তরী আমার কোন্ কিনারায় পাইনে খুঁজে কূল, স্মরণ-পারের গন্ধ পাঠায় কম্ লা নেবুর ফুল | . পাহাড়তলির শাল বনায় . বিষের মত নীল ঘনায় ! সাঁঝ প’রেছে ঐ দ্বিতীয়ার-চাঁদ-ইহুদী-দুল ! হায় গো আমার ভিন্ গায়ে আজ পথ হয়েছে ভুল !
কোথায় তুমি কোথায় আমি চৈতে দেখা সেই, কেঁদে ফিরে যায় যে চইত----তোমার দেখা নেই ! . কন্ঠে কাঁদে একটি স্বর----- . কোথায় তুমি বাঁধলে ঘর ? তেম্ নি ক’রে জাগছ কি রাত আমার আশাতেই ? কুড়িয়ে-পাওয়া-বেলায় খুঁজি হারিয়ে-যাওয়া খেই !
. মরণ যে ঝাপ বরণ করে তোরে, . ‘মা’ ‘মা’ ডেকে যে দাঁড়ায়এই শক্তিহীনার দ্বারে ! . মানিক আমি পেয়ে শুধু হারাই বারে বারে, ওরে তাই তো ভয়ে বক্ষ কাঁপে কখন দিবি ফাঁকি ! . ওরে আমার হারামণি ! ওরে আমার পাখী . কেমন ক’রে কোথায় তোরে আড়াল দিয়ে রাখি ?
. হারিয়ে-পাওয়া ওরে আমার মানিক ! . দেখেই তোরে চিনেছি আয় বক্ষে ধরি খানিক ! . বাণ-বেঁধা বুক দেখে তোরে কোলে কেহ না নিক, ওরে হারার ভয়ে ফেল্ তে পারে চির-কালের মা কি ? . ওরে আমার কোমল-বুকে-কাঁটা-বেঁধা পাখী ! . কেমন ক’রে কোথায় তোরে আড়াল দিয়ে রাখি ?
. এ যে রে তোর চির-চেনা স্নেহ, . তুই তো আমার ন’স্ রে অতিথ অতীত কালের কেহ, . বারে বারে নাম হারায়ে এসেছি্ স এই গেহ এই মায়ের বুকে থাক যাদু তোর য’দিন আছে বাকী ! . প্রাণের আড়াল করতে পারে সৃজন দিনের মা কি ? . হারিয়ে যাওয়া ? ওরে পাগল, সে তো চোখের ফাঁকি ||
তুমি অমন ক’রে গো বারে-বারে জল-ছলছল-চোখে চেয়ো না, . জল ছলছল-চোখে চেয়ো-না, ঐ কাতর-কন্ঠে থেকে থেকে শুধু বিদায়ের গান গেয়ো না, . শুধু বিদায়ের গান গেয়ো না ||
হাসি দিয়ে যদি লুকালে তোমার সারা জীবনের বেদনা, আজো তবে শুধু হেসে যাও, আজ বিদায়ের দিনে কেঁদো না | . ঐ ব্যথাতুর আঁখি কাঁদো-কাঁদো মুখ . দেখি, আর শুধু হু-হু করে বুক ! . চলার তোমার বাকী পথটুক্---- . পথিক ! ওগো, সুদূর পথের পথিক---- হায়, অমন ক’রে ও অকরুণ গীতে আঁখির সলিলে ছেয়ো না, . ওগো আঁখির সলিলে ছেয়ো না ||
. দূরের পথিক ! তুমি ভাবো বুঝি . তব ব্যথা কেউ বোঝে না, . তোমার ব্যথার তুমিই দরদী একাকী, . পথে ফেরে যারা পথ-হারা, . কোনো গৃহবাসী তারে খোঁজে না,---- বুকে ক্ষত হ’য়ে জাগে আজো সেই ব্যথা-লেখা কি ?
দূর বাউলের গানে ব্যথা হানে বুঝি ধূ-ধূ মাঠে পথিকে ? এ যে মিছে অভিমান পরবাসী ! দেখে ঘর-বাসীদের ক্ষতি কে ? . তবে জান’ কি তোমার বিদায়-কথায় . কত বুক-ভাঙা গোপন ব্যথায় . আজ কতগুলি প্রাণ কাঁদিছে কোথায়----- . পথিক ! ওগো অভিমানী দূর পথিক ! . কেহ ভালোবাসিল না ভেবে যেন আজো . মিছে ব্যথা পেয়ে যেয়ো না, . ওগো যাবে যাও, তুমি বুকে ব্যথা নিয়ে যেয়ো না ||
. হয়তো তোমার পা’ব দেখা যেখানে ঐ নত আকাশ চুম্ ছে বনের সবুজ রেখা ||
. ঐ সুদূরের গাঁয়ের মাঠে . আ’লের পথে বিজন ঘাটে, . হয়তো এসে মুচকি হেসে . ধ’র্ বে আমার হাতটি একা ||
ঐ নীলের ঐ গহন-পারে ঘোম্ টা-হারা তোমার চাওয়া আন্ লে খবর গোপন দূতী দিক্ পারে ঐ দখিন হাওয়া || . বনের ফাঁকে দুষ্টু তুমি . আস্তে যাবে নয়না চুমি’, . সেই সে কথা লিখছে হোথা . দিগ্বলয়ের অরুণ লেখা !
আজ কাশ-বনে কে শ্বাস ফেলে যায় মরা নদীর কূলে, ও তার হ’ল্ দে আঁচল চ’ল্ তে জড়ায় অড়হরের ফুলে ! ঐ বাব্ লা-ফুলে নাক-ছাবি তার, . গা’য় সাড়ি নীল অপ্ রাজিতার, . চ’লেছি সেই অজানিতার, . উদাস পরশ পেতে | আমায় ডেকেছে সে চোখ-ইশারায় পথে যেতে যেতে ||
ঐ ঘাসের ফুলে মটরশুঁটীর ক্ষেতে, আমার এ-মন-মৌমাছি ভাই উঠেছে তাই মেতে ||