মুক্তিযুদ্ধের গান ও কবিতার দেয়ালিকা
|
|
|
এই পাতাটি পাশাপাশি, ডাইনে-বামে ও কবিতাগুলি উপর-নীচ স্ক্রল করে! This page scrolls sideways < Left - Right >. Poems scroll ^ Up - Down v.
|
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
বাঙলা একাডেমিতে এসে পড়েছিল শেল
আমরাও ঘুরেফিরে দেখলুম তাকে
মৃত এক ধাতুপিণ্ড লোহা বা নিকেল---
আমাদের সকলের স্বাভাবিক উপহাস্য বটে
ভয়ানক তেজে সেটি ঢুকেছিল মার্চের পঁচিশে
দেয়ালেতে গর্ত ফেঁদে পুঁথিপত্র উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে---
পুঁখিতে কি লেখা ছিল তৈমুরের মধ্যুগীয়
বর্বর দস্যুর দল আজকের ভীড়ে যাবে মিশে?
এই সব আমাদের দেখালেন গ্রন্থ-আগারিক
এবং বোঝালেন এক চমৎকার ঘটনা শুনিয়ে :
সে রাতে যা ঘটেছিল --- ভয়ানক --- তবু তারও প্রহসন খানিক,
না হলে ভাঙবে কেন স্প্লিন্টারে ফটো যেটি, ‘কায়েদে আজম’-এ,
অথচ অক্ষত থাকে রবীন্দ্র-রচনাবলী, লালনের গান,
বৌদ্ধ চর্যা, দোহা আর অগ্নিযুগ-চারণের কাজী,
হানাদার শেল, তবু এই সবই পুড়তে গররাজী---
ভাষা ও ধ্বনির তত্ত্ব, শহিদুল্লা সাহেবের অভিধান
বাংলা একাডেমিতে এসে পড়েছিল শেল কবি সিদ্ধেশ্বর সেন। দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তরুণ
সান্যাল সম্পাদিত, পরিচয় পত্রিকার বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ ১৩৭৯ (মে-জুন ১৯৭২) সংখ্যায় প্রকাশিত।
বাঙলা একাডেমিতে এসে ঢুকেছিল আহাম্মক শেল
বর্ধমান হৌসে তার চিহ্ন শুধু উল্টো সাক্ষ্যে রটে
বেকুফ জড়ের পিণ্ড, তৈরি কিসে---লোহা না নিকেল
সে যাহোক, আজ তার প্রভু কোন্ নেশাখোর জুয়াড়ীর ঝোঁকে---
আমাদের সকলের স্বাভাবিক উপহাস্য বটে॥
এপার বাংলার কলকাতায়, ভারতমাতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তীর সামনে, ভারতবর্ষের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।
দিল্লীর গেটওয়ে অফ ইণ্ডিয়াতে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া ভারতীয় সেনার স্মৃতিতে বিগত ৫০ বছর যাবৎ প্রজ্বলিত "অমর জওয়ান জ্যোতি" নামক অনির্বাণ অগ্নিশিখাকে নিভিয়ে দিয়ে, আমাদের ইতিহাস থেকে, মুক্তিযূদ্ধের কালে, ভারত ও বাংলাদেশের মৈত্রী, সহযোগিতা ও ভারতীয় সেনার আত্মবলিদান এবং ইন্দিরা গান্ধীর অবিস্মরণীয় অবদান মুছে ফেলার বর্তমান ভারতের ক্ষমতাসীন সরকারের আপ্রাণ চেষ্টার প্রতিবাদে আমরা এই ছবিটি এখানে তুলে দিলাম।
মোদী সরকার বলছেন যে তাঁরা নাকি ওই অনির্বাণ অগ্নিশিখাটিকে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে অন্যান্য সেনাদের সৌধের অগ্নিশিখার সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছেন। যা আমরা হাস্যকর মনে করি।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সারা ভারত তথা এপার বাংলায়, দেশের শাসকদলের ছড়ানো বিদ্বেষ-বিষে বুঁদ হয়ে থাকা নাগরিক সমাজ ও বিরোধী দলগুলি থেকে এই সিদ্ধান্তের কোনো জোরালো প্রতিবাদ চোখে পড়ে নি।
|
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
আগুন জেলে ঘর জ্বালানো
গ্রাম জ্বালানো
খুবই সহজ,
বুলেট ছুঁড়ে বুদ্ধিজীবী ছাত্র মারা
কৃষক বণিক দোকানী আর মজুর মারা
ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ মারা
খুবই সহজ।
আগুন এবং বুলেট এবং নাপাম এবং
মাইন এবং ইত্যাদি সব
ঘর জ্বালাবার
মানুষ মারার
কায়দা কানুন
ফন্দি ফিকির
প্রয়োগ বিধি
সূত্রধারী প্রভুর কাছে শিক্ষামাফিক হুক্কাহুয়া
পরম ভাবে।
সহজ বলেই
বাঙলাদেশে মানুষ মরে
সহজ বলেই
বাঙলাদেশে আগুন জ্বলে।
সহজ নয় কবি মোহাম্মদ মনিরুজ্জমান। দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তরুণ সান্যাল সম্পাদিত, পরিচয় পত্রিকার বৈশাখ-
জ্যৈষ্ঠ ১৩৭৯ (মে-জুন ১৯৭২) সংখ্যায় প্রকাশিত।
শুধুই কি আর আগুন জ্বলে
মানুষ মরে?
ঘর জ্বালালে ভস্ম থাকে,
স্মৃতি থাকে,
ভম্মচাপা বারুদ থাকে,
ছুঁড়লে বুলেট মানুষ মরে স্বপ্ন থাকে.
বধ্যভূমির সাক্ষী থাকে
মৃতের লাশের স্মৃতি থাকে,
স্বপ্ন থাকে, বাণী থাকে ;
সহজ্জে সেই মানুষ মারার
ঘর জ্বালাবার
সহজ কাজে মত্ত হলে
বাঙলাদেশে আগুন জ্বলে
মানুষ মরে
বাঙলাদেশে অবশেষে
অত্যাচারী শত্রু মরে ;
প্রিয়জনের লাশের শপথ
পোড়াঘরের ভিটের শপথ
অস্ত্রহাতে বাঙালিরা বাঙলাদেশে
শক্ত রোখে,
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
১. ঠিকানা
যেন কারা টা-টা শব্দ
উপহার দিয়ে
গ্রীষ্মের ছুটিতে
চলে গেল শৈলনিবাসে।
মাঝে মধ্যে ছুটিছাটায়
আমারও
কখনো কোথাও
বেরিয়ে পড়তে সাধ যায়
কিন্তু হায় রেস্তটা কোথায়?
ঘরে ব’সে
চুপ চাপ
তাইতো করছি পাঠ
ভ্রমণকাহিনী।
হা কপাল
যে গেল দূরে
তার ঠিকানাটা
লিখে তো রাখি নি॥
বাংলাদেশ, তোমার মুখ
আমার আশৈশব
প্রার্থনার একান্ত সঙ্গী
বেঁচে থাকার পরম ইচ্ছায়
তোমার বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে
আমি কেমন নিবিড়
যেন সব প্রেমে টেনে নেই
তোমার দীর্ঘকায় শরীর
আমার শরীরে বাংলাদেশ,
তোমার সূক্ষ্ম ভালোবাসার শিল্পসম্মত ছাপ
হৃদয়ের উজ্জ্বল প্রকোষ্ঠে অন্তরঙ্গ সখার মতো ঠায়
নিঃশব্দে ঝুলে আছো প্রগাঢ় বিশ্বাস নিয়ে
তোমার আদিগন্ত সবুজ চিৎকারে ছুটে যাই
তুলে ধরি স্ফিংসের মতো শক্ত সবল বাহু
রক্ষা করি প্রতিটি রোম
ছুঁড়ে ফেলি গন্ধযুক্ত আবর্জনা
গভীরতম ড্রেনে, গর্তে
জর্নাল কবি কায়সুল হক। দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তরুণ সান্যাল সম্পাদিত,
পরিচয় পত্রিকার জুলাই ১৯৭২ সংখ্যায় প্রকাশিত।
বাংলাদেশ তোমার মুখ কবি দাউদ হায়দার। শিল্পী সুমন্ত গুপ্ত এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি
সৌজন্যে Sumanta Gupta's Diary YouTube Channel । কবিতাটি শুনে লেখা, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি মার্জনা করবেন।
২, মার্চ : ১৯৭১, স্মৃতিচারণা
[ মনজুরুল ইসলাম সহমর্মীষু ]
কি হয় কি হয়
এই ভাবনায়
সারা রাত
আমারও হয় নি ঘুম।
বিছানাটা ছেড়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছি
অনেকক্ষণ অনেকক্ষণ!
আর দেখি, সকাল বেলায়
শহরের গলা টিপে
ঘুরে বেড়াচ্ছে মিলিটারির লরি।
চতুর্দিকে খাকি রঙের সমারোহ ;
আর এই খাকি-রঙা রোদ
কড়া পাহারায়
যেন ধ'রে রেখেছে আমাকে।
আমার কেবলি মনে হচ্ছে****
বাঙলাদেশের সবুজ পটে
সূর্য ওঠে,
সহজে নয়,
লক্ষ শহীদ ভাইয়ের গাঢ়
রক্ত-স্নানের দুরন্ত অন্তিমে।
বাংলাদেশ, তোমার কল্যাণী মুখের রেখা
আমার আনন্দে কিংবা প্রেমে
উধাও হয়নি কোনো জটিল অন্ধকারে
অথবা এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের গহ্বরে
বাংলাদেশ, দ্যাখো তোমার সমস্ত ভালোবাসায়
আমার ভালোবাসা একাকার হয়ে মিশে আছে
কেমন নিবিড় অন্তরঙ্গতায়।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
স্মৃতি কি সহজিয়া গান ?
হৃদয়ে শুয়ে থাকা
আদুল অনুভব ?
হঠাৎ লাফিয়ে কখনও বিদ্যুৎ হয়ে যায় ?
কিম্বা স্মৃতি কি নীলবর্ণ পাখি কোনো ?
দীঘল পুচ্ছ শোভিত হরবোলা ?
যখন তখন যাকে ঢেউ-বোলা আদর মাখাই।
কী জানি কী হবে এ স্মৃতি?
বহুদিন তাকে আর ডেকেও পাই না।
আমার বুকের ভেতর এখন কেবলই হাহাকার
এবং হৃৎপিণ্ড যেন এক প্রবল পালকপোড়া পাখী,
থেকে থেকে শুধু নির্মম চিৎকারে ওঠে ডেকে --
মু-নি-র মু-নি-র,
জহির, রায়হান, আখতার
সঙ্গীরা আমার,
তোরা সব কোথায় পালালি?
তারপর আরও কাঁদে ---
মশিউর রহমান মশিউর রহমান,
আমার সমস্ত হাহাকার জোড়া সেই পালকপোড়া পাখী
কখনও বলে না আর 'বউ কথা কও', 'বউ কথা কও'।
স্মৃতি কবি হাসান হাফিজুর রহমান। শিল্পী সাকিলা মতিন মৃদুল এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে
3p Production YouTube Channel । এই কবিতাটি পাঠের অডিও রেকর্ডিং শুনে শুনে লেখা হয়েছে, তাই অনিচ্ছাকৃত
ভুল-ত্রুটি অনুগ্রহ করে মার্জনা করে দেবেন।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
বাংলাদেশ কি আসলেই শোকের দুঃখের না যুদ্ধের?
তাহলে আমার মা কোথায়
কোথায় বর্ষিয়ান পিতা
আমার মেয়ে
গর্ভিণী স্ত্রী
ভিটে ঘর-বাড়ি
বলতে পারেন বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষ?
হাঁ আমি জানি, আপনার পারবেন
পারবেন ভেজা-ভেজা কন্ঠে
চোখে জড়িয়ে রুমাল একজন যথার্থ প্রেমিকের মতো
মাটিতে পা ঠেকিয়ে
ঠায় রোদ্দুরে কিংবা প্রবল বর্ষণে
হাঁ, আপনারা পারবেন : পারবেন…
আমার মা ; সেই মা
যে আমাকে না খেয়ে কোলে পিঠে মানুষ করেছেন
চোখের আড়াল হলেই তন্নতন্ন কোরে খুঁজেছেন
রোদ বৃষ্টিতে আঁচলে ঢেকেছেন
গেয়েছেন ঘুম পাড়ানিয়া
পরম আদরে চুমু দিয়েছেন সকাল বিকাল
আন্দোলন ; বারবার ফিরে আসে বাংলাদেশে যুদ্ধের বেশে
কবি দাউদ হায়দার। রচনাকাল ৮ অক্টোবর ১৯৭১। কবির “জন্মই আমার আজন্ম পাপ” কাব্যগ্রন্থের কবিতা।
কবিতার কথা https://www.ebanglalibrary.com/ ।
পাঠিয়েছেন হাত পা ধুইয়ে
আঁচড়িয়ে চুল
আয়নায় দেখিয়ে মুখ
খেলার সাথীদের কাছে
সেই মা ; যে আমার আবদারে বিরক্ত হয়নি কখনো
বরং কপালে মাথায় আশীর্বাদের হাত রেখে
বুঝিয়েছেন ময়নার মতোন
সেই মা এখন কোথায়
যিনি রাত্রিকালে ঘুমিয়ে পড়ার আগে দেখে যেতেন পুনরায়?
পিতা, সেই বর্ষিয়ান পিতা?
যে আমাকে কাঁধে নিয়ে ঘুরতেন এমেলা ওমেলায়
কিনে দিতেন টিনের বাঁশি কাঠের ঘোড়া লাটাই সুতো
রঙীন ঘুড়ি
আমার ইচ্ছেমতো পোষাক-আশাক!
বোঝাতেন খেলাচ্ছলে সংসারের ঝামেলা
বিশাল জমিজমার টুকরো টুকরো নথিপত্র
চাইতেন একটা লাল টুকটুকে বৌ-মা
যে তাকে যখন তখন
জায়নামাজ তসবী আর পানের বাসন এগিয়ে দেবে
সহজেই ডাকবে ছেলের চেয়েও গভীর ভালবাসায়
সেই পিতা, যিনি আমাকে নিয়ে স্বপ্নে দেখতেন বিভিন্ন প্রহরে!
তিনি এখন কোথায়?
কোথাইবা আমার সেই পাঁচ বছরের মেয়ে?
যে গলা জড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকত
হঠাৎ কোরে ধরতে গেলে দৌড়ে যেত
ভেঁঙচি কাটত হেসে খেলে
দোলায় চেপে হারিয়ে যেত সাতসমুদ্দুর তেরনদী
অফিস গেলে বায়না ধরতো পতুল আনতে
বিয়ে দিতো যখন তখন ছেলে মেয়ের
বাইরে থেকে ফিরে এলেই হাত রাখত পকেট মাঝে
লজেঞ্চুষের থলি পেলেই চুমু দিতো ঠোঁটের উপর
মাদুর পেতে খেতে গেলেই ঠাঁই নিতে সে মধ্যিখানে
সেই মেয়েটি কোথায় গেল?
কোথায় গেল গর্ভিণী সেই স্ত্রী বা?
এক পা হাঁটতে গেলেই পেটের ব্যাথায় পড়ে যেত
খাটের উপর শুয়ে থাকত অতিকষ্টে
ঘর গোছাতে মন বসেনা
বাটনা বাটে পাড়ার লোকে
চেয়ে থাকত একটি সময়
কেমন করে জন্ম নেবে একটি ছেলে—
বাংলাদেশে!
সবতো আমার চলেই গেলো
কোথায় থাকি এখন আমি
ঘর-বাড়ি তো পুড়েই গেছে
পোড়া ভিটেয় গাছ হয়েছে হাজার রকম
হাঁটতে গেলেও ভয় লাগে যে
পায়ে বাধে মেয়ের শরীর পিতার হাত মায়ের চুল
ছিদ্র করা গর্ভিণী এক স্ত্রীর বুক
এদিকে আবার হঠাৎ কোরে কানের মধ্যে ঢুকেও পড়ে
“দাঁড়াও তুমি—
বাংলাদেশে যুদ্ধ আসে এমনি কোরেই
পরক্ষণেই জিতে যাবে অনায়াসে
আমরা জানি ; তুমিও জানো!”
৮।১০।৭১
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
লক্ষ মানুষ বিলিয়ে দিয়ে
তোমায় পেলুম একটি নামে—
স্বাধীনতা
তোমার শরীর রক্তে মাখা –
চোখের জলে সিনান কোরে উঠে এলে রণপায়ে ; দীপ্ত চোখে
স্টেন্গান ফেলে দিয়ে বুকের ভেতর জড়িয়ে নিয়ে
চুম দিলাম আদর কোরে
পাড়ার লোকে দেখতে এলো মালা হাতে
ভুলে গেল দুঃখাবলী, কঠিন শোক, অত্যাচারী রাজার কথা—-
এখন আমি তোমায় নিয়ে নেচে বেড়াই প্রাণের সুখে
সামনে আমার দাঁড়িয়ে তুমি হাসতে থাকো ভীষণ জোরে
আমার মেয়ে মাটির ব্যকে পা ঠেকিয়ে
কাঁদতে থাকে কেমন কোরে–
দ্যাখো তুমি
মায়ের প্রেম হারিয়ে এখোন তাকিয়ে আছে বোনের দিকে–
আসবে ফিরে
ভায়ের কথা স্মরণ কোরে শুধায় শুধু এই পিতাকে
“আসবে কখোন যুদ্ধ থেকে–বাংলাদেশে”?
লক্ষ মানুষ হারিয়ে আমি তোমায় পেলুম তোমায় পেলুম
তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাই আমি পরম সুখে—
তুমি এলে রণপায়ে, দীপ্ত চোখে ; স্বাধীনতা!
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
এদেশ এখন সৈন্য কবলিত
এমাটি এখন রক্তকিংশুক
এই আমার দেশ। আমার স্বদেশে
নেমেছে সান্ত্রী। সান্ত্রীর বুটের আওয়াজে
তীক্ষ্ণ যাত্রী।
এই আমার দেশ। আমার স্বদেশ
মিছিলে-মৃত্যুতে উজ্জ্বল।
এই আমার আকাশ। আকাশ
বজ্রগর্ভে আলোকিত। বাতাস
বারুদগন্ধে ভরপুর।
এই আমার দেশ। আমার স্বদেশ
মিছিলে-মৃত্যুতে উজ্জ্বল।
আমার এই দেশ কবি দাউদ হায়দার। রচনাকাল ২৮শে
সেপ্টেম্বর ১৯৭২। কবির “যে দেশে সবাই অন্ধ” (১৯৮৪) কাব্যগ্রন্থের
কবিতা। কবিতার কথা https://www.ebanglalibrary.com/ ।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
এই ঘাস এই মাটির বুকে আস্তে করে পা রেখো
এখানে আমার ভাই বরকত সালাম আর আসাদেরা শুয়ে আছে
ওরা ব্যথা পাবে, ডুকরে কেঁদে উঠবে।
এই নরম মাটিতে আস্তে করে পা ফেলো
আমার ভায়ের রক্তে এ বাঙলা এখনও ভেজা, স্যাঁতসেঁতে
এ মাটি রাত্রিদিন কেঁদে কেঁদে প্রার্থনা করে বিধাতার কাছে
আমার মায়ের ভাষা, মুখ থেকে
কেড়ে নিতে দেবো না, দেবো না।
.
এই মাটির বুকে কিংবা বাতাসে কান পেতে শোনো
রাত্রির বেহালার করুণ সুরের মতো নীরবতা কাঁদছে যেন,
আর বুলেটের ঘায়ে কোথাও রক্ত ঝরছে।
আর কোথাও একটু রা শব্দ নেই, শুধু
জননী পাখিগুলো কাঁদছে।
.
চেয়ে দেখো, রাজপথে দুরন্ত রক্তের স্রোত,
পুলিশের লাশগাড়ির অক্লান্ত মহড়া ;
মা আমার বস্তির কুঁড়েঘর থেকে শাড়ির আচলে মুখ ঢেকে
চেয়ে দেখছেন তার আদুরে ছেলেরাই
বার বার হৃত অধিকার ফেরাবার সংগ্রামে
মিশে যায় এ মাটির বুকে---- কেমন হাসিমুখে।
.
এই ঘাস এই মাটির বুকে পা রেখো আস্তে ক’রে
এখানে আমার ক’টি ভাই রক্তাক্ত শরীরে শুয়ে আছে।
এই যদি স্মৃতি হয়,
তবে স্মৃতি কিছু অপহৃত নাম
আমার হৃদয়ে এখন।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
কাঠবিড়ালির মতো ত্রস্ত নৈপুণ্যে আমরা নৌকা থেকে লাফিয়ে পড়েছিলাম,
তখন কৃষ্ণা একাদশীর ডাইনী রাত ছিলো গর্ভবতী, আর তার কিছুক্ষণ পর
ষাঁড়ের বাঁকানো শিঙ নিয়ে চাঁদ তার হাউডআউট থেকে বেরিয়ে এসেছিলো,
আকাশ-এরিনার অন্য কোণায় তখন মেঘ নামক এক যোদ্ধা অপেক্ষমান।
ঐ রাতে চাঁদ আমাদের সুহৃদ ছিলো না, আমরা অন্ধকারকে চিনেছিলাম
আর চরের নরোম মাটির সব মুথাঘাসে আমাদের মস্তকগুলো ছিলো সমর্পিত।
আমরা সূর্য নামক এক স্বরাট সম্রাটের বন্দনা গাইতে গাইতে
ঐ মরা চাঁদের দিকে পিঠ রেখে শুয়ে পড়েছিলাম মাটিতে
একসঙ্গে আঠারোজন উত্তাল যুবক। আমাদের হাল্কা অস্ত্রগুলো
আর শরীরের সকল শিরা তখন উন্মুখ একটি প্রহরের অপেক্ষায়-
শুরু হবে শিরা ও শস্ত্রের মত্ত যুগলবন্দি, তার আগে
আকাশ বেঁধে নিচ্ছে সারেঙ্গির তার, একসারি তারার দর্শকবৃন্দ
রুদ্ধশ্বাস, তবলায় প্রস্তুত হয়ে আছে আষাঢ়ের ডুবডুব নদী...
যেন কোন অদৃশ্য গুণীর মসত্মক হেলন মাত্র একসাথে আকাশে উড়ে যাবে
সুরের সহস্র গমক। আমাদের অস্ত্রগুলো তাক করা, আমাদের
হৃদয়গুলো স্থির অচঞ্চল মৎসধ্যানী সারসের মতো, আমাদের
শিরায় শিরায় শত্রু হননের মৃদঙ্গ সত্মব্ধতার পাথর হয়ে আছে।
যেন এই মাত্র আকাশ আর মাটিতে উঠবে এমন মহৎ সঙ্গীত
যার জন্য উন্মুখ হয়ে সারারাত, দীর্ঘ ক্রন্দনের মতো রাত জেগে
বসে আছে সমসত্ম প্রকৃতি, নদী গাছ, মাটির কুটির আর কৃষকের
পাঁজরা ও কপাল।
আমরা কাঠবিড়ালির মতো ত্রস্ত আনন্দে লাফিয়ে পড়েছিলাম চরের মাটিতে,
আকাশ ছাড়া আমাদের আর কোন শিরস্ত্রাণ ছিল না,
মায়ের ভালোবাসা ছাড়া বুকের দু'ইঞ্চি নিচে ধুকপুক আমাদের
হৃদয়গুলোর জন্য ছিল না অন্য কোন রক্ষাধর্ম, আমাদের পায়ের নিচে
ঘাস ছাড়া অন্য কোন পাদুকা ছিল না।
কেননা আমরা তখন গুম্ফায় পায়চারি করা কোনো সন্ত বৌদ্ধের নগ্নপদ মহিমা,
আমরা তখন আকাশভেদকারী মস্তকে তারার উদ্ভাসগুলো গেঁথে নিয়েছি,
আর আমাদের হৃদয়ে তখন শত্রুকে ঘৃণা করার মতো আতীব্র সুখ।
আমরা সারস পাখির মতো অহংকারী মুখ, মাটিতে নত করেছিলাম,
সামনে একটি ইস্পাতের কঠিন ব্রিজ, আমাদের সকল লক্ষ্য তখন
. যেখানে কেন্দ্রীভূত
আমাদের পশ্চাতে স্মৃতির মতো মায়ের কান্নাভেজা চোখ
বোনের ‘ভাইজান ভালোয় ভালোয় ফিরে এসো' প্রেমিকার নীরব চোখে
এইমাত্র উড়ে যাবে এমন পাখিকে শেষ চুম্বনের মতো এক আকাশ মমতা।
হঠাৎ আমরা দেখলাম আমাদের সামনে কোন ব্রিজ নেই, ইস্পাতের
কঠিন বেড়ি নেই যাকে আমরা এখনই ভাঙবো, এমনকি নয় শত্রুরাও...
আমাদের সামনে কৃষ্ণপক্ষের ওপারে, অন্ধকার ব্রিজের ওপারে তখন
একটি মাত্র মুখ, সে আমাদের মা, প্রেমিকা, মাতৃভূমি না স্বাধীনতা
তার বিচারে আমরা অক্ষম ছিলাম।
আর তখনই, ঐ শিঙ-বাঁকা চাঁদের নিচে, অন্ধকার তারায় তারায় খচিত
সভাস্থলে সময় হলো, সেই মুগ্ধ প্রহর যখন ওস্তাদ তার
মাথাটুকু কিঞ্চিত হেলাবেন, আর আমাদের শিরায় শিরায়
রুদ্ধ ঝর্ণার ধারা অস্ত্রের ধাতব মুখে পুষ্পিত উল্লাসের মতো
আকাশ ও মাটিতে নামাবে আঠারো কোরাসের অঝোর বৃষ্টি,
ব্রিজের ইস্পাতের বুক উদ্দাম আনন্দে ধুলো হবে, নক্ষত্রের শিরায় শিরায়
. বেজে উঠবে ফুলকির নুপুর।
জীবন ও মৃত্যুর মাঝখানে মুহূর্তের জন্য দুলে উঠলো ব্রিজ,
যেন কেউ আমাদের শিহরিত যৌবন টাঙিয়ে দিয়েছে কালো দিগন্তের
. দেয়ালে,
আর আমরা শীতের রাতে সূর্যের প্রার্থনাস্তবগানরত কৃষকের মতো
আমাদের মুখগুলো মাটির কাছাকাছি নামালাম, মমতার বিন্দু বিন্দু রক্তে
চরের মাটিতে জ্বলন্ত ফুল ফোটানোর ঠিক আগ মুহূর্তে, কি আশ্চর্য,
আমাদের চিবুকগুলো ভয়ে নয়, আসন্ন মৃত্যুর সন্ত্রাসে নয়,
ভালোবাসার মতো এক আর্দ্র, কোমল আবেগে ডুকরে কেঁদে উঠলো।
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
কবিতার নির্বাচিত অংশ---
আমি একদিন দেখলাম
বাঙলাদেশের আকাশ ছেয়ে বৃষ্টি নামলো
শ্রাবণের অন্ধকার থেকে আষাঢ়ের মোহাবিষ্ট অপরাহ্ন থেকে
রবীন্দ্রসঙ্গীতের মতো অজস্র সঘন গহন ধ্বনি
উন্মোথিত উচ্ছ্বসিত আনন্দে আবেগে মর্মরিত
ছড়িয়ে পড়লো পদ্মা মেঘনা তিতাসে হাওয়ার মতো
উদাস করা বাঙলাদেশের মানুষের হৃদয়ের অন্ধকারে
রক্ত কণিকায়
বাঙলা ভাষা মা আমার কবি ফজল শাহাবুদ্দিন।
শিল্পী মীর বরকত এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে Mir Borkat
YouTube Channel । কবির “অকাঙ্ক্ষিত অসুন্দর” (১৯৭৫) কাব্যগ্রন্থের
কবিতা। কবিতাটি শুনে লেখা, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি মার্জনা করবেন।
মাঝির হুকো থেকে পরিচ্ছন্ন নিঃস্বাসে
কৃষকের বলিষ্ঠ হাত থেকে লাঙলের ফলায় ফলায়
পল্লীবধূর স্বপ্নাঞ্জন মাখা দৃষ্টি থেকে
লেবু তলায় করমচা বনে লাউয়ের মাচায়
ছড়িয়ে পড়লো রবীন্দ্র সঙ্গীতের মতো শ্রাবণের ধারা
আষাঢ়ের ধ্বনি বিশাল অস্থির গুরুগুর নিবিড় তিমির
বাঙলাদেশের চিত্ত নেচে উঠলো
ময়ূরের মতো শতবর্ণের উচ্ছ্বাসে
আমাদের ক্ষুধায় তৃষ্ণায় কর্মে কোলাহলে ক্লান্তিতে
আকাঙ্খায় সেই অনাদিকালের বৃষ্টি
নতুন গানে গানে উন্মাদ হলো
আমি একদিন দেখলাম
বাঙলাদেশের আকাশ ছেয়ে বৃষ্টি নামলো
হে আমার আত্মার ভাষা
বাঙলা ভাষা আমার
তোমার কাছে আমি চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবো
তুমি না থাকলে মায়ের মতো প্রকৃতির
এই অলৌকিক উন্মত্ততার কথা
আমি কোনোদিন লিপিবদ্ধ করতে পারতাম না
আমি একদিন অকস্মাৎ অনুভব করলাম
আমার হৃদয়ে এক অজানা অচেনা বিস্ময়কর নদী
ছল ছল করে উঠলো
গোপন ভালোবাসার মতোন
ফুলফোটার রহস্যময় মুহূর্তের মতো
প্রথম স্পর্শে থরথর করে কেঁপে ওঠার অভিজ্ঞতার মতো
এই নদী আমার অন্ধকারে
শুধু কল্লোলিত হতে থাকলো
নিঃস্বাসে নিঃশ্বাসে মুখর হতে থাকলো
আর ছড়িয়ে দিতে থাকলো আমার সত্তায়
এক অলৌকিক অচিন্তনীয় অধীর ইচ্ছের আগুন
আমার ইচ্ছে হলো
নক্ষত্রলোকের রূপসী জ্যোতিকণাকে
দুহাতে লুঠ করে এনে ছড়িয়ে দিই তোমার শরীরে
ইচ্ছে হলো আমার আদিম কুৎসিত বাসনার উচ্ছৃঙ্খলতাকে
চিরদিনের অবিনশ্বর সুস্থতায় অসংকোচে ছড়িয়ে দিই
তোমাদের আনন্দে আর সৌন্দর্য চেতনায়
ইচ্ছে হলো পৃথিবীটাকে একটা কমলা লেবুর মতো
একটা সম্পন্ন ফলের মতো
এক টুকরো তাজা মাংসের মতো
আমার হাতের মুঠোয় নিয়ে খেলা করি
আমার ভেতরের সেই ছল ছল করা নদী
আমাকে এক শাণিত উজ্জীবিত পুরুষে রূপান্তরিত করলো
আমি ঈশ্বরের মতো এক স্বয়ম্ভূ অস্তীত্বে
নতুন করে বেঁচে উঠলাম
আমার মধ্যে চিরকালই সেই শব্দে অনুভবে
অস্থিরতার পৃথিবী প্রকাশিত হওয়ার যন্ত্রণায়
হাজার হাজার পাখীর মতো এক সঙ্গে চিৎকার করে উঠলো
হে আমার বাংলা ভাষা মা আমার
তোমার কাছে আমি আমৃত্যু অনন্তকাল কৃতজ্ঞ থাকবো
তুমি না থাকলে
আমার এই রহস্যময় নদীর কথা
স্বয়ম্ভূ যন্ত্রণার কথা
আমি কোনোদিন পৃথিবীর কাছে রেখে যেতে পারতাম না
আমি একদিন দেখলাম
এদেশের হাজার হাজার তরুণ
উৎক্ষিপ্ত স্ফূলিঙ্গের মতন পথে পথে নেমে এসেছে
দুপুরের রৌদ্রোজ্জ্বল পীচ ঢালা পথে
সেই তারুণ্যের সমুদ্রে
আমিও মিশে গেলাম সেদিন
আমরা সবাই মিশে গেলাম মাগো
সেই সমুদ্রের তরঙ্গে
তোমার মুখের ভাষাকে বাঁচাবো বলে
রমনার কৃষ্ণচূড়ার লাল পথ
প্রথম ফাল্গুনীর উষ্ণ বাতাসে ছোঁওয়া আকাশ
তোমার জয়ধ্বনিতে মুখর হলো
বরকত সালাম রফিক
নিজের তাজা রক্তে তোমার ঋণ শোধ করে গেলো
হে আমার বাঙলা ভাষা মা আমার
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
এই অক্ষর যেন নির্ঝর ছুটে চলে অবিরাম যেন কিছু তারা দিচ্ছে পাহারা আকাশেতে লিখে নাম। অক্ষরগুলি চায় মুখ ভুলি অকাতরে জাগে গান, শিখি ভার কাছে অজানা যা আছে আনন্দে ভরে প্রাণ ;
এই অক্ষরে মাকে মনে পড়ে মন হয়ে যায় নদী, আর কিছু তাই পাই বা না পাই চিঠিখানা পাই যদি। সেই উপমায় মন ভরে যায় দেখি অপরূপ ছবি --- সকাল দুপুর সুরের নূপুর বাজায় উদাস কবি।
এই এক্ষরে ডাক নাম ধরে ডাক দেয় বুঝি কেউ, স্বপ্নের মতো রূপকথা যতো অন্তরে তোলে ঢেউ।
|
এই অক্ষর আত্মীয়-পর সকলেরে কাছে টানে, এই প্রিয় ভাষা বুকে দেয় আশা বিমোহিত করে গানে।
এই অক্ষরে কঠিন পাথরে শিললিপি লেখা হয়, এই ভাষা দিয়ে গান লিখে নিয়ে যুদ্ধ করেছি জয়।
|
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
আমার সুস্থতা,
বেঁচে থাকা নিয়ে তোমার সন্দেহ
একদিন ঠিক কেটে যাবে।
আমার অদ্ভুত সব জীবনযাপন,
মিছিল, স্লোগান কিংবা বেআইনি অস্ত্র
ইত্যকার অনিবার্য পরিণতি ভেবে ভেবে
তোমার অনিদ্রা, অহেতুক উত্তেজনা,
অশ্রুভেজা চিঠি
এক সময় অজান্তে
সব কিছু স্বাভাবিক হবে।
আমি জানি, তোমার অজস্র চিঠি,
হাজারো প্রশ্নের সমাধান
তুমি অবশ্যই পেয়ে যাবে অকস্মাৎ।
অকম্পিত হাতে ছুঁড়ে দেবে
প্রতীক্ষার সব প্রিয় ফুল,
রুপোলি দহন।
ব্যস্ততায় মুছে নেবে ভেজা চোখ,
অনিদ্রার শেষ চিহ্নটুকু।
এরপর অনায়াসে তুমি
সঠিক গন্তব্য চিনে নেবে,
ব্যতিক্রমহীন খুঁজে নেবে নিজস্ব ঠিকানা।
কী জবাব দেব কবি মিনার মনসুর। শিল্পী নাজমুল আহসান এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি
সৌজন্যে Nazmul Ahsan YouTube Channel । কবিতাটি শুনে লেখা, তাই অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি মার্জনা
করবেন।
আর আমি, এই আমি কোন দিকে
কোনখানে
কোথায় দাঁড়াব?
একদিকে অনিশ্চিত জীবনযাপন,
অন্যদিকে জীর্ণ এক ক্ষয়িষ্ণু সমাজ
আমার সম্মুখে প্রতিদিন প্রতিক্ষণ
চক্রান্তের মাকড়শার জাল বোনে।
হাজারো প্রশ্নের বাণ কেবলই বিদ্ধ করে,
কেবলই রক্তাক্ত করে স্মৃতি।
আমি কীভাবে ঠেকাব সব?
বলো, কী জবাব দেব?
মান্যের রাজপথ থেকে সালাম বরকত যদি
রক্তমাখা খামে চিঠি লেখে,
যদি ব্যাকুল জানতে চায়
আমাদের রক্তছাপা
প্রিয় বর্ণমালা দিয়েছি তোমার হাতে,
কোথায় রেখেছ তুমি
ওই স্বর্ণোজ্জ্বল বর্ণমালা?
বলো, আমি কী জবাব দেব?
ছেষট্টির সেই উত্তাল সমুদ্র থেকে
একজন গুলিবিদ্ধ মনু মিঞা
যদি অকস্মাৎ ফুঁসে ওঠে,
আমার তরতাজা খুনে রাঙানো
পতাকা সঁপেছি তোমার হাতে,
কোথায় রেখেছ তুমি ওই
টকটকে লাল সাম্যের পতাকা?
আমি কী জবাব দেব তাকে?
একাত্তরের যোদ্ধারা যদি সিংহের গর্জনে
দশদিক প্রকম্পিত করে তাদের চকচকে
করোটির খামে পাঠায় চরমপত্র,
আমাদের সবটুকু প্রেম,
যৌবনের নিবিড় উষ্ণতা মাখা প্রিয় স্বাধীনতা,
মসজিদ-মন্দির তুল্য সেই সংবিধান
গচ্ছিত রেখেছি তোমার হাতে,
আমাদের সেই প্রেম,
সেই পবিত্র বিশ্বাসগুলো
এখন কোথায়?
কোখায় রেখেছ তুমি?
বলো, আমি কী জবাব দেব?
পঁচাত্তরের উজ্জ্বল মানুষেরা,
মানুষের অধিক সেই সব সাহসেরা,
নারী শিশু যুবকেরা
যদি দেওয়ালের সুদৃশ্য ঝুলন্ত ফ্রেম থেকে
গভীর নিশীথে চুপচাপ নেমে আসে,
দরজায় কড়া নাড়ে
কিংবা মধ্য রাতে
বেতারের নীরবতা ভেঙে গর্জে ওঠে,
আমাদের আদিগন্ত স্বপ্ন ছিল,
স্বপ্নময় চিরদুখী মানুষেরা ছিল,
সেই মানুষেরা এখন কেমন আছে?
সেই উজ্জ্বল স্বপ্নেরা?
আমি কী জবাব দেব তবে?
কী করে জানাব বলো,
এই অক্ষমতা?
এই পাপ?
এই আত্মঘাতী 'যুদ্ধ যুদ্ধ' খেলা?
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
লালসার অস্ত্রাঘাতে চুরমার আমাদের সাবেক পৃথিবীর,
পুঁজিবাদী সমাজের যন্ত্রণা, নিজের অন্তর জ্বালা, উদয়াস্তের কথা,
দিগ্বিজয়, দুঃস্বপ্ন দেশ-দেশের গন্ধ ও দুর্গন্ধের আছড়ে পড়া বারুদসুদ্ধ পঙক্তিমালা।
আমি মানুষের ধড়ের ওপর দেখতে পাচ্ছি নানা জাতির প্রাণীদের মুখচ্ছবি যেমন
ছাগলের ধড় বহন করছে খ্যাতনামা সব পরিচিত মানুষের মুখ। শুয়োরে ধড়ের
ওপর সাজানো আছে বেশ কয়েকজন কবিরও মুখ। কিন্তু মানুষের ধড়ের ওপর
আমি শিকারী কুকুরের মুখ দেখে চমকে থমকে বালিশ খুঁজছি শুয়ে পড়ার জন্য।
আমার ধড়ের ওপর এ কার মস্তক
শতাব্দীর পর শতাব্দী মানবজাতির বহমান ধারাকে যারা বিপর্যস্ত করেছে, যারা
মানুষের পার্শ্ববর্তিনী নারী উদর বিদীর্ণ করেছে, শিশুকে বর্শায় গেঁথে প্লাস্টিক
বোমায় ছিন্ন ভিন্ন করে পশুদের আহার্য করে তুলেছে, তারা যতই এই যুদ্ধকে
অমীমাংসিত রাখার চেষ্টা করুক তাদের ওপর আমি নিক্ষেপ করি আমার ঘৃণা।
কবির ঘৃণা। কলমের ঘৃণা...
আমি উচ্চারণ করি ঘৃণা কবি আল মাহমুদ (১১.৭.১৯৩৬ - ১৫.২.২০১৯)। কবির "বারুদগন্ধী মানুষের
দেশ" কাব্যগ্রন্থের কবিতা।
কবি আল মাহমুদ। ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে রচিত কবির এই কবিতাটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও বাঙালিদের উদ্বুদ্ধ করেছিল।
শুধু মুক্তিযুদ্ধ নয়, ভাষা আন্দোলনেও তিনি ছিলেন একই চরিত্রে উজ্জ্বল। ভাষা আন্দোলনের 'ফেরারি পাখি' বলা হয় আল মাহমুদকে। ১৯৫২
সালে যখন এ আন্দোলন তুঙ্গে, আল মাহমুদ তখন নবম শ্রেণির ছাত্র। অগ্নিস্রাবী, কিন্তু লাবণ্যময় চারটি পঙক্তি লিখেছিলেন ভাষা
আন্দোলনের পক্ষে। জনতাকে নাড়িয়ে দেওয়ার কী দুর্মর শক্তি ছিল পঙক্তিগুলোয়! বিবাড়িয়া থেকে ভাষা আন্দোলন কমিটির প্রচারপত্রে এ
চারটি লাইন হলো প্রকাশিত। তারপর দেশপ্রেমিকরা যেমন উদ্বুদ্ধ হলো, হানাদাররা হলো শঙ্কিত। আল মাহমুদকে খুঁজতে লাগল পাকিস্তান
পুলিশ। ভয়ংকর এক আসামী তিনি। এমন আগুন ছড়ান জনতার মনে, যা তাদেরকে অস্বীকার করতে শেখায় পাকিস্তানি বন্ধন। আল
মাহমুদ; নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া কিশোর, মাতৃভাষার দায় কাঁধে নিয়ে আত্মগোপন করলেন। বহু দিন তাকে বাঁচতে হলো লুকিয়ে লুকিয়ে।
লুকিয়ে লুকিয়ে থাকেন, কিন্তু বাংলা ভাষার পক্ষে ছড়াতে থাকেন প্রাণের প্ররোচনা। ১৯৫৪ সালে কবি আজিজুল হাকিম ও কবি আবদুর
রশিদ ওয়াসেকপুরীর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় একুশে ফেব্রুয়ারির একটি জাতীয় সংকলন। নাম ছিল 'একুশের কবিতা'। ঐতিহাসিক সে
সংকলনে স্থান পায় আল মাহমুদের লাবণ্যময়-অগ্নিস্রাবী এক কবিতা -- ‘যদি পারতাম’! তথ্য সৌজন্য: মুসা আল হাফিজ, আল মাহমুদ ও
মুক্তিযুদ্ধ, প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকা॥
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
ইচ্ছে ছিলো তোমার কাছে ঘুরতে ঘুরতে যাবোই
আমার পুবের হাওয়া
কাল হলো না, আজকে আমার যাবার জন্যে
লাগলো তাড়া
ইচ্ছে ছিলো তোমার কাছে ঘুরতে-ঘুরতে যাবোই
আমার পুবের হাওয়া।
কিন্তু এখন যাবার কথায়
কলম খোঁজে অস্ত্র কোথায়
এবং এখন তোমার পাশে দাঁড়িয়ে-থাকা কুঞ্জলতায়
আকুল চোখ ও মুখের মলিন
আজকো তোমার ভিতর-বাইরে বিষম যুদ্ধ পুবের হাওয়া॥
ভিতর-বাইরে বিষম যুদ্ধ কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় (২৬.১১.১৯৩৩ -
২৩.৩.১৯৯৫)। কবির “এই আমি, যে পাথরে” (আগষ্ট ১৯৭৭) কাব্যগ্রন্থের কবিতা।
আমরা কৃতজ্ঞ চলচ্চিত্র সম্পাদক কোরক মিশ্রর কাছে কারণ তিনি এই কবিতাটি
আমাদের পাঠিয়েচেন। তাঁর যোগাযোগের চলভাষ +৯১ ৯৮৭৪৩৮৪৫২০।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
একা থাকতে পারছি না
একা হলেই রক্তমাখা নিহত ফুলগুলো দুলে ওঠে
অন্ধকার ছিঁড়ে দুলছে ওই আহত নিহত ফুলগুলি
মাটি ঢেকে যাচ্ছে শুকনো ফুলে বীজে
আর দ্যাখো : মুহূর্তেই জ্বলে উঠছে রক্তচাপা শ্মশানচাপা
আর ঘুমুতে পারছি না
ফুলগুলি হাত বাড়িয়ে ধরতে চায় মুক্তি
কাঁটাতার ছিঁড়ে আছড়ে পড়ছে বাতাসে
ছিঁড়ে যাচ্ছে পাপড়ি আর
ঝরে পড়ছে রক্তরাঙা ফুলের রেণু
ওখানে কে? ওই অন্ধকারে কার হিংস্র থাবা?
ওরা শয়তান, নখে ওদের উদ্যত মৃত্যু
ওরা উপহার দেয় মরণ আর বরণ করে ঘৃণা
ওরা উপহার দেয় মুক্তি আর বরণ করে অভিশাপ
আমি ওই ফুলগুলির কাছে যাবো আর সরিয়ে দেবো অন্ধকার
ঘাতকের মুখে ছুঁড়ে দেবো পাপড়ি আর রেণুর দাহ
ঝলসে যাবে ওদের মুখ ওই রক্তপিপাসুদের ঘৃণ্য দৃষ্টি
দুলে উঠবে হাওয়ায় প্রজ্বলন্ত রক্তচাপা ওই শ্মশান চাপা
আমিও ফুল হয়ে দুলতে থাকব ওদের পাশে
আমৃত্যু ওই জ্বলন্ত ফুলেদের পাশে আনন্দে॥
আমি ওই ফুলগুলির কাছে যাবো কবি পবিত্র মুখোপাধ্যায় (১২.১১.১৯৪০ -
৯.৪.২০২১)। কবির “এই আমি, যে পাথরে” (আগষ্ট ১৯৭৭) কাব্যগ্রন্থের কবিতা। আমরা কৃতজ্ঞ
চলচ্চিত্র সম্পাদক কোরক মিশ্রর কাছে কারণ তিনি এই কবিতাটি আমাদের পাঠিয়েছেন। তাঁর
যোগাযোগের চলভাষ +৯১ ৯৮৭৪৩৮৪৫২০।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
আগুন জ্বলে উঠলো হঠাৎ, সেই আগুনে পুড়তে
লক্ষ লক্ষ মানুষ এসে দাঁড়ালো, বুক খুঁড়তে
এলো অনেক অজস্র সব মানুষমারা অস্ত্র
বাংলাদেশের বাতাস বহে দুঃখ বারুদগন্ধে !
তার বদলে ছিলো যে তার রাজার কাছে আরজি
এখান থেকে তল্পি গোটাও, থামাও রাজকার্য
এবং আমার স্বাধীন শাসক আছেন বাংলাদেশ-ভর
দাও ফিরিয়ে রাজার মুকুট, ভয় যদি না পাস তো !
এখন আমি তৈরি, আমার হাত হয়েছে শক্ত
বাংলাদেশের ব্যাঘ্র খাবে পশ্চিমা রাজরক্ত
মায়ের প্রতি অসম্মানের বদলা নেবার শক্তি
আজকে আমার, ভয় করি না তাই আগুনে পুড়তে॥
ভয় করি না কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় (২৬.১১.১৯৩৩ - ২৩.৩.১৯৯৫)। কবির “এই আমি, যে পাথরে”
(আগষ্ট ১৯৭৭) কাব্যগ্রন্থের কবিতা। আমরা কৃতজ্ঞ চলচ্চিত্র সম্পাদক কোরক মিশ্রর কাছে কারণ তিনি এই
কবিতাটি আমাদের পাঠিয়েচেন। তাঁর যোগাযোগের চলভাষ +৯১ ৯৮৭৪৩৮৪৫২০।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
এই তো আমার বাংলাদেশের বন্ধ দুটি দরজা
ওপার করে নেমতন্ন, এপার বলে : ঘর যা---
মার কোলে যে গঙ্গানদী তার বুকে ভাই ভাসছে
পায়ের তলে সরছে মাটি, আকাশ ভেঙে আসছে
শ্রাবণধারার মতন চোখের জল, বুঝি মার কান্না---
রাজনৈতিক মানুষ সবই দ্যাখেন, দেখতে পান না॥
বন্ধ দরজা কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় (২৬.১১.১৯৩৩ - ২৩.৩.১৯৯৫)।
কবির “এই আমি, যে পাথরে” (আগষ্ট ১৯৭৭) কাব্যগ্রন্থের কবিতা। আমরা
কৃতজ্ঞ চলচ্চিত্র সম্পাদক কোরক মিশ্রর কাছে কারণ তিনি এই কবিতাটি
আমাদের পাঠিয়েচেন। তাঁর যোগাযোগের চলভাষ +৯১ ৯৮৭৪৩৮৪৫২০।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
যদিও উটের পাল কোনোখানে নেই, তবু তাঁবু,
শতছিন্ন চাঁদতারা, শ্রাবণের বৃষ্টির ভিতরে
তুমি ক্লান্ত বসে আছো, প্রাণে বেঁচে আছো এই ভেবে
যেন দীর্ঘ মরুভূমি যেন দীর্ঘদিন পিপাসায়।
অথচ বৃষ্টির মধ্যে মরুভূমি জল কাদা ঘিরে
কোথাও উটের পাল, কোথাও তো মরীচিকা নেই।
পাটের খেতের মধ্যে দীর্ঘদিন প্রাণ বাচানোর
এই ক্লান্ত পলায়ন, ঊর্ধ্বে নিম্নে চৌদ্দ পুরুষের
অশেষ সৌভাগ্য বলে, তবু তাঁবু, প্রাণ হাতে নিয়ে
অবাক সৌভাগ্যে স্থির হয়ে বসে থাকা, যেন বাঁচা,
যতদিন বেঁচে থাকা, যতদিন বেঁচে থাকা যায়।
জুলাই ১৯৭১ কবি তারাপদ রায়। দেজ পাবলিশিং থেকে ১৯৯৬ সালে
প্রকাশিত তারাপদ রায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা সংকলন থেকে নেওয়া।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
আমারও তো স্বাধীনতা চাই
স্বাধীনতা মানে সেই---
প্রথম মর্নিং স্কুল, আমগাছে প্রথম মুকুল
প্রভাতফেরীর মাঠে উতলা ধরণী
স্বাধীনতা মানে সেই
নতুন বর্ষার জলে সচ্ছল স্বাধীন
গহনার নৌকা এসে ঢুকে যায় গঞ্জের ভিতরে
আজাদ স্টোর্সের পাশে পুরনো পুলের তলা ঘিরে
ঘুরে ঘুরে ঘূর্ণিস্রোত স্বাধীন, স্বাধীন।
নিরবধি মাঠ ভরে ধানের অনন্ত শীষ ছুঁয়ে
স্বাধীন হাওয়ায় হাতে স্বাধীন সকাল।
অন্তত দশবার
অন্তত দশবার এই স্বাধীনতা আমি
মনে মনে নিশ্চিত জিতেছি।
চারাবাড়ি ভাঙাচরে স্তব্ধ কাশবনের ভিতরে
ছেঁড়া লুঙ্গি, খালি গায়ে মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে
সাতজন্মে একবার, জন্মে জন্মে এই শেষবার
শেষ ও প্রথমবার বন্দুকের নলে চোখ রেখে
আমিও তোমার সঙ্গে, হে রাখাল রাজা,
তোমার চোখের পাশে একই নলে আমারও তো চোখ।
আগস্ট ১৯৭১ কবি তারাপদ রায়। দেজ পাবলিশিং থেকে ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত তারাপদ রায়ের
শ্রেষ্ঠ কবিতা সংকলন থেকে নেওয়া।
আমারও তো স্বাধীনতা চাই
ভিক্ষাহীন ঘৃণাহীন, আমার সে স্বাধীনতা
অন্ধকার নদীতীরে, কাদা জলে, সাপ-জোঁক, গুলি ও আগুনে
আমার রক্তের মধ্যে, হে রাখাল রাজা।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
ঢাকার পশ্চিম সীমা মনে আছে এমনই অঘ্রানে
প্রেম কবে মুক্তিবাহিনীর মতো দুর্বার উদ্দাম---
অঘ্রানে শীতের রাতে মনে আছে শেষ ঢাকা মেল?
মনে আছে পলায়ন, ফিস্ ফাস্ ভয়ে জড়সড়?
তারই মধ্যে হাতে হাত ভাঙাগলা রুদ্বশ্বাস দিন
সেই প্রেম মুক্তিবাহিনীর মতো সহস্রধারায়
ঢাকার পশ্চিমসীমা সেই স্বপ্ন ফের ফিরে আসে,
সেই স্বপ্ন, এত রক্তে, এত শোকে আজো অমলিন।
ডিসেম্বর ১৯৭১ কবি তারাপদ রায়। দেজ পাবলিশিং থেকে
১৯৯৬ সালে প্রকাশিত তারাপদ রায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা সংকলন থেকে নেওয়া।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
ঘনছায়াশ্যাম মেঘের আড়ালে আবার শ্রাবণ এল,
এত দুঃসহ দিনের এশেষে সেকি এ খবর পেল?
কেতকী গন্ধা শ্রাবণ নয়, শোনিত গন্ধা বায়ু,
তাইতো কেতকী এখনও ফোটেনি অবসাদে শিরাস্নায়ু
অবশ-বিবশ, বেদনার ভারে আজি এ শ্রাবণ ভরি
বিষাদের মেঘ ঘনায় কেবলি, কদম পড়েছে ঝরি।
বাংলার মেঘ মেদুর গগনে যন্ত্রদানব পাখা
উদ্গারি চলে বিষনীল ধূম, কুটিল চক্র আঁকা
লৌহ মারণ অস্ত্রের সারি চলে পথ বীথিকায়,
শ্যামল কোমল পেলব যা কিছু দলিয়া মথিয়া যায়।
তাইতো শ্রাবণ আকাশের নীল আঁখিভরা ছলছল
সুনিবিড় ব্যাথা উজাড় করিয়া ঢালিছে অশ্রজল
দানবের জ্বালা অগ্নিদহনে তৃপ্ত ধরার দেহে
বড় বেদনায় বড় মমতায় বড় সুগভীর স্নেহে।
এবার শ্রাবণ ভগিনী জননী বধূদের আঁখিজলে
মেঘ রৌদ্রের আলোক ছায়ায় বিচ্ছেদ হোমানলে
জ্বলিয়া ঝলিয়া বিদীর্ণ করি বিক্ষত কেতকীর
বক্ষ ভরিয়া সৌরভ বহে গোপন---ঝরিছে নীর।
আটাত্তরের শ্রাবণ কবি বেগম সুফিয়া কামাল (২০.৬.১৯১১ - ২০.১১.১৯৯১)।
দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তরুণ সান্যাল সম্পাদিত “পরিচয়” পত্রিকার জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি
১৯৭২ সংখ্যায় প্রকাশিত কবিতা।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
আমরা শুধু চেঁচিয়ে গলা ফাটাই
. তোমরা কথা বলবে জনান্তিকে।
মিছিল হয়ে লক্ষ পায়ে হাঁটি,
. তোমরা যাতে পাও লে নিভৃতিকে।
যে সাধনায় কুণ্ডলিনী জাগে
. অমারাতে আমরা তারই শব।
ঝাঁঝরা বুকের আসন পেতেই কাল
. ভাবী যুগের ধেয়ায় মহোৎসব।
বাঙলাদেশ আর আমরা ভিয়েৎনাম,
. আমরা যেথায় ষত বিস্ফোরণ ;
ছিন্নমস্তা এই শতাব্দী শুধু
. জাগছে বুকে আরেক উত্তরণ।
ঝলমলানো ইতিহাসের পাতা
. একদা যা খুলবে ভাবীকাল,
আমরা তারি বাতিল পাণ্ডুলিপি
. কালির ছোপে এবং রক্তে লাল।
আমরা কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র (৪.৯.১৯০৪ - ৩.৫.১৯৮৮)। দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও
তরুণ সান্যাল সম্পাদিত “পরিচয়” পত্রিকার সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৭১ সংখ্যায় প্রকাশিত
কবিতা।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
এবার আশ্বিনে গলে পড়ে বিষাদ সঙ্গীত
সকলি আচ্ছন্ন ধূমে
কোথাও একটি পুষ্প নাহি---আছে কি অন্তরে
কুমোরটুলির ওই হৃদয়-প্রতিমা ভাঙছে সবলে
আগুন ধরল শেষে আস্তাবলে
উপদ্রুত অশ্বগুলি দিকবিদিকহারা
কলকাতার চেসনাট বাঙ্গালোরে জ্বলে যায়---দহে নাকো তবু
মন আর চলে কই জাহাজ সাম্পান বেয়ে---অবরুদ্ধ স্রোত
ছায়াপথ স্বপ্ন রচে সেতুবদ্ধনের
সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে
মুক্তি নেই . . . মুক্তি কোথা আন্দোলন বিনা
সুপবন বহিতেছে
গৌড়জন আন্দোলনে মাতে নিরবিধ
কে তুমি ধরেছ তান কিরণ মণ্ডলে বসি
নির্ঝর নামছে নদী মানবকরুণা
বাঁশির মতন ছেলে কিংবা সুরূপসী
এবার আশ্বিনে কবি শান্তিকুমার ঘোষ। দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তরুণ সান্যাল সম্পাদিত
“পরিচয়” পত্রিকার সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৭১ সংখ্যায় প্রকাশিত কবিতা।
উচ্চৈঃশ্রবা উঠে আসে অগ্নিশয্যা হ'তে
এয়োরোড্রমে বিমানের পক্ষ বিধূনন
ছিল শমন-দমন রাজা আপন শক্তিতে
তার শাসন পড়ল ধসে আঁখি পালটিতে
ওখানে পাহাড়তলে, এখানে গাঙ্গের তটে
বীরগণ ক্ষত্রধর্ম সাধে ভুজবলে
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
একদা এক অস্পষ্ট কুয়াশার মধ্যে আমাদের যাত্রা
তারপর দিগন্তে আলোর ঝলকানিতে আমাদের পথ
উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। বাতাসে ধানের গন্ধ,
পাখির কাকলিতে মুখরিত অরণ্যানি।
আমাদের সবার হৃদয় নিসর্গের এক অপরূপ ছবি হয়ে
ভাসতে লাগল।
নদী, নদী,
সন্তানেরা উল্লসিত আনন্দের মধ্যে আঙুল তুলে
যে স্পষ্ট জলধারা দেখাল, তা আমাদের প্রাণ।
এই সেই ত্রোতস্বিনী, যার নকশায় আমাদের রমণীরা
শাড়ি বোনেন। ঐ সেই বাঁক যার অনুকরণে
আমার বোনেরা বঙ্কিম রেখায় এঁটে দেহ আবৃত করেন।
দেখো সেই পুণ্যতোয়া,
যার কলস্বর আমাদের সঙ্গীতে নিমজ্জিত করে---
দেখো, দেখো।
আমরা যেখানে যাব, সেই বিশাল উপত্যকার ছবি
আমাদের সমস্ত অন্তরকে গ্রাস করে আছে। আমাদের পতাকায়
রূপকথার বাতাস ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে। ভবিস্যৎ
আমাদের আশাকে দোলাচ্ছে সোনালি দোলকের মত,
বারবার।
স্বপ্নের সানুদেশে কবি আল মাহমুদ (১১.৭.১৯৩৬ - ১৫.২.২০১৯)। দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তরুণ সান্যাল
সম্পাদিত “পরিচয়” পত্রিকার সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৭১ সংখ্যায় প্রকাশিত কবিতা।
আনন্দে আপ্লুত হয়ে আমরা স্বপ্নের দিকে
রওনা দিয়েছি। দুঃখ
আমাদের ক্রান্ত করে না।
দুর্যোগের রাতে আমরা এক উজ্জ্বল দিনের দিকে
মুখ ফিরিয়েছি। বিঘ্ন
আমাদের বিবশ করেনি।
চিৎকার কান্না ও হতাশার গোলকধাঁধা ছেড়ে
আমরা বেরিয়ে যাব। মৃত্যু
আমাদের স্পর্শ না করুক।
স্বপ্নের সানুদেশে আমরা শস্যের বীজ ছড়িয়ে দেব
বাম দিকে বয়ে যাবে রুপোলি নদীর জল, ডানে
তীক্ষ্ণ তৃষিত পর্বত।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
তোমরা কখন আমাকে ডেকেছিলে
সময়ের কোন্ চূড়ায় দাঁড়িয়ে?.
আমার বুকের ভিতরে
কত বছরের বিদয় বিদায়,
আমি কান পাতলে
আমার দু'পায়ের সেই বিদায় বিদায়,
এক টুকরো জমির উপর
আওয়াজ থেকে স’রে স’রে পশ্চিমে
ক্রমে সন্ধে রাত্তির
ক্রমে হৃৎপিণ্ডের আলাদা স্তব্ধতার কাছে
তোমরা কেউ আমাকে ডেকেছিলে
পূর্বকোণে দাঁড়িয়ে?
পর্দাটা ভীষণভাবে ন'ড়ে গেল
যেন শব্দকে আর ঠেকাতে পারছে না
আমি ধোঁয়ার লণ্ঠন উঠিয়ে আতিপাতি
আমার হাতের আধগজ আলো
কোনো মুখ পর্যন্ত পৌঁছল না
আবার আমি হলদে পাতার উপর,
কিন্তু আকাশ দপদপ ক'রে উঠল
আমি আর নড়িনি
তবু টের পেলাম এবার ফিরতি টান
পূর্বপশ্চিম আলোয় ভাসল ব'লে
এবং আমার নাম উজান স্রোতে।
দ্যাখো এই আমি এলাম কবি অরুণ মিত্র (২.১১.১৯০৯ - ২২.৮.২০০০)। দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
ও তরুণ সান্যাল সম্পাদিত “পরিচয়” পত্রিকার সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৭১ সংখ্যায় প্রকাশিত কবিতা।
দ্যাখো এই আমি এলাম
তোমাদের মেলায়,
এই পাকাচুল মানুষটা
পঁচিশটা শীতের বরফ ঢাকা
গ্রীষ্মের তুষে পুড়তে পুড়তে পুড়তে পুড়তে।
চিনতে পারো?
রাত্তিরের চোখ দিয়ে আমি তোমাদের মেলাই
সেই কবেকার সকালে,
তোমাদের মুখের ডৌলে বুঝি
প্রথম সবুজের ঘের রয়েছে।
ছোটরা আমাকে ছুঁয়ে দেখুক
কিম্বদন্তী কই এতো রক্তমাংসের মানুষ ;
তোমরা আমাকে ছোঁও
আমি আমার শৈশবের নদীকে পাব,
আমাকে শুইয়ে দেবার মাটি তারই দুই ধারে।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
আমাকে কুচি কুচি করে কাটলেও
রক্ত মাংস সবটুকুই
বাঙলা
হৃদয়ের দুঃখ শোক প্রেম, শান্তি
. সবটুকুই
বাঙালী
বাঙালী বড় বেদনা
তবু এ বেদনা ছাড়াও
অনেক গল্প নাট্যসাহিত্যে
অনেক গানে গানে
হৃদয়ে অনুভব করি
অনেক শেক্সপীয়র দান্তে তলস্তয়ের
. স্মৃতিতে
মাথা নীচু হয়
কিন্তু আমার হৃদপিণ্ডের রক্ত ধারায়
গোটা একটা রবিঠাকুর।
খেতে শুতে উঠতে বসতে
বিরহে মিলনে
হৃদয়ের কানে কানে গান গায়
রবীন্দ্রনাথের ভাষা
আমাকে কুচি কুচি করে কাটলেও কবি নিয়ামত হোসেন। অশোক কুমার
সরকার ও সাগরময় ঘোষ সম্পাদিত “দেশ” পত্রিকার ১১চৈত্র ১৩৭৮ সংখ্যায় প্রকাশিত (২৪শে মার্চ
১৯৭২) বিজয়কৃষ্ণ আচার্য এর বাংলাদেশের স্মৃতি শিরোনামের আলেখ্য থেকে নেওয়া।
হৃদয়কে ঘর পার করে পৃথিবীর
. পড়শীদের সাথে
মিতালী পাতিয়ে আনে
মিতালী পাতিয়ে আনে
এই ভাষা
প্রতি পদক্ষেপে পরাজয়ের পর
. পালাবার পথে
মস্তিষ্কের কোষে কোষে
হৃদয়ের অলিতে গলিতে
নিঃশব্দে পদচারণা করে ফেরে
সবাক অথবা নির্বাক
আমাদের রবীন্দ্রনাথের ভাষা
এ ভাষাই
রবীন্দ্রনাথ
আমরাও বাঙলা।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
পিতাকে দেখেনি কভু - সে সন্তান হতভাগ্য ঠিকই,
তবু সে বঞ্চিত নয় তার পিতৃপরিচয় থেকে;
পিতাও বিস্মৃত নন, সত্তা তাঁর নিরপেক্ষ-দেহ
তিনি তো বাঁচেন রক্তে, যতদিন বংশধারা বয়
ততদিন জনকও সন্তানের মাঝে উপস্থিত!
জানি তুমি বহুদূরে, কোনখানে জানিনা তা ঠিক -
তোমার সন্তান রূপে জন্ম নিল নতুন ভূগোল --
যার ''উত্তরে সৈয়দপুর ,দক্ষিণে সদ্বীপ,
অচলা চট্টলা পূবে, পশ্চিমে যশোর''!
এর স্পন্দন তুমি শুনেছিলে, দেখলে না শুধু!
শুধুই ভূগোল কেন, এ এক অমর ইতিহাস,
ব্যাপ্ত যার চতু:সীমা বহুদূরে ছাড়িয়ে দেশকাল,
সাড়ে সাত শুধু নয়, তার মাপ আরো বহু বড়ো --
সে বিরাট জাতিত্বও আজ আলো দেখেছে প্রথম -
কিন্তু এর পিতা হয়ে প্রথম কান্নার ধ্বনি শুনলে না তুমি!
সে বিরাট ভূগোল আজ সুরঞ্জিত উৎসবের রঙে-
অতীতের শ্যামলিমা, আজকের লালে আর ভবিষ্য স্বর্ণিমে।
সে বিরাট ইতিহাস আজ আন্দোলিত উল্লসিত জয়ে,
শুধু এক বিষাদের ছায়াপাত, শুধু এক কাঁটা বেঁধে মনে --
জন্মদাতা তুমি নেই আজ এই মাহেন্দ্রক্ষণে!
জানি তুমি বহুদূরে, কোনখানে জানিনা তা ঠিক,
কিন্তু জানি একথাও - পিতা তাঁর পুত্রে উপস্থিত!
নবীন জাতির পিতাকে কবি অলকরঞ্জন বসুচৌধুরী (জন্ম ১৯৫১)। রচনা ১.১.১৯৭২। বাংলাদেশের স্বাধীনতালাভের মুজিবের অনুপস্থিতির প্রেক্ষিতে
লেখা কবিতা। অদ্যবধি অপ্রকাশিত কবিতা।
তেমনি তুমিও আছ এ শ্যামলী প্রকৃতির মাঝে,
যেমন রয়েছ তুমি এতদিন রক্তাক্ত সংগ্রামে
অমোঘ প্রেরণা হয়ে, অশরীরী মহা-উপস্থিতি --
আকাশে বাতাসে বাজে মন্দ্রস্বরে তোমার কন্ঠধ্বনি!
প্রদীপ্ত সূর্যের মাঝে তোমারই তো দৃপ্ততেজ দেখে
ভুলেছে নিজের কথা মুক্তিযোদ্ধা তরুণ কিশোর!
তুমি আজ অন্তরালে, তবু তুমি আছ এই দেশে -
এ নবীন বাংলাদেশই তার এক জ্বলন্ত প্রমাণ!
তারও চেয়ে বড়ো কথা, তুমি রবে এ দেশের বুকে,
নিত্যকাল বেঁচে রবে এ শ্যামলী মৃত্তিকার প্রেমে।
ভবিষ্যৎ নাগরিক বিশ্ব মাঝে সমুন্নত শির
শ্রদ্ধায় জ্বেলে দেবে পিতাকে স্মরণ করে দীপ।
অনাগত সেই সব স্বাধীন নির্ভীক নাগরিকদের মনে
তুমি বেঁচে রবে জানি ঠিক.....
অনাগতকালে কভু এ নবীন এ স্বাধীন দেশে
মাইকেল, বিশ্বকবি, নজরুল ফিরে আসে যদি,
দেখবে তোমার চোখের স্বপ্নের রঙে আঁকা রামধনু নভে।
জীবনানন্দের হাত ধরে রায়গুণাকর যদি ফিরে আসে,
দেখবে সবুজ ঘাসে তোমাকে স্মরণ করে ঝরে পড়ে ফুল....
তমালে হিজলে ছাওয়া নদী-ধোয়া শ্যামা বাংলায়
সূর্য সেন, ক্ষুদিরাম, বরকত, সালামেরা ফিরে যদি আসে,
শুনবে গগন ভরে শঙ্খ বাজে তোমারই যে নামে!
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
একদিন শুনেছিলাম তোমার বজ্রকন্ঠ ---
আজ মনে পড়ে তুমি ডাক দিয়ে বলেছিলে ---
''আমাকে তোমরা রক্ত দাও,
কারণ রক্তের মূল্যেই শুধু পাওয়া যায় সেই পরম সম্পদ,
যার নাম স্বাধীনতা!
দৌর্বল্যে নয়, বাহুবলে -- ক্লৈব্যে নয় পৌরুষে!
শহীদের শোণিতে পিচ্ছিল পথেই শুধু শোনা যায়
সেই চিন্ময় দেবতার রথঘর্ঘর !"
কিন্তু ভারতবাসী সেদিন ভয় পেয়েছিল প্রাণবলি দিতে,
অহিংসার দার্শনিকতায় ঢাকা পড়েছিল নেতাদের বাস্তববুদ্ধি,
আর চরকার প্রবল আওয়াজ তুলে আমাদের
শুনতে দেওয়া হয়নি তোমার আহ্বান।
তোমাকে বলা হয়েছিল অবিমৃষ্যকারী, বিভ্রান্ত!
তারপর....
তারপর আমাদের চোখে পরানো হল ঠুলি--
স্বাধীনতার নামে দেশজননী হলেন কর্তিতা,
আর তোমার শঙ্খ পড়ে রইল ধূলোয়!
তারপর থেকে আমরা আলো খুঁজেছি এই অন্ধদেশে,
প্রতি বছর এই দিনটিতে তোমার ছবির সামনে
নিয়েছি আগ্নেয় শপথ, শুনেছি নেতাদের রঙিন প্রতিশ্রুতি...
তুমি শুধু হেসেছ ছবিতে!
বাংলাদেশকে মনে রেখে তেইশে জানুয়ারির আবির্ভাবকে কবি অলকরঞ্জন বসুচৌধুরী (জন্ম ১৯৫১)। রচনা ২৫.১.১৯৭২। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শেখ মুজিব জানিয়েছিলেন, নেতাজি তাঁর অন্যতম রাজনৈতিক গুরু। ১৯৭২ সালের তেইশে জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশ জুড়ে নেতাজির জন্মদিবস পালিত হয়
মহাসমারোহে। এই উপলক্ষে এক বাণীতে মুজিব বিশ্বের মুক্তি আন্দোলনে সুভাষচন্দ্রের অবদানের কথা স্মরণ করেছিলেন। এই কবিতাটি সুভাষচন্দ্রকে উদ্দেশ করে রচিত।
তুমি যখন দেখেছ সারা বছরের অন্য দিনগুলোতে
রক্তের নামে আমাদের আঁৎকে উঠতে শেখানো হয়েছে,
তখন তুমি নিশ্চয় মুখ ঢেকেছ লজ্জায়!
আজ তুমি মুখ তোল হে মহাভারতপথিক!
স্বপ্ন-উজ্জ্বল চোখের তারায় পরম প্রশান্তি নিয়ে দেখ--
তোমার বাঙালি আজ তোমার ডাকে সাড়া দিয়েছে,
সাড়া দিয়েছে দুই যুগ পরে!
যেদিন আমরা প্রতিক্ষণে চেয়েছি তোমার দীপ্ত উপস্হিতি
আমাদের কর্ণধার হয়ে, তখন তুমি আসনি......
আজ আবার শুনলাম তোমার সেই সমুদ্রস্বর...
মহাকালের গর্ভ থেকে যেন উঠে এসেছে শরীর ধরে!
আবার শুনলাম, "রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব,
জয় করে আনব দেশের পরম মুক্তিকে!"
আজ আবার যেন এসে দাঁড়ালে তুমি.....
সশরীরে নয়, অশরীরী বাণী হয়ে --
নতুন কর্ণধারের তিমিরবিদারী অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে!
যে দেবাত্ম মাতৃ-অঙ্গ কর্তিত করা চলবে না বলেছিলে তুমি,
সেই মহাপাতকের ক্ষতে পড়েছে আজ সান্ত্বনার প্রলেপ....
নতুন কর্ণধার তোমাকেই দিয়েছেন গুরুদক্ষিণা--
তোমার শঙ্খ আজ ধুলো থেকে তুলে নিয়েছেন তিনি!
যারা তোমাকে ভ্রান্ত বলেছিল,
আজ সেইসব ইতিহাস-অন্ধ মূঢ়েরা দেখুক,
শিখুক বাস্তব সত্য সার্বভৌম বাংলাদেশ দেখে--
একমাত্র রক্তই সেই পবিত্র বারি,
যা ধৌত করতে পারে সেই যুগসঞ্চিত ক্লেদ --
যার নাম দাসত্বের কাপুরুষতা!
আর তুমিও চেয়ে দেখ আজ দু' চোখ ভরে --
তোমার ভাবপ্রবণ স্বজাতি আজ অস্ত্র ধরেছে,
বাঙালি তরুণতরুণী আজ পেছপা হয়নি রক্ত দিতে!
তুমি দেখ নেতাজি আজ পদ্মাপারের বাংলাকে,
যে সফল করেছে তোমার শোনিতাক্ত নিশিজাগর তপস্যাকে!
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
যে-মাটির নিচে আঁধার-আঁচলে ঢাকা সারিসারি
শুয়ে আছে আজ তাজা তরুণের আকাঙ্ক্ষাগুলো অপরিপূর্ণ ;
সে মাটির ওপরে কতটা সবুজ ঘাসের চাদর,
কতখানি ঘন ফুলের প্রলেপ, কত অশ্রুর আকাশগঙ্গা --
সেসব কি জানো ওগো গতপ্রাণ তরুণ কিশোর,
মায়ের কোলের ঝরে পড়া ফুল নিদাঘ-বায়ে?
ভাষাজননীর পূজাবেদিতলে অঞ্জলি হলে যেসব শহীদ,
জানো তোমাদের গভীর নিভৃত শয্যার ওপর
যে নীল আকাশ, সেখানে আজকে রৌদ্রের রঙে
ঝলসে উঠেছে যে স্বপ্ন ছিল তোমাদের চোখে যৌবন জুড়ে?
জানো কি তোমরা তোমাদের ওই মৃন্ময় পুরু আচ্ছাদনের,
তোমাদের প্রিয় জন্মভূমির ধুলোমাখা ওই সবুজ আঁচলের
চেয়েও অনেক নিরাপদ কোলে তোমরা ছিলে--
ছিলে এতদিন আরও বহুগুণ উষ্ণ বুকের স্পর্শ পেয়ে,
ছিলে কোটি কোটি বাঙালির প্রাণবন্যায় ধোয়া মানসপটে,
ছিলে এতদিন লক্ষ প্রাণের স্মৃতিদেউলে!
একদা যেদিন তোমাদের প্রাণে ডেকেছিল বান,
মায়ের ভাষার মানরক্ষায় রক্তে যেদিন উঠেছিল ঢেউ,
মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে নির্ভীকচিতে তোমরা ক'জনা
উদ্যত যবে করেছিলে ওই তরুণ পেশীর দুঃসাহসকে
সেদিন কি ওগো জানতে তোমরা-- কী মহামূল্যে
পথিকৃৎদের উদ্দেশে কবি অলকরঞ্জন বসুচৌধুরী (জন্ম ১৯৫১)। রচনা ১৮-২-৭২। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম ভাষা শহিদ
দিবসের প্রেক্ষিতে লেখা কবিতা।
কিনেছে মৃত্যু তোমাদের ক'টি গোলামী-না মানা দৃপ্ত জীবন?
জানতে কি যেই ভাষার জন্য তোমাদের এই প্রাণোৎসর্গ,
সে-ভাষার সাথে অবিচ্ছেদ্য হবে তোমাদের এ মহামরণ!
সে ভাষা যেমন মাতৃস্তন্য, ভাবী শিশুদের বাঁচার জন্য,
তেমনই তাদের অস্তিত্বের প্রহরী তোমরা সূর্যসেনানী!
আমরা তো জানি, তোমরাই ছিলে মুক্তিসেনার জ্বলন্ত চোখে,
তোমরা জ্বেলেছ ঘৃণার আগুন নিরীহ চাষী ও মজুরের বুকে,
তোমরা হেনেছ আঘাত লক্ষ্যে!
সকল ছাত্রতরুণের মনে অটল উদ্দীপনার মন্ত্রে
তোমরা যে ছিলে, তাই জেগেছিল স্বাধিকারবোধ ও মুক্তিচেতনা!
তোমরা যে ছিলে, তাই লাঞ্ছিতা বাংলাদেশের কত না দুহিতা
বেঁচে ছিল শুধু নূতন সূর্য দেখার জন্য!
তোমরা যে ছিলে লক্ষ লক্ষ স্বজন-হারানো
বুকের মাঝারে নূতন আশার মশালের আলোয়।
আমরা তো জানি, তোমরাই ছিলে আকাশের বুকে
ধ্রুবতারা হয়ে মুক্তিযুদ্ধে নিরবধিকাল!
আজ তোমাদের মাজারের ওপরে দেখ নির্মল রবিকর ঝরে,
এই যে সেখানে পুষ্পকোমল, অশ্রুসজল প্রীতিনিবেদন--
এসবই আবার মনে করে দেয় --
তোমরা যে ছিলে, তাই তো আজকে রয়েছি আমরা--
রয়েছি মানুষ - এই পরিচয়ে।
তোমরা যে ছিলে, তাই তো সত্যি জেনেছি "আ মরি বাঙলাভাষা"!
মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সংকলক, কবি গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর কী সম্পর্ক?
|
মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে মিলনসাগর.কম এর পরিচালক মিলন সেনগুপ্তর কী সম্পর্ক?
|
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
আজকে আবার পঁচিশে বৈশাখ এসেছে,
মধ্যাহ্নের খরদীপ্ত রৌদ্রের দহনজ্বালা নিয়ে
পঁচিশে বৈশাখ আজ নিজের আত্মপ্রকাশকে সত্য করেছে বাংলাদেশের বুকে।
বাঙালির প্রাণের হে রুদ্রদেবতা,
আজ দুঃখব্রতচারী মানুষকে দুঃখদাহনে পুড়িয়ে সত্যশুদ্ধ করবে বলে,
তপঃসিদ্ধ মানুষের কপালে চরিতার্থতার চন্দনতিলক পরাবে বলে
আজ বাঙালির দ্বারে এসেছে তোমার আবির্ভাবতিথি!
বহুদিন পরে আজ তাই বাঙালির জীবনে সত্য হয়েছে পঁচিশে বৈশাখ!
হে সুন্দরের দ্রষ্টা, কল্যাণের সাধক! আজ চেয়ে দেখ --
যে-মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ বলে ভেবেছিলে তুমি,
সেই বিশ্বাসের বাণী নিয়ে জেগে উঠেছে
আজ পদ্মাপারের সাতকোটি সন্তান,
যাদের জননী তাদের শুধু বাঙালিই করেনি, মানুষও করেছে--
আজ চেয়ে দেখো ওগো মহাঋষি,
সেই মানুষের অধিকার আদায় করতে
নূতন ঊষার সূর্যের পানে তাকিয়েছে তোমার বাঙালি!
তারা প্রাণ দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে, তোমার সোনার বাংলাকে ভালোবাসতে গিয়ে
তোমার আশীর্বাদই তারা পেয়েছে .....
ঘরের মঙ্গলশঙ্খ, প্রেয়সীর অশ্রুচোখ,
কিছুই তাদের পিছু টানতে পারেনি...
স্বেচ্ছায় তারা বরণ করে নিয়েছে কালবৈশাখীর আশীর্বাদ!
বাংলাদেশকে মনে রেখে পঁচিশে বৈশাখে কবি অলকরঞ্জন বসুচৌধুরী (জন্ম ১৯৫১)। রচনা ৮-৫-১৯৭১। মুক্তিযুদ্ধ
চলাকালীন রবীন্দ্র জন্মদিন উদযাপনের প্রেক্ষিতে রচিত।
মানবাত্মাকে মহতী বিনষ্টি থেকে রক্ষা করতে
তাদের এই অমৃত-সংগ্রাম যে তোমারই আশিস-ধন্য!
আজ তাই দেখি তোমার গান তাদের বুকে জ্বালে দীপশিখা,
'দানবের মূঢ় অপব্যয়' যখন দাগ ফেলে তোমার শিলাইদহে,
তখন দেখি দানবের মেশিনগানের সামনে
মুক্তিসেনাদের বুকে তোমাকে দৃপ্ত প্রতিরোধ হয়ে জ্বলতে!
তাই আজ তোমার জন্মদিন দুঃখব্রতী বাঙালিকে অভয়বাণী শোনাচ্ছে,
বলছে, বীরের এ রক্তস্রোত, মাতার এই অশ্রুধারা হবেনা ব্যর্থ ....
এই সঞ্জীবনী মন্ত্রে পুণ্য আজ পঁচিশে বৈশাখ!
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
চারিদিকে ষড়যন্ত্র, জন্তুর দন্তুর আক্রমণ,
তারই মধ্যে মানবতা পায় তার মহা-উজ্জীবন।
শ্মশানে প্রেতের নৃত্য, জ্বলে শুধু চিতার আগুন,
সুতীব্র যন্ত্রণা মাঝে আলো দেখে নবজাত ভ্রূণ!
ইতিহাসে চোখ রেখে শিখেছি এ নিশ্চিত নিয়ম -
কোনো রক্ত ব্যর্থ নয়, বৃথা নয় কোনো পরিশ্রম!
বাঙালির রক্ত ঝরে, সারা বিশ্ব নীরব দর্শক --
শক্তিধর মহারথী - এ সমরে সব নপুংসক!
যত সব রাষ্ট্রপতি, ক্রূর মুখে শীতল মুখোশ,
কদর্য বিজ্ঞতা আর পরিমিত নির্লজ্জ আফসোস--
এ সবই সত্যি আজ, তবু আরো বড় সত্যি এই -
পঙ্কজের জন্ম হবে এই সব হীনতা-পঙ্কেই।
যত রক্ত, তত লাল বাঙালির চিত্ত- শতদল,
এত তপ্ত রক্তদান, বাংলাদেশ তারই যে ফসল!
হতাশার কিছু নেই, অস্থি দিলে তবে বজ্র জ্বলে,
অমৃতের ভান্ড ওঠে বিপর্যয়-মন্থিত গরলে!
শ্বাপদ গর্জন করে, তবু রাত্রি অবসান হয়,
নতুন দিনের সূর্য -- অনিবার্য তার অভ্যুদয়!
কুরুসভামাঝে সেই পাঞ্চালীর লাঞ্ছণার ক্ষণে
নির্লজ্জ সংযমে সবে স্তব্ধ ছিল মৌন সমর্থনে,
কেবল একটি কন্ঠ সেই দিন ধিক্কারে উত্তাল --
বিদুরের, আর ছিল অলক্ষিতে সাক্ষী মহাকাল!
বাঙলাদেশ কবি অলকরঞ্জন বসুচৌধুরী (জন্ম ১৯৫১)। রচনা ২৭-৬-১৯৭১। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন
বিশ্বের রাষ্ট্রমন্ডলীর নীরবতার প্রেক্ষিতে রচিত।
অত্যাচারী কাপুরুষ পারেনি তো রুখতে সেইদিন
ভীমের সে-প্রতিহিংসা, শত্রুনিধনে ক্ষমাহীন।
আজকে বিদুর নেই, তবু আছে মহাকাল-বাণী,
এখনো হয়নি বাঁধা বাংলার দ্রৌপদীর বেণী!
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুজিব কোথায়, মুজিব কোথায়, গেছে সে কোনখানে --
দেখ মুজিব আগুন হয়ে জ্বলছে সবার প্রাণে।
হাজার সেনা বীরের মতো লড়ছে মরণপণ -
তাদের বুকে মুজিব আছে হৃদয়-জোড়া ধন!
বাংলা মায়ের বীর ছেলেরা মরছে যখন সবে,
মুজিব আছে কন্ঠে তাদের 'জয় বাংলা' রবে!
মুজিব কোথায়, মুজিব কোথায়, মুজিব আছে কোথা?
মুজিব আছে যেথায় বাজে বন্দিদশার ব্যথা!
যেথায় আছে হার না মানা আপোষবিহীন রণ,
সেথায় আছে শপথ হয়ে মুজিব অনুখন!
বাংলাদেশের নদীর বুকে যখন নেমে ঢল,
বাঁধন-ভাঙা ভৈরব রূপ-- মুজিব অবিকল!
মুজিব কোথায়, মুজিব কোথায়, কোথায় পাব তাকে --
মুজিব সেথায়, যেথায় সবাই মিলছে দেশের ডাকে!
বঙ্গবালা অস্ত্র যখন ধরছে কোমল হাতে,
মুজিব জ্বালে তাদের বুকে অভয় মশাল রাতে!
এই পৃথিবীর যেথায় আছে পদানত যারা,
তাদের মনের আকাশ মাঝে মুজিব ধ্রুবতারা!
মুজিব কোথায়, মুজিব কোথায়, কোথায় গেল চলে?
এক মুজিবর লক্ষ হয়ে আছে জলেস্থলে!
নিঃশেষে সব ত্যাগ করে যে এগিয়ে আসে একা,
তার চোখেতে মুজিব দেখ জ্বলছে প্রদীপশিখা।
মুজিব আছে মনে কবি অলকরঞ্জন বসুচৌধুরী (জন্ম ১৯৫১)। রচনা ২৭-৪-১৯৭১। অদ্যবধি অপ্রকাশিত কবিতা।
এই কবিতার সঙ্গে কবির সেই সময়ে আঁকা ছবি।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার সঙ্গে সঙ্গে শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানী বাহিনী লাহোরে নিয়ে যায়। কিন্তু সেকথা সংবাদ
মাধ্যমের কাছে গোপন রাখা হয়েছিল। মুজিব কোথায় গেলেন, কোথায় আছেন, এই প্রশ্ন তখন সবার মনে।
লক্ষ মানুষ মরছে পিষে খুনির পদতলে -
দেখ মুজিব ঝলসে ওঠে তাদের চোখের জলে।
মুজিব কোথায়, মুজিব কোথায়, আছে সে কোন কোনে?
আমার মনে তোমার মনে, মুজিব সবার মনে!
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
কেবল হতাশা আর লাঞ্ছণা নিয়ে বেঁচে বেঁচে,
মনে হত আমাদের বাঙালির প্রাণ মরে গেছে -
আদর্শহীন আঁধারে শুধুমাত্র করে খুনোখুনি
ভ্রাতৃমেধের জন্য জ্বলিয়েছিলাম দ্বেষ -ধুনি!
হঠাৎ বিদ্যুৎস্পর্শে দেখি পূর্বকাশে দীপ্ত রবি -
সারা চিত্তপট জুড়ে ভেসে ওঠে তোমারই যে ছবি!
ঐপারে সাত কোটি কী এক সংকল্পে দুর্জয় -
এ পারেও সে-সংবাদে গণচিত্ত আলোড়িত হয়!
ওপারে ঝরায় রক্ত আমাদেরই ভাইবোন সব,
দেশপ্রেমে দৃপ্ত প্রাণ, বাংলার ওঠে জয়রব!
একটি জাতির প্রাণ তোমার সংকল্পে নির্ভর --
হতাশ্বাস আমরাও ওই মুখ চেয়ে মুজিবর!
স্বাগত তোমায় আজ বঙ্গবন্ধু, স্বাগত হে বীর,
এক হয়ে গেছে আজ পদ্মা-চর ভাগীরথী তীর!
একটি অখন্ড হিয়া, তবু কেন সন্ত্রাসের বেড়া --
হৃদয়ে হৃদয়ে মিল, মাখখানে উদ্যত পাহারা!
সেই বেড়া ভেঙে দিয়ে তুমি আজ বাড়িয়েছ হাত
মৈত্রীর, মিলনের -- কেটে গেছে লাঞ্ছণার রাত।
হৃদয়ের এক প্রান্তে উঠেছে যে উত্তাল ঢেউ,
অন্য প্রান্তে বসে তাতে সাড়া দিয়ে না পারে কি কেউ!
এ বাংলা, ও বাংলা, বিশ্বে যেখানে বাঙালি যত আছে,
তোমার নূতন মন্ত্র 'জয় বাংলা' শুনে যেন বাঁচে!
শপথে শাণিত দৃঢ় জনতার মন্ত্রদাতা বীর!
‘জয় বাংলা’-র রূপকারকে কবি অলকরঞ্জন বসুচৌধুরী (জন্ম ১৯৫১)। রচনা ২১.৩.১৯৭১।
অদ্যবধি অপ্রকাশিত কবিতা। এই কবিতার সঙ্গে কবির সেই সময়ে আঁকা ছবি।
বিস্ময়ে তোমাকে দেখি- আকাশ ছুঁয়েছে ওই শির,
যেখানে বাংলার বায়ু বয়, ওড়ে বাংলার পাখি!
তোমার বাড়ানো হাতে আমরাও বেঁধে দিই রাখী।
স্বাগত তোমায় আজ, বাংলার শের মুজিবর,
এক হয়ে গেছে আজ গঙ্গাতীর আর পদ্মা-চর!
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
আজকে কোথায় লুকোলে আমার শ্যামলা কোমলা বাংলা মা!
দেখিনা তোমার সে মধুর রূপ, আজ তুমি অসি হাতে শ্যামা।
ডান হাতে ওই সত্যি তোমার খড়্গ ঝলে দেখছি আজ,
মুক্তকেশের পুঞ্জমেঘে লুকিয়ে আছে দীপ্ত বাজ !
ঘুচল যে তার চমক লেগে আজ আমাদের ঘুমের ঘোর,
সত্যি আজ আর চোখ ফেরেনা, যতই দেখি এ রূপ তোর!
পদ্মাতীরে আজকে দেখি জাগল আবার স্বর্ণ গৌড়--
গোপালদেবের বাংলা জাগে ছিঁড়ে ফেলে বাঁধন-ডোর!
চাঁদ-কেদারের গর্জন শুনি মেঘনা নদীর কল্লোলে,
সূর্য সেনের আত্মাকে দেখি অগ্নিগর্ভ চট্টলে।
রক্ততিলক ভালে পরে আজ সেজেছ মা তুমি ভৈরবী,
মানসনয়নে দেখি পূব আকাশে উঠেছে আবার ওই রবি!
তোমার আকাশে শকুনের পাল ছেড়ে দিয়ে যারা আনন্দে
শৃগালের মতো ঘোরে ফেরে আর গেন্ডুয়া খেলে নৃমুন্ডে;
যাদের হস্তে জান-মান দিল তোমার হাজার ছেলে মেয়ে,
তাদের মৃত্যু লেখা হয়ে গেছে কালের অমোঘ কালি দিয়ে!
রূপসী বাঙলা, রাজসী বাঙলা, শ্যামা বাঙলা মা চিন্ময়ী,
হৃদয়ে হৃদয়ে তোমার ঐ ছবি পশুরা মুছতে পারল কই!
তোমার ছেলেরা জেগেছে মা আজ, কাল নিশ্চয় সুপ্রভাতে
শ্বাপদগুলোকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে লক্ষ সবল পদঘাতে!
আর যারা আজ তোমার বুকেতে তোমার মাটিকে ভালোবেসে
নরপশুদের মরণকামড়ে প্রাণ বলি দিল নিঃশেষে!
আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে... কবি অলকরঞ্জন বসুচৌধুরী (জন্ম ১৯৫১)। রচনা ১৯.৪.১৯৭১।
অদ্যবধি অপ্রকাশিত কবিতা। এই কবিতার সঙ্গে কবির সেই সময়ে আঁকা ছবি।
তাদের দেহ যে তোমার মাটিকে করবে অমলা, উর্বরা --
কাল তুমি হবে এদেরই রক্তে সুজলা সুফলা মনোহরা!
আজ এরা দিল তপ্ত রক্ত এদের তরুণ বুক চিরে,
কাল ভরে যাবে তোমার দুয়ার লক্ষ সোনার মন্দিরে!
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সংকলক, কবি গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর কী সম্পর্ক?
|
মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে মিলনসাগর.কম এর পরিচালক মিলন সেনগুপ্তর কী সম্পর্ক?
|
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।
তাঁর করতলে পলিমাটির সৌরভ ছিল
তাঁর পিঠে রক্তজবার মত ক্ষত ছিল।
তিনি অতিক্রান্ত পাহাড়ের কথা বলতেন
অরণ্য এবং শ্বাপদের কথা বলতেন
পতিত জমি আবাদের কথা বলতেন
তিনি কবি এবং কবিতার কথা বলতেন।
জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি সত্য শব্দ কবিতা,
কর্ষিত জমির প্রতিটি শস্যদানা কবিতা।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে ঝড়ের আর্তনাদ শুনবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে দিগন্তের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে আজন্ম ক্রীতদাস থেকে যাবে।
আমি উচ্চারিত সত্যের মতো
স্বপ্নের কথা বলছি।
উনুনের আগুনে আলোকিত
একটি উজ্জ্বল জানালার কথা বলছি।
আমি আমার মা’য়ের কথা বলছি,
তিনি বলতেন প্রবহমান নদী
যে সাতার জানে না তাকেও ভাসিয়ে রাখে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে নদীতে ভাসতে পারে না।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে মাছের সঙ্গে খেলা করতে পারে না।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে মা’য়ের কোলে শুয়ে গল্প শুনতে পারে না
আমি কিংবদন্তির কথা বলছি
আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।
আমি বিচলিত স্নেহের কথা বলছি
গর্ভবতী বোনের মৃত্যুর কথা বলছি
আমি আমার ভালোবাসার কথা বলছি।
ভালোবাসা দিলে মা মরে যায়
যুদ্ধ আসে ভালোবেসে
মা’য়ের ছেলেরা চলে যায়,
আমি আমার ভাইয়ের কথা বলছি।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে সন্তানের জন্য মরতে পারে না।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে ভালোবেসে যুদ্ধে যেতে পারে না।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে সূর্যকে হৃদপিন্ডে ধরে রাখতে পারে না।
আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি
আমি আমার পূর্ব পুরুষের কথা বলছি
তাঁর পিঠে রক্তজবার মত ক্ষত ছিল
কারণ তিনি ক্রীতদাস ছিলেন।
আমরা কি তা’র মতো কবিতার কথা বলতে পারবো,
আমরা কি তা’র মতো স্বাধীনতার কথা বলতে পারবো!
তিনি মৃত্তিকার গভীরে
কর্ষণের কথা বলতেন
অবগাহিত ক্ষেত্রে
পরিচ্ছন্ন বীজ বপনের কথা বলতেন
সবত্সা গাভীর মত
দুগ্ধবতী শস্যের পরিচর্যার কথা বলতেন
তিনি কবি এবং কবিতার কথা বলতেন।
যে কর্ষণ করে তাঁর প্রতিটি স্বেদবিন্দু কবিতা
কর্ষিত জমির প্রতিটি শস্যদানা কবিতা।
যে কবিতা শুনতে জানে না
শস্যহীন প্রান্তর তাকে পরিহাস করবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে মাতৃস্তন্য থেকে বঞ্চিত হবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে আজন্ম ক্ষুধার্ত থেকে যাবে।
যখন প্রবঞ্চক ভূস্বামীর প্রচন্ড দাবদাহ
আমাদের শস্যকে বিপর্যস্ত করলো
তখন আমরা শ্রাবণের মেঘের মত
যূথবদ্ধ হলাম।
বর্ষণের স্নিগ্ধ প্রলেপে
মৃত মৃত্তিকাকে সঞ্জীবিত করলাম।
বারিসিক্ত ভূমিতে
পরিচ্ছন্ন বীজ বপন করলাম।
সুগঠিত স্বেদবিন্দুর মত
শস্যের সৌকর্য অবলোকন করলাম,
এবং এক অবিশ্বাস্য আঘ্রাণ
আনিঃশ্বাস গ্রহণ করলাম।
তখন বিষসর্প প্রভুগণ
অন্ধকার গহ্বরে প্রবেশ করলো
এবং আমরা ঘন সন্নিবিষ্ট তাম্রলিপির মত
রৌদ্রালোকে উদ্ভাসিত হলাম।
তখন আমরা সমবেত কন্ঠে
কবিতাকে ধারণ করলাম।
দিগন্ত বিদীর্ণ করা বজ্রের উদ্ভাসন কবিতা
রক্তজবার মত প্রতিরোধের উচ্চারণ কবিতা।
যে কবিতা শুনতে জানে না
পরভৃতের গ্লানি তাকে ভূলুন্ঠিত করবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
অভ্যূত্থানের জলোচ্ছ্বাস তাকে নতজানু করবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
পলিমাটির সৌরভ তাকে পরিত্যাগ করবে।
আমি কিংবদন্তির কথা বলছি
আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।
তিনি স্বপ্নের মত সত্য ভাষণের কথা বলতেন
সুপ্রাচীন সংগীতের আশ্চর্য ব্যাপ্তির কথা বলতেন
তিনি কবি এবং কবিতার কথা বলতেন।
যখন কবিকে হত্যা করা হল
তখন আমরা নদী এবং সমুদ্রের মোহনার মত
সৌভ্রত্রে সম্মিলিত হলাম।
প্রজ্জ্বলিত সূর্যের মত অগ্নিগর্ভ হলাম।
ক্ষিপ্রগতি বিদ্যুতের মত
ত্রিভূবন পরিভ্রমণ করলাম।
এবং হিংস্র ঘাতক নতজানু হয়ে
কবিতার কাছে প্রাণভিক্ষা চাইলো।
তখন আমরা দুঃখকে ক্রোধ
এবং ক্রোধকে আনন্দিত করলাম।
নদী এবং সমুদ্রে মোহনার মত
সম্মিলিত কন্ঠস্বর কবিতা
অবদমিত ক্রোধের আনন্দিত উত্সারণ কবিতা।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে তরঙ্গের সৌহার্দ থেকে বঞ্চিত হবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
নিঃসঙ্গ বিষাদ তাকে অভিশপ্ত করবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে মূক ও বধির থেকে যাবে।
আমি কিংবদন্তির কথা বলছি
আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।
তাঁর পিঠে রক্তজবার মত ক্ষত ছিল
আমি একগুচ্ছ রক্তজবার কথা বলছি।
আমি জলোচ্ছ্বাসের মত
অভ্যূত্থানের কথা বলছি
উত্ক্ষিপ্ত নক্ষত্রের মত
কমলের চোখের কথা বলছি
প্রস্ফুটিত পুষ্পের মত
সহস্র ক্ষতের কথা বলছি
আমি নিরুদ্দিষ্ট সন্তানের জননীর কথা বলছি
আমি বহ্নমান মৃত্যু
এবং স্বাধীনতার কথা বলছি।
যখন রাজশক্তি আমাদের আঘাত করলো
তখন আমরা প্রাচীণ সংগীতের মত
ঋজু এবং সংহত হলাম।
পর্বত শৃংগের মত
মহাকাশকে স্পর্শ করলাম।
দিকচক্রবালের মত
দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হলাম;
এবং শ্বেত সন্ত্রাসকে
সমূলে উত্পাটিত করলাম।
তখন আমরা নক্ষত্রপুঞ্জের মত
উজ্জ্বল এবং প্রশান্ত হলাম।
উত্ক্ষিপ্ত নক্ষত্রের প্রস্ফুটিত ক্ষতচিহ্ন কবিতা
স্পর্ধিত মধ্যাহ্নের আলোকিত উম্মোচন কবিতা।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে নীলিমাকে স্পর্শ করতে পারে না।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে মধ্যাহ্নের প্রত্যয়ে প্রদীপ্ত হতে পারে না।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে সন্ত্রাসের প্রতিহত করতে পারে না।
আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি
আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।
আমি শ্রমজীবী মানুষের
উদ্বেল অভিযাত্রার কথা বলছি
আদিবাস অরণ্যের
অনার্য সংহতির কথা বলছি
শৃংখলিত বৃক্ষের
উর্দ্ধমুখী অহংকারের কথা বলছি,
আমি অতীত এবং সমকালের কথা বলছি।
শৃংখলিত বৃক্ষের উর্দ্ধমুখী অহংকার কবিতা
আদিবাস অরণ্যের অনার্য সংহতি কবিতা।
যে কবিতা শুনতে জানে না
যূথভ্রষ্ট বিশৃংখলা তাকে বিপর্যস্ত করবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
বিভ্রান্ত অবক্ষয় তাকে দৃষ্টিহীন করবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে আজন্ম হীনমন্য থেকে যাবে।
যখন আমরা নগরীতে প্রবেশ করলাম
তখন চতুর্দিকে ক্ষুধা।
নিঃসঙ্গ মৃত্তিকা শস্যহীন
ফলবতী বৃক্ষরাজি নিস্ফল
এবং ভাসমান ভূখন্ডের মত
ছিন্নমূল মানুষেরা ক্ষুধার্ত।
যখন আমরা নগরীতে প্রবেশ করলাম
তখন আদিগন্ত বিশৃংখলা।
নিরুদ্দিষ্ট সন্তানের জননী শোকসন্তপ্ত
দীর্ঘদেহ পুত্রগণ বিভ্রান্ত
এবং রক্তবর্ণ কমলের মত
বিস্ফোরিত নেত্র দৃষ্টিহীন।
তখন আমরা পূর্বপুরুষকে
স্মরণ করলাম।
প্রপিতামহের বীর গাঁথা
স্মরণ করলাম।
আদিবাসী অরণ্য এবং নতজানু শ্বাপদের কথা
স্মরণ করলাম।
তখন আমরা পর্বতের মত অবিচল
এবং ধ্রুবনক্ষত্রের মত স্থির লক্ষ্য হলাম।
আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি
আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।
আমি স্থির লক্ষ্য মানুষের
সশস্ত্র অভ্যুত্থানের কথা বলছি
শ্রেণীযুদ্ধের অলিন্দে
ইতিহাসের বিচরণের কথা বলছি
আমি ইতিহাস এবং স্বপ্নের কথা বলছি।
স্বপ্নের মত সত্যভাষণ ইতিহাস
ইতিহাসের আনন্দিত অভিজ্ঞান কবিতা
যে বিনিদ্র সে স্বপ্ন দেখতে পারে না
যে অসুখী সে কবিতা লিখতে পারে না।
যে উদ্গত অংকুরের মত আনন্দিত
সে কবি
যে সত্যের মত স্বপ্নভাবী
সে কবি
যখন মানুষ মানুষকে ভালবাসবে
তখন প্রত্যেকে কবি।
আমি কিংবদন্তির কথা বলছি
আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।
আমি বিচলিত বর্তমান
এবং অন্তিম সংগ্রামের কথা বলছি।
খন্ডযুদ্ধের বিরতিতে
আমরা ভূমি কর্ষণ করেছি।
হত্যা এবং ঘাতকের সংকীর্ণ ছায়াপথে
পরিচ্ছন্ন বীজ বপন করেছি।
এবং প্রবহমান নদীর সুকুমার দাক্ষিণ্যে
শস্যের পরিচর্যা করছি।
আমাদের মুখাবয়ব অসুন্দর
কারণ বিকৃতির প্রতি ঘৃণা
মানুষকে কুশ্রী করে দ্যায়।
আমাদের কণ্ঠস্বর রূঢ়
কারণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ
কণ্ঠকে কর্কশ করে তোলে।
আমাদের পৃষ্ঠদেশে নাক্ষত্রিক ক্ষতচিহ্ন
কারণ উচ্চারিত শব্দ আশ্চর্য বিশ্বাসঘাতক
আমাদেরকে বারবার বধ্যভূমিতে উপনীত করেছে।
আমি কিংবদন্তির কথা বলছি
আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।
আমার সন্তানেরা
আমি তোমাদের বলছি।
যেদিন প্রতিটি উচ্চারিত শব্দ
সূর্যের মত সত্য হবে
সেই ভবিষ্যতের কথা বলছি,
সেই ভবিষ্যতের কবিতার কথা বলছি।
আমি বিষসর্প প্রভুদের
চির প্রয়াণের কথা বলছি
দ্বন্দ্ব এবং বিরোধের
পরিসমাপ্তির কথা বলছি
সুতীব্র ঘৃণার
চূড়ান্ত অবসানের কথা বলছি।
আমি সুপুরুষ ভালবাসার
সুকণ্ঠ সংগীতের কথা বলছি।
যে কর্ষণ করে
শস্যের সম্ভার তাকে সমৃদ্ধ করবে।
যে মত্স্য লালন করে
প্রবহমান নদী তাকে পুরস্কৃত করবে।
যে গাভীর পরিচর্যা করে
জননীর আশীর্বাদ তাকে দীর্ঘায়ু করবে।
যে লৌহখন্ডকে প্রজ্জ্বলিত করে
ইস্পাতের তরবারি তাকে সশস্ত্র করবে।
দীর্ঘদেহ পুত্রগণ
আমি তোমাদের বলছি।
আমি আমার মায়ের কথা বলছি
বোনের মৃত্যুর কথা বলছি
ভাইয়ের যুদ্ধের কথা বলছি
আমি আমার ভালবাসার কথা বলছি।
আমি কবি এবং কবিতার কথা বলছি।
সশস্ত্র সুন্দরের অনিবার্য অভ্যুত্থান কবিতা
সুপুরুষ ভালবাসার সুকণ্ঠ সংগীত কবিতা
জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি মুক্ত শব্দ কবিতা
রক্তজবার মতো প্রতিরোধের উচ্চারণ কবিতা।
আমরা কি তাঁর মত কবিতার কথা বলতে পারবো
আমরা কি তাঁর মত স্বাধীনতার কথা বলতে পারবো?
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
কমলকে চেন তুমি !
সুন্দর সুঠাম দেহ, প্রদীপ্ত চোখ
দুপুর রোদের মতো তীব্র প্রখর।
একটা বুলেট
কমলের ডান চোখ
ছিঁড়ে নিয়ে গেছে।
কমল আমার বন্ধু, বিদগ্ধ সচেতন
হৃৎপিণ্ড যার
কুকুর শেয়াল খেয়ে আজ পলাতক।
আরো বহু, আমার তোমার
বন্ধু কি প্রিয়জন
ধমনী যাদের ছিলো কৃষ্ণচুড়ার মতো
তাজা সোচ্চার,
রক্তের কোলাহলে স্তব্ধ এখন।
কমলের চোখ, রক্ত হৃৎপিণ্ড
ওরা কেন দিলো?
যে প্রশ্ন করিনি তো।
সম্প্রতি মাতা তার
ছোট শিশু বেচেছে, কেননা
চাল প্রয়োজন। তুলসীর ঘাটে
নগণ্য প্রাণ এক শাশুড়ি আত্মঘাতি।
কারণ সুবর্ণ গ্রাম গিয়েছ কি?
তবে একবার ঘুরে দেখে আস।
চেয়ে দেখ উঠোনে দাওয়ায়, কিংবা
পুকুর ঘাটে, রমণীর নগ্ন শরীর
জ্যোৎস্নায় প্লাবিত
অন্ধকারে তার আশ্রয়, নতুবা
গলায় ফাঁসি।
কমলের চোখ, রক্ত হৃৎপিণ্ড
ওরা কেন দিলো?
সে প্রশ্ন তোমার নিকট।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
“কুমড়ো ফুলে ফুলে
নুয়ে পড়েছে লতাটা,
সজনে ডাঁটায়
ভরে গেছে গাছটা,
আর, আমি ডালের বড়ি
শুকিয়ে রেখেছি---
খোকা তুই কবে আসবি!
কবে ছুটি?”
চিঠিটা তার পকেটে ছিল,
ছেঁড়া আর রক্তে ভেজা।
“মাগো, ওরা বলে,
সবার কথা কেড়ে নেবে
তোমার কোলে শুয়ে
গল্প শুনতে দেবে না।
বলো, বা মা তাই কি হয়?
তাইতো আমার দেরি হচ্ছে।
তোমার জন্যে কথার ঝুড়ি নিয়ে
তবেই না বাড়ি ফিরবো।
লক্ষ্মী মা রাগ ক'রো না,
মাত্রতো আর কটা দিন।”
কোন এক মা'কে কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ। বাচিকশিল্পী ফয়সাল আজিজ এর কণ্ঠে আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি সৌজন্যে VoiceArt YouTube
Channel । কবিতার কথা সৌজন্যে http://kobitarakash.blogspot.com/ । ১৯৫২ সালে কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ১৯৫২ সালের ভাষা
আন্দোলনের প্রতিটি কর্মকাণ্ডে, মিছিলে, মিটিঙে তাঁর উপস্থিতি ছিল সরব। '৫২-র সেই মিছিল, পুলিশের গুলিবর্ষণ, শহিদ হওয়া ছাত্রদের রক্তাক্ত শবদেহ তাঁর মনে গভীর যন্ত্রণা ও বেদনার
সৃষ্টি করেছিল। সেই শোকযাতনা থেকেই পরবর্তীতে জন্ম নিয়েছিল তাঁর বিখ্যাত কবিতা 'কোন এক মাকে'। এই কবিতাটি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ও বহুল প্রচারিত হয়।
“পাগল ছেলে”
মা পড়ে আর হাসে,
“তোর ওপরে রাগ করতে পারি!”
নারকেলের চিঁড়ে কোটে,
উড়কি ধানের মুড়কি ভাজে
এটা সেটা আরো কত কী!
তার খোকা যে বাড়ি ফিরবে!
ক্লান্ত খোকা!
কুমড়ো ফুল
শুকিয়ে গেছে,
ঝ'রে পড়েছে ডাঁটা
পুইলতাটা নেতানো,
“খোকা এলি?”---
ঝাপসা চোখে মা তাকায়
যেখানে খোকার শব
শকুনিরা ব্যবচ্ছেদ করে।
এখন,
মা'র চোখে চৈত্রের রোদ
পুড়িয়ে দেয় শকুনিদের।
তারপর,
দাওয়ায় ব’সে
মা আবার ধান ভানে,
বিন্নি ধানের খই ভাজে
খোকা তার
কখন আসে! কখন আসে!
এখন,
মার চোখে শিশির ভোর,
স্নেহের রোদে।
ভিটে ভরেছে।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
মায়ের কাছে সন্তানের অঙ্গীকার,
তোমার জন্য কথার ঝুড়ি নিয়ে
তবেই না বাড়ি ফিরবো
লক্ষী মা, রাগ করো না,
মাত্রতো আর কটা দিন।
সেদিন সকালের রোদে
কৃষ্ণচূড়ার আবির
আকাশের চূড়ায় লালঝুটি।
সেগুন ফুলের আঘ্রাণ গায়ে মেখে
রুপালি মাছের মতো
উজানে সাঁতার কেটে
ওরা আসে
এক-দুই-দশটি পাঁপড়িতে
যুথবদ্ধ রক্তকমল।
পরনে বর্ণমালার নামাবলী
দৃষ্টিতে সবুজ হাওয়ার মুকুল
ধমণীতে নির্ঝরের জলতরঙ্গ
হৃদয়ে মায়ের দুধের শিশির
কণ্ঠে শিমুল ফুলের আনন্দ।
ওরা যখন গান করে
কখনো নক্ষত্রের মতো উচ্চকিত
কখনো শিশিরের মতো নিঃশব্দ
কখনো মাটির শিকর আন্দোলিত
কখনো মায়ের চোখ ভিজে যায়।
তখন বেতের ফলের মতো বিপন্ন রোদ
মায়ের আঁচলে শাবকের মতো বেড়ে ওঠে
দৃষ্টিহীন অন্ধকার হিরন্ময় সুনেত্র
মৃত্যুর চৌকাঠে পলাশের বৈভব
এবং কুয়াশার মানুষ স্পর্ধিত মধ্যাহ্ণ।
হাওয়ায় মৃত্যুর গন্ধ
ব্যাধের কুটিল চক্রান্তে
সুপুরুষ পাখিরা নিহত
জননীর পুত্র নিরুদ্দিষ্ট
বোবা বয়াতি
কাগজের চোখে কথা বলে
ছবির একতারায় গান বাধে।
তারপর বিষন্ন শালিকের মতো
প্রবীণ দরোজায় সাবধানের শৃঙ্খল।
কৃষ্ণচূড়া আবার বেড়া ভাঙে
লোহার বেড়া
কখনো কমলের চোখের মত উৎক্ষিপ্ত
কখনো সহস্র ক্ষতের মতো প্রস্ফুটিত
কখনো উল্কার মতো অগ্নিগর্ভ।
এবং বাধেঁর ঘাস দাতে কেটে
অনায়াসে ভেদ করে শত্রুর ব্যুহ-
ছেঁড়া অন্ধ পোড়া চোখ স্ফুরিত অধর
গান গায় বিজয়ের গান।
তারপর যাহা থাকে যাহা কিছু অবশিষ্ট
প্রায় ঠোঁট প্রায় মুখ অথবা গোলাপ
সুফলা পলির মতো মেঘনার পাড়ে শুয়ে থাকে।
যারা ভালোবাসে
তারা যুদ্ধে যায়
যারা যুদ্ধে যায়
সকলে ফিরে আসে না
এবং যারা মায়ের কাছে ফিরে আসে
তাদের ঝুলিতে বর্ণমালার নুপুর
ঢেঁকিতে কিশোরী পা
ডুরে শাড়ি ঘাসের ফড়িং।
তখন জোনাকির মতো বৃষ্টি নামে
ধানের ক্ষেতে শামুক ওঠে
প্রবীণ বয়াতি একতারায় গান বাধেঁ,
সশস্ত্র সুন্দরের অনিবার্য অভ্যুত্থান
কবিতা
রক্তজবার মতো প্রতিরোধের উচ্চারণ
কবিতা।
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
তোমার নামে নাম রূপসী পাখির মতো
সবুজে সবুজ আহা সহস্র সবুজ
সেই সবুজের ভেতর দেখি লাল রক্তের ছোপ
ক’টা গুলি লেগেছিলো তোমার শরীরে
তোমার সবুজ শাড়ি কতখানি লাল হয়েছিলো
আমার জানা নেই
সন্ত্রস্ত বর্বর সৈনিকেরা আচমকা ব্রাশ ফায়ার শুরু করে দিয়েছিলো
যদি তারা তোমাকে তুলে নিয়ে যেতো তাহলে কী হতো
তুমি কি বেঁচে থাকতে অর্থহীন বীরাঙ্গনা খেতাব নিয়ে
নাকি আত্মহননের পথ বেছে নিতে
আমি অনুমান করতে ব্যর্থ
গণআদালতে ক’জন বীরাঙ্গনা এসেছিলেন
আমার কান্নার বয়স নেই তবু তাঁদের দেখে খুব কান্না পেয়েছিলো
কী সম্মানই না আমরা তাঁদের করছি এতটা বছর ধরে
করুণ বেঁচে থাকা কিংবা গৌরবময় মৃত্যু
কোন্টা তোমার জন্য শ্রেয় ছিলো আমি জানি না
বাস্তবতা হলো তুমি নেই তোতা খালা
শুধু জেগে আছে সবুজ শাড়িতে লাল রক্তের ছোপ
যেন স্বাধীন বাংলা দেশের পতাকা।
আজ পতাকার দিকে তাকালে তোমার সবুজ শাড়ি আর
লাল রক্তের কথা মনে না পড়ে যায় না
তোমার সবুজ শাড়ি, তোমার বুকের রক্ত, তোমার সম্ভ্রম দিয়ে বোনা
আমাদের এই জাতীয় পতাকা
তোতা খালা,
পাখির নামে তোমার নাম কে রেখেছিলো জানি না
সবুজ তোমার খুব পছন্দের রঙ ছিলো, আর
পাখির মতোই মিষ্টি ছিলো তোমার কণ্ঠস্বর
আদরকাতর এক বালকের বিস্ময় ছিলে তুমি
দীর্ঘ ছুটিতে বাবা-মা’র সঙ্গে করাচী থেকে
উড়ে এসে বালকটি তার মুখ লুকোতো তোমার আঁচলেরই নিচে
কী লাবণ্য ছিলো তোমার ফর্সা মুখে আর হাসিতে ছিলো মধু
গ্রাম বাংলার নারীরা বুঝি এ রকমই লক্ষ্মী হয়
আমার পৃথিবী ছিলে তুমি ছিলে প্রথম ভালোবাসা
সবুজ তোমার খুব পছন্দের রঙ ছিলো
জানি না সেদিন তুমি সবুজ শাড়ি পরেছিলে কিনা
যখনই তোমার কথা ভাবি চোখে ভাসে শুধু সবুজ আর সবুজ
স্বদেশের শস্যশ্যামল প্রান্তরের মতো
বৃক্ষের সতেজ চঞ্চলতার মতো
তোতা খালা,
যখন পতাকাকে স্যালুট করি
তখন তোমাকেই অভিবাদন জানাই
যখন পতাকার নিচে এসে দাঁড়াই
তখন আসলে তোমার স্নিগ্ধ আঁচলের স্নেহেই জড়াই
এই পতাকার জন্যে আজ আমার
এক চোখে অশ্রু
অন্য চোখে অগ্নি
তোতা খালা, তুমি আমাকে আশীর্বাদ করো
তোমার রক্তভেজা নরোম বুকে মাথা রেখে শেষবার কাঁদতে দাও
যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে দাও
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
বুড়িগঙ্গা, ধলেস্বরী,
শীতলক্ষ্যা, মেঘনা,
উথাল ব্রহ্মপুত্র আর উতলা পদ্মা
তোমাদের তীরে আর তরঙ্গে
কি যে কবে এসেছিলাম ফেলে
মনে ছিল না।
আজ হঠাৎ পিশাচদের বেয়নেটে,
আর কামান বন্দুকে জানলাম
তা বিদীর্ণ রক্তাক্ত
আমারই হৃদয়।
তবু সেই শয়তান-শাহীকেই জানাব সেলাম
পা রাখবার জমিন
আর মন মেলবার আসমান নিয়ে
যুগযুগান্ত ধরে যাদের ঠগবাজির কারবার
দু চোখে আঁটা ঝুটো তাদের ঠুলি
যদি ফেলতে পারি ঠেলে।
ঠুলি কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র (৪.৯.১৯০৪ - ৩.৫.১৯৮৮)। কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় পরিচয় পত্রিকার
বাংলাদেশ সংখ্যায়, ১৯৭১-৭২ সালে। আমরা কৃতজ্ঞ শ্রীমতি সুরঞ্জনা চৌধুরীর কাছে কারণ তিনি
কবিতাটি আমাদের পাঠিয়েছেন। সুরঞ্জনা দেবী কবি কৃষ্ণ ধর এর কন্যা। কবিতাটি পুনঃপ্রকাশিত হয়
এশিয়াটিক সোসাইটির মার্চ ২০২২ এর Monthly Bulletin এ।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
যে দিকে তাকাই, শুধু বাংলাদেশ।
এ-আত্মীয়তায় আমি পাসপোর্টবিহীন হাঁটি
পুরনো পল্টনে,
চলে যাই লহমায় সোনারং ফেনি তারপাশা,
আমার স্বপ্নের থিলখিল পদ্মা
বহে আনে পিনিশ সালতি-ভরা রুপালি ইলিশ ;
ফের ভাগীরথী তীরে
মগ্ন চলি গাজনে পরবে,
ফুলফোটা-চোখে দেখি বাঁকুড়ার দীপ্ত ঘোড়া,
অথবা আর-এক বাংলা---অরণ্যে পাহাড়ে
কিংবা নিতল খাদের কোলে চা-বাগিচা ঘিরে
পৌন্ড্রবর্ধনের এক পাথর-প্রতিমা
নিবিড় উত্তরবাংলা,
বীরভূমে লাল মাটি গলে গলে বেগার্ত অজয়...
ভালোবেসে চোখ যায়। অথচ অশেষ
খরায় নবান্নে জাগে পাসপোর্টবিহীন
আবহমানের বাংলাদেশ!
পাসপোর্টবিহীন বাংলাদেশ কবি অমিতাভ দাশগুপ্ত (২৫.১১.১৯৩৫ - ২৯.১১.২০০৭)।
কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় পরিচয় পত্রিকার বাংলাদেশ সংখ্যায়, ১৯৭১-৭২ সালে। আমরা কৃতজ্ঞ
শ্রীমতি সুরঞ্জনা চৌধুরীর কাছে কারণ তিনি কবিতাটি আমাদের পাঠিয়েছেন। সুরঞ্জনা দেবী কবি কৃষ্ণ
ধর এর কন্যা। কবিতাটি পুনঃপ্রকাশিত হয় এশিয়াটিক সোসাইটির মার্চ ২০২২ এর Monthly Bulletin এ।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার? ভয় কি বন্ধু, আমরা এখনো
চারকোটি পরিবার
খাড়া রয়েছি তো ! যে-ভিত কখনো কোনো রাজন্য
পারেনি ভাঙতে
হীরের মুকুট নীল পরোয়ানা খোলা তলোয়ার
খুরের ঝটকা ধুলায় চূর্ণ যে পদ-প্রান্তে
যারা বুনি ধান
গুণ টানি, আর তুলি হাতিয়ার হাঁপর চালাই
সরল নায়ক আমরা জনতা সেই অনন্য।
ইটের মিনার
ভেঙেছে ভাঙুক ! ভয় কি বন্ধু, দেখ একবার আমরা জাগরী
চারকোটি পরিবার।
এ-কোন মৃত্যু? কেউ কি দেখেছে মৃত্যু এমন,
শিয়রে যাহার ওঠেনা কান্না, ঝরেনা অশ্রু?
হিমালয় থেকে সাগর অবধি সহসা বরং
সকল বেদনা হয়ে ওঠে এক পতাকার রং
এ-কোন মৃত্যু? কেউ কি দেখেছে মৃত্যু এমন,
বিরহে যেখানে নেই হাহাকার? কেবল সেতার
হয় প্রপাতের মোহনীয় ধারা, অনেক কথার
পদাতিক ঋতু কলমেরে দেয় কবিতার কাল?
ইটের মিনার ভেঙেছে ভাঙুক। একটি মিনার গড়েছি আমরা
চারকোটি কারিগর
বেহালার সুরে, রাঙা হৃদয়ের বর্ণলেখায়।
পলাশের আর
রামধনুকের গভীর চোখের তারায় তারায়
দ্বীপ হয়ে ভাসে যাদের জীবন, যুগে যুগে সেই
শহীদের নাম
এঁকেছি প্রেমের ফেনিল শিলায়, তোমাদের নাম।
তাই আমাদের
হাজার মুঠির বজ্র শিখরে সূর্যের মতো জ্বলে শুধু এক
শপথের ভাস্কর।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
রোদ্দুরে নিয়েছি আর বৃষ্টিতে বেড়েছি সহস্র শতাব্দী দিয়ে নিজেকে গড়েছি
আমরা তামাটে জাতি, আমরা এসেছি।
আগমনী স্মৃতি হয়ে লেগে আছে আঠালো জীবন আমাদের
জন্মলগ্ন জাতিস্বর পায় যৌবন-ঘুঙুর হয়ে যায় বেজে যায় ব্রহ্মাণ্ডের মতো
এক স্বয়ম্ভু স্বপন- সব স্মৃতি সব ধ্বনি একাঙ্গে পুষেছি আমরা তামাটে
জাতি, আমরা এসেছি।
কেউ কেউ তূণধারী, কেউ কেউ বেহালাবাদক কারো হাতে একতারা কারো
হাতে ধারালো ফলক অনন্ত সময় জুড়ে জমিজমা জুড়ে আমরা তো উৎসবে
মেতেছি আমরা তামাটে জাতি, আমরা এসেছি।
সমুদ্রের তলরূপী, গুহারূপী, মাতৃগর্ভরূপী হৃদয়ের স্বপ্নশয্যা ছেড়ে সঙ্গিন-
সদৃশ সকল লাঙল উঁচিয়ে মার্চ পাস্ট করতে করতে আমরা এসেছি আমরা
তামাটে জাতি, আমরা এসেছি।
এই আসা এই গতিভাষা এ পথে রচিত হলো আমাদের সব ভালোবাসা।
ভালোবাসা জোসনা রাতে অশ্রান্ত বর্ষণ ভালোবাসা তীব্র তাপে ভুবন-কর্ষণ
ভালোবেসে জীবনকে আনগ্ন চেয়েছি আমরা তামাটে জাতি, আমরা এসেছি।
রাজধর্ম পিছে ফেলে, পিছে ফেলে গোত্রের আরতি লোকধর্মে লোকসঙ্ঘে
সুদীক্ষা নিয়েছি আমরা তামাটে জাতি, আমরা এসেছি।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
তোমাদের হাড়গুলো জোসনারাতে উড়ে যাওয়া সবুজ কবুতর,
সুদূর ঝরনার জলে স্বপ্ন-ছাওয়া ঘাসের সবুজ;
তোমাদের হাড়গুলো অন্তহীন স্রোতস্বিনী, সুরের নির্ঝর
একতারা হাতে এক বাউলের মনোজ গম্বুজ;
তোমাদের হাড়গুলো বাংলার সীমানা-ডিঙানো
ক্রমশ বর্ধিষ্ণু এক হরিৎ বাগান
কারবাইন তাক-করা বেপরোয়া সৈনিকের গান;
তোমাদের হাড়গুলো বাংলার হৃৎপিন্ডে অবিনাশী ঝড়;
বাঙালির জন্মতিথি, রক্তে লেখা ষোল ডিসেম্বর ।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
স্বাধীনতা কবি আহসান হাবীব। অজ্ঞাত বাচিক শিল্পীর আবৃত্তি শুনুন, ভিডিওটি
সৌজন্যে বৈঠক Fecebook। কবিতাটি শুনে লেখা।
শব্দের মালায় আমি তোমাকে গাঁথতে চাই---স্বাধীনতা!
তুমি ঘরে বাইরে এমন উলঝলুল নৃত্যে মেতে আছ, কী আশ্চর্য
আমার কলম
কিছুতেই যে ছুঁতে পারে না।
লাল নীল সবুজ সমস্ত রং নিয়ে
তোমাকেই সারা বুকে আঁকতে চাই,
দেখি
নির্মলনিসর্গে তুমি সব রং উজাড় করেছ
আমি
অতঃপর সরোবর এবং নদীকে
ডেকে ডেকে যখন মিনতি করি :
এস, আমার সমস্ত বুকে
বুক জুড়ে স্বাধীনতা হও
সারা বুকে ছড়াও অথবা
মায়ের দোলনা হও,
দেখি
নদী বয়ে যায় দেশময়
সরোবর নিজেই নিজের
সারা বুকে
ছড়ায় ঘুমের মতো থির মত্ততায়
আলোকিত অস্তিত্বের আভা।
আমি মানুষকে ডেকে ডেকে বলি
আমরা স্বাধীনতা স্বাধীনতা বলে সোচ্চার হয়ে
আকাশকে সচকিত করে তুলি
আর হাওয়ায় ছড়াই কিছু নতুন গোলাপ
দেখি
জানালায় ঝুলে আছে নীল আকাশ
সামনের বাগানে গোলাপ
বুকের মধ্যে তুমি মনোহর শব্দমালা
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
চিহ্ন ১৯৭১ কবি দীপক রায় (জন্ম মার্চ ১৯৪৮)। কবির
"অজ্ঞাতবাসের চোদ্দদিন" কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত কবিতা।
বাস থেকে নামিয়ে কাল যাদের গুলি করা হল
তাদের লাশ সারারাত পড়েছিলো রাস্তায়
লাশগুলি মর্গে যাবে আজ
শুধু ওয়াসিম কাপুরের তেলরঙ ছবির মতন
দুএক ফোঁটা রক্ত লেগেছিলো দেওয়ালে
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
হিমালয় নাম মাত্র,
আমাদের সমুদ্র কোথায়?
টিমটিম করে শুধু খেলো দুটি বন্দরের বাতি।
সমুদ্রের দুঃসাহসী জাহাজ ভেড়ে না সেথা ;
---তাম্রলিপ্তি সকরুণ স্মৃতি।
দিগন্ত-বিস্তৃত স্বপ্ন আছে বটে সমতল সবুজ ক্ষেতের,
কত উগ্র নদী সেই স্বপনেতে গেলো মজে হেজে :
একা পদ্মা মরে মাথা কুটে।
উত্তরে উত্তুঙ্গ গিরি
দক্ষিণেতে দুরন্ত সাগর
যে দারুণ দেবতার বর,
মাঠভরা ধান দিয়ে শুধু
পান দিয়ে নিরাপদ খেয়া-তরণীর,
পরিতৃপ্ত জীবনের ধন্যবাদ দিয়ে
তারে কভু তুষ্ট করা যায়!
ছবির মতন গ্রাম
স্বপনের মতন শহর
যত পারো গড়ো,
অর্চনার চূড়া তুলে ধরো
তারাদের পানে ;
ভৌগোলিক কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র (৪.৯.১৯০৪ - ৩.৫.১৯৮৮)। শিল্পী শুভ্রাংশু দত্তর কণ্ঠে এই কবিতার ভূমিকা ও আবৃত্তি শুনুন,
ভিডিওটি সৌজন্যে Suvranshu Dutta YouTube Channel । ১৯৭২ সালে কলকাতায় পাকিস্তান এমব্যাসীকে, পতাকা উড়িয়ে,
বাংলাদেশের দূতাবাসে বদল করার দিনে, প্রেমেন্দ্র মিত্র সহ বহু বুদ্ধিজীবীর আবাহনে এই কবিতাটি পাঠ করা হয়েছিল বলে জনৈক
শ্রোতার স্মৃতিচারণে পাওয়া যায়। কবির ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত “ফেরারী ফৌজ” কাব্যগ্রন্থের কবিতা যা মুক্তিযুদ্ধের সময়ও জনপ্রিয়
হয়। আমরা কবিতাটি পেয়েছি ১৯৮৯ সালে, গ্রন্থালয় থেকে প্রকাশিত প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা সমগ্র সংকলন থেকে।
তবু জেনো আরো এক মৃত্যু-দীপ্ত মানে
ছিলো এই ভূখণ্ডের,
---ছিলো সেই সাগরের পাহাড়ের দেবতার মনে।
সেই অর্থ লাঞ্ছিত যে, তাই,
আমাদের সীমা হলো
দক্ষিণে সুন্দরবন
উত্তরে টেরাই!