দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে লিখি কথা | আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার স্বাধীনতা || |
ছড়া, সে যে কোন ধরণেরই হোক না কেন, এই দেয়ালে তুলতে হলে আমাদের কাছে নিচের ইমেলে পাঠাবেন। আমাদের ওয়েবসাইটের সম্পাদক মণ্ডলীর অনুমোদন সাপেক্ষে আমরা তা তুলে দেবো। আমাদের ই-মেল: srimilansengupta@yahoo.co.in তাহলে আর দেরী কেন? ছড়ার ছররা ছড়িয়ে, দেয়াল তুলুন ভরিয়ে...! . রাজেশ দত্ত কবিদের পাতায় যেতে তাঁদের নামের উপর ক্লিক করুন |
পণ করেছি পণ, নেব না পণ বৌ যদি হয় সুন্দরী | কিন্তু আমায় বলতে হবে স্বর্ণ দেবে কয় ভরি | স্যাকরা ডেকে দেখবো নিজে আসল কিংবা কম্ দরী | সোনায় হবে সোহাগা যে বৌ যদি হয় সুন্দরী | তোমরা সবে সুধাও তবে-- আমিই বা কোন কার্তিক ! প্রশ্ন শুনে কোথায় যাব বন্ধ দেখি চার দিক | মানতে হলো দরকারটা উভয়তই আর্থিক | স্বর্ণের নাম সুন্দরী, আর মাইনের নাম কার্তিক | |
|
আমরা যখন ছোট্ট ছিলাম -- বড্ড ভারী লক্ষ্মী ছিলাম ! লক্ষ্মী ছিলাম ! লক্ষ্মী ছিলাম ! সাত চড়ে 'রা' কাড়তাম না | ঘটি বাটি নাড়তাম না ! কুলকাসুন্দি আমের আচার তাকের থেকে পাড়তাম না | দুধের শেষটা ফেলতাম না, ডানপিটেনি খেলতাম না, গুরুজনের একটি কথাও-- এক্কেবারে ঠেলতাম না ! এক্কেবারে ঠেলতাম না ! পাখীর ছানা ধরতাম না | দোয়াতে জল ভরতাম না | আরো কতই করতাম না | কত কী যে করতাম না | (মানে) যা ভালো সব করতাম, আর--- যা ভাল নয় করতাম না | আমরা তো সব লক্ষ্মী ছিলাম ! যখন কি না ছোট্ট ছিলাম! |
ঝিলিমিলি খুকু বলে, আয় খেলি পদ্যের মিলমিল | ঝাউবনে রোদ কাঁপে ঝিলমিল ঝিলমিল || মুখে আমি বলে যাই, লেখ তুই খোল খাতা | খোকা বলে ভালো মিল, "খোল খাতা, কোলকাতা ||" খুকু বলে, "বারে খোকা, কী যে ভালো মিলটা |" খোকা দেখে আকাশেতে উড়ে যায় চিলটা || মিলমিল খেলা ছেড়ে চেয়ে থাকে দু'জনে | হঠাৎ চমকে ওঠে কোকিলের কূজনে || |
গানওয়ালা |
আজু গোঁসাই |
আমার পণ সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারাদিন আমি যেন ভাল হয়ে চলি। আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে, আমি যেন সেই কাজ করি ভাল মনে। ভাইবোন সকলেরে যেন ভালবাসি, এক সাথে থাকি যেন সবে মিলেমিশি। ভাল ছেলেদের সাথে মিশে করি খেলা, পাঠের সময় যেন নাহি করি হেলা। সুখী যেন নাহি হই আর কারো দুখে, মিছে কথা কভু যেন নাহি আসে মুখে। সাবধানে যেন লোভ সামলিয়ে থাকি, কিছুতে কাহারে যেন নাহি দেই ফাঁকি। ঝগড়া না করি যেন কভু কারো সনে সকালে উঠিয়া এই বলি মনে মনে। |
মদনমোহন তর্কালঙ্কার |
সিঙ্গুর’এ যাঁরা সরব ছিলেন, আজকে কেন বোবা? গরীব চাষী’র রক্ত মেখে, ডাক দিয়েছে লোবা। বিদ্বজ্জনে আপোস করেন, আম জনতা নয়। জনরোষের আঁচ দেখে তাই, শাসক পায় ভয়। রাষ্ট্র-চরিত বদলায় না, হোক না বাম-ডান লুট হয়ে যায় আবাদ ভূমি, চাষী’র পেটে টান। জমির লড়াই, হকের লড়াই, সাক্ষী ইতিহাস। গণবিক্ষোভ রুখতে পারে না পুলিশী সন্ত্রাস। . ৭.১১.২০১২ |
বিদ্বজ্জনের মন ভরে গেছে, দেখে পরিবর্তন বাংলায়! তাঁরা এখন সকাল সন্ধ্যে পরিবর্তিত হাওয়া খায়! পিচ্ছিল পথে পরিবর্তন যদি পিছলায় বার বার, তাঁরাই কাঁধে তুলে নিয়েছেন তা সামলে দেবার ভার! সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের মতন কেউ যদি আজ গুলি খায়, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কারও কোনো দোষ নয়! পরিবর্তনী গুলি চালিয়ে পুলিশ এখন খুব ভালো! বাধা দিয়ে বাঁধালে লড়াই গ্রামবাসীরাও খুব ভালো! পরিবর্তিত মাওবাদীদের কান পেতে শোনো ফোঁস্ ফোঁস্--- জমির লড়াইয়ের মাঝখানে প’ড়ে তারাই শুধু নন্দঘোষ! কেষ্ট বিষ্টু ও ফড়েদের ভীড়, লোবা গ্রামে ঢোকে! তীর্থের কাক্ বিরোধীরা ভাবে--- কবে ছিঁড়বে শিকে! দুষ্ট কবি, পরিবর্তিত . . . এই প্রার্থনা লেখে--- “লোবাবাসীদের রক্ষে করো এই ফড়েদের থেকে!” . ৯/১১/২০১২ |
এক এক ক’রে, জমিয়ে, ঠুকে তাল, হাটে হাঁড়ি ভাঙছে কেজরিওয়াল! গভীর জলের মাছের ভাঙছে হাঁড়ি! সুইজ ব্যাঙ্কে টাকা কাঁড়ি কাঁড়ি! ভাঙছে যাদের হাঁড়ি, পারছে গাল! তারাই এখন ধ’রে দেশের হাল! তারা তো ঠিক মামুলি আদমি নয়! তাই, দুষ্ট কবির ভয় ও সংশয়--- কেজরিওয়ালের সাওয়াল করে শেষ, কবে পাঠিয়ে দেবে তাকে নিরুদ্দেশ! . ১১/১১/২০১২ |
ফুটল কলি, জুটল অলি, ছুটল নতুন প্রেমের ধারা | রবির করে, চাঁদের করে, কচ্চে খেলা দিচ্চে ধরা || তমাল ডালে, হেলে দুলে, উঠল লতা সোনার পারা | নীল আকাশে, চলল ভেসে, কিরণ-ভরা উজল তারা || |
রাজকৃষ্ণ রায় ২১.১০.১৮৪৯ - ১১.৩.১৮৯৪ |
ধীরি ধীরি বহে মলয় বায়, ধীরি ধীরি ফুল দুলিছে তায়, ধীরি ধীরি চাঁদ ভাসিয়ে যায়, হাসিয়ে হাসিয়ে গগন-গায় | ঝুরঝুর ঝরে চাঁদের হাস, ভুরুভুরু উড়ে ফুলের বাস, চাঁদের কিরণে কোকিলার সনে, রাম-গুণ-গান কোকিলা গায় || ছোট ছোট ফুল ফোট ফোট মুখে, গলে গল রাখি খেলা করে সুখে | রামলছমন ভাই দুইজন গলা ধরাধরি করিয়ে যায় --- আকাশের চাঁদ সরসে ভাসে, যেন দুই চাঁদ দুদিকে হাসে, রাম লছমন ভাই দুইজন, দুই চাঁদ চাঁদ-হাসি বিলায় || |
রাজকৃষ্ণ রায় ২১.১০.১৮৪৯ - ১১.৩.১৮৯৪ |
প্রভাত হইল, ভূবন গাইল, জয় জয় জয় রাম | আকাশ ছায়ায়, ঊষা সতী গায়, শ্রীরাম মধুর নাম || শতদল জলে, ফোটে পরিমলে, রাম রাম বলে অলি | রামনাম শুনে উদ্দেশে নলিনী, রাম-পায়ে পড়ে ঢলি || ফোটে শাখে শাখে, ফুল থাকে থাকে, পাখি বলে রাম রাম বুলি | জাগো রে সকলে, রাম রাম বলে, ভকতিকপাট খুলি || হরি বল্ হরি বল্ হরি বল্ মন | ছাড়ো মোহ মায়া ভ্রম ছায়া সংসার-স্বপন || ( একবার হরি বলো বলোরে ) আমরা প্রেম-ভিখারি প্রেমের হরি, . করে প্রেম বিতরণ || |
রাজকৃষ্ণ রায় ২১.১০.১৮৪৯ - ১১.৩.১৮৯৪ |
ভয় করিলে যাঁরে না থাকে অন্যের ভয় | যাঁহাতে করিলে প্রীতি জগতের প্রিয় হয় || জড় মাত্র ছিলে, জ্ঞান যে দিল তোমায়, সকল ইন্দ্রিয় দিল, তোমার সহায় ; কিন্তু তুমি ভোল তাঁরে, এ তো ভালো নয় || |
ময়মনসিংহের মুগডাল, খুলনার ভাল খই | ঢাকার ভাল পাতক্ষীর, বাঁকুড়ার ভাল দই || কৃষ্ণনগরের ক্ষীরপুরী (সরপুরিয়া) ভাল, মালদহের ভাল আম | উলোর ভাল বাঁদর-বাবু, মুর্শিদাবাদের জাম || রংপুরের শ্বশুর ভাল, গুপ্তিপাড়ার মেয়ে | মাণিককুণ্ডের মূলো ভাল, চন্দ্রকোণার ঘিয়ে || দিনাজপুরের কায়েৎ ভাল, হাবড়ার ভাল শুঁড়ি | পাবনা জেলার বৈষ্ণব ভাল, ফরিদপুরের মুড়ি || বর্ধমানের চাষী ভাল, চব্বিশ পরগণার গোপ | পদ্মানদীর ইলিশ ভাল, কিন্তু বংশলোপ || হুগলির ভাল কোটাল লেঠেল, বীরভূমের ভাল ঘোল | ঢাকের বাদ্যি থামলেই ভাল --- হরি হরি বোল || |
মাওবাদী এখনও তুমি প্রতিবাদ করো? ---মাওবাদী। প্রশ্ন করার সাহস করেছো? ---মাওবাদী। চোখে চোখ রেখে কথা বলো যদি ঘড়ি ঘড়ি সাজ মানবদরদী আদরের ঠাঁই দেবে এ-গারদই ---মাওবাদী। সহজ চলার ছন্দটা আজ একটু না হয় দাও বাদই। দুই চোখে দেখি সর্ষেফুলের মতো থোকা থোকা ---মাওবাদী। এখানে-ওখানে দোকানে-বাজারে হাজারে হাজারে ---মাওবাদী। বাঁকা হাসি দেখে ঠিকই চিনে যাই মাওবাদী, তুমি মাওবাদী!! (প্রথম প্রকাশ : অনুষ্টুপ, শারদীয় সংখ্যা ১৪১৯, সম্পাদনা: অনিল আচার্য) |
হাপু গান ( স্বধীনতার ৬৫ বছর পরে, শিশুদিবসের প্রাক্কালে, বনগা লোকালের কামরায়, দুজন হতদরিদ্র কিশোরের কণ্ঠে শোনা ) ১ ঘরেতে নেই পাকা কলা বউ পালালো দুপুর বেলা। হাঁড়িতে নেই তেজপাতা বড় বউটার লেজ কাটা। হাঁড়িতে নেই নুন ছেলের নাম মিঠুন। হাঁড়িতে নেই রান্নাবান্না ছেলে বলল, রাজেশ খান্না। ঘরেতে নেই মুসুরি কই রে তোর শাশুড়ি। ঘরেতে নেই গর্ত ছেলে বলল, সঞ্জয় দত্ত। ঘরে নেই নারকেল ছোবড়া ছেলে বলল, প্রেম চোপড়া। ঘরেতে নেই হলদি বিয়ের কথা জলদি। সংগ্রাহক - হারাধন চৌধুরী, “শিশুরা আর কতদিন হাপু গাইবে”, বর্তমান, ১৩ নভেম্বর ২০১২। |
অজ্ঞাত কবি |
হাপু গান ( স্বধীনতার ৬৫ বছর পরে, শিশুদিবসের প্রাক্কালে, বনগা লোকালের কামরায়, দুজন হতদরিদ্র কিশোরের কণ্ঠে শোনা ) ২ বুড়ি বুড়াতে লড়াই লেগেছে বুড়ির কপালে বুড়া মেরে দিয়েছে। মাগো মা জামাই এসেছে বিড়ি ধরাতে গোঁফ পুড়েছে। চা দোকানি চা, চা দিও না রাস্তায় বুড়ি যায়, বুড়ো চোখ মেরো না। দূরের জামাই এসলে পরে, খায় মাছের চাকা ঘরজামাই এসলে পরে, খায় মুড়ো ঝাঁটা। কুন পথ দে যাবে জামাই শালার বাড়ি জামাইকে শালায় ভাত দেয় না, মারে জুতোর বাড়ি। সংগ্রাহক - হারাধন চৌধুরী, “শিশুরা আর কতদিন হাপু গাইবে”, বর্তমান, ১৩ নভেম্বর ২০১২। |
অজ্ঞাত কবি |
কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব ২০১২ ‘ফিল্ম ফেস্টে’র আসর মাতান অমিতাভ, শাহরুখ। ‘তারা’র আলোর জেল্লায় ঢাকে অনাহারে ম্লান মুখ। ঢেকলাপাড়ায় মৃত্যু মিছিল, গুলি চলে লোবা গ্রামে। সুশীল সমাজে বিদ্বজ্জনের রঙ মেহফিল জমে। ‘চলচ্চিত্র চচ্চড়ি’ পাতে বলিউডি ব্যঞ্জন! সরকারি টাকা শ্রাদ্ধ করে নগর মনোরঞ্জন। ‘উৎসব’, নাকি ‘সার্কাস’ খেল? চলছে বিসংবাদ। ‘নন্দীগ্রামের চোখের পানি’ রাজরোষে পড়ে বাদ। প্রতিবাদে যাঁরা নামলেন পথে, জেলখানা হল ঠাঁই। কোথা গেল ওরা, বলেছিল যারা ‘পরিবর্তন চাই’? . ১৩.১১.২০১২ |
কাছের মানুষ ছিলেন দিদির দুর্দিনে! মানিক মণ্ডল নাম আনহ স্মরণে! দিদি যবে শুয়েছিল পথপাশে একা! ধর্মতলা-মঞ্চ’পরে অনশনে থাকা! প্রতিবাদ করা যবে ছিল অন্যায়! করিলে হইতো যবে জীবন সংশয়! দিদিরে ছুঁইলে যবে থাকিতো না জাত, যদি রাজ-বুদ্ধিজীবির হইতো খুল্লতাত! সেইকালে মানিক মণ্ডল করিলেন কি? দিদির কর্মকাণ্ডে তিনি ঢালিলেন ঘি! সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের সেই আন্দোলনেই, রচিলেন উপন্যাস, নাম --- “ভাল নেই”। সেই আন্দোলনের যদি থাকে ইতিহাস, তাহাতে শ্রেষ্ঠ জেনো এই উপন্যাস! আগামীতে দিদি-গাথা পড়িবে সবে এই মানিক মণ্ডলেরই কলমের তাঁবে! সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের সেইসব দিনে পারিতো না ঢুকিতে কেহ সেথা ত্রিসিমানে। গ্রামবাসী নিজেরাই কাটিয়া সড়ক আটকাইয়াছিল হারমাদের খুনে ছক! চোদ্দো মার্চ গণহত্যা ও পরে সূর্য্যোদয়! যাহা দিয়া বুদ্ধরাজার কর্ম চেনা যায়! |
প্রত্যক্ষদর্শী এই মানিক মণ্ডল! নামী পত্রিকায় নামিতো তাঁর কলামের ঢল। ভদ্রলোক কলকাতার প্রাতেঃ, বসিয়া গৃহে, খবর পড়িতো রোজ মানিকের অনুগ্রহে! নতুন সূর্য্যোদয়কালে যাইতেছিল প্রাণ, নাটকীয় ভাবে তিনি তখন রক্ষে পান! সিঙ্গুর গ্রামেই মানিকের হইলো পরিচয়--- আরোও এক ঠ্যাটা, যে নিজেরে দুষ্ট কবি কয়! দুষ্ট কবির কবিতা শুনি হইয়া উদ্বোধন, “বাংলা জ্বলছে” ভিডিওর করিলো নির্দেশন। দেবাশিস রায় সুর দিয়া বাঁধিলো তা গানে! অমিত রায় সংগীত দিয়া সাজাইলো ভূবনে! গান গাহিলেন বজ্রনাদে তেজস্কণ্ঠী যত, গণরোষের সুর বাজিলো অগ্নিযুগের মতো! ততকালে আন্দোলনের দিদিই সর্বনেতা। দিকে দিকে বাড়িছে তার দলের সদস্যতা! “বাংলা জ্বলছে” ভিডিওটি পাইয়া পাতে, দিদি-ভক্ত মানুষ যেন অস্ত্র পাইলো হাতে! গ্রামে গঞ্জে মাইকে মাইকে শুনিতো সকলে “বাংলা জ্বলছে” গানের কলি সকালে বিকালে! মানিকের ভিডিওটি স্টেশানে, পথে, ঘাটে, চালাইতো দিদির ভক্ত, দিবা থেকে রাতে! |
মানিক! কোন্ সাহসে করে রাজার নিন্দন! হার্মাদেরা পিটাইয়া তারে পাঠাইলো বৃন্দাবন! ইহার পরে সিঙ্গুরে দিদির অবরোধ হ’লে, সমাদর পাইয়াছে মানিক দিদির, সেই দলে! তাহার পরে আসিলো দেশে পরিবর্তন! বুদ্ধ গিয়া হইলো দেশে দিদির পত্তন! অচিরে আন্দোলনকারী ভুলিয়া গেলো--- তাহাদের, যাহারা তাদের পাশেই ছিলো! শুনিতে না পাই আর “বাংলা জ্বলছে” গীত! দিবারাত্র চৌমাথায় কেবল “রবীন্দ্র সঙ্গীত”! ধীরে ধীরে দেশবাসী ভুলিয়া বসিল--- মানিক মণ্ডলের মত দেশে, কিছু লোক ছিল! সুশ্রী শ্রী ভূষণ বিভূষণ যথা--- উপাধীর কাছে যারা নোয়ায় নাই মাথা! মানিক মণ্ডলের কলম কভু থামে নাই। সতত চলিয়াছে পেন এই প্রমাণ পাই। সম্প্রতি করিলেন সিনেমা “চোখের পানি”। বিতর্কিত মতামত নন্দীগ্রাম পটভূমি! |
মানিক মণ্ডল শুধু লেখেন নাই গাথা, কালে কালে প্রতিবাদী কণ্ঠে ক’ন কথা! জঙ্গল মহলে গিয়া আইন ভাঙিবার, খেসারত কারাবাস হইলো বার বার! অতিবাম চিন্তাধারার লেখক বলিয়া, শাসক দেখেন তারে মাওবাদী ছাপ দিয়া! দ্রোহকালে নন্দীগ্রামে দেখেন কতিপয় তাহাদের, যাদের এখন মাওবাদী কয়! সচক্ষে তিনি নাকি দেখিয়াছেন তথায়--- দিতে ভূমিরক্ষাকারীদের অনুশিলন যথা! তাহা কেন লিখিলেন “চোখের পানি”-তে পরিবর্তিত সরকার তাহা না পারে মানিতে! ছবি তার হলো বাতিল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে! বুদ্ধবাবুর সেই ট্র্যাডিশন দেখি এখনও চলে! এ কেমন পরিবর্তন আসিলো দেশে? যদি কথা বলিবার হক্ ধরায় মেশে! মানিক মণ্ডলের কণ্ঠ হইলো আজ রুদ্ধ। দুষ্ট কবি লেখে এ কথা যাতে মুছিয়া না যায় সত্য! . ১৪/১১/২০১২ |
মানিক মণ্ডলের কণ্ঠ হইলো আজ রুদ্ধ (একটি পাঁচালী) |
লন্ডননামা ক্যাবিনেটে মন্ত্রী আছে, রাজভবনে হাতি। পথেঘাটে বিরাজমান তিনমুখওলা বাতি। উন্নয়নের চমক আছে, বিশ্বায়নের তত্ত্ব। গরিবগুর্বোর জন্য আছে কাঁঠালের আমসত্ত্ব! গণতন্ত্রের মুখোশ আছে, গলা টেপার হাত। টিভির চ্যানেল বানিয়ে দেবে দিনকে মধ্যরাত। |
নাটক আছে, ফাটক আছে, আছে একুশে আইন। নিন্দুকদের কানটি মলে না হয় দেবো ফাইন। ঝুলিটি আমার ফাঁকা, তবুও ঋণের জন্য ঘি। ভূত আমার পুত এবং পেত্নী আমার ঝি! থানায় থানায় পুলিশ আছে, আস্তিনেতে অস্ত্র। যত্রতত্র প্রয়োগ হবে চাইলে অন্নবস্ত্র। কোলকাতাটা সেকেলে ভীষণ, স্বপ্নে আছে লণ্ডন। উপনিবেশ মনটা খাঁটি, দেশপ্রেমটা ভণ্ড। |
আদর্শ ছেলে আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে ? মুখে হাসি, বুকে বল তেজে ভরা মন "মানুষ হইতে হবে" --- এই তার পণ, বিপদ আসিলে কাছে হও আগুয়ান, নাই কি শরীরে তব রক্ত মাংস প্রাণ ? হাত, পা সবারই আছে মিছে কেন ভয়, চেতনা রয়েছে যার সে কি পড়ে রয় ? সে ছেলে কে চায় বল কথায়-কথায়, আসে যার চোখে জল মাথা ঘুরে যায় | সাদা প্রাণে হাসি মুখে কর এই পণ --- "মানুষ হইতে হবে মানুষ যখন" | কৃষকের শিশু কিংবা রাজার কুমার সবারি রয়েছে কাজ এ বিশ্ব মাঝার, হাতে প্রাণে খাট সবে শক্তি কর দান তোমরা মানুষ হলে দেশের কল্যাণ | |
বঙ্গ “সুশীল সমাজ”যখন দিন দুপুরে দেখেন “জুজু” শাসকের পানে তর্জনী হেনে প্রশ্ন তোলেন শ্রী কাটজু। রোষের জ্বালায় উচ্চ গলায় দিদি গালি দেন “সারমেয়”! কোথা সে “সুজন” ? কোথায় “স্বজন” ? প্রতিবাদে আর নাই কেহ! . ২৯.১১.২০১২ |
একুশ শতক ‘ক্ষান্ত বুড়ির দিদিশাশুড়ির তিন বোন থাকে কালনায় শাড়িগুলো তারা উনোনে শুকায়, হাঁড়িগুলো রাখে আলনায়।’ এমনি উল্টো কাণ্ড ঘটছে একুশ শতকে এসে, এও নাকি এক পরিবর্তন উলট-পূরাণ দেশে। ধাড়ি মেয়েগুলো শাড়ি ছেড়ে দেখ টান মারে ছোট ফ্রকে, ছোট মেয়েগুলো ফ্রক ছেড়ে শেষে কামিজে শরীর ঢাকে। ধেড়ে খোকারাও ধরেছে যে আজ হাফ প্যান্ট নাকি বারমুডা! ছোটরা তাদের লজ্জা ঢাকতে প’রে ফুলপ্যান্ট অকাল বুড্ঢা। ট্রামে বাসে দেখি তরতাজা ছোট শিশুরাই করে সিট আলা (আলো), দাদু-দিদারা তো পায় না কল্কে--- প্রবীণ-আসনও বে-দখলা। শিশুর মায়েরা ফিটফাট সাজে---দেয়না শিশুকে স্নেহের কোল, শিশুরাও তাই অধিকার বলে আঁকড়ে ধরেছে আসন-কোল। উলট-পূরাণ দেশেতে এখন এসেছে জোয়ার---পরিবর্তন, ভালোমন্দের বিচার বিহীন--- ‘স্বাগত’ ‘স্বাগত’ বিবর্তন। . ৫.২.২০১৩ |
অমিত চরিত উল্টো গড়ন উল্টো ধরন উল্টো কথা বলি – যুগের Latest ফ্যাসান মেনে সাবধানেতে চলি । নকল করি সাহেব ভাষা ওদের কথা বলা - বিলেত গেলে বর্তে যাব, শিখব মর্ডান কলা । ওদের মত সুখে দেব সিগারেটে টান, লিপিস্টিকে ঠোঁট রাঙিয়ে পিয়ানোতে গান । ছেঁটে দেব নাম আমাদের কেতকিকে কেটি - সিসি, লিসি ইংলিসেতে ম্যানারস্এটিকেট্ই ঝাড়বে ওরা India-তে - অম্ল-মধুর হাসি ঠোঁট বেঁকিয়ে ক্যাটের মত চলতে ভালবাসি । |
যারা থাকে নাম হাঁকিয়ে গুন গাইব তার – চক্ষু বুজে করব মোরা ওর Quotation ধার ; রবি ঠাকুর বিশ্বকবি নজরুল তার পরে – রাখব মোরা ওদের লেখা Shelf ভরিয়ে ঘরে । যারা নতুন নাম জানিনা হতাশ কবির দল – ব্যাঙ্গ করে মুখ বেঁকিয়ে তাদের কথা বল । অমিট রে রা অন্য ধারা ছাড়ল নতুন বাণী – Loyalty ঘুচবে এবার কবির মেয়াদখানি ; কবির লেখা যাচাই হবে সত্য নিরূপনে , ওদের লেখা ভুললে তবেই রাখবে ওদের মনে । . ২০১১ |
|
ভোটফোঁটার ছড়া (গ্রামবাংলার জনৈক ভোটারের জবানবন্দি) তর্জনীতে দিলাম ফোঁটা, ‘বাম’-দুয়ারে পড়লো কাঁটা। বোতাম টিপে ঘাসফুলে ভোট দিয়েছি তৃণমূলে। এখন করি হাপিত্যেশ, দুর্গতির হবে কি শেষ? ‘পরিবর্তন’ এলে পরে, জুটবে কি ভাত কুঁড়েঘরে? মিলবে কি কাজ বারোমাস? বিড়ি বেঁধে, বুনে বাবুই ঘাস মিলবে মজুরি ন্যায্য মতো? সরকারি প্রকল্প যত পাবো কি আমরা গরিব-দুখী? ‘মা-মাটি-মানুষ’ হবে কি সুখী? যৌথবাহিনী নেবে কি তুলে? শোকের কান্না, সন্ত্রাস ভুলে হাসবে কি বন পলাশের লালে? থাকবে না বেড়ানিষেধের জালে? অত্যাচারীরা পাবে কি শাস্তি? আদিবাসী ফিরে পাবে কি স্বস্তি? জেল থেকে ওরা পাবে কি মুক্তি? বাতিল হবে কি বেসাতি চুক্তি - |
এসইজেড আর আছে যত ‘মউ’? হবে না তো খুন ‘শশধর’ কেউ? লালগড়ের কোনো ছিতামণি হারাবে না তো নয়নের মণি? বধ্যভূমিতে ফুটবে কি ফুল? বিঁধবে না বুকে পেয়াদার শূল? মিলবে কি গণহত্যার সাজা? তাপসী-ভরত-সেলিম-রাজা খুনের বিচার পাবে কি আইনে? কত আশা নিয়ে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছি আজ ‘মা-মাটি-মানুষ’। রাখবে তো কথা? গড়ো না ফানুস। সিঙ্গুরে জমি পাবে কি কৃষকে? মিলে যাবে না তো শাসকে-শোষকে? সিঙ্গুর থেকে নন্দীগ্রামে -- লালগড়ে যত ক্ষোভ ছিল জমে, সব ঢেলে দিতে ভোটের ব্যালটে ভয় পাইনি তো লাঠি ও বুলেটে। ‘লাল’ সন্ত্রাস নিকেশ করতে নেমেছি দিদির সঙ্গে লড়তে। লালবাড়ি গিয়ে রেখো গো স্মরণ, আমাদেরই খুনে ‘পরিবর্তন’! . ৪ মে ২০১১ |
অর্পিতা উবাচ অর্পিতা ঘোষ খুঁজছেন দোষ নোনাডাঙার আন্দোলনে। কারা ফ্ল্যাট বেচে বস্তিতে আছে সবকিছু তাঁর নখদর্পণে! ‘বহিরাগত’ হামলাকারী ওরাই যত ‘বদের ধাড়ি’, দিচ্ছে বাধা ‘উন্নয়নে’। আর যারা সব দখলকারী গরিব মজুর, দিনভিখারী, পাঠাও ওদের সোঁদরবনে। যদি ওরা না চায় যেতে, বন্দি করে জেল হাজতে আটকে রাখো একুশ আইনে। অর্পিতারা আছেন পাশে, টেলিভিশনে ‘টক্-শো’ বসে দিদির ‘নগর উন্নয়নে’। অনিন্দিতা-বাদশা ছিলেন বামজমানায় নন্দীগ্রামে। এখন প্রসূন-অর্পিতাদের নোনাডাঙায় আসর জমে। রাজা বদলায়, রানি বদলায় বদলায় বিদূষক। মগজ ধোলাই যন্ত্র বানাতে বদলায় গবেষক। চরণদাস বাউলেরা তাই আজো চেনা সুরে গায় -- ‘কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়’।। . ৩০.৪.২০১২ |
সিঙ্গুর ২০১২ বেচারাম মান্না কইতে তো চান না, সিঙ্গুরে মিছিলেতে কৃষকেরা যান না। ‘বর্ষপূর্তি’তে নেতাদের ফূর্তিতে চাপা পড়ে জমিহারা চাষিদের কান্না।। . ২১.৫.২০১২ |
ভয় কেন? ছোটাছোটি চারপাশে... কুটিকুটি হাসিতে সে... লুটোপুটি খায় সারা গায়... দুটি দুটি জোড়া জোড়া... বালক আর বালিকারা... গুটিশুটি বসে থাকে প্রায়... মোটামুটি কাজের ভিড়েতে ডুবে ঠিক যেন... হুটোপুটি খায় কেউ কেউ... আমার আর তোর জুটি... মস্ত বাধাঁনো খুঁটি... ... সেই সাথে ভ্রুকুটির ঢেউ... আহ! কি যে Tension... সবকিছু Mention... কিভাবে করবো সেটা বল... শুরু কর তারপর... লেগে থাক পেছনেতে... শেষ করে হাতে নিবি জল... শেষ এই কথাটাকে... গেথেঁ রাখ মাঝখানে... তারপর ছড়া দেই চুকিয়ে... মরে গেলে সব শেষ... সবকিছু নিঃশেষ... কেন তবে বাঁচবোরে লুকিয়ে??? . ১০.৪.২০১৩ |
আব্দুল ওয়ারেশ নাবিল |
ধরায় রবির মুখ রচিয়াছিলে অগণিত গীত সুর ও ছন্দ সনে। মোহিত তব দেশবাসী সেই সঙ্গীত শুনে শুনে। মুগ্ধ, জননী --- এ ভূমি, তব বন্দনে বন্দনে! মুগ্ধ জগত মুগ্ধ, ধরার কাননে নন্দনে! মাতাও কি তাই রেখেছে তোমারে তাঁর হৃদয়েতে ধরে ? স্নেহের দানে দিয়েছে তোমারে ধরায় অমর করে ? যতনে এঁকেছে তোমারি শ্রীমুখ নদী পথে এঁকে বেঁকে ? আকাশ-পথে দুষ্টকবি এসেছে সে মুখ দেখে! . ১১/০৪/২০১৩ |
আকাশপথে লক্ষ্ণৌ থেকে কলকাতা আসার সময়ে ১০/৪/২০১৩ তারিখে এই ছবিটি তুলেছিলেন দুষ্ট কবি। অবস্থান - ২৪° ২০.৬’ উত্তর অক্ষাংশ ৮৬° ৩.১৫’ পূর্ব দ্রাঘিমা। ঝারখণ্ডী ধাম মন্দির এবং শ্রীঝারখণ্ড নাথ হাই স্কুল, তারা, জমুনা, ঝারখণ্ড এর মাঝবরাবর বয়ে চলেছে এই নদী। |
তোরা আসিস এই বারান্দায়... আমার ভীষন খারাপ মন... আসলে আসিস, সন্ধ্যেবেলায় রইলো নিমন্ত্রণ। একসাথে আয়! সাজবে আবার আমার বারান্দা... করিস না ভুল আনতে আমার রজনীগন্ধা... আগের বারের মতোই তোরা ভূতের মত আসিস... চমকে দিয়ে আমায় তোরা পেট ফুলিয়ে হাসিস। একসাথে আয়!দেখবো সবাই টেলিস্কোপের আকাশ... মুখটা তুলে সন্ধ্যাতারায় উদাস হয়ে তাকাস... পেছন থেকে মৌনতাটা অন্য কেউ ভাঙিস... সময়টাকে ভেজাতে সব একটা কিছু আনিস... ... সবার শেষে বিদায় নিতে তাকাস নাকো পিছে... কষ্ট দিবি? তাকাস তবে...বয়েই আমার গেছে... . ১লা বৈশাখ ১৪২০ ১৫.৪.২০১৩ |
আব্দুল ওয়ারেশ নাবিল |
বেজে ওঠে ঘন্টা ঢং ঢং ঢং গেটম্যান গেট ফেলে টং টং টং॥ থেমে যায় সার দিয়ে বাস, লড়ি, গাড়ী ধেয়ে আসে রেলগাড়ী ভোঁ ডাক ছাড়ি॥ হুড় হুড় দুর দুর চলে যায় রেল গেট ওই উঠে যায় কলের কি খেল॥ আবার চলতে থাকে সার দেওয়া গাড়ী গেটম্যান ঘাম মোছে নিশ্বাস ছাড়ি॥ দূর থেকে আরও দূরে চলে যায় রেল কূতুহলী বালকেরা ভাবে এ কি মেল্॥ . ১লা বৈশাখ ১৪২০ ১৫.৪.২০১৩ |
বীরেশ্বর সেনগুপ্ত |
মিলেনিয়াম মিলেনিয়াম মিলেনিয়াম চর্যাপদের পুঁথির পাতায় আমিও ছিলাম, অশ্বমেধের ঘোড়ার খুরে আমিই ধুলো উড়িয়েছিলাম গৌড় এবং বঙ্গ হলেও বাংলা আমার আসল নাম আমিই ওনার প্রথম পত্নী ভারতবর্ষ বরের নাম বাবু ভারত বুড়ো কুলীন বাইশটা বৌ বাইশ ধাম উঠতে বসতে তির শানাচ্ছে সীমান্তে সব পরশুরাম আমি বাবুর দুঃখীরানি ঘুঁটেকুড়ানি মাথার ঘাম টাকা পয়সা দেয় না কিছু চাইলে বলে বিধিই বাম এখনকার ভাঙা কুড়েয় কেটে যাচ্ছে দিবসযাম |
বরের দেওয়া লাঠি ঝাঁটায় বঞ্চনাময় শহর গ্রাম ডুবে যাচ্ছে ভেসে যাচ্ছে আমার ঘরের দালান থাম ভারতবাবুর হারেম ভর্তি বহুবর্ণ রঙিন শাম সবাই যদি পালায় তবু আমি থাকব অহর্যাম ভরতবর্ষ তোমার সঙ্গে এত বছর কাটিয়ে দিলাম এখন হাজার বছর পরে বাংলা বউয়ের এই কি ইনাম মিলেনিয়াম ! |
মডেলের কথা আমি ভাবতে গিয়ে ঠিক ভেবেছি, কাঁদতে গিয়ে ভুল আমি সাবধানে টিপ পড়তে গিয়ে ডুবিয়েছি বিলকুল আমি ড্রেসিং টেবিল সামনে রেখে আয়না জোড়া চোখ আমি চোখের পাতায় মাসকারা দিই আশকারা পায় শোক আমি কাজল দিয়ে দুঃখ লুকোই, ব্লাশার দিয়ে ঘা আমি চুলের ব্রাশে ঢেউ তুলেছি, ডান সিঁথি না বাঁ আমি শ্যাম রাখি না শ্যাম্পু রাখি, কুল রাখি না দুল আমি ঠোঁটের রেখা আঁকতে গিয়ে ডুবিয়েছি বিলকুল আমি সুরার রঙে নেল এনামেল, মেলবন্ধন কম শোনো, ঝড়ের মাঝে পড়লে বোঝায় ক্যাটওয়াকের দম আমি দম দেওয়া ডল পুতুল বলে হাঁটছি, পাশে খাদ আমি তাও তো শুধু ফিরেই আসি। দ্রৌপদী সংবাদ আমি শোনাতে চাই সভার ভিড়ে, কেবল টানে পা আমি লিপস্টিকে বিষদন্ত লুকোই, ব্লাশ অন দিয়ে ঘা আমি খাঁচার দিকে আবার ফিরি, বাঁচার মোহ বেশ আমি বুকের খাঁজে ওদের নজর আটকে রাখা কেস আমি কেস থেকে আজ ফেস পাউডার মাখতে গিয়ে চুপ আমি হাসতে শেখা যন্ত্রময়ী, মাজতে জানি রূপ আমি রূপের সঙ্গে রূপো মেশাই, কাঁটার সঙ্গে ফুল আমি বেশ করেছি, সবার চোখে ফুটিয়েছি বিষ হুল! |
পৌলোমী সেনগুপ্ত |
সকালে জানালা মেলে ঢেলে গেলে রোদ্দুর... কাজে কাজে বাজে কথা ভুলে ভরা কতদুর... কত তাকে বললাম...এক সাথে চললাম... শেষকালে ভয়ানক ফাঁদে গিয়ে পড়লাম... গোবরে পদ্মফুলে...তাদের বন্ধ চুলে... আনন্দ পেতে গিয়ে কান্নায় মরলাম... কান্নার ফোঁটাগুলো অদ্ভুত মিস্টি... গ্লিসারিন মেশালেতো তাই হবে সৃষ্টি... কেমিকেল-টেমিকেল বেশি কিছু খেওনা... মাঝরাতে প্রতিদিন ও পাড়ায় যেওনা... প্রতিদিন গেলে, কবে মেরে করে ভর্তা... বাঁচাতে পারবেনাকো এ পাড়ার কর্তা... এ পাড়ার কর্তার চাকরিটা যায় যায়... তাই চুপিচুপি তিনি দুঃখের গান গায়... দুঃখের গান শুনে পেঁচাদের চিৎকার... একখান ঘুম হল আমারও চমৎকার... সবকিছু ভুলে যাই মনে পড়ে যতদূর... সকালে জানালা মেলে ঢেলে গেলে রোদ্দুর... |
পরিবর্তন পূর্ণ হলো পরিবর্তন! বাংলায় শেষে হয়ে গেল দেখ পূর্ণ। লাল দুর্গের নড়বরে ভীত মাটিতে মিশে চূর্ণ॥ লালের যাকিছু ছিল এককালে, এখন মেলা ভার। লালের যাকিছু, সবই এখন ঘাসফুলে একাকার॥ এই ফাঁকে যত হারমাদ যারা হাড়-মাস খেতো মানবের। লাল জামা ছেড়ে জোড়াফুলে ভিড়ে অতি প্রিয় জ্যোতিপ্রিয়দের॥ নায়ক ব্যাপক সিনেমার, যেন ইতিহাস থেকে দিনেমার। প্রকাশ্যে বলে মঞ্চে দাঁড়িয়ে মার মার আর মার মার॥ বীরভূমে বীর অনুব্রতের “স্লিপ-অফ-টাং”-এ জ্বলে ঘর। দিদির হস্ত মস্তকে তার! তাকে কে দেখাবে শ্রী-ঘর॥ লালের নেতারা কেঁদে বলে--- যারা আমাদেরই ছিল সভাসদ! নির্বাচনের জয়ে যারা ছিল ভোটে জেতাবার সম্পদ॥--- ঐ দেখ আজ লাল জামা ছেড়ে বুকে এঁকে চলে ঘাসফুল। ঘাসফুলী যত নির্দলীদের দাওয়াইয়েতে সাকসেসফুল॥ মহাকরণে বন্ধ কি, লাল কালী দিয়ে নোট লিখবার ? খতম কি সেথা বাবুদিগদের লালফিতে-দেওয়া কারোবার ? সেই লাল যদি বিদায় করতে পারে নব প্রতিনিধিরা। মেনে নিতে হবে--- পরিবর্তন থাকবে না আর অধরা॥ কবি বীরেন্দ্র শেষ হাসি হাসে “রাজা আসে যায়” কবিতায়। দুষ্ট কবি লালে-লাল-রঙা সিঁদুরে-মেঘ দেখে যায়! . ৩১/০৭/২০১৩ |
আইন কি হাতে তুলবে ? আর কতকাল মেয়েরা এদেশে গুমরে গুমরে মরবে ? অসহনীয় যাতন-পীড়ণে অকালে ঝড়ে পড়বে ? ন্যায় বিচারের জন্য কেন মাথা খুড়ে খুড়ে মরবে ? আইন কি তবে দেশের মানুষ নিজের হাতেই তুলবে ? দেশের যারা কর্ত্রী কর্তা ন্যায় বিচারের রক্ষা কর্তা--- নরাধম যত পিশাচের বেলা কেন হাত গুটিয়ে থাকবে ? এমন শাপদে আড়াল করলে এ খেলা বেড়েই চলবে। আইন কি তবে দেশের মানুষ নিজের হাতেই তুলবে ? নরপিশাচের নখদাঁত কেন গুঁড়িয়ে দেবো না আমরা ? অপ্রিয় সত্য দেখলেই কেন বলবে ক্ষমতাবানরা ?--- হয়---“রাজনীতি-চক্রান্ত”, নয়--- “বিচার নিজের পথেই চলবে”! আইন কি তবে দেশের মানুষ নিজের হাতেই তুলবে ? . ৩/৮/২০১৩ |
সেই মেয়েটা সেই মেয়েটা যে ভূমি বাঁচাতে নেমেছিলো পথে পথে, সেই মেয়েটা একা সে ভূমিতে আজও গুমরে কাঁদে। আজ সে অতীত, কালো ইতিহাস, সাক্ষী প্রতিকৃতি। আজও সে ভূমি অধরাই আছে, জমেছে রাজনীতি। তার, বলিদান ছিল শুধু, এক ধাপ, ক্ষমতার পথে, পায়ের তলায় জমি ছিলনা যে সব রাজনেতাদের। তারা, ধর্ষিত সেই মেয়ের মরণ, ভাঙিয়ে এসেছে জিতে। সেই মেয়েটা আজও বিচার পাবার অপেক্ষাতে। গরীবের ভূমি কেড়ে নেওয়া সোজা, স্বাধীন ভারত দেশে, আমীরের ভূম ছুঁলেই যাবে আইন-আদালতে পিষে। সে ভূমে জয়ীরা উল্লাসে নাচে ভূমির মূর্ছনাতে। সেই মেয়েটা একা সে ভূমিতে আজও গুমরে কাঁদে। দেহখানি তার ভূমিতে দহে---পিশাচের প্রতিশোধে। দুষ্ট কবি বলে --- দহিছে কি বাংলা বিবেক-বোধে? . ৮/৮/২০১৩ |
পিঙ্কের হাতি পিঙ্কে বলে, হাতি তোর বুকের হাতি . কতো ? হাতি বললে, নাতি তোর, মাথায় দরি ছাতি . র’তো! শুঁড় বাগিয়ে চিরুণী-দাঁতী যেমনি ছুটেছে বীর পালোয়ান পিঙ্কে তখন কান্না জুড়েছে। মা এলেন, বাবা এলেন আর এলেন বোন কেঁদে কেঁদে পিঙ্কে তখন প্রায় অচেতন। মা বললে, হাতি, সোনা একটুখানি শো’না। পিঙ্কে চড়বে তোর পিঠে হাওয়া খাবে মিঠে। ঢিপ্-কপালী চিরুণ-দাঁতী শুঁড়ে তাকে তুলে ধপাস করে বসিয়ে পিঠে চলল হেলে দুলে। হাতির পিঠে চড়ে পিঙ্কে তড়বড়ে বললে হেঁকে, হাতি তোর চেয়ে ঢের বড়ে আমার ছাতি! হেসে বললে হাতি তা হবে, তা হবে, তাই তুমি নাতি। |
খোকা খোকা যখন হাসে, ক্ষীর সাগরে সোনার কলম আপনি সুখে ভাসে। . পাখ পাখালি গায় কত গান, . ধীর সমীরণ মাতায় পরাণ ময়ূরপঙ্খী নাওখানি যে আপনি ঘাটে আসে লাখো লাখো ফুল ফুটো ভাই ডাকে নীলাকাশে। খোকা যখন কাঁদে, পাতালপুরীর কোন অজগর মনকে এসে বাঁধে। . রয় যে ঢাকা অরুণ আলো . দিনের বেলা পিদিম জ্বালো কালোমেঘে আকাশখানি ঝড় বাদলে মাতে রাজার মেয়ে যায় হারিয়ে দত্যি দানোর ফাঁদে॥ |
কাজের ছেলে “দাদ্খানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ, দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিম-ভরা কৈ।” পথে হেঁটে চলি, মনে মনে বলি, পাছে হয় ভুল ; ভুল যদি হয়, মা তবে নিশ্চয় ছিঁড়ে দেবে চুল। “দাদ্খানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ, দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিম-ভরা কৈ।” বাহবা বাহবা--- ভোলা ভূতো হাবা খেলিছে ত বেশ! দেখিব খেলাতে, কে হারে কে জেতে কেনা হলে শেষ। |
“দাদ্খানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ, ডিম-ভরা বেল, দু’টা পাকা তেল, সরিষার কৈ।” ওই ত ওখানে ঘুড়ি ধ’রে টানে, ঘোষেদের ননী ; আমি যদি পাই তা হলে উড়াই, আকাশে এখনি! “দাদ্খানি তেল, ডিম-ভরা বেল, দু’টা পাকা দৈ, সরিষার চাল চিনি-পাতা ডাল মুসুরির কৈ।” এসেছি দোকানে কিনি এইখানে, যত কিছু পাই, মা যাহা বলেছে সব মনে আছে, তা’তে ভুল নাই! “দাদ্খানি বেল মুসুরির তেল, সরিষার কৈ, চিনি-পাতা চাল, দু’টা পাকা ডাল ডিম ভরা দৈ!” |
রঞ্জন ভট্টাচার্য |
থীমের পূজা এই বাংলায় হিড়িক পড়েছে --- থীমের খেলাঘর! পুড়ছে টাকা, উড়ছে টাকা, দুই হাতে তুই ধর! সাপ-ব্যাঙ পোড়ামাটি বাদাম-খোলা যত, পাখা, ঝিনুক, কলস, বেলুন, ডোকরা কত শত! সেই চাঁদে যাবার রকেট থেকে পুরুলিয়া ছৌ-নাচ--- থীমের মোড়কে উদ্ধার হবে, বাবুরা রাখবে লাজ! বিজ্ঞাপনের ঢেউয়ে ঢেকে যায় পূজা-মণ্ডপ যত! চাঁদার জুলুমে বাঙালীর প্রাণ হয়েছে ওষ্ঠাগত! দেবতার চেয়ে দেবালয় বড় এই কথা যারা ভাবেন, প্রতিমাখানি নাম-কা-ওয়াস্তে। মণ্ডপ নিয়ে পড়েন! ভাঙা দেউলের আদল থেকে তাজমহলের ঘাই অক্ষরধাম, মীনাক্ষী, বল কোন মন্দির চাই ? ঘরে টিম টিম লোড-শেডিং এ জ্যোতির যাওয়া আসা! মণ্ডপে দ্যাখো মহারাজাদের ঝাড়বাতি ঝোলে খাসা! আধুনিকতার নব পরিনতি --- জীবন হয়েছে দ্রুত! ছাপোষা বাঙালী সেই যাতাকলে পিষে যায় অবিরত! তাইতো ক'দিন ভীড় ক’রে ঘোরে, থীম থেকে যায় থীমে! অন্তবিহীন কাতারে দাঁড়াতে মানুষের ঢল নামে! তাতেই বাঙালী ডগমগ হয় আনন্দে উল্লাসে! থীমওয়ালারাও পকেট গোছায়, পুরস্কারে ভাসে! |
মা চলে গেলে যখন থীমের শুধুই ভাঙা হাট, নির্দয়ভাবে খুলে ফেলে সব মুছে ফেলবার পাট! শুভ বিজয়ায় বিনিময় চলে শুভেচ্ছা আর প্রীতি, শিল্পী তখন কাঁদে, দেখে তার শিল্পের পরিণতি! নমো নমো করে সারে আবাহন, আসল চমক - উদ্বোধন! “পুঁজিপতিদের ফিতা-কাটা” তার নবীন সংযোজন! রাজনেতাদের ছায়ায় বা কেন এত অশ্লিল প্রদর্শন! দুষ্ট কবি জিঘায় - বাবুরা! কেন আজ এই অধোপতন? হয়তো বলবে - আসছে টাকা, তুমি কে হে বাপু বলার? এই দুনিয়ায় যে যত কামায়, তার তত উঁচু কলার! এই কথা গিয়ে বল গে তাদের, যাদের "পৃথিবী গদ্যময়"! "পূর্ণিমা চাঁদ ঝলসানো-রুটি", যাদের মনে হয়! শোন হে বাবুরা --- সেকেলে বাবুরা ওড়াতো পোড়াতো নিজেদের টাকাকড়ি! এখন তোমরা ঝাঁক বেঁধে কর পরের ধনে পোদ্দারী! ************** ইট্যালিকস এ লেখা লাইন দুটি কবি সুকান্তের বিখ্যাত কবিতা "হে মহাজীবন" থেকে নেওয়া হয়েছে | |
এক দিন বুক চিরে নিয়ে যাবে ডুবুরী নীড়ে, সেই নিভৃত যতনে, সন্তর্পনে, লালিত মুক্তো ছিঁড়ে! হয়তো প্রিয়ার কণ্ঠে শোভিবে, হয়তো দেবের মাথে। সেই ঝিনুকের কাছে এর কি মূল্য! যার গিয়েছে সবই লুঠে। . ২৪/৩/২০১১ |
গানের গুঁতো গান নয়, গান নয়, gun-এর গুঁতো রে। রবীন্দ্র গানে সুর তোলে “রহমান”রে। ভয়হীন চিতে আজ গান গান এ নিলাজ ; নিজেরে সম্রাট ভাবে গানের এ জগতে। ভাষা ও সুরের ঘায় ছিঁড়ে খুঁড়ে গীতিকায় হনন করেছে যে রে সঙ্গীত রাজারে। |
জন্মদিন জন্মদিন জন্মদিন তা-ধিন্ ধিন্, তা ধিন্ ধিন্। হচ্ছ বড় মনে আশা কতদিনে হবে স্বাধীন! স্বাধীন দেশে জন্ম তোমার হতে চাওনা তাই পরাধীন। অধীন থাকার সুখ যে কত মায়ের স্নেহের স্নিগ্ধ ছায়ে, বুঝবে সেদিন, যেদিন তুমি অনেক বড় স্বাধীনতার খরবায়ে। |
বুদ্ধিজীবি ছিল যত বুদ্ধদেবের কুলে! ভ্রমর সেজে উড়ছে ঘিরে দিদিমণির ফুলে! দিদির মেজাজ ফুরফুরে হয় সেলেব্রিটির পাশে! ভণভণিয়ে উড়ছে তাঁরা, একটু জায়গা পাবার আশে! বুদ্ধবাবুর পাট সে গেছে, ভেঙেছে তার হাট, তাঁর বাগানের ফুলের মধুর নেইকো তেমন স্বাদ! রাজ্য গিয়ে মধুর আকাল, জৌলুসেতে টান! কৌটা-নাচা চান্দা ছাড়া কেউ কি করে দান? দিদির ফুলে মিষ্টি মধু, আর কি থাকা যায়? ব্রাত্য বলে, আয় রে সুবোধ অরিন্দমও আয়। কী সব তোরা বলেছিলি রাজার পাশে বসে দিল-দরিয়া দিদির কি আর সে সব মনে আছে ? “বিকল্প নেই” ঝাড়বি বুলি মিডিয়াতে বসে! বাংলা দেশের মানুষ সোজা গিলবে গোগ্রাসে। বুদ্ধিজীবি তকমা তোদের এমনি পাওয়া বুঝি! তোদের পাশে বসতে শাসক হ্যাংলা হতেও রাজি। দিদি খুশি, তোরাও খুশি, খুশির দল বদল। দুষ্টকবি সুধায় --- কেন মিছে মানুষ মরলো বল!? . ********************* কলকাতা, ১৮.০৩.২০১৪ |
|
নিমন্ত্রণ পরশু আমার বাড়ি এস মেয়ের আমার বিয়ে, আসবে কিন্তু খালি হাতে উপহার না নিয়ে। আশীর্বাদ আর ভালোবাসা এটাই প্রার্থনীয় , নেহাত যদি ইচ্ছা করে কিছু একটা দিও। সোনার দাম তো অনেক চড়া, গয়না নাইবা দিলে, আজকাল তো অল্প-দামেই অনেক কিছু মেলে। মেয়ের পিসী শুনলোনাতো হার কিনেছে মোটা, বিজনবাবু শুনছি নাকি দেবেন একটা গোটা। গোটা মানে গোটের মালা দাম কত কে যানে, মিতালি তো সোনার ফুল দিচ্ছে দুটো কানের। পাশের বাড়ীর কুন্ডুবাবু দেবেন বেনারসি, ওনার তো ভাই অনেক টাকা, খরচ করেন বেশী। তোমাদের সে সামর্থ্য নেই কি হয়েছে তাতে! এস কিন্তু পরশু রাতে, না হয় খালি হাতে। |
বিধান বাবু একটা দুটো চারটে ছটা শীল পরেছে গোটা গোটা সঙ্গে বৃষ্টি ফোঁটা ফোঁটা ; গরম তবু গিয়েও যেন যাচ্ছে না। বন-বন-বন ঘুরছে পাখা, জানলা দরজা পরদা ঢাকা জলের গ্লাসে বরফ রাখা ; তৃষ্ণা তবু মিটেও যেন মিটছে না। গোল গোল পাকিয়ে চোখ, বিধানবাবু করেন রোখ, অঙ্কগুলো খাতায় টোক, বিশুখোকার মাথায় কিছু ঢুকছে না। সোঁদা গন্ধ ঢুকছে নাকে, বাইরে আকাশ ডাকছে তাকে, আজ কি পড়ায় মনটা থাকে ; বিধানবাবু কেন যে ছাই বুঝছে না। |
এমন সময় এলেন মা, হাতে নিয়ে গরম চা, সঙ্গে আবার সরভাজা ; বিশুর বুকে বাজছে ছুটির গান। চায়ের কাপে চুমুক মেরে, সরভাজাটা মুখে পুরে, অঙ্ক খাতা হাতে ধরে ; বিধান-বাবু টানেন বিশুর কান। লক্ষ্মীছাড়া দুষ্টু বাঁদর , মনটা কোথায় থাকে রে তোর, অঙ্কগুলো মন দিয়ে কর ; বিধানবাবু ছাড়েন সিংহনাদ। বিশুর কুকুর দুষ্টু ভুলো, খাটের তলায় ঘুমিয়ে ছিল , চমকে উঠে লম্ফ দিল ; বিধানবাবু হলেন কুপোকাত॥ |
ফলাহার বেল খেতে ভালো লাগে যদি থাকে মিষ্টি পাকা আম গাছে দেখে যায় শুধু দৃষ্টি | পাকা কুল পেড়ে খেতে লাগে বড়ো ভালো লাল-লাল লিচু খাই জাম খাই কালো | গাছ পাকা আতা চাই কলা দেখি পাকা রসালো আঙুর খাই যদি থাকে ঢাকা | গাছ পাকা তেঁতুল দেখে জিভে আসে জল খেতে যদি চাও ভালো ট্যাঁকে করো বল | |
যেসব মানুষ শুরু থেকেই ছিল দিদির পাশ। এই বেচা-কেনার হাটে যাদের ছিলনা বিশ্বাস॥ হঠাৎ তাঁরা দেখেন তাঁরা হলেন অবাঞ্ছিত। দিদির ঘরে নেই যে কেহ কথা শোনার মতো॥ এদের ছাড়া দিদির দলে বেড়েই চলে বীর। স্বাগত হয় বেনো-জল ও মৌপিয়াসীর ভীড়॥ দিদির দলের জন্ম থেকে যাঁরা ছিল পাশে। দিদির নামে গ্রামে গঞ্জে জয়ী ভয়ে ত্রাসে॥ তাদের এখন নেই কোনো মান, অবাক পরিণতি। তাদের মাথায় যত বেনোজলের বাচস্পতি॥ এমন সুযোগ হাতছাড়া নয়, আরও সভাসদে। জারসি বদল করে এলেন সুবোধ বালক বোধে॥ এই সুযোগে উঠলো রাজার কাঁসর ঘন্টা বেজে। দুষ্টকবির কলম-খোঁচা লাগলো কিগো লেজে? . **************** কলকাতা, ২২.০৩.২০১৪ |
VOTER GAAN সান্ত্বনা চট্টোপাধ্যায় তিন্তি তিতান তিন্নি- ধাঙ্কা নাকুড় নাকুড় নাকুড় নাচ্ছে দ্যাখ গিন্নি নাচ্ছে দ্যাখ পুরুত ঠাকুর নাচ্ছে দ্যাখ ঢাকিটা নাচ্ছে দ্যাখ বাবা-মশাই আর কে রইল বাকিটা! আর বাকি নেই আর বাকি নেই আজকে নাচে সব্বাই। নাচ্ছে কেন সবাই মিলে ভাবছ বুঝি বসে তাই ! ভেবে ভেবে কুল পাবেনা এটা নাচের দেশ যে। নাচে নেচে চলে সবাই দেখতে লাগে বেশ যে। ভোটের বাজনা বেজে গেছে প্রার্থীরা সব ব্যাস্ত রাস্তা জুড়ে নাচন-কাঁদন লোক জমেছে মস্ত। |
বাবা-মশাই ভোট দেতে যান সঙ্গে নিয়ে ছেলের দল। ভোট টা তুমি যাকেই দাওনা হবে তো সে ই একই ফল। হাসপাতালে রোগী মরে- নেচে বেড়ায় ডাক্তার পুলিশ নাচে ঘুষের লোভে উকিল পাবে ভাগ তার। মন্ত্রী নাচেন ভাষণ দিয়ে ভীষন কর্ম্মকান্ড। দেশ বেদেশে নেচে বেড়ান শূন্য তাদের ফান্ডও। মন্ত্রী নাচেন, কেডার নাচে নাচেন যত আমলা। ধাঙ্কা নাকুড় নাকুড় নাকুড় মরছে সোনার বাংলা। |
মাছি মারা আশায় আশায় বসে আছি দিন গুনে আর পথ চেয়ে নাকের ডগায় উড়ছে মশা দেখছি তাদের মন দিয়ে। মাছি মারাই কাজ যে আমার মশা পেলেও মারব না, মাছি মারার কায়দা জানি, মশার সাথে পারব না। এই তো সেদিন দুপুর বেলা বেয়ারা এসে হাঁক দিল, এসে গেছে অনেক মাছি বড়সাহেব হাঁকছিল। কোথায় গেল আলস্য আর কোথায় গেল ঘুমের ঘোর, মারব মাছি ছুটির পরে, শুরু হোল সে তোর-জোর। ছুটির পরে কায়দা করে দশটা মাছি মারার পর, মাথায় হল বেদম ব্যথা, এসে গেল ভীষণ জ্বর। বাড়ি গিয়ে বদ্যি ডেকে পথ্য খেয়ে অতঃপর, সারল গিয়ে মাথার ব্যথা, ঠাণ্ডা হল গায়ের জ্বর। পরের দিনে এসে দেখি অফিস জুরে হুলুস্থুল, সাহেব গেছেন ভীষণ খেপে হুলোর মাথায় ভুলোর চুল। মাছির নাকি গোঁফ রয়েছে নাকের উপর খর খরে, হুলোর মতন লেজ রয়েছে লাফ দিয়েছে খুব জোরে। |
লাফের চোটে ফাইল ছেড়ে টাকের উপর যেই না বসা, মাছি কোথাও নেই রে তখন, হয়ে গেছে সে এক মশা। এসব নিয়ে নানান কাণ্ড হচ্ছে যখন অফিস জুরে, বিকট সুরে হাসছে তখন পাশের বাড়ির চারটে উড়ে। আমি তখন কাষ্ঠ হেসে বুঝিয়ে দিলাম পরিষ্কার, এসব হচ্ছে পাগলা মতন বিঞ্জানীটার আবিষ্কার। মাছির গায়ে মশার রক্ত এমন দেছে মিশিয়ে, যেই মেরেছি ফাইল দেখে রক্ত গেছে বিষিয়ে। আমার কোনই নেই এতে দোষ মাছিই যদি না হয় তবে, মাছি মারতে আমার কাছে পাঠিয়ে দিলে এই তো হবে। ব্যাপারখানা বুঝতে পেরে সাহেব বলে চুলকে টাক, বিঞ্জানীটা বেদম পাজী চাকরি যাবে তো তার যাক। মাছির গায়ে মশার রক্ত এ সব কথা শুনতে পেলে, পুলিশ এসে ধরবে আমায়, পুরবে আমায় কালকে জেলে। সেই থেকে ঠায় বসে আছি মশা পেলেও মারব না। মাছি মারার বিদ্যা জানি মশার সঙ্গে পারবনা। |
পরিহাস! এতদিনে পাওয়া গেল বামেদের ছড়া! দেয়ালেতে লিখে পড়েছে হাত-কড়া! কবিদের এই ঘোর আকালের দিনে, বামেদের এ কি হাল ক্ষমতার বিনে। পরিবর্তন বুঝি হোলো কমপ্লিট। রাজা আজ প্রজা হয়ে এ কি খিটমিট? পুরোপুরি উলটেছে বুঝি দেশটা! এতকাল-শাসকের কেলো, কেস্ টা! সেই সব বুদ্ধির জীবি যারা ছিল, “পরিবর্তন চাই” যারা বলেছিল--- মুখ লুকাবার কোরোনাকো চেষ্টা, তাওয়া থেকে তন্দুরে আজ দেশটা। তিন-ফলা বাতি দিয়ে শুরু লাফ-ঝাঁপ! সারদাতে বোমা ফেটে “পুকুরটা” সাফ্! সিঙ্গুরের তাপসীর কে বা রাখে খোঁজ, নন্দীগ্রামে আজো চোদ্দো নিখোঁজ! কারা যেন বলেছিল দেবে প্রতিকার? গণতন্ত্র এনে দেবে অধিকার? (আজ) প্রশ্ন করলেই সোজা হবে জেল! কার্টুন আঁকলেই শুরু হবে খেল! কেন চেয়েছিল সবে পরিবর্তন? দুষ্ট কবিও ছিল তার একজন। লোকমাঝে সেও আজ হাসির খোরাক! মুখ তারও পুড়ে মিশে গিয়ে আজ খাক্! ২৯.০৪.২০১৪ |
বিচিত্র এই বৈপরীত্য ভোগবাদী লুটেরা, রাষ্ট্রীয় বুটেরা, বাজায় বাঁশি; আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি! |
টাকার পাহাড় বক্তৃতা, আর বিবৃতিতে পাঁচ বছরের কাজ, লক্ষপতি লিডারগুলো কৌড়পতি আজ ! ক্যামন করে থরে থরে নোটের তোড়া এলো? ভাবুন এবার, দুর্নীতিতে দেশটা কোথায় গেলো ! |
পলিটিকস পলিটিকস ঘুরছে সারা দেশ পুড়ছে, হায়, গণতন্ত্র! টোটকা মন্ত্র, দামহীন জনতা পুড়বার যন্ত্র!! কতদিন কনতো এইধারা চলবে? দামহীন গুবরে- কতদিন জ্বলবে? |
গুবরে গরীব বাঁচতে যে চাস দু’বেলা খাস তোর কি আছে জোর? গুবরে পোকা গরীব বোকা কি হবে রে তোর? বাঙলা জুড়ে মরবি পুড়ে সিঙ্গেল বা জোড় ! শোন বন্য তোর জন্য গোরস্থান, গোর। |
“মদ গাঁজা চরস বন্ধ তাই কি প্রতিবাদের গন্ধ?” কাটাইয়া সকল দ্বন্দ্ব, কহেন কবি অভিষেক বন্দ্যো! আহা! কি সুন্দর ছন্দ! কাব্যিক তথা মৃদু-মন্দ! যেন, কাব্যাকাশে নতুন চন্দ! পিসির হবেই মন-পসন্দ! কি দিয়া শুঁকিলেন গন্ধ? নাক তো ক্ষমতার দম্ভে বন্ধ! কিছু পূর্বে এমন ছন্দ--- গাহিতেন বামফ্রন্টের বৃন্দ! এখন তারা নাই শ্রীমন্ত ভুগিছেন নির্বাসন দণ্ড! রাজপাট গিয়া লণ্ড-ভণ্ড অতি দম্ভের ফল প্রচণ্ড! দুষ্ট কবি কহে --- হে অভি বন্দ্যো! দেখিয়া শেখে বুদ্ধিমন্ত। সুবুদ্ধিরই যদি হইলো অন্ত, লাভ কি হইয়া হন্ত-দন্ত? . ২২.০৯.২০১৪ প্রথম দু-লাইন ---যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের বিরুদ্ধে আনা শাসকদলের সাংসদের অভিযোগ, তার ফেসবুকের পাতায়! |
মহাবড় নেতা তিনি নাম আরাবুল। অমৃতসমান বাণী, প্রাণ তৃণমূল॥ ছাত্র-ছাত্রীগণ লাগি বুক তাঁর ফাটে। প্রশ্ন যদি হয় কভু কঠিন পরীক্ষাতে॥ নিজের জীবনে বিদ্যা অপ্রসন্ন তাঁর। চান না সে পরিণতি হোক সবাকার॥ পরীক্ষার হলে তাঁর অবাধ বিচরণ। উত্তর বলিয়া দিতে আদেশ-করণ॥ যাদবপুর-কাণ্ডে দেখি জন-জোয়ার পথে। প্রতি-আন্দোলনের দায় তুলি লন মাথে॥ নির্ভেজাল অরাজনৈতিক মিছিল রাজপথে। তৃণমূল, তৃণমূল, শুধু পতাকা নাই হাতে॥ এত তাঁর বুকে প্রেম শিশুদের লাগি। চাচা নেহেরু শুনে লাজে যাবে মুখ ঢাকি॥ দুষ্ট কবি ভণে এই শিশু-দরদীরে। সবে মিলে জয়ধ্বনি দাও এই বীরে॥ . ২২.০৯.২০১৪ |
শারদ প্রার্থনা ২০১৪ এই তো সেদিন পরিবর্তন আনলো জোয়ার মনে, ভাবলো সবে “নিলাজ প্রদর্শন”-টা যাবে থেমে! কী যে ব’লে দু কান ম’লে ডুব দিলো বাংগালি, আড়ালে যা চলতো, এখন চলছে খোলাখুলি! সারদাতে, আগের হাতে, লুকিয়ে তামাক খেতো, দিদিভাইরা এসেই সেসব শেষ করেছে ছুতো! অনাহারে মরছে মানুষ --- খবরেতে লেখে, সে বাংলাই দুগ্গা সাজায় দশ কোটির হীরকে! থীমের পূজোর পোয়াবারো, টাকার খেলায় মেতে। প্রজার উপরী পাওনা --- মুখ্যমন্ত্রী কাটলে ফিতে। নেয় না নালিশ থানায় গেলে, দলের মত্ না পেলে, পুলিশ ব্যস্ত কোটির হীরক পাহাড়া দেবার তালে! এই শরতে দুগ্গা মায়ে দুষ্ট কবি কয়--- লজ্জা দে মা, শরম দে মা, একটু দে মা ভয়॥ . ১.১০.২০১৪ |
মানস গুপ্ত |
নববর্ষের শুভেচ্ছা ১৪২২ আবার নববর্ষ এল পরিবর্তনী বাংলায়। ডিগবাজী খাওয়া বুদ্ধিজীবীরা দিদির আসর সামলায়॥ তিনটি আঁচড় কাটলেই দিদি দশ লাখ টাকা দাম পায়। খাচ্ছে হাওয়া জেলের ভেতর মন্ত্রী সান্ত্রী আমলায়॥ রবিবাবুর শ্রাদ্ধ চলছে চৌমাথা জুড়ে দিন রাত। সত্তরোদ্ধ যুবতীরা খুশী তারাও যে আর নেই বাদ! বামেদের গতে দিদিরও আজকে বিরোধী-শূন্য বাংলা। এমন হাওয়া বুক ভরে নে খোলরে দরজা জানলা॥ এই আনন্দে চোদ্দো শ বাইশ নববর্ষের দিনে--- দুষ্ট কবি প্রীতি শুভেচ্ছা জানায় জনে জনে॥ . ১লা বৈশাখ ১৪২২ (১৫. ০৪. ২০১৫)। |
ইন্টারনেটের ছড়া |
|
পরিবর্তনের পরে কে কোথায় দাঁড়িয়ে কবিতাটি স্থানান্তরিত করা হয়েছে নতুন পাতায়। সেখানে যেতে এখানে ক্লিক্ করিন। আরও পড়ুন সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কবিতার সংগ্রহে, নীচে ক্লিক করে সিঙ্গুরে কে কোথায় দাঁড়িয়ে . . . রচনাকাল ৫/১/২০০৭ - ২৩/৩/২০০৭ নন্দীগ্রামের কে কোথায় দাঁড়িয়ে . . . রচনাকাল ২০.৩.২০০৭ ~ ১.৮.২০০৭ |
ভেতরে মানুষ এক আমার শত্রু যখন আমি, তখন মিত্র বলবো কাকে আমার জন্ম যখন জলে, তখন ভয় কি কাদা-পাঁকে! আমার বিরান গেরস্থালী, আমি নিজেই গোরস্থান আমার জন্মগত দায়ে, আমার আমিই পিছুটান। আমার এক হাঁটুজল কাদা, আমার বাধায় বাঁধা হাত আমার দিনান্ত দিন দেনায়, কিনি করাত কাটা রাত। আমার থালায় বাড়া ভাত, আমি ভাতের পূজাচারী আমার নগদ প্রয়োজনে, বাকী বায়বীয় কান্ডারী আমার পূণ্যি আমার পাপ, আমার পূন্যি পোড়ায় পাপে আমার জন্ম যখন শাপ তখন ভয় করিনা সাপে! |
দেয়ালিকা ৩ |
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে লিখি কথা | আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার স্বাধীনতা || |
এই পাতাটি পাশাপাশি, ডাইনে-বামে স্ক্রল করে! This page scrolls sideways, Left-Right ! |
|