কবি দিলীপ কুমার বসু-র কাব্যোপন্যাস
কঙ্কনমালা
*
প্রথম পরিচ্ছেদ

( এক দুঃসময়-শীর্ষে তাহার উদয় |
ক্ষুধাময়, জয় জয়, ব্যধিময়, মুনা     
উত্তর-স্ট্যালিন যুগ |  পচন ও ক্ষ        
যবপূর্ণ পৃথিবীতে ; কাল মধুমাসে
বসন্ত মিলায়ে যায় গায়ের বাতাসে           
অর্থপূর্ণ ফিস্ ফাস্ , কালোবাড়ি ,          
.                                                                   

ত             
       
         
    
         

       
     
      
     
       
      
      
      
  

     
    
     
       

       
শহরের পথে | বিশটি যুবতী উষ্ণতা নেয় |
বিশটি পুরুষ গর্জন করে | কি যেন সবাই ভুলবে, ভুলবে-----

কি যেন সবাই---

উত্তরে মেঘ তারাটিকে ঢাকে |

পণ্যের লরী জি.টি. রোডে ছোটে,
ওয়াগন ট্রেনে চোরের মাথায়

শীতল, হিম, বৃদ্ধ তারাটি ওঠে |

খনখনে শীতে নাকের জলের মত
ওয়াগন ট্রেনে প্রথম ফোঁটাটি পড়ে |
বৃষ্টি, বৃষ্টি |

কি যেন সবাই ভুলবে, ভুলবে
নার্সিংহোমে |

প্রাতে রমণী দেখে সপন বিলোল মিঠা দিব্য সম্ পদ তারি
দ্রুত ধাবমান শ্রীঅঙ্গ মাঝে শ্বেত অ্যাম্ বা-স্যাডার গাড়ি |
দারুণ বরষায়, বিভল মুছে যায়, ওয়াইপার ঘোরে দ্রুত,
পথ হারায়ে যায়, রমণী গাড়ির প্রায়, প্রাসাদের বাগানে আনীত |
মিলনসাগর প্রাসাদের বাগানে   
বৃষ্টি, বৃষ্টি |
দারুণ বেদনা |

রাত্রি হিম |

পাখী হারিয়েছে উষ্ণ ডিম |

পণ্যের গাড়ি ছোটে |

ফুটপাথ ভেসে যায় |

তারা সরে বসে |
মিলনসাগর সরে বসে  
মেঘে ময়লার তারায় তারায় আর্তট্রেনের বয়লারে কয়লায়
মৃত্যু কাঁপানো মৃত্যু তাড়ানো চীত্কার ওঠে, তবলার তালে
ধপাধপ করে লাইন বদল লাইন বদল ট্রেন ছুটে যায়
পথের আশায়, পথের আশায়, পথের দু’পাশে গ্রাম পড়ে থাকে বৃষ্টির কোলে
শত শত সব শিশুর জন্ম, শিশু ও প্রসূতি মরে ও বাঁচে ও মরেই চলে,
বৃষ্টির কোলে মৃত্যুর ছায়া, ওষুধ বাতাসে পরী হয়ে গেছে,
খুঁজেও পাই না, ডাক্তার সব রাক্ষস হয়ে হাড় খট্ খট্ কড়ির পাহাড়ে
খস্ খসে হাসে, বেদনায় আসে কখনো এগিয়ে, ময়লা বাতাসে
শীতে বৃষ্টিতে রূপকথা সব, অজগর সাপ নগর-শহর, গ্রামান্তরকে
পাকে জড়িয়েছে, কিরণমালার মুখে মেঘ ঢাকা, নার্সিংহোমে
বহু ব্যস্ততা, বৃষ্টির ছাঁট, টেলিফোন ডাকে গভীর প্রাসাদে,
বৃষ্টি উথাল |

এদেশের এক প্রসূতিসদনে
জন্ম
তাহার |

ফুটপাথে তারা নড়ে বসে |  সরে বসে |
বৃষ্টিতে লোম কুঁকড়ে উঠছে |

.                                                               
কঙ্কনমালার সূচিতে . . .    
.                                                                 
কবির মূল সূচিতে . . .    
*

শহরসাগরে             বিরাট প্রেক্ষাগৃহ,        দেয়াল জুড়ে দেয়া             পোস্টার------
নগ্ন আধা বুক,          উদ্ লা আহ্বানে         আকাশে গাথা চাঁদ             গদ্ গদ্ |

নরম মেদে ঢাকা       কটিতে নরমেধ,         অনেক কোটি টাকা            মুনাফা,
এমন স্ত্রীলোকের       বিজ্ঞাপনে দেশ           নরম মোটা ঠোঁট               চাটছে  |
প্রেক্ষাগৃহপাশে         পুরুষ যায় আসে            সহাস সঙ্গিনী                  ভ্যাংচায়
আদুরে স্বরগ্রামে      এটা ও সেটা চায়            ঘামে গা ভরে যায়          সুখেতে |

ঠেলায় ঠেলাঠেলি      রেফ্রিজারেটার              শ্বশুরবাড়ি তারা             রওয়ানা ;
ক্রেতার সাথে সব      বিবাহ হয়ে গেছে,          কোমরে ঢেউ তাই           তাহাদের |

শংখ হাতে নিয়ে      এমন গোধূলিতে            শহরে ফ্ল্যাটগুলি             প্রস্তুত,
পণ্য তুলে নেবে       যে যার নিজগৃহে--          ‘টি.ভি.না থাকলে,            যা বিশ্রী !’

সাগরে ঢেউ ওঠে |     বৈঠা তুলে নিয়ে            সমাজমাঝি সব              দাঁড় বায়  |
দেবীরা ভূত সেজে    আরেক দিন শেষে         অফিসফের্তা ও              ধ্বস্ত |

যা কিছু ভূতকাল      তারাও দেবী সেজে        অনেক আগ্রহে               গলিতে |
বৈঠা হাতে নিয়ে      খলিফা ব্যক্তিরা            সবার তলপেট                খুঁজছেন |

শহুরে ক্ষুধামাঝে       বেলা যে পড়ে এল,         বিড়াল ফিরে গেল           দেয়ালে |
দেয়ালে জল্পনা         মধুভবিষ্যের                 সবুজ চোখে সে তা          দেখে নেয় |

নায়িকা কংকণা        এখনো ছোটো, তাই        ‘ফুল্ কি’ বলে তাকে        ডাকলাম,
বয়স হল দশ,          দুগ্ধ-মধু পানে                 মধুর দেহ তার             ‘বাক্সাম’ |

বিদেশী শব্দটি,         দেশীয় সমাজেতে            যায়না পাওয়া খুঁজে        সহজে |
পিতৃবন্ধুরা              ফুল্ কি কোলে করে         অমন উপাধি-ই              দিয়ে যান !

মায়ের প্রাণ কাঁপে,     দৃষ্টি লাগে বুঝি,               বিলাতি লালিমাও           পান্ডুর
কপোলে হয়ে ওঠে|     মন্ত্র খোঁজে ঠোঁট |            ব্যাকুল আঁখিপাতে          উদ্বেগ |

ছাতের চীনে টবে      ফুলের মাথা দোলে           নরম বৈকালী                হাওয়াতে !
ফুল্ কি খেলা করে,    চাকর ছোটে সাথে,           বছর দুই বেশী              হবে তার |

সহসা সন্ধ্যায়           আঁকড়ে ধরে তাকে          বালক ভৃত্য তার            বলিষ্ঠ |
থুতুতে ঠোঁট মাখে     চুমুর চেষ্টাতে,                নিমেষে আরো কিছু        শিখে নেয় |

ফুল্ কি কেঁদে ওঠে,   ফুল্ কি রেগে ওঠে,          ফুল্ কি বলে তাকে,         ‘বজ্জাত !’
দু’হাতে ঠেলা মারে,  প্রথমে নড়ে যায়,              দ্বিতীয় ধাক্কায়                পপাত

ধরণীতলে ছেলে,      ফুল্ কি ডানা মেলে          খুশিতে হেসে ওঠে           প্রথমে |
ছোট্ট পরী যেন,        দৌড়ে গিয়ে দ্যাখে           পাজিটা পড়ে গেছে          কীভাবে |

আবছা আঁধারেতে   গড়িয়ে পড়ে গেল              কি করে জানে কে যে      কোথা কি |
ফুল্ কি জানল না    খুলিটা বেজে ঠন্               চোখে সে দেখেছিল        জোনাকি |

ছাদের নীচে ঘরে     আলাপ চলছিল                নানান মৃদু স্বরে,            টুং টাং
গেলাশ বাজছিল,     কোমল মত্ততা,                 বিলাতী খেউড়ের           সভ্যতায় |



.                                                               
কঙ্কনমালার সূচিতে . . .    
.                                                                 
কবির মূল সূচিতে . . .    
*

ফুল্ কি, আলোর ফুল্ কি,
তুমি জানলে না |
ধানগাছে চড়ে মহাজন সাপ
জানলে না |
মহাজন তুমি, গায়ে আঁকা আছে উল্কি
যদিও ছোট্ট, তুমি ছোট্টটি ফুল্ কি !

যদিও কিছুই ঋণ দাওনাকো--
তুমি কি কখনো সুদ চেয়ে থাকো ?—
তুমি মহাজন অন্যরকম | তুমি কি নিজেকে জানো  ?

ফুল্ কি, জানলে না |
অন্ধকারের নিপুন দেরাজে উঁই বাসা করে |
চাঁদে ছাপ ছাপ পাপ |
মিলনসাগর  
কাদার উপরে শব্দ তুলে কে আসছে বলতো ?
গৃহে ও হাওয়ায় জলের বাষ্প |
ফুল্ কি, আলোর ফুল্ কি, আমার ছোট্ট মেয়ে |

তোমার শরীরে উঁই ঢুকে গেছে
মাথা ও বুকের এপাশে একটু |
ভয় করছে না ?
মিলনসাগর       
সোঁদা হাওয়াটাকে তাড়াও, তাড়াও
গুঁড়ো মাটিটুকু ঘষে মুছে দাও ;
আর কী করবে ?  কটু তেল দেবে ?
ফুল্ কি, আমার বড় ভয় করে, বল্মীকস্তুপ হয়ো না কখনো |

আঠা দিয়ে জোড়া শুকনো মাটির গুঁড়ো কি প্রতিমা ?
সে আঠা আবার লালসার রস ?
মিলনসাগর ডট কম থেকে নেওয়া  
সাম্রাজ্যের দারুণ ক্ষুধার কীট খেয়ে যায় মাটি ও মানুষ,
আমার তোমার বুকের দেরাজ |

ছোট মেয়েটির বুকের দেরাজ |

ফু          
    
      
       
            

      
       
      
       

    
            
           
         

         
       
           
                

অন্ধকারের আলোর ফুল্ কি
জ্যোত্স্নার বোমা হয়ে
ফেটে পড়ো হায় অভাজন এই অন্ধ পৃথিবী,
অন্ধ পৃথিবী, দারুণ দুঃসময়ে |
চৌদ্দ বছরে তুমি কংকণা হ’লে |

পেছনে তোমার ধানের চিহ্ন এলিয়ে রয়েছে
অঙ্গনে তুমি পা ফেলেছ ধীরে, এগিয়ে চলেছ,
তোমার পায়ের মৃদু রূঢ়তায় খুরতোলা জুতো |
ধবল মেঘ,
শ্যামল সন্ধ্যা |
প্রথম রাজ--
কুমার আজ
ফিরছে গৃহে |
মনে কি পড়ে, ছাতের ‘পরে এলিয়ে গেছে
গড়িয়ে গেছে কিছু ?

আসলে সে তো ধেনু চরায় |

.           ***********************              


.                                                               
কঙ্কনমালার সূচিতে . . .    
.                                                                 
কবির মূল সূচিতে . . .    


মিলনসাগর
তা-শুদ্ধ জানি না |
জন্মের সময় |  )