দুলিতেছে তরী ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ, ছিঁড়িয়াছে পাল কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ ? কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ | এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার ||
তিমির রাত্রি মাতৃমন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান ! যুগযুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান | ফেনাইয়া উঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান, ইহাদের পথে নিতে হবে সাথে দিতে হবে অধিকার ||
অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া জানে না সন্তরণ, কান্ডারী ! আজি দেখিব তোমার মাতৃমুক্তি-পণ ! “হিন্দু না ওরা মুসলিম ?” ওই জিজ্ঞাসে কোন্ জন ? কান্ডারী ! বল ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র !
গিরি-সঙ্কট, ভীরু যাত্রীরা, গুরু গরজায় বাজ, পশ্চাত-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ ! কান্ডারী ! তুমি ভুলিবে কি পথ ? ত্যজিবে কি পথ মাঝ ? করে হানাহানি, তবু চল টানি’ নিয়াছ যে মহাভার !
কান্ডারী ! তব সন্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর, বাঙালীর খুনে লাল হ’ল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর ! ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায় ভারতের দিবাকর ! উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পুনর্বার !
ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান আসি অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন বলিদান ? আজি পরীক্ষা জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রাণ ? দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কান্ডারী হুশিয়ার !
ঐ দারুণ উপপ্লবের দিনে . আমরা দানি শির, . মোদের মাঝে মুক্তি কাঁদে . বিংশ শতাব্দীর ! মোরা গৌরবেরি কান্না দিয়ে . ভ’রেছি মা’র শ্যাম-আঁচল | . আমরা ছাত্রদল ||
. আমরা রচি ভালোবাসার . আশার ভবিষ্যৎ, মোদের স্বর্গ-পথের অভাস দেখায় . আকাশ-ছায়াপথ ! . মোদের চোখে বিশ্ববাসীর . স্বপ্ন দেখা হোক সফল | . আমরা ছাত্রদল ||
সর্বসহা সর্বহারা জননী আমার ! তুমি কোনোদিন কারো করনি বিচার, কারেও দাওনি দোষ ! ব্যথা--বারিধির কূলে ব’সে কাঁদ মৌনা কন্যা ধরণীর একাকিনী ! যেন কোন্ পথ-ভু’লে আসা ভিন্-গা’র ভীরু মেয়ে ! কেবলি জিজ্ঞাসা করিতেছ আপনারে, ‘এ আমি কোথায় ?’--- দূর হ’তে তারকারা ডাকে, ‘আয় আয়’ ! তুমি যেন তাহাদের পলাতকা মেয়ে ভুলিয়া এসেছ হেথা ছায়া-পথ বেয়ে ! বিধি ও অবিধি মিলে মেরেছে তোমায় ---মা আমার---কত যেন ! চোখে মুখে হায় তবু যেন শুধু এক ব্যথিত জিজ্ঞাসা,---- ‘কেন মারে! এরা কা’রা ? কোথা হ’তে আসা এই দুঃখ ব্যথা শোক ?’----এরা তো তোমার নহে পরিচিত মাগো, কন্যা অলকার ! তাই সব স’য়ে যাও নির্বাক নিশ্চুপ, ধূপেরে পোড়ায় অগ্নি -----জানেনা তা ধূপ !-----
দূর-দূরান্ত হ’তে আসে ছেলে মেয়ে, ভু’লে যায় খেলা তারা তব মুখে চেয়ে ! বলে, ‘তুমি মা হবে আমার ?’ ভেবে কী যে ! তুমি বুকে চেপে ধর, চক্ষু, ওঠে ভিজে জননীর করুণায় ! মনে হয় যেন সকলের চেনা তুমি সকলেরে চেন ! তোমারি দেশের যেন ওরা ঘর-ছাড়া বেড়াতে এসেছে এই ধরণীর পাড়া প্রবাসী শিশুর দল ! যাবে ওরা চ’লে গলা ধ’রে দুটি কথা ‘মা আমার’ ব’লে !---
হয়ত ভুলেছ মাগো, কোনো একদিন এমনি চলিতে পথে মরু-বেদুইন- শিশু এক এসেছিল | শ্রান্ত কন্ঠে তার ব’লেছিল গলা ধ’রে ----‘মা হবে আমার?’ হয়ত আসিয়াছিল, যদি পড়ে মনে, অথবা সে আসে নাই----না এলে স্মরণে যে-দুরন্ত গেছে চ’লে আসিবেনা আর, হয়ত তোমার বুকে গোরস্থান তার জাগিতেছে আজো মৌন, অথবা সে নাই ! এমন ত কত পাই----- কত সে হারাই !---
. গাহি সাম্যের গান মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান্ ! নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি, সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি, ! . ‘পূজারী, দুয়ার খোলো, ক্ষুধার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে, পূজার সময় হ’ল |’ স্বপন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয়, দেবতার বরে আজ রাজা-টাজা হ’য়ে যাবে নিশ্চয় !---- জীর্ণ-বস্ত্র শীর্ণ-গাত্র, ক্ষুধায় কন্ঠ ক্ষীণ---- ডাকিল পান্থ, ‘দ্বার খোলো বাবা, খাইনিক’ সাত দিন !’ সহসা বন্ধ হ’ল মন্দির, ভুখারী ফিরিয়া চলে, তিমির রাত্রি , পথ জুড়ে তার ক্ষুধার মানিক জ্বলে ! . ভুখারী ফুকারী কয়, ‘ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয় !’ মস্ জিদে কাল শিরণী আছিল, ---- অঢেল গোস্ত রুটি, বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটি কুটি | এমন সময় এলো মুসাফির, গায়ে আজারির চিন্ বলে, ‘বাবা, আমি ভুখা ফাকা আছি আজ নিয়ে সাত দিন !’ তেরিয়া হইয়া হাঁকিল মোল্লা ---‘ভ্যালা হ’ল দেখি লেঠা, ভুখা আছ, মর গো-ভাগাড়ে গিয়ে ! নামাজ পড়িস্ বেটা ?’ ভুখারী কহিল, ‘না বাবা |’ মোল্লা হাঁকিল ‘তা হলে শালা, সোজা পথ দেখ !’ গোস্ত্-রুটি নিয়া মস্ জিদে দিল তালা ! . ভুখারী ফিরিয়া চলে, . চলিতে চলিতে বলে---- ‘আশীটা বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তোমায় কভু, আমার ক্ষুধার অন্ন তা’ বলে বন্ধ করনি প্রভু ! তব মস্ জিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী ! মোল্লা-পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবী !’ কোথা চেঙ্গিস্, গজনী মামুদ, কোথায় কালাপাহাড় ? ভেঙ্গে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা-দেওয়া দ্বার ! খোদার ঘরে কে কপাট লাগায়, কে দেয় সেখানে তালা, সব দ্বার এর খোলা রবে, চালা হাতুড়ি শাবল চালা ! . হায় রে ভজনালয়, তোমার মিনারে চড়িয়া ভন্ড গাহে স্বার্থের জয় !
. মানুষেরে ঘৃণা করি’ ও’ কারা কোরাণ, বেদ, বাইবেল, চুম্বিছে মরি মরি ! ও’ মুখ হইতে কেতাব গ্রন্থ নাও জোর ক’রে কেড়ে, যাহারা আনিল গ্রন্থ-কেতাব সেই মানুষেরে মেরে পূজিছে গ্রন্থ ভন্ডের দল ! ------মূর্খরা সব শোনো, মানু, এনেছে গ্রন্থ ; -------গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো !
আদম দাউদ ঈশা মুশা ইব্রাহিম মোহম্মদ কষ্ণ বুদ্ধ নানক কবীর,----বিশ্বের সম্পদ, আমাদেরি এঁরা পিতা-পিতামহ এই আমাদের মাঝে তাঁদেরি রক্ত কম-বেশী ক’রে প্রতি ধমনীতে রাজে ! আমরা তাঁদেরি সন্তান, জ্ঞাতি তাঁদেরি মতন দেহ, কে জানে কখন মোরাও অমনি হয়ে যেতে পারি কেহ ! হেসো না বন্ধু ! আমার আমি সে কত অতল অসীম, আমিই কি জানি, কে জানে, কে আছে আমাতে মহামহিম ! হয়ত আমাতে আসিছে কল্কি, তোমাতে মেহেদী ঈশা, কে জানে কাহার অন্ত ও আদি, কে পায় কাহার দিশা ? কাহারে করিছ ঘৃণা তুমি ভাই, কহারে মারিছ লাথি ? হয়ত উহারি বুকে ভগবান জাগিছেন দিবা-রাতি ! অথবা হয়ত কিছুই নহে সে, মহান্ উচ্চ নহে, আছে ক্লেদাক্ত ক্ষত-বিক্ষত পড়িয়া দুঃখ দহে, তবু জগতের যত পবিত্র গ্রন্থ ভজনালয় ঐ একখানি ক্ষুদ্র দেহের সম পবিত্র নয় ! হয়ত উহারি ঔরসে ভাই উহারই কুটীর-বাসে জন্মিছে কেহ---জোড়া নাই যার জগতের ইতিহাসে ! যে বাণী আজিও শোনেনি জগৎ, যে মহাশক্তিধরে আজিও বিশ্ব দেখেনি,---হয়তো আসিছে সে এরই ঘরে !
ও কে ? চন্ডাল ? চম্ কাও কেন ? নহে ও ঘৃণ্যজীব ! ওই হ’তে পারে হরিশ্চন্দ্র, ওই শ্মশানের শিব | আজ চন্ডাল, কাল হ’তে পারে মহাযোগী-সম্রাট, তুমি কাল তারে অর্ঘ্য দানিবে, করিবে নান্দী-পাঠ ! রাখাল বলিয়া কারে করো হেলা, ও হেলা কাহারে বাজে হয়ত গোপনে ব্রজের গোপাল এসেছে রাখাল সাজে ! . চাষা ব’লে করো ঘৃণা ! দে’খো চাষারূপে লুকায়ে জনক বলরাম এলো কিনা | যত নবী ছিল মেষের রাখাল, তারাও ধরিল হাল তারাই আনিল অমর বাণী----যা আছে, রবে চিরকাল | দ্বারে গালি খেয়ে ফিরে যায় নিতি ভিখারী ও ভিখারিণী, তারি মাঝে কবে এলো ভোলা-নাথ গিরিজায়া, তা কি চিনি ! তোমার ভোগের হ্রাস হয় পাছে ভিক্ষা-মুষ্টি দিলে, দ্বারী দিয়ে তাই মার দিয়ে তুমি দেবতারে খেদাইলে ? . সে মার রহিল জমা----- কে জানে তোমার লাঞ্ছিতা দেবী করিয়াছে কিনা ক্ষমা ! বন্ধু , তোমার বুক-ভরা লোভ, দু’-চোখে স্বার্থ-ঠুলি, নতুবা দেখিতে, তোমারে সেবিতে দেবতা হ’য়েছে কুলি | মানুষের বুকে যেটুকু দেবতা, বেদনা-মথিত সুধা, তাই লুটে তুমি খাবে পশু ? তুমি তা দিয়ে মেটাবে ক্ষুধা ? তোমার ক্ষুধার আহার তোমার মন্দোদরীই জানে তোমার মৃত্যু-বাণ আছে তব প্রাসাদের কোন খানে ! . তোমারি কামনা-রাণী, যুগে যুগে পশু, ফেলেছে তোমার মৃত্যু-বিবরে টানি |
. সাম্যের গান গাই------- আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই ! বিশ্বে যা-কিছু মহান্ সৃষ্টি চির-কল্যাণ-কর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর | বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ তাপ বেদনা অশ্রুবারি অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী ! নরককুন্ড বলিয়া কে তোমা, করে নারী হেয়-জ্ঞান ? তারে বল, আদি-পাপ নারী নহে, সে যে নর শয়তান | অথবা পাপ যে--- -শয়তান যে--- নর নহে নারী নহে, ক্লীব সে, তাই সে নর ও নারীতে সমান মিশিয়া রহে ! এ-বিশ্বে যত ফুটিয়াছে ফুল ফলিয়াছে যত ফল, নারী দিল তাহে রূপ- -রস- -গন্ধ-- সুনির্মল | তাজমহলের পাথর দেখেছ, দেখিয়াছ তার প্রাণ ? অন্তরে তার মোম্ তাজ নারী, বাহিরেতে শা-জাহান ! জ্ঞানের লক্ষ্ণী, গানের লক্ষ্ণী, শস্য-লক্ষ্ণী নারী, সুষমা-লক্ষ্ণী নারীই ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারি | পুরুষ এনেছে দিবসের জ্বালা তপ্ত রৌদ্রদাহ, কামিনী এনেছে যামিনী-শান্তি, সমীরণ, বারিবাহ ! দিবসে দিয়াছে শক্তি-সাহস, নিশীথে হয়েছে বধূ, পুরুষ এসেছে মরুতৃষা ল’য়ে ----নারী যোগায়েছে মধু ! শস্যক্ষেত্র উর্বর হ’ল পুরুষ চালাল হাল ; নারী সেই মাঠে শস্য রোপিয়া করিল সুশ্যামল | নর বাহে হল, নারী বহে জল, সেই জল-মাটি মিশে ফসল হইয়া ফলিয়া উঠিল সোনালী ধানের শীষে |
. স্বর্ণ-রৌপ্যভার নারীর অঙ্গ-পরশ লভিয়া হ’য়েছে অলঙ্কার ! নারীর বিরহে, নারীর মিলনে, নর পেল কবি-প্রাণ, যত কথা তার, হইল কবিতা, শব্দ হইল গান | নর দিল ক্ষুধা, নারী দিল সুধা, সুধায় ক্ষুধায় মিলে জন্ম লভিছে মহামানবের মহাশিশু তিলে তিলে ! জগতের যত বড় বড় জয়, বড় বড় অভিযান, মাতা ভগ্নী ও বধূদের ত্যাগে হইয়াছে মহীয়ান্ | কোন্ রণে কত খুন দিল নর লেখা আছে ইতিহাসে, কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর লেখা নাই তার পাশে ! কত মাতা দিল হৃদয় উপাড়ি’, কত বোন দিল সেবা, বীরের স্মৃতি-স্তম্ভের গায়ে লিখিয়া রেখেছে কেবা ? কোনো কালে একা হয় নি ক’ জয়ী পুরুষের তরবারী প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়-লক্ষ্ণী নারী ! রাজা করিয়াছে রাজ্য-শাসন, রাজারে শাসিল রাণী, রাণীর দরদে ধুইয়া গিয়াছে রাজ্যের যত গ্লানি ! . পুরুষ হৃদয়-হীন, মানুষ করিতে নারী দিল তারে আধেক হৃদয় ঋণ | ধরায় যাঁদের যশ ধরে না ক’ অমর মহামানব, বরষে বরষে যাঁদের স্মরণে করি মোরা উত্সব, খেয়ালের বশে তাঁদের জন্ম দিয়াছে বিলাসী পিতা------ লব কুশে বনে ত্যজিয়াছে রাম, পালন করেছে সীতা ! নারী সে শিখাল শিশু-পুরুষের স্নেহ প্রেম দয়া মায়া, দীপ্ত নয়নে পরাল কাজল বেদনার ঘন ছায়া | অদ্ভুত রূপে পরুষ পুরুষ করিল সে ঋণ শোধ, বুকে ক’রে তারে চুমিল যে, তারে করিল সে অবরোধ ! . তিনি নর-অবতার---- পিতার আদেশে জননীরে যিনি কাটেন হানি’ কুঠার ! পার্শ্ব ফিরিয়া শুয়েছেন আজ অর্ধনারীশ্বর, নারী চাপা ছিল এতদিন, আজ চাপা পড়িয়াছে নর ! . সে যুগ হ’য়েছে বাসি, যে যুগে পুরুষ দাস ছিল না ক’, নারীরা আছিল দাসী ! বেদনার যুগ, মানুষের যুগ, সাম্যের যুগ আজি, কেহ রহিবে না বন্দী কাহারও উঠিছে ডঙ্কা বাজি, নর যদি রাখে নারীরে বন্দী, তবে এর পর যুগে আপনারি রচা ঐ কারাগারে পুরুষ মরিবে ভুগে !
. যুগের ধর্ম এই----- পীড়ন করিলে সে পীড়ন এসে পীড়া দেবে তোমাকেই !
. শোনো মর্তের জীব, অন্যেরে যত করিবে পীড়ন, নিজে হবে তত ক্লীব ! স্বর্ণ-রৌপ্য অলঙ্কারের যক্ষপুরীতে নারী, করিল তোমায় বন্দিনী, বলো কোন্ সে অত্যাচারী ? আপনারে আজ প্রকাশের তব নাই সেই ব্যাকুলতা, আজ তুমি ভীরু আড়ালে থাকিয়া নেপথ্যে কও কথা ! চোখে চোখে আজি চাহিতে পার না ; হাতে রুলি, পায়ে মল, মাথার ঘোম্ টা ছিঁড়ে ফেল নারী, ভেঙে ফেল ও শিকল ! যে ঘোম্ টা তোমা’ করিয়াছে ভীরু ওড়াও সে আবরণ ! দুর ক’রে দাও দাসীর চিহ্ন আছে যত আভরণ ! . ধরার দুলালী মেয়ে, ফির’না ত আর গিরিদরীবনে শাখী-সনে গান গেয়ে ! কখন্ আসিল ‘প্লুটো’ যমরাজা নিশীথ পাখায় উ’ড়ে, ধরিয়া তোমার পূরিল তাহার আঁধার বিবর-পুরে ! সেই সে আদিম বন্ধন তব, সেই হ’তে আছ মরি’ মরণের পুরে ; নামিল ধরায় সেইদিন বিভাবরী | ভেঙে যমপুরী নাগিনীর মত আয় মা পাতাল ফুঁড়ি ! আঁধারে তোমায় পথ দেখাবে মা তোমারি ভগ্ন চুড়ি ! পুরুষ যমের ক্ষুধার কুকুর মুক্ত ও-পদাঘাতে লুটায়ে পড়িবে ও চরণ-তলে দলিত যমের সাথে ! এতদিন শুধু বিলালে অমৃত, আজ প্রয়োজন যবে যে-হাতে পিয়ালে অমৃত, সে-হাতে কূট বিষ দিতে হবে ! . সে-দিন সুদূর নয়---- যে-দিন ধরণী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীরও জয় !
রবি শশী তারা প্রভাত সন্ধ্যা তোমার আদেশ কহে---- ‘এই দিবা রাতি আকাশ বাতাস নহে একা কারো নহে ! . এই ধরণীর যাহা সম্বল,------ . বাসে-ভরা ফুল, রসে-ভরা ফল, সু-স্নিগ্ধ মাটি, সুধা সম জল, পাখীর কন্ঠে গান,---- সকলের এতে সম অধিকার, এই তাঁর ফর্ মান্----- . ভগবান ! ভগবান !
শ্বেত, পীত, কালো করিয়া সৃজিলে মানবে, সে তব সাধ ! আমরা যে কালো, তুমি ভালো জান, নহে তাহা অপরাধ ! . তুমি বল নাই, শুধু শ্বেতদ্বীপে . জোগাইবে আলো রবি-শশী-দীপে, সাদা রবে সবাকার টুঁটি টিপে, এ নহে তব বিধান | সন্তান তব করিতেছে আজ তোমার অসন্মান ! . ভগবান ! ভগবান !
তব কনিষ্ঠা মেয়ে ধরণীরে দিলে দান ধূলা-মাটি, তাই দিয়ে তার ছেলেদের মুখে ধরে সে দুধের বাটি ! . ময়ুরের মত কলাপ মেলিয়া . তার আনন্দ বেড়ায় খেলিয়া ! সন্তান তার সুখী নয়, তারা লোভী, তারা শয়তান ! ঈর্ষায় মাতি, করে কাটাকাটি, রচে নিতি ব্যবধান ! . ভগবান ! ভগবান !
জনগণে যারা জোঁক-সম শোষে তারে মহাজন কয়, সন্তান-সম পালে যারা জমি তারা জমি-দার নয় | . মাটিতে যাদের ঠেকেনা চরণ, . মাটির মালিক তাঁহারাই হন ! যে যত ভন্ড ধড়িবাজ আজ সেই তত বলবান্ ! নিতি নব ছোরা গড়িয়া কশাই বলে জ্ঞান-বিজ্ঞান ! . ভগবান্ ! ভগবান্ !
অন্যায় রণে যারা যত দড় তারা তত বড় জাতি, সাত মহারথী শিশুরে বধিয়া ফুলায় বেহায়া ছাতি | . তোমার চক্র রুধিয়াছে আজ . বেনের রৌপ্য-চাকায়, কি লাজ ! এত অনাচার স’য়ে যাও তুমি, তুমি মহা মহীয়ান ! পীড়িত মানব পারেনাক’ আর, সবেনা এ অপমান ! . ভগবান ! ভগবান !
ঐ দিকে দিকে বেজেছে ডঙ্কা, শঙ্কা নাহিক’ আর ! ‘মরিয়া’র মুখে মারণের বাণী উঠিতেছে মার মার ! . রক্ত যা ছিল ক’রেছে শোষণ, . নীরক্ত দেহে হাড় দিয়ে রণ ! শত শতাব্দী ভাঙেনি যে হাড়, সেই হাড়ে ওঠে গান----- ‘জয় নিপীড়িত জনগণ জয় ! জয় নব উথ্বান ! . জয় জয় ভগবান !’ তোমার দেওয়া এ বিপুল পৃথ্বি সকলে করিব ভোগ, এই পৃথিবীর নাড়ী সাথে আছে সৃজন দিনের যোগ ! . তাজা ফুলে ফলে অঞ্জলি পু’রে . বেড়ায় ধরণী প্রতি ঘরে ঘু’রে, কে আছে এমন ডাকু যে হরিবে আমার গোলার ধান ? আমার ক্ষুধার অন্নে পেয়েছি আমার প্রাণের ঘ্রাণ------ . এত দিনে ভগবান !
বর্তমানের কবি আমি ভাই, ভবিষ্যতের নই ‘নবী’ ! কবি ও অকবি যাহা বল মোরে মুখ বুজে তাই সই সবি ! . কেহ বলে, ‘তুমি ভবিষ্যতে যে . ঠাঁই পাবে কবি ভবীর সাথে হে ! যেমন বেরোয় রবির হাতে সে চিরকেলে-বাণী কই কবি ?’ দুষিছে সবাই, আমি তবু গাই শুধু প্রভাতের ভৈরবী !
গুরু ক’ন, ‘তুই করেছিস শুরু তরোয়াল দিয়ে দাড়ি চাঁছা ! প্রতি শনিবারী চিঠিতে প্রেয়সী গালি দেন, ‘তুমি হাঁড়িচাঁচা !’ . আমি বলি, প্রিয়ে, হাটে ভাঙি হাঁড়ি ! . অম্ নি বন্ধ চিঠি তাড়াতাড়ি ! সব ছেড়ে দিয়ে করিলাম বিয়ে, হিন্দুরা ক’ন ‘আড়ি চাচা !’ যবন না আমি কাফের ভাবিয়া খুঁজি টিকি দাড়ি নাড়ি কাছা !
মৌ-লোভী যত মৌলবী আর ‘মোল্--লা’রা কন হাত নেড়ে, ‘দেব-দেবী নাম মুখে আনে, সবে দাও পাজিটার জা’ত মেরে ! . ফতোয়া দিলাম----কাফের কাজী ও, . যদিো শহীদ হইতে রাজী ও ! “আমপারা” পড়া হাম্ বড়া মোরা এখনো বেড়াই ভাত মেরে !’ হিন্দুরা ভাবে, ‘ফার্শী-শব্দে কবিতা লেখে, ও পা’ত নেড়ে!’
আন্ কেরা যত নন্ ভায়োলেন্ট নন্-কো’র দলও নন খুশী ! ‘ভায়োলেন্সের ভায়োলিন্’ নাকি আমি বিপ্লবী-মন তুষি ! . ‘এটা অহিংস’, বিপ্লবী ভাবে, . ‘নয় চর্ কার গান কেন গা’বে ?’ গোঁড়া-রাম ভাবে নাস্তিক আমি, পাতি-রাম ভাবে কন্ ফুসি ! স্বারাজীরা ভাবে নারাজী, নারাজীরা ভাবে তাহাদের অঙ্কুশি’ ! নর ভাবে, আমি বড় নারী-ঘেঁষা ! নারী ভাবে, নারী বিদ্বেষী ! ‘বিলেত ফেরনি ?’ প্রবাসী-বন্ধু ক’ন্, ‘এই তব বিদ্যে ছি !’ . ভক্তরা বলে ‘নবযুগ রবি’ ! . যুগের না হই, হুজুগের কবি বটি ত রে দাদা, আমি মনে ভাবি, আর ক’শে কশি হৃদ-পেশী ! দু’কানে চশ্ মা আঁটিয়া ঘুমানু, দিব্যি হ’তেছে নিদ্ বেশী !
কি যে লিখি ছাই মাথা ও মুন্ডু, আমিই কি বুঝি তার কিছু ? হাত উঁচু আর হ’ল না ত ভাই, তাই লিখি ক’রে ঘাড় নীচু ! . বন্ধু ! তোমরা দিলে না ক দাম, . রাজ-সরকার রেখেছেন মান ! যাহা কিছু লিখি অমূল্য ব’লে অ-মূল্যে নেন ! আর কিছু শুনেছ কি, হু হু, ফিরিছে রাজার প্রহরী সদাই কার পিছু ?
বন্ধু ! তুমি ত দেখেছ আমায় আমার মনের মন্দিরে, হাড় কালি হ’ল শাসাতে নারিনু তবু পোড়া মন বন্দীরে ! . যতবার বাঁধি ছেঁড়ে সে শিকল, . মেরে মেরে তাঁরে করিনু বিকল, তবু যদি কথা শোনে সে পাগল ! মানিল না রবি-গান্ধীরে ! হঠাৎ জাগিয়া বাঘ খুঁজে ফেরে নিশার আঁধারে বন চিরে !
আমি বলি, ওরে কথা শোন্ ক্ষ্যাপা, দিব্যি আছিস . খোশ্ হালে ? প্রায় ‘হাফ’ নেতা হ’য়ে উঠেছিস, এবার এ দাঁও ফস্ কালে . ‘ফুল’ নেতা আর হবিনে যে হায় !----- . বক্তৃতা দিয়া কাঁদিতে সভায় গুঁড়ায়ে লঙ্কা পকেটেতে বোকা এই বেলা ঢোকা ! সেই তালে নিস্ তোর ফুটো ঘরটাও ছেয়ে, নয় পস্তাবি শেষকালে !
বোঝে না ক’ যে সে চারণের বেশে ফেরে দেশে দেশে গান গেয়ে, গান শুনে সবে ভাবে, ভাবনা কি ? দিন যাবে এবে পান খেয়ে ! . রবে না ক’ ম্যালেরিয়া মহামারী, . স্বরাজ আসিছে চ’ড়ে জুড়ি-গাড়ী, চাঁদা চাই, তারা ক্ষুধার অন্ন এনে দেয়, কাঁদে ছেলে-মেয়ে ! মাতা কয়, ওরে চুপ্ হতভাগা, স্বরাজ আসে যে, দেখ্ চেয়ে !
বন্ধু গো, আর বলিতে পারিনা, বড় বিষ জ্বালা এই বুকে ! দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখে ! . রক্ত ঝরাতে পারি না ত একা . তাই লিখে যাই এ রক্ত লেখা, বড় কথা বড় ভাব আসে না ক’ মাথায়, বন্ধু বড় দুখে ! অমর কাব্য তোমরা লিখিও , বন্ধু যাহারা আছ সুখে !
পরোয়া করিনা, বাঁচি বা না-বাঁচি যুগের হুজুগ কেটে গেলে, মাথার ওপরে জ্বলিছেন রবি, রয়েছে সোনার শত ছেলে ! প্রার্থনা ক’রো-----যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটী মুখের গ্রাস, যেন লেখা হয় আমার রক্ত-লেখায় তাদের সর্বনাশ !
বন্ধু তব জীবনের কুমারী আশ্বীন পরিল বিধবা বেশ কবে কোন্ দিন, কোন্ দিন সেঁউতির মালা হ’তে তার ঝ’রে গেল বৃন্তগুলি রাঙা কামনার----- জানি নাই ; জানি নাই, তোমার জীবনে আসিছে বিচ্ছেদ-রাত্রি, অজানা গহনে এবে যাত্রা শুরু তব, হে পথ-উদাসী ! কোন্ বনান্তর হ’তে ঘর-ছাড়া বাঁশী ডাক দিল, তুমি জান ! মোরা শুধু জানি তব পায়ে কেঁদেছিলে সারা পথখানি ! সেধেছিল, এঁকেছিল ধূলি-তুলি দিয়া তোমার পদাঙ্ক-স্মৃতি !
. রহিয়া রহিয়া কত কথা মনে পড়ে ! আজ তুমি নাই, মোরা তব পায়ে-চলা-পথে শুধু তাই এসেছি খুঁজিতে সেই তপ্ত পদ-রেখা এইখানে আছে তব ইতিহাস লেখা !
জানি না ক’ আজ তুমি কোন্ লোকে রহি শুনিছ আমার গান হে কবি বিরহী ! কোথা কোন্ জিজ্ঞাসার অসীম সাহারা, প্রতীক্ষার চির-রাত্রি, চন্দ্র, সূর্য়, তারা, পারায়ে চলেছে একা অসীম বিরহে ? তব পথ-সাথী যারা---পিছু ডাকি’ কহে---- ‘ওগো বন্ধু শেফালির, শিশিরের প্রিয়, তব যাত্রা-পথে আজ নিও বন্ধু নিও আমাদের অশ্রু-আর্দ্র এ স্মরণখানি !’ শুনিতে পাও কি তুমি, এ-পারের বাণী ? কানাকানি হয় কথা এ-পারে ও-পারে ? এ কাহার শব্দ শুনি মনের বেতারে ? কত দূরে আছ তুমি কোথা কোন্ বেশে ? লোকান্তরে না সে এই হৃদয়েরি দেশে পারায়ে নয়ন-সীমা বাঁধিয়াছ বাসা ? হৃদয়ে বসিয়া শোন হৃদয়ের ভাষা ?---- হারায় নি এত সূর্য, এত চন্দ্র তারা, যেথা হোক আছ বন্ধু হওনিক হারা |-----
সেই পথ, সেই পথ-চলা গাঢ় স্মৃতি, সব আছে ! নাই শুধু সেই নিতি নিতি নব নব ভালোবাসা প্রতি দরশনে, আরো প্রিয় ক’রে পাওয়া চির-প্রিয়জনে----- আদি নাই, অন্ত নাই, ক্লান্তি তৃপ্তি নাই,---- যত পাই তত চাই ----আরো আরো চাই,---- সেই নেশা সেই মধু নাড়ী-ছেঁড়া টান, সেই কল্প লোকে নব নব অভিযান,---- সব নিয়ে গেছে বন্ধু ! সে কল-কল্লোল, সে হাসি-হিল্লোল নাই চিত-উতরোল আজ যেই প্রাণ-ঠাসা একমুঠো ঘরে শূন্যের শূ্ন্যতা রাজে, বুক নাহি ভরে ! হে নবীন, অফুরন্ত তব প্রাণ ধারা হয় ত এ মরু-পথে হয়নিক’ হারা, হয় ত আবার তুমি নব পরিচয়ে দেবে ধরা ; হবে ধন্য তার দান ল’য়ে কথা-সরস্বতী ! ল’য়ে ব্যথা নয়, কত বাণী এল, গেল কত হ’ল লয়, আবার আসিবে কত ! শুধু মনে হয় তোমারে আমরা চাই, রক্তমাংসময় ! আপনারে ক্ষয় করি’ যে অক্ষয় বাণী আনিলে আনন্দ-বীর, নিজে বীণাপাণি পাতি’ কর লবে তাহা ; তবু যেন হায়, হৃদয়ের কোথা কোন্ ব্যথা থেকে যায় ! কোথা যেন শূন্যতার নিঃশব্দ ক্রন্ধন গুমারি গুমারি ফেরে, হু-হু করে মন !------
বাণী তব---তব দান-----সে তো সকলের, ব্যথা সেথা নয় বন্ধু ! যে-ক্ষতি একের সেথায় সান্ত্বনা কোথা ? সেথা শান্তি নাই, মোরা হারায়েছি,----- বন্ধু, সখা, প্রিয়, ভাই ! কবির আনন্দ-লোকে নাই দুঃখ শোক, সে-লোকে বিহারে যারা তারা সুখী হোক ! তুমি শিল্পী তুমি কবি দেখিয়াছে তারা, তারা পান করে নাই তব প্রাণ-ধারা !
“পথিকে” দেখেছে তারা, দেখেনি “গোকুলে”, ডুবেনিক’----সুখী তারা, আজো তারা কূলে ! আজো মোরা প্রাণাচ্ছন্ন, আমরা জানি না গোকুল সে শিল্পী গল্পী কবি ছিল কি না ! আত্মীয়ে স্মরিয়া কাঁদি, কাঁদি প্রিয় তরে, গোকুলে পড়েছে মনে -----তাই অশ্রু ঝরে !
না ফুরাতে আশা ভাষা, না মিটিতে ক্ষুধা, না ফুরাতে ধরণীর মৃত-পাত্র-সুধা, না পুরিতে জীবনের সকল আস্বাদ---- মধ্যাহ্নে আসিল দূত ! যত তৃষ্ণা সাধ কাঁদিল আঁকড়ি’ ধরা, যেতে নাহি চায় ! ছেরে যেতে যেন সব স্নায়ু ছিঁড়ে যায় ! ধরার নাড়ীতে পড়ে টান ! তরু-লতা জল বায়ু মাটী সব কয় যেন কথা ! যেয়োনাক’ যেয়োনাক’ যেন সবে বলে----- তাই এত আকর্ষণ এই জলে স্থলে অনুভব ক’রেছিল প্রকৃতি-দুলাল ! ছেড়ে যেতে ছিঁড়ে গেল, বক্ষ লালে লাল হ’ল ছিন্ন প্রাণ ! বন্ধু, সেই রক্ত-ব্যথা র’য়ে গেল আমাদের বুকে চেপে-হেথা !
সুন্দরের তপস্যায় ধ্যানে আত্মহারা দারিদ্র্যের দর্প তেজ নিয়া এল যারা, যারা চির-সর্বহারা করি’ আত্মদান, যাহারা সৃজন করে, করে না নির্মাণ, সেই বাণীপুত্রদের আড়ম্বরহীন এ সহজ আয়োজন, এ-স্মরণ দিন স্বীকার করিও কবি, যেমন স্বীকার ক’রেছিলে তাহাদের জীবনে তোমার !
নহে এরা অভিনেতা, দেশ-নেতা নহে, এদের সৃজন-কুঞ্জ অভাবে, বিরহে ; ইহাদের বিত্ত নাই, পুঁজি চিত্তদল, নাই বড় আয়োজন, নাই কোলাহল ; আছে অশ্রু, আছে প্রীতি, আছে বক্ষ-ক্ষত, তাই নিয়ে সুখী হও বন্দু স্বর্গগত ! গড়ে যারা, যারা করে প্রাসাদ নির্মাণ শিরোপা তাদের তরে, তাদের সন্মান |
দু’দিনে ওদের গড়া প’ড়ে ভেঙে যায়, কিন্তু স্রষ্টা সম যারা গোপনে কোথায় সৃজন করিছে জাতি, সৃজিছে মানুষ---- অচেনা রহিল তারা ! কথার ফানুষ ফাঁপাইয়া যারা যত করে বাহাদুরী, তারা তত পাবে মালা যশের কস্তুরী ! আজটাই সত্য নয়, ক’টা দিন তাহা ? ইতিহাস আছে, আছে ভবিষ্যৎ, যাহা অনন্ত কালের তরে রচে সিংহাসন, সেখানে বসাবে তোমা বিশ্বজনগণ | আজ তাহা নয় বন্ধু, হবে সে তখন,----- পূজা নয়------আজ শুধু করিনু স্মরণ !