কবি দিলীপ কুমার বসু-র কাব্যোপন্যাস
কঙ্কনমালা
এই কংকণাকে যেন দেখেছে কোথায় ব’লে তার মনে হয়, যেন চেনা ছিল কবে, সুদূর অতীতে,
--কংকণাকে বলে সেই কথা | অষ্টাদশী কন্যা এক নিজেকে ব্যাকুল হয়ে চিনতে চায় | কে  সে ?


সত্যি কারো চেনা  ? স্বপ্নে ? ছট্ ফট্ করে উঠে অংকের বইটা টানে,
লেনিনের বইগুলো একবার টান দেয়, লুকোনো আলমারী হতে ‘মাও-সে তুং’ নিয়ে
বোবা চোখে দেখতে থাকে, মাথায় একটি শব্দ ঢুকতে চায় না |
কে সে ? স্বপ্ন, মায়া, মতিভ্রম ? সে নূতন কেউ নয় ? সে কি ক্যালকুলাস কষতে পারে ?
ভেক্টরের বিশ্লেষণ দু’বছর আগেই সে করতে পারত ? শুধুমাত্র
নিজের চেষ্টায় ? পারত ? নিজের ব্যক্তিত্ব আর নচিকেতা, দুই-ই কি সে
গড়ে তুলতে পারবে কোনদিন ?  মানুষের গায়ের ছাত্কুঁড়া
ধুয়ে-মুছে দেবে এত মমতা কি আছে তার, এত শক্তি ?
বর্থতার বোধ ছায় | ঘৃণা করে কঠিন স্বভাব, ক্রুঢ়বুদ্ধি ,
হিসেবি ও স্থুল সব লোকজন, যাদেরকে উঠতে বসতে দেখতে পাচ্ছে |
                                                                                    

হঠাৎ গভীর রাতে বিছানায় উঠে বসে, নকশালবাড়িতে হয়ত কৃষক ঘুমিয়ে আছে সে-সময়
হঠাৎ দুঃস্বপ্ন দ্যাখে বারাসতে কংকালের ফাঁসি দেয়া হয়, জেগে গিয়ে
স্বামীকে আঁকড়ে ধরে কেঁদে ওঠে | মধ্যরাত্রে প্রাসাদেতে ,
বলে, ব্যথা করছে খুব, আমাকে জড়িয়ে ধর ; ত্রস্ত নচিকেতা
কী করবে তা ভেবে পায় না |  বলে, মাকে ডাকি ? ভোর হয় |

রাত্রে ও প্রভাতে
নক্ষত্রের মতো আছে কংকণা, কঙ্কণমালা |
শেষ রাতে দেখা এক শীর্ণ আর বল্মীক উন্মূল
তরুর মতন কন্যা দু’হাত ছড়িয়ে কাঁদছে,
‘জানো, ইলা নাকি জেলে গেছে,
জেলে নাকি অত্যাচার,
জেলে নাকি মেয়েদের’—

উঠে বসে বলে,
‘ইলাকে ছাড়িয়ে আনতে পার ?’
নচিকেতা শুনে শুধু ভালবাসে, আরো ভালবাসে ;
খোঁজ নেয় ইলাকে ছাড়িয়ে আনা যায় কিনা,
ইলা মুক্তি চায় কিনা ?
চেষ্টা করতে ভয় করে, তবু খোঁজ নেয় |

তাদের বাড়ির সব পুরুষ অতিথি, বন্ধু, পরিচিত
অন্যমনে কংকণাকে ভাবে, বাটনহোলের ফাঁকে উঁকি দেয়--- প্রত্যেকেরই--
কংকণার মিষ্টি মুখ | সমাজের বধূ, কন্যা ইত্যাদিরা কেউ কেউ কখনো-সখনো
কংকণার কাছে আসে সুযোগ, সময় খুঁজে | কথা বলে, অকারণে হাসে তারা ;
কলকাতায় গঙ্গাজল বহে যায় কলকল খলখল  ধ্বনি |

এরপর একদিন নচিকেতা দূরে চলে যায়, অবশেষে |  চিঠি আসে নিয়মিত |

.                                                                        
কঙ্কনমালার সূচিতে . . .    
.                                                                         
কবির মূল সূচিতে . . .    

গাড়ি    
       
     
     
        
   
     
    

      
      
     

       
   
      
       

শরীরে মেদের ক্ষীর কড়াই উপ্ চায় নি তার, মনে জমেছে অবসরে জমা স্নেহ |
জীবনকে উপভোগ করবার শক্তি বাড়ছে, শ্রম নেই, কাজ নেই, ভালবাসার ক্ষুধা
মিটছে না, মিটবার কথা নয় : এটুকু গণিত কংকণাও জানে ;
সমস্ত জেলগুলি ভরছে, পাড়ায় পাড়ায় শহীদবেদীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে,
পুলিশ ও পাইপগানে কলকাতা ভরে উঠছে, ছেয়ে গেল, ছেয়ে গেল,
কংকণার সারা দেহে রহস্য এ মুহূর্তের অফুরন্ত,-- ঠিক এই মুহূর্তটা
স্মরণীয় | সমস্ত জীবন ভরে মনে রাখবার | রহস্য এতই---
চরিত্রের কোনো আর তেমন দরকার নেই রমনীয় হয়ে উঠতে | গাঢ় রাতে অগ্নিমেঘে
কলকাতায় কংকণার মুখ ছাদে উঠে হাসতে থাকে | অসুখের হাসি |


ছেলে     
   
    
      
     
       
           
      
         

মা ছেলেকে কোলে নিয়ে চুমু খেল স্নেহে | সেই মহীয়ান দৃশ্য |
শিশুকে জড়িয়ে ধরতে সিঁথিটা গড়িয়ে পড়ে ঝুলতে লাগল |

‘তারপর ?’

কংকণার কাহিনী নিঃশেষ | মানুষের কাহিনীর শেষ নেই |

.                    ***********************              


.                                                                          
কঙ্কনমালার সূচিতে . . .    
.                                                                            
কবির মূল সূচিতে . . .    


মিলনসাগর