*
চন্দ্রবিন্দু , কাজী নজরুল ইসলাম

প্যাক্ট্

.                          ( গান )

কোরাস্ :----

বদ্ না-গাড়ুতে গলাগলি করে, নব প্যাক্ টের আস্ নাই,
মুসলমানের হাতে নাই ছুরি,  হিন্দুর হাতে বাঁশ নাই ||

আঁটসাঁট ক’রে গাঁটছড়া বাঁধা হ’ল টিকি আর দাড়িতে,
বজ্র আটুনী ফস্ কা গেরো ?  তা হয় হোক তাড়াতাড়িতে !
একজন যেতে চাহিবে সুমুখে, অন্যে টানিবে পিছনে,
ফস্ কা সে গাঁট হয়ে যাবে আঁট সেই টানাটানি ভীষণে ||

বুকে  বুকে মিল হ’ল  নকো, মিল হ’ল পিঠে পিঠে ? তাই সই !
মিঞা কন, “কোথা দাদা মোর ?”  আর বাবু ক’ন,
.                                                       “মিঞা ভাই কই ?”
বাবু দেন মেখে দাড়িতে খেজাব, মিঞা চৈতনে তৈল,
চার চোখে করে আড়-চোখাচোখী, কি মধু মিলন হইল |

বাবু কন, “খাই তোমারে তুষিতে ঐ নিষিদ্ধ কুক্ ড়ো !”
মিঞা কন্ “মিল আরো জমে দাদা, যদি দাও দুটো টুক্ রো |
বাদশাহী গেছে, আছিল মুর্গী, দাদা,  তাও হ’ল শুদ্ধি ?
দর্ মা খুলিয়া তাও নিয়ে গেলে, আর কার জোরে যুদ্ধি |”

বাবু কল, “ পরি লুঙি বি-কচ্ছ তোমাদের দিল্ তুষিতে !”
মিঞা কন, “ফেজে রাখি চৈতনী ঝান্ডা সেই সে খুশীতে !
আমাদের কত মিঞা ভাই করে বাস তব বারাণসীতে,
(আর ) বাত হ’লে মোরা ভাত খাইনাকো আজো তাই
.                                              একাদশীতে !”

বাবু কন, “মোরা চটিকা ছাড়িয়া সেলিমী নাগরা ধ’রেছি !”
মিঞা কন, “গরু জবাই-এর পাপ হ’তে তাই দাদা ত’রেছি |”
বাবু কন, “এত ছাড়িলেই যদি ছেড়ে দাও খাওয়া বড়টা !”
মিঞা কন, “দাদা মুরগী ত নাই, কি দিয়া খাইব পরটা !”

বাবু কন, “গরু কোরবানী করা ছেড়ে দাও যদি মিঞা ভাই,
সিনান করায়ে সিঁদুর পরায়ে তোরে মন্দিরে নিয়া যাই !”
মিঞা কন, “যদি আল্লা মিঞার ঘরে নাহি লহ হরিনাম,
বলদ সহিত ছাড়িব তোমারে যাহা হয় হবে পরিণাম |”

‘সারা-রারা-রারা’  সহসা অদূরে উঠিল হোরির হর্ রা,
শম্ভু ছুটিল বম্বু তুলিয়া, ছকু মিঞা নিল ছোর্ রা !
লাগে টানাটানি হেঁইয়ো হেঁইয়ো, টিকি দাড়ি ওড়ে শূন্যে,
ধর্মে ধর্মে করে কেলোকুলি, নব-প্যাক্ টেরি পুণ্যে !

বদ্ না গাড়ুতে পুনঃ ঠোকাঠুকি, রোল উঠিল, ‘হা হন্ত’ !
ঊর্ধ্বে থাকিয়া সিঙ্গী মাতুল হাসে চিরকুটি’ দন্ত’ !
মস্ জিদ পানে ছুটিলেন মিঞা, মন্দির পানে হিন্দু,
আকাশে উঠিল চির-জিজ্ঞাসা----করুণ চন্দ্রবিন্দু !

.                   **************



.                                                                                 
পরে    

মিলনসাগর
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম-এর "চন্দ্রবিন্দু"
থেকে কয়েকটি কবিতা
*
চন্দ্রবিন্দু , কাজী নজরুল ইসলাম


শ্রীচরণ ভরসা
     [ সোহিনী---একতাল ]

কোরাস :----
থাকিতে চরণ মরণে কি ভয়, নিমেষে যোজন ফরসা !
মরণ-হরণ নিখিল-শরণ জয় শ্রীচরণ ভরসা ||

গর্বের শির খর্ব মোদের ? চরণ তেমনি লম্বা ?
শৈশব হ’তে আ-মরণ চলি সবারে দেখায়ে রম্ভা !
সাজেন্ট্ যবে আর্জেন্ট-মার হাতে ক’রে আসে তাড়ায়ে,
না হ’য়ে ক্রুদ্ধ পদ-প্রবুদ্ধ সন্মুখে দিই বাড়ায়ে ||


কোরাস :----
থাকিতে চরণ মরণে কি ভয়, নিমেষে যোজন ফরসা !
মরণ-হরণ নিখিল-শরণ জয় শ্রীচরণ ভরসা ||

বপু কোলা ব্যাং, রবারের ঠ্যাং প্রয়োজন মতো বাড়ে গো,
সমানে আঁদাড়ে বনে ও বাদাড়ে পগারে পুকুক-পাড়ে গো !
লখিতে চকিতে লঙ্ঘিয়া যায় গিরি দরী বন সিন্ধু,
অই এক পথে মিলিয়াছি মোরা সব মুস্ লিম্ হিন্দু ||


কোরাস্  :----
থাকিতে চরণ মরণে কি ভয়, নিমেষে যোজন ফরসা !
মরণ-হরণ নিখিল-শরণ জয় শ্রীচরণ ভরসা ||

কহিতেছে নাকি বিশ্ব, আমরা রণে পশ্চাতে হেঁটে যাই !
পশ্চাৎ দিয়ে ছুটে কেউ ? হেসে মরিব কি দম ফেটে ছাই ?
ছুটি যবে মোরা সুমুখেই ছুটি, পশ্চাতে পাশে হেরি না |
সামনে ছোটারে পিছু হাঁটা বলো ?----রাঁচি যাও, আর
.                                                দেরী না |


কেরাস্ :----
থাকিতে চরণ মরণে কি ভয়, নিমেষে যোজন ফরসা |
মরণ-হরণ নিখিল-শরণ জয় শ্রীচরণ ভরসা ||


আমাদের পিছে ছুটিতে ছুটিতে মৃত্যু পড়িবে  হাঁপায়ে,
জিভ্ বা’র হয়ে পড়িবে যমের, জীবন তখন বাঁ পায়ে !
মোরা দেব-জাতি ছিনু যে একদা, আজো তার স্মৃতি চরণে,
ছুটি না ত যেন উড়ে চলি নভে, থাকেনাক’ ধুতি পরণে ||


কোরাস্ :-----
থাকিতে চরণ মরণে-কি ভয়, নিমেষে যোজন ফরসা !
মরণ-হরণ নিখিল-শরণ জয় শ্রীচরণ ভরসা ||

বাপ-পিতামোর প্রদর্শিত এ পথ মহাজন-পিষ্ট,
গোস্বামী মতে পারাহেও বাবা এ পথে মিলিবে ইষ্ট,
ম’রে যদি যাও তা হ’লে তো তুমি একদম গেলে মরিয়াই !
পলাইল যেই বেঁচে গেল সেই, জনম চরণ ধরিয়াই ||


কোরাস্ :-----
থাকিতে চরণ মরণে কি ভয়, নিমেষে যোজন ফরসা |
মরণ-হরণ নিখিল-শরণ জয় শ্রীচরণ ভরসা ||

.                   **************



.                                                                                 
পরে    

মিলনসাগর
*
চন্দ্রবিন্দু , কাজী নজরুল ইসলাম


‘দে গরুর গা ধুইয়ে’

     কোরাস্ :----     দে  গরুর  গা ধুইয়ে !!

উলটে গেল বিধির বিধি আচার বিচার ধর্ম জাতি,
মেয়েরা সব লড়ুই করে, মদ্দ করেন চড়ুই ভাতি !
.              পলান পিতা টিকেট ক’রে----
.              খুকী তাহার পিকেট করে !
গিন্নি কাটেন চরকা, কাটেন কর্তা সময় গাই দুইয়ে !



.        কোরাস্ :----- দে  গরুর গা ধুইয়ে !!

চর্মকার আর মেথর চাঁড়াল ধর্মঘটের কর্ম-গুরু !
পুলিশ শুধু করছে পরখ্ কার কতটা চর্ম পুরু !
.             চাটুয্যেরা রাখছে দাড়ি,
.             মিঞারা যান নাপিত-বাড়ি !
বোট্ কা-গন্ধী ভোজপুরী কয় বাঙালীকে---- ‘মৎ ছুঁইয়ে !’



.        কোরাস :----   দে  গরুর গা ধুইয়ে !!


মাজায় বেঁধে পৈতে বামুন রান্না করে কার না বাড়ী,
গা ছুঁলে তার লোম ফেলে না,  ঘর ছুঁলে তার ফেলে হাঁড়ি !
.                 মেয়েরা যান মিটিং হেদোর,
.              পুরুষ বলে, ‘বাপ্ রে দে দোর !’
ছেলেরা খায় লাপ্ সি-হুড়ো, বুড়োর পড়ে ঘাম চুঁইয়ে !



.        কোরাস্ :----    দে গরুর গা ধুইয়ে  !!

ভয়ে মিঞা ছাড়্ ল টুপি, আঁট্ ল ক’ষে গোপাল-কাছা,
হিন্দু সাজে গান্ধী-ক্যাপে, লুঙ্গী পরে ফুঙ্গী চাচা !
.              দেখ্ লে পুলিশ গুঁতোয় ষাঁড়ে !
.              পুরুষ লুকায় বাঁশের ঝাড়ে !
নাক কাটা হয় রায় বাহাদুর, খান বাহাদুর কান খুইয়ে !


.        কোরাস্ :----   দে  গরুর গা ধুইয়ে !!


খঞ্জ নেতা গঞ্জনা দেয়, ‘চ’লতে নারে দেশ যে সাথে !’
‘টেকো বলে, ‘টাক ভালো হয় আমার তেলে, লাগাও মাথে !’
.                   ‘কি গানই গায়’,  বলছে কালা,
.                কানা কয় ‘কি নাচ্ ছে বালা !’
কুঁজো বলে, ‘সোজা হ’য়ে শুতে যে সাধ, দে শুইয়ে  !:”


.        কোরাস্ :----     দে  গরুর  গা ধুইয়ে !!


সস্তা দরে দস্তা-মোড়া আসছে স্বরাজ বস্তা-পচা,
কেউ বলে না ‘এই যে লেহি’ আস্ লে ‘য়ুদ্ধ দেহি’র খোঁচা’ |
.                গুণীরা খায় বেগুন-পোড়া
.                বেগুন চড়ে গাড়ী ঘোড়া,
ল্যাংড়া হাসে ভেংড়ো দেখে ব্যাঙের পিঠে ঠ্যাং থুইয়ে !

.        কোরাস্   :---     দে  গরুর গা ধুইয়ে  !!!

.                   **************



.                                                                                 
পরে    

মিলনসাগর