কবি দিলীপ কুমার বসু-র কাব্যোপন্যাস
কঙ্কনমালা
অষ্টম পরিচ্ছেদ

সরল সহজ পাখিরা আকাশে ওড়ে
কংকণা দ্যাখে, ধান খেতে দ্যায় |

দিন চলে যায় নির্ভার গতি |
শয়ন প্রাসাদে নাথ, শয়ন প্রাসাদেতে |
তবুও কাটে না রাত, কাটে না দিন হায়
বিরহ বিনা কোনো অলস বিছানায়
তোমার       

           
    
     
     

         
      
        
    

     
       
       
     
      
     
          

শিশুও প্রায় এল দখিন জান্ লা দিয়ে ;
সময় এসে কিছু হয়ত খুঁটে খায়,
হয়ত’ পড়ে থাকে ভোরের রোদ যেন ;--
হাড়ের আঙুলের মতন জান্ লাতে |

রশ্মিগুলি সব ছুটছে চারপাশে--
একলা কংকণা দাঁড়িয়ে কেন আছে,
পা দিয়ে চিত্রল মেঝের মাঝখানে
কিবা যে ভাবছে সে জননী হ’তে গিয়ে,
কেহ তা নাহি জানে, কেহ তা নাহি জানে |

শিশুটি ছেলে হবে, অথবা হবে মেয়ে
সে কথা কংকণা ভাবে তো নিশ্চয় |
তিক্ত কংকণা ; তৃপ্ত ? তা-ও বুঝি !

তিক্ত তৃপ্তির সাগর বহে যায়,
একাকী কংকণা বেরুল ভেলা নিয়ে |

খুবই সহজেতে তবুও কংকণা
সরল নচিকেতা, তাহাকে ভালবাসে |
জাগায় তাকে কত আদরে মমতায় |
বাচ্চা তাকে দ্যায়, গোপনে বলে তাকে
‘জীবন বল দেখি, কেমন হওয়া চাই ?’

বিপুলবেগে প্রাণ গ্রামেতে ঝরে পড়ে |
তবু নিরন্ন দায়েতে ধার দ্যায় ; ক্লান্ত চোখে আশা |
সরল ডানা মেলে আকাশে ওঠে পাখি  |

স্ফীত তরঙ্গিত ভালো ও মন্দ সব,
পূর্বে-দক্ষিণে ভারতে অগ্নির
ভলকে ভলকে তাপ ঢেউয়ের মতো বয়,

পাখীরা দানা খায়,
কংকণা
চলেছে ডিঙায় |

.                                                                          
কঙ্কনমালার সূচিতে . . .    
.                                                                           
কবির মূল সূচিতে . . .    

স্ফীত      
       
    
   
     
     

       
         
      

কার স্মৃতি ?

একলা লড়াইয়ে নেমে কংকণার খুব ভার বোধ হয়  |
পায়ে পায়ে সংসার জড়িয়ে আছে, ইন্দ্রাণীর মতো সে যে,
ইন্দ্রপুরী তার একলার | বিবাহিত ননদ, সে অন্য জগতের |
অপ্রিয় শোনে নি ভাষা  | বিবাহিত ননদ, সে অন্য জগতের |

‘নচিকেতা’ |

কংকণা স্বামীকে নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছে |
নৌকা বেয়ে ‘নচিকেতা’ ছুঁতে চলে,  নচিকেতা তার নৌকা নিয়ে
কাছে চলে আসতে চায় | চারপাশে সমুদ্র উত্তাল |  ডিঙি দোলে  |

কংকণা স্বামীর সাথে গ্রামে-তৃণাঞ্চলে
কৃষকের ভাগ্যকথা পত্রিকায় অন্বেষণ করতে থাকে | পথে ঘাটে,
বইয়ের দোকানপাশে গাড়ি রেখে বই নির্বাচন করে | পত্রপত্রিকায়
আগুন ছড়িয়ে গেছে, সে সব খবর | ব্যাকুল বিষাদে
বিরহিনী নচিকেতা-কন্ঠলগ্না হয়ে আপন ভূমিকা খোঁজে |
অপ্রতিভ বিহ্বল দৃষ্টিতে দ্যাখে দেয়ালেতে ফুটেছে অক্ষর
বিপ্লবের কথা নিয়ে | ‘নচিকেতা, রাজপুত্র, জাগো, ওঠো !’ মধ্য-
ইয়োরোপে যাবে নচিকেতা, কংকণার মরে যেতে ইচ্ছে করে |


জাগো চাষী জাগো, আগুন জ্বলতে থাকে গ্রামে ও শহরে
আকাশ বাতাসে এক অক্ষরের মুক্তির উত্সবে |


কংক      
       
      
      
    
     
        

        

কংকণা ভয়ার্ত কন্ঠে বলে,
‘লোক খুব মারা যাচ্ছে ? তাই না ?’

নচিকেতা স্তব্ধ হয়ে থাকে,
অপরাধী মনে হয়, নিজেকে অনুপযুক্ত মনে হয় |

.           ***********************              


.                                                               
কঙ্কনমালার সূচিতে . . .    
.                                                                 
কবির মূল সূচিতে . . .    


মিলনসাগর