অন্যান্য কবিদের সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের কবিতা (সংগ্রহ)
|

ক্রোধাগ্নির তরঙ্গে
গোপাল ভরদ্বাজ
মনের গভীর গহনে
তিরতিরে ফল্গুর মত
নিত্য অবিরত
বয়ে যায় তীব্র যন্ত্রণার ঢেউ
যে যন্ত্রণা যিশুর ক্রুশবিদ্ধের মত
কিংবা লোলচর্ম দীর্ঘ অনশন ক্লিষ্ট বৃদ্ধের মত
দোলা দেয় দুঃসহ হৃদয় কোণে!
হঠাৎ একদিন ব্যতিক্রমী কেউ
আমাকে চিলের মত ছোঁ মেরে তুলে নিয়ে যায়
জানি না কোথায়?
সভয়ে দেখি যে সে আমাকে আছড়ে ফেলেছে এক নির্জন প্রান্তরে
সে কি প্রান্তর না শ্মশানভূমি?
সারি সারি পড়ে আছে অসংখ্য শব
জমাট রক্তে লাল প্রান্তর মৃত্তিকা
উঠে দেখি আমার সারা শরীরে সেই রক্তের প্রলেপ
কুঁই কুঁই কান্না যেন কোনো কুকুর শাবকের কানে আসে
দেখি অদূরেই সদ্য ধ্বংস প্রাপ্ত কুটিরের এক কোণে
অস্ফুটে ফুঁপিয়ে কাঁদছে কোন এক বিধ্বস্তা রমণী
তার দু জাঙ্গে পাশবিক পীড়ণের শুষ্ক রক্তের কলঙ্ক চিহ্ন
তার অস্ফুট ক্রন্দন বাতাসে মিশে ভেসে যাচ্ছে
অদূরে খাল পাড়ে, খালের জলে ভাসতে ভাসতে
মিলিয়ে যাচ্ছে নিঃশব্দে অলক্ষিতে
আমি রক্তমাখা শরীরে ঊর্দ্ধশ্বাসে ছুটতে থাকি
ছুটতে ছুটতে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ি অদূরেই
সেও এক শ্মশানক্ষেত্র, সেখানেও একই দৃশ্যের ছবি
রক্তাক্ত নির্জীব শরীরগুলে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে
মজা নদীর মত হাঁ করে আকাশে তাকিয়ে
সর্বাঙ্গ কাঁপিয়ে তখন আমি সক্রোধে চিত্কার করি
আমার তীব্র শিহরণ ধ্বনি
তীর বেগে ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে, ছড়িয়ে যায়
নন্দীগ্রাম থেকে সিঙ্গুর, সিঙ্গুর থেকে আমলাশোল
আমলাশোল থেকে পলাশী, পলাশী থেকে উত্তরবঙ্গের চা-বাগান ছাড়িয়ে
তা ছাড়িয়ে যায় দক্ষিণবাংলার গ্রামে গঞ্জে
এবং অবশ্যই সারা ভারত জুড়ে
সে স্পন্দনে কেঁপে ওঠে সমগ্র বিশ্বভূমি!
অলক্ষ্যে লুকিয়ে থাকা যত ঘাতক ও বিশ্বাসঘাতক
সভয়ে কেঁপে ওঠে সেই তরঙ্গের তীব্র আঘাতে
সে ক্রোধাগ্নিতে
অলক্ষ্যে দগ্ধ হতে থাকে যতেক কুরুকুল!
. ***************
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে
এই কবিতাটি 'কবিতা এক্ষণ' পত্রিকার জুন ২০০৭ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
নন্দীগ্রামের নান্দীপাঠ
মানস দাস
মানুষ নামের মানুষ খেকো
বলতে পারো জল্লাদ
ইচ্ছে মত মারবে মানুষ
এমনই তার আহ্লাদ
গরীব চাষি তার জমিতে
ফলিয়ে ফসল বাঁচছে
তাতেও পড়ছে বিষ-নজর
দুষ্ট গ্রহ নাচছে |
কেউ যাতে না গ্রাস কেড়ে নেয়
জমি না নেয় কেড়ে
কামড়ে মাটি করছে লড়াই
শত্রুতা যায় বেড়ে |
এমনি করে দিন কেটে যায় ;
সেদিন সকাল বেলায়---
গ্রামের নারী, শিশু, পুরুষ
ব্যস্ত ছিল পূজায় |
রক্ষাকর্তা ভীষণ রেগে
খালের ওপার থেকে
"পথ ছেড়ে দাও আমরা যাবো"
বললো ক'বার হেঁকে |
সরলো না কেউ শ্শু, নারী
পথ দিল না ছেড়ে,
ওদিকে সেই কষাইগুলোর
উঠছিলো রাগ বেড়ে |
কাঁদানে গ্যাস অল্প কিছু
সঙ্গে গুলির বৃষ্টি
জখম হলো, মরলো কতো
দারুণ অনাসৃষ্টি |
অমানুষিক শিশু নিধন
কত যে লাশ গায়েব
এমন কাণ্ডে সম্ভবত
লজ্জা পেত সাহেব |
ইতিহাসে ঠাঁই পেয়েছে
এবার নন্দীগ্রাম
"জালিয়ানওয়ালা বাগ" যেন বা
পেয়েছে নতুন নাম |
. ***************
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে
এই কবিতাটি 'কবিতা এক্ষণ' পত্রিকার জুন ২০০৭ সংখ্যায় প্রকাশিত
হয়েছিল |
মিলনসাগর
বোধের পান্তাভাত
সুব্রত হালদার
ও আবু তাহের
লাঙল হাতে মাঠে ঘাটে চরা
চাষা-ভুষো মানুষ
বোঝেনা দেশ বিদেশের আঁকাবাঁকা রাজ কথা
বোঝে
মা-মাটি বৌ-ছেলে আর
এক থালা পান্তাভাত |
সাদাসিধে চাষি-বাসি আবু তাহের
বোঝে না রাজা সাহেবের রাজ ফরমান---
ছেড়ে দিতে হবে এতদিনের
বোধের পান্তাভাত আর লাঙল জোয়াল
বোঝে
মায়ের আব্রু বাঁচাতে লড়ে যেতে হবে
জন্ম থেকে জন্মান্তর --- নিরন্তর |
ও আবু তাহের
সাদাসিধে চাষাভুষো মানুষ---
তুমি রাজা নিও না কেড়ে ওদের
বোধের পান্তা ভাত আর লাঙল জোয়াল
ওরা বোঝে না তোমার বহুরূপী রাজ শোষণের নগ্নকথা
বোঝে
গেলে দিতে তোমার লাল ফৌজের রক্ত চোখ
অহরহ --- কাল থেকে কালান্তর |
তুমি রাজা রেখে দাও তোমার চুল্লিহীন শিল্পকথা
নিও না কেড়ে ওদের
বোধের পান্তাভাত আর লাঙল জোয়াল |
. ***************
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে
এই কবিতাটি 'কবিতা এক্ষণ' পত্রিকার জুন ২০০৭ সংখ্যায় প্রকাশিত
হয়েছিল |
মিলনসাগর
মাটির অধিকার
তুলসী বসাক
পঞ্চাশের বাঙলার কৃষক রমণী
আর মাঠে দোল খাওয়া সবুজ ধান গাছ
স্পর্ধায় মাথা তুলে বলেছিল
আর দেবো না আমার রক্তে বোনা ধান
নিতে পার আমাদের জান
দেবো না কোন মতে আমাদের মান
আমাদের জমি বাঙলা মায়ের সম্মান
লাঠি বন্দুক নিয়ে যত কর আস্ফালন |
সেদিনের কৃষক আর কৃষক রমণী
মাঠে মাঠে পুঁতেছিল লাল ঝাণ্ডা
আনন্দে উল্লাসে তারা সংগ্রামে নিয়েছিল শপথ
সবুজ ধানের ক্ষেতে হাওয়ায় দুলে দুলে
সেদিনের জমিদার আর কংগ্রেসী সরকার
আতঙ্কে পালাল সব দূর বহুদূর |
সত্তরে নব রাক্ষস রূপে জন্ম নেয় ইন্দিরার কোলে
সিদ্ধার্থ নামে এক শকুন
শয়ে শয়ে মা ভাই বোন মারে এনে ঘর থেকে টানি
অত্যাচারে, হত্যারা জিঘাংসায় উন্মত্ত পুলিশ বাহিনী ;
ঠেকাতে সে অত্যাচার ঘটে দিকে দিকে মানুষের উত্থান
জনতার হাতে হাতে ওড়ে লাল নিশান
প্রত্যাশায় মানুক বুক বাঁধে বাজায় বিষাণ
নতুন সুরে সুর বেঁধে গায় জনগণতন্ত্রের জয়গান |
হায় হতভাগিনী মা, মাটি, কৃষক, কৃষক রমণী
স্বাধীনতার আকাঙ্খা আবার হয়ে যায় ক্ষীণ
সেই সিদ্ধার্থ দুই যুগ ধরে সাধনার শেষে
বাঙালার ভাগ্যাকাশে দেখা দেয় খুনী বুদ্ধ বেশে |
কম্যুনিস্ট নামধারী ওদের পুলিশের গুলি ছোটে
গাঁয়ে-গাঁয়ে ভূমিহারাদের ক্রন্দনের রোল ওঠে
কেড়ে নিতে কৃষকের জমি চালায় লাঠি আর গুলি
ধর্ষণ শেষে তাপসীকে জ্বালিয়ে হাসে অট্টহাসি |
খুনী শাসকের পুলিশ আর তার মার্কসবাদী ক্যাডার
কেড়ে নেয় কৃষকের প্রাণ আর চাষের জমি মাটি
গুড়িয়ে দিয়ে যায় কৃষক রমণীর তুলসীর ভিটে
ফিনকি দিয়ে রক্ত ছোটে স্তব্ধ করে আজানের সুর,
নিরুপায় কৃষক রমণী প্রত্যাঘাত হানে কৃষকের সাথে
মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে তুলে নেয় লাঠি-ঝাঁটা-বটি
বলে খুনী শাসক তুমি কত নেবে শিশু কিশোরের প্রাণ
বিক্রী করতে সালেম, টাটাকে বাঙলা মায়ের সম্মান |
শোন এবার হবে জমতা ক্রুদ্ধ
অস্ত্র হাতে হবে সে এক ভয়ানক যুদ্ধ
বাঙলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি
এবার শেষ হবে সব ঔদ্ধত্য
পুঁজিবাদের দালালদের করে দেবে স্তব্ধ |
. ***************
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে
এই কবিতাটি 'কবিতা এক্ষণ' পত্রিকার জুন ২০০৭ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
আমাদের অস্থির উপর......
প্রজিত জানা
আমাদের জমি নিচ্ছ নাও
জীবিকা নিচ্ছ তাও সই
আমাদের হাড় নিচ্ছ নাও
আমাদের ক্ষেত নিচ্ছ না
আমাদের শবের উপর
আমাদেক ক্ষেতের উপর
তীব্র বেগে প্রগতির রথ
ক্যাডার সেনানী দিয়ে মারো
আমার সামান্য অন্ন, ক্ষেত
কিছু নয় প্রগতির কাছে
সব মেনে নিচ্ছি তাই নাও
মুছে দাও সব ইতিহাস
স্বেচ্ছায় দিলাম আহুতি
মুছে দাও মানচিত্র থেকে
এভাবেই এগোবে সভ্যতা
আমরা নিশ্চিত আজ প্রভু
আমাদের ঘর নিচ্ছ নাও
আমাদের রক্ত নিচ্ছ নাও
আমাদের মাংস নিচ্ছ নাও
আমাদের নারী নিচ্ছ নাও
আমাদের অস্থির উপর
আমাদের শিশুর উপর
ছোটাও ছোটাও আরও জোরে
যদি কেউ গতি রোধ করে....
আমার সামান্য যত প্রাণ
কিছু নয় আমার সন্তান....
আমাদের অস্থি মজ্জা সব
বাংলার সকল গ্রামের....
তেভাগার আমরা সন্তান
আমাদের সব পরিণাম....
এভাবেই এগোবে সমাজ
তোমরাই সর্ব শক্তিমান....
রাজা, তাকে প্রশ্ন করতে নেই তাপস রায়
সাধারণ শব্দ নিয়ে অলৌকিক খোঁজ করি, স্বল্পবাক খোঁজ করি স্ফূর্ত অক্ষরে রক্তেয় প্রেক্ষাপট একটি বার্তা থেকে, অজ্ঞতা হোক, যদি আসে তীব্র ঝাপট
ওই দিকে তাকিয়েছি, এই দিকে, চারিদিকে দেখার ভিতরে কোনো পুনর্জাত সাহস আসে নি আসলে নির্বাচন, নির্বাচিত করি, আলো নয়, আলোর সঙ্গিনী
প্রতিদিনই আত্মহত্যা, প্রতিদিনই আত্মাকে নষ্ট করে কত বিভ্রমের সমকক্ষ সত্য স্মরণ একটি অনুকূল অন্ধকারে ফলে অন্যান্যের মতো প্রগলভ যাপিত মরণ গৃহস্থের সাজানো শ্মশানে ঝিকিয়ে উঠেছে কিছু অন্ধ নির্বাচন
. ***************
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত . সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত . সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে
এই কবিতাটি দুর্গাদাস মিদ্যা সম্পাদিত 'আরাত্রিক' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
|
জীবন্ত শব
সঞ্জয় মুখার্জী
হেঁটে চলেছি মৃত্যু শবের মধ্য দিয়ে
আমি এক জীবন্ত শব ;
বধির মুখ, পাথর চোখ গুলির অব্যক্ত বেদনার ভাষায়
কিছু বলতে চাইছে আমাকে
তোমরা কি সুসভ্য জগতের অতি উত্তম জীব হও?
দানবীয়তার চোখে, মনুষ্যত্বের বিবেক তোমাদের
কাছে লুণ্ঠিত কি হয় না -
তোমার হাত ধরে, টেনে খুলে নিয়েছো
নারীর ইজ্জত, শালীনতার গুপ্ত অবক্ষয়?
রক্তের টানে, কেউ জ্যাঠা, কাকা, মামা, দাদা ডাকে
তাই অঙ্গের বসনে লেগে থাকে রক্তের ছোপ
ধুলেও হাতে লেগে থাকে রক্তের দাগ,
তোমাদের ঐ হাতে ---
বারুদের গন্ধ এফোঁড় ও ফোঁড় করে
চলে যায় পিছনের দিক থেকে ছুটে আসা কার্তুজে
বুকের কলিজাকে খুবলে তুলে নেয়
তোমরাই নাকি জনপ্রতিনিধি?
দুর্ভাগা কাঙাল কাঁদে, হারাবার যা ছিল
জ্বলে গেছে বারুদে ---
জনবহুল গ্রাম আতঙ্কে কাঁদে
শ্মশানের নিস্তব নিরবতায়
হেঁটে চলেছি আমি, জীবন্ত শব হয়ে,
তাদের বেদনার ভাষা, পৌঁছে দেবার আপ্রাণ চেষ্টা
আমাকে বলে ছিল, বাড়ির লোককে খবর দিও
আমি এখানে আছি, লাশকাটা ঘরের পাশে
পাথর চোখে দৃষ্টি দিয়ে ---
আমি হার মেনেছি, জীবন্ত শব হয়ে |
. ***************
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে
এই কবিতাটি অরুণ ভট্টাচার্য সম্পাদিত 'আকিঞ্চন' পত্রিকার ২৫শে বৈশাখ ১৪১৪ সংখ্যায়
প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
কৃষক ছেড়ে সিঙ্গুর
বনে যা হবি লেঙ্গুর
তুলসী বসাক
কৃষক ছেড়ে যা এবার সিঙ্গুর
চলে যা তোরা সেই বনেতে
যেখানে বাস করে সব
বাঘ-ভালুক আর লেঙ্গুর ;
মারের চোটে তোর পিঠে করব ঘা
সিঙ্গুর ছেড়ে বনে গিয়ে তোরা
মাটি কামড়ে ধরে
গপাগপ গাছের পাতা খা |
সিঙ্গুরে হবে টাটার মটর গাড়ি
এক লাখি ক্যাডাররা চড়বে তাতে
দিলাম ছাই তোর বাড়া ভাতে
খিদের জ্বালায় জ্বলুক তোর নাড়ি ;
পড়তে হবে না তোর ছেলেকে স্কুলে
মূর্খ হয়ে থাক না চির দিন
পথে পথে ভিক্ষা করে
কাটুক না ওদের কিছু দিন ;
চিলড্রেন্স ডে-তে তোমাদের শিশু
সবাই হেসে হেসে নাচবে গাইবে
আনন্দেতে ওরা ফুল ফোটাবে
আর তোদের ছেলে হবে ভিক্ষুক যিশু ;
সিঙ্গুর কৃষকদের দেশ নয় আর
চাষের জমি তোদের ঘরের উঠান
নয় যে আর তোদের প্রাণের ধন
এখন সব জমি হয়ে গেছে টাটার ;
লাখ টাকাতে টাটা বানাবে মটর গাড়ি
তোরা জমি বেচার লাখ টাকাতে
কৃষক তোরা জনে জনে কিনবি গাড়ি
তারপর গাড়ি চড়ে ভিক্ষা করবি ক্যাডারের বাড়ি |
. ***************
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে
এই কবিতাটি অরুণ ভট্টাচার্য সম্পাদিত 'আকিঞ্চন' পত্রিকার ২৫শে বৈশাখ ১৪১৪ সংখ্যায়
প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
কারা!
অরুণ শংকর দাশ
"যে মানুষ এত ফুল ভালোবাসে
তাকেওরা এত দুঃখ দিল" ......
কারা?
ওই সব গ্রামের চাষাভূষা মস্তানের দল |
যারা সব সারারাত গ্রামের শান্তি নষ্ট করে
আপততঃ মুণ্ডহীন ধড় হয়ে ভাসছে নদীর জলে
কারা?
ওই সব নির্লজ্জ মেয়েরা হাসপাতালে বিছানায় শুয়ে
কেবল করে মিথ্যা অভিযোগ
যৌনাঙ্গ দেখিয়ে করে অশ্লীল ইঙ্গিত |
কারা?
ওই সব অভব্য ছেলেরা
ইস্কুলে যাবার নাম করে কোথায় হারিয়ে যায় নিজের খেয়ালে
যাদের রক্তমাখা জামা প্যান্টপড়ে আছে রাস্তার দুধারে |
কাক এসে রক্তের গন্ধ শুঁকে ওড়াওড়ি করে ||
কারা????
ওই যারা অবিরাম কেঁদে চলে
নিহত ছেলের কথা ভেবে
স্বামীর বীভত্স মৃত্যু দেখে
পুড়ে যাওয়া বসত বাড়ীর শোকে ---
ব্যাটন আর বুটের চিহ্ন নিয়ে সমস্ত শরীরে |
তবু ভাল ......
বাংলা ও বিহার থেকে জড়ো হওয়া
কিছু কিছু সমব্যাথী লোক
মাঝে মাঝে খেজুরির দিক থেকে
ইটভাটার নিরাপদ আশ্রয় থেকে
বোমা আর গুলির আওয়াজে
শান্তির বার্তা কিছু পৌঁছে দেয়
নিদ্রাহীন বুকের বালিশের পাশে |
. ***************
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে
এই কবিতাটি 'কবিতা এক্ষণ' পত্রিকার জুন ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
সাত কাহন
গোপেন গুপ্ত
১
হলদিয়াধিপতি
অল্পেতে খুশী হবে
লক্ষণ শেঠ কি
হলদিয়া সাথে চাই
নন্দীগ্রামটি ;
ক্যাডার যদি থাকে
থাকে প্রশাসন
তবে তিনি মহাবীর
শাসনে ভীষণ |
২
কৃষক নেতা
বিনয় ভারি দুর্বিনীত
কথায় কথায় খিস্তি
আগ্ লাগাতে নেই যে জুড়ি
জলদি বোলাও ভিস্তি |
কৃষক নেতা কৃষক মারার
করল ষড়যন্ত্র ---
নন্দীগ্রামই জানে শুধু
জব্দ করার মন্ত্র |
৩
উত্তরসূরি
বোঁচা নাকে চশমা আঁটি
ধুতির কোঁচা দুলিয়ে
চেয়ারম্যান বলল হাঁকি,
"ঔর কেয়া বাত বোলিয়ে?"
পত্রকারে প্রশ্ন করে
আর কত দেখি রঙ্গ!
প্রশ্ন শুনি মুচকি হাসি,
"দেখবে এবার বঙ্গ .......
অনিলবাবুর যোগ্য যদি
উত্তরসূরি হই
বঙ্গের সব মহাশ্মশানে
চিতায় তুলবই"|
৪
ধরা-ধড়িবাজ
বোলপুরের মহান নেতা
চ্যাটার্জী সোমনাথ
রবি কবির স্বপ্নগুলি
করেন ধূলিসাৎ |
লোকসভাতে সবার চেয়ে
দামী চেয়ার ধরি
রাষ্ট্রপতির পদে তিনি
করেন উমেদারী |
. ***************
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে
এই কবিতাটি 'কবিতা এক্ষণ' পত্রিকার জুন ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
ভাগাড়েই নাচে
আসাদ আলী
দুই চোখ কেন এত চঞ্চল এতটা উদাস মাখা
দিগন্তে কি খুঁজছে ফিরে নীল আকাশের মায়া
নিদাঘ দুপুর করে ঘুরঘুর মনে
মন একা একা ফিস ফিস করে কথা বলে কার সনে
কেন এই মনে এতটা হেঁয়ালী থাকে
কেন এই মন হাজার খেয়ালে ডাকে
কেন এই মন স্মৃতিটাই হাতড়ায়
কেন এই মন জাবর কাটতে চায়
তোমাকেই মন কব্জা করতে চাই
কেন মন তোমার এত বেশি রোশনাই
লাখো মনে লাখো তালা ও চাবি
দেবোই দেবো এই আমাদের দাবী
তাহলেই সব কম্মো কাবার হবে
তাহলেই সব সহজে সাবাড় হবে
প্রথমেই মারো কবি ও কবিয়াল
আমরাই হব কামট ও খড়িয়াল
কারণ ওরাই স্বপ্ন দেখাতে চায়
সাবাড় মানুষের স্বপ্নটাও তো কাবার
ভাববেই না যুদ্ধে কখনও নাবার
ভুল বন্ধু আগাগোড়া সব ভুল
ভাবনাই সার এগোলে না একচুল
ভাল করে দেখ ইতিহাস যা আছে
তোমার চিন্তা ভাগাড়েই শুধু নাচে |
. ***************
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে
এই কবিতাটি 'কবিতা এক্ষণ' পত্রিকার জুন ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
আগুন জ্বলবে বলে
হীরক বিশ্বাস
আগুন জ্বলবে বলে
তাই এতো স্ফুলিঙ্গ
মাঠে-ময়দানে-রাজপথে
দাবানল হলকায় পোড়াচ্ছে চেতনা |
আগুন জ্বলবে বলে
আলপথে সারি বাঁধে কৃষক রমণী
বিভীষিকা ছুঁয়েছে ওদের শরীরে
তাই দৃপ্ত হৃদয়ে ডমরুর বাজনা বাজে |
আগুন জ্বলবে বলে
দম্ভের বলয়ে প্রলাপের সংলাপ
ছিন্ন-ভিন্ন সব কল্পিত ভয়
বড় "দুঃসময়" নাট্যকারের এ সংহার নাটকে |
আগুন জ্বলবে বলে
অবিশ্বাস্য সব প্রতিবাদী মুখ
অসহ্য দহনে জ্বলতে জ্বলতে
হাঁটে স্বতস্ফূর্ত মিছিলের বিদ্রোহ যাত্রায় |
আগুন জ্বলবে বলে
কেয়ারী করা ওদের মরুদ্যানে
পোড়ে সিঙ্গুরের তাপসী
ধর্ষিতা শবদেহ চিরনিদ্রায় নন্দীগ্রামে |
আগুন জ্বলবে বলে
বুদ্ধিজীবী ভেঙেছে বুদ্ধ-অর্গল
মহাশ্বেতা থেকে শাঁওলি-সুমন-বিভাস
আরও কত চেনা-অচেনা মুখ |
আগুন জ্বলবে বলেই তো
নারীঘাতী শিশুঘাতী কুৎসিত বীভত্সায়
আজ রবি ঠাকুর বারবার
হানা দেয় এই ক্রোধী চেতনায় |
আগুন জ্বলবেই ইতিহাস পথে
জাগছে মানুষ দ্বন্দ্বমুখর দ্বান্দ্বিক নিয়মে |
. ***************
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে
এই কবিতাটি 'কবিতা এক্ষণ' পত্রিকার জুন ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর
অপস্মারের বিপ্লব
হীরক বিশ্বাস
তুমি আছ আমি আছি
আজ্ঞে হুজুর করতল পেতে
বড় নিশ্চিন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে
পাহারায় আছে সতর্ক লাল লণ্ঠন
তাই ওদের ভাবনার বসন্ত বিশ্বাস নিয়ে হাঁটি
ছড়ানো বিশ্বায়নের মদির বিজ্ঞাপনী আয়োজনে |
হঠাৎ অনাকাঙ্খিত ভাবনায় আসে
অন্তর্লীন হাহাকার নিয় অনিকেত
মানুষের মিছিলের ঊষর-ধূসর স্তব্ধতার ছবি,
তখন কি তিমির অবসাদে বাড়ে না নিরন্ন দিনের বিস্তার!
কার প্রয়োজনে কাদের ইশারায়
সিঙ্গুর থেকে নন্দীগ্রামে হয় রক্তাক্ত চণ্ডালনৃত্য?
মার্কস শর্তে কোথায় সেই শ্রেণীদ্বন্দ্বের আভাস?
জীবনে জীবন নেই, শুধু প্রগলভ গরিমার ব্যভিচার,
নান্দনিক গর্বের নন্দন অভিসারের সদর্প বিজয়বার্তা নিয়ে
বৌদ্ধিক ভাবনায় এ এক অপস্মারের বিপ্লব |
নিরাপত্তা এখন কাঁটাতারের সেজ-বলয়ে
নিরাপত্তা এখন চাঁদমণি-সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-কলিঙ্গনগরে
নিরাপত্তা এখানে ওখানে উদীয়মান অপস্মারের মুক্তাঞ্চলে
সন্ত্রস্ত কৃষকেরা দাঁড়িয়ে জীবন-মৃত্যুর দোলাচলে |
বলো কবি তুমি কি থাকবে নিরাকার হয়ে?
. ***************
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের অন্যান্য কবিদের সূচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায় ফেরত
. সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান এখানে ক্লিক করে
এই কবিতাটি 'কবিতা এক্ষণ' পত্রিকার জুন ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল |
মিলনসাগর