বদলির চাকরি ছিল, তাই বহু জায়গায় বহু স্কুলে পড়েছেন | ১৯৭৩ এ অনুশ্রী যাদবপুর গার্লস হাইস্কুল থেকে
হায়ার সেকেণ্ডারি পাশ করেন | যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৯ এ ইতিহাস নিয়ে এম.এ. তে উত্তীর্ণ হন |
বর্তমানে একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কে কর্মরতা |

বিপুল চক্রবর্তী -র জন্ম ২৫ শে মার্চ ১৯৫৫ সালে , দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়ায় |  পিতা রমানাথ
চক্রবর্তী এবং মাতা ঊমারানী চক্রবর্তী |  পিতা ছিলেন স্কুলের হেডমাস্টার | বদলির চাকুরি | তাই কবির
শৈশব-কৈশোর কেটেছে কখনও বাঁকুড়ায়, কখনও উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সে | ১৯৭৪ সালে তিনি  কবি হিসেবে
আত্মপ্রকাশ করেন তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ --“শত্রু যখন সমস্ত দিক ঘিরে” দিয়ে | বর্তমানে কবি  
SAIL এর
অধীনে,
Bokaro  Steel Plant -এর কলকাতার অফিস-এ কর্মরত |  

গানের প্রতি আকর্ষণ কৈশোর থেকেই | বাঁকুড়ায় যখন বাবা একটি স্কুলের হেড মাস্টার ছিলেন তখন সেই
স্কুলে পেয়েছিলেন এক বিস্ময়কর মানুষ --- চৌকিদার রামযতন সিং কে | রামযতন, কি দিন কি রাত্রি,
সর্বক্ষণ গাইতেন শ্রীরামজীর ভজন | একা মানুষ তিনি, রান্না করতেন গান গাইতে গাইতে | রাতে চৌকিদারী
টহল দিতে দিতেও গান গাইতেন |  গান যেন ছিল তার কাছে কখনও “ছায়াময় আশ্রয় কখনও শীত
তাড়ানোর আগুন” | এই রামরতনই প্রথম মানুষ যিনি বিপুলকে গানের প্রতি ঝুঁকতে শিখিয়েছিলেন | তিনি
বলেন যে গানের প্রতি প্রেম তাঁর মধ্যে রামরতনই সৃষ্টি করেছিলেন |

এরপর যখন উত্তরবঙ্গে থেকেছেন, একদিকে নাগেশ্বরী পাহাড়, সামসিং, তার মধ্যে সাইকেল রিকশার পেছনে
মাইকে নতুন সিনেমার বিজ্ঞপনের সাথে সাথে “নিঝুম সন্ধ্যায়” এর মত গান শুনেছেন- যেন সেই প্রকৃতির
সঙ্গেই মিশে যাওয়া গান | এখানে তিনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানের প্রতি আকর্ষিত হন | পাশাপাশি
পেয়েছিলেন অজশ্র নেপালী গান, উত্তরবঙ্গের রাজবংশীদের গান, ভাওয়াইয়া গান, সাদ্রী গান |

বার্ণপুরে থাকাকালীন, তিনি ক্রীশ্চান মিশনারীদের কাছে চার্চের গানের সংস্পর্ষে আসেন | একটি সাইকেল
নিয়ে সেই চার্চে চলে যেতেন | প্রথমে বাইরে দাঁরিয়ে দাঁড়িয়েই শুনতেন | পরে তাঁরাই তাঁর আগ্রহ দেখে তাকে
ভেতরে ডেকে নিতেন |

প্রথাগত সংগীত শিক্ষা না থাকলেও, সংগীত সম্বন্ধে একটি ধারনা করবার জন্য, কিছুকাল উত্পলা গোস্বামীর
কাছে তালিম নিয়েছিলেন | বিনয় চক্রবর্তী, অনুশ্রী চক্রবর্তী, জলি বাগচী, সুরেশ বিস্বাস প্রভৃতি সঙ্গীতজ্ঞ
গুণিজনদের সংস্পর্ষে এসে সঙ্গীত সম্বন্ধে সম্যক ধারণা তৈরী করেছেন | জলি বাগচী এবং তাঁর মাধ্যমে
নিত্যপ্রিয় ঘোষ দোস্তিদারের কাছেও সঙ্গীতের নানা টিপস নিয়েছেন কিছুকাল |

তিনি বলেন যে তিনি কোন “ঘরানা”-র মানুষ নন, হেমাঙ্গ বিশ্বাসের ভাষায় “বাহিরানা”-র মানুষ!

এর পর এল সত্তরের দশক | পশ্চিমবঙ্গ যেন এক অগ্নিকুণ্ড | কমিউনিস্ট পার্টি দু-ভাগ হয়ে গেছে | বাঙালীর
যেন নতুন করে আরও একবার বিভাজন হয়ে গেল!  এবার ধর্মীয় বিভাজন নয়, রাজনৈতিক! একদল
নিজেদের বললেন সিপিএম আর অন্য দল বললেন নকশাল! পার্টির বিভাজন অচীরেই নেমে এল পাড়ায়
পাড়ায় | এ পাড়া সিপিএম তো ওপাড়া নকশাল ! পুরোপুরি! খানিকটা এখনকার মতই, রাজনৈতিক জমি-
দখলের লড়াই! তখনকার কলকাতায় মুহুর্মুহু শোনা যেত বোমা-পাইপগানের আওয়াজ আর পুলিশের গাড়ী
পাড়ায় ঢোকার সাথে সাথে শাঁখের সংকেত-বার্তা! লাশও পড়তো টুপটাপ! সন্ধ্যের আগেই যে যার বাড়ীতে
ঢুকে পড়তো | বিপুল চক্রবর্তীর সেই সময়কার ফটো বড়ই কম দেখে জানতে চেয়েছিলাম, কেন | বললেন যে
ওই সময়টাই এমন ছিল যে কাছের বন্ধুবান্ধবদের দেহ উদ্ধার হচ্ছে খাল-বিল-নর্দমা থেকে! কবিতা লিখতে
লিখতেও সজাগ থাকতে হোত, কোনো গুলি ছুটে আসে কি না! হঠাৎ কখন বেয়োনেটের ডগা বুকে বিঁধে যায়
কি না |  ভাবেনই নি যে তিনি এত দিন বাঁচবেন!  তাই ফটো-তটো রেখে দেবার কথাও ভাবেন নি!  
আমাদেরই দুর্ভাগ্য |

বিপুল চক্রবর্তী
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, হেমাঙ্গ বিশ্বাস, সলিল চৌধুরীর মতো মানুষদের স্নেহধন্য হয়েছেন |
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতায় তিনি সুর দিয়ে গেয়েছেন। হেমাঙ্গ বিশ্বাস তো চীন থেকে আনা গ্রীন টি
নিজের হাতে করে বিপুলকে পরম স্নেহে খাইয়েছেন | তাঁদের সাথে তোলা ছবি থেকে ওই কারণেই আমরা
বঞ্ছিত হলাম |

.                একটি আবেদন - আপনাদের কাছে অনুশ্রী-বিপুলের সঙ্গে কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়,
.                সলীল চৌধুরী, হেমাঙ্গ বিশ্বাস বা অন্য কোনো মূল্যবান ছবি থাকে বা আপনার কাছে
.                যদি অনুশ্রী বিপুলের "ঝিম ঝিম নিশা লাগে" ক্যাসেটটির ভাল কপি থাকে বা যদি
.                আপনার কাছে তাঁদের কোনো অনুষ্ঠানের অডিও বা ভিডিও রেকর্ডিং থাকে, তাহলে
.                তা যদি আমাদের পাঠান, আমরা তা কৃতজ্ঞচিত্তে এখানে তুলে দেবো এবং তার সাথে
.                প্ররকের নামও উল্লেখ করবো |  

অনুশ্রীর প্রথাগত সঙ্গীত জীবনের শুরুটা হয় ১৯৭৯ এ কলকাতার বিখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
“দক্ষিণী” থেকে কৃতিত্বপত্র অর্জন করা দিয়ে | তার আগেই ১৯৭৮ সালে পরিচয় হয় নবীন কবি বিপুল
চক্রবর্তীর সাথে | ১৯৭৮ সালে বন্দীমুক্তি আন্দোলনের সময়ে একটি গানের দল তৈরী হয়েছিল, যাঁরা বামপন্থী
চিন্তাধারার কয়েকটি গান দিয়ে তাঁদের যাত্রা শুরু করেন |  বিপুল চক্রবর্তী ও অনুশ্রী সেই দলের প্রাণশক্তি
হয়ে উঠেছিলেন সেই সময়ে | দলটি ক্রমে “গণবিষাণ” নামে খ্যাতি লাভ করে |

কবি এটাও বুঝেছিলেন যে , কবিতা  কখনই একমুখী হতে পারে না |  জীবনের নানা রঙকে নিয়ে কবিতাকে
হতে হবে বহুমুখী | কবিতা থাকবে জীবনের প্রতি ক্ষণে , প্রতি  পলে, মানুষের জন্যে |  তাই গড়েছিলেন,
যাদবপুরের কিছু ছেলে মেয়ে মিলে, আরেকটি নাচ-গানের দল “মনন”। সে দলেরও তাঁরাই প্রাণশক্তি ছিলেন।
এখানে তাঁরা গাইতেন সেই ... জীবনের অন্য রঙকে ফুটিতে তোলার উদ্দেশ্যে |

১৯৮১ সালে তাঁদের বিয়ে হয় এবং তাঁরা দুজন নিজেদের গান স্বতন্ত্রভাবে জুটি হিসেবে গাইতে থাকেন |  
ক্রমে অনুশ্রী-বিপুল জুটি চিন্তাশীল বাঙালীর প্রিয় গায়ক-গায়িকাদের প্রথম সারিতে স্থান করে নেন | অনুশ্রীর
উদাত্ত কণ্ঠ এবং বিপুলের সুর ও গায়কি তাঁদের এক বিকল্প-ধারার সঙ্গীতের জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে আসে |

তাঁদের যৌবনের শুরুতেই তাঁরা যে সব গান লিখেছেন এবং গেয়েছেন, তা সেই সময়েই, বামপন্থী
মনোভাবাপন্ন মানুষের প্রায় মজ্জাগত হয়ে গিয়েছিল | এতকাল গণসঙ্গীত ছিল--
হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গান, সলীল
চৌধুরীর গান! এখন তার সঙ্গে জুড়ে গেল অনুশ্রী-বিপুলের গান !

আমাদের সঙ্গে একটি সাক্ষাত্কারের মধ্যে স্মৃতিচারণে সময় গণসঙ্গীত এবং তাঁর গান সম্বন্ধে তাঁর ভাবনা
চিন্তা ব্যক্ত করেছেন স্পষ্ট ভাবে | বলেছেন . . .

“...গণসঙ্গীতের যে ধারাটা ছিল, তার সঙ্গে আমরা যুক্ত ছিলাম | আমরা বন্ধু ছিলাম | বলা যেতে পারে যে ওই প্রতিবাদী সত্তাটাও যে
আমরা পেয়েছিলাম, গণসঙ্গীতের মধ্য থেকেই | গণসঙ্গীতে তো অসম্ভব ভালো কিছু গান ছিল | সলিল চৌধুরীর গান,  হেমাঙ্গ
বিশ্বাসের গান, ভুপেন হাজারিকার গান, জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র . . . এরকম বহু গান | এবং তার যে সততা ও সত্তার জোর, তা তো
আমাদের আকর্ষণ করেছিলই | কিন্তু কোথাও যেন একটা . . . একটু অসুবিধে বোধ, আমার অন্তত ছিল | এক তো মনে হোত যে গান
কেন শুধু এরকম হবে ? মানে বাকি কথাগুলো বলবে কে ? জীবনের যে বাকি দিক -- এটা একটা ভাবনা ছিল | আবার প্রতিবাদের
জায়গাটাও, যদি জোর করে করা হয়, তখন সেটা একটু ক্লীশে
(cliche) হয় | বানানো মনে হয় | পার্টির হুকুমে গান হলে যা হয় | গান
তো তা নয় | গান স্ফূর্ত হবে, উঠে আসবে এবং সেটা উঠে আসবে বিভিন্ন আন্দোলনের মধ্যে, ব্যথার মধ্যে | সেটা যদি পরিপূরকের
ভূমিকা নেয় . . . | আমি যদি সৎ ভাবে বা ঠিক ভাবে দেখি --- ধরুন আপনি কমিউনিস্ট পার্টির | সে একটা জেহাদ রেখেছে | সে
একটা আন্দোলনের জায়গা রেখেছে ... জীবনে আন্দোলন যেভাবে রূপ পাচ্ছে |  তার মধ্য থেকে কোনো শিল্পী গান গড়ে তুলছেন |
আপনার জেহাদের সাথে এটা যদি পরিপূরকের ভূমিকা নেয়, তাহলেই তা একটা সম্পূর্ণতার দিকে যায় | মানে আপনার কথার টোটো
হবে না | হয়তো একটা মাটির কথা এমন ভাবে বলছে, যেটা আপনি বলছেন ---  বাঃ! এটাকে তো সেলাম দেওয়া যায়! আবার এই
গায়কও বা এই শিল্পীও আপনার যে লিডারশিপ,  গোটা  আন্দোলনটাকে এগিয়ে নেবার জন্য, সেটাকেও কোথায় একটা কুর্নিশ
জানাচ্ছে | এই মিলিতভাবে যখন এটা হয়, তখন একটা সুন্দর রূপ হলো | কিন্তু অমুক-বাবা-তমুক... ধর্মীয় ইয়েতেও (প্রতিষ্ঠানেও)
যেমন হয়, সেইভাবে যদি এই কমিউনিস্ট পার্টি বা বিভিন্ন পার্টির নেতা-নেতৃত্বরা বলে দিল,  এইটেকেই আমি গান বানালাম . . . এই
সরকার . . . সংগ্রামের হাতিয়ার . . . ঐ ঐ ঐ তো সই সই সই, তবে তো গান হয় না | এইগুলো আরও অসহ্য হতে লাগলো . . .” |

আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন যে বাণিজ্যিক বা মেইনস্ট্রীম গানের পাশাপাশি এক বিকল্প গানের ধারা গড়ে তুলতে |
যদিও তাঁর আক্ষেপ --- তা সফল হয় নি | এই বিকল্প গানের সম্বন্ধে তিনি বলেন. . .

“….সে জন্য আমরা ভেবেছিলাম যে... মানে আমি বিনয়দাদের (বিনয় চক্রবর্তী) সাথেও কথা বলি, বা অন্যান্য পত্রিকার লোকদের
সঙ্গেও, যাঁরা সাহিত্যের সঙ্গে যুক্ত, আমি যেহেতু কবিতার সঙ্গে যুক্ত, বিভিন্ন কবি জনদের সাথেও কথা বলি যে ---  কমার্শিয়াল
সিনেমার অপোজিটে আর্ট ফিল্ম থাকে | আবার কমার্শিয়াল থিয়েটারের অপোজিটে গ্রুপ থিয়েটার থাকে | কমার্শিয়াল ম্যাগাজিনের
পাশাপাশি বা প্যারাল্যালি লিটল ম্যাগাজিন চলে | তার হয়তো ভালো মন্দ অনেক কিছুই,  সবটার মধ্যেই আছে |  কিন্তু একটা যে
ভিন্ন ধারা, ভিন্ন স্রোত বইছে, এটা গানে কেন থাকবে না ? যদি কেউ কিছু নতুন কিছু রাখতে চায়, সে স্কোপ কেন তার থাকবে না ?
তথাকথিত যে আধুনিক বাংলা গান চলছে, তাকে তো ধাক্কা দেওয়াই যাবে না, যদি আমি ভিন্ন স্রোত রচনা না করি |

তখন আমরা... এই ভাবনা থেকে ৯১এর বইমেলাতে, আমাদের ক্যাসেট (আমরা হাঁটি যেখানে মাটি) বের হয় | বইমেলার স্টলে বিক্রী
হয় | অনুষ্টুপের স্টলে বা আরো অন্যান্য ছোট ছোট লিটল ম্যাগাজিনের স্টলে | বইমেলা গীল্ডের সঙ্গে আমি কথা বলি কেননা তার
কিছুদিন আগেই সলিল চৌধুরী শ্রবণ-সাহিত্য বলে আলাদা করে বলেছিলেন গানের স্টল দিতে হবে | শ্রবণ সাহিত্যের স্টল | সলিল
চৌধুরী নিজেই একটা কোম্পানি তৈরী করেছিলেন | নামটা আমার মনে পড়ছে না | দেখে বলে দিতে পারি | অন্তরা, সবিতা চৌধুরী,
সলিল চৌধুরী এবং সঞ্চারি, চারজনের ভয়েস নিয়ে বেরিয়েছিল --- “একটু চুপ করে শোনো” ক্যাসেটটার নাম ছিল | তার পরেও বোধ
হয় একটা বেরিয়েছিল |... তো, ওরা একদম বইমেলাতেই এগুলো হাজির করেছিলেন | বইমেলায় আমাদের ক্যাসেটটা (আমরা হাঁটি
যেখানে মাটি)  বেরিয়ে হুড়হুড় করে বিক্রী হোল | মানে আমরা তো ভাবিই নি | আমাদের চারপাশের মানুষজন এভাবে চাইছেন, এটা
আমরা ভাবতেই পারি নি | আমরা গুটি কয়েক ছেপে নিয়ে গিয়েছিলাম, খুব যত্ন করে | মানে প্রত্যেকটা. . . . চেক করে | রাতের পর
রাত জেগেছিলাম | স্কুল অফ পিপলস আর্ট থেকেই বেরিয়েছিল | বিনয় চক্রবর্তী, রত্না মিত্র এরা ছিলেন | . . .

...রত্না মিত্র কবিতা আবৃত্তির মানুষ | এত ভাল কবিতা পাঠ আর কারুরই মনে হয় না | আমার লাগে না আরকি | এত ভাল কবিতা
বোঝেন এবং ওদের যে প্রথম কাজ, স্কুল অফ পিপলস আর্ট বলে একটা অরগানাইজেশন  করেছিলেন, তাতে বিনয় চক্রবর্তী,
পরিতোষ আচার্য, রত্না মিত্র, মধু মুখার্জী ... মিউজিক ডাইরেকটার | এখন যে মধুদার খুব নাম আরেঞ্জার হিসেবে | নচিকেতার সব
পপুলার ক্যাসেট মধুর আরেঞ্জমেন্ট | আমাদেরও(অনুশ্রী-বিপুল) প্রথম  (আমরা হাঁটি যেথানে মাটি) এবং তৃতীয়টা  (জীবনের গানে
তুই ফিরে আয়) মধুর আরেঞ্জমেন্ট | মধু প্রথমে “আগুনের ফুল” মানে বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার গান, ওটা মধু মুখার্জী, বিনয়
চক্রবর্তী সব মিলিতভাবে করেন | সেটা একটি অনবদ্য কাজ | . . .

তারপর আমাদের “আমরা হাঁটি যেখানে মাটি”. . . ৯১-এ এটা বেরোয় এবং এটা হৈ হৈ করে বিক্রী হয় বইমেলা তে | পরের
বইমেলাতে বহুজন এসে আমাকে বলেছেন যে আপনাদের ক্যাসেট আর কোথাও পাব না, এই বইমেলা ছাড়া ? আমি আপনার
ক্যাসেটের জেরক্স মেশিন হয়ে গেছি | আপনার ক্যাসেট কপি করছি আর বিলোচ্ছি | অমি বললাম বেশ করছেন, করুন তাই | . . .

আমরা চেষ্টা করেছিলাম যে চাঁদনি নয়, আমরা নতুন মার্কেট তৈরী করবো বইমেলাগুলোতেই | বিভিন্ন স্টলে সাহিত্য কর্মিদের সঙ্গে,
মিলিতভাবে, ওই শ্রবণ-সাহিত্য নিয়ে এরকম করবো | কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো যে অনিক-এর সম্পাদকের সঙ্গে আমি কথা
বলেছিলাম | অনিক-এর সম্পাদক দিপঙ্কর চক্রবর্তীকে আমি... মানে আমার মনে আছে যে বইমেলাতে  ব্যাগ ভর্তি করে আমি সমস্ত
ক্যাসেট ওনাকে দিয়েছিলাম | আমার নয় শুধু | অন্যান্য বহু, যার কখনও গণসঙ্গীতের নামে আছে, কখনও তাও নেই, কিন্তু ভিন্ন
ধারার বাংলা গান যে একটা, গড়ে ওঠার বাসনা রাখছে, বিভিন্ন গানের মধ্য দিয়ে যে তার এক্সপ্রেশন তৈরী হচ্ছে, সেইটে ওনাকে
বোঝাতে চেয়েছিলাম | যে এটা নিয়ে আপনারা একটু কাজ করুন, একটু লিখুন | নাহলে কিন্তু আনন্দবাজার লিখবে | আপনারা
আমাদের গাল দেবেন | তাই হোলো | ওরা কিন্তু লিখলেন না | আনন্দবাজারই ফলাও করে সমস্তটা লিখলেন | এবং পরবর্তিতে
আপনারা জানেনই যে আমরা ওই বিকল্প ধারা গড়ে তোলা, সেটা পারলাম না | গোটাটাই চাঁদনিতে আবার চলে গেল |
সুমন
চট্টোপাধ্যায়ের ক্যাসেট, পরবর্তিতে নচিকেতার ক্যাসেট, অঞ্জন দত্ত... এই যে ভাবে গল্পটা গড়ালো | এবং তার সঙ্গে আনন্দবাজারের
লেখালিখি. . . সমস্তটাই |

আমি ঠিক এভাবে ভাবিনি | আমি একটা ভিন্ন ধারা গড়ে তোলার কথা ভেবেছিলাম |  এবং  ভেবেছিলাম যে আমরা বন্ধুরা সবাই
মিলে সেটা করতে পারবো | সেইটে হয় নি | গোটাটাই চাঁদনি চকের চাঁদ! . . . .”

কবি বিপুল চক্রবর্তী শুধু সিস্টেমের বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ করন নি | প্রতিবাদ করেছেন আন্দোলকারিদের
বিরুদ্ধেও | স্বদেশী ভাবনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক, পিতা রমানাথ চক্রবর্তীর শিক্ষা দিক্ষায় বেড়ে উঠেছিলেন কবি
বিপুল চক্রবর্তী | তাই, বামপন্থী আন্দোলনকারীদের দ্বারা রাষ্ট্রীয় পতাকা পোড়ানো বা বিদ্যাসাগরের মতো
মনীষীদের মূর্তি ভাঙার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেও ছাড়েন নি |

কবি বিপুল চক্রবর্তী এই দীর্ঘ সময়প্রবাহ জুড়ে কবিতা লেখার পাশাপাশি সেই কবিতাকে ভেঙ্গে-চুরে তার
নির্মেদ শরীর সুরের লাবণ্যে মুড়ে যে গান তৈরি করেছেন সে গান নিয়ে কবি ও অনুশ্রী গত পঁচিশ বছরের
বেশি সময় ধরে এই মহানগর (কলকাতা) থেকে বাংলার প্রত্যন্ত প্রান্তে পথ হেঁটেছেন |
কবি বীরেন্দ্র
চট্টোপাধ্যায়,  আল মাহ্ মুদ ,  অমিতাভ গুপ্ত ,  জয় গোস্বামী,  নির্মল হালদার, রঞ্জিত গুপ্ত, পার্থ
বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বম্ভর নারায়ন দেব, প্রভৃতি কবিদের অনেক কবিতায় সুর করেছেন |  এছাড়া কানোরিয়া
জুট মিলের শ্রমিক সংগ্রামের সময়ে তিনি গিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং তাঁদের গান শুনিয়ে এসেছেন |

আজও আমরা বহু গায়ক-গায়িকাদের দেখি এঁদের গান গাইতে, প্রচণ্ড আবেগের সঙ্গে | এঁদের গান ছড়িয়েছে
মুখে মুখে | আজ এঁদের গান এতটাই জনপ্রিয় হয়ে আছে যে অনেকেই অনুশ্রী-বিপুলের গান গাইলেও, জানেন
না যে গানটি কবি বিপুলের লেখা অনুশ্রী-বিপুলের গান | ভাবেন হয়তো তা
সলিল চৌধুরী কিম্বা হেমাঙ্গ
বিশ্বাসের গান! যেন, অনুশ্রী-বিপুল তো আমাদের সময়েরই মানুষ! তাঁরা কি আর এমন গান বাঁধতে পারেন!

তাঁরা গান গেয়েছেন শারিরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের সাহায্যার্থে, ক্যানসারের রোগীদের সাহায্যার্থে,
গঙ্গা-ভাঙন পীড়িতদের সাহায্যার্থে | গান গেয়েছেন আয়লা-ঝড় দুর্গতদের সাহায্যার্থে | তাঁরা শুধু প্রতিবাদের
মধ্যেই তাঁদের গানকে সীমাবদ্ধ রাখেননি | তাঁদের ডাক পড়েছে সর্বভারতীয় স্তরে | গেয়েছেন ভারতীয় ভাষা
পরিষদের আমন্ত্রণে সাহিত্য পুরস্কার অনুষ্ঠানে | গান গেয়েছেন পল্ রবসনের জন্ম শতবর্ষে | গান গেয়েছেন
শহীদ সূর্য সেনের স্মৃতিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে | গান গেয়েছেন যুক্তিবাদী আন্দোলনের মঞ্চে |

অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে আপোসহীন সংগ্রামের ফলে নৃসংশভাবে খুন হওয়া, জলপাইগুড়ি জেলার ছেলে,
ছত্তিসগড়ের শ্রমিক নেতা শঙ্কর গুহ নিয়োগীর আন্দোলনের পাশেও গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন অনুশ্রী-বিপুল | শঙ্কর
গুহ নিয়োগীর লেখা কবিতায় বিপুল সুর দিয়ে গানও গেছিলেন |   

তাঁরা এত অল্প বয়স থেকে বাঙালীকে এক অতি পরিশীলিত ও মার্জিত চিন্তাধারায় কবিতা ও গান শুনিয়ে
এসেছেন যে আজ তাঁদের সমবয়সী বাঙালীরাই তাঁদের গান শুনে ও গেয়ে যৌবন অতিক্রান্ত করে প্রৌড়ত্বে পা
দিয়েছেন | যাঁদের গান আজ এমন ভাবে ছড়িয়ে গেছে বাঙালীর মননে ও সংস্কৃতিতে, শহরে, গ্রামে, জংগলে
ও পাহাড়ে, যাঁরা এখনও এই বর্তমান কালের সক্রিয় কবি-গায়ক-সুরকারদের অন্যতম, তাঁদের কি আমরা  
লিভিং লিজেণ্ড
(LIVING LEGEND) ছাড়া অন্য কিছু বলতে পারি ?

অনুশ্রী-বিপুলের এই পাতা অসমাপ্ত!  কারণ আমরা আরো অনেক তথ্য,  গান ও ভিডিও পাবার আশা
রাখছি | আপনাদের কাছ থেকেও | এমন অনেক গান আছে যা বিপুল-অনুশ্রী, কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা
সংঘটনের অনুরোধে বা আমন্ত্রণে রচনা করেছেন বা বিভিন্ন আন্দোলনের প্রয়োজনে গান বেঁধে গেয়েছেন,
কিন্ত  তা আজও রেকর্ড হয়ে জনসমক্ষে আসে নি | আমরা আশা করছি সেরকম বহু গানও আমরা
আপনাদের সহযোগিতায় এখানে তুলতে পারবো |



অন্য সাইটে বা পাতায় কবির গান ও কবিতা পড়তে এখানে ক্লিক্ করুন --
- http://www.esnips.com/web/folkways4sStuff
- http://bipulchakraborty.blogspot.com   (কবির নিজের ব্লগ্)
-
https://www.milansagar.com/kobi/kobi-bipulchakrabarty.html (বিপুল চক্রবর্তীর কবিতার পাতা)
-
http://sculpturepage.blogspot.com/ (শিল্পী অলকানন্দা সেনগুপ্তর ভাস্কর্য প্রদর্শনীতে অনুশ্রী-বিপুল)
-
http://picasaweb.google.com/lh/photo/nU3qFV2SRRoxMV7FMuX8mw  (মণিপুরের, আইরম শর্মিলার
.                                              অনশনের ১০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানের মঞ্চে বিপুল চক্রবর্তী)     


কবির সঙ্গে যোগাযোগের ঠিকানা -
৩ এভিনিউ ইস্ট (ফার্স্ট স্রীট), মডার্ন পার্ক, সন্তোষপুর, কলকাতা ৭০০০৭৫
ই-মেল -   
anushree_bipul@rediffmail.com   
চলভাষ -  
+919831127563


=============================================================================
উত্স:  
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ এবং ১৫ নভেম্বর ২০১০  তারিখে নেওয়া  কবি বিপুল চক্রবর্তীর সাথে সাক্ষাত্কার |
মিলনসাগরের পক্ষে সাক্ষাত্কারটি নিয়েছিলেন মানস গুপ্ত এবং মিলন সেনগুপ্ত |
=========================================================================================
Click here to read this write up in English   
নুশ্রী-বিপুলের মূল পাতায় যেতে. . .  
অনুশ্রী চক্রবর্তী -র জন্ম ১৮ই জুন ১৯৫৭ | পিতা
অমূল্য কুমার দাস এবং মাতা আঙুরবালা দাস | পিতার
উপরে  
Click here to read this write up in English   
নুশ্রী-বিপুলের মূল পাতায় যেতে. . .     
কবি বিপুল চক্রবর্তীর কবিতার পাতায় যেতে. . .    



মিলনসাগর
...