মিয়া ও বিবিতে বড় ভাব আজি খামারে ধরে না ধান | বিছানা করিতে ছোট বিবি রাতে চাপাসুরে গাহে গান ! . শাশবিবি’ কন, “আহা, আসে নাই . কতদিন হ’ল মেজ্ লা জামাই |” ছোট মেয়ে কয়, “আম্মাগো, রোজ কাঁদে মেজো বুবুজান” | দলিজের পান সাজিয়া সাজিয়া সেজো-বিবি লবেজান !
হল্লা করিয়া ফিরিছে পাড়ার দস্যি ছেলের দল ! ময়নামতীর শাড়ী-পরা মেয়ে গয়নাতে ঝল্ মল ! . নতুন পৈঁচি বাজুবন্দ্ প’রে . চাষা-বৌ কথা কয় না গুমোরে, জারিগান আর গাজীর গানেতে সারা গ্রাম চঞ্চল ! বৌ করে পিঠা ‘পুর’ -দেওয়া মিঠা দেখে জিভে সরে জল !
যাহাদের তরে অকালে আম্মা, জান দিলে কোর্ বান, তাদের জাগায় সার্থক হোক তোমার আত্মদান ! মধ্যপথে মা তোমার প্রাণের নিবিল যে দীপ-শিখা, জ্বলুক নিখিল-নারী-সীমন্তে হ’য়ে তাই জয়টীকা ! বন্দিনীদের বেদনার মাঝে বাঁচিয়া আছ মা তুমি, চিরজীবী মেয়ে, তবু যাই ঐ কবরের ধূলি চুমি’ ! মৃত্যুর পানে চলিতে আছিলে জীবনের পথ দিয়া, জীবনের পানে চলিছ কি আজ মৃত্যুরে পারাইয়া ?
করিল না যারা জীবনে ভুল, দলিল না কাঁটা, ছেঁড়েনি ফুল, দারোয়ান হ’য়ে সারা জীবন আগুলিল বেড়া ছুঁলনা গুল,---- যেতে নারে তারা এ জল্ সায় | . আয় বেহেশ্ তে কে যাবি আয় ||
বুড়ো নীতিবিদ-----নুড়ির প্রায় পেলনাক’ এক বিন্দু রস চিরকাল জলে রহিয়া হায় !------ কাঁটা বিঁধে যার ক্ষত আঙুল দোলে ফুলমালা তারি গলায় ! . আয় বেহেশ্ তে কে যাবি আয় ||
তিলে তিলে যারা পিশে মারে অপরের সাথে আপনারে, ধরণীর ঈদ-উত্সবে রোজা রে’খে প’ড়ে থাকে দ্বারে, কাফের তাহারা এ ঈদ্ গায় ! . আয় বেহেশ্ তে কে যাবি আয় ||
জগতের এই বিচিত্রতম মিসিলে ভাই কত রূপ কত দৃশ্যের লীলা চলে সদাই !----- শ্রমরত ঐ কালি-মাখা কূলি, নৌ-সারং, বলদের মাঝে হলধর চাষা দুখের সং, . প্রভু স-ভৃত্য পেষণ-কল---- . অগ্র-পথিক উদাসী-দল, . জোর্ কদম্ চল্ রে চল্ ||
নিখিল গোপন ব্যর্থ-প্রেমিক আর্ত-প্রাণ, সকল কারার সকল বন্দী আহত-মান, ধরার সকল সুখী ও দুঃখী, সৎ, অসৎ , মৃত জীবন্ত, পথ-হারা, যারা ভোলেনি পথ,----- . আমাদের সাথী এরা সকল | . অগ্র-পথিক রে সেনাদল, . জোর্ কদম্ চল্ রে চল্ ||
ছুঁড়িতেছে ভাঁটা জ্যোতির্চক্র ঘূর্ণ্যমান, হের পুঞ্জিত গ্রহ-রবি তারা দীপ্তপ্রাণ ; আলো-ঝলমল দিবস, নিশীথ স্বপ্নাতুর,---- বন্ধুর মত ছেয়ে আছে সবে নিকট-দূর | . এক ধ্রুব সবে পথ-উতল | . নব যাত্রীক পথিক দল, . জোর্ কদম্ চল্ রে চল্ ||
আমাদের এরা, আছে এরা সবে মোদের সাথ, এরা সখা----সহযাত্রী মোদের দিবস-রাত ! ভ্রুণ-পথে আছে মোদের পথের ভাবী পথিক, এ-মিসিলে মোরা অগ্র-যাত্রী সুনির্ভীক | . সুগম করিয়া পথ পিছল . অগ্র-পথিক পথ রে সেনাদল, . জোর্ কদম্ চল্ রে চল্ ||
মুসারে আমরা দেখিনি, তোমায় দেখেছি মিসর-মুনি, ফেরাঊন মোরা দেখিনি, দেখেছি নিপীড়ন ফেরাঊনী ! ছোটে অনন্ত সেনা-সামন্ত অনাগত কার ভয়ে, দিকে দিকে খাড়া কারা-শৃঙ্খল, জল্লাদ ফাঁসি ল’য়ে ! আইন-খাতার পাতায় পাতায় মৃত্যুদন্ড লেখা, নিজের মৃত্যু এড়াতে কেবলি নিজেরে করিছে একা ! সদ্য প্রসূত প্রতি শিশুটিরে পিয়ায় অহর্নিশ শিক্ষা দীক্ষা সভ্যতা বলি, তিলে-তিলে-মারা বিষ | ইহারা কলির নব ফেরাঊন ভেল্কি খেলায় হাড়ে, মানুষে ইহারা না মেরে প্রথমে মনুষ্যত্ব মারে !
মনুষ্যত্ব এই সব মানুষেরই মাঝে কবে হে অতিমানুষ, তুমি এসেছিলে জীবনের উত্সবে | চারি দিকে জাগে মৃত্যুদন্ড রাজাকারা প্রতিহারী, এরই মাঝে এলে দিনের আলোকে নির্ভীক পদচারী | রাজার প্রাচীর ছিল দাঁড়াইয়া তোমারে আড়াল করি’ আপনি আসিয়া দাঁড়াইলে তার সকল শূন্য ভরি’ ! পয়গম্বর মুসার তবুও ত ছিল ‘আষা’ অদ্ভুত, খোদ সে খোদার প্রেরিত ডাকিলে আসিলে স্বর্গ-দূত ! পয়গম্বর ছিলো না ক’ তুমি----পাওনি ঐশী বাণী, স্বর্গের দূত ছিল না দোসর, ছিলে না শস্ত্র-পাণি ; আদেশে তোমার নীল দরিয়ার বক্ষে জাগেনি পথ, তোমারে দেখিয়া করেনি সালাম কোনো গিরি-পর্বত ! তবুও এশিয়া আফ্রিকা গাহে তোমার মহিমা-গান, মনুষ্যত্ব থাকিলে মানুষ সর্বশক্তিমান ! দেখাইলে তুমি, পরাধীন জাতি হয় যদি ভয়হারা, হোক নিরস্ত্র----অস্ত্রের রণে বিজয়ী হইবে তারা | অসি দিয়া নয়, নির্ভীক করে মন দিয়া রণ জয়, অস্ত্রে যুদ্ধ জয় করা সাজে----দেশ জয় নাহি হয় | ভয়ের সাগর পাড়ি দিল যেই শির করিল না নীচু, পশুর নখর দন্ত দেখিয়া হাটিল না কভু পিছু, মিথ্যাচারীর ভ্রূকুটী শাসন নিষেধ রক্ত-আঁখি না-মানি----জাতির দক্ষিণ করে বাঁধিল অভয় রাখী, বন্ধন যারে বন্দিল হ’য়ে নন্দন-ফুলহার না-ই হ’ল সে গো পয়গম্বর নবী দেব অবতার, সর্ব কালের সর্ব দেশের সকল নর ও নারী করে প্রতীক্ষা, গাহে বন্দনা, মাগিছে আশিস্ তারি !
*** *** *** ***
“এই ভারতের মহামানবের সাগর তীরে” হে ঋষি তেত্রিশ কোটি বলির ছাগল চরিতেছে দিবানিশি ! গোষ্ঠে গোষ্ঠে আত্মকলহ অজাযুদ্ধের মেলা, এদের রুধিরে নিত্য রাঙিছে ভারত-সাগর-বেলা | পশুরাজ যবে ঘাড় ভেঙে খায় একটারে ধরি আসি’ আরটা তখনো দিব্যি মোটায়ে হ’তেছে খোদার খাসি ! শুনে হাসি পায় ইহাদের নাকি আছে গো ধর্ম জাতি, রাম-ছাগল আর ব্রহ্ম-ছাগল আরেক ছাগল পাতি ! মৃত্যু যখন ঘনায় এদের কশা’য়ের কল্যাণে, তখনো ইহারা আঙুল উচাঁয়ে এ উহারে গালি হানে | ইহাদের শিশু শৃগালে মারিলে এরা সভা ক’রে কাঁদে, অমৃতের বাণী শুনাতে এদের লজ্জায় নাহি বাধে ! নিজেদের নাই মনুষ্যত্ব, জানি না কেমনে তা’রা নারীদের কাছে চাহে সতীত্ব হায় রে সরম-হারা ! কবে আমাদের কোন্ সে পুরুষে ঘৃত খেয়েছিল কেহ, আমাদের হাতে তারি বাস পাই, আজো করি অবলেহ !
আশা ছিল, তবু তোমাদেরি মত অতি মানুষেরে দেখি’ আমরা ভুলিব মোদের এ গ্লানি, খাঁটি হবে যত মেকি ! তাই মিসরের নহে’ এই শোক এই দুর্দিন আজি, এশিয়া আফ্রিকা দুই মহাভূমে বেদনা উঠেছে বাজি ! অধীন ভারত তোমারে স্মরণ করিয়াছে শতবার, তব হাতে ছিল জলদস্যুর ভারত-প্রবেশ-দ্বার | হে ‘বনি ইস্ রাইলের’ দেশের অগ্রনায়ক বীর, অঞ্জলি দিনু ‘নীলে’র সলিলে অশ্রু ভাগীরথীর ! সালাম করাও স্বাধীনতা নাই সোজা দুই হাত তুলি’ তব ‘ফতেহায়, কি দিবে এ জাতি বিনা দুটো বাঁধা বুলি ? মলয়-শীতলা, সুজলা এ দেশে ---- আশিস্ করিও খালি---- উড়ে আসে যেন তোমার দেশের মরুর দু’মুঠো বালি |
*** *** *** ***
তোমার বিদায়ে দূর অতীতের কথা সেই মনে পড়ে, মিসর হইতে বিদায় লইল মুসা যবে চিরতরে, সভ্রমে স’রে পথ ক’রে দিল ‘নীল’ দরিয়ার বারি, পিছু পিছু চলে কাঁদিয়া কাঁদিয়া মিসরের নর-নারী, শ্যেন-সম ছোটে ফেরাঊন সেনা, ঝাঁপ দিয়া পড়ে স্রোতে, মুসা হ’ল পার ফেরাঊন ফিরিল না ‘নীল’ নদ হ’তে ! তোমার বিদায়ে করিব না শোক, হয়ত দেখিব কাল তোমার পিছনে মরিছে ডুবিয়া ফেরাঊন দজ্জাল !
. আমি জানি তুমি কেন চাহনাক’ ফিরে | গৃহকোণ ছাড়ি আসিয়াছি আজ দেবতার মন্দিরে | . পুতুল লইয়া কাটিয়াছি বেলা . আপনারে ল’য়ে শুধু হেলা-ফেলা, জানিতে না, আছে হৃদয়ের খেলা আকুল নয়ন-নীরে, এত বড় দায় নয়নে নয়নে নিমেষের চাওয়া কি রে ? . আমি জানি তুমি কেন চাহনাক’ ফিরে ||
( ২ )
. আমি জানি তুমি কেন চাহনাক’ ফিরে | জানিতে না আঁখি আঁখিতে হারায় ডুবে যায় বাণী ধীরে, . তুমি ছাড়া আর ছিলনাক’ কেহ . ছিল না বাহির ছিল শুধু গেহ, কাজল ছিল গো জল ছিল না ও-উজল আঁখির তীরে | সে দিনো চলিতে ছলনা বাজেনি ও চরণ-মঞ্জীরে | . আমি জানি তুমি কেন চাহনাক’ ফিরে ||
( ৩ ) . আমি জানি তুমি কেন কহনাক’ কথা ! সে দিনো তোমার বনেপথে যেতে পায়ে ঝড়াত না লতা ! . সে দিনো বেভুল তুলিয়াছ ফুল . ফুল বিঁধিতে গো বিঁধেনি আঙুল, মালার সাথে যে হৃদয়ও শুকায় জানিতে না সে বারতা জানিতে না, কাঁদে মুখর মুখের আড়ালে নিঃসঙ্গতা ! . আমি জানি তুমি কেন কহনাক’ কথা ||
( ৪ )
. আমি জানি তব কপটতা, চতুরালি, তুমি জানিতে না, ও কপোলে থাকে ডালিম-দানার লালী ! . জানিতে না ভীরু রমণীর মন . মধুকর-ভারে লতার মতন কেঁপে মরে কথা কন্ঠ জড়ায়ে নিষেধ করে গো খালি | আঁখি যত চায় তত লজ্জায় লজ্জা পাড়ে গো গালি ! . আমি জানি তব কপটতা, চতুরালি ||
( ৫ )
. আমি জানি, ভীরু ! কিসের এ বিস্ময় ! জানিতে না কভু নিজেরে হেরিয়া নিজেরি করে যে ভয় ! . পরুষ পুরুষ-----শুনেছিলে নাম ; . দেখেছ পাথর, করনি প্রণাম, প্রণাম ক’রেছ লুব্ধ দু’-কর চেয়েছে চরণ-ছোঁয় | জানিতে না, হিয়া পাথর পরশি’ পরশ-পাথরও হয় ! . আমি জানি, ভীরু, কিসের এ বিস্ময় ||
( ৬ )
. কিসের তোমার শঙ্কা এ, আমি জানি | পরাণের ক্ষুধা দেহের দু’--তীরে করিতেছে কানাকানি | . বিকচ বুকের বকুল-গন্ধ . পাপ্ ড়ি রাখিতে পারে না বন্ধ যত আপনারে লুকাইতে চাও তত হয় জানাজানি ! অপাঙ্গে আজ ভিড় করেছে গো লুকানো যতেক বাণী | . কিসের তোমার শঙ্কা এ, আমি জানি ||
( ৭)
. আমি জানি, কেন বলিতে পার না খুলি’ | গোপনে তোমায় আবেদন তার জানায়েছে বুলবুলি ! . যে-কথা শুনিতে মনে ছিল সাধ, . কেমনে সে পেল তারি সংবাদ ? সেই কথা বধূঁ তেমনি করিয়া বলিল নয়ন তুলি’ ! কে জানিত এত যাদু-মাখা তার ও কঠিন অঙ্গুলি ! . আমি জানি কেন বলিতে পার না খুলি’ ||
( ৮ )
. আমি জানি তুমি কেন যে নিরাভরণা, যাহার পরশে হয়েছে তোমার সকল অঙ্গ সোনা ! . মাটির দেবীরে পরায় ভূষণ . সোনার সোনায় কিবা প্রয়োজন ? দেহ-কূল ছাড়ি নেমেছে মনের অকূল নিরঞ্জনা | বেদনা আজিকে রূপের তোমার করিতেছে বন্দনা ! . আমি জানি তুমি কেন যে নিরাভরণা ||
(৯) . আমি জানি, ওরা বুঝিতে পারে না তোরে ! নিশীথে ঘুমালে কুমারী বালিকা, বধূ জাগিয়াছে ভোরে ! . ওরা সাঁতারিয়া ফিরিতেছে ফেনা, . শুক্তি যে ডোবে ---বুঝিতে পারে না ! মুক্তা ফলেছে ----আঁখির ঝিনুক ডুবেছে আঁখির লোরে ! বোঝা কত ভার হ’লে ----হৃদয়ের ভরাডুবি হয়, ওরে, . অভাগিনী-নারী, বুঝাবি কেমন ক’রে !
নাই বা পেলাম আমার গলায় তোমার গলার হার, তোমার আমি কর্ ব সৃজন ----এ মোর অহঙ্কার ! . এম্ নি-চোখের দৃষ্টি দিয়া . তোমায় যারা দেখ্ ল প্রিয়া, তাদের কাছে তুমি তুমিই ! আমার স্বপনে তুমি নিখিল-রূপের রাণী------মানস-আসনে !---
সবাই যখন তোমার ঘিরে কর্ বে কলরব, আমি দূরে ধেয়ান-লোকে র’চ্ ব তোমার স্তব | . রচ্ ব সুরধূনী-তীরে . আমার সুরের ঊর্বশীরে, নিখিল-কন্ঠে দুল্ বে তুমি গানের কন্ঠ-হার---- কবির প্রিয়া অশ্রুমতী গভীর বেদনার !
যেদিন আমি থাকব না ক’, থাক্ বে আমার গান, বল্ বে সবাই, “ কে সে কবির কাঁদিয়েছিল প্রাণ ?” . আকাশ-ভরা হাজার তারা . রইবে চেয়ে তন্দ্রাহারা, সখার সাথে জাগ্ বে রাতে, চাইবে আকাশে, আমার গানে পড়্ বে মনে আমার আভাসে !
বুকের তলা করবে ব্যথা, ব’লবে কাঁদিয়া, “বন্ধু ! সে কে তোমার গানের মানসী প্রিয়া ?” . হাস্ বে সবাই, গাইবে গীতি,---- . তুমি নয়ন-জলে তিতি’ নতুন ক’রে আমার গানে আমার কবিতায় গহীন নিরালাতে ব’সে খুঁজ্ বে আপনায় !
রাখ্ তে যেদিন নার্ বে ধরা তোমায় ধরিয়া, ওরা সবাই ভুল্ বে তোমায় দু’দিন স্মরিয়া, . আমার গানের অশ্রুজলে, . আমার বাণীর পদ্মদলে দল্ বে তুমি চিরন্তনী চির-নবীনা ! রইবে শুধু বাণী, সেদিন রইবে না বীণা !
তৃষ্ণা- “ফোরাত’--কূলে কবে “সাকিনা” –সমা, এক লহমার হ’লে বধূ, হায় মনোরমা | . মুহূর্তে সে কালের রেখা . আমার গানে রইল লেখা চিরকালের তরে প্রিয়া ! মোর সে শুভক্ষণ মরণ-পারে দিল আমায় অনন্ত জীবন !
নাই বা পেলাম কন্ঠে আমার তোমার কন্ঠহার, তোমায় আমি ক’রব সৃজন ---এ মোর অহঙ্কার ! . এই ত আমার চোখের জলে, . আমার গানে সুরের ছলে, কাব্যে আমার, আমার ভাষায়, আমার বেদনায়, নিত্যকালের প্রিয়া আমার ডাক্ ছে ইশারায় !-------
চাইনা তোমায় স্বর্গে নিতে, চাই এ ধূলাতে তোমর পায়ে স্বর্গ এনে ভুবন ভুলাতে ! . ঊর্ধ্বে তোমার -----তুমি দেবী, . কি হবে মোর সে রূপ সেবি’ ? চাই না দেবীর দয়া, যাচি প্রিয়ার আঁখিজল, একটু দুখে অভিমানে নয়ন টলমল !
যেমন ক’রে খেল্ তে তুমি কিশোর বয়সে---- মাটীর মেয়ের দিতে বিয়ে মনের হরষে, . বালু দিয়ে গড়্ তে গেহ, . জাগ্ ত বুকে মাটীর স্নেহ, ছিলনা ত স্বর্গ তখন সূর্য তারা চাঁদ, তেমনি ক’রে খেলবে আবার পাত্ বে মায়া-ফাঁদ !
আমার-রচা গানে তোমার সেই বেলা-শেষে এম্ নি সুরে চাইবে কেহ পর্ দেশী এসে ! . রঙিন সাঁঝে ঐ আঙিনায় . চাইবে যারা, তাদের চাওয়ায় আমার চাওয়া রইবে গোপন !---- এ মোর অভিমান যাচ্ বে যারা তোমায় ---রচি তাদের তরে গান !
নাই বা দিলে ধরা আমার ধরার আঙিনায়, তোমায় জিনে গেলাম সুরের স্বয়ম্বর-সভায় ! . তোমার রূপে আমার ভুবন . আলোয় আলোয় হ’ল মগন্ ! কাজ কি জেনে----কাহার আশায় গাঁথ্ ছ ফুল-হার, আমি তোমার গাঁথ্ ছি মালা----- এ মোর অহঙ্কার !