কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক - জন্ম গ্রহন করেন অবিভক্ত বাংলার, বর্ধমান জেলার কোগ্রাম নামক গ্রামে,
তাঁর মামাবাড়িতে। পিতা পূর্ণচন্দ্র মল্লিক এবং মাতাসুরেশকুমারী দেবী। মল্লিক তাঁদের তাঁদের পরিবারের,
নবাবী পদবী। তাঁদের আসল পদবী সেনশর্মা বা সেনগুপ্ত। তাঁদের বাড়ি ছিল বর্ধমান জেলার বৈষ্ণবতীর্থ
শ্রীখণ্ড গ্রামে। কবিরা ছিলেন দুই ভাই ও চার বোন। কবিই জ্যেষ্ঠ। কবি, মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিবাহ সূত্রে
আবদ্ধ হন, শ্রীখণ্ডবাসী যুগলকিশোর রায়ের দ্বিতীয়া কন্যা সিন্ধুবালা দেবীর সঙ্গে সম্ভবত ১৮৯৯-১৯০০ সালে।
তাঁদের সাত পুত্র ও তিন কন্যা।
পিতা পূর্ণচন্দ্র, প্রথম জীবনে মেদিনীপুরে এক জমিদারের অধীনে কাজ করতেন। সেই জমিদারের অন্যায়
আচরণে প্রতিবাদ করে কর্মত্যাগ করে তিনি দীর্ঘ ৫০ বছর কাশ্মীরের মহারাজার মন্ত্রীর দপ্তরে
সুপারিন্টেন্ডেন্টের পদে চাকরি করেন। তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিত্সাতও সিদ্ধহস্ত ছিলেন। কবি কুমুদরঞ্জন
স্মৃতিচারণে লিখেছেন যে তাঁর পিতা একজন কবিও ছিলেন। তাঁর কবিতার পাণ্ডুলিপি বন্যায় নষ্ট হয়ে
গিয়েছে। কবি হরিনাথ মজুমদার ওরফে কাঙাল হরিনাথ ছিলেন তাঁর বন্ধু।
কলকাতায় ১০-১১ বছর বয়সে তিনি বর্ধমানের DN Das Century School এ ভর্তি হন। ১৯০৫ সালে তিনি
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত বঙ্গবাসী কলেজ থেকে স্নাতক হন এবং বঙ্কিম চন্দ্র স্বর্ণ পদকে ভূষিত
হন। ছাত্রাবস্থাতেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় কবি করুণানিধান
বন্দ্যোপাধ্যায়, সতীশচন্দ্র রায়, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত প্রমুখদের সঙ্গে। কবিশেখর কালিদাস রায় তাঁকে নিজের
দাদার মতো শ্রদ্ধা করতেন।
বি.এ. পাশের সঙ্গে সঙ্গেই, ১৯০৬ সালে কাশিমবাজারের মহারাজর মণীন্দ্রচন্দ্রের অনুরোধে, বর্ধমানের
কোগ্রামের অনতিদূরে, মাথ্রন বা মাথরুণ নবীনচন্দ্র ইনস্টিটিউশনে শিক্ষকতার কাজে যোগ দেন অস্থায়ী
দ্বিতীয় শিক্ষকের পদে এবং এক বছরের মধ্যে স্কুলের হেড মাস্টার হন। এই স্কুলেরই তাঁর এক ছাত্র বড়
হয়ে বিদ্রোহী কবি নজরুল নামে আত্মপ্রকাশ করে সারা বাংলার আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে দিয়ে যান !
তাঁর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে অজয় ও কুনুর নদী। এই গ্রাম ও নদীই তাঁর কবিতার মূখ্য প্রেরণা। তাঁর
কবিতায় বৈষ্ণবভাবনা, নিস্বর্গ প্রেম, পল্লিপ্রিয়তা প্রধান বৈশিষ্ট্য। তাঁর কবিতায় ধর্ম থাকলেও ধর্মীয়
সংকীর্ণতা নেই। তাঁর কবিতা সহজ আন্তরিকতা ও নিপূণ ভাষাকলার জন্য খ্যাত। সিউড়ীর স্বামী সত্যানন্দ
কবিকে “কবিসুন্দর” উপাধি প্রদান করেছিলেন।
তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, রবীন্দ্রনাথের “কণিকা” কাব্যগ্রন্থের অনুসারী কাব্যগ্রন্থ “শতদল”
(১৯০৬-০৭) এবং “বনতুলসী” (১৯১১)। রয়েছে “উজানী” (১৯১১), “একতারা” (১৯১৪), “বীথি” (১৯১৫), “চুন ও
কালি” (১৯১৬), “বনমল্লিকা” (১৯১৮), কাব্যনাট্য “দ্বারাবতী” (১৯১৯), “রজনীগন্ধা” (১৯১৯), “নূপুর” (১৯২০),
“অজয়” (১৯২৭), “তূণীর” (১৯২৮), “স্বর্ণ সন্ধ্যা” (১৯৪৮), অগ্রন্থিত কবিতা “গরলের নৈবেদ্য”, “শ্রেষ্ঠ কবিতা”
(১৯৫৭), “কাব্যসম্ভার” (১৯৬৭), “কুমুদ-কাব্যমঞ্জুষা” (১৯৮১) প্রভৃতি।
পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে, তাঁর কবিতা “আমার বাড়ি”-র প্রথম দুটি লাইন
বাঙালীর বহু প্রিয় ও বহু-ব্যবহৃত কবিতা ছত্রের অন্যতম . . .
. বাড়ি আমার ভাঙন ধরা অজয় নদীর বাঁকে,
. জল সেখানে সোহাগ-ভরে স্থলকে ঘিরে রাখে।
তিনি জগত্তারিণী স্বর্ণ পদক এবং স্বাধীনতার পর ভারত সরকার দ্বারা পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন।
আমরা মিলনসাগরে কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিকের কবিতা আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে এই
প্রচেষ্টার সার্থকতা।
.
উত্স: ডঃ শিশির কুমার দাশ, সংসদ সাহিত্য সঙ্গী ২০০৩।
. সুধেন্দু মল্লিক, “কুমুদরঞ্জনের জীবন ও কবিতা”, কাব্যগ্রন্থ “কুমুদ কাব্যমঞ্জুষা”, ১৯৮১।
কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিকের মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন।
আমাদের যোগাযোগের ঠিকানা :-
srimilansengupta@yahoo.co.in
এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ৭.১০.২০১০
মোট ২০টি কবিতার পরিবর্ধিত সংস্করণ - ৩১.৭.২০১৭
মোট ৬৬টি কবিতার পরিবর্ধিত সংস্করণ - ৬.৮.২০১৭
মোট ৮৮টি কবিতার পরিবর্ধিত সংস্করণ - ১৮.৮.২০১৭
.