঙ্গলঘট পূর্ণ হ’বে সবার ছোঁওয়া তীর্থ জলে  |
মোরা, জননীকে দেখেনি, তাই /  ভাইকে আঘাত হেনেছে ভাই,
( আজ ) মাকে দেখে বুঝবি, মোরা এক মা’র সন্তান সবে |
( এবার ) ত্রিলোক জুড়ে পড়বে সাড়া মাতৃ মন্ত্রের মাভৈঃ রবে ||

.                             **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

আয় মা উমা !  রাখব এবার /  ছেলের সাজে সাজিয়ে তোরে |
ওমা মা’র কাছে তুই রইবি নিতুই,  / যাবি না আর শ্বশুর-ঘরে ||
মা হওয়ার মা কী যে জ্বালা  /  বুঝবি না তুই গিরি-বালা
তোরে না দেখলে শূন্য এ বুক  /  কী যে হাহাকার করে  ||
তোর টানে মা শঙ্কর শিব  /   আসবে নেমে জীব-জগতে
আনন্দেরই হাট বসাব  /  নিরানন্দ ভূ-ভারতে |
না দেখে যে মা, তোর লীলা  /  হ’য়ে আছি পাষাণ-শীলা
আয় কৈলাসে তুই ফিরবি নেচে  /  বৃন্দাবনের নূপুর প’রে  ||


.                             **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

.                  আগমনী “বিজয়া”  বেতার নাটিকার গান

.                এবার নবীন মন্ত্রে হবে জননী তোর উদ্বোধন |
.                নিত্যা হ’য়ে রইবি ঘরে হবে না তোর বিসর্জ্জন ||
সকল জাতির পুরুষ-নারীর প্রাণ
সেই হবে তোর পূজা-দেবী,  মা তোর পীঠস্থান ||
.                সেথা শক্তি দিয়ে, ভক্তি দিয়ে পাতব মা তোর সিংহাসন ||
সেথা রইবে নাকো ছোঁওয়াছুঁয়ি উচ্চ-নীচের ভেদ,
সবাই মিলে উচ্চারিব মাতৃনামের বেদ |
.                মোরা এক জননীর সন্তান সব, জানি,  
.                ভাঙ্ ব দেওয়াল, ভুল্ ব হানাহানি ;
দীন-দরিদ্র রইবে না কেউ, সমান হবে সর্ব্বজন
বিশ্ব হবে মহাভারত, নিত্য-প্রেমের বৃন্দাবন ||

.                             **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

এল নন্দের নন্দন নব-ঘনশ্যাম,
এল যশোদা-নয়নমণি নয়নাভিরাম |
প্রেম রাধা-রমণ নব বঙ্কিম ঠাম,  
চির-রাখাল গোকুলে এল গোলক ত্যজি’ |
.                    কৃষ্ণজী, কৃষ্ণজী, কৃষ্ণজী, কৃষ্ণজী  ||
ভয়-ত্রাতা এল কারা-ক্লেশ নাশি’
কাজল নয়নে এল উজল শশী |
মুছা’তে বেদন-ব্যথা তিমিরহারী
ওই বিজলী ঝলকে এল ঘন গরজি’ |
.                    কৃষ্ণজী, কৃষ্ণজী, কৃষ্ণজী, কৃষ্ণজী  ||
হে বিরাট তব মঙ্গল আঁখিতলে  
কত পুষ্প ফোটে প্রেম-অশ্রুজলে |
অরবিন্দ পদে আর কিছু না চাহি  
যেন গোপন প্রেমে মন রহে মজি’ |
.                     কৃষ্ণজী, কৃষ্ণজী, কৃষ্ণজী, কৃষ্ণজী ||

.                             **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

.        এল রে শ্রীদুর্গা |   
শ্রী আদ্যাশক্তি মাতৃরূপে পৃথিবীতে এল রে-----
.        গভীর স্নেহরস ধারায় কল্যাণ কৃপা করুণায়  
স্নিগ্ধ করিতে এল রে শ্রীদুর্গা  ||
ঊর্দ্ধ্বে উড়ে যায় শান্তির পতাকা  
শুভ্র শান্ত মেঘে আনন্দ-বলাকা
মমতার অমৃত লয়ে শ্যামা,
মা হয়ে এল রে সকলের দুঃখ দৈন্য হরিতে |   
.        এল রে শ্রীদুর্গা |
প্রতি হৃদয়ের শতদলে শ্রীচরণ ফেলে  
বন্ধ কারার দুয়ার ঠেলে, এল রে শ্রীদুর্গা  |
দশভুজা সর্ব্বমঙ্গলা মা হ’য়ে  
এলো রে দুর্ব্বলে দুর্জ্জয় করিতে
নিরন্নে অন্ন দিতে মাতৃ রূপে, এল রে শ্রীদুর্গা ||


.                             **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

ওরে নীল যমুনার জল বল্ রে মোরে বল্ |   
কোথায় ঘনশ্যাম আমার কৃষ্ণ ঘনশ্যাম ||
.        আমি বহু আশার বুক বেঁধে যে এলাম বজ্রধাম ||
.        তোর কোন্ কূলে কোন্ বনের মাঝে  
আমার কানুর বেণু বাজে,
.        আমি কোথায় গেলে শুন্ তে পাব “রাধা রাধা”  নাম
.        আমি শুধাই ব্রজের ঘরে ঘরে কৃষ্ণ কোথায় বল্  !
.        কেন কেউ কহে না কথা, হেরি সবার চোখে জল  |
বল্ রে আমার শ্যামল কোথায়  
কোন্ মথুরায় কোন্ দ্বারকায়  
(  বল যমুনা বল্  )
.        বাজে বৃন্দাবনের কোন্ পথে তার নূপুর-অভিরাম ||


.                             **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

কি নাম ধরে ডাক্ বো তোরে মা তুই দে ব’লে |
কি নাম ধরে কাঁদলে পরে ধরে তুলিস্ কোলে  ||
বনে খুঁজি মনে খুঁজি পটে দেখি, ঘটে পূজি
মন্দিরে যাই, কেঁদে লুটাই পাষাণ-প্রতিমা মা, তোর একটুও না টলে ||
কোল যদি না দিবি মাগো, আনলি কেন ভবে,
( আমি ) জনম নিয়ে এসেছি যে, তোর কোলেরই লোভে,
আমি রইতে নারি, মা না পেয়ে , মরণ দে মা, তাহার চেয়ে
এ-ছার জীবন, কোন প্রয়োজন
আমি কোটিবার মা মরতে পারি, মা যদি পাই ম’লে  ||


.                             **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

.                        পিলু-----খেমটা

কুল রাখ না-রাখ  /  তুমি সে জান,  
গোকুলে তোমার কাজ  /  কুল ভোলানো ||
মহতের পিরীতি   /  বালির বাঁধ সম,  
কভু হাতে দাও দড়ি  /  কভু চাঁদ আন ||
কভু তুমি রাধার, /   চন্দ্রাবলীর কভু ,
যখন যা’র তখন /    তা’র দিকে টান ||
রাজার অপরাধের নালিশ কোথায় করি,
তুমি জান শুধু বাঁশীতে মন-ভেজানো ||


.              **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

কৃষ্ণ কৃষ্ণ বল্  রসনা রাধা রাধা বল্ ,
রাধাকৃষ্ণ রাধাকৃষ্ণ রাধাকৃষ্ণ বল্  ||
যোগে খোঁজেন শিব কৃষ্ণ-গোবিন্দ ;    
ব্রহ্মা পূজেন রাধা-চরণারবিন্দে,
অধরা যুগল চাঁদে ধরিল প্রেমের ফাঁদে গোপ গোপীদল  ||
( মোর ) শ্রীকৃষ্ণ থাকে যেন অটল মতি,
সেই মতি যেন মোর রাধা শ্রীমতী  ||
মন-বৃন্দাবনে ফোটে কৃষ্ণ নামের ফুল,  
ঝরায়ে সে ফুল রাই দেন সবে প্রেম-ফুল ||
রাধাকৃষ্ণ বল্ ওরে নর-নারী   
সংসার বনে তোরা যেন শুক-সারী
তার, পরাণে নিত্য রাস-রসের উল্লাস
যাহার হৃদয়ে দোলে মুরতি যুগল  ||


.              **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

.        কে সাজালো মাকে আমার বিসর্জ্জনের বিদায় সাজে  |
.        আজ সারাদিন কেন এমন করুণ সুরে বাঁশী বাজে  ||
.        আনন্দেরি প্রতিমাকে হায়  /  বিদায় দিতে পরাণ নাহি চায় |
.        মাকে, ভাসিয়ে জলে কেমন ক’রে রইব আঁধার ভবন মাঝে ||
.        মা’র আগমনে বেজেছিল প্রাণে নূতন আশার বাঁশী |
.        দুখ শোক ভয় ভুলেছিলাম ( দেখে ) মা অভয়ার মুখের হাসি ||
.        মা, দশ হাতে আনন্দ এনেছিল  / বিশ হাতে আজ দুঃখ ব্যথা দিল
.        মা মৃন্ময়ীকে ভাসিয়ে জলে, পাব চিন্ময়ীকে বুকের মাঝে ||


.                             **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

.                ভজন

খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু আনমনে |
প্রলয় সৃষ্টি তব পুতুল খেলা নিরজনে |
প্রভু নিরজনে  ||
শূন্যে মহা আকাশে ( তুমি )  মগ্ন লীলা-বিলাসে  
ভাঙিছ গড়িছ নিতি ক্ষণে ক্ষণে ||
তারকা রবি শশী খেলনা তব, হে উদাসী,  
পড়িয়া আছে পায়ের কাছে রাশি রাশি |
নিত্য  তুমি হে উদার /  সুখে দুখে অ-বিকার,
হাসিছ খেলিছ তুমি আপন সনে  ||


.               **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

খেলিছে জলদেবী সুনীল সাগর জলে |  
তরঙ্গ-লহর তোলে লীলায়িত কুন্তলে  ||
.        জল-ছল ঊর্ম্মি-নূপুর
.        স্রোত-নীরে বাজে সুমধুর
.        জল-চঞ্চল -ছল কাঁকন কেয়ূর  
.        ঝিনুকের মেখলা কটিতে দোলে  |
.        আনমনে খেলে চলে বালিকা  
.        খুলে পড়ে মুকুতা মালিকা
.        হরষিত পারাবারে ঊর্ম্মি জাগে,
.        লাজে চাঁদ লুকালো গগন তলে ||


.              **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

.                        কাজরী

গগনে কৃষ্ণ মেঘ দোলে---- কিশোর কৃষ্ণ দোলে বৃন্দাবনে ;
স্থির সৌদামিনী রাধিকা দোলে নবীন ঘনশ্যাম সনে |
দোলে রাধা শ্যাম ঝুলন-দোলায়----দোলে আজি শাওনে ||
পরি’ ধানী রং ঘাগরী , মেঘ রং ওড়না
গাহে গান, দেয় দোল গোপীকা চল-চরণা  ;
ময়ূর নাচে পেখম খুলি’ বন-ভবনে ||
গুরু গম্ভীর মেঘ-মৃদঙ্গ বাজে আঁধার অম্বর তলে,
হেরিছে ব্রজের রসলীলা অরুণ লুকায়ে মেঘ-কোলে
মুঠি মুঠি বৃষ্টির ফুল ছুঁড়ে হাসে,  /  দেব-কুমারীরা হেরে অদূর আকাশে
জড়াজড়ি করি’ নাচে, তরুলতা উতলা পবনে ||

.                       **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

গোঠের রাখাল, বলে দে রে কোথায় বৃন্দাবন |
( যথা ) রাখাল-রাজা গোপাল আমার খেলে অনুক্ষণ |
কোথায় বৃন্দাবন  ||
( যথা ) দিনে রাতে মিলন-রাসে  
চাঁদ হাসে রে চাঁদের পাশে
( যা’র ) পথের ধূলায় ছড়িয়ে আছে  
শ্রীহরি-চন্দন ||
( যথা ) কৃষ্ণ-নামের ঢেউ ওঠে রে সুনীল যমুনায়,
( যার ) তমাল-বনে আজো মধুর কানুর নূপুর শোনা যায় |
আজো যাহার কদম-ডালে ,  বেণু বাজে সাঁঝ-সকালে
নিত্য লীলা করে যথা মদন-মোহন  ||


.                       **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

চঞ্চল সুন্দর নন্দকুমার |  
গোপী-চিতচোর প্রেম-মনোহর নওল কিশোর
অন্তর মাঝে বাজে বেণু তার---
নন্দকুমার, নন্দকুমার, নন্দকুমার ||
শ্রবণ আনন্দ নূপুর ছন্দ রুণু ঝুণু বাজে
নন্দের আঙিনায় নন্দন চন্দ নাচিছে হেলে দুলে গোপাল সাজে |
টলমল টলে রাঙা পদতলে
লঘু হ’য়ে বিপুল ধরণীর ভার----নন্দকুমার, নন্দকুমার, নন্দকুমার |
রূপ নেহারিতে এল লুকায়ে দেবতা  
কেহ গোপগোপী হ’ল কেহ তরুলতা
আনন্দ-অশ্রু নদী হ’য়ে ব’য়ে যায় উতল যমুনায় |
প্রণতা প্রকৃতি নিরালা সাজায়
বন ডালায় পূজা ফুল সম্ভার ||


.                       **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

.                ভজন /  মান্দ্ - কার্ফা

চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায় |
আজিকে যে রাজাধিরাজ কা’ল সে ভিক্ষা চায় ||
অবতার শ্রীরামচন্দ্র যে জানকীর পতি  
তা’ র হ’ল বনবাস রাবণ -করে দুর্গতি |
.                        আগুনেও পুড়িল না ললাটের লেখা হায় ||
স্বামী পঞ্চ পান্ডব, সখা কৃষ্ণ ভগবান,
দুঃশাসন করে তবু দ্রৌপদীর অপমান |
.                        পুত্র তার হ’ল হত যদুপতি যার সহায় ||
মহারাজ শ্রীহরিশচন্দ্র রাজ্যদান ক’রে শেষ  
শ্মশান-রক্ষী  হয়ে লভিল চন্ডাল বেশ |
.                        বিষ্ণু বুকে চরণ-চিহ্ন, ললাট-লেখা কে খন্ডায় ||


.                       **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

.     বিভাষ  মিশ্র - একতালা / ভজন

জবা কুসুম-সঙ্কাশ  /  ঐ উদার অরুণোদয় |  
অপগত তমোভয়  /  জ্যোতির্ম্ময়  ||
জননীর সম স্নেহ-সজল  
নীল গাঢ় গগন-তল,
সুপেয় বারি প্রসূন ফল  /  তব দান অক্ষয় |  
অপহত সংশয় / জয় হে জ্যোতির্ম্ময় ||


.             **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

.                ভৈঁরো ------ ত্রিতাল / শ্রী “গঙ্গা”  স্তব

জয় বিগলিত-করুণা রূপিণী গঙ্গে !
জয় কলুষ-হারিণী, পতিত-পাবনী  /  নিত্যা পবিত্রা যোগী ঋষি সঙ্গে ||
হরি-শ্রীচরণ ছুঁয়ে আপন-হারা  /  পরম প্রেমে হ’লে দ্রবীভূত ধারা ;
ত্রিলোকের ত্রিতাপ পাপ তুমি নিলে মা  / নির্ম্মলে ! তোমার পবিত্র অঙ্গে ||
তব জলে করি স্নান, তব ধারা করি পান  /  ম্লান মন মুনি হয়, লভে মহানির্ব্বাণ,
আনন্দ-গোলোকের তুমি মা সোপান  / নারায়ণ-প্রিয়তমা রূপ বিভঙ্গে ||
ক্ষীর-শুভ্রা তুমি বিশুদ্ধ প্রভায়  /  ধূর্জ্জটী-জটাজুটে মুক্তামালার প্রায়
সকল তীর্থ হতে পবিত্রা তুমি মা  /  জুড়ায়ো মৃত্যু-জ্বালা শীতল তরঙ্গে ||


.                              **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

জয় বিবেকানন্দ সন্ন্যাসী বীর চীর গৈরিকধারী |
জয় তরুণ যোগী, শ্রীরামকৃষ্ণ-ব্রত-সহায়কারী ||
যজ্ঞাহুতির হোমশিখা সম, /  তুমি তেজস্বী তাপস পরম
ভারত-অরবিন্দ নমো নমঃ বিশ্বমঠ বিহারী ||
( মদ ) গর্ব্বিত বল-দর্পীর দেশে মহাভারতের বাণী
শুনায়ে বিজয়ী ঘুচাইলে স্বদেশের অপযশ গ্লানি |
( নব ) ভারতে আনিলে তুমি নব বেদ, / মুছে দিলে জাতিধর্ম্মের ভেদ
জীবে ঈশ্বরে অভেদ আত্মা জানাইলে হুঙ্কারি ||


.                 **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

.                জয়তু শ্রীরামকৃষ্ণ নমো নম  
.                সর্ব্ব-ধর্ম্ম-সমন্বয়-কারী নর-রূপে অবতার পুরুষ পরম |
.                ঈশ্বরে বিশ্বাস জানকীর প্রায় /  বন্দিনী ছিল কামনার লঙ্কায়
.                উদ্ধারিলে তারে তোমার তপস্যায় / শক্তিরে জাগাইয়া শ্রীরাম-সম ||
.                তোমার কথামৃত তলির নববেদ  /  একাধারে রামায়ণ গীতা
.                বিবেকানন্দ মাঝে লক্ষণ অর্জ্জুন  /  শক্তি করিলে পুনর্জ্জীবিতা |
.                ভুভারতে কলহের কুরুক্ষেত্রে  / দাঁড়াইলে তুমি আসি সকরুণ নেত্রে
.                বাজালে অভয় পাঞ্চজন্য শঙ্খ, /  বিনাশিলে অদর্ম্ম, হিংসা, আতঙ্ক
.                প্রেম-নদীয়ায় তুমি নব-গৌরাঙ্গ  / সকল জাতির সখা, প্রিয়তম ||


.                                        **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

.                        ভৈরোঁ - দাদ্ রা

.        জাগো জাগো শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্ম-ধারী |   
.        জাগো শ্রীকৃষ্ণ কৃষ্ণা-তিথির তিমির অপসারি’ ||
.        ডাকে বাসুদেব দেবকী ডাকে,  /  ঘরে ঘরে, নারায়ণ, তোমাকে !
.        ডাকে বলরাম শ্রীদাম সুদাম   /   ডাকিছে যমুনা বারি ||
.        হরি হে, তোমায় সজল নেত্রে  /  ডাকিছে পান্ডব কুরুক্ষেত্রে  !
.        দুঃশাসন-সভায় দ্রোপদী,  /  ডাকিছে লজ্জাহারী ||
.        মহাভারতের হে মহাদেবতা,  /  জাগো জাগো, আনো আলোক-বারতা !
.        ডাকিছে গীতার শ্লোক অনাগতা  /  বিশ্বের-নর-নারী ||


.                             **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

তুমি যদি রাধা হতে শ্যাম !  
আমারি মতন দিবস-নিশি জপিতে শ্যাম-নাম ||
.                কৃষ্ণ-কলঙ্কের-ই জ্বালা /  মনে হ’ত মালতী-মালা
.                চাহিয়া কৃষ্ণপ্রেম জনমে জনমে  / আসিতে ব্রজধাম ||
কত অকরুণ তব বাঁশরীর সূর---   
তুমি হইলে শ্রীমতী ব্রজ কুলবতী  /  বুঝিতে নিঠুর ||
.                তুমি যে-কাঁদনে কাঁদায়েছ মোরে----- /  আমি কাঁদাতাম তেমনি ক’রে,
.                বুঝিতে ---- কেমন লাগে এই গুরু-গঞ্জনা, /  এ প্রাণ-পোড়ানি অবিরাম ||


.                             **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

.                 ভৈরবী - কাওয়ালী

.       দাও দাও দরশন পদ্ম-পলাশ-লোচন  
.        কেঁদে দু নয়ন হ’ল অন্ধ |
.        আকাশ বাতাস-ঘেরা তব ও মন্দির-বেড়া
.        আর কতকাল রবে বন্ধ ||
.        পাখী যেমন সন্ধ্যাকালে বন্ধু স্বজন পালে পালে  
.        উড়ে এসে বসেছিল ডালে হে,
.        রাত পোহালে একে একে উড়ে গেল দিগ্বিদিকে,
.        প’ড়ে আছি একা নিরানন্দে |
.        টুটিল বাঁধন মায়ার, কবে শুনিব এবার  
.        ও রাঙা চরণ-নূপুর-ছন্দ  ||
.        দুখ-শোক-রৌদ্রজলে ফেলে মোর পলে পলে
.        ছলিতেছে হরি কতই ছলে হে,
.        জীবনের বোঝা প্রভু বহিতে কি হবে তবু,  
.        সহিতে পারি না আর দ্বন্দ্ব  |
.        মরণের সোনার ছোঁওয়ায় ডেকে লও ও রাঙা পায়,
.        দেখাও এবার মুখ-চন্দ ||


.                             **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

.                        কীর্ত্তন------ মিশ্র

.       দেখে যা তোরা নদীয়ায়  /   গোরার রূপে এল ব্রজের শ্যামরায়  |
মুখে হরি হরি বলে’  /  হেলে দুলে নেচে চলে,  /  নর-নারী প্রেমে গলে’ ঢলে পড়ে রাঙা পায় ||
.          ব্রজে নূপুর পরি’ নাচিত এমনি হরি, /  কুল ভুলিয়া সবে ছুটিত এমনি করি’ |
.          শচী মাতার রূপে কাঁদে মা যশোদা, /  বিষ্ণুপ্রিয়ার চোখে কাঁদে কিশোরী রাধা |
.          নহে নিমাই নিতাই, ওযে কানাই বলাই  / শ্রীদাম-সুদাম এলো জগাই-মাধাই-এ হায় ||
.       অসি নাই বাঁশী নাই,  এবার শূন্য হাতে,  / এসেছে ভুবন ভুলাতে |
.       লীলা-পাগল এল প্রেমে মাতাতে,  ডুবু ডুবু নদীয়া, বিশ্ব ভাসিয়া যায় ||


.                             **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

.        বর্ণচোরা ঠাকুর এল রসের নদীয়ায়--- তোরা দখবি যদি আয় |
.        তারে কেউ বলে শ্রীমতী রাধা কেউ বলে তা’য় শ্যামরায় ||
.         কেউ বলে তার সোনার অঙ্গে /  রাধা কৃষ্ণ খেলেন রঙ্গে ;
.        আবার কেউ বলে তা’য় গৌর-হরি, কেউ অবতার বলে তায় ||
ভক্ত তারে ষড়ভুজ শ্রীনারায়ণ বলে, /  কেউ দেখেছে শ্রীবাসের ঘরে কেউ বা নীলাচলে |
দুই হাতে তার ধনুর্ব্বাণ ঠিক যেন শ্রীরাম, /  দুই হাতে তার মোহন বাঁশী----যেন রাধা-শ্যাম  ;
.        দু’হাতে তার দন্ড ঝুলি নবীন সন্ন্যাসীর প্রায়  |
.        সে আপনি কেঁদে হরি প্রেমে ত্রিজগৎ কেঁদে ভাসায় ||


.                             **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

বর্ষা গেল, আশ্বিন এল, উমা এল কই |
শূন্য ঘরে কেমন ক’রে পরাণ বেঁধে রই ||
ও গিরিরাজ ! সবার মেয়ে
মায়ের কোলে এল ধেয়ে,
আমারই ঘর রইল আঁধার, আমি কি মা নই ?
নাই শাশুড়ী ননদ উমার, কেউ আদর করার নাই-----
মা অনাদরে কালি সেজে বেড়ায় নাকি তাই |
মোর গৌরী বড় অভিমানী,  
সে বুঝ্ বে না মা’র প্রাণ-পোড়ানী ;
আন্ তে তারে সাধ্ তে হবে ওর যে স্বভাব ঐ |

.                             **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম

.                   কাফী-সিন্ধু-------কাহারবা হোরী

ব্রজ গোপী খেলে হোরী খেলে আনন্দে নব ঘন-শ্যাম সাথে |
রাঙা অধরে ঝরে হাসির কুম্ কুম অনুরাগ আবীর নয়ন-পাতে ||
পিরীতি-ফাগ-মাখা গোরীর সঙ্গে
হোরী খেলে হরি উন্মাদ-রঙ্গে,
বসন্তে এ কোন্ কিশোর দুরন্ত  
রাধারে জিনিতে এল পিচ্ কারী হাতে ||
গোপিনীরা হানে ঘন অপাঙ্গ-খরশর ভ্রুকুটীঙঙ্গ
অনঙ্গ-আবেশে জ্বরজ্বর থরথর শ্যামের অঙ্গ |
শ্যামল তনুতে হরিত-কুঞ্জে  
অশোক ফুটেছে যেন পুঞ্জে পুঞ্জে
রং-পিয়াসী মন-ভ্রমর গুঞ্জে  
ঢালো আরো ঢালো রং প্রেম-যমুনাতে |



.                             **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম
এই গানটি বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ শ্রী বিমল ভূযণ, ১৯৮০--১৯৮১ সাল নাগাদ আকাশবাণী কলকাতা থেকে নজরুল গীতি শিক্ষার
আসরে শিখিয়েছিলেন | পরবর্তিতে আমরা এই গানটি কোনো নজরুল গীতির বইতে পাই নি | নজরুলের বহু গান
এমনভাবেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে | তাঁর গানের পূর্ণ সংকলন করা এখনো সম্ভব হয় নি |  সুদূর পোর্ট ব্লেয়ারে বসে সেই
সঙ্গীত শিক্ষার আসর শুনতেন
কবি সোনালী সেনগুপ্ত | তিনিই এই গানটি আমাদের পাঠিয়েছেন এখানে সংকলন করার
জন্য | আমরা মিলনসাগরে কৃতজ্ঞ
শ্রী বিমল ভূষণ এবং কবি সোনালী সেনগুপ্তর কাছে |


ভাদরের ভরা নদীতে ভাসায়ে,
কেতকি পাতার তরণী
কে আসে, কে আসে, কে আসে গো ?
বলাকার রং পালক উড়ায়ে
বাহি ছায়াপথ সরণী
কে আসে, কে আসে, কে আসে গো ?

দ’লি শাপ্ লা, শালুক, শতদল,
আসে রাঙায়ে কাহার পদতল  ?
নীল লাবনী ঝড়ায়ে ঢল ঢল
ভরাইয়া সারা ধরণী,
কে  আসে, কে আসে, কে আসে গো ?

মৃদু মধুর মধুর হাসিয়া
সমিরণ সম ভাসিয়া,
আসে কারে ভালবাসিয়া ?
বল কার মনহরণী
কি আশে, কে আসে কে আসে গো ?


.                **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম


মাকে আমার দেখেছে যে
ভাইকে সে কি ঘৃণা করে |
ত্রিলোক-বাসী প্রিয় তাহার  
পরাণ কাঁদে সবার তরে ||
নাই জাতি ভেদ উচ্চ-নীচের জ্ঞান  
তাহার কাছে সকলে সমান,
দেখ্ লে গুহক চন্ডালে সে রামের মত বক্ষে ধরে ||
মা আমাদের মহামায়া পরমা প্রকৃতি
পিতা মোদের পরমাত্মা রে  
তাই সবার সাথে প্রীতি  
মোদের সবার সাথে প্রীতি  |
সন্তানে তাঁর ঘৃণা ক’রে মাকে করে পূজা
সে পূজা তার নেয় না কভু,  নেয় না দশভূজা |
(মোরা) এই ভেদ-জ্ঞান ভুল্ ব যেদিন
মা সেই দিন আসবে ঘরে  ||


.                **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম


মাগো আমি মন্দমতি তবু যে সন্তান তোরই |
( হায় ) পুত্র বেড়ায় কাঙাল বেশে মা যার ভুবনেশ্বরী  ||
তুই যে এত হানিস্ হেলা  
( তবু ) তোরেই ডাকি সারা বেলা,
মা’র খেয়ে তোর শিশুর মত মাগো তোকেই জড়িয়ে ধরি  ||
মা হয়ে কেমন ক’রে কোল থেকে তোর দিলি ফেলে
( মাগো ) কেন দিলি ধূলায় ফেলে  ?
( আমি ) মন্দ এত হতাম না মা মায়ের স্নেহ-সুধা পেলে  |
( মা ) তোর উপরে অভিমানে দু’চোখ যায় যেদিক পানে
সেই দিকে তাই ধাই মা এখন মরণ-বাঁচন ভয় না করি ||


.                **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম


সুখ-দিনে ভুলে থাকি, বিপদে তোমারে স্মরিয়া |
.        ডুবাবে কি তব নাম আমারে ডুবাইয়া ||
.        মা’র কাছে মার খেয়ে শিশু যেমন ডাকে মাকে ,
.        যত দাও দুখ শোক ততই ডাকি তোমাকে |
.        জানি শুধু তুমি আছ আসিবে আমার ডাকে,
.        তোমারি এ তরী প্রভু, তুমি চল বাহিয়া  ||



.                **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম


হে গোবিন্দ রাখ চরণে |  
মোরা তব চরণে শরণাগত আশ্রয় দাও আশ্রিত জনে হে ||
গঙ্গা ঝরে যে শ্রীচরণ বেয়ে কেন দুখ পাই সে চরণ চেয়ে ||
এ ত্রিতাপ জ্বালা হরহে শ্রীহরি, চাহ করুণা সিক্ত নয়নে ||
ভিক্ষা চাহিলে মানুষ নাহি ফিরায়
তোমার দুয়ারে হাত পাতিল যে ফিরাবে কি তুমি তায় |
তব, চরণ যাচিয়া ডুবে মরি যদি রবে কলঙ্ক ভুবনে  |


.                **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম


হেলে দুলে চলে বন-মালা গলে গোট-বিহারী বনে বন-মালী সাজে  |
বঙ্কিম শিখি পাখা শোভিত অলক চন্দন তিলক ললাটে রাজে ||
পথের ধূলি হরি চরণ পরশে  
হ’ল সুভিত হরি-চন্দন হরষে,
নিখিল-ভক্ত-প্রাণ চরণে নূপুর হয়ে রুমু ঝুমু বাজে ||
তৃণ নাহি পরশে উচাটন ধেনু সব  
বংশী-বট-তলে শোন শ্যাম বেণুরব,
অপরূপ অভিনব প্রেম অনুভব, জাগে ব্রজ-গোপীকার প্রাণের মাঝে ||


.                **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম


হোরীর রঙ লাগে আজি গোপিনীর তনু মনে |  
অনুরাগে-রাঙা গোরীর বিধু-বদনে ||
ফাগের লালী আনিল কে,
কাজল-কালো চোখে,
কামনা-আবীর ঝরে রাঙা নয়নে ||
অশোক রঙন ফুলের আভা জাগে ডালিম-ফুলী গালে,
নাচিছে হৃদয়  আজি রসিয়ার নাচের তালে  |
তাম্বুল-রাঙা ঠোঁটে ফাগুনের ভাষা ফোটে,  
প্রাণের খুশীর রং লেগেছে রাঙা বসনে ||


.                **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর
*
ভক্তি গীতি, কাজী নজরুল ইসলাম


হে পার্থ-সারথি  !   বাজাও বাজাও পাঞ্চজন্য শঙ্খ |
চিত্তের অবসাদ দূর কর কর দূর  
ভয়-ভীত জনে কর হে নিশঙ্ক  ||
জড়তা ও দৈন্য হানো হানো,   
গীতার মন্ত্রে জীবন দানো
.            ভোলাও ভোলাও মৃত্যু-আতঙ্ক  ||
মৃত্যু জীবনের শেষ নহে নহে,
.            শোনাও শোনাও অনন্তকাল ধরি’
অনন্ত জীবন-প্রবাহ বহে |
দুরন্ত দুর্ম্মদ যৌবন-চঞ্চল  
ছাড়িয়া আসুক মা’র স্নেহ-অঞ্চল ,
.                বীর সন্তানদল
করুক সুশোভিত মাতৃ-অঙ্ক  ||


.                **************

.                                                                                                 
পরে     




মিলনসাগর